‘’আমার মেয়ের মেয়েপনা’’
লিখেছেন লিখেছেন মাহবুবা সুলতানা লায়লা ১৩ জুন, ২০১৩, ০৬:১২:১৪ সন্ধ্যা
পৃথিবীতে শিশুরা হয় একেবারে মাসুম! ফুটন্ত নরম গোলাপের মত! তারা মুখে যা বলে তাই তাদের মনের কথা। ওদের কোমল মনের সত্য কথা গুলো দুষ্টোমির ছলে বের হয়ে আসে পেট থেকে। অনেক অনেক জটিল কথাও ওরা সহজ ভাবে বলে ফেলে। আবার সামান্য একটু কান্নার ভান করে মা বাবা ও সবার কাছ থেকে আবদার করে আদায় নেয় নিজের পছন্দমত সব জিনিস।
শিশুরা স্বভাবতই ফুলের মত হয়। ওদের হাসিতে ও যেন ফুলেল সুবাস ছড়ায়। ওদের কথাতে ওরা যে নিষ্পাপ তা প্রকাশিত হয়। পৃথিবীতে শুধু এই শ্রেনীটাই যেন সকল দোষত্রুটি মুক্ত, সকলের ভালবাসার পাত্র হয়ে আছে সর্বযুগে সব সময়। ওদের বলায়, চলায় কোনই পাপ নেই, নেই মানুষের সাথে বিচ্ছেদের বহিঃপ্রকাশ। ওরা ভালবাসতেও জানে আবার ভালবাসা পেতেও জানে। ওরা নিজেরা নিজেদের পাওনা আদর ভালবাসা যেন আদায় করে নেয় সবার কাছ থেকে। আমরা বড়রা যা পারিনা তা ওরা অনায়াসেই করতে পারে। আর এই পারার বা আদায়ের মধ্যে কেউ রাগ করেনা রবং খুশিই হয়। মহান আল্লাহ শিশুদের মাঝে ঢেলে দিয়েছেন অন্য রকম মমতা, ওদেরকে দেখলেই কেন যেন ভাল লাগে, কোলে নিতে ইচ্ছে হয়, আদর করতে ইচ্ছে হয়।
মা ও মেয়ের প্রতিদিনের কথপোকথন। যখন মেয়ের বয়ষ আটমাস থেকে একবছর তখন ও শুধু ছড়া শুনতে চাইতো আমি পড়তাম নুসু বলতো আম্মু আবাত! আবার কোন ছড়া পড়তাম শেষ হলেই বলতো আম্মু আবাত! এভাবে প্রায় শিশু শ্রেনী থেকে নিয়ে পঞ্চম শ্রেনীর কবিতাও পড়া হয়ে যেত, যখন আর কোন কবিতা বা ছড়া খুজে পেতাম না তখন আমি বলতাম উ...........ম! উ.............ম! উ.................ম! আর আমার মেয়ে বলতে থাকতো আম্মু আবাত! আমি ওর চোখে তাকালেই ও বলতো আবাত! এভাবে বলাতে একটি বড় লাভ হয়েছে ও ছোট থেকেই অনেক গুলো বাংলা ও ইংরেজী ছড়া মুখস্থ করে ফেলে। যা শেখাতে এখন আমাকে খুব হিমশিম খেতে হতো আলহামদুলিল্লাহ! আমি ওর সাথে ছোট থেকে যা যা করেছি আমার মেয়ে এখন তাই তাই করে। ঘুমানোর সময় ঘুমানোর দোয়া আমিও পড়ি আমার মেয়েও পড়ে, মাঝে মাঝে আমি ভুল করার ভান করে দেখি ও কি করে তখন ও আমাকে মনে করিয়ে দেয় আম্মু আসো আমরা ঘুমের দোয়া পড়ে ঘুমাই তবে আল্লাহ খুশি হবে। তখন আমার মনটা আনন্দে ভরে যায়। সাথে সাথে দোয়া করি হে আল্লাহ আমার মেয়েকে আমাদের জন্য দুনিয়া ও আখেরাতে নাজাতের উছিলা বানিও তুমি!
কোন কাজ নিশেধ করলে সেটার প্রতি সবারই আলাদা আকর্শন থাকে আর বিশেষ করে শিশুদের তো আরো বেশী। আমরা বড়রাও নিশেধ করা কাজের প্রতি দূর্বল বেশী থাকি, এবং সেটা না করা পর্যন্ত আমাদের মনে যেন শান্তি আসেনা। আর শিশুদেরকে যদি বলা যায় যে এই কাজটা করনা তবে সেটাই আগে করবে, আমার মেয়েও এর ব্যতিক্রম নয়। তবে ওকে যদি বুঝিয়ে বলা যায় যে এইটা দরকারি জিনিস, এটা দিয়ে তোমার কোনই কাজ হবেনা সে তখন বুঝে এবং বলে যে, আম্মু এটা রেখে দাও, আর যদি এর ব্যতিক্রম করা যায় তবে কেঁদে কেঁদে সেটা আদায় করে নেবেই।
আমার মেয়ের একটি বিশেষ গুণ আছে, সেটা হল; ওর বয়ষ যখন একবছর তখন থেকেই দেখে দেখে সবার কোলে যায়, যদি দাড়ি না থাকে তবে ও সেই লোকের কোলে যেতোনা। একবার আমরা আমার জেঠা শশুর বাড়িতে বেড়াতে গেলে ওখানে আমার চারজন ভাসুর আছে কিন্তু কারোর মুখেই দাড়ি নেই তাই সে উনাদের কারোর কোলেই যায়নি। ওখানে সবাই বলছে কি করেছ মেয়েটাকে? ও কারোর কোলে যায়না কেন? আমি বললাম ভাইয়া ও তো যার মুখে দাড়ি নেই তার কোলে যায়না কারন ও ছোট বেলা থেকে দেখে আসছে আমাদের পরিবারের সবার মুখে দাড়ি তাই দাড়ি না থাকলে কোলে যেতে চায়না। আর ছোট বেলা থেকেই দেখে আসছে ওর কাকার মুখে দাড়ি আছে, ওর দাদার মুখে দাড়ি আছে, ওর নানার মুখে দাড়ি আছে, আর ওর মামারা ছোট তাই ওদের কারোরই মুখে দাড়ি নেই তাই আমার মেয়ে ছোট থাকতেই দাড়ি ছাড়া যাদেরকেই দেখবে বলবে এই যে মামা, আর দাড়ি যদি কালো হয় তবে বলবে কাকা, আর যদি সাদা হয় তবে বলবে আম্মু দাদা ভাইয়া, নয়তো বলবে নানা ভাইয়া, বয়ষ্ক মহিলা যাদের চুল পাকা তাদেরকে দেখলেই বলবে নানুআপা, বা দাদুআপা, আর আমার মতো বয়ষের দেখলেই বলবে আম্মু এই যে আমার আন্টি, আমি বলে দেই হাঁ তোমার আন্টি হয় ও তাই বলে ডাকে।
আমার মেয়ের মেয়েপনা; আমার মেয়ে সবার নামকরণ করবে। নানার বাড়িতেও দাদার বাড়িতেও নাম রাখে। ওর দাদার বাসায় সবার নাম রাখে এভাবে আমার মামা শশুরেরা দুইজন। বড় জনের নাম রেখেছে বড় কালো দাদা, ছোট জনের নাম রেখেছে ছোট কালো দাদা, আর আর আমার মামি শাশুড়ী দুইজনের নাম রেখেছে ভাল দাদি আর ভয় পাই দাদি, আমার খালা শাশুড়ীরা ও দুইজন উনাদের নামও রেখেছে, বড়জনকে নাম দিয়েছে লালদাদি, ছোটজনকে নাম দিয়ে বড় চোখওয়ালা দাদি আর নানার কূলের সবার নাম রেখেছে এভাবে আমার চাচি জেঠিরা চারজন আমার মেয়ে উনাদের নাম রেখেছে এভাবে আমার জেঠির নাম রেখেছে সুন্দর নানী, আমার এক চাচির নাম রেখেছে আঙ্গুর নানী (নুসুকে এই বাসায় বেড়াতে গেলে চাচি আঙ্গুর ফল খেতে দেয় সেই থেকেই এই নামকরণ হয়। আরেকজনের নাম রেখেছে কমলা নানী, এখানেও একই ঘটনা ঘটে। আর আমার ছোট চাচির নাম রাখে বান্ধবী নানী। আমার ফুফুরা তিনজন উনাদের নাম রাখে বড়ফুফু পুঁতি দিয়ে জামা বানিয়ে দিয়েছে তাই উনার নাম রেখেছে পুঁতি নানী। মেজু ফুফু অনকেগুলো খেলনা বল কিনে দিয়েছিল তাই উনার নাম রেখেছে বল নানী। আর ছোট ফুফু আমড়া কিনে দিয়েছিল তাই উনার নাম রেখেছে টক নানী। আমার বাবা সহ আমার চাচারা পাঁচভাই আমার মেয়ে উনাদের সবার নাম রেখেছে আমার আব্বুকে বলে বড় নানা আর আমার জেঠুকে বলে বন্ধু নানা। পরের জনকে বলে ডিম নানা। তারপরের জনকে বলে মোটা নানা। সবার ছোট জনকে বলে সুন্দর নানা। আমার ছোট মামাকে বলে কালো নানা।
শিশুদের মন ফুলের মতনঃ ছোট শিশুদের মন ফুলের মতন। ওরা ওদের এই ফুলের মতন আচরণ দিয়ে এই বিশ্বজাহানের অনেক কিছুই জয় করতে পেরেছে। জয় করতে পেরেছে মানুষের মন। তাইতো অনেকেই শিশুদের দেখলেই কোন না কোন উপহার দেয়। কোলে নেয়, আদর করে, খাবার জিনিস কিনে দেয়, আসুন আমরা সবাই সব শিশুদের সাথে মায়ের মতন আচরণ করি। তবে যেসব শিশুদের মা নেই তারাও মায়ের আদর পেয়ে মা হারানোর কষ্ট ভুলে যায়। আর আমাদের চারপাশে যত যত শিশু আছে সব শিশুদের ছোট ছোট ইচ্ছাগুলো পূরন করতে সচেষ্ট হই। আপনারা সবাই আমাদের নুসাইবার জন্য দোয়া করবেন। এবং আপনাদের সবার বেবির জন্য আমাদের দোয়া রইলো।
বিষয়: বিবিধ
১৪২৪ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন