''এশতাব্দীর মহীয়সী ব্যক্তিত্ব (১)’’
লিখেছেন লিখেছেন মাহবুবা সুলতানা লায়লা ২২ জুলাই, ২০১৩, ০৯:৫০:২৩ সকাল
সমস্ত প্রশংসাই মহান আল্লাহর শানে। যিনি লেখার যোগ্যতা দিয়েছেন বিধায় কলম ধরতে পেরেছি। যিনি ভাবার মত যোগ্য মুন্ডু দিয়েছেন তাই ভাবতে পারছি এবং সৌভাগ্যশীলা করেছেন বলেই আমার এই ক্ষুদ্র নজরে কয়েকজন মহীয়সী ব্যক্তিত্বের সাথে মনের মিলন হয়েছে আল............লাহ। আমি এই ছোট জীবনে যাদের পরশে মহান আল্লাহর পরিচয় পেয়েছি তাদেরকে শ্রদ্ধা ভরে স্বরন করছি। আরো প্রার্থনা করছি তাদের থেকে যারা ইহধাম ত্যাগ করে পাড়ি জমিয়েছেন মহান আল্লাহর সার্নিধ্যে। আজ আমি এমন একজনের কথা বা জীবনিতিহাস বর্ণনা করবো যিনি ধার্মীকতার দিক দিয়ে অনেক অগ্রগামী। এবং আখেরাতের সামানপত্র গুছাতেই জীবনের সিংহভাগ পাড় করেছেন।
আমি ছোট ক্লাস থ্রী কি ফোরে পড়ি। কেউ কোন কাজের কথা বললে কখনোই না বলতে পারতম না। করে দিতাম কষ্ট হলেও। আর এজন্যই অনেক অনেক মুরুব্বী দাদীগণের ভালবাসা ও দোয়া পেয়েছি আল..........লাহ। আর মুটামুটি বয়ষ্ক মহিলাদের প্রতি আমার খুব দূর্বলতা ছিল ছোটবেলা থেকেই। কেউ কোন কথা মুখ থেকে বের করলেই হতো, ছুটে যেতাম সে কাজ করে দিতে, আগেকার সময় পানির খুব কষ্ট ছিল। খাবার পানি আনতে হতো অনেকটা দুর হতে। তখন কারো জন্য একটু অযুর পানি এনে দিলে কত যে দোয়া করতো তা লিখে শেষ করা যাবেনা। কারো কোন কাজ করে দিলেই, কেউ মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে দোয়া করতেন এভাবে আল্লাহ বিদ্যা বুদ্ধি দান করুন। কেউ দোয়া করতো আল্লাহ একজন ভাল মনের স্বামী মিলিয়ে দিন, তখন বলতাম দাদী যে কি বলে? পঁচা কথা বলে। (আর এখন মনে হয় আসলে সঠিক কথাই বলেছিলেন মহীয়সী দাদী জানেরা) কেউ বা দোয়া করতেন আল্লাহ নেক হায়াত দান করুন। ছোট বেলা থেকেই আমি এসব দোয়া কুড়িয়ে নিয়েছি আল..............লাহ।
আজ আমি এমন একজনের আলোচনা করবো যিনি খুব ধার্মীক ছিলেন। স্বভাব ছিল খুবই নম্র, আচরণ ছিল খুবই ভদ্র, আর মানুষ হিসেবে ছিলেন অমায়িক যার তূলনা সে নিজেই। আমার এই দাদীর নাম জীবন্নেসা। তিনি কয়েক রকমের ভাষা জানতেন। এবং সেই ভাষায় মহান আল্লাহর গুণকীর্তন করতেন। তিনি ঊর্দূতে দুরুদ পাঠ করতেন। মানুষের মাঝে এসব বলে বলে আগ্রহ বাড়াতেন আমল করতে। যাতে আশেপাশের সবাই মহান আল্লাহকে চেনে, জানে, এবং মানে। আমি ইসলামের অনেক বিষয় এই দাদীর কাছ থেকে জানতে পেরেছি আল................লাহ। আমি এই দাদীর পাশেই থাকতাম যখনই উনি আমাকে ডাকতেন আমি ছুটে যেতাম তার কাছে এবং এটা সেটা করে দিতাম আর বলতাম দাদী আমাকে এই দোয়াটা শিখিয়ে দিন। আর দাদীও বলতেন মানুষের মাঝে বসে বসে তামাশা আর আড্ডা দেয়ার চেয়ে বসে বসে একটি করে হাদীস শেখ তাতে আমল নামায় নেকী লেখা হবে। কয়েকটা দুরুদ শরীফ আমি আমার এই দাদীর কাছ থেকে শিখেছি।
আমার ভেতর আল কোরআন ও হাদীসের প্রতি ভালবাসার উদয় করিয়েছেন কয়েকজন মিলে। যাদের কথা, যাদের প্রেরনা আমাকে আজকের আমিতে পরিণত করেছে। আমি সব সময় তাদের জন্য মহান আল্লাহর দরবারে প্রার্থনা করে যাই তিনি যেন তাদের সবাইকে দুনিয়া ও আখেরাতে মাকামে মাহমুদা দান করেন। আর এই মহৎপ্রান ব্যক্তিদ্বয়ের অনুপ্রেরনা আমাকে মোহাম্মাদ (সঃ) এর অনুস্বরনে দৃঢ় প্রতিজ্ঞ করেন।
হতবাক করা আমলঃ এই দাদি জানের এমন আমল ছিল যে কেউ তার সাথে আমলের ব্যপারে হিংসা করতেন। কেউ কেউ অনুপ্রেরনা পেতেন। আবার কেউ কেউ নিজেকে তৈরি করতেন বেশি বেশি করার জন্য। এই দাদি প্রতিদিন কয়েক পারা কোরআন তেলোয়াত করতে মাসে একবার কোরআন খতম দিয়েও আরো পনের পারা পড়া হতো। আবার অনেক সময় অসুখের কারনে পড়তে পারতেন না বলে যখন সুযোগ পেতেন তখনই বেশি করে তেলোয়াত করতেন। অজিফা খতম করতেন প্রতি চল্লিশ দিনের মধ্যে একবার। এছাড়া সব কাজেতে যেখানে যেখানে দোয়া পড়া লাগে সেগুলোরও আমল করতেন। সপ্তাহে একদিন আশেপাশের অনেককে ডেকে হাদীস পড়ে শুনাতেন এবং আমলের ব্যাপারে উৎসাহিত করতেন। নিজের থেকে এটা সেটা দিয়ে হলেও অপরকে সুযোগ করে দিতেন যেন আমল করে। সঠিক সময়ে নামাজ আদায় করে। নামাজের সূরাগুলো পড়ে পড়ে ঠিক করে নেয়। এভাবে অনেকেই এই দাদির কাছ থেকে অনেক দোয়া কালাম শিখে নিতেন এবং আমল করতেন। এই দাদিজান মৃত্যুর আগের বছর নিয়্যত করেছেন এই বছর তিনি প্রতি চাঁদে একটি করো কোরআন খতম দিবেন। আমাকে বলেছেন শোন আমার জন্য দোয়া করিস আমি যেন এই বছরে বারো চাঁদে বারোটি খতম দিতে পারি। আর আমার মৃত্যুও যদি আসে এই খতম পুরা হবার পর যেন আসে। আমি বলেছিলাম ইন..............লাহ দাদি আপনার নিয়্যত ঠিক হলে আল্লাহও পুরা করার সুযোগ করে দেবে। সময় গড়িয়ে গিয়েছে তার আপন গতিতে আর আমিও অনেকটা দুরে চলে গেছিলাম এই দাদির কাছ থেকে, নিজের পড়াশুনা নিয়ে এতই ব্যস্ত ছিলাম যে, দাদির সাথে দেখা হয়েছিল উনার শেষ খতমের সময় জিলহজ্জ মাসে। এই দাদির নিয়্যত সহীহ ছিল তাই মহান আল্লাহ উনাকে বারোটি খতম করার সুযোগ করে দিয়েছিলেন। তিনি বারো চাঁদে বারোটি খতম দেয়ার পর মহরম মাসে উনার মৃত্যু হয়। যখন উনার মৃত্যুর খবর জানতে পারি তখন আমি মেশকাত পরীক্ষা দিয়ে বাসায় আসি খাবার খেতে এসেই শুনি এই খবর আমার বিশ্বাস হচ্ছিলোনা সত্যিই দাদি চলে গেছে না ফেরার দেশে? না না এমন তো হতে পারেনা। নিজেকে বড় অপরাধি মনে হতে থাকলো কয়েকদিন ধরে যাবো যাবো যাওয়া হলনা পরীক্ষা সামনে ছিল বলে। ভেবে ছিলাম এবার পরীক্ষা শেষ হলে অনেক সময় নিয়ে দাদির সাথে কথা বলা যাবে। কান্না রোধ করতে পারছিলাম না সেই তো আসলাম সময়মত নয়। তাড়াতাড়ি ছুটে যাই সেই দাদির বাসায়। মাঝখানে কিছুদিন দেখা সাক্ষাত হয়নি এসে আর কি সূরা ইয়াসিনের খতম পড়লাম কয়েকজনে মিলে। যারা গোসল করিয়েছেন আমাকে রেখেছেন তাদের সাথে আমি গোসল করানো, কাফন পরানো এবং খাটের উপর উঠানো ও নিয়ে যাওয়া পর্যন্ত ছিলাম সাথে। সেদিন ভুলে গেছিলাম খাবারের কথা সকালেও নাস্তা করিনি দুপুরে খাবার খাইনি কিন্তু কেন যেন মনে হতে লাগলো খুব মূল্যবান কিছু হারিয়েছি আমি। হারিয়েছে এই জমিন হারিয়েছে এই পৃথিবী। এই এলাকার এমন কোন মহিলা নেই যিনি এই দাদির জন্য কাঁদেনি।
এই দাদির মৃত্যুর পর আমার শুধুই উনার কথাই মনে পড়তো এক সময় আমি অনুভব করতাম উনি আমাকে এসে ডাকছেন আর আমি উনার পিছন পিছন রওয়ানা দিতাম যখন অনেকটুকু যেতাম দেখতাম আমি একা কেউ নেই পাশে মাকে বলতাম মা বলতো তোর প্রতি উনার ভালবাসা বেশি ছিল তাই হয়তো এমন লাগে তোর কাছে। উনার কোন একসময়ের কথা আমাকে ডেকেছেন আমি দৌড়ে গেলাম দাদির কাছে কুশল বিনিময় পর আমি জানতে চাইলাম দাদি দুপুরে কি খেয়েছন? দাদি বলল আজকে বড় মাছের মাথা দিয়ে মুগডাল রান্না করেছে আমাকে একটি মাথা দিয়েছে আমি খাচ্ছি আর ভাবছিলাম কি জানিস? আমি বললাম দাদি কি ভাবছেন? উনি বলল ভাবছিলাম আমি আজকে খুব মজা করে করে মাছের মাথা খাচ্ছি, মাছের কাঁটা গুলো আলাদা করে করে যদি আমি জান্নাতের উপযুক্ত না হই তবে আমাকেও তো কবরের মাঝে পোকামাকড়ে এভাবে মজা করে করে খাবে আমার গোসতকে হাড্ডি থেকে আলাদা করে। আমার জন্য দোয়া করিস আমাকে যেন মহান আল্লাহ কবর আযাব মাফ করে জান্নাত না হোক জান্নাতের আঙ্গিনায় হলেও স্থান দেয় কারন সেখানেও থাকবে জান্নাতের পূর্ণ আরাম না থাকলেও জাহান্নামের কষ্ট থাকবেনা। আমি বললাম দাদি এত চিন্তা করেন আপনি কবরকে নিয়ে এত আমল করার পরও তো আমার কি অবস্থা হবে? সবার কি অবস্থা হবে? দাদি বলল যদি জানতাম আমার ইবাদত কবুল হয়েছে তবেই শান্ত থাকতে পারতাম এখন তো জানিনা তবে পূর্ণ ঈমান রেখে আমল করছি মহান আল্লাহ আমাকেও ক্ষমা করুন আর আ’ম ভাবে সবাইকেও ক্ষমা করে দিন। আমি উভয়ে আমিন বললাম একসাথে। আপনারা সবাই আমার এই পরশ মনি তুল্য দাদির জন্য দোয়া করবেন যেন মহান আল্লাহ উনার গুনাহগুলো ক্ষমা করে দেন, ক্ষমা করে উনাকে জান্নাতের সুউচ্চ স্থানে স্থান দান করেন। আমিন
পৃথিবীটা বড়ই কঠিন স্থান এখানে আখেরের সামান গুছাতে না পারলে ওখানে যে, কি হবে? তা কল্পনাও করা যায়না। আমাদের প্রিয় রাসূল (সঃ) যেমন করে ইয়া উম্মতি উম্মতি বলে কাঁদতেন। উম্মতের ব্যপারে কবর আযাবের ভয় করতেন আমাদেরকেও সেই কান্না দাও যেন সকলগুনাহের কারনে কেঁদে কেঁদে সকল গুনাহের ক্ষমা চাইতে পারি। আর সেই ভয় দান করো যেন বিপথগামি না হই। হে আল্লাহ একসময় কেউ ছিলাম না আরেকটা সময় আসবে কেউ থাকবোনা। তাই সময় থাকতে আমাদের সবাইকে সঠিক বুঝ দান করো। সঠিক ভাবে আমল ছলেহ করার তৌফিক দান করো। তুমি তো সকল কিছুর উপর ক্ষমতাবান। সকল ক্ষমতার চাবিই তোমার কাছে। আসুন সবাই সারাদিনের মাঝ থেকে একটু সময় বের করে নেই আখেরাতের সামান পত্র ঠিক করতে, একটু সময় বের করি মানুষের কল্যানের জন্য কিছু করতে নিজেকে তৈরি করি আল্লাহর মু’মিন বান্দা হিসেবে। আমাদের ধন, জ্ঞান, আমার বিবেক সব সবকিছু যেন কবুল হয় মহান আল্লাহর রাহে.........।
বিষয়: বিবিধ
১৪৮৩ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন