ছবরই সুখ (ঈদুল আযহা নিয়ে)
লিখেছেন লিখেছেন মাহবুবা সুলতানা লায়লা ০৪ অক্টোবর, ২০১৪, ০৩:৫২:১৯ দুপুর
ঈদ মোবারক সবাইকে সাথে সুন্নতী সালাম!! আর সকলকে (সৌদি) মদিনা প্রবাসীর পক্ষ থেকে ঈদ মোবারক! ও লাল গোলাপ শুভেচ্ছা!
ঈদ মানে খুশি! ঈদ মানে আনন্দ! ঈদ মানে একে অপরের আনন্দকে ভাগাভাগি করে নেয়া! ঈদ সবার ঘরে বয়ে আনে অনাবিল আনন্দের ঢেউ! সত্যিই কি সবার ঘরে ঈদের পূর্ণ আনন্দ এসে পৌছায়? নাকি কোন কোন ঘর এই আনন্দ থেকে (মাহরুম) বঞ্চিত থাকে! আমরা সবাই মুখে ঈদের আনন্দ বিলিয়ে দেয়ার কথা বললেও সবাই কি বিলাই সবার মাঝে সেই আনন্দ? না! সবাই এত উদার হয়ে বিলিয়ে দেইনা সেই আনন্দ! কেউ কেউ কৃপনতাও করি সেই আনন্দ বিলাতে!
ছোট গল্পঃ- ছবরেই সুখ!!
একটি ছেলে আর বউ নিয়ে লিটনের প্রবাসের সংসার! এসংসারে তেমন টাকা নেই কিন্তু সুখের অভাব নেই বললেই চলে! কারন তারা উভয়েই বর্তমান পেক্ষাপট সামনে রেখে কাজ করে! আর সে হিসেবে যেটা না করলেই নয় সেটাই তারা করে! আর যেটা না করে থাকা যাবে সেক্ষেত্রে সেই বিষয় থেকে বিরত থাকে! গত ঈদেও তাদের কোন কেনা কাটা হয়নি! কোন জাঁকজমক বাজার হয়নি শুধু ঘরে যা ছিল তা দিয়েই ঈদের মত মহাৎসব পালন করেন! আর ছবর করেন! হয়তো এর প্রতিদান আল্লাহ দেবেন! আল্লাহর প্রতিদানের আশায়ই তারা ছবর নামক রশি ধরে আছেন! কখনো কোন বিষয় নিয়ে মন খারাপ হতেই পারে কিন্তু তারা দুজনেই সেই মন খারাপের বিষয়টাকে স্থায়ী করেন না! কারন যা হবার নয় তা নিয়ে তোলপাড় করে কোনই লাভ নেই বরং সংসারে অশান্তি! দুজনের মনের মাঝে বিরহের ঝড় তুলে দুচোখে কষ্টের বন্যা বইয়ে দিয়ে কি লাভ! এর চেয়ে ছবর করাই শ্রেয় মনে করেন তারা! আর তাদের সন্তানকেও এটাই বুঝাতে চান যে আমাদের যা আছে আমরা তা নিয়েই খুশি আছি! ছেলের কোন আবদার নেই ঈদের কোন কিছু নিয়ে!
এই তো গেল ঈদুল ফিতরের কথা! এবার কোরবানির ঈদেও দেশে বাবা মায়ের ঈদ খরচ আর কোরবানির খরচ দিয়ে, তাদের ঘর ভাড়া দিয়ে, বউয়ের চিকিৎসা করিয়ে একেবারে পকেট শূন্যের কোঠায় পৌছে গেছে! এঈদেও কোন কিছুই করা হবেনা! না পোষাক কেনা আর না কোরবানি করা! আর না ব্যয়বহুল বাজার করা! তারপরও তারা আল্লাহর কাছে ছবর করে আছেন! ঈদের নামাজ পড়ে ফেরার পথে ছেলেকে কিছু চকলেট আর একটি বল কিনে দেন ছেলে তো এতেই মহা খুশি! আর কিছু টাকা বকশিশ দেন ছেলেকে, বউকেও দেন কিছু টাকা ব্যস ঈদের আয়োজন শেষ; ঘরে এসে পান্তা ভাত আর বাসি তরকারি খেয়ে মা ছেলে ঘুম পড়েন! আর লিটন মিয়া নিত্য দিনের মত কাজের উদ্দেশ্যে বের হোন! যাতে করে পকেটের শূন্যতা কিছুটা ঘুচায়! আর এভাবেই চলে তাদের জীবন ভেলা! মাঝখানে তারা সর্ব বিষয়ে ছবর করেন! কারন পোষাক আর ঈদ খরচের চাহিদাকে সামনে রাখলে সংসারে শুধু দন্ডই হবে! তাই তারা এসব চাহিদাকে পেছনে রেখে নিজেরা নিজেদেরকে সুখি রাখতে চান! যদিও অভাব আছে! কষ্ট আছে! আছে মনের মাঝে নানা রকম চাহিদা এসবের পরও তারা কোন কিছুকে প্রশ্রয় দিতে চাননা! কারন এসবের একটিকেও যদি প্রশ্রয় দেয়া হয় তাহলে সংসার সুখের নয় দুঃখের সাগরে ভাসবে! আর এটা তারা কেউই চায়না! বরং তারা স্বামী স্ত্রী একে অপরের মুখে হাসি দেখতে চান! আর আল্লাহও তাদেরকে সব সময় হাসি আনন্দের মাঝেই রাখেন! তাদের মনের ভেতরের সুপ্ত ইচ্ছাগুলোকে ধীরে ধীরে পূরন করনের মাধ্যমে!
ছোট গল্পঃ- রিযিকে থাকলে আসবে!
ছেলে মাকে বলে মাগো আজকে কোরবানির ঈদ! সবাই কোরবানি করবে! নতুন জামা পড়বে! একে অন্যের বাড়িতে বেড়াতে যাবে! আরো কত কি খাবে? আমরা কি কোথাও যাবো না মা? আমরা সবসময়ই কেন এত কষ্টে কাটাবো মা? আমাদের অভাব কবে ঘুচবে মা? কবে আমরাও সবার মত করে কোরবানি করতে পারবো? কবে নতুন জামা পরে ইচ্ছে মত মজা করতে পারবো? সেই দিন কি মা আসবেনা? মা বলে আমরা আল্লাহর মেহমান! তিনি যেভাবে মেহমানদারি করেন তাতেই আমাদের খুশি থাকা উচিৎ! ছেলের বন্ধু রাশেদ এসে ডাকতে থাকে হেলাল আয় যাবিনা? হেলাল জানতে চায় কোথায় যাবি? রাশেদ বলে কেন তোর মনে নেই আজকে কোরবানি? লোকেদের বাসায় গোশত আনতে! হেলাল মায়ের মুখপানে চেয়ে থাকে! মা বলেন না রে বাবা রাশেদ তুই যা! আমাদের রিযিকে থাকলে আসবে! নয়তো মানুষের ধমক, আর মার খাওয়ার জন্য যাওয়ার দরকার নেই! রাশেদ বলে খালাম্মা সেই ঈদে তো আমরা এক অহংকারির বাসায় গেছিলাম! এবার আর ঐবাসায় যাবোনা! অন্য বাসায় যাবো! হেলালের মা তবুও না করে দেন রাশেদকে! রাশেদ চলে যায়! হেলাল মাকে বলে মা মাগো সেই যে কবে কোরবানির ঈদে গরুর গোশত খেয়েছিলাম আর খাইনি! খুব মান চায় গরুর গোশত ভুনা খেতে! ছেলের কথা শুনে মায়ের চোখে পানি চলে আসে! মা বলেন; বাবারে সবকিছুর এত দাম কেমনে কি করি! তোর বাবার স্বল্প আয়ে এই সংসার চলে! এককেজি গোসতের দাম তিনশত টাকা! আর তা দিয়ে আমাদের সবজি বাজার চলে দুইদিনের গোসত কিনলে বাকি খরচ কি দিয়ে করবো?
আর কি দিয়েই বা মানুষের ঋন পরিশোধ করবো? এজন্যেই তো শাক-সবজি খেয়ে মানুষের ঋন থেকে মুক্ত হতে চেষ্টা করছি! ছেলে মাকে ধরে খুব কাঁদেন! মাগো মা এই অভাবের দিন কবে শেষ হবে রে মা? কবে আমরা পেট ভরে, মন ভরে কোরবানির গোশত খেতে পারবো? মা বলেন বাবারে এত হতাশ হইসনা রিযিকে থাকলে যে কোন ভাবেই আসবে! আল্লাহর উপর ভরসা কর বাবা! হেলালের বাবা রিকসা চালক! পেটের দায়ে ঈদের দিনেও কাজে বের হতে হয়! সন্ধ্যা পর্যন্ত কাজ করবেন এরপর বউ ছেলেকে সময় দেবেন! একজন ভদ্র লোকের পাঁজারো কার চলতে পথে হঠাৎই বন্ধ হয়ে গেছে! কোন ভাবেই ষ্ট্যাট নিচ্ছে না! তার মানে গাড়ি নষ্ট হয়ে গেছে গেরেজে নেয়া ছাড়া আর ঠিক হবেনা! ভদ্রলোক অনেক ক্ষন দাড়িয়ে থেকে গাড়ি খুজলেন কিন্তু পথে আজকে কোন গাড়িই নেই! হতাশ হয়ে বাড়িতে কয়েকবার কল করলেন কেউই রিসিভ করলো না! কি করবেন ভাবছেন ভদ্রলোক! এই সময়েই হেলালের বাবা একজন বুড়ো ভদ্রলোককে রোদে দাড়িয়ে থাকতে দেখে জানতে চাইলেন সাহেব কোথায় যাইবেন? লোকটা বলল হঠাৎই গাড়িটা নষ্ট হয়ে গেছে! এখন বাসা পর্যন্ত পৌছতে হবে! তুমি কি যাবে? হেলালের বাবা বলল যাবো চলেন! কোথায় যাবেন সাহেব? লোকটা বলল বাধিধারা! হেলালের বাবা সেদিকে চললেন! পৌছে দিলেন! লোকটা বলল কত ভাড়া দিতে হবে? হেলালের বাবা বলল সাহেব দেন আপনি ইনসাফ করে! ভদ্র লোকটা একটি পাঁচশত টাকার নোট দিয়ে বলল এই নাও!
হেলালের বাবা বলল সাহেব ভাড়া তো এত না! ভদ্রলোক বলল শুন যা ভাড়া তাই রেখে বাকিটা তোমার বকশিশ! কারন এই ভরদুপুরে অনেকক্ষন রাস্তায় দাড়িয়ে থেকে কোন গাড়ি না থাকায় একেবারে পেরেশানিতে পরে গেছিলাম তুমি বাবা আমাকে উদ্ধার করেছ! হেলালের বাবা ইতস্ত করে টাকা নিতে! ভদ্র লোক বলল বাবা আজকে ঈদের দিন তুমি ঈদের বকশিশ মনে করে টাকাটা নাও! হেলালের বাবা কিছুটা লজ্জিত হয়ে টাকাটা হাতে নিলো! ভদ্রলোক বলল কখন বের হয়েছ বাসা থেকে লোকটা বলল সেই ভোরে! তখন লোকটা হেলালের বাবাকে বলল শুন আজকে এখনের জন্য তুমি আমার মেহমান! তুমি খেয়ে যাবে বলেই ভেতরে চলে গেল! কাজের লোক দিয়ে কিছু খাবার নিয়ে আসলো! নিচতলায় একটি খালি রুমে খেতে দেওয়া হলো! খাবার দেখে হেলালের বাবার মনে পড়ে গেল হেলাল ও তার মায়ের কথা! ওরা তো ঈদের কিছুই খেতে পারেনি! ভদ্রলোক জানতে কি ভাবছো? হেলালের বাবা বলে সাহেব বাড়িতে আমার বাচ্চাদের কথা ভাবছি! আমি এখানে খাবো আর আমার বাচ্চারা খেতে পারবেনা তাই আমিও খেতে চাইনা! আপনি খাবারগুলো নিয়ে যেতে বলেন! ভদ্রলোক বলেন শুন তুমি খাও আমি তোমার পরিবারে জন্য কিছু গোসত আর কিছু রান্না করা খাবার দিয়ে দেব তা নিয়ে তোমার বাচ্চাদের দিও! হেলালের বাবার মুখে যেন এক অনাকাংখিত হাসি ফুটে উঠলো! সে খেলো! চলে আসার সময় ভদ্রলোক দুই পলিথিন ব্যাগ হাতে দিয়ে দিলেন! আর বললেন তুমি মাঝে মাঝে এসো তোমার যে কোন দরকারে! হেলালের বাবা সালাম বিনিময়ের পর বের হতে হতে প্রান ভরে দোয়া করলো! আরো বলল হে আল্লাহ তোমার জমিনে এখনো ভাল মানুষ আছে! নয়তো এজমিন কবেই ধবংস হয়ে যেত!
হেলালের বাবা সময়ের আগেই বাসায় এসে হাজির! বাবার শব্দ শুনে হেলাল দৌড়ে বাহিরে এসে দেখে ওর বাবার হাতে দুইটা ব্যগ! সে মাকে উচ্চস্বরে ডাকতে থাকলো! মা মা গো দেখ বাবা কতকিছু নিয়ে আসছে! হেলালের মা এসে দেখে আসলেই তো সে জানতে চায় কি নিয়ে আসছো এতকিছু? স্বামী বলে হেলালের মা! আজকে একজন ভালো মানুষের দেখা পাইছিলাম তিনিই আমারে এসব দিছেন! তুমি খুলে দেখতো কি এসব? বউ খুলে দেখে রান্না করা কিছু ভুনা গোসত আর আরেকটাতে কাঁচা গোসত! হেলালের মা বললেন কি রে হেলাল বলিনি রিযিকে যদি থাকে তবে যে কোন ভাবেই ব্যবস্থা হবে! নে মন ভরে খা! হেলাল দীর্ঘ একবছর পরে গরুর গোসত ভুনা খায় আর বলেন খুব মজা! মাগো গোসত খুবই মজা! হেলালের বাবা মা তাই দেখে তৃপ্তির ঢেকুর তোলেন! আর দুজনেই একসাথে বলেন আলহামদুলিল্লাহ! মহান আল্লাহ যেকোন ভাবেই রিযিকের ব্যবস্থা করেন! আর হেলাল মজা করে কোরবানির গোসত খেতে থাকে..........আর হেলালের মুখপানে তাকিয়ে থাকেন তার বাবা মা তৃপ্তির নজরে...................!
শিক্ষনীয়ঃ- কোন অবস্থাতেই আল্লাহর উপর থেকে হতাশ হতে নেই! আর আল্লাহর কাছেই ছবর শক্তি চাওয়া উচিৎ! আর রিযিকিরে ক্ষেত্রে শুধুমাত্র আল্লাহকেই বিশ্বাস করা উচিৎ! আল্লাহ আমাদের সবাইকে সঠিক পথে পরিচালিত করুন! আমিন!
বিষয়: সাহিত্য
১৩৫৯ বার পঠিত, ২৪ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
দুটো শিক্ষনীয় গল্পে খুবই জরুরী দুটি বিষয় উঠে এসেছে, যা লিখার সর্বশেষ স্তবকে আপনি লিখেছেন। গল্প দুটিও পড়লাম। নেক ভালো লিখেছেন।
আল্লাহপাক আমাদেরকে কানায়াত (অল্পে তুষ্টি), ছবর এবং রিজিকের বযাপারে পাখিদের মত ঈমান দান করুক-আমীন।
জাজাকাল্লাহু খাইর।
আপনাকেও ঈদের শুভেচ্ছা!
আমি আপনার লিখার একজন গুণমুগ্ধ পাঠক।
আল্লাহপাক আপনার লিখায় অনেক অনেক বরকত ঢেলে দিক-আমীন।
জাজাকাল্লাহু খাইর।
আপনাকেও ঈদের শুভেচ্ছা!
অসুস্থতার কারনে নিয়মিত সবকিছু করতে পারছিনা জীবনের অনেক কাজ থেকে পিছিয়ে পড়েছি! দোয়া করবেন আমাদের জন্য! আপনাকেও ঈদের শুভেচ্ছা!
ঈদ মোবারক আপু ।
গল্পদুটো খু-উ-ব ভালো লাগলো আপু, জাযাকিল্লাহ..
ঈদের শুভেচ্ছা- কুরবানী ও ঈদ মোবারক
ত্যাগের আলোয় ব্যক্তি ও সমাজ জীবন আলোকিত হোক
ঈদের শুভেচ্ছা- ঈদ মোবারক
"কোন অবস্থাতেই আল্লাহর উপর থেকে হতাশ হতে নেই! আর আল্লাহর কাছেই ছবর শক্তি চাওয়া উচিৎ! আর রিযিকিরে ক্ষেত্রে শুধুমাত্র আল্লাহকেই বিশ্বাস করা উচিৎ!"
যথার্থই বলেছেন। আপনি নিজেকে কেমন ভাবছেন, সেটাই বড় কথা। যদি কষ্টে থেকেও মনে করেন আল্লাহ আপনাকে সুখে রেখেছেন, তবে মন তৃপ্তই থাকবে, আর যদি মনে করেন আপনি সুখে নেই, তবে সব কিছু থেকেও আপনার মন তৃপ্ত হবেনা।
অনেক ধন্যোবাদ চমতকার একটা লিখা আমাদের উপহার দিয়েছেন বলে।
মন্তব্য করতে লগইন করুন