প্রবাসীর বউ! (তিন পর্বের ছোট গল্পের ১ম পর্ব) @};
লিখেছেন লিখেছেন মাহবুবা সুলতানা লায়লা ১৯ সেপ্টেম্বর, ২০১৪, ১২:৪৫:৩৬ দুপুর
হাঁটি হাঁটি পা পা করে চলা শিশুর মত মানুষের জীবনের শৈশবকালটাও এক সময় পা রাখে যৌবনে! ঢেউয়ের তালে তালে গড়িয়ে যাওয়া সময় একসময় যৌবন এনে দেয় জীবনে! এনে দেয় যৌবন বসন্তকাল! ঋতুর পূর্ণতা যেমন বসন্তে জীবনের পূর্ণতা তেমনী যৌবনে! একটা সময় সামান্য কিছু জানার বা পাওয়ার জন্য প্রত্যেকটা মানুষই ব্যকুল থাকে বা মানুষের মাঝে থাকে আকুল আকর্ষণ! বয়সের চাপে কখনো কখনো সেটাতে আর আকর্ষণ থাকেনা! কারণ হাতিয়ে দেখলে পাওয়া যাবে আবেগের জন্যই একসময় সবকিছু ভালোলাগে পেতে ইচ্ছে করে! বয়স বাড়ার সাথে সাথে বিবেকটাও যখন বুঝতে শিখে তখন আর সেই আবেগের মূল্যায়ন থাকেনা! সজাগ বিবেক আবেগকে শোধরিয়ে নেয়! যারাই আবেগের আবেগী থেকে সময়মত বাঁচতে পেরেছে তারাই জীবনে সুখের খোজ পেয়েছে! আবেগ ক্ষনিকের এবং বিবেকের কাছে আবেগ সবসময়ই মূল্যহীন! অনেকেই বিবেককে মূল্যায়ন করে আবেগকে বশ করে জীবনে সত্যিকারের ভালোবাসা পেয়েছেন! আর যারাই আবেগের বশবর্তী হয়ে বিবেককে বোকা বানিয়ে সামনে যেতে চেয়েছেন বা গিয়েছেন তারাই ধরা খেয়েছেন!
লোপা পূর্ণ বয়সে বাবা মায়ের সম্মতিতেই বিয়ে করেন প্রবাসী স্বামীকে! যদিও মনের দিক থেকে প্রবাসীদের তেমন একটা পছন্দ করতেন না! তথাপি যার রিজিক যেখানে থাকে বলে কথা! শ্বশুর শ্বাশুড়ীর অনেক পছন্দেই বিয়ে সম্পন্ন হয় যদিও স্বামী পরিবারের অনেকেই পছন্দ করেন নি! কিন্তু শ্বশুর শ্বাশুড়ীর একার মতেই হয়ে যায় বিয়ে! শুরু হয় লোপার বিবাহিত জীবনের নতুন জীবন! দুই ভাসুর তিন দেবর আর চার ননদের বড় সংসার! বড় সংসারের সেজু বউ! কিন্তু কাজে কামে বড়দেরকেও হার মানায়! বড় জাদের হাত থেকেও কাজ কেড়ে নিয়ে করে দেয় হাসি মুখে! ভালোই চলছিলো লোপার নতুন জীবনের নতুন বাসস্থলে! স্বামীর সোহাগ সবকিছু নিয়ে যেন লোপার সর্গবাস চলছে! কিন্তু সে সর্গে লোপা বেশীদিন স্থায়ী হতে পারেনি! কারণ সবার মুখে মুখে লোপার সুনাম আর ভালো ব্যবহারের প্রশংসা যেন লোপার জীবনের সুখের নদীতে বাঁধ সাধলো! যতদিন প্রবাসী স্বামী দেশে ততদিন তার সুখের অভাব ছিলোনা! এরপর স্বামী চলে গেলো প্রবাসে! আর লোপার জীবনেও নেমে এলো কষ্টের ঝড়!
এরই মাঝে লোপা অনুভব করতে থাকলো নিজের ভেতরে আরেক সত্তা! আর আস্তে আস্তে বুঝতে শুরু করলো কষ্ট কাকে বলে? কত প্রকার? ও কি কি? যৌথ পরিবার বড় ভাইয়ের নামেই টাকা পাঠায় লোপার স্বামী! বর্তমানের মত মোবাইলের ও এত সুযোগ সুবিধা ছিলোনা তাই লোপারও স্বামীর সাথে কথা বলা হতোনা! কিন্তু মানুষটি তো বলে গেছে এক বছর শেষে দেড় বছরের মাথায়ই ছুটিতে আসবে! কই দিন গড়িয়ে মাস, মাস গড়িয়ে বছর, বছর গড়িয়ে কয়েক বছর হলো লোপার স্বামীতো এখনো এলোনা! সে কি ভুলে গেলো লোপাকে? এদিকে লোপার কোল জুড়ে আসলো ফুটফুটে সুন্দর এক কন্যা যেন চাঁদকেও হার মানায় সে কন্যার রুপ! লোপা শ্বশুরালয়ে বুঝতে থাকে তেলের কষ্ট, সাবানের কষ্ট, খাওয়ার কষ্ট, পোষাকের কষ্ট, আর এমন কি এবংশের বংশধরকেও তারা আদর যত্ন করেনা! লোপা যেন কন্যা সন্তান জম্ম দিয়ে পাপ করেছে আর সেই পাপে লোপার বুকের ধনকেও কষ্ট দিচ্ছে! আর সবকিছুর পরে যে কথাটা বাকি থেকে যায় তা হলো আত্ম সম্মান নিয়ে এখানে আর কতদিন টিকে থাকবে? কিভাবে থাকবে? যার ভালোবাসার অপেক্ষায় রয়েছে সে তো কোন খবরই রাখছেনা! কি করবে লোপা? পিতৃপরিবারের থেকে সবাই বলছে ওদের মেয়েকে রেখে চলে আয়! লোপা শুধু বলে বিয়ে তো জীবনে একটিই হয় আর তাতো আমার হয়েছেই! আমাকে আমার তাকদ্বীরের উপর ছেড়ে দিন! দেখি আল্লাহ কি করেন?
(ক্রমশ..............।)
বিষয়: সাহিত্য
২৩৬১ বার পঠিত, ২৮ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
সজাগ বিবেক দিয়ে আবেগ কে মুল্যায়িত না করলে জীবনে পরাজয় আসবেই।
লোপাদের জন্যে শুভ কামনার সাথে সাথে অনেক ধন্যবাদ আপনাকে.......
অনেক ধন্যবাদ।
পরবর্তী পর্বের অপেক্ষায় রইলাম।
জাজাকাল্লাহু খাইর।
ধন্যবাদ তার পরেও.....
আল্লাহ আমাদের সবাইকে সবার হক্ব আদায় করার মত তৌফিক দিন আর যে সব ভাইয়েরা স্ত্রীদের প্রতি অবিচার করেন না জেনে, না বুঝে তাদেরকে পূর্ণ হেদায়াত দিন!
আপনার কথায় যুক্তি আছে! তবে সবার ক্ষেত্রে নয়!
ধন্যবাদ মন্তব্যের জন্য
আমিন!
আমিন!
মন্তব্য করতে লগইন করুন