কলঙ্ক মোচনে গলার কাটা ‘কথোপকথন’

লিখেছেন লিখেছেন তুষারের মত ০১ জানুয়ারি, ২০১৩, ০২:৫৬:৫১ রাত

আওয়ামী লীগ সরকারের নির্বাচনী প্রতিশ্রুতির অন্যতম যুদ্ধাপরাধের বিচার। দুই বছরের মাথায় ২০১০ সালে এই বিচারে গঠিত হয় আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল। বিচার ত্বরান্বিতে ২০১২ সালে হয় আরেক ট্রাইব্যুনাল। দুটিতে ইতিমধ্যে চিহ্নিত বেশ কয়েকজনের বিচার প্রক্রিয়াও শেষের পথে। তবে জাতির কলঙ্ক মোচনের এই ট্রাইব্যুনালে শেষ সময়ে গলার কাটা হয়ে দেখা দেয় স্কাইপি কথোপকথন। বছর শেষে এসবের-ই ফিরে দেখার চেষ্টা-

একাত্তরের মানবতাবিরোধী অপরাধ বিচারে গঠিত আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে বিরোধী দল বিএনপি ও জামায়াতের ১৪ জন শীর্ষ নেতার বিচার চলছে। তিন বছরের মাথায় এদের মধ্যে জামায়াতের নায়েবে আমীর মাওলানা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদী এবং আবুল কালাম আযাদ ওরফে বাচ্চু রাজাকারের বিচার কার্যক্রম শেষ হয়েছে। যে কোনো দিন তাদের রায় হতে পারে।

চলতি বছর ট্রাইব্যুনালে আলোচিত ছিল জামায়াতের সাবেক আমীর অধ্যাপক গোলাম আযমের গ্রেপ্তার। এরপর বিচার প্যানেলের এক সদস্যের পদত্যাগ ছাপিয়ে বছরের শেষনাগাদ আলোচনায় উঠে আসে বিচারপতির স্কাইপি সংলাপ। এরই জের ধরে পদত্যাগ এবং তা নিয়ে নানা বিতর্কে আদালতের বাইরেও সরব থেকেছে রাজনীতি।

ট্রাইব্যুনাল সফলভাবে প্রসিকিউশনের অষ্টম সাক্ষী মোস্তফা হাওলাদারের সাক্ষ্যগ্রহণের মধ্যদিয়ে জামায়াতের নায়েবে আমীর মাওলানা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর মামলার কার্যক্রম চলতি বছরে শুরু করে। এরপর তার নির্বাচনী এলাকার সংসদ সদস্য আউয়াল, মূল সাক্ষী, জব্দ তালিকার সাক্ষী এবং তদন্ত কর্মকতার কাছে দেয়া জবানবন্দিকে সাক্ষ্য হিসাবে মোট ৪৪ জনের সাক্ষ্য গ্রহণ করা হয়।

এ মামলার তদন্ত কর্মকর্তা হেলাল উদ্দিনের জবানবন্দিসহ প্রসিকিউশনের সাক্ষীদের জবানবন্দি শেষ হলে আসামিপক্ষের সাক্ষীদের সাক্ষ্য নেওয়া হয়। ট্রাইব্যুনাল সাঈদীর পক্ষে সাক্ষ্য দেয়ার জন্য ২০ জনের নাম গ্রহণ করে। এর মধ্যে গত ৫ নভেম্বর একাত্তরে শহীদ বিশাবালীর ভাই সুখরঞ্জন বালী ট্রাইব্যুনালে সাঈদীরপক্ষে সাক্ষ্য দিতে এসে ট্রাইব্যুনালের গেট ‘অপহৃত’ (আসামিপক্ষের দাবি) হলে তা আলোচিত হয়।

এরপর প্রসিকিউশনের যুক্তি উপস্থাপন শেষ হলে আসামিপক্ষ তাদের যুক্তি উপস্থাপন শেষ করেন। টানা এক মাস যুক্তিতর্ক শেষে গত ৬ ডিসেম্বর মামলার আসল রায়ের জন্য সিএভি- তে (যে কোনো সময় দেওয়া হবে) মর্মে রেখে দেয়া হয়।

এ মামলা রায়ের অপেক্ষায় থাকাকালীন ঘটে লঙ্কাকাণ্ড। গত ৬ ডিসেম্বর বিদেশী পত্রিকা ‘দ্য ইকোনোমিস্ট’ বিচারপতি নিজামুল হকের স্কাইপি সংলাপ প্রকাশ করতে চাওয়ায় এ পত্রিকার বিরুদ্ধে রুল জারি করে ট্রাইব্যুনাল।

এরপর দৈনিক ‘আমার দেশ’ পত্রিকা ধারাবাহিকভাবে স্কাইপি সংলাপ প্রকাশ করা শুরু করে। এরই জের ধরে বিচারপতি নিজামুল হক গত ১১ ডিসেম্বর পদত্যাগ করেন। এরআগে গত ২৮ আগস্ট ট্রাইব্যুনাল-১ এর বিচারক এ কে এম জহির আহমদ পদত্যাগ করেন।

অনেক জল্পনা কল্পনার অবসান ঘটিয়ে এ বছরের শুরুতে গত ৯ জানুয়ারি জামায়াতের সাবেক আমীর অধ্যাপক গোলাম আযমের বিরুদ্ধে দেয়া প্রসিকিউশনের অভিযোগ আমলে নিয়ে ট্রাইব্যুনাল তাকে ১১ জানুয়ারি আদালতে হাজিরের নির্দেশ দেন। আদালতের নির্দেশ মোতাবেক ওইদিন গোলাম আযম ট্রাইব্যুনালে হাজির হলে তাকে গ্রেপ্তার করে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেয়া হয়। এখন পর্যন্ত এ মামলায় প্রসিকিউশনের সাক্ষ্যগ্রহণ শেষ হয়ে সাফাই সাক্ষ্য শুরু হয়েছে।

অন্যদিকে ট্রাইব্যুনাল-২ এ বিচারাধীন জামায়াতের সাবেক নেতা আবুল কালাম আযাদের বিচার কার্যক্রম শেষ হয়েছে। এ মামলাটির রায়ের জন্য যে কোনো দিন ধার্য রয়েছে। যদিও আসামি আবুল কালাম আযাদ মামলার শুরু থেকে পলাতক রয়েছেন।

এছাড়া জামায়াত নেতা আব্দুল কাদের মোল্লার মামলার কার্যক্রম প্রায় শেষের পথে। এ মামলায় প্রসিকিউশন এবং ডিফেন্সের সাক্ষ্য গ্রহণ শেষ হয়েছে। আগামী ৭ জানুয়ারি থেকে আসামিপক্ষের যুক্তি উপস্থাপন শুরুর দিন ধার্য রয়েছে।

বিএনপি নেতা আব্দুল আলীম, জামায়াতে আমীর মাওলানা মতিউর রহমান নিজামী, সেক্রেটারি জেনারেল আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদ, সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মুহাম্মদ কামারুজ্জামানের বিরুদ্ধে প্রসিকিউশনের সাক্ষ্যগ্রহণ চলছে।

অন্যদিকে জামায়াত নেতা এ টি এম আজহারুল ইসলাম, মাওলানা আব্দুস সোবহান ও দিগন্ত মিডিয়ার চেয়ারম্যান মীর কাশেম আলী ট্রাইব্যুনালের নির্দেশে বন্দি রয়েছেন। তাদের বিরুদ্ধে বিচারের আনুষ্ঠানিক কার্যক্রম এখনো শুরু হয়নি।

উল্লেখ্য, মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে গ্রেপ্তার বিএনপি-জামায়াতের নেতাদের মধ্যে সাঈদীর বিচার সবার আগে শুরু হয়। ২০১১ সালে ১৪ জুলাই তার বিরুদ্ধে অভিযোগ আমলে নেয় ট্রাইব্যুনাল।

http://www.real-timenews.com//newsdetail/detail/1/1/56738

বিষয়: বিবিধ

৮৮৬ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File