হাদীসের আলোয় কবে?

লিখেছেন লিখেছেন মাহবুবা সুলতানা লায়লা ০৫ অক্টোবর, ২০১৪, ০৬:৩৮:২৬ সন্ধ্যা

মানুষ সর্ব শ্রেষ্ঠ জাতি হয়েও কখনো কখনো শয়তানের প্ররোচনায় নিকৃষ্ট কাজ করে ফেলে! আবার ক্ষমামূখীও হয়! অনেকের জীবন বৃত্তান্ত থেকে জানা যায় জীবনের তিন সময়ের দুই সময়ই পার করেছে দুনিয়া মুখী হয়ে! অবশেষে তিন সময়ের শেষ সময়ে এসে বুঝতে পারেন তার কি করা দরকার ছিলো সে কি করেছে? তখন এক আল্লাহর সমীপে নিজেকে পেশ করে আল্লাহর থেকে ক্ষমা নিয়ে নিজেকে আবারও সুন্দর করতে সচেষ্ট হয়! জীবনের ভুলগুলো সবাই এক সময়ে বুঝতে পারেনা! কেউ বুঝতে পারে আগে আর কেউ আর পরে! আবার কেউ কেউ সময় একেবারে শেষ করে! আর সব রকম গোমরাহী থেকে হেদায়াত পাওয়াটা খুবই সৌভাগ্যের ব্যাপার! সবাই এই সৌভাগ্যের অধিকারি হয়না! কেউ কেউ আপন চেষ্টায় সেই সৌভাগ্য অর্জন করে আর কেউ কেউ জীবন পথে হোচট খেয়ে পরে সেই অর্জনটুকু সাধন করে! উভয়েরই সৌভাগ্য বলতে হবে!

বাস্তব গল্পঃ-

ছোট বয়সটাতে কত কি করেছি ভুল করলেও কেউ ধমক দেয়নি! রাগ করেনি! বরং বুঝিয়ে বলেছে! কিন্তু যখনই বয়স আরেকটু বাড়তে শুরু করল তখন থেকেই কেবল শাসন আর শাসন! ধমক আর ধমক! আর বিধি নিষেধে যেন জীবনটাকে তেঁতো লাগতো! ছোট বেলা থেকে দেখতাম সমবয়ষীদের সাথে মিশলে একটু পরেই ঝগড়ার নালিশ, একটু পরেই আবার মিল! এসব আমার ভালো লাগতো না! তাই আমি বেশীর ভাগ ক্ষেত্রেই বুড়ো নানী দাদীদের সাথে সম্পর্ক রাখতাম তাদের থেকে একদিকে অনেক আদর পেতাম আর অপরদিকে তারা আদরে আদরে শেখাতেন অনেক অজানা গল্প! নবী (সঃ) এর জীবনি ও হাদীস! সাহাবী সাহাবীয়াদের ঘটনা তখন খুবই ভালো লাগতো মনে হতো আল্লাহ আমাকে অনুগ্রহ করেছেন বলেই আমি এই মুরুব্বীদের কাছ থেকে আল্লাহর বড়ত্ব ও তার প্রিয় হাবীব (সঃ) এর জীবনী সম্পর্কে জানার সুযোগ করে দিয়েছেন! জীবনের প্রথম যখন এই হাদীসখানা পড়লাম তখন মনে হয়েছিল আল্লাহ কত বড় যে রাস্তা থেকে সামান্য কাঁটা বা যেকোন কষ্টদায়ক বস্তু সরিয়ে দিলেই ঈমানের অধিকারি হওয়ার সুযোগ করে দিয়েছেন! সুবহানাল্লাহ! কত বড় ফজিলতের কথা!

রাসূলুল্লাহ (সঃ) বলেছেন, ঈমানের ৭০টিরও অধিক শাখা প্রশাখা রয়েছে । তন্মধ্যে সর্বোত্তম হল 'লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ' এইকথা বলা এবং সর্বনিন্ম স্তর হল রাস্তা থেকে কষ্টদায়ক বস্তু সরিয়ে দেয়া! আর লজ্জা হল ঈমানের একটি শাখা! মুরুব্বীরা তখন বলেছিল শুধু জানলে চলবেনা মানতে ও হবে! যে যার অবস্থানে থেকে সাধ্যানুযায়ী মানতে চেষ্টা করবে! তখন এতটা বুঝতে শিখিনি তবুও দাদীজানদের কথা মানতে চেষ্টা করেছি! চলার পথে যখনই কিছু পড়ে থাকতে দেখেছি সেটাকে যেকোন ভাবে সরিয়ে দিয়েছি! কোথাও বৃষ্টি হয়ে কাদা জমে গেছে সেখানে ইট দিয়ে পথ বানিয়ে দিতাম! তখনকার সময়ে পথে বেশীর ভাগ বরই গাছের কাঁটা পড়ে থাকতো অথবা মাটির হাড়ি ভাঙা টুকরা পড়ে থাকতো তা সরিয়ে দিতাম একমাত্র আল্লাহর নবী (সঃ) হাদীসকে বাস্তবায়ন করতে! অনেকের প্রশ্ন জাগতো কেন এরুপ করছি! শুধু বলতাম ভাল কাজ সবার করা উচিৎ!

একদিনের ঘটনাঃ- যে পথ দিয়ে সব সময় চলতাম সে পথে কখনো একাকি চলতাম না কয়েকজন একসাথে চলতাম! পথে কয়েকজন ছেলে বসে থাকতো! তারা অনেকবার লক্ষ করে আমরা যারা এপথ দিয়ে চলি তারা প্রত্যেকেই রাস্তা থেকে ইট, পাথর, মাটির ভাঙা হাড়ির টুকরা এসব সরিয়ে দিতো! কোন সময় কিছুই বলতো না! একদিন সে পথে চলতে দেখি একটি বড় ইটের ভাঙা টুকরা পড়ে আছে আমি তাড়াতাড়ি সেটাকে পা দিয়ে ধাক্কা দিয়ে রাস্তার কিনারাতে রেখে আসি! পেছন থেকে কয়েক জন ছেলে বলে উঠলো দোস্ত আজকে যদি এটা ইট না হয়ে পায়খানা হতো হবে কি করতো বলতো? আরেকজন বলল কি আর করতো পাশ কাটিয়ে চলে যেত! আমাদের থেকে একজন বলে উঠলো যদি পায়খানা হতো তবে বালি এনে ঢেকে দিতাম! ছেলেগুলো এই কথা শুনে মাথা নিচু করে রাখে! কিছুদিন পরে দেখলাম তারা ও রাস্তা থেকে কষ্ট দায়ক বস্ত সরিয়ে দেয়! মানুষের কাজে সহযোগীতা করে! কেউ বাজার করে আনতে কষ্ট হচ্ছে তাদেরকে তাদের ঘরে পৌছে দিতো! তখন আমার ছোট্ট মন বলে উঠতো ইস; যদি সবাই আমাদের প্রিয় নবী (সঃ) এর অনুসরন করতো তবে কি যে ভালো হতো!

আর এখন মনে হয় যদি সব মানুষই এক আল্লাহর পথে থাকতো আর রাসূল (সঃ) এর আদর্শের অনুসারি হতো তবে এত ফেতনা ফ্যাসাদ থাকতো না! হত্যা গুম হতে হতোনা মুসলমান ভাইদেরকে! কোন অপশক্তির ভয় থাকতো না! থাকতো না মানুষে মানুষে বিদ্যেষ! কবে যে পৃথিবীর আকাশে আবার উড্ডীন হবে সেই বিজয়ের পতাকা? কবে যে সকল মানুষে মানুষে আবার ভাতৃত্ববোধ গড়ে উঠবে? কবে আবার একে অপরের জন্য জীবন দিতে প্রস্তুত হবে? কবে যে আবার পৃথিবীকে সত্যের আলোয় আলোকিত করতে ইসলামের সূর্যদ্বয় হবে? কবে যে সবাই আবার মুক্ত মনে মুক্ত বিশ্বাসে চলবে প্রিয় নবী (সঃ) এর পথে? আমার দু-চোখ কি সে সত্যের আলো দেখতে পাবে? দেখতে পাবে কি ইসলামের বিজয়? আমরা কি নতুন আগামিকে প্রিয় নবী (সঃ) এর বাণী পৌছে দিতে পারবো নিষ্কলুষ ভাবে? আর সে সত্যের আলোয় সেই আগামি হবে সুন্দর ও পাপ মুক্ত! তার সত্যে বিশ্বাসী হবে, হবে সত্যের অনুসারী! আমার অন্তর চোখ সেই দৃশ্য দেখার কাংখিত অপেক্ষায় অপেক্ষমান..............................কবে যে পূরন হবে সেই কাংখিত চাওয়া....................... নিরবে নিভৃতে মনের শুধু একটিই জিজ্ঞাসা! কবে পাবো সেই জবাব? এরপরের শান্তনা হলো আমি সেদিন পাই বা না পাই আমাদের আগামি যেন সেই সত্যের সন্ধান পায় এবং সেই সত্যের অনুসারী হয়! আর এভাবেই পৃথিবী চলতে থাকুক অনন্তের পথে............সঠিক দিকনিদর্শন নিয়ে হে আল্লাহ মনের সকল চাওয়া তো তুমি জানোই সে হিসেবেই কবুল করে নাও আমরা যে তোমারী দূর্বল বান্দা বান্দি..............!

বিষয়: সাহিত্য

১১৭৬ বার পঠিত, ১৪ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

271685
০৫ অক্টোবর ২০১৪ সন্ধ্যা ০৬:৫৫
মামুন লিখেছেন : খুব সুন্দর বিশ্লেষণধর্মী লিখাটি প্রাণ ছুঁয়ে গেলো বোন!
আপনার লিখার সাথে সহমত-"ইস; যদি সবাই আমাদের প্রিয় নবী (সঃ) এর অনুসরন করতো তবে কি যে ভালো হতো!"। কারণ আমাদের জন্য উত্তম আদর্শ রয়েছে মহানবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এর জীবনের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত ২৪ ঘন্টার আমলি জীবনে। এখন যারাই সেভাবে মানবে, তারাই সফলকাম হবে। এতে কোনো সন্দেহ নেই এবং বহুল পরীক্ষিত।
ধন্যবাদ সুন্দর লিখাটি উপহার দেবার জন্য। জাজাকাল্লাহু খাইর। Thumbs Up Thumbs Up Thumbs Up Rose Rose Rose Good Luck Good Luck Good Luck
০৫ অক্টোবর ২০১৪ সন্ধ্যা ০৭:০৬
215809
মাহবুবা সুলতানা লায়লা লিখেছেন : আপনার শুকরিয়া সুন্দর একটি মন্তব্য রেখে যাবার জন্য....।
271693
০৫ অক্টোবর ২০১৪ সন্ধ্যা ০৭:৩৬
সুশীল লিখেছেন : ভালো লাগলো অনেক ধন্যবাদ
০৫ অক্টোবর ২০১৪ রাত ১১:২৯
215869
মাহবুবা সুলতানা লায়লা লিখেছেন : আমার ব্লগ আপনার আগমনে মুখরিত! ধন্যবাদ এসে মন্তব্য রেখে যাবার জন্য
271705
০৫ অক্টোবর ২০১৪ রাত ০৮:৫৮
ফেরারী মন লিখেছেন : আর এখন মনে হয় যদি সব মানুষই এক আল্লাহর পথে থাকতো আর রাসূল (সঃ) এর আদর্শের অনুসারি হতো তবে এত ফেতনা ফ্যাসাদ থাকতো না! হত্যা গুম হতে হতোনা মুসলমান ভাইদেরকে! কোন অপশক্তির ভয় থাকতো না! থাকতো না মানুষে মানুষে বিদ্বেষ!

সুন্দর বলেছেন। জাজাকাল্লাহ। তবে আমার খুব জানার ইচ্ছে রাসুল (স.) অনুসারি এবং চার খলিফার দুজন আলী (রা.) ও ওসমান (রা.) ইসলামের খেদমতে যাদের অবদান অনস্বীকার্য তাদের ভিতর কেন দ্বন্দ্ব সংঘাত হয়েছিলো সেটা আমার বোধগম্য নয়। তাহলে তাদের ভিতর যদি এরকম ঝগড়া ফ্যাসাদ হয় তাহলে আমাদের মত ধুলাবালিদের কেন হবে না?

০৫ অক্টোবর ২০১৪ রাত ১১:৩২
215871
মাহবুবা সুলতানা লায়লা লিখেছেন : আমি যতদুর জানি ইসলাম ধর্ম গ্রহনের আগে ছিল সে বিষয়গুলো! যখন থেকে উনারা ইসলামের সুশীতল ছায়াতলে সমবেত হয়েছেন তখন থেকে নিজেদের মাঝে এমন হানাহানি হয়নি! মতের অমিল হয়নি! বরং আমাদের প্রিয় হাবীব (সঃ) এর যেভাবে দিকনির্দশনা দিয়েছেন তাই একবাক্যে সবাই মেনে চলেছেন!
ধন্যবাদ মন্তব্য রেখে যাবার জন্য
271724
০৫ অক্টোবর ২০১৪ রাত ১০:১১
রিদওয়ান কবির সবুজ লিখেছেন : অনেক ধন্যবাদ ভালো লাগলো
০৫ অক্টোবর ২০১৪ রাত ১১:৩২
215872
মাহবুবা সুলতানা লায়লা লিখেছেন : সবুজ ভাই ভালোলাগা রেখে যাবার জন্য আপনার শুকরিয়া!
271749
০৫ অক্টোবর ২০১৪ রাত ১১:২৬
ইমরান ভাই লিখেছেন :
০৫ অক্টোবর ২০১৪ রাত ১১:৩৪
215876
মাহবুবা সুলতানা লায়লা লিখেছেন : ফুলেল শুভেচ্ছা রেখে যাবার জন্য আপনার শুকরিয়া!
271750
০৫ অক্টোবর ২০১৪ রাত ১১:৩০
আবু সাইফ লিখেছেন : আসসালামু আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহ..

আপনার আশেপাশে কিন্তু তেমন মোহনীয় দৃশ্য দেখা যায় বলে জেনেছি- হয়তো খুব সীমিত!
আর এসব প্রচারও খুব কম হয়



হে আল্লাহ মনের সকল চাওয়া তো তুমি জানোই সে হিসেবেই কবুল করে নাও আমরা যে তোমারী দূর্বল বান্দা বান্দি......... আমীন
০৫ অক্টোবর ২০১৪ রাত ১১:৩৫
215879
মাহবুবা সুলতানা লায়লা লিখেছেন : এখন তো এসব খুবই স্বল্প পরিমাণে প্রচার ও প্রসার হয় আর তাইতো আমরা সবদিক থেকে পিছিয়ে পড়েছি! আল্লাহ সহায় হোন আমাদের সকলের! আমিন!
271948
০৬ অক্টোবর ২০১৪ সন্ধ্যা ০৬:১৪
আফরা লিখেছেন : অনেক সুন-দর লিখেছেন আপু । অনেক ভাল লেগেছে আপু ।
০৬ অক্টোবর ২০১৪ সন্ধ্যা ০৭:৪৪
216074
মাহবুবা সুলতানা লায়লা লিখেছেন : দোয়া করবেন আমার জন্য যেন জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত সঠিক পথে থাকতে পারি ঈমান নিয়ে মরতে পারি! ধন্যবাদ আপনাকে

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File