Rose Rose"তোমরা যারা অলংকারকে দামী মনে করো" Rose Rose

লিখেছেন লিখেছেন মাহবুবা সুলতানা লায়লা ০৯ আগস্ট, ২০১৪, ০৬:৩১:৫০ সকাল

স্বামী স্ত্রীর সম্পর্কঃ- পৃথিবীতে এক একজনের সম্পর্ক একেক রকমের হয়! পিতা মাতার সাথে এক রকম! ভাই বোনের সাথে একরকম! আর স্বামী স্ত্রীর সম্পর্ক এমন মধুর যে পৃথিবীর আর কোন কিছুর সাথে তাদের তুলনা হয়না! স্বামী স্ত্রী এমন এক জুটি যাদের সম্পর্কের কাছে, ভালোবাসার কাছে বাকি সব সম্পর্ক তুচ্ছ বা ম্লান! তবে স্বামী স্ত্রী হলেও অনেক সময় বিপরীত সম্পর্ক ও হয়! একজন একজনকে না বুঝার কারনে! মূল্যায়ন না করার কারনে! আমি সেদিকে যাচ্ছিনা! কারন সব বস্তুরই এপিঠ ওপিঠ আছে! ভালো মন্দ আছে! আমরা যদি মন্দটাকে ভালো ব্যবহার আর ভালোবাসা দিয়ে বুঝাতে পারি তবে সেই মন্দও ভালো হয়ে যায়! সুগন্ধী ফুল হয়ে সুবাস ছড়ায়!

মেয়েরা যেসব বিষয় নিয়ে বেশী আলোচনা করেনঃ- অনেক বোনেরা আছেন যারা কোন অনুষ্ঠানে বা কোন আড্ডায় কয়েকজনের সাথে একত্রিত হলেই অলংকার আর সাজ-সজ্জা নিয়ে বেশী আলোচনা করেন! এমনও কয়েকজন বোনকে দেখেছি যারা অন্যের স্বামীর বেতন নিয়েও সমালোচনা করেন! এরপর তো পোষাক/আষাক নিয়ে আলোচনা সমালোচনা আছেই! যা মোটেই ঠিক নয়! কোন বিয়ের অনুষ্ঠান হলে তো কথাই নেই কে কত বেশী দামী শাড়ি ও গয়না পড়ে আসে তার আলোচনা চলে! কার মনে কষ্ট পেল বা কে তুচ্ছ হলো সেটা দেখার বা ভাবার সময় কারো নেই! এসব নিয়ে অনেক সময় কাউকে কাউকে খুবই অবজ্ঞা অবহেলা করা হয়! অনেকে এসব কারনে প্রিয় স্বজনদের বিয়েতেও যেতে চান না!

স্ত্রীর মূল্যবান অলংকারঃ- প্রত্যেক মেয়েরই গর্বের বিষয় তার স্বামী! আর সুন্দর ও শিক্ষিত হলে তো কথাই নেই তার প্রশংসা মুখ থেকে যেন সরেইনা! আর মূল্যবান হলো নারীর গয়না! স্বামী ছাড়া বাহিরে বের হওয়া যাবে কিন্তু গয়না ছাড়া; কখনোই নয়! কারন কে কি বলবে গয়না ছাড়া বাহিরে গেলে? স্বামীর কথা তো বলা যাবে ব্যস্ত কিন্তু গয়না ছাড়া কি বলবে মানুষকে? তাই গয়না পোষাকও নারীর আরেক গর্বের বিষয়! কত নারীর গয়নার শখ বেশী গয়না দিয়ে সাজতে সে খুবই আনন্দবোধ করে এবং এমন অনেক নারীই আছেন যারা এসব কারনে অন্যকে তাচ্ছিল্যও করে! আর কেউ কেউ এমনও আছেন যারা পোষাককেই বেশী মূল্যায়ন করে! কে কত দামী পোষাক পরিধান করেছে! কার স্বামী ঈদে কত বেশী দাম দিয়ে শাড়ি কিনে দিয়েছে এসব খোজ ও নেন! কার মেরেজ ডে তে স্বামী কত দামী গয়না বা দামী পোষাক দিয়েছে এসব ও আমার প্রিয় বোনদের সমালোচনার বিষয়! কখনো কখনো এই সমালোচনা মানুষকে অনেক কষ্ট দেয়! কারন সবার স্বাদ থাকে কিন্তু একই রকম সাধ্য থাকেনা! তাই অনেকে অনেক ঘনিষ্ট ব্যক্তির দাওয়াত ও এড়িয়ে যান!

অনেক বোনেরা একত্রিত হলেই জানতে চান কার স্বামী কত বেতন পান? কত ভরি গয়না দিয়েছে বিয়েতে? কত মোহরানা দিয়েছে? এবং নিজেরটা বলতে থাকে! এটা ঠিক আপনার স্বামীর আয় বেশী বা বেশী বেতন পান তাই আপনার বিয়েতে অনেক ভরি গয়না দিয়েছে! বেশী মোহরানা দিয়েছে এবং আপনি বেশী দামী পোষাক পরিধান করেন! কেন আপনি জানতে চান? কার স্বামীর কত বেতন? কত ভরি গয়না দিয়েছে বিয়েতে? কত লাখ টাকা মোহরানা দিয়েছে? সবার ইনকাম সমান নয় তাই এসব প্রশ্ন করে কাউকেই লজ্জিত করা ঠিক নয়! এখানে অন্য বোনকে হেয় না করাই কি ভালো নয়?

এক দাওয়াতের অনুষ্ঠানে গিয়েছিলাম সেখানেও এসবই নারীদের আলোচনার মূল বিষয়! কেউ বলছে আমাকে এত ভরি গয়না দিয়েছে এত টাকার মোহরানা দিয়েছে এবং প্রতি মেরেজ ডেতে স্বর্ন উপহার দেয়! আরেকজন বলছে ভাই আমি গয়না নেই না আমার স্বামীর কাছে থেকে আমি নগদ টাকা নিয়ে নেই এবং তা ব্যাংকে জমা করে রাখি! কারন গয়না নাকি সাড়ে সাত ভরি হলে যাকাত দিতে হবে! কে করে এসব ঝামেলা? তাই গয়না এপরিমাণে রেখেছি যাতে যাকাত দিতে না হয়! আরেক বোন বলছে আমার সাজতে খুবই ভালো লাগে! যে কোন অনুষ্ঠানে পার্লার থেকে না সাজলে যেন মনেই হয়না কোন অনুষ্ঠানে গিয়েছে! আরেক বোনের প্রিয় হলো কোন অনুষ্ঠান হলেই তাকে মার্কেট থেকে নতুন কাপড় কিনতে হবে নতুন সাজ কিনতে হবে নতুন জুতা কিনতে হবে বিয়ে মানে সবচেয়ে বড় এক অনুষ্ঠান এখানে কি পুরোনো জিনিস ইউজ করা যায়? অনুষ্ঠানের সাথে মানান সই হতে হবেনা? তাই যে কোন অনুষ্ঠানে আমি টুকিটাকি মার্কেট করি! আর করতে না পারলে সে অনুষ্ঠানে যাই-ই না! এই অনুষ্ঠানে আমিই যেন সবার চেয়ে সাধারণ! আমার পোষাক ও দামী ছিলনা তেমন অলংকার ও আমি পরা ছিলামনা তথাপি সবার কথা শুনে বললাম আল্লাহ কখনো যদি তৌফিক দেন তবে অবশ্যই গয়না বেশী করে কিনবো কারন আল্লাহ যেহেতু এতবড় সুবিধা দিয়েছেন এতে করে গয়না পরার আকংখাও পূরন হবে আর যাকাত আদায় করে ছওয়াবও পাওয়া যাবে! সবাই এতে করে মুখ চাওয়া চাওয়ি করল! তাতে আমার কিছু যায় আসেনা! কারন পৃথিবীর অলংকার পৃথিবীতে থেকে যাবে আমার সাথে আমার নেক নিয়্যত ও নেক আমল যাবে!

প্রিয় বোনদের বলতে চাইঃ- আমার প্রিয় বোনদেরকে বলতে চাই পৃথিবীতে সকল দামী বস্তু ও দামী অলংকারের চেয়েও একজন নারীর কাছে তার স্বামীই বড় দামী এবং অতিব মূল্যবান অলংকার! আপনার স্বামীই আপনার স্বর্নের চেয়েও দামী গয়না! হিরার চেয়েও বড় হিরার টুকরা! আপনি এত দামী সম্পদ পেয়ে ও সামান্য গয়না আর পোষাক নিয়ে এত গর্ব কেন করেন? পৃথিবীতে একজন স্ত্রীর কাছে একজন দ্বীনদার ফরহেজগার স্বামীই কি মূল্যবান সম্পদ নয়? আর একজন স্বামীর কাছে একজন নেককার ও ফরহেজগার স্ত্রীই কি মূল্যবান সম্পদ নয়? তবে কেন আপনারা দুনিয়ার পোষাক আর গয়না নিয়ে এত গর্ববোধ করেন? এত অহংকার করেন? আমি এক মজলিসে বলেছিলাম ভাই তোমাদের সবার কাছে দামী অলংকার দামী গয়না আছে দামী পোষাক তোমরা পরিধান করো তোমাদের স্বামীরা বেশী টাকা ইনকাম করে তাতে আমার কিছু যায় আসেনা! আমি দুঃখীতও নই কারন আমার যা আছে আমি তাতে তুষ্ট! আর আমার কাছে তোমাদের সবার চেয়ে দামী এক সম্পদ আছে! সবাই জানতে চাইলো কি সেই সম্পদ? আমি বললাম....

দামী সম্পদঃ- আমার সেই দামী এবং মূল্যবান সম্পদ হলো আমার প্রিয়তম স্বামী! যার দিকে তাকালে প্রিয় নবী (সঃ) এর স্মৃতি মনে পড়ে! রাসূল (সঃ) এর আদর্শ চোখের পাতায় ভেসে ওঠে! যে খুব সাদাসিদে জীবন পরিচালনা করে! সত্যের উপর আছে! যে নিজেও কোন সমস্যা ছাড়া নামাজ কা'যা করেনা এবং আমার নামাজের প্রতিও খেয়াল রাখে! আমার পর্দার প্রতি খেয়াল রাখে! আমার হক্বের প্রতি খেয়াল রাখে! আমার মনের মূল্যায়ন করে! যার পিছনে দাড়িয়ে আমি জা'মাতের সাথে নামাজ পড়ি! দুঃখ কষ্ট সবকিছু আমরা একে অপরের সাথে শেয়ার করি! সেই আমার দামী সম্পদ ও দামী অলংকার! যাকে আমি দুনিয়ায় স্বামী হিসেবে পেয়ে ধন্য এবং তাকেই আমি জান্নাতে গিয়েও সাথী হিসেবে চাই! আমি না চেয়েও তার থেকে সবচেয়ে দামী জিনিসটা পাই আর তাহলো তার ভালোবাসা! আমি বিশ্বাস করি যে আমি যদি কোন জিনিস চেয়ে তার উপর চাপ প্রয়োগ করি সে হয়তো তা কিনে দেবে যেকোন ভাবে কিন্তু সে তো মনে কষ্ট নিয়ে তা দেবে আর তার মনে কষ্ট দিয়ে স্বর্নের গয়না বা দামী পোষাক পরে আমি কি মনে শান্তি পাবো? এর চেয়ে তার সাধ্যানুযায়ী সবকিছু করি তাতে করে দামী বস্তু না পেলেও তার মন যে পুলকিত আছে সেটা তো বুঝতে পারি! আর সেটাই আমার কাছে বড়!

কৌশল করার পদ্ধতিঃ- অনেক বোন আমাকে পরামর্শ দেন জোর করে অলংকার আদায় করতে বা আমার যা ইচ্ছা তা জোর করে নিতে আমি জোর করে নেয়াটা পছন্দ করিনা! অনেকে বলেন এভাবে চাইতে এভাবে বায়না ধরতে কিন্তু আমি তা কখনোই করতে চাইনা! কারন জোর করে সবকিছু আদায় করা গেলেও মনের তৃপ্তি পাওয়া যায়না! আর আমি যেখানে জানি আমার স্বামীর আয় কতটুকু? এবং কতখানি ব্যয় সেখানে জোর করাটা বোকামি ছাড়া আর কিছু নয়! পৃথিবীর সকল অলংকার ও সকল দামী বস্তুর চাইতে আমার স্বামীই আমার কাছে মহামূল্যবান ও দামী অলংকার! আর আমি এই অলংকারেই নিজেকে সজ্জিত করে রাখি রাখতে চাই সবসময়!

পরিশেষেঃ- তোমরা যারা পৃথিবীর সম্পদ ও অলংকারকে দামী মনে করো তাদেরকে বলতে চাই! একজন বেনামাজী স্বামী এক বেদ্বীন লোক যার হক্ব বাতিলের মাঝে পার্থক্য করার মতো বুঝ নেই সে তোমাকে পৃথিবীর সবচেয়ে দামী গয়না আর দামী পোষাক পরাল! তুমি জোর করে তাকে বাধ্য করলে অসৎ পথে কামাই করে বিলাসিতা করতে! তোমার স্বামী অনেক অনেক টাকার মালিক হলো অসদুপায়ে এবং শেষে তোমাকেই তাচ্ছিল্য করলো এবং অন্য মেয়েদের নিয়ে আনন্দে মেতে উঠলো তখন কি তোমার ভালো লাগবে? নিরবে ভেবে দেখ কোনটা আসলে দামী? আসলেই কোনটা অলংকার? আর কেয়ামতের মাঠে যখন এই সম্পদ ও এই অলংকারের কারনে তোমার প্রিয়তম স্বামীকে লাঞ্চিত করবে তখন তোমার দেখতে কি ভালো লাগবে? হে আমার প্রিয়তম বোনেরা তোমরা নিজেদেরকে সাজাও তোমাদের স্বামীর সাধ্যানুযায়ী! ব্যয় করো স্বামীর আয় বুঝে! যাদের অলংকার আছে তারা পরো কিন্তু অহংকার করনা কারন অহংকার পতনের মূল! আল্লাহর শুকরিয়া আদায় করো তিনি তোমাকে তৌফিক দিয়েছেন এজন্য! আমরা বেশী বেশী শুকরিয়া আদায় করলে আল্লাহ সেই নেয়ামত আরো বৃদ্ধি করে দেবেন! আল্লাহ আমাদের সব বোনদের ও আমাকে সহ সকল প্রকার বিলাসিতা থেকে দুরে রাখো! এবং তোমার পছন্দের পথে পরিচালনা করো! আর স্বামীর মানসা মতো চলার তৌফিক দান করো! আমিন! ছুম্মা আমিন!

বিষয়: সাহিত্য

১১২২ বার পঠিত, ১৪ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

252454
০৯ আগস্ট ২০১৪ সকাল ০৭:৪০
হতভাগা লিখেছেন : 'আমার প্রিয় বোনদেরকে বলতে চাই পৃথিবীতে সকল দামী বস্তু ও দামী অলংকারের চেয়েও একজন নারীর কাছে তার স্বামীই বড় দামী এবং অতিব মূল্যবান অলংকার! ''


০ মজা ভালই নিতেছেন ম্যাম
০৯ আগস্ট ২০১৪ সকাল ০৮:০১
196568
কাহাফ লিখেছেন : সবাই মনে করে না রে #হতভাগা............
১১ আগস্ট ২০১৪ সকাল ১১:৫৯
197261
মাহবুবা সুলতানা লায়লা লিখেছেন : আমি শুধু বাস্তবতা তুলে ধরলাম। আপনাকেও পড়ে মন্তব্য করার জন্য ধন্যবাদ
১১ আগস্ট ২০১৪ দুপুর ১২:০১
197262
হতভাগা লিখেছেন : বাস্তবতা নিয়ে যে অনেকেই মজা করে সেটাও দেখে নিলাম ।
252486
০৯ আগস্ট ২০১৪ সকাল ০৮:৪৯
সত্যকণ্ঠ লিখেছেন : ধন্যবাদ ভালো লাগলো
১১ আগস্ট ২০১৪ সকাল ১১:৫৭
197254
মাহবুবা সুলতানা লায়লা লিখেছেন : আমি শুধু বাস্তবতা তুলে ধরলাম। আপনাকেও পড়ে মন্তব্য করার জন্য ধন্যবাদ
252529
০৯ আগস্ট ২০১৪ দুপুর ১২:৪৬
ইমরান ভাই লিখেছেন : ভালো লাগলো অনেক ধন্যবাদ Rose Rose Rose Rose
১১ আগস্ট ২০১৪ সকাল ১১:৫৭
197255
মাহবুবা সুলতানা লায়লা লিখেছেন : আমি শুধু বাস্তবতা তুলে ধরলাম। আপনাকেও পড়ে মন্তব্য করার জন্য ধন্যবাদ
252704
০৯ আগস্ট ২০১৪ রাত ১০:২০
আফরা লিখেছেন : অনেক ভাল কথা লখেছেন আপু ।প্রতিটা মেয়ের এটা লক্ষ রাখা উচিত ।
১১ আগস্ট ২০১৪ সকাল ১১:৫৮
197257
মাহবুবা সুলতানা লায়লা লিখেছেন : কারো উপকারে আসলে আমার লেখাটা সার্থক হবে! ধন্যবাদ আপনাকে
252746
১০ আগস্ট ২০১৪ রাত ০১:০৯
নুর আয়শা আব্দুর রহিম লিখেছেন : সুন্দর লিখেছেন আমাদেরও কাজে লাগবে আশা করি....
১১ আগস্ট ২০১৪ সকাল ১১:৫৮
197258
মাহবুবা সুলতানা লায়লা লিখেছেন : ইনশা-আল্লাহ! উপকৃত হোন সকলে আর আমার জন্য দোয়া করবেন!
252976
১০ আগস্ট ২০১৪ রাত ০৯:০৭
বাজলবী লিখেছেন : ভালো লাগলো ধন্যবাদ।
১১ আগস্ট ২০১৪ সকাল ১১:৫৮
197259
মাহবুবা সুলতানা লায়লা লিখেছেন : আমি শুধু বাস্তবতা তুলে ধরলাম। আপনাকেও পড়ে মন্তব্য করার জন্য ধন্যবাদ

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File