প্রবাসীর বউ (তিন পর্ব গল্পের শেষ পর্ব)
লিখেছেন লিখেছেন মাহবুবা সুলতানা লায়লা ২৩ সেপ্টেম্বর, ২০১৪, ০৪:৩৫:১৯ বিকাল
নতুন জীবনে লোপা সুখেই আছে! গত কষ্টের জীবনের তুলনায় এ যেন জান্নাতের সুখ! তার নতুন স্বামী কখনোই কথার ছলে বা দুষ্টোমির ছলে লোপাকে আগের কোন কথা তুলে কষ্ট দেয়না! বরং লোপার মন খারাপ দেখলে নানা রকম ভাবে শান্তনার কথা বলে! আরো বলে তাকদ্বীরে এভাবে ছিল তাই এমনটি হয়েছে তুমি মন খারাপ করনা বরং আমাকে তুমি তোমার জীবন সাথির পাশাপাশি বন্ধু মনে করো তাহলে আর কোন সমস্যাই থাকবেনা! আর লোপার মেয়ে জুঁইকে আপন পিতার স্নেহে লালন করেন! আর জুঁই ও যেন এই প্রথম তার বাবাকেই খুজে পেয়েছেন! কয়েকদিন থাকার পর জুঁই ওর নানীর কাছে যেতে বায়না ধরেছে কারন শহরে ঘর বন্দি হয়ে থাকতে জুঁইয়ের ভালো লাগেনা! লোপা অনেক বুঝিয়েছে ছয় সাত বছরের ছোট মেয়েটাকে কিন্তু সে এখানে থাকবেনা নানু আপার কাছে থাকবে বলে কান্না শুরু করেছিল এক পর্যায়ে জুঁইকে লোপার বড় ভাই এসে নিয়ে যায় গ্রামেই স্কুলে ভর্তি করে দেয়! মামাই জুঁইকে দেখাশুনা করে! লোপার নতুন সংসারে আবারো নতুন মেহমান এলো এভাবে চলতে থাকল লোপার জীবন গাড়ি! চলতে চলতে লোপা আরো দুই কন্যা ও তিন পূত্রের জননী হলেন! লোপার আগের কথা ভাববার সময় এখন আর নেই! তবুও অতীত যে জীবনেরই একটি অংশ! তাকে কখনোই কিছু দিয়ে আড়াল করা যায়না! যতই অতীতকে আড়ালে রাখতে চাইবে সে ততই মনের আয়নায় ভেসে উঠে অকৎস্মাত! মনে করিয়ে দেয় সে ও জীবনেরই আরেক অংশ! তবুও লোপা কখনো মনের মাঝে তা আনতে চায়না! আর অনেক সময় মনে হলেও স্বাভাবিক থাকারই চেষ্টা করে! কারন যে মহান ব্যক্তিত্ব তাকে স্ত্রীর মর্যাদা দিয়েছে, অন্যের মেয়েকে আপন করে নিয়েছে তাকে সে কোন ভাবেই কষ্ট দিতে পারেনা! কারন এই ব্যক্তিই তার জীবনে নায়কের ভূমিকা নিয়ে তাকে দিয়েছে নতুন জীবনের সন্ধান! দিয়েছে সুখের ঠিকানা! তাই লোপা নতুন স্বামীকে খুবই মান্য করে চলে! তার মনে কষ্ট যাবে এমন সব কাজ থেকে সে বিরত থাকে!
এ ঘরে প্রথম মেয়ে বড় এর পর তিন ছেলে এক মেয়ে! ওদিকে জুঁইয়ের বয়ষ প্রায় বারো তেরো হতে চলেছে! গ্রামের একটি ছেলে তাকে অহরহ ডিস্টার্ব করে চলেছে! নানান সময় নানা রকমভাবে উৎপাত করতে থাকে! এটা সেটা গিফট করতে থাকে প্রথম দিকে জুঁই ফিরিয়ে দিলেও আস্তে আস্তে সেও দূর্বল হয়ে পরে সেই ছেলের প্রতি! আর গ্রামের পরিবেশে মা বাবা ছাড়া আদর শাষন ছাড়া মেয়ে আর কত ভালো হবে! লোপার বড়ভাই এসে লোপাকে জানায় বিষয়গুলো! লোপা জুঁইকে নিজের কাছে নিয়ে আসে কিন্তু জুঁই এখানে থাকতে রাজি নয়! প্রাইমারি পাস করেছে আর পড়া লেখার সুযোগ হয়নি! লোপার ইচ্ছা ছিলো আরো পড়াতে কিন্তু এসংসারও এখন অনেক বড় হয়ে গেছে সব মিলিয়ে জুঁইকে পড়ানো আর সম্ভব নয়! তাই বড় ভাইকে বলে দেয় একটু নজরদারিতে রাখবেন! কারন জুঁইয়ের তো এখনো বিয়ের বয়ষ হয়নি! জুঁই অনেক কান্নাকাটি করে চলে গেলো আবার গ্রামে! গ্রামে যাবার পর ঐছেলের সাথে সম্পর্ক আরো গভীর হয়! বছর দুই পরে সেই ছেলের সাথেই বিয়ের কথা বলে ওর নানীর কাছে! নানী প্রথমে মানতে নারাজ বলে আমরা দেখে শুনে বিয়ে দিয়েও তোমার মায়ের জীবনে কঠিন ঝড় বয়ে গেছে এখন তুমি এসব করনা ভাই তুমি অপেক্ষা করো আরো কিছুদিন দেখবে সুন্দর কিছু তোমার জন্য অপেক্ষা করে আছে! আর তা দিয়ে তুমি তোমার জীবনকে আরো মহোনীয় করে সাজাতে পারবে! জুঁই কিছুটা মেনে যায় কিন্তু যখনই সেই ছেলের সাথে দেখা হয় আবারও তার প্রতি দূর্বল হয়ে পড়ে এবং ছেলেটি নানা কৌশলে জুঁইকে পটাতে থাকে তোমাকে ছাড়া বাঁচবোনা! আত্মহত্যা করবো! সিগারেট খাওয়া শুরু করে জুঁইয়ের সামনে! জুয়া খেলা শুরু করে! জুঁই তখন আর নিজেকে মানাতে পারেনা! তার জন্য একটি ছেলে এভাবে মারা যাবে? নানা এ কি করে হয়? জুঁই ওর জন্য সব করতে পারবে! জুঁই আবারো কথা দেয় সেই ছেলেকে (ছেলের নাম সালেহ মতিন) এবং আরো কথা দেয় পরিবারে কেউ যদি রাজি না থাকে তবে সবাইকে ছেড়ে মতিনের কাছে চলে আসবে! বাড়িতে জুঁই ও মতিনের সম্পর্কের কথা সবার জানাজানি হয় সবাই জুঁইকে বুঝায় কিন্তু জুঁই কারো কথাই মানতে রাজি নয়! তার একটিই কথা মতিনের সাথেই তাকে বিয়ে দিতে হবে! জুঁইয়ের বড়মামা খোজ খবর নিয়ে জানে ছেলেটির সবদিক ভালোনা কিছুটা জুয়া ও সিগারেটের নেশা আছে আরো জানতে পারে ছেলেটি অলস প্রকৃতির! সব জেনে জুঁইকে জানায় তুমি ওখানে সুখী হতে পারবেনা মামনি! তুমি ভাবো আবেগ দিয়ে আর আমরা সবকিছু দেখছি বিবেগ খাটিয়ে তুমি এত আবেগে পড়না! ছবর করো জুঁই কারো কথাই মানবেনা! সে নাওয়া খাওয়া সব ছেড়ে দিয়েছে এমন কি কারো সাথে কথাও বলেনা! শেষে জুঁইয়ের মাকে খবর দেয়া হয়! জুরুরী ভাবে লোপা গ্রামে যায় কিন্তু লোপা ও ব্যর্থ হয় মেয়েকে বুঝাতে! মেয়ে বলে হয় মতিনের সাথে বিয়ে দাও নয়তো কেটে গাঙ্গে ভাসিয়ে দাও কিন্তু বিপরীত কিছু করনা! লোপা কিছুটা কঠোর হয়ে বড় ভাইকে বলে আপনি অন্য জায়গায় পাত্র দেখেন আমরা জেনে শুনে তো একজন জুয়াখোরের হাতে মেয়েকে উঠিয়ে দিতে পারিনা! অন্যত্র বিয়ে হয়ে গেলে সব ঠিক হয়ে যাবে! লোপা দুই একদিন থেকে চলে আসে ঢাকায়! লোপার বড়ভাই এদিক সেদিকে খোজ খবর লাগায় এরই মাঝে জুঁই পালিয়ে চলে যায় মতিনের সাথে! ঢাকায় খবর আসে লোপা নিজেকে দোষারোপ করতে থাকে ওর জন্যেই জুঁই এমন কাজটি করতে পারলো! কাঁদে খুব জুঁই তুই ভুল করলি রে! জীবনের মস্তবড় ভুল করলি! ছয়মাস পরে জুঁইকে খুজে পাওয়া যায় কিন্তু ততদিনে যা হবার তাই হয়েছে! জুঁইও ততদিনে নিজের ভেতর অনুভব করে আরেক সত্তার!
জুঁই কয়েকটা গ্রাম পরে মতিনের কোন এক আত্মীয়ের বাসায় থাকে! জুঁইয়ের খবর পেয়েও ওর মামারা ওকে আর ফিরিয়ে আনেনা! কারন লোপা নিশেধ করেছে, লোপা বলেছে জুঁই জীবন সম্পর্কে আরো বুঝুক! বুঝুক জীবন মানে শুধু আবেগ নয়! বুঝুক জীবনের বাঁকে বাঁকে নানা রকম কষ্ট দিয়ে ঘেরা! আর অনেক প্রতিকূলুতার মধ্য দিয়ে জীবনকে সাজাতে হয়! অনেক ধৈর্য আর অনেক ত্যাগ করতে হয় জীবনের এই পরিসরে! জুঁই যখন বুঝবে জীবনের আসল মানে! তখনই ওকে সুযোগ দেয়া হবে নয়তো এভাবেই চলতে থাক ওর জীবন ভেলা! বোনের কথায় লোপার ভাইয়েরাও আনেনা জুঁইকে! এর মাঝে জুঁই অনেক কষ্ট করে খাওয়া থেকে শুরু করে সবকিছুর কষ্ট পেতে হয় তাকে! কারন একটাই মতিন অলস! জুঁইয়ের ও আর বুঝতে বাকি রইলো না যে, সে কত বড় ভুল করেছে আবেগের হাতে নিজেকে সপে দিয়ে! অসুস্থ শরীর নিয়ে জুঁই পরের বাড়ির কাজ ও করেছে! কি করবে খেয়ে তো বাঁচতে হবে! আর সে এখন একা নয় তার ভেতরে লালিত হচ্ছে তারই একটি অংশ! মতিন যখন কাজ করে তখন ভালোই ইনকাম করে কিন্তু মাসের এক সপ্তাহ কাজ করলে বাকি দিনগুলো বসে বসে খায় এতে করে কোনই লাভ হয়না! আর তার তো বদোভ্যাস আছেই জুয়া খেলার! হাতে টাকা থাকলেই জুয়ার আসরে গিয়ে বসে! এভাবে জুঁইও অল্প দিনেই সংসারের অভাব আর স্বামীর চরিত্র নিয়ে হাপিয়ে ওঠে! তার মাঝে মাঝে ইচ্ছে করে এসংসার ছেড়ে নিরুদ্দেশে হারিয়ে যেতে! কিন্তু আরেকজনে আগমনের কারনে কিছুই করতে পারেনা! বছর ঘুরতেই জুঁইয়ের কোলে আসে একজন কন্যা সন্তান! জুঁই আরো চিন্তায় পড়ে যায় দুজনের সংসারই চলেনা এখন আরেকজন, কি দিয়ে প্রতিপালন করবে তাকে? জুঁইয়ের মেয়ের খবর পেয়েও মামারা নিতে তো দুরে থাকে ওকে একবার দেখতেও আসেনি! আর জুঁই এজন্য নিজেকেই দায়ী করে!
ওদিকে লোপার প্রথম স্বামীর মনে হতে থাকে লোপার কথা! মনে পড়তে থাকে ওদের একটি মেয়ে হয়েছিল কি নাম সে তা জানেনা বা জানতে চায়ওনি! বারো বছর পর সে দেশে আসে! আশেপাশের প্রতিবেশীরা লোপার স্বামীকে লোপার প্রকৃত ঘটনা গুলো বলে! আর বলে যে, জীবনে তুমি পেয়েছিলে খুবই মূল্যবান এক জিনিস কিন্তু তোমার অবহেলা আর অসচেনতার কারনেই হারিয়েছ সবকিছু! এমন কি তোমার সন্তানকেও হারিয়েছ! লোপার প্রথম স্বামী বুঝতে পারে তার ভুল কি কি হয়েছে! আর বার বছরে কত কি ঘটে গেছে তা তার কাছে ঘোরের মত মনে হয়! সে ভাইদের কাছে জানতে চায় লোপার আসলে কি দোষ ছিল? কেন তারা লোপার প্রতি অবিচার করেছে? কেন তার সংসার, সন্তানকে সবকিছু থেকে বিতাড়িত করেছে? ভাইয়েরা জবাব দেয় তোমার ভালোর জন্যই এমনটি করেছি আমরা! কারন লোপারা আমাদের সমপর্যায়ের নয় আরো নিম্ন অবস্থানের তাই আমাদের বউয়েরা তার সাথে চলতে অনিচ্ছুক! আর সব মিলিয়ে তোমার ভালোর জন্যেই আমরা এমনটি করেছি! সে ভাইদের কাছে আমরা এসব করেছি! সে জানতে চায় আসলে কি আপনারা আমার ভালো চেয়েছেন? নাকি আমাকে আমার সংসারকে আমার সন্তনাকে একে অপরের কাছ থেকে দুরে সরিয়ে রেখেছেন আর বলছেন ভালোর জন্য! এটা কেমন ভালো হলো? সে ভাইদের কাছে টাকার হিসাব চায়! এবং সে টাকায় কি কি করেছে তার ও হিসাব চায়! এবং বলে দেয় আপনাদের সাথে আমার কোন সম্পর্ক নেই আজ থেকে সব সম্পর্ক ছিন্ন করলাম! আপনারা আমার আপন ভাই হয়েও আমার জীবন নয় তিন তিনটা জীবন নষ্ট করেছেন! আমরা কেউই আপনাদেরকে ক্ষমা করবোনা! লোপার স্বামী লোপার খোজে বের হয়! যায় সেই শশুরালয়ে কিন্তু কেউই তাকে কোন খোজ খবর দেয়না! বরং সবাই এড়িয়ে যায়! শেষে লোপার বড় ভাইয়ের কাছে জানতে চায় শুধু একটিবার লোপার সাথে দেখা করবে! কিন্তু লোপার ভাই বলে দেয় তুমি লোপার সাথে কোন যোগাযোগ করো আমরা তা পছন্দ করিনা! আমরা চাইনা আবার লোপার চোখে অশ্রু ঝরুক! লোপা এ পর্যন্ত অনেক কষ্ট আর অনেক কাঠ-খড় পুড়িয়ে এপর্যন্ত এসেছে তুমি আবার তাকে নতুন করে কষ্ট দাও আমরা তা চাইনা!
সে এবার জানতে চায় আমাদেরতো একটি মেয়ে ছিলো তার খবরটা অন্তত আমাকে বলুন! লোপার ভাই বলে দেয় সে ও এখন একজনের ঘরের ঘরনী! তার একটি মেয়ে হয়েছে সবাই সবার স্থানে ভালো আছে! তুমি আবার নতুন করে কারো জন্যে কষ্ট বয়ে এনোনা! তুমি তোমার স্থানে চলে যাও এবং ভালো থাকো! আর যে যার স্থানে ভালো থাকুক! লোপার স্বামী বড়ভাইয়ের পা ধরে কাঁদতে থাকে! আর বলে লোপার কোন মোবাইল নম্বর থাকলে দিতে! ভাইয়া রাগে খুব কষে একটি থাপ্পর বসিয়ে মুখে! আর বলে কোনদিন তুমি এসব ব্যাপারে আর আসবেনা! সে খুব অনুরোধ করে বলে আমাকে প্রায়শ্চিত্ত করার সুযোগ দিন ভাইয়া! আমাকে শুধু একবার লোপার কাছে ক্ষমা চাওয়ার সুযোগ দিন! কিন্তু ভাইয়া তাকে জোর করে বের করে দেয়! লোপার স্বামী বুঝতে পারে জীবনে সে কতবড় ভুল করেছে! আর এভুলের ক্ষমা হয়তো সে পাবেনা! সে অনুভব করে সেই যে লোপা চলে গেলো সেদিন থেকেই দুহাতে টাকা কামাই করেছি আর অন্যায় পথে খরচ করেছি! মদ পান করে নিজেকে ভুলিয়ে রেখেছি জীবনের সবকিছু থেকে! লোপা কতদিনও জানতে পারবেনা আমি ও তো নিজেকে কতটা কষ্ট দিয়েছি! লোপা চলে যাওয়ার বছর খানেকের মাথায় সে যে মালিকের কাছে ছিলো সে ছিল খ্রীষ্টান তার মেয়েকে বিয়ে করেছে! লোকটা অনেক সম্পদ দিয়েছে তাকে! কিন্তু সে বউ তো তার কথা মানতো না নিজের মন মত চলতো! আর একারনেই সে কখনোই সুখি হতে পারেনি! আর সেজন্যেই সে মদের নেশাকে আঁকরে ধরে আছে! বিদেশের মাটিতে তার সম্পদের পাহাড় আছে শশুরের দেয়া সম্পদ ছাড়াও নিজের অনেককিছু আছে! আছে চারটা ছেলে! যারা শুধু মায়ের কথাই উঠ বস করে! মাতাল বলে তাকে কেউই দেখতে পারেনা! তার সব থেকেও সে আজকে মুসাফিরের মত! সম্পদ থাকলেও মনের মাঝে কোন সুখ নেই!
এত বছর পরে দেশে এসে যখন জানতে পারে লোপার কথা সে কতটা কষ্ট করেছে তার সন্তান কতটা কষ্ট করেছে! এবং লোপা ছিল সতী তখন মনকে আর কিছুতেই মানাতে পারছেনা! কি অবিচারইনা করলাম লোপার প্রতি! কি অবিচার করলাম নিজের সন্তানের প্রতি! কি দিয়ে ক্ষমা হবে আমার? আমার মেয়েকে এক নজর দেখলাম ও না! মেয়ের কাছেও ক্ষমা চাওয়ার কোন মুখ আমার নেই! তারপরও মেয়েকে কিছু করে দিতে তবে যাতে তার অতীতের পাপের কিছুটা লাঘব হয়! কিন্তু কিভাবে? সে তো জানেইনা মেয়ে কোথায় আছে? সে মনে মনে ঠিক করে যদি কোনভাবে লোপার সাথে দেখা হতো তবে মেয়ের খবরও হয়তো জানতে পারতো! আর অন্তত মেয়ের জন্য কিছু করতে পারতো! সে প্রায় চারমাসের মত দেশে থাকে লোপার ভাইয়ের কাছে আবারও আসে বলে যে ভাই আপনি শুধু আমার মেয়ের খবরটা আমাকে দিন আমি তার জন্য কিছু করে যাই! ভাইয়া জানতে চায় জীবনের সবকিছু তো উলট-পালট করে দিয়েছ আর কি করবে এখন? সে মেয়ের পুরো খবর জানতে চায়! ভাইয়া ও বলে এই এই অবস্থা তোমার মেয়ে জুঁইর! সব শুনে সে বলে সব দোষ আমার! আমাকে যে শাস্তি দেবেন আমি মাথা পেতে নেবো আমার কারনেই সবার এই পরিণতি! তারপরও বলবো আমার মেয়ের খোজটা অন্তত দিন! আমি তাকে এখানের যা সম্পদের ভাগ পাবো তা দিবো আর তার স্বামীকে কিছু নগদ অর্থ দিয়ে কোন ব্যবসা ধরিয়ে দেব যাতে মেয়েটা ভালোভাবে চলতে পারে! লোপার ভাই বলে আমি ভেবে দেখি তারপর তোমাকে জানাবো! সে সামান্য আসার আলো পেয়ে সেখান থেকে চলে যায়! লোপার ভাই লোপাকে সববিষয় অবগত করে! লোপা বলে ভাই আমার কোন খোজই তাকে দেয়ার দরকার নেই! আর জুঁইয়ের খোজও নয়! ভাই তখন লোপাকে বুঝায় বোনরে তোর খোজ দেবনা কিন্তু জুঁইয়ের তো তার বাপের কাছে হক্ব আছে! আর সে বলেছে জুঁইকে তার পাওনা সম্পদ দিয়ে যাবে এবং কিছু নগদ অর্থ যাতে জুঁইয়ের চলতে সমস্যা না হয়! তুই না করিসনা বোন জুঁইকে আমরা তো কিছু দিতে পারিনি যদি তার বাবা কিছু দেয় তাতে তোর জুঁই তো সুখে থাকবে! অনেক ভেবে চিন্তে বলে ভাই তাহলে দিন! কারন মেয়েটার জীবনে ও আমারই মত কষ্টে কষ্টে যাচ্ছে! এতে যদি কষ্ট কিছুটা লাঘব হয়!
জুঁই জীবনের মানে বুঝতে পেরে মামাদের কাছে তার ভুলের জন্য ক্ষমা চায় এবং তার অনেক কষ্ট হচ্ছে সে বিষয়ও জানায়! আর বলে আপনারা মতিনকে কিছু করার জন্য ব্যবস্থা করে দিন! আমি মেয়েটাকে নিয়ে আর চলতে পারছিনা! জুঁইকে রেখে দেয় ওর মামা কারন জুঁইকে তো বাবার মমতা দিয়ে সেই বড় করেছে! জুঁই থাকে মামার বাড়িতে মামা এবার বলে জুঁই তোর বাবার কথা মনে আছে? সে বলে বাবার কথা মনে করে কি করবো? যে বাবা জীবনে একটিবার আমাকে চোখের নজরে দেখেনি! মামা এবার সব কথা খুলে বলেন! জুঁই তুই তোর বাপের সাথে দেখা কর! এতে তোর উপকার হবে! আর সে এখন তার ভুল বুঝতে পেরেছে! তুইও তাকে ক্ষমা করে দে! জুঁই প্রথমে না বলে দেয় এবং বলে এই লোক তো আমার মায়ের জীবনটাকে তছনছ করে দিয়েছে! সাথে আমারটাও! যদি আমাদের খোজ খবর রাখতেন তিনি তবে আমি কত পড়া লেখা শিখতে পারতাম আর আমি ও কি এই বয়ষে এই ভুল করতাম? সব তার দোষ! তার জন্যেই আজকে আমি মা হারা! বাবা হারা! তাকে আমি ক্ষমা করবোনা! জুঁই মামাকে বলে আমাকে মায়ের কাছে নিয়ে চলুন! মা যদি বলে যে দেখা করতে তবে করবো নয়তো দরকার নেই বাবার! জীবনের অনেকটা তো চলেই গেছে এখন আর বাবাকে দিয়ে কি হবে? মামা বলে দেয় তোমার মাই তোকে দেখা করতে বলেছে! জুঁই এবা রাজি হয় দেখা করতে! জন্মদাতা বাবার সাথে দেখা করবে তাও আবার একযুগের পরে! প্রথম অনুভুতিটা আসেইনি জুঁইয়ের মনে! এই লোকটার জন্যে তার মনে শুধুই ঘৃনা! কি করে বাবাকে সে কাছে টানবে? কিভাবে বাবা বলে ডাকবে? যাকে জীবনে কখনো চোখেই দেখেনি! মামা অনেক বুঝানোর পর জুঁই তার বাবার সাথে দেখা করে!
যখন তার বাবাকে দেখলো তখন কি যেন মায়া অনুভুত হলো মনে মাঝে! রক্তের কি যে টান অনুভব করলো বাবা মেয়ে উভয়ে উভয়ের জন্য! জুঁইয়ের বাবা কাঁদছে আর বলছে মারে আমাকে ক্ষমা করে দে! শুধু একবার বাবা বলে ডাক! একবার বুকে আয়! জুঁইয়ের মনের সকল রাগ গোস্বা যেন বাবার চোখের পানি দেখে ঠান্ডা হয়ে গেলো! জুঁই প্রথমে যেতে না চাইলেও পরক্ষনে বাবার বুকে ঝাপিয়ে পড়ে এক যুগের ও বেশী কষ্টকে আজ যেন চোখের পানিতে ধুইয়ে নেয় বাবা এবং মেয়ে! জুঁই যেন বাবার বুকে এসে পরম এক আশ্রয়স্থল পায়! আর বাবাও যেন পায় তার জীবনের হারিয়ে যাওয়া সুখ! এভাবে অনেকক্ষন চলে যায়! জুঁইয়ের বাবা বলেন মারে তোর জন্য তো আমি কিছুই করতে পারিনি এখন কিছু করার সুযোগ দে! তুই বল কি করলে তোরা ভালো থাকবি? নাকি মতিনের সংসার বাদ দিবি? জুঁই বলে বাবা বিয়ে তো জীবনে একটিই হয়! আপনি পারলে ওকে কোন ব্যবস্থা করে দিন! জুঁইয়ের কন্যাকে দেখে বলে আমার কি কপাল আমি তোকে এই বয়ষে কোলে নিতে পারিনি! তোর মেয়েকে কোলে নিচ্ছি! পৃথিবীটা বড়ই বৈচিত্রময়রে মা! মেয়েকে বলে ঠিক আছে আমি মতিনকে একটি ব্যবসার ব্যবস্থা করে দেব! কিন্তু আর যে বদোভ্যাস তাতে করে সে কতদিন টিকিয়ে রাখতে পারবে? তুই আগে তাকে সংশোধনের ব্যবস্থা কর তারপর ওকে ব্যবসা নিয়ে বসতে বল! আর আমি প্রতিমাসে তোর জন্য কিছু খরচ পাঠাবো তা দিয়ে তুই তোর মেয়ের খরচ চালাবি! এর মাঝে ফোনে কথা হবে! খোজ খবর নেয়া দেয়া হবে! আমি গিয়ে আবার আসবো! তুই এর মাঝে মতিনকে বুঝাতে থাক, দেখ কি হয়! মেয়েকে মোবাইল কেনার টাকা দেয়! আর বলে আরেক কথা তুই কি তোর মায়ের সাথে যোগাযোগের ব্যবস্থা করে দিতে পারবি? জুঁই না করে দেয়! আব্বা আপনি আমার মাকে অনেক কষ্ট দিয়েছেন আর এখন নতুন করে আবারো কষ্ট দিতে চান? মা এখন অনেক সুখে আছে! আর সেই বাবাও আমাকে খুব আদর স্নেহ করেন! আমিও তাকে খুবই শ্রদ্ধা করি! আপনি দয়া করে মার সাথে যোগাযোগ করবেননা! আমার সাথেই সম্পর্ক থাকুক! মায়ের সাথে নয়! জুঁইয়ের সাথে বিদেশের যাওয়ার আগ পযর্ন্ত ওর বাবা যোগাযোগ রাখে এবং খোজ দিয়েই আবারো যায় বিদেশে! কারন সেখানে তার সবকিছু থাকলেও সুখ তো নেই! জীবনের পাপ মোচনের একটা উপায় হলো! এখন কোনভাবে লোপার কাছে ক্ষমা চাইতে পারলে ভালো হতো!
বিদেশ থেকে মেয়ের সাথে যোগাযোগ রাখে! কথা বলে মাসে মাসে খরচ পাঠায়! কিন্তু কথার শেষ কথাটা থাকে মারে তুই লোপার মোবাইল নম্বরটা আমাকে যোগাড় করে দে! এভাবে আরো কয়েক বছর চলে যায়! জুঁইয়ের বাবার সবসময় লোপার সাথে যোগাযোগ করতে চায়! একদিন খুবই কাঁদে আর বলে জুঁই তুইও কি আমাকে শান্তিতে মরতে দিবিনা? জুঁই বলে কেন একথা বলছেন বাবা? তখন বাবা বলেন তোর মায়ের নম্বরটা দে না আমাকে আমি ওর কাছ থেকে ক্ষমা চেয়ে নেই! ওর থেকে ক্ষমা না পেলে আমি তো আল্লাহর কাছেও ক্ষমা পাবোনা! জুঁই তার বাবার কথা শুনতে শুনতে একদিন নতুন বাবার মোবাইল নম্বরটা দেয়! জুঁইও আগেই জানায় মাকে মোবাইল নম্বর দিয়েছে! লোপা মেয়ের সাথে খুব রাগ করে! নম্বর পেয়েই দুইদিনের মাথায় লোপার স্বামী কল করে লোপার কাছে! ধরে লোপার নতুন স্বামী সে জানতে চায় কে আপনি? সে বলে আমি লোপার সাথে কথা বলতে চাই আপনি মোবাইলটা লোপাকে দেবেন? সে বলে আমি তো বাজারে আপনি ঘন্টা খানেক পর কল করেন! লোপার স্বামী বাসায় এসে বলে তোমার কল এসেছিল আমি বলেছি একঘন্টা পর কল করতে! লোপা বুঝতে পারে জুঁইয়ের বাবাই কল করেছিল! এর মাঝে লোকটা আবারো কল করে লোপা কল ধরবে কি ধরবে না একরকম দন্দে ভুগতে থাকে! এবং পরে সিদ্ধান্ত নেয় কথা বলে ওর বিষয় জেনে নিশেধ করতে হবে কারন এভাবে কথা বললে ওর স্বামীর মনে কষ্ট আসতে পারে! কয়েক বার কল হয়ে কেটে যায় আবার কল হয়! লোপার স্বামী খেয়ে ঘুমিয়ে পড়ে! লোপা এবার কল ধরে ওপাশ থেকে সালাম দিয়ে ওঠে! লোপা কন্ঠ শুনেই অনবরত কাঁদতে থাকে সালামের জবাবের কথা ভুলেই যায় কষ্টের অতীত মনে করে! লোকটাও কাঁদতে থাকে! এভাবে প্রায় ত্রিশ মিনিটের পর পার হয়! লোপা জানতে চায় কেন ফোন করেছেন রিক্ত একজন নারীর কাছে? সে ওপাশ থেকে বলে লোপা জীবনে যে ভুল আমি করেছি আরেক জীবনো যদি সে ভুলের পায়শ্চিত্র করি তারপরও সে ভুলের ক্ষমা হবেনা! তবুও জানতে চাই তুমি কেমন আছো লোপা? লোপা কাষ্টের তাড়নায় কাঁদে খুব কাঁদে এরপর নিজেকে কঠিন করে নেয়! জুঁইয়ের বাবাকে বলে বলুন এত বছর পর কেন আমাকে মনে পড়লো আপনার? সে বারংবার তার ভুল স্বীকার করে! লোপা বলে আপনি ভুল স্বীকার করলেই কি আমরা জীবনের দেড় যুগ আগে ফিরে যেতে পারবো? আপনি যা করেছেন তো করেছেনই এখন আর নতুন করে কিছু করতে আসবেননা! আমার স্বামী সংসার সন্তান নিয়ে আমি খুবই সুখে আছি! ওপাশ থেকে চুপ করে থাকে কিছু সময় চুপ থেকে সে বলে তুমি কি আমাকে অনুমতি দেবে প্রতিদিন একবার তোমার কাছে কল করার জন্য? লোপা না করে দেয়! এভাবে কিছু সময় কথা বলে আর চুপ থেকে প্রায় দুই ঘন্টা সময় পার করে ওরা! লোপা বলে আপনি আর ফোন করবেন না! কারন আমি চাইনা আপনার কারনে আমার সংসারে আবারো নতুন কোন ঝড় আসুক! আর আবারো আমাকে এলোমেলো করে দিয়ে যাক! আপনি আপনার মত ভালো থাকুন আর আমি আমার মত এটা বলেই লোপা লাইন কেটে দেয়!
লোপা রাতেই তার স্বামীকে সব বিষয় বলে! শত হলেও মানুষ তো! সব শুনে সে বলে লোপা তুমি কি আমাকে ছেড়ে তার কাছে চলে যাবে? লোপা বলে না এতো কিছুতেই সম্ভব নয়! আমার জন্য এই পৃথিবী ছেড়ে চলে যাওয়া সহজ কিন্তু তোমাকে ছেড়ে নয়! তুমি এবিশ্বাস আমার উপর রাখতে পারো! লোপার স্বামীর মনটা খারাপ হলেও পরের কথাগুলো শুনে মনটা ভালো হয়ে যায়! সে বলে লোপা তোমাকে আমি খুব বিশ্বাস করি আর তুমি সে বিশ্বাস রেখো! পরেরদিন জুঁইয়ের বাবা ঠিক আগের সময়েই কল করে আবার! লোপাকে মোবাইলটা এগিয়ে দেয় তার স্বামী! লোপা বলে তুমিও থাকো আমি কথা বলি! সে বলে না তুমি কথা বলো আমি আসছি! সে আরেক ঘরে চলে যায়! লোপা কথা বলে কেন আবার কল করেছেন? আপনাকে না বলেছি কল করতে না! কি চান আমার কাছে? জুঁইয়ের বাবা বলে তোমার কাছ থেকে একটু সুখ চাই দেবে আমাকে? লোপা বলে সুখ....সুখ আমি কোথা থেকে দেব? আমি নিজেই তো অসুখী ছিলাম একজন ফেরেশতার মত মানুষ আমার জীবনে এসে সুখের সন্ধান দিয়েছে! আর এখন আপনি আবার আমার সুখ কেড়ে নিতে চাইছেন! সে বলে না লোপা আমি তোমাকে কিভাবে বুঝাবো আমি সেগুলো ভুল ছিল! আর আমি সে ভুলের অনেক মাশুল দিয়েছি! এবার তুমি সযোগ দাও আরো কিছু মাশুল দেয়ার! লোপা জানতে চায় কি বলতে চান আপনি? সে বলে লোপা তোমার স্বামীর মাসিক আয় কত? আমি তোমার সুখের জন্য তোমার স্বামীর আয়রোজগার বাড়াতে সহায়তা করবো! এতে করে তোমার ছেলেমেয়েদের নিয়ে সচ্ছল ভাবে চলতে পারবে! লোপা বলে কি করতে চান আপনি? সে বলে আমি তোমার স্বামীকে দশলাখ টাকা দিতে চাই তা দিয়ে সে তার ব্যবসাতে খাটাবে এবং আরো লাভবান হবে! লোপা বলে আমার ছেলেমেয়েদের নিয়ে আপনার চিন্তা করা লাগবেনা! আমার স্বামীর যা আছে তা নিয়ে আমি খুবই আছি! আপনার টাকা আপনি রেখে দেন! আপনি দয়া করে আর ফোন করবেননা এখানে! আপনি যেদিন অবিশ্বাস করেছেন সেদিন থেকেই সেই লোপার মৃত্যু হয়েছে এখন যে লোপার সাথে আপনি কথা বলছেন সে একজন ফলের ব্যবসায়ীর বউ! তিন পুত্র ও দুই কন্যার জননীর কাছে আপনার কিছুই চাওয়ার নেই! আপনি অতীত ভুলে যান! আরো ভুলে যান লোপা নামের কেউ ছিলো আপনার জীবনে! আর যদি ভুলতে না পারেন তো মনে করেন লোপা অনেক আগেই মারা গেছে! জুঁইয়ের বাবা বলে লোপা আমি যদি দেশে আসি তুমি কি আমার সাথে একবার দেখা করবে? তুমি বললে আমি এমাসেই দেশে আসতে পারি! লোপা না করে দেয়! লোপা বুঝতে পারে ওর সাথে দেখা করলে মায়া আরো বাড়বে তখন ভুলে থাকা কঠিন হবে! আর সে তার স্বামীকে ছেড়ে যেতে পারবেনা! লোপা জানায় আপনি আর কোন যোগাযোগের চেষ্টা করবেন না! আর কথার বলার ও না!
ওপাশ থেকে সে বলে লোপা আমরা কি আগের মত হতে পারিনা? লোপা বলে না! সেটা তো কোনভাবেই সম্ভব নয়! কারন যখন আপনাকে এজীবনে বেশী প্রয়োজন ছিলো তখন আপনি আমাদেরকে অবহেলা করেছেন অবিচার করেছেন
এখন কেন নতুন করে তা চাইছেন? জীবন গেলেও তা সম্ভব নয়! এরপর ও সে বলে লোপা আমি আগামি মাসে দেশে আসছি তুমি মন থেকে প্রস্তুতি নাও একবার দেখার করার বলেই রেখে দেয়! লোপা ভাবতে থাকে আর তার কল ধরা যাবেনা! কিন্তু মোবাইল নম্বর তো তার কাছে চলে গেলে এখন সে তো যেকোন ভাবে খবর নিতে চাইবে! কি করবে লোপা? এতটা বছর পর কেন আবার সে এলো অজানায় থাকাই তো ভালো ছিলো! যে যার মত ভালো থাকতো! লোপার প্রতিবেশীর এক মেয়ের সাথে শেয়ার করে ঘটনাটা এবং বলে যে তুমি পরামর্শ দাও আমি কি করবো? তার সাথে আগে থেকেই ক্লোজ ছিলো তাই তাকে জানালো বিষয়টা! সে বললো আপনার কাছেই সহজ সমাধান! আপনার বিবেগ কি বলে? সে বললো আমি কিছুতেই এই সংসার ত্যাগ করতে পারবোনা আর জুঁইয়ের বাবার কথা থেকে বুঝা যায় সে আবারো নতুন করে সবকিছু চায়! তাই আমি সিদ্ধান্ত হীনতায় ভুগছি কি করবো? কি বলে তাকে ফেরাবো? সে সুন্দর সমাধান দেয়! বলে আপনি তাকে বলুন দেড় যুগ আগের লোপার সেই জীবনটা ফিরিয়ে দিতে! বলুন জুঁইয়ের সুন্দর ভবিষ্যত ফিরিয়ে দিতে! বলুন আপনার এই বন্ধুর মত স্বামীর মন থেকে আপনাকে ভুলিয়ে দিতে তবে আপনি যাবেন তার কাছে নয়তো যেটা যেমন আছে তেমনই থাকবে! আর কোন নতুন ঝড় আপনি দেখতে চাননা! এবং আপনি কঠিন কিছু ভাষা প্রয়োগ করুন যাতে সে বুঝতে পারে এবং আপনাকে নতুন করে না চায়! আপনি তার জন্য মায়া করবেন না! সহানুভুতিরও চেষ্টা করবেন না! আপনি আপনার স্থানে শক্ত হয়ে থাকুন দেখবেন কঠিন ঢেউ এসে শুধু তীরকে ভিজিয়ে যাবে আর কিছু করতে পারবেনা! আর যদি আপনি নমর হোন সহানুভুতি দেখান তাহলে হালকা ঢেউও তীরকে ভেঙে নিয়ে যাবে সাগরের অতলে! লোপা ভাবতে থাকে শুধু ভাবতে থাকে! কয়েকদিন পর আবারো সেই সময়ে কল করে! লোপার স্বামী তখন ঘুমে! লোপা কল ধরে এবং এবার খুবই শক্ত ভাষায় কথা বলে কারন তার অবস্থান তাকে ঠিক রাখতে হবে! ওপাশ থেকে বলে লোপা কেমন আছো? সে বলে এতদিন ভালোই ছিলাম কিন্তু যেদিন থেকে আপনি কল করেন সেদিন থেকে আর ভালো নেই! আপনি কল না করলে আবারো ভালো থাকবো! লোপা আমি তোমাকে দেখার জন্য দেশে আসছি সব ঠিক করা আছে শুধু দিন আর বার এক হলেই আসবো! তুমি দেখা করবে? লোপা শক্ত ভাষায় না করে দেয়! এবং প্রতিবেশী মেয়েটা যা বলেছে হুবহু তাই বলে! এবার সে চুপসে যায়! বলে লোপা তোমার একটা প্রশ্নের জবাবও আমি ফিরিয়ে দিতে পারবোনা! আর তোমাকে ভুলে থাকতে হলে আমাকে আবারো মদের নেশাতে ডুবে থাকতে হবে! নেশায় মত্ত থাকলেই আমি ভালো থাকবো নয়তো আমার বেঁচে থাকাও আরো কঠিন হবে! লোপা বলে সেটা আপনার ব্যাপার আপনি কি করবেন না করবেন সেটা আপনিই ভালো জানেন! তবে নতুন করে আমার কাছে আর কিছু আশা করবেননা! আমি এখন সেই লোপা নই! আমি কয়েক সন্তানের মা! এবং একজন ভালো মনের মানুষের স্ত্রী যাকে সবচেয়ে বিপদের দিনে বন্ধুর ভূমিকায় পেয়েছি! যার কাছ থেকে কখনো কোন ব্যপারে কষ্ট পাইনি! যার কাছ থেকে শুধু সহানুভুতি আর সহযোগীতা সহমর্মীতাই পেয়েছি! যাকে জীবনের বাকি সময় খেদমত করলেও তার সহানুভূতির একটু আদায় হবেনা! এমন কি তার জন্য জীবনটা দিয়ে দিলেও একটুও শোধ হবেনা তার অনুগ্রহের একটুখানি! সে বলে লোপা আমি আসছি! শুধু একবার দেখা করো আমার সাথে বলেই রেখে দেয়!
জুঁইয়ের বাবা আবারো দেশে আসে জুঁইয়ের সাথে দেখা করে কিছু জমিন কিনে দেয়! লোপার স্বামী মতিনও ভালো হয়ে যায় সেও গ্রামের বাজারে মুদির দোকান দেয়! জুঁইয়ের কষ্টও কমে আসে তদতদিনে জুঁই আরেক কন্যার জননী হোন! জুঁইয়ের বাবা জুঁইকে প্রতিমাসে দশ হাজার করে টাকা দেবে বলে আর বলে দেয় এই টাকায় তার নাতনীদের খরচের জন্য! যেকোন সমস্যায় জুঁইকে যগাযোগ করতে বলে! কিন্তু লোপার সাথে দেখা করতে চায় অনেকবার লোপা না করে দেয় এমন কি লোপা তার স্বামীকে বলে মোবাইল নম্বর পরিবর্তন করে নিতে বলে যাতে সে কল না করতে পারে! লোপার স্বামী বলে তুমি চাইলে মাঝে মাঝে তার সাথে কথা বলতে পারো! লোপা না বলে দেয়! দুই মাসের ছুটিতে আসে জুঁইয়ের বাবা কয়েকবার কল ও করে লোপার কাছে লোপা আর কল ধরেনা! শেষে মেয়েকে দিয়ে খবর পাঠায় যাওয়ার আগে শুধু একবার তার কল ধরতে এরপর আর কোনদিন সে কল করবেনা বলে প্রতিজ্ঞা করে! জুঁই মাকে জানায় লোপা কল ধরে প্রবাসে যাওয়ার ঠিক আগেরদিন! লোপার কাছে সে আবারো ক্ষমা চায় এবং বলে লোপা তোমার জন্য কিছু করতে পারলে ভালো লাগতো! লোপা বলে আপনার কিছুই করার দরকার নেই! আপনি বরং কোন খোজ খবর না রাখলেই আমি ভালো থাকবো! ওপাশ থেকে বলে লোপা আমার মত ভুল যেন কোন পুরুষ কখনোই না করে! কেউ যেন তার প্রথম জীবনের সাথীকে অবহেলা অবজ্ঞা না করে! কেউ যেন এক তরফাভাবে একজনকে বিশ্বাস করে নিজের পায়ে কুড়াল না মারে! আমি জীবনকে অনেক বুঝেছি! লোপা জীবনে আমি একদিনের জন্যেও সুখী হতে পারিনি বউ, সন্তান আমারও আছে, আছে অর্থের পাহাড় কিন্তু সেখানে সুখের লেশমাত্র নেই! বউ তার আত্মীয় স্বজন আর ছেলেদের নিয়েই আছে! আমি থাকি সবসময় মদ নিয়ে! মদই আমাকে আমার কষ্টের অতীত ভুলিয়ে থাকতে সহযোগীতা করে! লোপা আমি বুঝি আমার জীবনে যাকিছু হয়েছে তাতে তোমার অভিসাপেই বেশী হয়েছে! তাই তুমি আমাকে আল্লাহর ওয়াস্তে ক্ষমা করে দাও! লোপা আমি কালকে চলে যাবো আর দেশে আসবোনা! তবে যেকোন দরকারে আমার কাছে মেসেজ দিতে পারো! আমি তোমার বা তোমার সন্তানদের জন্য কিছু করতে পারলে নিজের পাপের বোঝা কমেছে বুঝবো! আর যতদিন বেঁচে থাকবো ততদিন নেশা নিয়েই বেঁচে থাকতে হবে! কঠিন অতীতকে ভুলে থাকতে হলে নেশাতেই ডুবে থাকতে হবে! তোমার মত লোপাকে ভুলতে হলে আমার কাছে একটাই পথ তা হলো নেশা করা! আমি তোমার উপর অবিচার করেছি আর আল্লাহও আমার উপর সঠিক বিচার করেছেন! লোপা বলে এসবকিছু বাদ দিয়ে তওবা করে ঠিকমত নামাজ পড়বেন! আল্লাহর কাছে কি হিসাব দিবেন নয়তো? পৃথিবীর জীবনের প্রায় শেষ প্রান্তে আমরা যেভাবে ওপারে গিয়ে হিসাব সহজ হয় সেভাবেই চলা উচিৎ! আর বাকি আপনার ইচ্ছা! লোপা তুমি ভালো থাকো তোমার স্বামী সন্তান নিয়ে! আর আমি চলে যাই অজানার পথে! পরের দিন জুঁইয়ের বাবা চলে যায় বিদেশে আর ফিরবেনা বলে! আসা যাওয়ার এই কঠিন পৃথিবীতে কতকিছু ঘটে গেল জীবনে! লোপা তার সেই সংসারেই থেকে গেলো গরীবি অবস্থায় সেই বন্ধু তুল্য স্বামীকে নিয়ে! এভাবেই কতশত ঝড় মোকাবেলা করে বইতে থাকে লোপার জীবন ভেলা! আর কেউই কখনো ভাঙার ঝড় উঠাতে পারবেনা লোপার বর্তমান জীবনে................! একই সাথে রচিত হয়েছে একটি কঠিন অতীতের কবর রচনা!
বিষয়: সাহিত্য
৩৩৭২ বার পঠিত, ২৫ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
ধন্যবাদ আমার ব্লগে এসে সুন্দর মন্তব্য রেখে যাবার জন্য
শেষের " আসা যাওয়ার এই কঠিন পৃথিবীতে কতকিছু ঘটে গেল জীবনে! লোপা তার সেই সংসারেই থেকে গেলো গরীবি অবস্থায় সেই বন্ধু তুল্য স্বামীকে নিয়ে! এভাবেই কতশত ঝড় মোকাবেলা করে বইতে থাকে লোপার জীবন ভেলা! আর কেউই কখনো ভাঙার ঝড় উঠাতে পারবেনা লোপার বর্তমান জীবনে................! একই সাথে রচিত হয়েছে একটি কঠিন অতীতের কবর রচনা!"- লাইনগুলোর ভিতরের কথাগুলো অনেক ভাবনার জন্ম দিয়ে গেলো।
অনেক ধন্যবাদ আপনাকে।
অনেক ভালো লিখেন আপনি।
আরো অনেক এমন কাহিনী নিয়ে বিচরণ করুন এই ব্লগে, কামনা করছি।
শুভেচ্ছা রইলো অনেক অনেক।
অনেক ধন্যবাদ আপনাকে।
পুরো গল্পটি পড়েছি খুব ভাল লেগেছে
আমার গল্পের ভেতর ঢুকে হঠাৎ করে হেসে দিতে আবার আবেগ গলাধরে আসলে গল্পে মজে মজেই ঘন্টার পর ঘন্টা কটিয়ে দিতে ভিষণ ভালো লাগতো...সুলতানা আপু আপনি অনেক দক্ষ্য...আর গল্পে আমি একদম অজ্ঞ তবে পড়ে মজাপাই....আমি এখনো টম এন্ড জেরি দেখে হাসি...জানিনা কেন জানি সব বিষয়েরই ভেতর ঢুকে যাই... অনেক ধন্যবাদ
ভাল লাগল। কিন্তু এই ধরনের অনেক ঘটনা চোখের সামনে দেখেছি তাই অবাক হইনি।আমরা মানবতাবোধ সম্পুর্ন হারিয়ে ফেলছি।
এসব ঘটনা এত পরিমানে ঘটে চলেছে যে, এখন আর মন খারাপের অনুভুতি ও হয়না! ঝড় বেশী হয় বলে এখন আর ঝড়কে ভয় লাগেনা!
এই পর্বটি আরো কয়েক পর্বে বিভক্ত করে দেয়া যেত। চমৎকার পোস্টটি অনেকে দৈর্ঘ্যের কারণে গড়ইমসি করতে পারেন।
আপনার মূল্যবান মন্তব্য পড়ে উৎসাহিত হলাম!
পড়ে মন্তব্য করার জন্য মোবারকবাদ
মন্তব্য করতে লগইন করুন