" (রমাদ্বান আলোচনা) উত্তম প্রতিবেশী"
লিখেছেন লিখেছেন মাহবুবা সুলতানা লায়লা ১৫ জুলাই, ২০১৪, ০৯:১২:৩৪ রাত
উত্তম প্রতিবেশী পার্থিব জীবনে বিরাট এক নেয়ামত! উত্তম প্রতিবেশী ভালো থাকার মাধ্যম! উত্তম প্রতিবেশী বিপদে আপদে সহমর্মিতার হাত বাড়িয়ে দেয়! উত্তম প্রতিবেশী সবসময়ের বন্ধু হয়ে থাকে! প্রতিবেশীর আচরণে প্রতিবেশী জানতে পারে প্রতিবেশীর ভাল-মন্দ! বিধায় আচরনেই প্রমানিত হয়ে যায় মন্দ বা সৎ ও উত্তম প্রতিবেশী কারা? এর প্রমান সহীহ হাদীস শরীফের মধ্যেই পাওয়া যায়।
নবী (সঃ) বলেন,"আল্লাহর নিকট সেই সাথী উত্তম যে নিজ সাথীদের নিকট উত্তম। আল্লাহর নিকট সেই প্রতিবেশী উত্তম যে নিজ প্রতিবেশীর নিকট উত্তম।
" -বুখারী আদাবুল মুফরাদ।
ইবন মাসউদ (রাঃ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেনঃ " এক ব্যক্তি নবী (সঃ) এর নিকট বললোঃ হে আল্লাহর রাসুল (সঃ) আমি ভালো করছি না মন্দ করছি তা কি করে জানবো? নবী (সঃ) বললেনঃ যখন তোমার প্রতিবেশীদের বলতে শুনবে যে, তুমি ভালো করেছো, তবে প্রকৃতই ভালো করেছো, আর যখন প্রতিবেশী বলবে তুমি মন্দ করেছো তবে মনে করবে তুমি মন্দ করেছো।
" ইবনে মাজাহ।
নবী (সঃ) আরও বলেছেন,"একজন মুসলমানের জন্য বাসভবন, সৎ প্রতিবেশী ও আরামদায়ক বাহন সৌভাগ্যের নিদর্শন।"
বুখারী আদাবুল মুফরাদ।
উত্তম প্রতিবেশী সম্পর্কে রাসুল(সঃ) আরও বলেছেন, "আল্লাহ তা'য়ালা একজন সৎকর্মশীল মুসলমানের কল্যানে তার প্রতিবেশীর মধ্য থেকে একশোটি পরিবারকে বিপদ-মুসিবত থেকে রক্ষা করেন। এরপর তিনি সূরা আল বাকারার ২৫১ নং আয়াতের নিম্নের অংশটুকু তিলাওয়াত করেন--"আল্লাহ তা'য়ালা যদি কিছু লোককে অপর কিছু লোক দ্বারা প্রতিহত না করতেন তাহলে পৃথিবী অরাজকতায় ভরে যেত।"
জেনে নেই নিকৃষ্ট প্রতিবেশী সম্পর্কে কি বলা হয়েছেঃ
প্রতিবেশী যেহেতু সুখের ,দুঃখের সাথী তাই প্রতিবেশী খারাপ হলে বড়ই দুর্ভাগ্য। নবী (সঃ) মন্দ প্রতিবেশীর পরিচয় বলে দিয়েছেন এবং তাদের থেকে আল্লাহর নিকট আশ্রয় চেয়েছেন।
আবু মুসা (রাঃ) হতে বর্ণিত, রসুল (সঃ) বলেছেন,
"কোন ব্যক্তি তার প্রতিবেশী, তার ভাই এবং তার পিতাকে হত্যা না করা পর্যন্ত কিয়ামত হবেনা।
"বুখারী আদাবুল মুফরাদ।"
আবু হুরায়রা (রাঃ) হতে বর্ণিত; নবী (সঃ) এর একটি দু'আ হলোঃ" হে আল্লাহ! আমি আমার আবাসস্থলে তোমার নিকট দুষ্ট প্রতিবেশী থেকে আশ্রয় চাই। কেননা দুনিয়ার প্রতিবেশীতো পরিবর্তন হয়ে থাকে।
" বুখারী আদাবুল মুফরাদ।"
এ প্রসঙ্গে আল্লাহর রাসুল(সঃ) আরও বলেন, "তিন ব্যক্তি চরম বিপজ্জনকঃ
(১) এমন নেতা যার সাথে ভালো ব্যবহার করলেও কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেনা,আবার কোন ভুল করলে ক্ষমাও করেনা।
(২)এমন অসৎ প্রতিবেশী , যে উপকার পেলে লুকিয়ে ফেলে,আর অন্যায় কিছু পেলে তা সর্বত্র প্রকাশ করে।
(৩) এমন স্ত্রী ,যার কাছে থাকলে কষ্ট দেয়, আর যার কাছ থেকে দূরে গেলে বিশ্বাসঘাতকতা করে।"
"তবারানী,আত-তারগীব ওয়াত-তাহরীব ৩য় খন্ড ১৩০৫নং।"
অনেকদিন থেকে ব্লগে আসতে পারছিনা পারিবারিকভাবে সবাই অসুস্থ হওয়ায় তবে সবার লেখা এবং ব্লগকে খুবই মিস করি! জীবনের প্রথম রমাদ্বান মদিনাতে কাটাচ্ছি! আলহামদুলিল্লাহ খুবই ভালো লাগছে! ভালোলাগা অনুভূতিগুলো লিখে শেয়ার করতে পারবোনা! আমি এমন একটি বাসায় থাকি যেখানে কেউ কারোর ভাষা বুঝিনা! কিন্তু আমি খুবই উত্তম প্রতিবেশী পেয়েছি এই প্রবাসে! যারা রমাদ্বান ছাড়া ও আমার ঘরে নানা রকম হাদিয়া পাঠাতো! এবং এই রমাদ্বানে তো প্রতিদিনই ইফতার পাঠাচ্ছে! আমি রীতিমত বিরক্ত হয়ে যাচ্ছিলাম কারন পরিবারে সবাই অসুস্থ থাকায় আমি নিয়মিত ইফতার বানাতে পারছিলাম না! কিন্তু অপরদিকে আমার প্রতিবেশী আফগানিরা প্রতিদিনই আমাদের ঘরে নানা রকম ইফতার তৈরি করে পাঠায়! রমাদ্বানে মাত্র দুই কি তিনদিন বাদে সবগুলোতেই ইফতার পাঠিয়েছে! আরেকজন প্রতিবেশী যারা আমাদের উপেরে তলায় থাকে তারাও আমাদের সাথে খুবই সৌহার্দপূর্ণ ব্যবহার করে! আমরা ভিনদেশী হওয়ার পরও তারা আমাদের সাথে উত্তম আচরণ করে! হাদিয়া পাঠায়! আমার সাথির সাথে দেখা হলে খোজ খবর নেয়! বাস্তবতা হলো উত্তম প্রতিবেশী হলে অনেক পেরেশানি মুক্ত থাকা যায়! ভালবাসার সম্পর্ক অটুট থাকে! আর বিশেষ হলো মদিনাতে আমি বাংলাদেশী অনেককে পেয়েছি যারা ইসলামের মর্মার্থ বুঝার কারনে প্রবাসী বাঙালিদের খুব মূল্যায়ন করে! বিপদে এগিয়ে আসে! ভালো পরামর্শ দেয়! যে কোন বিষয়ে সহযোগীতার হাত বাড়িয়ে দেয়! যা আমি দেশে থেকেও কখনোই বুঝতে বা অনুভব করতে পারিনি! আলহামদুলিল্লাহ মদিনাতে আসার পর বুঝতে পারলাম বাঙালিরা বাঙালির প্রতি কতটা সদয় মনোভাব রাখে! দেশে আমি কখনোই এত উত্তম প্রতিবেশী পাইনি! বর্তমানে বাংলাদেশী যাদেরকেই আমি পেয়েছি তারা খুবই সুন্দর মনের মানুষ! একজন বোন পেয়েছি নোয়াখালি জেলার! যিনি আমাদের অসুস্থতার সময় রান্না করে করে বক্সে করে পাঠিয়েছেন! যা নিকটতম আত্মীয় ছাড়া করেনা! আর মদিনাতে এসে অনেক অনেক হাদিয়া (গিফট) পেয়েছি আলহামদুলিল্লাহ! আমরা সকলেই সকলের উত্তম প্রতিবেশী হতে চেষ্টা করি! সকলেই আমাদের প্রতিবেশীর সাথে উত্তম আচরণ করি! আমরা সকলেই হই এক একজন উত্তম প্রতিবেশী!
আল্লাহ আমাদের আচরনকে সৎ প্রতিবেশীর গুণাবলীর মধ্যে অর্ন্তভূক্ত করুন আর আমাদেরকে আল্লাহর প্রিয়পাত্রী বানিয়ে নিন! আমরা সকলেই যেন আমাদের প্রতিবেশীদের খোজ খবর রাখি! সামান্য শরবত, খেজুর বা কিছুই না থাকলে সাদা পানি দিয়ে হলেও মানুষকে ইফতার করাই এবং অসংখ্য নেকের অংশীদ্বার হই! মহান আল্লাহ আমাদের সবাইকে নেক আমল করার তৌফিক দান করুন আর সকলের নেক নিয়্যতকে কবুল করে নিন! আমিন!
বিষয়: সাহিত্য
১২৮২ বার পঠিত, ১৪ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
শেষ দশদিনে হারামে গেলে আমাদের জন্য অবশ্যই একটু দোয়া করবেন কিন্তু... জাযাকাল্লাহ খাইরান...
সকল ব্লগার ও নিজ স্বদেশের জন্য প্রান খুলে দোয়া করছি এবং শেষ দশকেও করবো! আমাদের জন্যেও দোয়ার দরখাস্ত সবার কাছে! আল্লাহ যেন মদিনাতে সবসময় থাকার সুযোগ করে দেন! আমিন!
মন্তব্য করতে লগইন করুন