বাঁশের কেল্লা, আমাদের অতীত আমাদের বর্তমান

লিখেছেন লিখেছেন এম এ আলীম ১৯ এপ্রিল, ২০১৩, ০৩:৪৭:৩৫ দুপুর





ভূমিকা: অসহায় ও নিপীড়িত মানুষের বন্ধু তিতুমীর। ইংরেজ শাসন ও শোষণ থেকে ভারতবর্ষকে মুক্ত করার জন্য তিনি অসীম সাহসের সঙ্গে সংগ্রাম করেছেন। একজন ধর্মপ্রাণ মুসলমান হলেও অন্য ধর্মের প্রতি ছিল তাঁর গভীর শ্রদ্ধা। তাই প্রতিবাদী এই অকুতভয় বীরকে দুর্ভেদ্য বাঁশের কেল্লা তৈরিতে সহযোগিতা করেছিলেন জাতি, ধর্ম-নির্বিশেষে সব শ্রেণীর মানুষ। তিতুমীর ইতিহাসের এক মহান ব্যক্তিত্ব।

জন্ম ও শৈশব: ১৭৮২ সালে পশ্চিমবঙ্গের চব্বিশ পরগনা জেলার বশিরহাট মহকুমার চাঁদপুর গ্রামে তিতুমীরের জন্ম। বনিয়াদি মুসলিম পরিবারে সৈয়দ বংশে জন্ম নেওয়া এই ছোট্ট শিশুটি ছিল যেমন দেখতে সুন্দর, তেমনি বলিষ্ঠ গড়ন। এই সুন্দর শিশুটির হঠা ৎ করে একবার এক কঠিন অসুখ হয়। রোগ সারানোর জন্য তাকে দেওয়া হয় ভীষণ তেতো ওষুধ। প্রায় ১০-১২ দিন এই তেতো ওষুধ শিশুটি আনন্দের সঙ্গে সেবন করে। এ জন্য তার ডাকনাম রাখা হয় তেতো। তেতো থেকে তিতু। তার সঙ্গে মীর লাগিয়ে হয় তিতুমীর। তবে তাঁর প্রকৃত নাম সৈয়দ মীর নিসার আলী।

শিক্ষাজীবন: তিতুমীরের গ্রামে ছিল এক মাদরাসা। সেখানে শিক্ষক ছিলেন হাফেজ নেয়ামত উল্লাহ। তিতুমীর সেই মাদরাসায় পড়তেন। অল্প সময়েই হাফেজ নেয়ামত উল্লাহর প্রিয় পাত্র হয়ে ওঠেন তিতুমীর। ধর্মীয় শিক্ষার পাশাপাশি তিনি মুষ্টিযুদ্ধ, লাঠিখেলা, তীর ছোড়া ও অসি চালনা শেখেন। এরপর ওস্তাদের সঙ্গে বিহার সফরে এসে তিতুমীর মানুষের দুরবস্থা প্রত্যক্ষ করেন। মানুষের দুরবস্থা দেখে তাঁর মনে দেশকে স্বাধীন করার চিন্তা আসে।



সংগ্রামী জীবনের শুরু: ১৮২২ সাল। তিতুমীরের বয়স তখন চল্লিশ। তিনি হজ পালন করতে মক্কায় গেলেন। সেখানে পরিচয় হয় ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলনের অন্যতম পুরোধা ব্যক্তিত্ব হজরত শাহ সৈয়দ আহমদ বেরলভীর সঙ্গে। সৈয়দ আহমদ বেরলভী ছিলেন সংগ্রামী পুরুষ, ধর্মপ্রাণ। তিতুমীর তাঁর শিষ্য হয়ে দেশে ফিরে আসেন। দেশে ফিরে তিনি স্বাধীনতার ডাক দেন। ইংরেজদের বিরুদ্ধে, নীলকরদের রুখতে সবাইকে সংগঠিত হতে আহ্বান জানান। কিন্তু প্রথমেই বাধা পান জমিদারদের কাছ থেকে। সংগ্রামের শুরুতেই তাঁর ওপর শুরু হয় অত্যাচার। নিজ গ্রাম ছেড়ে তিনি বারাসাতের নারকেলবাড়িয়া চলে যান।



বাঁশের কেল্লা তৈরি: নারকেলবাড়িয়া আসার পর সেখানকার লোকজন তিতুমীরকে সাদরে গ্রহণ করে। হাজার হাজার সাধারণ মানুষকে সঙ্গে নিয়ে তিনি তৈরি করেন এক দুর্ভেদ্য বাঁশের দুর্গ। এটাই নারিকেলবাড়িয়ার ‘বাঁশের কেল্লা’ নামে ইতিহাস বিখ্যাত। এই দুর্গে তিনি তাঁর শিষ্যদের লড়াইয়ের শিক্ষা দিতে শুরু করেন। ইংরেজদের বিরুদ্ধে সশস্ত্র যুদ্ধ করার কৌশল শেখানোর পাশাপাশি তাদের আক্রমণ করার প্রস্তুতিও নিতে থাকেন।



ইংরেজদের সঙ্গে যুদ্ধ: তিতুমীরের ইংরেজবিরোধী সংগ্রামের প্রস্তুতির খবর ইংরেজ শাসক গোষ্ঠীর কাছে চলে যায়। ইংরেজদের সঙ্গে হাত মেলায় দেশি জমিদারেরা। ১৮৩০ সালে ম্যাজিস্ট্রেট আলেকজান্ডারকে পাঠানো হয় তিতুমীরকে দমন করার জন্য। কিন্তু আলেকজান্ডার তাঁর সিপাহি বাহিনী নিয়ে পরাস্ত হন তিতুমীরের হাতে। তিতুমীর কয়েকটি নীলকুঠি দখল করে নেন। তারপর ১৮৩১ সালের ১৯ নভেম্বর ত ৎ কালীন ভারতবর্ষের গভর্নর জেনারেল লর্ড উইলিয়াম বেন্টিঙ্ক-কর্নেল স্টুয়ার্ডের নেতৃত্বে বিরাট সেনাবহর পাঠান তিতুমীরকে শায়েস্তা করার জন্য। স্টুয়ার্ডের ছিল হাজার হাজার প্রশিক্ষিত সেনা আর অজস্র গোলাবারুদ। তিতুমীরের ছিল মাত্র চার-পাঁচ হাজার স্বাধীনতাপ্রিয় সৈনিক। তাঁর না ছিল কামান, না ছিল গোলাবারুদ-বন্দুক। তবুও প্রচণ্ড যুদ্ধ হলো। তিতুমীর আর তাঁর বীর সৈনিকেরা প্রাণপণ যুদ্ধ করলেন। কিন্তু কিছুক্ষণের মধ্যেই ইংরেজ সৈনিকদের গোলার আঘাতে ছারখার হয়ে যায় নারিকেলবাড়িয়ার বাঁশের কেল্লা। শহীদ হলেন বীর তিতুমীর। শহীদ হলেন অসংখ্য মুক্তিকামী বীর সৈনিক। তিতুমীরের ২৫০ জন সেনাকে ইংরেজরা বন্দী করল। এদের কারও হলো কারাদণ্ড, কারও হলো ফাঁসি। এভাবেই শেষ হলো যুদ্ধ। কিন্তু এ যুদ্ধের বীরনায়ক তিতুমীর অমর হয়ে রইলেন এ দেশের মানুষের মনে।

উপসংহার: আজ থেকে প্রায় পৌনে ২০০ বছর আগে তিতুমীর পরাধীন ভারতবর্ষের স্বাধীনতার জন্য যুদ্ধ করেছিলেন ইংরেজদের বিরুদ্ধে। ইংরেজদের বিরুদ্ধে স্বাধীনতার যুদ্ধে বীর তিতুমীরই হলেন বাংলার প্রথম শহীদ। আমরা তাঁকে গভীর শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করি।



আজ তিতুমীর নেই কিন্তু তার উত্তরসুরীরা এখনও বেঁচে আছে। শোষকের বিরুদ্ধে শাষিতের সংগ্রাম এখনও চলছে।সেই সংগ্রামের ধরনও পরিবর্তন হয়েছে। এসেছে প্রযুক্তির ব্যবহার। সেটাকে কাজে লাগিয়ে সামাযিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে গঠন করা হয়েছে বাঁশের কেল্লা নামক পেইজ। বরাবরই বাঁশের কেল্লা বর্তমান আওয়ামী সরকারের জুলুম নিপিড়নের বিরুদ্ধে সোচ্ছার ছিল।

রাষ্ট্রবিরোধী ও সাইবার অপরাধের অভিযোগে বাঁশের কেল্লা সাইটটি বেশ কয়েকবার বন্ধ করে দেওয়া হয়।

বাঁশের কেল্লা নিয়ে গত বেশ কিছুদিন ধরে দেশের কয়েকটি সনাম ধন্য মিডিয়া মিথাচার করে আসছিল ।

বাঁশের কেল্লা নিয়ে ডেইলি স্টার এর মিথ্যাচার হাতে নাতে ধরা পড়েছিল।

এদিকে বাঁশেরকেল্লা বন্ধ হয়ে যাওয়ার পর নতুন আরেকটি বাঁশেরকেল্লা সাইট খোলা হয়েছে। বেলা সাড়ে ৫টায় এ সাইট তৈরি করা হয়।এরপর লেখা হয়-

‘‘সরকার বাঁশেরকেল্লা আবার বন্ধ করে দিয়েছে। বাঁশেরকেল্লা পরিবার আবার আমাদের মাঝে ফিরে আসছে। সবাই like দিয়ে জালিম সরকারের মুখে বাঁশ দিন।’’



জানা গেছে, সদ্য বন্ধ হয়ে যা্ওয়া বাঁশেরকেল্লার এডমিনরাই নতুনভাবে আরেকটি বাঁশেরকেল্লা সাইট চালু করেছে। প্রথম এক ঘণ্টায় এখানে লাইক পড়ে ৭ হাজার ৪৩৫টি। তিন ঘণ্টা পর যার লাইক পড়ে ২৪ হাজার ১৩০টি।

সন্ধ্যা বারার সাথে সাথে এর লাইক দ্রুত বাড়তে থাকে এখন প্রতি মিনিটে এর লাইক পরছে প্রায় গড়ে ৩০০ জন করে। বাংলাদেশ এর ইন্টারনেট এর ইতিহাসে এরূপ ঘটনা বিরল ।



আমাদের আইটি বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছে ফেসবুকের ইতিহাসে এরূপ ঘটনা বিরল , বাঁশের কেল্লা বিশ্ব ইন্টারনেট , সোসাল মিডিয়া ও ফেসবুকের ইতিহাসে নতুন অধ্যায় এর সূচনা করেছে।

সরকার এ সাইটটি বা পেইজ বন্ধ করে দিল ও এই পেইজ এর তমুল জনপ্রিয়তা আবার একে বাংলাদেশ এর সবচে জনপ্রিয় পেইজ পরিনত হতে যাচ্ছে ।

এদিকে শাহবাগ আন্দোলন যেটা ফেসবুকের বা ব্লগার এর আন্দোলন বলে পরিচিত তারা এখন আবার চুপসে গেছে । কারণ এই জনপ্রিয়তা তাদের কে ইন্টারনেট জগতে সংখ্যা লঘু বলে প্রমান করছে ।

অন্যদিকে ১ লাখ ২৫ হাজারের লাইক পড়া ফেসবুক পেজ বাঁশেরকেল্লা। তার বিপরিতে প্রজন্ম চত্বর পেইজটির এই রিপোর্ট লিখার আগ পর্যন্ত লাইক ছিল ৩২৮৪৭ ।

আরও জানান দরকার যে প্রজন্ম চত্বর পেইজ এর এই লাইক সংখ্যা প্রথম থেকে আজ পর্যন্ত কারণ বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন (বিটিআরসি) সাইটটি কখন বন্ধ করে নাই।



যাই হোক আজ সারা দেশে যে গণ আন্দোলন গড়ে উঠেছে তার অনেকটার অবদান বাঁশের কেল্লার। যে আন্দোলনের সুত্রপাত বাঁশের কেল্লার মাধ্যমে গড়ে উঠেছে সেটাকে রাজপথে বাস্তবায়ন করার দায়িত্ব ও কিন্তু আমাদের তরুন সমাজের। সফলতা ব্যর্থতা আল্লাহর হাতে হয়ত শহীদ নয়তো গাজি এই মন্ত্রে দিক্ষিত হয়ে আমাদের রাস্তায় নামতে হবে।একটা কথা মনে রাখতে হবে তিতুমীর বীরের মতো জীবন দিয়ে গেছেন ঠিকই কিন্তু আজও মানুষ তাকে স্মরন করে বীর হিসেবে। বীরেরা কখনও মরেনা। আর শাহবাগীরা হল মিরজাফরের উত্তরসুরী যাদের রক্তে আছে শুধু বিশ্বাসঘাতকতা প্রতারণা।

বাংলাদেশের প্রতিটি মানুষের মনে গড়ে তুলতে হবে একটা করে বাঁশের কেল্লা। এভাবে সারা দেশে লক্ষ কোটি বাঁশের কেল্লা তৈরী হবে। শত যুলুম করে যে কেল্লাকে কেউ কোনদিন ভাংতে পারবেনা।

বিষয়: বিবিধ

৬১৫১ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File