''সুখের যখন সময় তখনই এই.........''

লিখেছেন লিখেছেন মাহবুবা সুলতানা লায়লা ২৩ মার্চ, ২০১৪, ০৪:৪১:০৮ রাত

‘’সুখের সময় যখন তখনই এই ........’’

পৃথিবীর নিয়মের কাছে সব মানুষই বাঁধা। মানুষের সাথে মানুষের জোর চলে কিন্তু মহান আল্লাহ প্রদত্ত নিয়মের কাছে কোনই জোর চলেনা বরং শান্ত মনে মেনে নিতে হয়। কারন এবেলাতে সবাই মানতে বাধ্য যে এটাতে কারো হাত নেই স্বয়ং আল্লাহ করেছেন তাই।

প্রবাসী একজন ভাই যার জীবনের পুরোটাই পার করেছেন প্রবাসে থেকে মাঝ খানে অল্প কিছু সময় কাটিয়েছেন আপনজনের কাছে। প্রায় দুই যুগেরও বেশি সময় ধরে থেকেছেন প্রবাস নামক কারাগারে, যেখানে শুধু ব্যস্ততা আর একাকৃত্ত্বতা সাথি হয়। কোন ওজর আপত্তি চলেনা এই প্রবাসে। নিজের খেয়ে, নিজের পরে, নিজে পরিশ্রম করে টাকা পাঠাতে হয় স্বজনদের কাছে। এরপরও সবার মন পাওয়া যায়না। সবাইকে খুশি করা যায়না কারন একটাই পরিবারের একজনকে একটা কিছু দিলে আরেকজন বেঁকে বসে, আরেকজনকে বুঝাতে পারলে আরেকজন কি করা? এভাবে সবাইকে খুশি করতে করতেই নিজের আনন্দ বলে কিছুই বাকি থাকেনা।

সবাইকে খুশি করতে করতে প্রবাসে পার করলেন একযুগ। এরপর বিয়ে করলেন স্বজনদের কাছে থাকলেন কয়েকমাস আবারও পাড়ি দিলেন প্রবাসে। বছর ঘুরতেই জীবনের সবচেয়ে মূল্যবান সম্পদ দিলেন মহান আল্লাহ তা’য়ালা একজন পুত্র সন্তান। যার মুখ এখনো দেখতে পায়নি প্রবাসে থাকে বলে। যাক; এবার না হয় শূন্য হাতেই যাব নিজের ওয়ারিসকে দেখতে মনে তো প্রশান্তি থাকবে!! কিন্তু না! হলনা; যাওয়া, কারন ছোট বোনেরা তিনজন তিন জামাইর জন্য তিন জিনিস চেয়ে বসে আছে, ছোট ভাই ল্যাপটপ চেয়েছে, এদিকে পরের মেয়েও একজন আছে সবাইকে এটা সেটা দিলে সে কি দোষ করেছে? তাকেও তো কিছু দেয়ার দরকার, এদিকে আবার তাকে কিছু দিতে গেলে ঘরে মা আছে, বাবা আছে তাদেরকেও তো কিছু দিয়ে খুশি করতে হবে কি করবে? ভেবে পায়না সে? সবার খুশির চিজ এসব যোগাড় করতে করতে চলে গেল আরো দুই বছর। ছেলের বয়ষও হয়ে গেল দুইবছর, বিয়ের বয়ষ তিন বছর কি করা স্ত্রীর কাছে মাফ চেয়ে নিতে হবে কারন সবার হক্ব বাদ দিয়েও স্ত্রীর আলাদা যে হক্ব আছে তার জন্য এ পথ ছাড়া কোন পথ নেই।

সবার খুশির চিজ যোগাড় হয়েছে এবার ছুটিতে আসলো স্বজনদের কাছে। থাকলো আবারও কয়েক মাস। আড়াই মাস যেতেই প্রবাস যেন আবারও হাতছানি দিয়ে ডাকছে, তিনমাস শেষের আগেই আবারও প্রবাসে পাড়ি জমালো এভাবে তিন বছর পর পর দেশে এসে মাত্র কয়েকমাস থেকে শুধু বোনাস হিসেবে পেলেন তিন ছেলে। বিয়ের নয় বছর শেষ। বিয়ে করলেন. বাবা হলেন, তবে ছেলের বাবা, মনে রয়ে গেল মেয়ের বাবা হওয়ার সাধ। আসলেন আবারও ছুটিতে থাকলেন কয়েকমাস, চলে গেলেন। মহান আল্লাহর ইচ্ছাতে বছর ঘুরতেই হল একজন কন্যা সন্তান। বাবার ইচ্ছাকে পূরন করে দিলেন মহান আল্লাহ। মেয়েকেও দেখতে আসতে আসতে কেটে গেল প্রায় দেড় বছর আসল মেয়েকে দেখল আর ভাবলো মহান আল্লাহ যেন সব আশা আকাংখা পূর্ণ করে দিচ্ছেন আসল বাড়িতে যাবার সময় হয়তো নিকটে, ভাবতে ভাবতে আবারও প্রবাস তাকে ডাকছে..........এসো তাড়াতাড়ি এসো।

এবার মেয়ের রেখে প্রবাসে যেতে তার খুবই কষ্ট লাগছে তারপরও যেতে হল পার্থিব প্রয়োজনে। কেটে গেল আরো তিন বছর। ছুটিতে আসলো আবারও দেশে মেয়ের বয়ষ প্রায় পাঁচ বছর হতে চলল মেয়ে এখন ভালভাবে কথা বলতে পারে কিছু কিছু পড়তে ও লিখতে পারে বাবাকে সব পড়া শুনায় সকাল বিকাল, বাবা যেন পরম বন্ধু তার। বাবা কাঁধে করে ঘুরবে, বাবার কাছ থেকে বাবার ছেলে বেলার গল্প শুনবে, বাবা বাবা বাবা বাবাই যেন তার সবকিছু। এদিকে বাবাও যেন মেয়েকে পেয়ে আকাশের চাঁদ পেয়েছে হাতে মেয়ে যা বলে তাই হবে। মেয়ের সাত খুন মাফ আর ছেলেদের বেলায় কোন কিছুতে ছাড় নেই একটাই কথা তোমরা বড় হয়েছ আর ও তোমাদের একটি মাত্র ছোটবোন। তার সাথে তোমরা যোগ দিওনা। দেখতে দেখতে সময় হয়ে এলো প্রবাসে পাড়ি দেয়ার। এবার বাবার মন যেতে চাইছে না প্রবাসে কিন্তু মহান আল্লাহর কাছে মেয়ে চেয়েছে তিনি তা দান করেছেন এখন এই মেয়ের যাবতীয় খরচ যোগাড় করতে হবে মেয়ে পুরোপুরি বড় হলে আর প্রবাসে থাকবেনা মনে মনে সিদ্ধান্ত নিয়েছে এবার গিয়ে একসাথে কয়েক বছর থেকে চলে আসবে দেশে একেবারে। এরপর ছোট-খাট একটি ব্যবসা করে আর আল্লাহ বিল্লাহ করে কাটিয়ে দেবে জীবনের বাকি সময়। ছয় নয় ভাবতে ভাবতে সময় হয়ে গেল চলে গেল আবারও প্রবাসে। গিয়ে মমনটা মেয়ের জন্য অনেক কাঁদলেও কিছু করার নেই আরো কয়েক বছর থাকতে হবে মেয়ের ভবিষ্যতের জন্য, এতকাল তো শুধু ইনকাম করেছি আর খরচ করেছি এবার মেয়ের জন্য কিছু করতে হবে যা তার পড়া-শুনা ও বিয়েতে খরচ করা যায় এই ভেবে ভেবে কাটাচ্ছে সময়।

এভাবে কেটে গেল দুইটি বছর রোগ শোক ভাললাগা মন্দ লাগা সব মিলিয়ে। ইদানিং তার স্বজনদের মাঝে খুব থাকতে ইচ্ছে করে। ইচ্ছে করে সবাই একসাথে সময় কাটাতে কিন্তু পৃথিবীর প্রয়োজন যখন সামনে এসে দাড়ায় তখন এই ইচ্ছাগুলো স্থীর থাকেনা। সময়ের স্রোতে ভাসতে ভাসতে মানুষ কখন যে শিশু হয়, শিশু থেকে কিশোর, কিশোর থেকে যুবক, যুবক থেকে বৃদ্ধ কল্পনাই করা যায়না কিভাবে কি হল জীবনের? কখন কোন সময় পাড় করেছে তার হিসাব মেলাতে খুব কষ্ট হয় কিন্তু তবুও হিসাব মেলানো যায়না। লোকটার হঠাৎ করে পেটে ব্যথা হল, খাওয়ার রুচি কমে গেল, হজম শক্তিও আস্তে আস্তে কমে গেল, কমে গেল কাজ করারও শক্তি শ্রম দিতে দিতে নিজের যেন এখন শুধু বিশ্রাম নিতে ইচ্ছে করছে। এতো অসুস্থ দেখে পাষের লোকেরা দেশে চলে যাবার পরামর্শ দিল। অসুস্থতা নিয়ে দেশে এলো , দেশে অনেক চিকিৎসা করানো হল ডাক্তার কোন রোগই ধরতে পারলোনা। রোগ ধরা পড়ল এমন সময় যখন আর চিকিৎসার সুযোগ নেই

ডাক্তারের কথা উনার লিভার নষ্ট হয়ে গেছে আর কিছু করার নেই বাড়িতে নিয়ে যান যা খেতে চায় খাওয়না, মহান আল্লাহ যে ক’দিন হায়াত রাখে বেঁচে থাকবেন আর দোয়া করেন সবাই। লোকটা দেশে এসেও ভুগলেন দেড় বছর খানিক এরপর পাড়ি জমালেন না ফেরার দেশে। (ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজীউন) একজন মানুষ তার পুরো জীবনের আয় সবার জন্য ব্যয় করলেন, তার টাকায় ভাইয়েরা নিজেদের অবস্থান ঠিক করলো, বোনের জামাইরা নিজেদের পুঁজি গুছালো আর বউ ও ছেলে মেয়ের জন্য করলেন বাড়ি ঘর, কিন্তু সে নিজে কি পেলেন? এটা আমরা কেউই ভাবিনা। মানুষের থেকে পেলেন সামান্য বাহবা, বা ধন্যবাদ, বা কেউ কেউ বলতেন আল্লাহ আরো হায়াত দান করুন ব্যস এই তো। লোকটার বিদায়ের পর তার বউ বললেন যখন যৌবন ছিল, এবং সংসারে খুব কষ্ট ছিল, তখন তার অপেক্ষায় থাকতাম সব কষ্ট সহ্য করে আসবে হয়তো এই বছর শেষ হলেই......। এভাবে আরো কতবার তাকে বিদায় দিয়েছি কষ্ট লেগেছে আবারও শান্তনা পেয়েছি এই ভেবে যে আসবে তো আরো কিছুদিন পরে। কিন্তু এখন যে প্রবাসে গেছে সেখান থেকে আর কোনদিনও ফিরে আসবেনা। আর এখন সুখের সময় হয়েছে, ছেলেরা পড়া লেখা শেষ করেছে, বাড়ি আছে সেখান থেকেও কিছু আয় হয় কিন্তু যখনই তার সুখ করার সময় তখনই এই বিদায়............। মেয়ে চেয়েছে আল্লাহর কাছে, দিয়েছেন তিনি কিন্তু মেয়েকে তার গন্তব্যে পৌছে দিতে পারলোনা। বড় কঠিন এই বিদায়! এই বিদায়ের কষ্ট কোনকিছু দিয়েই লাঘব হয়না...................।

২৩ শে মার্চ ২০১৪

বিষয়: বিবিধ

১২৪৯ বার পঠিত, ১০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

196476
২৩ মার্চ ২০১৪ সকাল ০৮:০৫
মোহাম্মদ নূর উদ্দীন লিখেছেন : বড়ই কষ্টের কাহিনি । আমাদের এলাকায় বেশী হয় ।
০৩ এপ্রিল ২০১৪ দুপুর ০২:৪৮
151689
মাহবুবা সুলতানা লায়লা লিখেছেন : ভুক্তভুগিগণ ছাড়া কেু বুঝেনা এই ব্যথা!!
196499
২৩ মার্চ ২০১৪ সকাল ০৯:৫২
বাংলার দামাল সন্তান লিখেছেন : আসসালামু আলাইকুম, জাজাকাল্লাহুল খাইরান, অনেক সুন্দর পোস্ট
০৩ এপ্রিল ২০১৪ দুপুর ০২:৪৯
151690
মাহবুবা সুলতানা লায়লা লিখেছেন : ওয়ালাইকুম-আস্ সালাম! কঠিন জীবন মানুষের! আর এটাই বাস্তবতা!
196530
২৩ মার্চ ২০১৪ সকাল ১১:১৮
সিটিজি৪বিডি লিখেছেন : কি আর বলব..ভাষা হারিয়ে ফেলেছি। মাঝে মধ্যে শরীর খারাপ লাগলে/মনটাক খারা থাকলে দেশে চলে যেতে ইচ্ছে করে। বাসা থেকে উত্তর আসে " দেশে এসে কি করবে"?
০৩ এপ্রিল ২০১৪ দুপুর ০২:৫০
151692
মাহবুবা সুলতানা লায়লা লিখেছেন : মাঝে মাঝে এসবরের মুখোমুখি হলে আমিও ভাষা হারিয়ে ফেলি। সামান্য অর্থের কাছে জীবনের বাকি সব চাওয়া হার মেনে যায়।
196539
২৩ মার্চ ২০১৪ সকাল ১১:৪৬
রিদওয়ান কবির সবুজ লিখেছেন : মর্মস্পর্শি গল্প। কিন্তু আমি জানি এধরনের অনেক ঘটনাই আছে। এটি পুরাটাই সত্য। আমাদের প্রবাসি দের কষ্টের আয় আমরা দামি মোবাইল আর ব্রান্ডেড কাপড় এর পিছনে নষ্ট করে ফেলি। আমার পরিচিত এক প্রবাসি দেশে আসার পর তার পিতামাতা তার বোনের বিয়েতে তার নিয়ে আসা টাকার বেশিরভাগই নষ্ট করেন। আমি তাকে এ ব্যাপারে প্রশ্ন করলে সে বলে যে যদি সে বাধা দেয় তাহলে তার পিতামাতা রাগ করবে। স্রেফ প্রদর্শনি করে কষ্টার্জিত সম্পদ উড়িয়ে দেয়া হয়। যারা প্রবাসে আছেন তাদের উচিত এই ব্যাপারে প্রবাসিদের সচেতন করা। তাদের অর্জিত অর্থ যাতে উৎপাদনশিল খাতে ব্যয় হয়। দেশে আসলে অনেক সময়ই তারা দশচক্রে ভুত হয়ে যান।
০৩ এপ্রিল ২০১৪ দুপুর ০২:৫২
151693
মাহবুবা সুলতানা লায়লা লিখেছেন : আমার জানা নেই!! তবে আংখিত হই কবে সেই দিনগুলো আসবে যেদিন প্রবাসীদের অর্থের মূল্যায়ণ করা হবে নিজ পরিবার থেকে........।
197235
২৪ মার্চ ২০১৪ সন্ধ্যা ০৭:৪০
সাদামেঘ লিখেছেন : লেখাটা পড়ে মনে অতীতের অনেক মনে এসে গেলো।
কারো কষ্টে জীবন যায় আর কেউ অপরের টাকায় আঁতসবাজি ফোটায়। এই পৃথিবীটা ও পৃথিবীর মানুষ বড়ই বৈচিত্রময়!! ছেলে প্রবাসে কষ্ট করে সেটার জন্য মায়া লাগেনা অথচ মেয়ের জামাইকে কোন কিছু দিতে না পারলে সংসারে নানা রকম ঝামেলা লেগেই থাকে মাঝে মাঝে এসব কারনে মনটাতে মেঘ জমে কখনো বৃষ্টি রুপে ঝরে সেই মেঘ মুছে দেবে কে? যে চোখের অশ্রু মুছে দেবে সে তো প্রবাসে..........।
০৩ এপ্রিল ২০১৪ দুপুর ০২:৫৪
151695
মাহবুবা সুলতানা লায়লা লিখেছেন : সত্যকথাই বলেছেন! স্বার্থপরের মত আচরণ নিজের ঘরের লোকের।

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File