বন্ধুত্ব মানে জীবনের সুখ-দুঃখ হাসি কান্নার ভাগীদারঃ প্রকৃত বন্ধু নির্বাচনের কয়েকটি সহজ উপায়

লিখেছেন লিখেছেন এম এ আলীম ০২ জানুয়ারি, ২০১৩, ০২:২০:৫৮ রাত



[img]

সামাজিক জীব হিসেবে মানুষের পক্ষে সমাজে একা বসবাস করা সম্ভব নয়। নিঃসঙ্গতা কাটানোর জন্য, বিপদে সহযোগিতা পাওয়ার জন্য সামগ্রিকভবে সাহচর্য লাভের জন্য একজন বন্ধুর একান্ত প্রয়োজন।মানুষ জীবনের প্রতিটি মুহূর্তে একজন ভালো বন্ধুর প্রয়োজন। কারণ,একজন প্রকৃত বন্ধু জীবনের সুখ-দুঃখ, হাসি-কান্নার অংশীদার হয়।বন্ধুত্ব বলতে আমরা কী বুঝি! প্রাচীন প্রবাদে বন্ধুত্বের সংজ্ঞা দিতে গিয়ে বলা হতো, ‘সম্পর্ক যখন জ্বরে পুড়ে তখন তার নাম হয় ভালোবাসা, আর ভালোবাসা যখন জ্বরে পুড়ে তার নাম হয় বন্ধুত্ব। প্রকৃত বন্ধুই পারে আত্মার আত্মীয় হয়ে কিছুক্ষণের জন্য হলেও দুঃখ-কষ্টকে ভুলিয়ে রাখতে। তবে মানুষ চেনা সহজ নয়। বন্ধু চেনা আরো কঠিন। বিশ্বাস রাখার মতো বন্ধু এই সময়ে খুঁজে পাওয়া নিতান্তই দুরূহ কাজ হয়ে দাঁড়িয়েছে। আর সে জন্য বন্ধু নির্বাচনে দেখতে হবে তার বুদ্ধিমত্তা, সততা, সত্যবাদীতা এবং স্বভাব-চরিত্রে ভালো কি না। জীবনে চলতে গেলে বন্ধুর সান্নিধ্য চাই সবারই। আবার চলতি পথে ব্যস্ততা কিংবা জীবন ধারার অদল-বদলের কারণে অনেক বন্ধুকে হয়তো নেহাত অনিচ্ছাতেই হারিয়ে ফেলি আমরা। একইভাবে পরিবেশ আর পারিপার্শ্বিকতার কারণে কখনো কখনো সন্ধান করতে হয় নতুন বন্ধুত্বেরও। আর নতুন বন্ধু খোঁজার এই সময়টায় কিছু বিষয়ের প্রতি লক্ষ রাখতে না পারলে তা সময়ের পালাবদলে অনেকের জন্যই বন্ধুত্ব কষ্টকর হয়ে দাঁড়ায়।

একজন ভালো বন্ধু পাওয়ার প্রথম ও প্রধান শর্ত হলো বন্ধুত্বের সম্পর্কের মাঝে কোনো ধরনের স্বার্থ কিংবা প্রাপ্তির চিন্তা মাথায় না রাখা। মনে রাখবেন স্বার্থের প্রয়োজনে করা বন্ধুত্ব আপনাকে একটা সময়ে লাভবান করলেও চূড়ান্ত বিচারে আপনাকে করে তুলতে পারে নিঃসঙ্গ। এ কারণে কোনো ধরনের প্রাপ্তির চিন্তা থেকে নয়, বরং নিজের ভালোলাগা আর ভালোবাসাগুলোকে ভাগাভাগি করে নেয়াই হোক বন্ধুত্বের প্রথম দাবি। দ্বিতীয়ত, বন্ধুত্বের মাঝে যেন ভুল বোঝাবুঝি বা মনোমালিন্য সহজেই স্থান করে নিতে না পারে সেজন্য নতুন করে বন্ধু হওয়ার মানসিকতাটুকু বোঝাও কম-বেশি জরুরি। এক্ষেত্রে শুধু যে সমমানসিকতাসম্পন্ন মানুষেরাই আপনার বন্ধু হবেন তেমনটা কিন্তু নয়, বরং নতুন বন্ধুর মানসিকতা যেমনই হোক না কেন তার প্রতি আপনার সহনশীলতা এবং আপনার মতের প্রতি তার সমর্থনই পারে একটা নির্ভেজাল বন্ধুত্ব গড়ে দিতে। নতুন কারো সাথে বন্ধুত্ব গড়বার মাধ্যমে আপনি যেমন আপনার মনের কথা কিংবা কাজের পরিবেশের অনেক কথা ভাগাভাগি করে নিতে চান, তেমনি আপনার বন্ধুটির মনেও একই রকম আকাঙ্ক্ষা থাকাটা স্বাভাবিক। কাজেই নিজের কথা বলার পাশাপাশি বন্ধুর কথা শুনতে চাইবার মানসিকতাটাও থাকা জরুরি। আর এ প্রেক্ষাপটে খুব বেশি মাত্রায় আত্মকেন্দ্রিক কোনো মানুষের সাথে বন্ধুত্বে জড়ানোর আগে অবশ্যই তার সাথে আপনি কতটা মানিয়ে নিতে পারবেন সে বিষয়টুকু ভেবে দেখা দরকার। বন্ধুত্বের যেমন সুনির্দিষ্ট কোনো সংজ্ঞা হয় না, তেমনি বন্ধু নির্বাচনের ক্ষেত্রেও ধরাবাঁধা কোনো নিয়মের কথা বলা যায় না। তবে বন্ধুত্ব নির্বাচনের ক্ষেত্রে বয়স, লিঙ্গ বা সামাজিক অবস্থান যেন মুখ্য হয়ে না দাঁড়ায় সেটি অবশ্যই লক্ষ রাখতে হবে।

আবার বন্ধুত্ব হয়ে যাবার পর এ ধরনের চিন্তাও মাথা থেকে সরিয়ে দিতে হবে। কেননা যাদের কাছে বন্ধুত্বের আবেগের চাইতে নিজের অবস্থান অনেক বেশি মুখ্য তাদের সাথে কখনও প্রাণখুলে বন্ধুত্বের আনন্দটুকু উপভোগ করা যায় না। আবার বন্ধুর ব্যক্তিগত বিষয় নিয়ে যারা খুব বেশি কৌতূহল দেখান বা বন্ধুর কোনো বিষয়ে যারা উপযাচক হয়ে অযাচিত উপদেশ বিলাতে ভালোবাসেন তাদেরকেও নতুন বন্ধু হিসেবে নির্বাচন করতে সতর্ক হতে হবে। সর্বোপরি নতুন বন্ধু হিসেবে কারো দিকে হাত বাড়াতে বা কারো বন্ধুত্বের ডাকে সাড়া দিতে তার মানসিকতা, বন্ধুর প্রতি তার মূল্যায়ন সম্পর্কেও কম-বেশি জানতে এবং বুঝতে হবে। তাই বন্ধু নির্বাচন করার ক্ষেত্রে আপনার বিচার বিবেচনা করে নেওয়া উচিত।

বন্ধু চেনার কয়েকটি সহজ উপায়ঃ

০১। কারো প্রতি মন আকৃষ্ট হলেই তার সাথে বন্ধুত্ব করতে হবে এমনটা ঠিক নয়, বরং প্রথমে পর্যালোচনা করে দেখতে হবে ভালো লাগা বা তার প্রতি আকর্ষণের কারণ কিংবা উত্সটা কী এবং সে আদৌ বন্ধু হবার যোগ্য কি না ইত্যাদি।

০২। হঠাৎ করে কারো সাথে পরিচিত হবার মধ্য দিয়ে অর্থাৎ কোনো রকম বিচার বিশ্লেষণ ছাড়া বন্ধুত্ব গড়ে উঠলে অনেক সময় দুঃখজনক পরিণতি ঘটতে পারে।

০৩। বন্ধু চাহিবামাত্র তাকে সামর্থ্য অনুযায়ী কিছু টাকা ধার দিন। এই টাকা পাওয়ার আশা আপনি ত্যাগ করুন। ধরে নিন এটা আপনার ইনভেস্ট। এরপর চুপচাপ লক্ষ করুন বন্ধু কথা অনুযায়ী আপনাকে টাকা ফেরত দেয় কি না। দিলে কীভাবে দেয়। আপনার পাওনা টাকা ফেরত দেওয়ার ব্যাপারে তার সদিচ্ছা বা মনোভাব কেমন সেটা লক্ষ করুন। ব্যস্ এতেই চলবে... আপনি বুঝে যাবেন যা বোঝার।

০৪। আপনি কৃত্রিম সংকট তৈরি করুন। ভাব দেখান আপনি অনেক বিপদে পড়েছেন। এবার বন্ধুর সাহায্য চান। আপনাকে সাহায্যের ব্যাপারে প্রিয় বন্ধুর সদিচ্ছা বা মনোভাব কেমন সেটা লক্ষ করুন। এবার খুব সহজেই বুঝতে পারবেন, সে আপনার কেমন বন্ধু। কিন্তু অনেক ক্ষেত্রেই আমরা সত্যিকারের বন্ধুদের খুঁজে পাই না, তাই বন্ধু নির্বাচনের এই ভুলটা অনেক সময়ই আমাদের বড় ভোগান্তির কারণ হয়ে দাঁড়ায়। তাই বন্ধূ্ নির্বাচনে সতর্কতা অবলম্বন করুন এবং প্রকৃত বন্ধুর সহচার্য্য লাভে জীবনকে সুন্দর করুন।

বন্ধু অনেক আসে এবং চলে যায়। কিন্তু সবারই জীবনে কম হলেও কিছু প্রকৃত বন্ধু রয়েছে। অবশ্য অনেকে আবার বন্ধু চিনতে ভুল করেন। যদিও কথায় বলে বিপদে বন্দূর পরিচয়। তবুও প্রকৃত বন্ধু চেনার তিনটি উপায় শুনেছি:

১। ভ্রমণ সঙ্গি হলে তখন লোকের হকিকত বোঝা সম্ভব।

২। এক সাথে এক ছাদের নিচে কিছু দিন থাকলে মানুষের আসল রুপ দেখা যায়।

৩। বিপদের সময় আসল বন্ধুর পরিচয় পাওয়া যায়।

এ তিনটি উপায়কে প্রকৃত বন্ধু চেনার সঠিক উপকরণ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে।

বন্ধু নির্বাচন : ইসলামের দৃষ্টিভঙ্গী

'

বন্ধুনির্বাচন:ইসলামেরদৃষ্টিভঙ্গী

এবার দেখা যাক বন্ধুত্ব সম্পর্কে ইসলাম কি বলে? পবিত্র কোরআনে বলা হয়েছে, 'মুমিনগণ যেন অন্য মুমিনকে ছেড়ে কোন কাফেরকে বন্ধুরূপে গ্রহণ না করে। যারা এমনটি করবে, আল্লাহ তাদের সঙ্গে কোন সম্পর্ক রাখবেন না। হাদিসে বলা হয়েছে, 'মানুষ তার বন্ধুর আদর্শে গড়ে ওঠে। সুতরাং বন্ধু নির্বাচনের সময় খেয়াল করা উচিত সে কাকে বন্ধু বানাচ্ছে।' পবিত্র কোরআন ও হাদিসের এসব বক্তব্যের মাধ্যমে স্পষ্ট হলো যে, সব ধরনের লোকের সঙ্গে বন্ধুত্ব করাকে ইসলাম সমর্থন করে না। রাসূল (সা.) বলেছেন, 'দুনিয়াতে যার সঙ্গে বন্ধুত্ব ও ভালোবাসা রয়েছে, পরকালে তার সঙ্গেই হাশর হবে ।' এ জন্য বন্ধু নির্বাচনের আগে তাকে পরীক্ষা করে নেয়া জরুরি। ইমাম গাযযালী (রহঃ) বলেন, 'সবাইকে বন্ধু নির্বাচন করা যাবে না, বরং ৩টি গুণ দেখে বন্ধু নির্বাচন করা উচিত। গুণ তিনটি হল-

১.বন্ধুকে হতে হবে জ্ঞানী ও বিচক্ষণ

২. বন্ধুর চরিত্র হতে হবে সুন্দর ও মাধুর্যময় এবং

৪. বন্ধুকে হতে হবে নেককার ও পুণ্যবান

' ফরাসী এক প্রবাদে বলা হয়েছে, 'বন্ধুত্ব হলো তরমুজের মতো। ভালো একশটিকে পেতে হলে এক কোটি আগে পরীক্ষা করে দেখতে হয়।'

ইরানের বিখ্যাত মনীষী শেখ সাদী (রহঃ) বলেছেন, 'সৎ সঙ্গে স্বর্গবাস, অসৎ সঙ্গে সর্বনাশ।' এ উক্তির মূলকথা হচ্ছে, একজন উত্তম বন্ধু যেমন জীবনের গতি পাল্টে দিতে পারে, তেমনি একজন অসৎ বন্ধু জীবনকে ধ্বংসের চূড়ান্ত সীমায় পৌঁছে দিতে পারে । তাই যাকে বন্ধু হিসেবে গ্রহণ করবে তাকে আগেই যাচাই-বাছাই করে নিতে হবে।

যাদের সাথে বন্ধুত্ব নয়:

ইমাম জয়নুল আবেদীন (রহঃ) পাঁচ শ্রেণীর মানুষের সাথে বন্ধুত্ব করতে নিষেধ করেছেন। ওই পাঁচ শ্রেণীর মানুষ হলো- মিথ্যাবাদী, ইতর, কৃপন, অভদ্র ও নির্দয়। অন্যদিকে ইমাম জাফর সাদেক (রহঃ) তিন শ্রেণীর লোকের সাথে বন্ধুত্ব করতে নিষেধ করেছেন। ওই তিন শ্রেণী হলো- বিশ্বাসঘাতক, নির্মম ও মিথ্যাবাদী। রাসূল (সাঃ) বলেছেন, শেষ বিচারের দিন সকল বন্ধুই শত্রুতে পরিণত হবে তবে একমাত্র সৎ বন্ধুই সেদিন প্রকৃত বন্ধু হিসেবে পরিচয় দেবে। তাই বন্ধু নির্বাচনের ক্ষেত্রে সততা, আমানতদারি, সত্যবাদিতা, বিশ্বস্থতা প্রভৃতি গুণের প্রতি লক্ষ্য রাখতে হবে।

প্রয়োজনে বন্ধুত্ব ছিন্ন

ভালো গুণ দেখে বন্ধুত্ব করার পরও অনেক সময় বন্ধুর মনের মাঝে লুকিয়ে থাকা খারাপ গুণগুলো প্রকাশ পেয়ে যায়। এক্ষেত্রে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব সে বন্ধুর সাথে সম্পর্ক ছিন্ন করতে হবে। যেমনটি করেছিলেন, আহলে বাইতের ষষ্ঠ ইমাম হযরত জাফর সাদেক (রহঃ)। 'ইমাম জাফর সাদেকের এক বন্ধু ছিলো; যে সব সময় ইমামের সাথে ঘোরাফেরা করতো। একদিন ইমাম বাজারে গেলেন। সঙ্গে সেই বন্ধু ও তার কাজের ছেলেটি ছিলো। বাজারে ঘুরতে ঘুরতে কাজের ছেলেটি কৌতুহল বশতঃ এটা ওটা দেখছিলো এবং মাঝে মাঝে পরিচিত লোকদের সাথে কথা বলছিলো। এতে সে তার মনিবের কাছ থেকে একটু পিছিয়ে পড়লো। আর এদিকে ইমাম ও তার বন্ধুটি বাজারের মাঝখানে চলে গেল। হঠাৎ পেছনের দিকে তাকিয়ে কাজের ছেলেকে না দেখে ইমামের বন্ধুর মেজাজ বিগড়ে গেল। কিছুক্ষণ পর ছেলেটি ফিরে এলে মনিব তেলে বেগুনে জ্বলে উঠলো। ইমামের সামনেই সে কাজের ছেলেটির বাপ-মা তুলে গালি দিলো। লোকটির অশ্লীল কথাবার্তা শুনে ইমাম অবাক হয়ে তার বন্ধুর দিকে তাকিয়ে বললেন, 'হায় আল্লাহ! একি করলে তুমি! ছেলেটির বাপ-মা তুলে গালি দিলে? আমি তো মনে করেছিলাম তুমি একজন ধার্মিক ও খোদাভীরু লোক। এখন দেখছি সামান্য তাকওয়াও তোমার মধ্যে নেই!'

ইমামের কথা শুনে লোকটি বলল, আপনাকে আর কি বলবো, এই ছেলেটি আসলেই বদ। তার মা সিন্ধু থেকে এসেছিলো। ওই বেটির জন্মেরও কোন ঠিক ছিল না। তাছাড়া সে মুসলমানও ছিল না। সে ক্ষেত্রে তাকে কিছু বলা মোটেও অন্যায় হয়নি।'

ইমাম বললেন, 'আমি জানি ওই মহিলা একজন অমুসলিম ছিল। কিন্তু তোমার জানা দরকার, প্রত্যেক ধর্মেরই নিজ নিজ আইন কানুন আছে। একজন অমুসলিম তার নিজ ধর্মের আইন অনুযায়ী বিয়ে করলে অশুদ্ধ হয় না। তাদের বিয়ের পর সন্তানাদি জন্মগ্রহণ করলেও তা অবৈধ হয় না। তুমি ছেলেটির মাকে অন্যায়ভাবে অপবাদ দিয়েছো। তাই তোমার সাথে বন্ধুত্ব রাখা আমার পক্ষে আর সম্ভব না। আজ থেকে তোমার সাথে আমার সম্পর্কের অবসান হলো। এ ঘটনার পর ইমাম জাফর সাদেকের সাথে ওই লোকটিকে আর কখনই দেখা যায়নি।'

প্রকৃত বন্ধু চেনার উপায়

অসময়ের বন্ধুই প্রকৃত বন্ধু এ কথা সবাই জানে। যে লোক রোদ উঠলে ছাতা ধার দেয় আর বৃষ্টি শূরু হলেই ছাতা নিয়ে নেয় সে কখনো বন্ধু প্রকৃত বন্ধু হতে পারে না। এ সম্পর্কে একটি বহুল প্রচলিত গল্প আছে। 'একবার দুই বন্ধু জঙ্গলের মধ্য দিয়ে যাচ্ছিলো। হঠাৎ একটি ভাল্লুক তাদেরকে আক্রমন করতে এলো। দু'বন্ধুর মধ্যে যে গাছে উঠতে জানতো সে অন্যজনকে সাহায্য করার চেষ্টা না করে দৌড়ে গিয়ে গাছে উঠলো। অন্যজন কোন উপায় না দেখে মাটির ওপর মরার মতো শুয়ে রইলো। ভাল্লুক এসে লোকটির মুখ শুঁকে মৃত ভেবে চলে গেল। ভাল্লুক চলে যেতেই গাছের ওপর থেকে লোকটি নিচে নেমে এসে তার বন্ধুকে জিজ্ঞেস করলো, 'বন্ধু! ভাল্লুক তোমার কানে কানে কি বলল?' লোকটি জবাব দিলো- ভাল্লুকটি আমাকে বলেছে , যে বন্ধু বিপদ দেখে পালিয়ে যায়, সে প্রকৃত বন্ধু নয়; তাকে কখনো বিশ্বাস করো না।'

এ গল্প থেকে বুঝা যায় যে, সত্যিকারের বন্ধু কখনো বন্ধুর বিপদ দেখে পালিয়ে যেতে পারে না। বরং তারা বিপদে- আপদে পরস্পরকে সাহায্য করে। সে সাহায্য কোন দয়া-দাণ্যি কিংবা অনুগ্রহ নয়। সে সাহায্য জীবনেরই অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ। যদি এ রকম সাহায্য না পাওয়া যায় তাহলে বন্ধুত্বের সম্পর্ক থাকে না।

বন্ধুত্ব ঈমানের অঙ্গ

বন্ধুত্ব যেমন সামাজিক জীবনকে সহজ ও সুন্দর করে তেমনি বন্ধুত্ব করা ঈমানের অঙ্গও বটে। রাসূল (সাঃ) বলেছেন, 'যে ব্যক্তি আল্লাহর উদ্দেশ্যে কাউকে ভালোবাসল, তাঁর জন্যই কাউকে ঘৃণা করল, তাঁরই সন্তুষ্টি অর্জনের জন্য কাউকে দান করল এবং তা থেকে বিরত থাকল তবে নিঃসন্দেহে সে নিজ ঈমানকে পূর্ণতা দান করল।' তাই বন্ধুত্ব যদি করতে হয় তাহলে

ইসলামের নির্দেশনা অনুসারে বন্ধু নির্বাচন করা উচিত। তাহলেই আমাদের জীবন হবে বিপদমুক্ত, নির্মল, ও আনন্দময়।

শেষ করবো একটি প্রাসঙ্গিক রম্য গল্প দিয়ে:

আমেরিকান সৈন্য ইরাক আক্রমণের প্রস্তুতি নিচ্ছে ঘটনা সেই সময়ের। এক প্লাটুন সৈন্য ইরাক যুদ্ধে পাঠানো হবে। কমান্ডার বিমানে ওঠার আগে সবাইকে সাবধান করে বললেন, তোমাদের যে শুধু ইরাকী সেনাদের বিরুদ্ধেই যুদ্ধ করতে হবে তা কিন্তু নয়। সেখানে মরুভূমিতে বিষাক্ত অনেক পোকা-মাকড় এমন কি বিচ্ছুর বিরুদ্ধেও তোমাদের লড়াই করতে হবে। তবে চিন্তার কিছু নেই। বিচ্ছু কামড়ালে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব ক্ষতস্থান থেকে চুষে বিষ বের করে ফেলতে হবে। আর কোনো প্রশ্ন? একথা শুনে এক নিগ্রো সৈনিক হাত উঠালো-

: স্যার, আমার একটা প্রশ্ন আছে।

: কী প্রশ্ন?

: আমার পশ্চাদ্দেশে বিচ্ছু কামড়ালে আমি সেখানে চুষবো কী করে? আমার মুখ তো সেখানে পৌঁছাবে না!

: সেদিনই তুমি জানতে পারবে এই প্লাটুনে কে তোমার আসল বন্ধু।

বিষয়: বিবিধ

৮২২১ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File