এ শতাব্দীর মহীয়সী ব্যক্তিত্ব (২)
লিখেছেন লিখেছেন মাহবুবা সুলতানা লায়লা ২৮ জুলাই, ২০১৩, ০৪:০৭:১৬ বিকাল
পৃথিবীতে মহান আল্লাহ; প্রত্যেক আদম সন্তানকে আলাদা আলাদা গুণে গুনাণ্বিত করেছেন। একজনকে আরেক জনের উপর প্রাধান্য দিয়েছেন সময় সাপেক্ষে। আমরা মানুষ বেশির ভাগই সুন্দরের প্রতি দূর্বল! সুন্দর যেমনই আমাদের মনকে কাংখিত করে তেমনই গুনাহের দিকেও ধাবিত করে। আর মানুষ সাধারনত অনুকরণ প্রিয়। কেউ কোন একটা কাজ করেছে সেই কাজটা আমাকেও করতে হবে। কেউ দামি শাড়ি কিনেছে আমাকেও কিনতে হবে নইলে আত্মসম্মান বলতে কিছুই থাকেনা। আমাদেরকে যতই কষ্ট হোক আরেক জনের সাথে তাল মিলিয়ে চলতে হবে নয়তো সমাজে মুখ দেখানো যাবেনা। অথচ সমাজ মানুষকে বানায় না, মানুষই সমাজ তৈরি করে। যুগে যুগে মহান আল্লাহ; নবী আলাইহিমুস সালামগণকে পাঠিয়েছেন; সাধারন মানুষদেরকে সত্যের পথোনির্দেশ দিতে। যাতে করে আদম সন্তানেরা সঠিক পথে থেকে দুনিয়া ও আখেরাতের সামান পত্র গুছাতে পারে।
আমার অভিজ্ঞতায় আর আমার নজরে এ শতাদ্বীর মহীয়সী ব্যক্তিত্বের আলোচনায় আমি! এখন যাদেরকে নিয়ে আলোচনা করবো উনারা খুব ধার্মিক! কোরআন সুন্নাহ মোতাবেক জীবন পছন্দ করেন উনারা এবং চলেনও সেমতে। সব আছে সংসারে চালের বড় ব্যবসায়ী স্বামি টাকা পয়সার কমতি নেই, নেই সম্পদের অভাব। হাঁ অভাব আছে একটি জিনিসের তা হল একটি কন্যা সন্তানের। যার অভাব তাদের উভয়কে খুব কষ্ট দিতো। তবে এই কষ্টেও কখনো উনারা মহান আল্লাহ থেকে বিশ্বাস কমাননি বরং দিন দিন উনাদের বিশ্বাস আরো বেড়েছে। যুগে যুগে গত হয়ে যাওয়া নবীগণের জীবনী পড়ে পড়ে। বড় বড় সাহাবীগণের আত্মত্যাগ পড়ে পড়ে, আর তাই তো উনারা উভয়ে মহান আল্লাহর কাছে নিরবে নিভৃতে দু’হাত তুলে কাঁদতেন এই বলে যে, মহান আল্লাহ দিতে চাইলে কেউ নিতে পারবেনা আর তিনি না দিলে কেউ ছিনিয়েও আনতে পারবেনা আর ছবর করতেন এই বিশ্বাসের উপর।
মহান আল্লাহর প্রতি অতি ভক্তি ও অতি বিশ্বাসের ফলেই হয়তো অনেক বছর পরে হলেও উনারা কন্যা সন্তানের জনক জননী হতে পেরেছেন। তবে এর জন্য উনাদেরকে অনেকটুকুন কোরবানি করতে হয়েছে। যা না জানলে আপনারাও বিশ্বাস করবেন না। পর পর তিন ছেলে, এই ছেলেদের পেয়েও তিনি কন্যা সন্তানের অভাব মন থেকে মুছতে পারেন নি। তাই উনারা মহান আল্লাহর কাছেই উনাদের আকুল আবেদন পেশ করতে থাকেন তিনি যেন উনাদের মনের আকাংখা পূরন করেন। তাই কায়মনোবাক্যে মনের সকল চাওয়া পাওয়া সকল আকাংখা আল্লাহর কাছেই পেশ করেচলেছেন। হয়তো মহান আল্লাহ কোন না কোন সময় দোয়া কবুল করে কন্যা সন্তান দান করতে পারেন। একজন কন্যার জন্য উনারা স্বামি স্ত্রী মহান আল্লাহর কাছে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হয়ে দোয়া করেন...... হে আল্লাহ! আপনি আমাদেরকে একটি কন্যা সন্তান দান করেন আমরা তাকে কোলে নিয়ে হজ্জ করবো।
হে আল্লাহ! আপনি আমাদেরকে একটি কন্যা সন্তান দান করেন আমরা আপনার রাজি খুশির জন্য পাঁচশত রাকাত নফল নামাজ পড়বো।
হে আল্লাহ! আপনি আমাদেরকে একটি কন্যা সন্তান দান করেন আমরা আপনার রাজি খুশির জন্য দুইমাস রোজা থাকবো। আর এই দোয়া করতে করতে সেই কাংখিত প্রত্যাশা বুকে নিয়ে উনারা পাড় করে আসেন প্রায় একটি যুগ। এরমধ্যে যখনই স্বামি অধৈর্য হতো তখন স্ত্রী শান্তনা দিতো এই বলে যে আল্লাহ থেকে হতাশ হতে নেই। আবার যখন স্ত্রী হতাশ হতো তখন স্বামি শান্তনা দিতো এই বলে যে, মহান আল্লাহ থেকে নিরাস হতে নেই, তিনিই যে সব পারেন সেই বিশ্বাস আমাদের মাঝে অটুট থাকতে হবে। একযুগ একবছর পর মহান আল্লাহ উনাদের মনের অনেক আক্ষেপিত চাওয়াকে পূর্ণ করলেন এই খুশিতে উনারা মহান আল্লাহকেও খুশি করতে চেষ্টা করলেন কয়েক ভরি স্বর্ন ও কয়েক ভরি রুপা দান করলেন। সন্তানের নাম রাখা ও আক্বিকা সম্পন্ন করলেন।
এবার প্রতিজ্ঞা পালনের সময় আসলো। মহান আল্লাহর সাথে কৃত প্রতিজ্ঞা পূরনে ব্রত হতে হবে। কারন মহান আল্লাহ অনেক দেরিতে হলেও তাদের আকাংখাকে পূর্ণ করেছেন। এবার উনাদেরও মহান আল্লাহর সাথে কৃত ওয়াদা পালন করার সময়। উনারা ভাল একজন আলেমের পরামর্শ নিলেন উনি বলে দিলেন বাচ্চা কিছুটা বড় হোক আর সন্তানের মায়ের ও শরীর ঠিক হোক এরপর যেতে। সেই কথা আর কৃত ওয়াদা পূরন করতে অপেক্ষাতে রইলো স্বামি এবং স্ত্রী। দেখতে দেখতে একটি বছর পূর্ণ হল। এরই মধ্যে পাসপোর্ট ভিসা এবং হজ্জে যেতে যা যা করা লাগে সব করে প্রস্তুতি সমাপ্ত করলেন।
মহান আল্লাহকে খুশি করতে এবং তারা নিজেরাও সন্তুষ্ট চিত্তে মহান আল্লাহর ঘরে গেলেন হজ্জ পালন করতে কোলে নিয়ে শিশু ছুমাইয়াকে। এরপূর্বে নাকি মেয়েকে বাসা থেকে বেরও করেননি উনারা এমনই ইচ্ছা করেছেন যে, ছুমাইয়াকে নিয়ে প্রথমে যে ছফরটা করবেন সেটাই যেন হয় ছুমাইয়ার জীবনের প্রথম ছফর এবং উনাদের প্রতিজ্ঞার প্রথম ধাপ। মহান আল্লাহও তাই করলেন। ছুমাইয়া ঘর থেকে বের হয়ে মক্কা মদিনার উদ্দেশ্যে রওয়ানা হল। শিশু ছুমাইয়াকে নিয়ে বাবা এবং মা হজ্জ পালন করলেন। কত সৌভাগ্যশীলা এই জনক জননী আরো কত সৌভাগ্য শীলা এই কন্যা চিন্তাও করা যায়না। শিশু ছুমাইয়াকে নিয়ে হজ্জ পালন শেষে ফিরে এলেন।
এরপর বাকি রইলো রোজা আর নামাজের অঙ্গিকার পূরন। আস্তে আস্তে সেই অঙ্গিকারও পূরন করলেন মহান আল্লাহর ইচ্ছায়। আরো প্রায় দুই বছরের মত সময় লেগেছে। মহান আল্লাহর ইচ্ছায় এই জনক জননী তাদের আকাংখাকে মহান আল্লাহ থেকে পূর্ণ করিয়ে নিয়েছেন। এবং উনাদের বিশ্বাস এখন আরো মজবুত হয়েছে যে, মহান আল্লাহর কাছে কেউ যদি আকুল ভাবে আবেদন নিবেদন করে চাইতে পারে মহান আল্লাহ সেই আকাংখা পূর্ণ না করে পারেননা। উনারা এখন আরো বেশি করে আল্লাহকে ডাকেন এবং আখেরাতের জন্য বেশি করে প্রার্থনা করেন যেন এই দুনিয়ার কাংখিত বস্তুর মতই আখেরাতের চিরস্থায়ী কাংখিত ইচ্ছাও পূর্ণ করেন।
এই মহান ব্যক্তিত্ব আমার প্রতিবেশি। বয়ষে অনেক বড় হলেও উনারা আমাকে খুবই আদর করেন। এবং সব সময় পরামর্শ দেন যখনই যা কিছুর প্রয়োজন মহান আল্লাহর কাছে চাইতে। পরামর্শ দেন কখনো যেন কোন কারনে মহান আল্লাহ থেকে বিমুখ না হই। আরো পরামর্শ দেন মানুষের কাছে চাইলে নষ্ট হওয়ার ভয় থাকে, ক্ষতির আশংকা থাকে কিন্তু মহান আল্লাহর কাছে চাইলে তা রক্ষনা বেক্ষনের দায়িত্বও মহান আল্লাহই নিয়ে নেন। আমি এমন একটি পরিবারে প্রতিবেশি হতে পেরে আনন্দ ও গর্ববোধ করি। মহান আল্লাহও আমাদের সবার প্রতিবেশিকে উত্তম প্রতিবেশি করে দিন। যদি কোন খারাপ গুণাবলী থাকেও তা যেন ঠিক করে উত্তম প্রতিবেশি রুপে করে দেন।
শেষপ্রান্তে এসে বলবো আসলেই মহান আল্লাহর চাইতে বড় বন্ধু আর কেউ নেই তিনিই দুনিয়া ও আখেরাতে পরম বন্ধু ও পরশ আশ্রয়দাতা। আমরা এই ছোটবোন ছুমাইয়ার নেক হায়াত ও সুন্দর জীবন কামনা করি। আর ছুমাইয়ার বাবা মায়ের জন্য মহান আল্লাহ যেন দুনিয়াতেও সম্মানের সাথে রাখেন আর আখেরাতেও সম্মানের সাথে সুউচ্চ স্থান দান করেন। আমরাও এই মহান ব্যক্তিদ্বয়ের মত অনেক ছবর করি অনেক কোরবানি করি আর অনেক অনেক ভক্তি ও বিশ্বাস রাখি মহান আল্লাহতে যেন আমরাও আমাদের সকল চাওয়া পাওয়া ইচ্ছা আকাংখা পূর্ণ করিয়ে নিতে পারি মহান আল্লাহর কাছ থেকে মহান আল্লাহ আমাদের সবাইকে সেই তৌফিক দান করুন।
শিক্ষনীয় বিষয় সমূহ উনারা উভয়ে কতটা ধৈর্য ধরেছেন! কতটা আন্তরিকতার সাথে মহান আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করেছেন! এবং কতগুলো কোরবানি করেছেন! আর আল্লাহর প্রতি কত গভীর বিশ্বাস রেখেছেন! আর কতটা ছবরের সাথে সেই প্রতিজ্ঞা পূর্ণ করেছেন! তার হিসেব কষে দেখি তাহলে আমরাও হয়তো উনাদের মত ধৈর্য ধরতে পারবো অনেক ব্যপারে। মহান আল্লাহ আমাদের সবাইকে সুন্দর ভাবে সকল ব্যপারে ধৈর্য ধারন করার শক্তি দিন এবং আমাদের সকলকে কবুল করে নিন। আমিন! আমিন! আমিন!
বিষয়: বিবিধ
১৫৩৪ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন