বাংলাদেশের ভবিষ্যত কোনদিকে?

লিখেছেন লিখেছেন এম এ আলীম ১৭ এপ্রিল, ২০১৩, ০৭:৪৯:২৬ সন্ধ্যা



বাংলাদেশ একটি নাম যার সাথে জড়িয়ে আছে দীর্ঘদিনের সংগ্রাম আর আন্দোলনের ইতিহাস। বঙ্গবন্ধুর ৭ই মার্চ ইতিহাসিক ভাষনের পরই মুলত দেশ ও জাতি জেগে উঠে।তারপর দীর্ঘ নয়মাস বহু রক্তের বিনিময়ে পেলাম আমরা স্বাধীন বাংলাদেশ। স্বাধীনতার পর বহু চড়াই উৎরাই পেরিয়ে মুলত একানব্বই সন থেকে গণতান্ত্রিক সরকারের যাত্রা শুরু হয়। কিন্তু গণতান্ত্রিক সরকার গুলো বার বার জনগনের প্রত্যাশা পুরনে ব্যর্থ হচ্ছে। যে দলই ক্ষমতায় যায় সে যেন হয়ে উঠে আগ্রাসি।দেশ পরিচালনায় ব্যর্থতা, দুর্নিতী ,বৈষম্য তৈরী করন , শোষকের ভুমিকায় অবতীর্ন হওয়ার কারনে জনগন বারবার তাদের পছন্দ পাল্টেছে। কিন্তু আজ অবধি জনগনের প্রত্যাশা পুরণ হয়নি।আজকে ২০১৩ সালে এসে ক্ষমতাসীনদের এমন ভুমিকা দেখা যাচ্ছে দেশ আজ ভয়াবহ গৃহযুদ্ধের দিকে ধাবিত হচ্ছে। কিন্তু কেন এটা কি পরিকল্পিত?এক এক করে বিডিয়ার, সেনাবাহিনী,পুলিশ,সর্বশেষ আদালতকে বিতর্কিত করে কারা ফায়দা লুটতে চায় জনগন এর সামনে তা আজ পরিস্কার হওয়া দরকার।

বিএনপি:



৯১ এর গনতান্ত্রিক সরকারের প্রথম মন্ত্রিসভা গঠন করে বিএনপি।চতুর্থ অবস্থানে থাকা জামায়াতকে সাথে নিয়ে তারা সরকারও গঠন করে। সব কিছুই ঠিকঠাক চলছিল কিন্তু বাধ সাধে তত্বাবধায়ক ইস্যু। জামায়াত বিএনপি থেকে বেরিয়ে আওয়ামীলীগ এর সাথে জোটবদ্ধ আন্দোলন শুরু করে।এক সময় বিএনপি বাধ্য হয় তত্বাবধায়ক সরকারের দাবি মেনে নিতে। ২০০১ এ এসে বিএনপি জামায়াতকে সাথে নিয়ে আবার সরকার গঠন করে এবং বিপুল সংখক আসন নিয়ে সংসদে যায় । এবার শুরু হয় বহি:শক্তির ষড়যন্ত্র। আর এতে ব্যবহার করা হয় আওয়ামীলীগকে। বিএনপির অনেক নেতা দুর্নিতীতে জড়িত ছিলেন সেটা তাদের জন্য কাল হয়ে দাঁড়ায়। এটাকে ফুলিয়ে ফাঁপিয়ে প্রচার করতে থাকে বেশিরভাগ মিডিয়া। এতে আওয়ামীলীগ বিরাট সফলতা পায় । সর্বশেষ তত্বাবধায়ক নিয়ে ফের শুরু হয় বিতর্ক।বিএনপি ক্ষমতা নির্দিষ্ট সময়ে হস্তান্তর করলেও সেনাবাহিনী ক্ষমতা কুক্ষিগত করে। দুই বছর পর দেশ পরিচালনায় ব্যর্থ সেনা শাসকরা নিজেদের বাঁচানোর জন্য প্রহসনের নির্বাচনে আওয়ামীলীগকে ক্ষমতায় নিয়ে আসে। সেনা শাসনের সময় বিএনপির মাঝে যে ভাঙন চলছিল তা এখনও বিদ্যমান। বিএনপির অনেক নেতা বর্তমানে জেলে দিনাতিপাত করছেন। অর্থাৎ সেনা শাসকদের সে ধারাবাহিকতা আওয়ামী সরকারও বজায়ে রেখেছে।আজকের বিএনপির অবস্থা আলোচনা করলে দু:খ লাগে। এমন একটি বৃহৎ রাজনৈতিক দল ধ্বংসের দিকে ধাবিত হচ্ছে। শুধুমাত্র নোংরা রাজনীতির কারনে।আগামী কত বছর বিএনপি রাজনৈতিক ময়দানে থাকতে পারে বা নিজেদের রাখতে পারে তা দেখার বিষয়।

আওয়ামী লীগ:



বাংলাদেশের সবচাইতে পুরানো রাজনৈতিক দল। কিন্তু স্বাধীনতার পর মাত্র দুইবার তারা ক্ষমতায় আসতে পেরেছে। মানুষ কেন তাদের পছন্দ করেনা সেটার ইতিহাস টানলামনা।কিন্তু অনেকেই আবার পছন্দ করে ভোটও দেয়।রাজনিতীর যত নোংরা খেলা আছে তার সবগুলিই এই দল খেলে অভ্যস্ত। যা ইতিমধ্যে তাদেরিই দলের কয়েকজন নেতা ভিডিওটেপে স্বীকার করেছেন।লগী বৈঠার রাজনীতির সুচনা করে এই আওয়ামীলীগ। প্রথম দফা ক্ষমতায় থাকা কালীন তাদের মুখোশ পুরোটা খোলেনি। কিন্তু দ্বীতীয় মেয়াদে ক্ষমতায় এসে তারা তাদের স্বরুপ ধারন করেছে।হেন কোন জঘন্য কাজ নেই তারা করেনি। এই সবের ফিরিস্তি দিতে গেলে লম্বা লিষ্টই হবে শুধু।আর তাদের হাতে রাজনৈতিক দল থেকে শুরু করে দেশের সাধারন মানুষ প্রতিনিয়ত অত্যাচারের স্বীকার হচ্ছে।যুদ্ধাপরাধ ইস্যু নিয়ে অতি রাজনীতি করন তাদের বিতর্কে ফেলেছে।এখন পরিস্থিতি এমন হয়েছে আওয়ামীলীগ এখন শহর কেন্দ্রিক দল হয়ে গেছে। কারন গ্রামের সাধারন মানুষ এতটাই ক্ষিপ্ত যে তারা আওয়ামীলীগের নামও শুনতে পারেনা। এটার কারন পরে বলছি।

জামায়াতে ইসলাম এবং ছাত্রশিবির:



বাংলাদেশে এখন এই দলটাই মনে হয় সবচাইতে আলোচনার বিষয়বস্তু।মানুষের মুখে মুখে,ব্লগে ফেসবুকে,টিভির টকশোতে সব জায়গায় একটাই আলোচনা। কিন্তু কেন ?এর কারন আছে অনেকগুলো। তার মধ্যে সবার আগে প্রাধান্য পাবে যুদ্ধাপরাধী ইস্যু।অনেকে ভাবতে পারেন যুদ্ধাপরাধী ইস্যু জামায়াতকে ধংস করে দিবে কিন্তু হিতে বিপরীত হয়ে গেল। সরকার নিজেই এটাকে বিতর্কিত করে ফেলেছে।যার কারনে জামায়াত এখন ঘৃণার বদলে মানুষের সহানুভুতি পাচ্ছে।আর আওয়ামীলীগ ভেবেছিল সাধারন মানুষই সরকারের পাশে এসে দাঁড়াবে কিন্তু উল্টো মানুষ সরকারের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়িয়েছে।এর সবচাইতে বড় কারন জামায়াত মানুষকে বুঝাতে সক্ষম হয়েছে সরকার প্রহসনের ট্রাইবুনাল গঠন করে জামায়াত নেতাদের ফাঁসি দিচ্ছে। এখন যদি তাদের ফাঁসি ও হয়ে যায় তাহলে এর মাসুল আওয়ামীলীগকে প্রজন্ম থেকে প্রজন্ম দিতে হবে।সেটা হয়তো আওয়ামীলীগ এখন ভাবছেনা কিন্তু সময় যখন আসবে তখন ভাবার অবকাশ পাবেনা।



বিগত বছর গুলোতে এবং বেশ কয়েকমাস ধরে যে অত্যাচার জামায়াত শিবির সহ্য করছে তাতে অনেকেই বিস্মিত হয়ে গেছেন। এরপর ও তারা রাজপথে সংগ্রাম অব্যহত রেখেছে এটা আওয়ামীলীগকে ভাবিয়ে তুলেছে।দিন যত যাচ্ছে মানুষের ভালবাসা জামায়াত শিবিরের প্রতি চলে যাচ্ছে।পরিস্থিতি এমন হয়ে গেছে যে দেশের বিভিন্ন জেলায় সরকারের নিয়ন্ত্রনের বাইরে চলে গেছে।আওয়ামী লীগ মুখে যতই বলুক জামায়াত শিবির নিষিদ্ধ করে দিবে কিন্তু বাস্তবিক পক্ষে তা সম্ভব নয় আর যদি সংখ্যাগরিষ্ঠতার কারনে করেও দেয় তাতে ভয়ংকর বিপদে পড়বে খোদ আওয়ামীলীগই।



সমস্ত মিডিয়াযন্ত্র সরকার নিজের পক্ষে ব্যবহার করেও সামান্য কয়েকটা মিডিয়ার কাছে আওয়ামীলীগ পরাস্ত হয়ে গেছে। আমার দেশের সম্পাদককে গ্রেফতার করেই ক্ষান্ত হয়নি আমার দেশ পত্রিকা বন্ধ ও করে দিয়েছে।এক ফেসবুক পেজ বাঁশের কেল্লাকে কয়েকবার বন্ধ করে ব্যর্থ হয়েছে।দিগন্ত টিভির খবর দেখতে মানুষের ভিড় বেড়ে যায়। সর্বশেষ শাহবাগ মন্চ তৈরী করে ভেবেছিল অনেক কিছু করে ফেলবে কিন্তু হলো উল্টো নাস্তিকতার মুখোশ খুলে দিয়েছে জামায়াত শিবির এর ব্লগার এবং অনলাইন এক্টিভেষ্টরা।



এতে করে মরার উপরে খাঁড়ার ঘা হয়ে দাঁড়িয়েছে হেফাজতে ইসলাম। এখন শাহবাগকে না পারছে ছাড়তে না পারছে রাখতে।



এর মধ্যে লাকীদের চারিত্রিক বৈশিষ্ট প্রকাশ করে দিয়েছে শাহবাগের উদ্যক্তা প্রথম আলো। মানুষ এখন ঘৃনায় থুতু ফেলছে।জামায়াত ইসলাম এবং ইসলামী ছাত্রশিবির একটা নির্দিষ্ট লক্ষ্য উদ্দেশ্য নিয়ে এগিয়ে যাচ্ছে। রাজনীতির কঠিন পরিস্থিতি মোকাবিলা তাদের জন্য নতুন নয়। এই সময়ে তাদের জন্য সবচাইতে যে প্লাস পয়েন্ট সেটা হলো সরকার বিরোধী আন্দোলন গ্রামে গ্রামে ছড়িয়ে দিতে পেরেছে।এবং মানুষের কাছে ভাল সাড়া ও পাচ্ছে। এখন দেখার বিষয় আগামী দিনগুলোতে এটা কি ফল বয়ে আনে। বাংলাদেশে কারা আগামীদিনের রাজনীতির কান্ডারী হবে সেটাই এখন দেখার বিষয়। বিএনপি আওয়ামী লীগ সবার জন্যই জামায়াত ইসলাম এখন মুল ফ্যক্টর। আমার মতে আলোচনা বা সমঝোতা যাই করুকনা কেন তা জামায়াত ইসলামীরর সাথেই করতে হবে।কারন এমন সংগঠিত কর্মী বাহিনী বাংলাদেশের আর কোন রাজনৈতিক দলের নেই। এখন সময় অপেক্ষার কি হয় দেশে হয়তো সেনা শাষন অথবা গৃহযুদ্ধ কিংবা গণঅভ্যুথ্যান।

বিষয়: বিবিধ

২৫০১ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File