‘’নারীর তূলনা নারীই’’

লিখেছেন লিখেছেন মাহবুবা সুলতানা লায়লা ১৮ জুন, ২০১৩, ১০:৪৩:৪৬ রাত

একজন নারী, কখনো মেয়ে, কখনো বোন, কখনো বধূ, কখনো মা, কখনো অভিজ্ঞতা ও সফলতার শীর্ষ ব্যক্তি। এই একজনই সময়ের ব্যবধানে নিজেকে গুছিয়ে নেয় আলাদা আলাদা গুণে। আর নারীর এসব গুণ শুধু তাকেই মানায়। মেয়েরা তাদের সুন্দর ব্যবহার দিয়ে বাবা থেকে তাই চেয়ে নিতে পারে যা পৃথিবীতে আর কেউ নিতে পারেনা।

‘’একজন নারী যখন মেয়ে’’ তখন সে বাবা মা ও আত্মীয় স্বজন থেকে এবং যারা খুব কাছের তাদের সবার থেকে আদায় করে নেয় তার প্রাপ্প সবটুকু, সেটা আদর ভালবাসা হোক আর সেটা কোন আসবাব হোক। মেয়েরা তাদের কোমলীয় ব্যবহার দিয়ে যতটা আদায় করতে পারে ছেলেরা তার একাংশও পারেনা। আগেকার মুরুব্বী গণেরা বলতেন মেয়েরা ঢং না করলে বাবা সহ আত্মীয়রা বেশি আদর করবেনা। আর মহান আল্লাহও মেয়েদের মাঝে ভালবাসার এক অপরুপ ভান্ডার দিয়েছেন যা দিয়ে তারা সবকিছু জয় করতে পারে।

‘’একজন নারী যখন সে বোন’’ নারী যখন বোন তখন তো কথাই নেই ভাইয়ের কাছে আবদার ভাইয়া আমাকে অমুক জিনিস দিতেই হবে। নয়তো আমি তোমার সাথে আর কথাই বলবোনা। নয়তো তোমার জন্য তোমার পছন্দের জিনিস রান্না করবো না। আগে আমারটা দিতে হবে তারপর তোমারটা দেব। আগে থেকেই নিজের পাওনাটা পাওয়ার জন্য ভাইয়াদের থেকে একরকম শপথ করিয়ে নেয়। তবে সে রকম ভাই হতে হয়। আমার বড় ভাই নেই আমি কখনো সেরকমটি করতে পারিনি। তবে আশে পাশে দেখে যে অভিজ্ঞতা হয়েছে তাই লিখলাম। হয়তো আমার বড় ভাই থাকলে আমিও এমনটি করেই আদায় করে নিতাম।

‘’একজন নারী যখন বধূ’’ নারী যখন বধূ শুরু থেকেই সে যেন সাজানো গুছানো পরিপাটি করা এক ফুলের বাগান। সেখানে যে ফুলই হোক সময়মত ফুটবে। রঙ যেমনই হোক সুবাস সে ঠিকই ছড়াবে। সামান্য রঙের কাছে কখনোই তার একান্ত গুণ গুলো মলিন হয়না। বধূ হয়ে সে নিজেকে গুছিয়ে রাখে, আপন সংসারকে গুছিয়ে রাখে এবং গুছিয়ে রাখে আপন স্বামিকে আর এই গুণ গুলো একান্তই নারীর গুণ। যেখানে পুরুষের কোনই অংশ নাই। বিয়ের পর থেকে যেন পুরুষেরা নতুন করে আবারও শিশু হয়ে যায়। কোন কাজই যেন বউ ছাড়া হয়না। আর সংসারি মেয়েরা তো কথাই নেই স্বামির খেদমতে নিজেকে বিলিন করে দেয় সাথে সংসার, সন্তান, রান্না বান্না, আতিথেয়তা, সবগুণে যেন গুনাণ্বিতা হয়ে ওঠে।

‘’একজন নারী যখন মা’’ নারী যখন মা তখনো সে যেন অভিজ্ঞতার সব পথ মাড়িয়ে সফলতার শেষ সিমায় পৌছানো এক নাবিক। ‘’মা’’ এই মায়ের গুণে যেন পৃথিবীর সবকিছু বিলিন। ‘’মা’’ যেন সব কষ্ট লাঘবের স্থান। ‘’মা’’ যিনি মুখ দেখলেই বলে দিতে পারেন সন্তার এই মূহূর্ত্বে কি প্রয়োজন? কখন সন্তানের খিদে লাগে? কখন ঘুমাবে? কতটা যোগ্যতা সম্পন্ন হলে মহান আল্লাহ একজন নারীকে সন্তান দান করেন সেটা মহান আল্লাহই ভাল জানেন। আর মা এতটা গুরুত্বশীল বলেই হয়তো মহান আল্লাহও মাকে ‘’মা’’ করে বানিয়েছেন। আর মায়ের পদতলে সন্তানের জান্নাত নির্ধারণ করেছেন। ‘’মা’’ অসুখ হলে রাতে নিজের ঘুম হারাম করে সন্তানের সেবায় মগ্ন হয়ে যান, সন্তানের সেবা সাথে মহান আল্লাহর কাছে আন্তরিক আরোগ্যতার দোয়া একমাত্র মা;ই করতে পারেন। মহান আল্লাহ মায়েদেরকে এমন এক যোগ্যতা, ক্ষমতা দিয়েছেন যা পুরুষের মাঝে বিদ্যমান নেই। ছবরের দিক দিয়েও মায়েরা অগ্রগামী বাবাদের থেকে। মায়েদের কথার মাঝে এতটাই আকর্শন আছে যা দ্বারা সন্তানেরা ছাড়াও অন্য মানুষেরাও আকর্শিত হয়। নিজে না খেয়ে সন্তানের জন্য খাবার রাখার গুণ গুলো শুধু মায়েদেরই। মা আর এই মায়ের গুণ শুধু মা;ই আর কেউ নয়। অতীতেও ছিলনা আর ভবিষ্যতেও কেউ হবেনা। মায়ের ভালবাসা, ভাল ব্যবহার, মায়ের আদর, শাষন, মায়েদের পূর্ণ জীবনটাই যেন সন্তানের জন্য উৎসর্গ করা। মায়েরাই সন্তানকে বেশি ভালবাসেন তা উদাহরনে পাওয়া যায় যেমন সন্তানের সামান্য ক্ষতে মা যতটা ব্যকুল হয়, মাকে যতটা কষ্ট দেয়, বা মায়েন যতফোটা চোখের পানি ঝরে তা কখনোই বাবার বেলাতে ঘটেনা। আর ঘটলেও বিরল। আমরা মায়েদের সেই কষ্টগুলো অনুধাবন করতে পারিনা যতক্ষন না আমরা নিজেরা মা হই। মহান আল্লাহর কাছে আন্তরিক প্রার্থনা তিনি যেন সবার মাকে পৃথিবীতে নেক হায়াত ও আখেরাতে উচ্চ মাকাম দান করেন।

‘’নারীর তূলনা শুধু নারীই আর কেউ নয়’’ একজন নারীই কখনো মেয়ে’’ কখনো মা’’ কখনো বোন’’ কখনো বধূ’’ এই চারশ্রেনীর সাথে আমাদের সবার কি রকম আচরণ করা উচিৎ আর আমরা কি করম করি তা কারো শুধরানোর প্রয়োজন নেই নিজেরাই নিজেকে পরিবর্তন করতে পারি। আমার বিশ্বাস আমরা যদি আমাদের কাজে, কথায়, সংসারে, বাস্তব জীবনে এই শ্রেনীর সাথে ষোল আনার দুইআনাও নমনীয় ব্যবহার করি তবে তাদের থেকে আমরা ষোল আনাই নমনীয় ব্যবহার পেতে পারি। আমরা সবাই যদি নারীকে প্রতিদ্বন্দী মনে না করে সহযোগী মনে করি জীবনের সব ক্ষেত্রে, তাদেরকে সব ধরনের সুযোগ না হোক কিছু কিছু সুযোগ দেয়া উচিৎ, ইসলাম যখন আমাদের ব্যপারে কঠোরতা করেনি তখন সাধারনে ও উচিৎ কোন ধরনের কঠোরতা না করা। ভাল ব্যবহার, ভাল কথা, ভাল আচরণ আর সবচেয়ে মূল্যবান নমনীয়তা দিয়ে তাদেরকে ইসলামের বিধানমতে চালাতে চেষ্টা করা।

‘’দায়িত্বশীলের জন্য করনীয়’’ একজন দায়িত্বশীল পুরুষের করনীয় হল তাদের অধীনস্থদের যেভাবে পারুক ইসলামের সব রকমের হুকুম সম্পর্কে অবগত করানো এবং আমলের ক্ষেত্রে আমল করতে সুযোগ করে দেয়া। যেমন স্ত্রী নামাজ পড়বে পুরুষ লোকটি আগে নামাজ পড়ে এসে মহিলাকে বলা যে, আমি বাবু কোলে নিচ্ছি তুমি নামাজ সেরে আসো। পুরুষ যেমন সুন্দরের পুঁজারী নারী তেমনই নমনীয়তার পুঁজারী। শুধু নম্রতা দিয়ে সব পুরুষই সব নারীর থেকে নিজেদের পাওনাগুলো বুঝে নিতে পারে। যা টাকা বা ঐশর্য দিয়ে আদায় করা সম্ভব হয়না। আমার অনুরোধ থাকবে সব ব্লগাদের প্রতি আমরা একে অপরের জন্য সব কাজের ক্ষেত্রে বাঁধা না হয়ে উৎসাহকারি হই, ইসলামে যেহেতু বলা হয়েছে সহধর্মীনি তাই আমরা ও হয়ে যাই একে অন্যের সহধর্মীনি, সহযোগী, সহকর্মী। চলতে পথে অপরিচিত ব্যক্তির সহযোগী হই, নিজের ঘরে ভাই বোনদের সহযোগী হই, পাড়াপ্রতিবেশির সহযোগী হই, ব্লগে লেখা লেখির ক্ষেত্রে, সংসার পরিচালনার ক্ষেত্রে, সন্তান প্রতিপালনের ক্ষেত্রে, এমন কি নিজেদেরকে নিজেরা বুঝার ক্ষেত্রেও, আগে বুঝতে ট্রাই করি এবং নিজেকে বুঝানোর জন্য সুযোগ করে দেই, আর এভাবে যদি একে অপরের সব কাজে সব রকমের সহযোগী হই তবে দেশ এবং সমগ্র জাতিতে সহমর্মিতার চাদর বিছানো হবে সেখানে কোনই কাঁটা থাকবেনা, থাকবে শুধু ফুলের গালিচা, সেখানে প্রবাহিত হবে শান্তির শীতল বাতাস তবেই পূর্ণতার সব সুযোগ থাকবে সবার হাতের মুঠোয়। তখন পৃথিবীও যেন রুপ নেবে জান্নাতের বাগানের রুপে। আর আমরা হবো সেখানের প্রবাহিত নহরের মত।

১৮ ই জুন ২০১৩

বিষয়: বিবিধ

২১৮৮ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File