সাংস্কৃতিক আন্দোলনে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী ও ছাত্র শিবির

লিখেছেন লিখেছেন এম এ আলীম ০৭ জানুয়ারি, ২০১৩, ১০:০৩:১৩ সকাল



প্রথমেই বলতে চাই, আমার এই লেখার দায়ভার বাংলাদেশ জামায়াত ইসলামী কিংবা ইসলামী ছাত্রশিবির বহন করবেনা।মুলত এই লেখাটা এক নাস্তিকের জামায়াত ইসলামী সম্পর্কে নেগেটিভ ধারনা দেয়ার উদ্যেশ্য লিখেছিল। আমি শুধু নেগেটিভ ধারনা গুলো সরিয়ে পজেটিভ আকারে তুলে ধরতে চেষ্টা করেছি।জামায়াত ইসলামী কিংবা ইসলামী ছাত্র শিবির বাংলাদেশের কোন নিষিদ্ধ ঘোষিত সংগঠন নয়।অন্য আট দশটা নাগরিকের যে কর্মকান্ড করার অধিকার আছে এই দলটির ও সেই অধিকার আছে।মানুষের কাছে প্রকাশ করার দরকার আছে কি নেই সেটা সংগঠনের নীতি নির্ধারকরা ঠিক করবেন। কিন্তু আমি মনে করি সময় এসেছে মানুষের কাছে জানান দেয়ার জামায়াত ইসলামী বাংলাদেশে কি কর্মকান্ড পরিচালনা করছে। মানুষ এর থেকে কতটুকু উপকৃত হয়েছে সেটা মানুষ প্রত্যক্ষ কিংবা পরোক্ষভাবে স্বীকার করবে।এতে করে সফলতা এবং ব্যর্থতাগুলো পরিস্কার হবে। আর ব্যর্থতা থেকে শিক্ষা নিলে আগামী দিনগুলিতে সফলতা আসবে দ্রুত।

জামায়াত ইসলামী বাংলাদেশে সাংস্কৃতিক পরিমন্ডলে ইসলামী সংস্কৃতি প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে আপ্রাণ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।ইতিমধ্যে জনসাধারনের কাছে ইসলামী সংস্কৃতির আবেদন অনেকাংশে তুলে ধরতে সক্ষম হয়েছে।

স্বাধীনতা-উত্তর জামায়াত ইসলামী প্রতিষ্ঠিত হলেও মুলত স্বাধীনতা পরবর্তী জামায়াতের অঙ্গসংগঠন ইসলামী ছাত্রশিবির রাজনৈতিক তৎপরতার সঙ্গে সঙ্গে সাহিত্য-সাংস্কৃতিক তৎপরতা শুরু করে। যার নেতৃত্বে জামায়াত-শিবিরের নেতৃবৃন্দ নয়, সাহিত্য-সাংস্কৃতিক অঙ্গনের লোকদেরই বসানোর চেষ্টা করা হয়। আর এই পথ ধরেই দেশের অন্যতম কবি ফররুখ আহমেদ, অধ্যাপক দেওয়ান মোহাম্মদ আজরফ, অধ্যাপক ড. কাজী দীন মুহাম্মদ, কবি আল মাহমুদ, সৈয়দ আলী আহসান, আল মুজাহিদী, হাসান আলিম, অভিনেতা ওবায়দুল হক সরকার, আরিফুল হক, একসময়ের আলোচিত চিত্রনায়ক আবুল কাসেম মিঠুনসহ শতাধিক কবি-সাহিত্যিক-সাংবাদিক এই কাজে সহযোগিতা করেছেন। একটা সময় কবি আল মাহমুদ শিল্পকলা একাডেমীর পরিচালক হিসেবে অবসর গ্রহণ করেন। তখন থেকেই কবি আল মাহমুদ ছাত্রশিবিরের মুখপত্র নতুন কিশোর কণ্ঠ, জামায়াতের সাহিত্যভিত্তিক মুখপত্র নতুন কলম, রাজনৈতিক মুখপত্র দৈনিক সংগ্রাম, সাপ্তাহিক সোনার বাংলাসহ অর্ধশতাধিক পত্রিকার সঙ্গে সম্পৃক্ত হন। দেওয়ান মোহাম্মদ আজরফ, সৈয়দ আলী আহসান আর অভিনেতা ওবায়দুল হক সরকারের সহযোগিতা ছিল উল্লেখ করার মতো ।

# কালচারাল

রাজনৈতিক অঙ্গনে ব্যপক তৎপরতার পাশাপাশি বাংলা ও বাঙালির হাজার বছরের সাহিত্য-সাংস্কৃতিক অঙ্গনেও নতুন দিগন্তের সূচনা করেছে জামায়াতে ইসলামী ও ছাত্রশিবির। সঙ্গে সঙ্গে একের পর সফলতা এসেছে আমাদের সাহিত্য ও সাংস্কৃতিক অঙ্গনে। সরাসরি বললে বলতে হয়, জামায়াতে ইসলামী এখন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়, আজিজুল হক কলেজ আর বরিশাল বি এম কলেজের গণ্ডি পেরিয়ে চলে এসেছে পুরানা পল্টনের দিগন্ত টিভি পর্যন্ত। এখানেই পরবর্তী লক্ষ্যে ইসলামী সাহিত্য-সাংস্কৃতির বিস্তার। এই কাজে সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিয়েছেন অনেক গুণীজন । সম্প্রতি শিল্পী মানিক বের করেছে একটি অ্যালবাম। এই অ্যালবামটি বাজারজাত করেছে লেজার ভিশন। আমীরুল মোমেনীন মানিক। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্র শিবিরের প্রাক্তন সদস্য। দিগন্ত টিভিতে রিপোর্টার হিসেবে যোগ দিয়ে সফলতার সাক্ষর রেখে চলেছেন। টিভি রিপোর্টার আমীরুল মোমেনীন মানিকের ভিডিও গানের অ্যালবাম ‘আপিল বিভাগ’ ব্যাপক দর্শকপ্রিয় হয়েছে। অ্যালবামটিতে বাড়তি চমক হিসেবে থাকা নচিকেতার ভিন্নধর্মী সাক্ষাৎকারটি নতুন মাত্রা যোগ করেছে। আপিল বিভাগ অ্যালবামে মা ও বাবাকে নিয়ে একটি করে গান রয়েছে, যা ইতোমধ্যে এফ এম রেডিওতে প্রচার হওয়ায় বিপুল জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। বাবা গানটির ভিডিওচিত্র দেখার পর বিশিষ্ট দর্শক হিসেবে উচ্ছ্বসিত প্রশংসা করেছেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের রেজিস্ট্রার শাহীনূর ইসলাম, কণ্ঠশিল্পী আসিফ আকবর, মডার্ন ফোক হিসেবে নির্মিত ঘুড়ি গানটির চিত্রায়ণ হয়েছে কুমিল্লা গোমতী নদীর তীরে। নদী, বিস্তীর্ণ সবুজ মাঠ আর নীল আকাশের নান্দনিক সম্মিলনে এই গানটির ভিডিও এককথায় অসাধারণ। সুখের স্বপন গানটির ভিডিওতে মডেল হয়েছেন অভিনেতা জয়ন্ত চট্টোপাধ্যায়, কণ্ঠশিল্পী আগুন এবং চ্যানেল আই লাক্স তারকা মীম। ‘আপিল বিভাগে’র সমুদ্দুর গানে দেশের ১২টি জেলার পুরার্কীতি ও নিদর্শন উপস্থাপন করা হয়েছে। বঙ্গোপসাগরের অসাধারণ কিছু দৃশ্য সংযোজন এই গানকে জাতীয় মানে পৌঁছে দিয়েছে। সব মিলিয়ে ছোটখাটো ভুলত্র“টি বাদ দিলে অ্যালবামের ১১টি গানই দর্শকহƒদয়ে দাগ কাটার মতো। আর নচিকেতার ডকুমেন্টারি নির্মাণে বিশেষ সহযোগিতা করেছে ভারতের জিটিভি। ডকুমেন্টারিতে নচিকেতার গোপন কিছু কথামালা উঠে এসেছে। নচিকেতার কথামালা আর মানিকের গান নিয়ে ‘আপিল বিভাগ’ ভিডিও অ্যালবামটি এখন ডিভিডি আকারে পাওয়া যাচ্ছে। খুব শিগগির দর্শকচাহিদা বিবেচনায় রেখে ভিসিডিতেও প্রকাশ পাবে বলে জানিয়েছেন প্রকাশনা প্রতিষ্ঠান লেজার ভিশনের কর্ণধার এ কে এম আরিফুর রহমান।

দৈনিক নয়া দিগন্ত কাগজে অহরহই লিখছেন পরিচিত অনেকেই। এমনকি জাতীয় কবিতা পরিষদের বর্তমান সভাপতি, সাধারণ সম্পাদক লিখে চলেছেন অবিরাম। আরো লিখছেন আলী আজম , আবিদ আজম, জাকির হোসেন এর মতো কবি-ছড়াকারেরা। সাহিত্য-সাংস্কৃতিক সংগঠক হিসেবে বাংলাদেশের এপ্রান্ত থেকে ওপ্রান্তে কাজ করছে ইসলামী ব্যাংকের বর্তমান বেশ কয়েকজন কর্মকর্তা। শাহ আবদুল হান্নান, মোহাম্মদ আবদুল মান্নান, আতা সরকার, অধ্যাপক মতিউর রহমান, মাহবুবুল হক, সাবেক বিচারপতি আবদুর রউফ, আইনজীবী আবদুর রাজ্জাক, এরশাদ মজুমদার, জাতীয় প্রেসক্লাবের সাবেক সভাপতি শওকত মাহমুদ, আবদুল হাই শিকদার, রেজাউদ্দিন স্টালিন, আবুল আসাদ, বুলবুল ইসলাম, আবুল কাসেম ফজলুল হক, মোশাররফ হোসেন খান, আসাদ বিন হাফিজ, জহিরুদ্দীন বাবর, মাসুদ মজুমদার, আরিফ নজরুল, আলতাফ হোসাইন রানা, আল হাফিজ, মাসরুর নেপচুন, এম আর মনজু, তৌহিদুল ইসলাম কনক, রফিক মুহাম্মদ, নূর-ই আওয়াল, কামাল হোসাইন, জুলফিকার শাহাদাৎ, মনসুর আজিজ, জালাল খান ইউসুফী, মালেক মাহমুদ, আযাদ আলাউদ্দীন, ওমর বিশ্বাস, নয়ন আহমেদ, পথিক মোস্তফা, হাসান রউফুন, ফরিদী নুমান, শাকিল মাহমুদ, এম আর রাসেল, আদিত্য রুপু, সাদী মিনহাজ, আল নাহিয়ান, হাসনাইন ইকবাল, বোরহান মাহমুদ, জুবাইর হুসাইন, বি এম বরকতউল্লাহ, শাহ আলম সরকার, ইকবাল করীম মোহন, মোজাম্মেল প্রধান, সুমাইয়া বরকতউল্লাহ, কামরুজ্জামান প্রমুখ। আমাদের দেশকে অপসংস্কৃতির কবল থেকে মুক্ত করে সুস্থ সাহিত্য-সাংস্কৃতিক ধারা তৈরী করতে না পারলে অচিরেই সারা দেশে সাহিত্য-সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ড অপসংস্কৃতিক অন্ধকারে নিমজ্জিত হবে, যা আমাদের কারোই কাম্য নয়। আর এই সুস্থ সাংস্কৃতিক বিকাশে সারা দেশে গড়ে তোলা হয়েছে,

(সিএনসি, বাংলা সাহিত্য পরিষদ, স্বদেশ সাংস্কৃতিক পরিষদ, উৎসঙ্গ সৃজন চিন্তন, মৃত্তিকা একাডেমী, শহীদ মালেক ফাউন্ডেশন, কিশোর কণ্ঠ ফাউন্ডেশন, সাইমুম শিল্পীগোষ্ঠী, বিপরিত উচ্চারণ, পল্টন সাহিত্য পরিষদ, ফররুখ পরিষদ, চত্বর সাহিত্য পরিষদ, কিশোর কলম সাহিত্য পরিষদ, ফুলকুঁড়ি সাহিত্য পরিষদ, আল হেরা সাহিত্য পরিষদ, মাস্তুল সাহিত্য সংসদ, সম্মিলিত সাহিত্য-সাংস্কৃতিক সংসদ, স্পন্দন সাহিত্য পরিষদ, কবি সংসদ বাংলাদেশ, কবি আবু জাফর ওবায়দুল্লাহ সাহিত্য সংসদ, কানামাছি সাহিত্য পরিষদ, অনুশীলন সাহিত্য পরিষদ, পারফর্মিং আর্ট সেন্টার, সংগ্রাম সাহিত্য পরিষদ, উচ্ছ্বাস সাহিত্য সংসদ, ইসলামী সাহিত্য পরিষদ, দাবানল একাডেমী, মওদুদী রিসার্চ সংসদসহ শতাধিক সংগঠন ।

অধিকাংশই গড়ে উঠেছে বাংলাদেশ সংস্কৃতিকেন্দ্রর অঙ্গসংগঠন হিসেবে। যাদের মূল লক্ষ্য সাহিত্য-সাংস্কৃতিক অঙ্গন থেকে সুস্থ ধারার কবি সাহিত্যিক তৈরী করা। যাতে করে সারা দেশে সুস্থ সাহিত্য-সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ড বিস্তার লাভ করে।

# পত্রিকা-মিডিয়া

জামায়াত-শিবিরের অধিকাংশ সাহিত্য-সাংস্কৃতিক সংগঠনগুলোর রয়েছে নিজস্ব মুখপত্রও। আর তাতে লেখার কারনে সহজেই সম্পর্ক তৈরি হচ্ছে দেশের প্রথম শ্রেণী থেকে শুরু করে বিভিন্ন শ্রেণীর কবি-সাহিত্যিক-সাংবাদিক ও সাংস্কৃতিক ব্যক্তিদের সঙ্গে।

এ ক্ষেত্রে যেসব পত্রিকা ও সাহিত্য কাগজ মানুষের কাছে অহরহ প্রতিনিয়ত পৌঁছে যাচ্ছে সেগুলো হলো: অন্ত্যমিল, উৎস, শেকড়, ডাকটিকিট, কানামাছি, ফুলকুঁড়ি, শীলন, কিশোর কথা, চারুকথা, মৃত্তিকা, শিল্পকোণ, রেলগাছ, ইষ্টকুটুম, ছাত্রকথা, নতুন কলম, সাহিত্য সমাচার, আল শিবির, সংস্কার, অহনা, ছোটরা, নিব, চুরুলিয়া, ফররুখ একাডেমী পত্রিকা, লাটাই, ঘুড়ি, ঘূর্ণি, বুনন, সত্যের আলো, মগবাজার, আল হেরা, নন্দন, স্পন্দন, বাংলা সাহিত্য পরিষদ পত্রিকা, সোনার বাংলাসহ শতাধিক পত্রিকা ও সাহিত্য কাগজ। সঙ্গে সঙ্গে রয়েছে সবার পরিচিত আরও অসংখ্য পত্রিকা-মুখপত্র ও সাহিত্য কাগজ। এই সকল কাগজে দেশের অন্যতম ছড়াকার সুকুমার বড়–য়া, কবি আসাদ চৌধুরী, খালেক বিন জয়েন উদ্দীন, ফারুক নওয়াজ, আশরাফুল আলম পিন্টু, আবু সালেহ, আসলাম সানী, জুবাইদা গুলশান আরা, ঝর্ণাদাশ পুরকায়স্থ, জগলুল হায়দার, রেজাউদ্দিন স্টালিন, হাবিবুল্লা সিরাজীসহ প্রায় সকলেই লেখেন। রয়েছে একটি নিজস্ব টিভি চ্যানেল। এ ছাড়া জামায়াত ইসলামী ও ছাত্র শিবির এর প্রতি সহানুভুতিশীল লোক দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হচ্ছে ৫টি টিভি চ্যানেল।

(সাংস্কৃতিক কর্মকান্ড বিস্তারের জন্য ইসলামী ব্যাংক সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। বিজ্ঞাপন, স্পন্সর দেওয়ার পাশাপাশি জামায়াত-শিবিরের সাহিত্য-সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ড আরও শক্তিশালী করার লক্ষ্যে ইসলামী ব্যাংক ফাউন্ডেশন সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিয়েছে বার বার । যে কারণে বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্র মিলনায়তনে অনুষ্ঠান করার সামর্থ হয়েছে। এ ছাড়া জামায়াত-শিবির দেশের প্রায় প্রতিটি উপজেলায় সাহিত্য-সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের যে আয়োজন করে থাকে, সেই আয়োজনে আওয়ামী লীগ, বিএনপি, জাতীয় পার্টি এমনকি প্রশাসনের কর্মকর্তারা ও আর্থিক ভাবে সহযোগিতা করে থাকেন।

# মিডিয়ায় জামায়াত-শিবিরের বর্তমান অবস্থা:

মিডিয়ায় ক্রমেই নিজেদের অবস্থান শক্ত করে নিচ্ছে জামায়াত-শিবির। কেননা, সেখানে সম্প্রতি ছাত্রশিবিরের সহযোগী সংগঠন সাইমুম থিয়েটারের নাটক নিয়ে লেখা হয়েছে, ‘যেহেতু সাংস্কৃতিক আন্দোলনের সঙ্গে রাজনৈতিক আন্দোলনও সম্পৃক্ত। সেদিক থেকে বিচার করলে, এই আন্দোলনের ক্ষেত্রে জামায়াত-শিবির ছাড়া অন্য ইসলামি দলগুলো বলতে গেলে, একেবারে প্রাথমিক অবস্থায় আছে। তাই এখানে মূলত জামায়াত-শিবিরের ইসলামী সাংস্কৃতিক আন্দোলন নিয়ে সাদা চোখে দৃশ্যমান বিষয়গুলো আলোচনা করা হবে। সংস্কৃতি কী? এর সংজ্ঞা নিয়ে তর্ক রয়েছে। আমি এককথায় বলব, সংস্কৃতি মানে মানুষের সামগ্রিক জীবনাচরণ। সংস্কৃতি বলতে যারা নিছক নিজস্ব পরিমণ্ডলে মিউজিকবিহীন দু-একটা গান/অভিনয় করে বাহবা কুড়াতে চান, তাদের সঙ্গে কোন তর্ক করতে চাই না। মূলত আশির দশক থেকে বাংলাদেশে ইসলামী সাংস্কৃতিক আন্দোলন গড়ে ওঠে। যদি শূন্য অবস্থান থেকে বিবেচনা করা হয়, তাহলে বলতে হবে অনেক দূর অগ্রসর হয়েছে এই আন্দোলন। অনেক প্রাপ্তি আছে। একটি রাজনৈতিক বিপ্লবের সফলতা, সাংস্কৃতিক বিপ্লবের ভেতর দিয়ে আসে। আমরা যদি বর্তমান সাংস্কৃতিক প্রবাহ পর্যালোচনা করি, তাহলে দেখব উদীচী, ছায়ানটসহ বিভিন্ন সাংস্কৃতিক সংগঠন, থিয়েটার আন্দোলন, বিভিন্ন মিডিয়া প্রতিষ্ঠান থেকে বাম ধারার বিশাল সাংস্কৃতিক গোষ্ঠী তৈরী হয়েছে। এই সাংস্কৃতিক গোষ্ঠীর সঙ্গে ধর্মনিরপেক্ষবাদী গোষ্ঠীর রাজনৈতিক কর্মসূচি আকারে, আজকের বাংলাদেশের তরুণ সমাজের বিশাল একটা শ্রেণীর মধ্যে জায়গা করে নিয়েছে। তরুণ সমাজের মানসপটে বাম সাংস্কৃতিক গোষ্ঠী ব্যাপকভাবে আলোড়ন তৈরি করেছে। আজকের মিডিয়াজগৎ বামদের দখলে। এটা কিন্তু হঠাৎ করে তৈরি হয়নি। অন্যদিকে ইসলামী সাংস্কৃতিক আন্দোলন এখনো ওদের তুলনায় একেবারে প্রাইমারি লেভেলে আছে।’

# প্রকাশনাশিল্পে শিবির-জামায়াত

শুধু সাহিত্য-সাংস্কৃতিক অঙ্গনেরই নয়। জামায়াত-শিবির এগিয়ে আসছে দৈনিক, সাপ্তাহিক, মাসিক অসংখ্য পত্রিকার সঙ্গে সঙ্গে প্রকাশনাশিল্পেও। বাংলাবাজার, মগবাজার, শাহবাগসহ বিভিন্ন স্থানে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে আছে অসংখ্য প্রকাশনাপ্রতিষ্ঠান। এই প্রকাশনা প্রতিষ্ঠানগুলো প্রকাশ করে জামায়াত-শিবিরের শীর্ষস্থানীয় নেতাদের বইয়ের পাশাপাশি দেশের খ্যাতিমানদের বই। সিদ্দিকীয়া পাবলিকেশন্সের পাশাপাশি আধুনিক প্রকাশনী, প্রীতি প্রকাশন, কিশোর কণ্ঠ প্রকাশনী, ফুলকুঁড়ি প্রকাশনী, মিজান পাবলিকেশন্স, ইষ্টিকুটুম, আল্পনা প্রকাশনী, গণিত ফাউন্ডেশন, মদিনা পাবলিকেশন্স, প্রফেসর’স, কারেন্ট নিউজ, সাজ প্রকাশন, সৌরভ, সাহিত্যকাল, নবাঙ্কুর, সাহিত্যশিল্প, শিল্পকোণ, আযান, অনুশীলন, ফুলকলি, দিগন্ত, পাঞ্জেরী, আল কোরআন ইত্যাদি।

সুপ্রিয় পাঠক , আমি এখানে প্রকাশ্যে কিছু প্রতিষ্ঠানের নাম উল্লেখ করেছি। হয়তো এতে অনেকে সংক্ষুব্দ হতে পারেন । সেজন্য আমি দু:খিত। আমার দৃষ্টিভঙ্গি হয়তো অনেকের কাছে পছন্দ না ও হতে পারে। আমি মনে করি জামায়াতি ইসলামী বাংলাদেশ এবং ইসলামী ছাত্রশিবির বাংলাদেশে সর্বাত্তক বিপ্লবের লক্ষ্যে নিরলস কাজ করে যাচ্ছে। সকল ক্ষেত্রে যতদিন নিজেদের প্রতিষ্ঠা করতে না পারবে ততদিন বিপ্লব কোন ভাবে সম্ভব নয়।একটা সময় ছিল অনেক কর্মকান্ড গোপনে হতো কিন্তু এর পরও অনেক অত্যাচার নিপিড়ন সহ্য করতে হয়েছে।এখন সংগঠনের বিশাল ব্যপ্তির কারনে এটাকে গোপন রাখা সম্ভব নয়। সুতরাং যা করার প্রকাশ্যে করতে হবে।বিশেষ করে মিডিয়া এবং সাংস্কৃতিক জগতে ইসলামী ছাত্রশিবিরের তরুনদের আরো এগিয়ে আসার আহবান জানাচ্ছি।একটা ব্যপার খেয়াল করতে হবে জামায়াত ইসলামী এবং ইসলামী ছাত্র শিবির কোন ব্যবসায়িক সংগঠন নয়। কিন্তু যারা এর সাথে জড়িত তারা যদি কর্মজীবনে সফলতা অর্জন করেন এতে পরোক্ষ ভাবে সংগঠনই লাভবান হয়।এখন আর পেছনে ফিরে দেখার সুযোগ নেই। সবাই যার যার নিজস্ব গন্ডিতে সমাজে গড়ে তুলতে হবে সাহিত্য সামাজিক সংগঠন। সুস্থ সংস্কৃতির বিকাশে সংগঠনের প্রতিটি জনশক্তিকে বিশাল ভুমিকা রাখতে হবে।সেখান থেকেই উঠে আসবে কবি, সাহিত্যিক ,লেখক, সাংবাদিক ও গবেষক। আর তারাই ভুমিকা রাখবে আগামী দিনের ইসলামী বিপ্লবের সহায়ক হিসেবে।

বি:দ্র: এই পোষ্টটি এসবিতে প্রকাশ করেছিলাম।যারা পড়তে পারেননি তাদের জন্য আবার প্রকাশ করলাম।

বিষয়: বিবিধ

৫৬৮৬ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File