জীবনটা ক্ষনিকের তবুও মনে স্বপ্ন উঁকি মারে (পর্ব ২য়)
লিখেছেন লিখেছেন মাহবুবা সুলতানা লায়লা ১৭ অক্টোবর, ২০১৪, ০১:২৭:৫২ দুপুর
আযাদকে কে বা কারা হাসপাতালে নিয়ে গেছে সে জানেনা! আযাদের পকেট চেক করে একটি টি এন্ড টি নম্বর পেয়ে ডাক্তারেরা সেটাতে কল করে জানিয়ে দেয় একজন লোক গুরুতর আহত ঢাকা মেডিকেলে আছে আপনাদের কি হয় জানিনা আপনারা দ্রুত আসেন! উনার ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নিতে হবে! আযাদের বাবা, মেজু ভাই ও বোন জামাইরা দ্রুত ঢাকা মেডিকেলে যায় তখনও আযাদের জ্ঞান ফেরেনি! ডাক্তার কয়েকজনে মিলে আযাদের চিকিৎসা করে! তারা জানায় রোগী গুরুতর আহত! রোগীর পায়ের উপর দিয়ে ট্রাকের চাকা গেছে! তার মেরুদন্ডের হাড় ও পা অচল হয়ে যাওয়ার সম্ভবনা বেশী! রক্তক্ষরনও খুব বেশীই হয়েছে! এমন কি হাটুর হাড় পুরোই চূর্ণ হয়ে গেছে! এখন অপারেশন করে উভয় পা ফেলে দিতে হবে! আপনারা কি ভাবছেন তার ব্যপারে? আযাদের বাবা তো কান্নায় অস্থীর! কি বলবেন ভেবে পাচ্ছেন না! আযাদের ভাই ও বোন জামাইরা ডাক্তারকে বলেন আপনারা যা ভালো মনে করেন করুন! যত টাকা লাগে আপনারা আমাদের ভাইকে সুস্থ করতে চেষ্টা করুন! ডাক্তার বলেন সব সময় টাকা দিয়েও সবকিছু করা যায়না! ডাক্তার একটি কাগজ দেয় সই করার জন্য আযাদের বাবা সেটাতে সই করে দেন! শুরু হয় আযাদের অপারেশন! প্রায় কয়েক ঘন্টা অপারেশন করে ডাক্তার রোগীর জ্ঞান ফিরার অপেক্ষাতে আছে! এবং সবাইকে বলছে সবাই দোয়া করুন যাতে আগামি আট ঘন্টার মধ্যে তার জ্ঞান ফিরে নয়তো বড় ধরনের সমস্যা হয়ে যেতে পারে! সবাই প্রান ভরে দোয়া করছে যাতে আযাদের জ্ঞান তাড়াতাড়ি ফেরে!
প্রায় চার ঘন্টা পরে আযাদের জ্ঞান ফিরে আসে! সবাই খুশি হয় তার জ্ঞান ফিরে আসাতে! আযাদ সবাইকে দেখে জানতে চায় আমি এখানে কেন? কি হয়েছে আমার? সবাই তাকে শান্তনা দেয় কিছুই হয়নি! আযাদ মনে করতে চেষ্টা করে কি হয়েছিল তার? আযাদের মনে পড়ে সে মটর সাইকেল চালাচ্ছিলো আর পেছন থেকে ধাক্কা লেগে মাটিতে পড়ে গিয়েছিলো তারপর আর কিছুই মনে নেই! আযাদ উঠতে চেষ্টা করে তখন সে অনুভব করে তার পা এবং মাজা নাড়াতে পারছেনা! সে বলে আমার কি হয়েছে আমার পা নাড়াতে পারছিনা কেন? আমি উঠতে পারছিনা কেন? তোমরা বলো আমি কি পঙ্গু হয়ে গেছি? সবাই চুপ করে কাঁদতে থাকে! আযাদ বুঝতে পারে তার বড় কোন সমস্যা হয়েছে! সে খোকাকে ডেকে বলে ভাই তুই আমার খুব আদরের ভাই তুই আমাকে বল আমার কি ধরনের সমস্যা হয়েছে? আমি কি উঠে দাড়াতে পারবোনা? খোকা ও খুব কাঁদতে থাকে! কি বলে ভাইকে শান্তনা দেবে? কোন ভাষাই যে জানা নেই এখন! খোকা বলে ভাই আপনি চিন্তিত হবেননা ইনশা-আল্লাহ আপনি সুস্থ হয়ে উঠবেন! আপনি উত্তেজিত হবেন না! আযাদ খুব কাঁদতে থাকে কি হতে কি হয়ে গেলো? আযাদ যদিও বুঝতে পারেনি তার উভয় পা কেটে ফেলা হয়েছে! কিন্তু সে অনুভব করে তার মারাত্বক সমস্যা হয়েছে! আযাদ আর কিছুই ভাবতে পারেনা!
আযাদের দুই বোন খুব কাঁদে বাসায় আর বলতে থাকে কেন এমনটি হলো? কেন সুখ তার জীবনে আসার আগেই হারিয়ে গেলো? দুইদিন পর বিয়ে! সব আয়োজন সম্পন্ন! দাওয়াতের কার্ড দেয়া শেষ! বিয়ের কেনাকাটাও শেষ কিন্তু এরই মাঝে কি থেকে কি হয়ে গেলো? দুই বোন পরের দিন ভাইকে দেখতে যায়! আযাদ দুই বোনকে খুব অনুরোধ করে বোন তোরা আমার কাছে কিছুই না লুকিয়ে বলে দে আমার কতটুকু সমস্যা হয়েছে? ভাইয়ের কান্না আর কষ্ট দেখে বোনেরা ভাইকে বলে দেয় তার মেরুদন্ডে হাড়ের শেষাংস সহ দুই পা অচল হয়ে গেছে! তার মাজাতে কোন শক্তি নেই সে যতদিন বাঁচবে হুইল চেয়ারে চলা ফেরা করতে হবে! আযাদ শুনে এত পরিমানে কাঁদছে যে তাকে কেউই শান্তনা দিতে পারছেনা! ডাক্তার এসে বলছে আপনি কি সুস্থ হতে চান? নয়তো এভাবে উত্তেজিত হলে আপনি আরো আহত হয়ে যাবেন! আপনি শান্ত থাকুন! ডাক্তার আযাদের বোনদেরকে রাগত স্বরে বলে আপনারা কেন উনাকে এখনই এসব বলতে গেলেন? উনি আরো কিছুটা সুস্থ হলে কি বলতে পারতেন না? যাক পারলে শান্তনা দিন! কারন এখন উনাকে যতটা সম্ভব শান্ত থাকতে হবে! উনাকে কোন কিছুতেই উত্তেজিত হতে দেয়া যাবেনা! বোনেরা চুপ করে থাকে! ডাক্তার চলে যায়!
আযাদ বোনদেরকে বলে তোমরা কি কানিজের পরিবারকে এঅবস্থার কথা জানিয়েছো? বোনেরা বলে হাঁ জানিয়েছি কানিজ বলেছে আসবে! আযাদ ভাবতে থাকে কানিজ আসতো আমার ঘরে লাল বেনারশি পরে আর এখন আসবে একজন পঙ্গু ব্যক্তিকে দেখতে? কেন আসবে কানিজ? ওর আসা ঠিক হবেনা! তোমরা না করে দাও ওকে সে যেন না আসে এখানে! আযাদের বোনেরা বলে আমরা বলার আগেই তিনি সিদ্ধান্ত নিয়েছেন আসবেন! কিন্তু কখন যে আসবে সেটা বলেননি! ভাই আপনি ভাববেন না কানিজ আসুক এসে হয়তো বিয়ে ভেঙে দেবে বা এমন কিছুই হবে বলা যায়! আপনি প্রস্তুত থাকুন সে যা বলে তা শুনার জন্য! আযাদ মুখটাকে একপাশে ঘুরিয়ে নেয়! আর ভাবে কানিজ আসলে কি ভাবে তার দিকে তাকাবে? কি বলবে সে কানিজকে? এসব ভাবতে ভাবতে আযাদ অন্য জগতে পাড়ি জমায়! জীবনটা এমন না হয়ে অন্য রকমও তো হতে পারতো! আযাদ নানা রকম ভাবনায় ডুপ দিয়ে চোখ বন্ধ করে রাখে! বোনেরা বাহিরে গিয়ে বসে থাকে! এরই মাঝে ওর বোন জামাইরা আযাদকে ঘুমাচ্ছে ভেবে বাহিরেই বসে! ডাক্তার আসে ওর বোন জামাইদের ডাকে আর জানতে চায় রোগী কি বিবাহিত? তারা না বললো! আর বললো আগামি কালকেই ছিলো রোগীর বিয়ের তারিখ! আর আজকে রোগী হয়ে বেডে শুয়ে আছে! ডাক্তার বলে শুনুন আপনারা শান্ত হোন এবং রোগীর সামনে যতটা সম্ভব স্বাভাবিক থাকার চেষ্টা করুন! ডাক্তার বলেন রোগী বিয়ে করলেও একজন স্বামীর মত স্ত্রীর সাথে ব্যবহার করতে পারতেন না! কারন তিনি সে ক্ষমতা হারিয়েছেন! এখন যতদিন বেঁচে থাকবেন উনাকে আরেকজনের সহযোগীতা নিয়ে চলতে হবে! উনি কখনোই নিজের কাজ নিজে করতে পারবেন না! উনাকে কারো না কারো সহযোগীতা নিয়ে দৈনন্দিনের কাজ সমাধা করতে হবে! আপনারা আপাতত রোগীকে এসব বলবেন না! কারন রোগী মানষিক চাপ অনুভব করলে তার রোগ আরোগ্য হতে বেশী সময় লাগবে!
আযাদ ঘুমের মত শুয়ে থাকলেও ঘুমায়নি! সে সবকিছু শুনেছে! জীবনের বাকি দিনগুলো তাকে কারোর না কারোর মুখাপেক্ষী হয়ে থাকতে হবে! আযাদ এবার নিশ্চল হয়ে শুয়ে আছে সে আর এখন কাঁদছেনা! কেঁদে কি হবে? এটাকেই বলে তাকদ্বীর! নয়তো কি হবার ছিলো আর কি হলো? সে এবার শক্ত মানুষ; যাকে বলা যায় পাথরের মানুষ! আযাদের মনে হতে থাকে জীবনটা বড়ই বৈচিত্রময়! নয়তো এমন হলো কেন? কেন সে বেঁচে রইলো? মরে গেলেই হয়তো ভালো হতো আরো! আযাদের যে সুন্দর ভাবনা ছিলো মনের মাঝে তা আজ কালো মেঘে ঢেকে গেছে আর কোনদিন সে মেঘ সরে সুখের রশ্নি উদয় হবেনা! ডাক্তার চলে যায় তাদের কথা শেষ করে! আর ওর বোন জামাইরা বাহিরে গিয়ে বসে নানা রকম আলোচনা করে! এরই মাঝে কানিজ ফাতেমা আসে ওর বাবাকে সাথে করে! কানিজের বাবা জানতে চায় আযাদ এখন কি ঘুমাচ্ছে? তারা বলে হাঁ! কানিজ বেশ কিছু সময় বাহিরেই অপেক্ষা করে! অপেক্ষা যেন তাকে আর বশ মানাতে পারছেনা! সে উঁকি দিয়ে দেখতে চেষ্টা করে আযাদ কি করছে! কানিজ বুঝতে পারে আযাদ জেগে আছে! কানিজ সবাইকে বলে ভেতরে যায়! আযাদকে সালাম দিয়ে বলে কেমন আছেন? আযাদ মুখকে অন্যদিকে রেখেই সালামের জবাব দেয়! আর বলে এই তো যেমন দেখছো! কানিজ শান্তনা দেয় এত হতাশ হবেননা! কারন এর মাঝেই হয়তো কোন কল্যান লুকায়িত আছে! দুজনেই অনেক ক্ষন চুপ করে থাকে! আযাদ কানিজের কোন খরব না নিয়েই জানতে চায় কানিজ কেন এসেছো একজন পঙ্গুকে দেখতে? এমন কি কানিজের মুখপানে একবার তাকাওনি! শুধু বলে চলেছে কেন নিজেকে আরো কষ্টের সাথে জড়াতে চাইছো? আমার জীবনে যা হবার তাতো হয়েই গেছে! তুমি আমাকে মাফ করে দাও! আর নতুন কাউকে খুজে সংসারি হও! কানিজ চুপ করে শুনছে আযাদের কথা আর কান্নায় ভেঙে পড়ছে! কি বলবে এখন কানিজ?
বিষয়: সাহিত্য
১৩২৪ বার পঠিত, ৩২ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
জগত সংসারে এমন অনেক অনাকাংখিত মর্মান্তিক ঘটনা ঘটে যায়, যার কারণে বিশ্বাসের হের-ফেরও যায়।
আল্লাহর লীলা বুঝা দায়!!
আযাদ-কানিজদের জন্যে তবুও শুভ কামনা.....
আযাদের মর্মান্তিক পরিণতি দেখে খারাপই লাগছে। কানিজের ভবিষ্যতের ব্যাপারে তার চিন্তা-ভাবনা ওর দিক থেকে সঠিক মনে হলেও, ১০০ ভাগ সঠিক ছিল কি? যেখানে কানিজের ভালোবাসা ওর জন্য লক্ষ্য করা গেছে, সে ক্ষেত্রে আযাদের ওকে দূরে সরানোর কোনো নিগুঢ় রহস্য রয়েছে কি? কেউ না কেউ তো আযাদকে দেখবেই, ওর খেয়াল রাখবে, সেটা কানিজ হলে ক্ষতিটা কোথায়?
খুব ভালো লাগল লিখাটি। আরো লিখা নিয়ে আআমদেরকে উপহার দিবেন সেই প্রত্যাশায় রইলাম।
জাজাকাল্লাহু খাইর।
সুন্দর পরামর্শ দিয়ে মন্তব্য রেখে যাবার জন্য জাজাকাল্লাহু খাইরান!
অনেক সুন্দর হচ্ছে আপু এগিয়ে যান ।
দোয়া করবেন যেন লিখতে পারি!
ভালো লাগলো অনেক ধন্যবাদ । যাযাকাল্লাহ
মন্তব্য করতে লগইন করুন