জীবনটা ক্ষনিকের তবুও মনে স্বপ্ন উঁকি মারে! (৫ম পর্ব)
লিখেছেন লিখেছেন মাহবুবা সুলতানা লায়লা ২৫ অক্টোবর, ২০১৪, ০৮:২৬:৩৮ রাত
এভাবেই কানিজ আর আযাদের কেটে যায় কয়েক বছর! বাড়িতে অন্য সব কাজের জন্য আলাদা আলাদা মানুষ রাখা আছে! আর আযাদের জন্য আছে কানিজ! কানিজ তবুও আযাদের কাজ গুলো নিজ হাতে করে দেয়! আযাদকে সময়মত খাওয়ানো, গোসল করানো, আযাদকে গল্প শুনানো, বিকেলে ছাদে দিয়ে আকাশ দেখা, পত্রিকা পড়ে শুনানো একথায় নিত্য দিনের সকল কাজের আঞ্জাম দিয়ে যায় কানিজ! এমন কি কানিজ নিজেকে আযাদের পছন্দমত পোষাকে সাজিয়ে রাখে! কানিজ বেচারী আযাদের জন্য মনের সকল ইচ্ছাকে কোরবানিই দিয়ে গেলো! আযাদ মাঝে মাঝে কানিজকে নিয়ে ভাবে কানিজের কি এভাবেই যাবে জীবনটা? কানিজের জীবনটা তো আরো সুন্দর হতে পারতো! কেন মিছিমিছি কানিজ এখানে থেকে নিজের জীবন যৌবন শেষ করে দিচ্ছে আযাদের সেবায়! আযাদ তো কোনদিনই তাকে কিছুই দিতে পারবেনা! এসব ভেবে ভেবে আযাদ মাঝে মাঝে মন খারাপ করে! আযাদের এক বন্ধু মাঝে মাঝে এসে আযাদকে দেখে যায়! তার নামও আযাদ! সে এসে কিছু সময় গল্প করে কাটায়! আযাদ মাঝে মাঝে বন্ধুর থেকে নানা রকম পরামর্শ নেয়! একদিন কথা প্রসঙ্গে আযাদকে বলে আযাদ তুমি কখনো তোমার বউয়ের প্রতি কোন বিষয়ে অবিচার করনা! আর সে জীবনের সবচেয়ে বড় ছাড় তোমার জন্য দিয়ে যাচ্ছে তুমি ও তার জন্য ছাড় দিও! আর মনে রেখ কখন কার চলে যাবার সময় হয় বলা যায়না তুমি সেভাবেই সিদ্ধান্ত নিয়ে রেখ! যাতে করে কানিজ না ঠকে! আরেকটা কথা আমি তোমার ভাই নই বন্ধু! তোমার ভাই আমার থেকে তোমার কাছে আপন! তাই বলছি আপন যখন পর হয় তখন সে শত্রুর চেয়ে কঠিন হয়! আযাদ জানতে চায় কিজন্য এসব বলছো মিতা দোস্ত? (দুজনের নাম এক হওয়ায় ওরা সবসময় একে অপরকে মিতা দোস্ত বলেই ডাকে) মিতাদোস্ত বলে তোমার ছোট ভাই সে নানা রকম কথা বলে বেড়ায় বাহিরে! তুমি আমার কথাটা মনে রেখ! মিতা দোস্ত এসব বলে আরো বলল কিছু কিছু হিংসুট মানুষের কারনে সুখি মানুষরাও সুখে থাকতে পারেনা! তুমি যতটাই সুখে আছো ততটাও সব সময় থাকতে পারবেনা কারন তোমার পিছনেও আছে একদল হিংসুক লোক মনে রেখ সিদ্ধান্ত নিতে ভুল করলে মাশুল দিতে হয় অনেক বেশী! বলেই দিতা দোস্ত চলে গেলো! আযাদ ও কিছুক্ষনের জন্য ভাবনার অন্য জগতে হারিয়ে গেলো! আযাদ বুঝতে পারে ভাইয়ে ভাইয়ের মাঝে সম্পদই একমাত্র শত্রুতার কারন!
কানিজ লক্ষ করলো আজকের আযাদ আর সব সময়ের আযাদের মাঝে বিশাল পার্থক্য! সে জানতে চায় কি হয়েছে আযাদের? আযাদ বললো জীবনের আগা গোড়া নিয়ে ভাবছি! এই তো আর কিছু নয়! এদিকে কানিজকেও তার ছোট দেবর দুষ্টোমির ছলে নানার রকম কটু কথা বলে! কানিজ হাসি মুখে মেনে নেয়! কানিজ বুঝতে পারে তাকে নিয়ে সবার অন্য রকমভাবনা! কিন্তু এই মানুষটাকে কি ভাবে বলবে এসব কথা? কানিজ আরো কিছুদিন চুপ করে থাকে! তার ছোট দেবর বলে আমার ভাইকে বিয়ে করে তুমি কি পেয়েছ এরচেয়ে আমাকে বিয়ে করলে তোমাকে আমি সন্তান দিতে পারতাম! কানিজ খুবই মনে কষ্ট পায়! কানিজ ভাবে এসব কি জন্য বলে? আযাদ তার আপন ভাই আর কানিজ পরের মেয়ে! কানিজের চেয়ে আযাদ তাদের কাছে বেশী প্রিয় হবার কথা! কিন্তু তারা ভাইকে আপন ভাবতে পারছেনা কেন? আর তার ও বউ আছে সে কেন কানিজকে এসব কথা বলবে? সে আর এই দুষ্টোমি সহ্য করতে পারছেনা! তাই আযাদকে জানায় তার ছোট ভাই এসব বলে! আযাদ শুনে তার বন্ধুর কথাগুলো ভাবতে থাকে! তার বন্ধুর কাছ থেকে আরো বিস্তারিত ভাবে বিষয়গুলো জানতে হবে! আযাদ তার বন্ধুকে খবর দেয় আসতে! তার বন্ধু কয়েকদিন পরে আসলে তার কাছে জানতে চায় তার ভাইকে নিয়ে বিস্তারিত বিষয়! তার বন্ধু বলে ভাইরে আমি যদি কিছু বলতে যাই তবে তোমরা ভাইয়ে ভাইয়ে শত্রু হয়ে যাবে! আর আমিও মাঝখানে তোমাদের সবার মাঝে খারাপ হয়ে যাবো! আযাদ তবুও অনুরোধের স্বরে বলে তুমি আমার শুধু বন্ধু নও আমি তোমাকে ভাইও মনে করি! তুমি আমাকে ভাই মনে করে জানাও বিষয়গুলো! তার বন্ধু বলে ভাইরে আমি আস্তে আস্তে তোমার এখানে আসা কমিয়ে দেব! কারন আমি চাইনা তোমরা ভাইয়ে ভাইয়ে সমস্যায় পড়ো! আযাদের বন্ধু বলতে শুরু করে তোমার ছোট ভাই বাহিরে বাহিরে নানান জনকে বলে বেড়াচ্ছে তুমি নাকি সব সম্পদ কানিজকে দিয়ে দেবে আর সেজন্য সে তোমার পরে কানিজকে বিয়ে করে সেই সম্পদের মালিক হবে! তুমি আর কতদিনই বা বাঁচবে? আর সম্পদের কারনে সে কানিজকে হাত ছাড়া করতে চায়না কারন তোমার সম্পত্তির অংশের দাম হবে প্রায় কয়েক কোটি টাকা! আর সে কানিজকে পটাতেও নানা রকম চেষ্টা চালাচ্ছে! সে এমনও বলছে তারা দুই ভাই আছে খোকন ভাই করলে করবে নয়তো সেই বিয়ে করবে! আযাদ চুপ করে যায়! কি তার ছোট ভাইয়ের এত অবনতি অবস্থা? আযাদ ভাবনার আরো গভীরে পৌছে যায়! কি করা যায় এই অবস্থাতে? বন্ধুর থেকে আরো নানা রকম খবর নিয়ে বন্ধুকে বিদায় দেয়! মিতা দোস্ত চলে যায়! আর আযাদ ও চিন্তার সাগরে ডুপ দেয়!
এবার কানিজকে ডেকে জানতে চায় কানিজ আমার ছোট ভাই তোমাকে আর কি কি বলেছে তুমি আমাকে বলো! এর সমাধান হওয়া উচিৎ! মনের মাঝে রাখলে সমাধান হবেনা! কানিজ বলে পরে তোমার কোন সমস্যা হবেনা তো? আযাদ বলে শুন সমস্যার বড় সমস্যায় তো আমি আছিই! তাই সামনে আর ছোট সমস্যা গুলোকেও দেখতে চাইছি না! তুমি বলো! কানিজ বলা শুরু করে! আযাদ শুধু অবাক নয় কঠিন অবাক হয়ে যায়! তার ছোট ভাই নাকি এমনও বলেছে যে কোন ছুতোয় ভাইকে ছাদে উঠিয়ে সেখান থেকে ফেলে দেব যাতে পথের কাঁটা সরে যায়! কানিজ এসব শুনে ভয় পেয়ে যায় কি বলে তার দেবর? আযাদ তো আরো আশ্চার্য হয়ে যায় তার আপন ছোট ভাই তার বর্তমান থাকা অবস্থায় তার বউকে এসব বলছে আর সে যদি না থাকে তবে তো আরো নানা রকম ঝামেলা হবে! আযাদ ভাবতে থাকে এভাবে আর কতদিন? সে যদি হঠাৎ চলে যায় তবে কানিজের কি উপায় হবে? আযদা কানিজকে সবদিক থেকে অসহায় রাখতে চায়না! একটি মেয়ে তার জন্য জীবনের সাথে সাথে যৌবনেরও কোরবানি দিয়ে চলেছে অহরহ কোন প্রতিদান না পেয়েও! তাকে কি করে ঠকাবে আযাদ? আযাদ চায় সে যদি না ও থাকে তবুও কানিজ যেন জীবনের বাকি সময় নতুন জীবন সঙ্গী গ্রহন করে অর্থের সমস্যায় না ভোগে! সে যেন বাকিটা জীবন সাচ্ছন্দ্যে কাটাতে পারে! সে ব্যবস্থা করারা জন্যই আযাদ দুই বোন জামাই ও ভাইদেরকে খবর দেয় এবং আরো গন্য মান্য কয়েকজনকে ও আযাদের শশুরকে খবর দেয়! নির্দিষ্ট একটি তারিখে সবাই একত্রিত হয় আযাদের বাসায়! আযাদ এর আগেই তার বাড়ির জমি ও ব্যাংকের কাগজপত্র সহ আযাদের যত সম্পত্তি আছে তার দলিলপত্র সবকিছু গুছিয়ে রাখে! এবং সবাই আসলে উপস্থাপন করে এভাবে যে, আপনারা জানেন কানিজের কি অবদান আমার প্রতি! তার জন্য আমার কাছে কোন বিনিময় নাই! আর অর্থ সম্পদ দিয়ে কখনো মানুষের থেকে সহযোগীতা সহমর্মীতা পাওয়া যায়না! কানিজ আমার জন্য যা করেছে তার তুলনায় আমার সম্পদ কিছুই না! আমার যদি আরো কিছু থাকতো সেটাও আমি কানিজকে দিয়ে দিতাম! তাই আমি বেঁচে থাকা অবস্থায় আমার সব সম্পত্তি থেকে একতৃতীয়াংশ সম্পদ কানিজের নামে উইল করে দিচ্ছি এর মধ্যে বসত বাড়ি সহ সবকিছু কানিজের! আর ক্ষেতের জমি থেকে একাংশ আমার দুই ভাইকে দিচ্ছি যাতে কানিজের সাথে কোন রকম দন্দ না হয়! আর আমার ব্যাংক একাউন্টে প্রায় পঁচিশ লক্ষ টাকা আছে এটাও আমি থাকাবস্থায় যা খরচ যায় এরপর বাকি টাকা কানিজের নামে থাকবে! আপনারা বলুন আমার সিদ্ধান্ত কি ভুল হয়েছে? উপস্থিত সবাই বললো না আযাদ তোমার কোন ভুল হয়নি তুমি সঠিক সিদ্ধান্তই নিয়েছ! তার ছোট ভাই বলে ওঠে বড়ভাই আপনি ভুল করেছেন পরের মেয়েকে সব সম্পত্তি দিয়ে দিলেন? সে তো আপনার পরে আরেকজনকে বিয়ে করে চলে যাবে তখন তো আমরা অনেক সম্পদ হারাবো! আযাদ বলে মনির তুমি চুপ থাকো! আমি যা করেছি খুব ভেবে চিন্তে করেছি! আর সে তো আরেকজনকে বিয়ে করবে সেটাই স্বাভাবিক!
চলছে.....চলবে!
বিষয়: সাহিত্য
১৪০৯ বার পঠিত, ১৪ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
চলছে চলুক
ধন্যবাদ মত রেখে যাবার জন্য!
স্বামী-স্ত্রীর পরম ভালবাসার সংসারে 'মনির' নামের অর্থপিপাসু লোকদের কারণেই যত অনাহুত পরিস্হিতির সুচনা হয়।সম্পদের লোভে এরা সব ই করতে চায়।
ভাল লাগা রেখে যাচ্ছি উপস্হাপনায়.....!
যাযাকুমুল্লাহ মন্তব্যের জন্য
মন্তব্য করতে লগইন করুন