চলমান সরকার বিরোধী আন্দোলন দমনে আওয়ামী লীগের সম্ভাব্য কর্ম-কৌশল ও সম্ভাব্য প্রতিক্রিয়া

লিখেছেন লিখেছেন মোহাম্মদ মোজাম্মেল হক ০২ এপ্রিল, ২০১৩, ০৮:২৪:৫২ সকাল

মানবতা বিরোধী অপরাধের মামলা শুনানীর এই চূড়ান্ত পর্যায়ে জামায়াতে ইসলামী, বি.এন.পি. ও বেসরকারী মাদ্রাসাভিত্তিক বৃহত্তর ইসলামী শক্তির সমন্বিত আন্দোলন বিশেষ করে জামায়াতে ইসলামী ও এর অংগ সংগঠন ছাত্র শিবিরের দিক থেকে ব্যাপকতর ও সহিংস হয়ে উঠেছে। পুলিশ হত্যার মতো ঘটনা এ দেশে আগে ঘটেনি। যে ‘গণহত্যা’র প্রতিক্রিয়ায় এই অসম্ভব ঘটনাও ঘটেছে তা ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের পরে নজিরবিহীন।

জামায়াত এলাই কারাঃ মাঠে জামায়াতের সাথে থাকা দুই প্রধান শক্তিকে ময়দান ছাড়া করার মাধ্যমে এই চলমান সরকার বিরোধী আন্দোলন দমনে আওয়ামী লীগ একটি কার্যকর কর্ম-কৌশল গ্রহন করতে পারে। বলা বাহুল্য জামায়াতের এই চরম দূর্দিনে তাঁদের পাশে থাকা শক্তিবলয় দুটি হচ্ছে বাংলাদেশের সম্ভাব্য পরবর্তী সরকার গঠনকারী প্রধান বিরোধী দল বি.এন.পি. ও ক্বওমী ধারার তথা বেসরকারী মাদ্রাসাভিত্তিক জামায়াত-বিরোধী অরাজনৈতিক সংগঠন ‘হেফাজতে ইসলাম’।

ঢাকা ঘেরাও/সমাবেশঃ হেফাজতে ইসলাম ঘোষিত আগামী ৬ এপ্রিলের ঢাকা ঘেরাও কর্মসূচীতে আইন-শৃংখলা বজায় রাখার শর্তে বাধা না দেয়ার ঘোষণা দেয়ার মাধ্যমে তাঁদেরকে মাঠ-ছাড়া করার কৌশল ইতোমধ্যেই সরকারের তরফ হতে গৃহীত হয়েছে। ডিসি, এসপি ও মন্ত্রীরা হাটহাজারী মাদ্রাসায় গিয়ে আন্দোলনকারীদের বুঝানোর চেষ্টা, ইসলামবিরোধী লেখকদের বিচারের জন্য ট্রাইবুন্যাল গঠনের ঘোষণা ইত্যাদি এই কৌশলেরই অংশ। ধারনা করছি, আগামী ৬ এপ্রিল ঢাকায় এ যাবতকালের বৃহত্তম সমাবেশ অনুষ্ঠিত হবে।

চরমোনাইয়ের শাপলা চত্বর সমাবেশ প্রথম আলো’র ‘এমন বাংলাদেশ কেউ দেখেনি’ টাইপের শাহবাগ সমাবেশকে অলরেডি ওভারশ্যাডোড করেছে। হেফাজতে ইসলামীর সমাবেশের কারনে ‘মুক্তমনা’ প্রগতিশীলদের নেতৃত্বে গত দেড়যুগ হতে গড়ে উঠা প্রযুক্তি-তারুণ্য প্রবলভাবে ধাক্কা খাবে। মাদ্রাসাওয়ালাদের প্রতিরোধ না করার পলিসি তাঁদেরকে ক্রমান্বয়ে ঘরে ফেরানোর কার্যকর প্রক্রিয়া। বিভিন্ন শাহবাগী স্কোয়াডের জন্য নিতান্তই স্বপ্ন-ভঙ্গের কারন হলেও জামায়াত-বিএনপি’র বাহিরে অ-রাজনৈতিক ইসলামী শক্তিকেন্দ্রসমূহের বিরুদ্ধে নতুন কোন ফ্রন্ট না খোলার সরকারী ‘সিদ্ধান্ত’ আওয়ামী লীগ ও আম-জনতার দিক থেকে ফলপ্রশু ও প্রশংসনীয় পদক্ষেপ।

বি.এন.পি.-র ব্যাপারে ওয়ার্কপ্ল্যান –

আওয়ামী লীগের এটিচ্যুউডঃ এবার বিএনপিকে নিয়ে সরকার কী করতে পারে – আসুন সেই বিশ্লেষণ করা যাক। বিএনপিকে নিয়ে সরকারের কৌশল ক্রমান্বয়ে আরও সুস্পষ্ট হবে। জামায়াতের মতো বিএনপিকেও সরকার নির্মূল করতে চায় – এটি বলা হবে পরিস্থিতিকে অতি-সরলীভাবে বিশ্লেষণ করা। আমার ধারনায়, সরকার বিএনপিকে চাপে রাখতে ও ভয় দেখাতে চায়। এর মধ্যে সরকারের কোন কোন প্রভাবশালী মন্ত্রীর অ-রাজনৈতিক ও ব্যক্তিগত প্রতিশোধ স্পৃহাও থাকতে পারে। জামায়াতকে আশ্রয় দেয়ার ‘অপরাধে’ বিএনপির উপর সরকারের দমন-নিপীড়ন খালেদা জিয়াকে কারা অন্তরীণ করা পর্যন্ত্যও গড়াতে পারে।

তত্ত্বাবধায়ক ইস্যুতে সংলাপঃ বিএনপিকে আন্দোলন হতে বিযুক্ত করার জন্য আওয়ামী লীগ কথিত আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের চাপ বা উদ্যোগের কারনে বেনামীতে হলেও তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবী মানার দিকে যেতে পারে। শেষ পর্যন্ত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবী নিয়ে যা-ই হোক না কেন, এই দাবীর বিষয়ে কিছুটা নমনীয়তা দেখিয়ে বিএনপিকে আলোচনার টেবিলে আনা মাত্রই জামায়াত ময়দানে একা হয়ে পড়বে। বিএনপিকে ময়দান হতে উইথড্র করার এই পলিসি এমনকি আংশিকও যদি কার্যকর হয়, বিএনপির পক্ষে প্রয়োজনে পূণরায় ময়দানে ফেরত যাওয়া অত্যন্ত কঠিন হয়ে পড়বে। কারন, আন্দোলনমূখী বিএনপি সমর্থক জনগণ ততক্ষণে ‘লড়াকু’ জামায়াতের পাশে ময়দানে সক্রিয় হয়ে উঠবে।

তত্ত্বাবধায়কের দাবী মানার টোপ বিএনপি গিলবে কি-না – এই কঠিন প্রশ্নের একটা সহজ উত্তর হতে পারে যে, খালেদা জিয়া এটি মানবেন না। আওয়ামী লীগ যে তত্ত্বাবধায়কের দাবী মানবে না, সেটিতো অনেক আগেই কোর্টের রায় ও সংবিধান সংশোধন করার ঘটনা হতে পরিষ্কার হয়ে গেছিল। তাহলে, বিএনপি কেন সরকারের শেষ সময়ের জন্য অপেক্ষা করেছে? এর উত্তর একটাই - খালেদা জিয়া ব্যক্তিগতভাবে যত আপোষহীন-ইমেজের হোন না কেন আওয়ামী লীগের মতো শক্তিশালী সরকারের বিরুদ্ধে প্রবল গণআন্দোলন গড়ে তোলার সাংগঠনিক সক্ষমতা এককভাবে বিএনপি’র ছিলনা কিম্বা নাই। জামায়াত-শিবির যত সিরিয়াসলি অস্তিত্বের লড়াই করুক না কেন আনুষ্ঠানিক প্রস্তাব পেলে বিএনপি ‘নিয়মতান্ত্রিক আন্দোলন’ ও ‘কঠোর কর্মসূচী’ পালনের পাশাপাশি সংলাপেও অংশগ্রহন করবে। আমি আপনাদের বাজী ধরে এ কথা বলতে পারি।

ময়দানে এলাই বিহীন জামায়াত কী করতে পারে? এ ধরনের সম্ভাব্য পরিস্থিতিতে জামায়াতের দিক হতে এক নজিরবিহীন পরিস্থিতির সৃষ্টি হবে। হতে পারে, জামায়াত সাংগঠনিকভাবে নিশ্চিহ্ন হয়ে যাবে। জামায়াতের লোকজন সমমনা রাজনৈতিক-অরাজনৈতিক দলসমূহের আশ্রয় গ্রহন করে সেগুলোর জামায়াতীকরণ ঘটাবে। হতে পারে, জামায়াত একা হলেও টিকে যাবে। অথবা অন্যরা ময়দানে টিকে থাকার জন্য সরকারের পরিবর্তে জামায়াতের সাথে থাকাকেই প্রেফার করবে।

ইতিহাসের রায় ও জামায়াতের পূণঃজন্ম দেখার অপেক্ষা !? সর্বাত্মক রাষ্ট্রীয় দমনের মুখে জামায়াত যদি নিজের মেজর সেটআপগুলোর অস্তিত্ব-কাঠামো টিকিয়ে রাখতে পারে তাহলে এ দেশে ১৯৭১ সালে পরাজিত এই শক্তি চল্লিশ বছর পরে আরও অন্ততঃ চল্লিশ বছরের জন্য নবজন্ম লাভ করবে।

যদি এমনটিই ঘটে, তখন জামায়াত তাঁদের বিতর্কিত এই নেতৃত্ব, দল ও পরিচিতিকে হাইলাইট করবে, না যুদ্ধ পরবর্তী সময়ে ব্যবহ্রত অস্ত্র-সরঞ্জাম ত্যাগের মতো সংগঠনের পুরনো ছাঁচকে ইতিহাসের জাদুঘরের রেখে সময়, মাটি ও মানুষের ভয়েসকে বিবেচনায় নিয়ে, অগ্রাধিকার দিয়ে নতুনভাবে কাজ করবে – তা দেখার বিষয়। ইতিহাসের এই রায় জানতে হলে আমাদের অপেক্ষা করতে হবে আরও কমপক্ষে ছয়মাস।

বিষয়: বিবিধ

১৭২২ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File