‘’আন্তরিক শুকরিয়া’’
লিখেছেন লিখেছেন মাহবুবা সুলতানা লায়লা ১২ জুলাই, ২০১৩, ০২:১৮:২৯ রাত
বিগত একটি বছর কত রঙে ঢঙে কাটিয়েছি আমরা তার হিসাব মেলাতে পারবো না। কত গুনাহ, কত ভুল, কত হক্বের চিন্তা না করেই পাড় করেছি একটি একটি করে জীবনের অনেকগুলো বছর। একান্ত ভাবে কেউ ভাবারও সময় পাইনা যে, আমাদের জীবনে কখন কি ভুল হয়েছে? ভাবার সময় নেই কারোরই। শুধু চিন্তা আগামিকে নিয়ে। কি করে সুন্দর ও সচ্ছল হবে আমাদের সবার আগামি দিনগুলো। পিছনে তাকানোর সময় নেই।
এভাবে যেতে যেতে আবারো্ আমাদের সামনে এসে হাজির হয়েছে নতুন করে মাহে রমাদ্বন। কে কি প্রস্তুতি নিয়েছে কেউ তা জানিনা। তবে কোন না কোন ভাবে কাটিয়ে দেব এই বছরটিও। ভাল মন্দ বিচার বিশ্লেষন করার জন্য আমাদের কোনই চিন্তা নেই যিনি গড়েছেন তিনিই সব ঠিক করবেন এই প্রত্যাশায় আছি সবাই। যাই হোক; মাহে রমাদ্বন যখন এসেই পড়েছে তখন এর সৌন্দর্য রক্ষার্থে এবং নিজেকে মাহে রমাদ্বনের রঙে রঙিন করতে এবং ইহ ও পরোকালিন ভাবে উপকৃত হতে সবাই সচেষ্ট হই।
জীবনের খুব অল্প সময়ই আলেমা আপাগণের সনে থাকার সৌভাগ্য হয়েছে আলহামদুলিল্লাহ! ছাত্রী জীবনে অনেককে দেখতাম, যারা বয়ষে বড় বা পড়ার লেখার দিক দিয়ে আমার থেকে সিনিয়র, তাদের অনেকেই রমাদ্বনের চাঁদ যখনই দেখা যেত তখনই দুই রাকাত শুকরিয়ার নামাজ আদায় করতেন। আমরা জানতে চাইতাম কেন এই নামাজ? উনাদের থেকে অনেকে জবাব দিতো আমরা একে অপরে সবার সাথে সৌজন্য সাক্ষাত করি ভাল মন্দের খোজ খবর নেই, সেভাবেই মহান আল্লাহরও শুকরিয়া আদায় করছি যাতে তিনি খুশি হোন আমাদের প্রতি।
আরেক আপা প্রতি দুই ঈদেই চাঁদ দেখা গেলে দুই রাকাত নামাজ আদায় করতেন আর বলতেন হে আল্লাহ! আমার পক্ষ থেকে তোমাকে ঈদ মোবারক! হে আল্লাহ আজকের এই মহা আনন্দের দিনে আমি সর্বপ্রথম তোমাকেই ঈদ মোবারক জানালাম। তুমি আমার এই মোবারক বাদ টুকু কবুল করে নাও। আর যত যত চাহিদা আছে এবং যত যত আগামির স্বপ্ন আছে সবই তার কাছে পেশ করতেন। এভাবে অনেককেই দেখতাম নিজেদের সবার আরজু আবদার মহান আল্লাহর কাছে পেশ করতেন এবং অনেকেই এর ফল ভোগ করতেন।
ছোটদের কাছ থেকেও অনেক কিছু শেখার আছে। এক ছোট বোনের কথা বলছি ও সব ঈদেই মানে চাঁন রাতে এলেই দুই রাকাত নফল নামাজ পড়তেন এবং রমাদ্বনের প্রথম তারাবী যে রাতে হয় সে রাতেও দুই রাকাত শোকরানা নামাজ পড়তেন আর মোনাজাতে বলতেন হে আল্লাহ! আমি কারোর কাছে কিছুই চাইবোনা। না বাবার কাছে চাইবো, না বড় ভাইয়ের কাছে চাইবো, না মায়ের কাছে চাইবো, আর না বড় বোনদের কাছে চাইবো আর না অন্যদের থেকে চাইবো, আমার যা কিছু প্রয়োজন তা তো তুমিই জানো তাই তুমিই আমার সেই প্রয়োজন মিটিয়ে দাও, আমার সকল দূর্বলতা আমি শুধু তোমার কাছেই পেশ করেছি এখন তোমার যা ভাল মনে হয় আমার জন্য ফায়সালা তাই করো। সেই ছোট বোনের সাথে রমাদ্বনের প্রথম সপ্তাহেই আমার দেখা হয় এবং অনেক কথার মাঝে সে বলে জানেন আপু এবার আমি অনেক জিতেছি আমি বললাম কি ভাবে তুমি জিতেছ? সে বলল আমার পোষাকের সমস্যা ছিল আর আমি সেই সমস্যার কথা কাউকেই বলিনি শুধু বলেছি মহান আল্লাহকে, আর আমি বিশ্বাস করি মহান আল্লাহ কাউকেই ঠকায় না দান করেন আগে বা পরে। যদিও মহান আল্লাহ থেকে কিছু পেতে হলে অনেক অনেক ছবর করতে হয়। আবার অনেক সময় তাও করতে হয়না। চাইতেই দিয়ে দেন। তখন সে আরো বলল এবার আমার ঈদের পোষাক পেয়েছি যা দরকার তার চেয়েও অনেক অনেক বেশি এমন আর কোন ঈদেই পাইনি এবার সঙ্গা দিতে শুরু করল আপু এবার ঈদে বড় দুলাভাই দিয়েছে একটা থ্রী পিজ, মেজু দুলাভাই দিয়েছে একটা, সেজু দুলাভাই দিয়েছে একটা, ছোট দুলাভাইও দিয়েছে একটা, আর নতুন দুলাভাই ও খুব দামি একটা পোষাক পাঠিয়েছে। এখন আম্মা দিয়েছে একটা আর আমি নিজের জমানো টাকা থেকে কম দামে কিনেছিলাম একটা এখন বড় ভাইও বলেছে একটা দেবে। সেই বোনটি তো মহা খুশি এবং বলছে আপু আমি যদি আমার এই প্রয়োজনের কথা সাধারন মানুষকে বলতাম তখন হয়তো মেটাতো আমার সেই প্রয়োজন কিন্তু এত পূর্ণতার সাথে নয়। আর মহান আল্লাহর কাছে বলাতে নিজের প্রয়োজনের কথা, তিনি দেখেন আমার প্রয়োজন মিটিয়েও অনেক দান করেছেন আল.........লাহ। তাই আমি সব সময় মহান আল্লাহকে কোন কাজের সময়ই ভুলিনা। আর তিনিও আমাকে আমার গুরুত্বপূর্ণ সময়ে ভুলেন না।
তখন থেকে আমিও মহান আল্লাহকে সব আনন্দঘন দিনে স্বরন রাখতে চেষ্টা করি। আমাদের সবার উচিৎ সব আনন্দ আয়োজনেই মহান আল্লাহকে স্বরন করা। সেই দিনগুলো হোক না সামান্য আয়োজনের জন্য তবুও মহান আল্লাহকে স্বরন কতইনা আনন্দের। গত সন্ধ্যায় যখন মাগরীবের নামাজ পড়ে শেষ করেছি তখনই মনে আসল মহান আল্লাহর শোকর করে দুই রাকাত নফল নামাজ পড়ে নেই কারন মহান আল্লাহর অনেক দয়ার বরকতেই আমি আমরা আজকের এই মাহে রমাদ্বন পর্যন্ত হায়াত পেয়েছি। তিনি হায়াত না দিলে পেতাম না এই রহমত বরকত ও মাগফিতারাতের মাস। তাই সর্বপ্রথম মহান আল্লাহর শুকরিয়া জ্ঞাপন করেছি। প্রার্থনা করেছি
হে আল্লাহ! আমাকে যখন নেক হায়াত দিয়েছেন তখন পূর্ণ মর্যাদা সহকারে এই রোজাগুলো রাখার তৌফিক দিন। সুন্দর ভাবে ফরজ নামাজ ও তারাবী গুলো আদায় করার তৌফিক দিয়ে দিন। যারা এখন অসুস্থ আছে তাদের সবাইকে শিফা দান করো।
হে আল্লাহ! যাদের এই মূহূর্ত্বে যা প্রয়োজন সবাইকে তাই তুমি দিয়ে দিন।
হে আল্লাহ! এই রমাদ্বনে এবং সব সময় সবাইকে হালাল রুজি খাওয়ার ব্যভস্থা করে দিন।
হে আল্লাহ! সবাইকে সুন্নতী পোষাক পরাধান করাও,
হে আল্লাহ! সবাইকে সুন্নতের উপর জীবন পরিচালনা করাও,
হে আল্লাহ! সবাইকে নেক হায়াত দাও, হে আল্লাহ! সবাইকে সাদা সিদা জীনব পরিচালনা করাও
হে আল্লাহ! যারা দেশে আছে তাদের সময় সুযোগ করে দিন। পূর্ণতা সহকারে রোজা রাখতে এবং যারা প্রবাসে আছে তাদের সবাইকে ও সময় সুযোগ করে দিন।
হে আল্লাহ! সবাইকে মাহে রমাদ্বনের পূর্ণ বরকত পূর্ণ রহমত ও পূর্নভাবে ক্ষমা করে দিয়ে জান্নাতুল ফেরদাউসের বাসিন্দা হিসেবে কবুল করে নিন।
হে আল্লাহ! সব কাজেতে সব সময় আমাদের সবাইকে ছবর দান করো। আমাদের অন্তর থেকে সকল কালিমা দুর করে দিন।
হে আল্লাহ! মানুষে মানুষের হ্ক্ব আদায় করার তৌফিক দান করুন।
হে আল্লাহ! প্রতিবেশিগণের হক্ব আদায় করার তৌফিক দান করুন।
হে আল্লাহ! পৃথিবীতে যার যেমন হক্ব আছে এজীবনে তো সবার হক্ব আদায় করা সম্ভব নয় তাই তুমি তোমার পক্ষ থেকে সেসব হক্ব আদায় করে দিও।
হে আল্লাহ! যখনই কোন গুনাহ করি সেটা ইচ্ছা করে করি বা অনিচ্ছা করে, রাতে করি বা দিনে, আলোতে করি বা আঁধারে, গোপনে করি বা প্রকাশ্যে, তখনই তওবার সুযোগ করে দিন।
হে আল্লাহ! সকল মানুষকে তুমি ব্যাপক ভাবে হেদায়াত দান করো এবং হেদায়াতের উপর অটল রাখো।
হে আল্লাহ! পৃথিবীতে তোমার দ্বীনকে প্রতিষ্ঠিত করো আর এজন্য আমাদের মাল, জান যা প্রয়োজন তা আমাদের থেকে নাও ।
হে আল্লাহ! সকলের পিতামাতাকে নেক হায়াত দান করো।
হে আল্লাহ! উত্তম আচরণ দান করো এবং তা অটল করে দাও,
হে আল্লাহ! ক্ষমা করার মত মনমানষিকতা তৈরি করে দাও যেন সবাইকে, সব ভুলের কারনে বা কষ্ট দেয়ার কারনে সবাই ক্ষমা করতে পারে ও নিজের ভুলের কারনে ক্ষমা চাইতে পারে।
হে আল্লাহ! আমাদের দেশকে তুমি সকল অপশক্তি থেকে রক্ষা করো। আর সকল কালো হাতকে ভেঙে দাও তোমার মহিমা গুণে আমাদের দেশকে তুমি হেফাজত করো।
হে আল্লাহ! এদেশে ইসলামই সরকার গঠনে তুমিই সহায়তা করো। যারা দ্বীন চায় তোমার বিধান চায় তাদের এই চাওয়াকে তুমি পূর্ণ করো।
হে আল্লাহ! ক্ষুদ্র ভুলের কারনে ব্যাপক ভাবে তুমি আমাদের মুসলমান সবাইকে শাস্তি দিওনা। বরং শুদ্রানোর সুযোগ দিও
হে আল্লাহ! আমাদের সম্পদ আমাদের জীবন এবং আমাদের সবকিছু তোমার দ্বীনের রাহে কবুল করো।
হে আল্লাহ! শয়তানকে যেমনই ভাবে শেকল দ্বারা আবদ্ধ করে সমুদ্রে নিক্ষেপ করেছ সেই শয়তানকে সবসময়ই বন্দি করে রাখো। যেন সবাই ইবাদত করতে পারে কায়মনোবাক্যে আর তেমনই আমাদের মনের পাপ সমূহকে ও মোচন করে দাও
হে আল্লাহ! সকল প্রকার ক্ষতি থেকে আমাদেরকে রক্ষা করো।
হে আল্লাহ! আমাদের সবার রোজাকে কবুল করো।
হে আল্লাহ! আমাদের সবার নামাজকে কবুল করো।
হে আল্লাহ! আমাদের সবার দান খয়রাতকে কবুল করো।
হে আল্লাহ! আমাদের ঈমানকে তুমি মজবুত করো ও হেফাজত করো এবং আমাদের ঈমানকে বৃদ্ধি করে দাও
হে আল্লাহ! আমাদেরকে ঈমানের অর্থ বুঝার মত জ্ঞান দান করো। এবং সে অনুযায়ী চলারও তৌফিক দান করো।
হে আল্লাহ! যতদিন বেঁচে থাকি সবসময়ই আমাদের ঈমানকে তুমি তোমার মহিমাতে বৃদ্ধি করে দাও। আমল করার ও সুযোগ করে দাও
হে আল্লাহ! আমাদের সকল চাওয়া পাওয়া পূর্ণ করে দাও।
হে আল্লাহ! আমাদের সবাইকে দ্বীনের খাদেমা ও খাদেম রুপে গ্রহন করুন।
হে আল্লাহ! আমাদের সকল ভুলের জন্য আন্তরিক ভাবে ক্ষমা চাইছি তুমি ক্ষমা করে দাও।
হে আল্লাহ! যে যেখানে আছে তাদের সবার চাওয়াকে পূর্ণ করে দাও।
হে আল্লাহ! আমাদেরকে, আমাদের সকল চাওয়াকে, তুমি পূর্ণ করে দাও আর কবুল করে নাও।
হে আল্লাহ! প্রবাসীদের মাধ্যমে দেশের সুনাম বহন করানোর তৌফিক দাও। একজন কি দুইজনের কারনে যেন দেশের সুনাম নষ্ট না হয়। তোমার দয়ার আশায় আছি তুমি আমাদের সকল গুনাহকে ক্ষমা করে কবুল করে নাও।
হে আল্লাহ! সকল ক্ষমতাই তোমার হাতে তাই সকল আরজুও তোমারই কাছে পেশ করছি।
হে আল্লাহ! তুমিই সকল ক্ষমতার আঁধার তুমিই আমাদের ঈমানী শক্তিকে আরো বাড়িয়ে দাও
হে আল্লাহ! আমাদেরকে ক্ষমা করে কবুল করে নাও।
হে আল্লাহ! আমি আন্তরিক ভাবে তোমার কাছে আমার কৃত গুনাহ থেকে তওবা করছি এবং প্রার্থনা করছি তুমি আমাদের অন্তরকে সুস্থ করে দাও।
আমিন। আমিন। আমিন। ছুম্মা আমিন।
বিষয়: বিবিধ
২২০৫ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন