''Rose Rose আমার পরম প্রিয় আব্বু'' Rose Rose

লিখেছেন লিখেছেন মাহবুবা সুলতানা লায়লা ২২ মার্চ, ২০১৪, ০৮:১৪:৫৩ রাত

‘’আমার পরম প্রিয় আব্বু’’

পৃথিবীতে প্রিয়জনের অভাব নেই কারো কাছে মা প্রিয়, কারো কাছে বোন, কারো কাছে ভাই, কারো কাছে মামা, আর কারো কাছে চাচা প্রিয়, আর কারো কাছে বাবা প্রিয়, আর স্বভাবতই সন্তানেরা মায়ের দিকে ঝুকে বেশি। আমার জানামতে বা পরিচিতদের মাঝে যাদেরকে আমি জানি তাদের বেশির ভাগই মা প্রিয়, আমার কাছে সবচেয়ে প্রিয় হল আমার আব্বু।

আব্বু, আব্বা, বাবা, পাপা, যে যেভাবেই ডাকি না কেন এই নামটি আমাদের সবাইর খুব প্রিয়। আর যে যেভাবেই হোক না কেন এই মহান নামের সাথে আমরা সবাই পরিচিত। আমি আমার পিতাকে আব্বু বলে ডাকতে পছন্দ করি। এখানো আব্বু বলেই ডাকি, মাঝে মাঝে আমার মেয়ে ভেংচি কাটে ওর বাবাকে বাবা বলে ডাকে আমি কেন ওর নানাভাইকে আব্বু ডাকি তাই, তবে আমার আব্বু বলে ডাকতেই ভাল লাগে।

আব্বু নামের এই মানুষটাকে ছোট বেলা থেকে খুব কমই কাছে পেয়েছি। আব্বু নাম শুনলেই মনে হতো খুবই ভয়ের একজন মানুষ। যিনি সবসময় শুধু রেগে থাকতেন। আব্বু ঘরে আসার আগেই মা বলতেন তোমাদের আব্বু এখন আসার সময় হয়েছে এখন আর কোন দুষ্টোমি করনা উনার কিন্তু অনেক রাগ, আর তোমাদের কোন কারনে যদি তোমাদেরকে বকাঝকা করেন বা ধমক দেন তা আমি সহ্য করতে পারবোনা তাই তোমারদের আব্বু ঘরে এলে তোমরা যতটা সম্ভব অন্য ঘরে থাকবে, শান্ত থাকবে। কারন তোমার আব্বুর ঘুম খুব কম হয় ব্যবসার কারনে, এখন বাসায় আসলে যদি তোমরা বেশি দুষ্টোমি করো তবে ঘুমাতে সমস্যা হবে। তাই আমি তোমাদেরকে বলে রাখছি তোমার আব্বু ঘরে এলে উনার খাওয়া বা ঘুমের কোন সমস্যা করনা।

তাই আমার আব্বুর আদরের চেয়ে আমরা উনার রাগের সাথে বেশি পরিচিত আব্বুর রাগের কারনে আমরা ভাই বোনেরা কখনোই উনাকে বন্ধুর মত কাছে যেতে পারিনি। আমরা ছয় বোন ও চার ভাই আল্লাহর ইচ্ছায়। দুর থেকেই ভালবাসা ছিল আমাদের পিতা কন্যাদের মাঝে। মনে পড়ে আমার আব্বু; যখন আমি স্কুলে পড়তাম আমি যে খাবার খুব পছন্দ করতাম তাই এনে আমার স্কুল ব্যাগে রেখে দিতো রাতের বেলায়। কখনো আপেল, কখনো পাকা আম, কখনো বিষ্কিট, কখনো বাটার বন, কখনো মিষ্টি জাতিয় কোন খাবার। পাশাপাশি পাঁচ টাকা বা দশ টাকা রাখতো। এটাতে খুবই খুশি লাগতো মনের মাঝে। মনে হতো আমার আব্বুর মত আর কোন মানুষ হয়না আবার মাঝে মাঝে মনের মাঝে দন্দ ও লাগতো আব্বুর এত রাগ কেন? যাক সব আব্বু তো এক রকম নয় আমার আব্বু হয়তো সবার থেকে আলাদা এই ভেবে মনকে শান্তনা দিতাম। তবে আমার আব্বুর আমাদেরকে কাছে টেনে আদর করেনি ঠিক কিন্তু আমাদের জন্য সবসময় ভাল ও দামি পোষাকের ব্যবস্থা করতেন, ভাল খাবার খাওয়াতেন। আর বলতেন আমার মেয়েরা পরের বাড়িতে গিয়ে যেন কোন খাবারের জন্য আফছূছ না করে। কোন কারনে পরের বাড়িতে কষ্ট হলে যেন এই ভেবে শান্তনা নেয় যে, আমার আব্বু অনেক অনেক খাইয়েছে। আর আমার মা খেয়াল রেখেছিলেন আমাদের লেখা পড়ার। স্কুলে নেয়া থেকে শুরু করে সব ব্যপারে মাকেই বেশি কষ্ট করতে দেখেছি।

আমার বিয়ের কিছুদিন আগে থেকে ও আমার মেয়ে হওয়ার পরে সবচেয়ে বেশি বন্ধুত্ব হয়েছে আমার আব্বুর সাথে আলহামদুলিল্লাহ। আমার মেয়ে যেন আমার আব্বুর সাথে বন্ধত্বের বিশেষ কারন। ওর কারনেই আব্বু আমার অনেক কাছে এসেছে। যেদিন ও দুনিয়াতে আসবে সেদিন আব্বুই আমার সবচেয়ে কাছে ছিল অন্য সবার থেকে। সারারাতই প্রায় হাসপাতালে ছিল আমার সাথে শেষরাতে উঠে আবার বাসায় চলে গেছেন যারা আমার সাথে আছে তাদের জন্য খাবার আনতে। ভোর ছ’টার আগেই আমার জন্য লিকুইট খাবার ও সবার জন্য নাস্তা নিয়ে আসছেন। এরপর থেকে সারাদিনই প্রায় বসে ছিলেন কেবিনের বাহিরে যেন ডাকলেই পাওয়া যায়। আমার বড় ভাই নেই আব্বুকেই পেরেশানি করতে হয়েছে আমার জন্য একবার ঔষধ আনতে, একবার খাবার আনতে, একবার কাপড় আনতে বাসায় যাওয়াতে। এরপর থেকেই আব্বুর সাথে আমার খুব বন্ধুত্ব হয় যে কোন বিষয়ে আমার সাথে আলোচনা করেন। কি খাবো? ঈদে কি কেনাকাটা করবো? কত বাজেট হবে? সংসারের বাজার কোনদিন কি খাবে? কখন কোথায় যাচ্ছে শশুর বাড়িতে থাকলেও কল করে যেতেন। আর বাসায় থাকলে তো বলে যেতেনই এমন কি কোন খাবার আনলে আমি থাকলে আমার হাতেই দিতেন এবং বলতেন আমার বড় মা এজন্য ওর হাতে দেই। আব্বুর এই কথা বলাতে আমার ভাই বোনেরা কেউই কোন প্রতিউত্তর করতোনা।

এখন তো প্রবাসে আছি যখনই কল করি কয়েক মিনিটের মধ্যেই জুরুরী কথা সেরে রেখে দেবেন আর বলবেন এত খরচ করিসনা মাসে দুই একবার কল করলেও চলবে। যেই টাকা মোবাইল খরচ করবি সেই টাকায় অন্য কাজ সমাধা কর। আমার আব্বু এমনই একজন মানুষ যিনি খেয়াল রাখেন কোন মেয়ের কি সমস্যা তাকে সেভাবে সমাধান দিতে। আব্বু যেন তাকে বলে যিনি সারা জীবনের কামাই খরচ করেও নিজের চিন্তা করেন না। আব্বু এই নামটি যেন আমার সারা হৃদয় জুড়ে আছে চোখটি বুজলেই আব্বুর ছবিটা মনের আয়নায় ভেসে ওঠে কে কাকে কতটুকু ভালবাসি বুঝাতে পারিনি বাস্তবে। প্রথম বুঝতে পারি যখন আমার বিয়ে ঠিক হয় একসপ্তাহ আগে থেকে তিনি কান্না শুরু করলেন এবং এক সপ্তাহ পর পর্যন্ত কাঁদলেন বেড়াতে এলে ফুফু বলেছিল তোর আব্বু তোকে অনেক ভালবাসে কিন্তু তার ভালবাসাটা ছিল গোপনে শুনে আমিও অনেক কেঁদেছিলাম, এরপর যেদিন আমার মেয়ে পৃথিবীর আলো দেখলো, এরপর যেদিন আমি মদিনার উদ্দেশ্যে রওয়ানা দিলাম। পিতা কন্যার মাঝে এত ভালবাসা যা বাস্তবে প্রকাশিত হয়নি আমরা প্রকাশ করতেও পারিনি কিন্তু ভালবাসা তার জায়গায় পাহাড়ের মত শক্তিশালি ছিল আমরা বুঝতেই পারিনি।

ভালবাসা এরই নাম হয়তো কেউ প্রকাশ করতে পারে বাস্তবে কারোটা গোপনেই থাকে বিশেষ বিশেষ মূহুর্তে প্রকাশিত হয়। আর পৃথিবীতে সবাই সবার ভালবাসা প্রকাশ করতে পারেনা। কেউ কেউ হয়তো পারে। আর কারো কারো ভালবাসা আজীবনই লুকিয়ে থাকে অন্তরের গহীনে। ফুলের পবিত্রতার মত মাতাপিতা আর সন্তানের ভালবাসা যেন পৃথিবীর শেষ দিন পর্যন্ত সুবাস ছড়াতে থাকবে..............।

পরিশেষে আমার আব্বুর জন্য সবাই দোয়া করবেন ইনশা-আল্লাহ মহান আল্লাহ যেন আমার আব্বুকে নেক হায়াত দেন এবং পৃথিবীর সব আব্বুদেরকেও নেক হায়াত দেন। আমার আব্বু আম্মু ও সবার আব্বু আম্মুকে ঈমান আমলের সাথে রাখেন পৃথিবীর বুকে এবং আখেরাতেও দান করেন সম্মানিত স্থান।

বিষয়ঃ- ''প্রিয় আব্বু''

বিষয়: বিবিধ

১১৯৭ বার পঠিত, ১৮ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

196319
২২ মার্চ ২০১৪ রাত ০৮:২১
বাংলার দামাল সন্তান লিখেছেন : আসসালামু আলাইকুম, জাজাকাল্লাহুল খাইরান, অনেক সুন্দর পোস্ট
২২ মার্চ ২০১৪ রাত ০৮:৩৯
146453
মাহবুবা সুলতানা লায়লা লিখেছেন : ওয়ালাইকুমুস-সালাম। অনেক ধন্যবাদ মন্তব্যের জন্য। কেমন আছেন বাংলার দামাল ছেলে?
২২ মার্চ ২০১৪ রাত ০৮:৪৮
146458
বাংলার দামাল সন্তান লিখেছেন : আলহামদুল্লিাহ্ ভাল আছি, আপনি কেমন আছেন।
২২ মার্চ ২০১৪ রাত ০৮:৫৫
146462
মাহবুবা সুলতানা লায়লা লিখেছেন : আমি ও অনেক ভাল আছি আলহামদুলিল্লাহ বিগত সময় থেকে..
196320
২২ মার্চ ২০১৪ রাত ০৮:২১
সিটিজি৪বিডি লিখেছেন : আপনার বাবার জন্য দুৎআ রইল..আমিও বাবাকে নিয়ে লিখতে বসেছি...ইনশাআল্লাহ......
২২ মার্চ ২০১৪ রাত ০৮:৪১
146455
মাহবুবা সুলতানা লায়লা লিখেছেন : আমিন আপনার দো'য়ার সাথে। আনপার বাবার জন্য ও দো'য়া আচ্ছা লিখুন প্রান খুলে.....। ইন.লাহ সুন্দর একটি লেখা! পড়ার প্রত্যাশাই থাকলাম।
196445
২৩ মার্চ ২০১৪ রাত ০৩:১১
সুশীল লিখেছেন : ভালো লাগলো অনেক ধন্যবাদ
২৩ মার্চ ২০১৪ রাত ০৩:২৪
146543
মাহবুবা সুলতানা লায়লা লিখেছেন : ভাললাগা মন্তব্যের জন্য আপনাকেও ধন্যবাদ
196450
২৩ মার্চ ২০১৪ রাত ০৩:১৪
দুষ্টু পোলা লিখেছেন : ভালো লাগলো অনেক ধন্যবাদ
২৩ মার্চ ২০১৪ রাত ০৩:২৫
146544
মাহবুবা সুলতানা লায়লা লিখেছেন : আপনাকেও অনেক ধন্যবাদ
196466
২৩ মার্চ ২০১৪ রাত ০৪:৪৩
প্যারিস থেকে আমি লিখেছেন : আপনার পোষ্টটি বিবিধ রয়েছে তাই আপনি এডিটে গিয়ে বিষয় নির্ধারন করুন "প্রিয় বাবা"।
২৪ মার্চ ২০১৪ রাত ০৮:২৭
147240
মাহবুবা সুলতানা লায়লা লিখেছেন : ধন্যবাদ আপনাকে বিবিধ লিখে মন্তব্য দেয়ার জন্য
196473
২৩ মার্চ ২০১৪ সকাল ০৫:৫১
শেখের পোলা লিখেছেন : আপনার আব্বুর কথা পড়লাম, ভাল লাগল৷ আমরাও চিরদিন আব্বু ডেকেছি৷ আমার ছেলে মেয়েরাও আমাকে তাই ডাকে৷ আমাদের আব্বুও আনার আব্বুর মত আমাদের বন্ধু ছিলেন না৷ আমিও আমার সন্তাদের বন্ধু নয় আব্বু হয়েই থাকতে চাই৷ দেশ এখন অনেক এগিয়ে গেছে তাই আব্বু এখন বাবা, মা এখন মোম হয়েছে৷ খালা ফুফু মামী এখন আন্টি হয়েগেছে৷ আরও কত দেখব৷ধন্যবাদ৷
২৪ মার্চ ২০১৪ রাত ০৮:২৮
147241
মাহবুবা সুলতানা লায়লা লিখেছেন : আব্বু বলার দলে একজনকে পেয়ে ভাল লাগলো।
197236
২৪ মার্চ ২০১৪ সন্ধ্যা ০৭:৪৩
সাদামেঘ লিখেছেন : লেখাটা পড়ে আমার আব্বুর কথা মনে পড়ে গেল আসলেই সবার বাবা সবার বন্ধু হয়না তবে কারো কারো হয় তাদের দেখলে মনটা খারাপ হয়।
তবুও ভালো লাগলো
২৪ মার্চ ২০১৪ রাত ০৮:২৯
147242
মাহবুবা সুলতানা লায়লা লিখেছেন : আসলেই তাই

ভাললাগা মন্তব্যের জন্য মোবারকবাদ জানাই
198251
২৬ মার্চ ২০১৪ দুপুর ০২:৩৫
ফজলে এলাহি মুজাহিদ লিখেছেন : লেখার বিষয় ও বুনন দু'টোই ভালো লেগেছে।
০৭ এপ্রিল ২০১৪ সন্ধ্যা ০৭:৪২
153167
মাহবুবা সুলতানা লায়লা লিখেছেন : ভাল লাগলো জেনে।

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File