বাংলাদেশে রাজনীতির হাল-চাল: সংঘাত নিরসনের উপায়
লিখেছেন লিখেছেন মোহাম্মদ মোজাম্মেল হক ১১ সেপ্টেম্বর, ২০১৪, ১১:০৯:২৪ রাত
বাংলাদেশে রাজনৈতিক, সামাজিক ও ধর্মীয় দিক থেকে শক্তিশালী পক্ষ হলো চারটি। ১. মধ্য-ডানপন্থী (centre-rightist) যেমন BNP, ২. মধ্য-বামপন্থী (centre-leftist) যেমন আওয়ামী লীগ, ৩. চরম ডানপন্থী (far-rightist) যেমন জামাত ও তদনুরূপ মৌলবাদি দল ও গ্রুপগুলো এবং ৪. চরম বামপন্থী (far-leftist) যেমন কম্যুনিষ্ট ঘরানার দল ও গ্রুপগুলো। ফার-লেফটিস্টদের তুলনায় আওয়ামী লীগ হলো একটা ডানপন্থী দল। জামাতের তুলনায় বিএনপি একটা বামপন্থী তথা 'প্রগতিশীল' দল। আওয়ামী লীগ ও বিএনপি উভয়েই পেটি-বুর্জোয়া দল। এই দল দুটি মূলত Power politics ই করে।
ইন্টারেষ্টিং বিষয় হলো ভারসাম্যপূর্ণ রাজনীতি ও উন্নয়নের দিক থেকে দেখলে এ কথা নি:সন্দেহে বলা যায় যে, আওয়ামী লীগ ও বিএনপি মধ্যে রাষ্ট্রক্ষমতা অদল-বদল হয়ে থাকাটাই দেশের জন্য জন্য ভালো! ফার-লেফটিষ্টদেরকে বা ফার-রাইটিষ্টদেরকে সারভাইব করতে দিতে হবে। চরম-ডানরা অস্তিত্বের সংকটে ভুগলে কাছাকাছি থাকা মধ্য-ডান শক্তি extremised হবে। তেমনি করে 'নাস্তিক'(?) বামদেরকে উৎখাত করার ফলশ্রুতি হবে মডারেট বাম যেমন আওয়ামী লীগকে চরম-বামপন্থীদের infiltration- শিকারে পরিণত করা। যেমনটি এখন হচ্ছে।
খেয়াল করুন, যেসব বামনেতা বর্তমান সরকারের সাথে ক্ষমতায় আছে তাদেরক যতই আপনি বা তাদের পার্টির তরফ হতে deviant বলা হোক না কেন, এটি অনিবার্য ছিলো। চরম ডানেরা বামদেরকে 'নাস্তিক' হিসাবে চিহ্নিত করে সামাজিকভাবে কোণঠাসা অবস্থায় রেখেছে। এখন আওয়ামী লীগাররা যদি জামাতকে 'নির্মূল' করতে চায় তাহলে তার পরিণতি হলো moderate বিএনপি'র অবধারিত radicalization. আমার কথাগুলো আপনাদের কাছে উল্টাপাল্টা শোনালেও এসব 'দুয়ে দুয়ে চার'-এর মতো নির্ঘাত সত্য!
মতাদর্শিক দিক থেকে ক্ষমতাবিন্যাসের এই ছকের আলোকে বর্তমান ও অতীতের ঘটনাপ্রবাহকে বিবেচনা করুন। দেখবেন, কেনো বাম সুশীল প্রথম আলো গোষ্ঠী আওয়ামী লীগকে ঘায়েল করার চেষ্টা করে ও করছে, বা জামাত ও বিএনপির 'অরিজিনাল লোকেরা' কেন পরষ্পরকে সুযোগ পেলেই একহাত নিয়ে ছাড়ে তা আপনার কাছে পরিষ্কার হবে। এই বিবেচনায় জামায়াত ও বিএনপি পরষ্পরের মূল শত্রু। বাম ও আওয়ামী লীগ শক্তি পরষ্পরের বেশি শত্রু, যতটা নয় বিএনপি বা জামাত! ক্ষমতার রাজনীতি করা কাছাকাছি বড় দলের পক্ষপুটে আশ্রয় নেয়ার কারণে বামধারাগুলো কিংবা জামাত এককভাবে ক্ষমতায় আসতে অতীতেও পারে নাই, ভবিষ্যতেও পারবে না। দৈববাণী জানার কোনো ক্ষমতা ছাড়াই এটি নিশ্চিত করে বলা যায়।
মডারেটরাই দেশ চালাবে। যারা এক্সট্রিম পজিশন নেবে তারা স্বাভাবিকভাবে ক্ষমতায় যেতে পারবে না। সেক্ষেত্রে তাদেরকে দেশ-বিক্রীর মতো নতজানু দেশীয় ও আন্তর্জাতিক শক্তির ক্রীড়নক হয়ে থাকতে হবে। যেমনটা বর্তমানে হচ্ছে। এবং বর্তমান আওয়ামী লীগ এই অবস্থা হতে বের হয়ে আসতে চাচ্ছে। যদিও তাদের অবস্থা 'বাঘের পিঠের সওয়ারী'র মতো হয়ে দাড়িয়েছে। অতএব, ক্ষমতায় আসার গঠনমূলক পন্থাই স্বীয় দল ও দেশের জন্য সত্যিকারের কল্যাণকর। এক্সট্রিমদেরকে সারভাইব করতে দেয়া কিংবা সামাজিক ও জাতীয় নীতিতে এক্সট্রিম আইডিওলজিষ্টরা স্বত:প্রণোদিত হয়েই যদি মডারেট ভূমিকা নেয়, সেটি ভালো।
এতদপ্রেক্ষিতে বলা যায়, জামাত নির্মূলের বর্তমান দৌড়ঝাপ মোটেও ঠিক হচ্ছে না। কথায় বলে, বেধে পিটালে বিড়ালও বাঘ হয়ে যায়। আদর্শিকভাবে মোকাবিলাই উত্তমপন্থা। ফিজিক্যালি এলিমিনেট করতে চাইলে বা জোর করে একপ্রকারে করলেও ছাইভষ্ম থেকে জেগে ওঠা ফিনিক্সের মতো ফাঁকা হয়ে যাওয়া গ্যাপকে পূরণ করার জন্য নতুন ফিজিক্যাল ফোর্স গড়ে ওঠবে। যে কারনে দেখা যায় 'পুঁচকে' জামাত নেতারাই 'ফাইট' দিচ্ছে। এতবড় পশ্চিম তীরের রাস্তায় রাস্তায় ইজরাইলি বাহিনী টহল দিলেও 'পুঁচকে' গাজায় তারা ঢুকতেও পারছে না। ব্যাপার হলো, বাহিরে বিশেষকরে রাজনৈতিক ময়দানে আমরা যেসব নানামুখী শক্তির খেলা দেখছি তা সবই সমাজের গভীর থেকে ওঠে আসা। এক এক শক্তির এক একটা বিশেষ দূর্বলতাই অপর শক্তির পুঁজি। যেমন, জামাত তথা ইসলামী শক্তির যুক্তিবাদ বিরাধিতা ও সাংস্কৃতিক দীনতাই চরম-বামদের তাত্ত্বিক পুঁজি। এই দৃষ্টিতে দেখলে আপনি বুঝবেন কেন বড় বড় আলেম পরিবার হতে নামকরা 'নাস্তিক'রা ওঠ এসেছে।
অতএব, 'অপর'কে কারা জায়গা দিতে পেরেছে সেটির ওপরই নির্ভর করছে সংশ্লিষ্ট পক্ষের ইতিবাচকভাবে (sustainably) ক্ষমতায় থাকা বা ক্ষমতাশালী হওয়ার মৌলসূত্র (basic formula)। এটি হলো inclusive হওয়ার সঠিক তাৎপর্য। দেখা যায়, কিছু শক্তি বিরোধিতা করার ব্যাপারে যতটা পারঙ্গম গড়ে তোলার ব্যাপারে ততটাই দূর্বল। কম্যুনিষ্ট অথবা ইসলামিস্ট উভয় প্রান্তিক শক্তি এই দিক থেকে দৃশ্যত: একই মনে হয়। দেশের শতকরা ৪৫ ভাগ, ৩৫ ভাগ, ২৫ ভাগ, ১৫ ভাগ জনগণতো বটেই, এমনকি শতকরা ২, ৪ বা ৫ ভাগ ভিন্নমতাবলম্বী জনগোষ্ঠীকেও স্বীয় পরিমণ্ডলে বাঁচতে, থাকতে দিতে হবে। ছোট-বড় সবাইকে জাতীয় জীবনে অবদান রাখার সুযোগ দিতে হতে। Pluralismএর এটি সারকথা। Pluralism যে কোনো ধরনের extrimismকে নিগেইট করে। 'অপর-পক্ষ'কে মন থেকে গ্রহন করতে হবে। যেমন করে বড় ভাই-বোনদেরকে ছোট ভাই-বোনদের সাথে সমভাবে সম্পত্তির বন্টনে যেতে হয়। জোর করে 'অপরপক্ষ'কে নিজের মত মানানো বা নির্মূলের চেষ্টা করাটা বোকামী।
বিষয়: বিবিধ
১৪৬৯ বার পঠিত, ১১ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
যেখানে ফার লেফট এবং সেন্টার লেফট এর মুল থিংকট্যাংক ব্রাম্মন্যবাদি মানসিকতায় আক্রান্ত সেখানে কিভাবে শান্তিপুর্ন সহবস্থান সম্ভব?
ইসলামপন্থিদের সমস্যাটা ভিন্ন। সেটা হচ্ছে সাধারন পদ্ধতিগত সমালোচনা সহ্য করতে অনিহা।সেটা তাদের কে অভ্যন্তরিনভাবে দুর্বর করছে।
জিয়াউর রহমান কে দেশের অন্যতম সফল রাষ্ট্রপ্রধান হওয়ার পিছনে অন্যতম কারন বলা হয় তিনি প্রায় সকল বিরোধি দলকে পার্লামেন্ট এ আসার সুযোগ দিয়েছিলেন। যার ফলে তাদেরকে আন্দোলনের মাঠ এর পরিবর্তে পার্লামেন্ট এর নিয়মতান্ত্রিকতায় সিমাবদ্ধ করে ফেলেছিলেন। একই উপদেশ আবুল মনসুর আহমদ স্বাধিনতা পরবর্তি আওয়ামিলিগ সরকার কেও দিয়েছিলেন্। কিন্তু তা গ্রহন না করার পরিনিতি সবার জানা।
এখন বর্তমানে যে অবস্থা তাতে আমরা কতটুক ধৈর্য ও সহনশিলতা আশা করতে পারি?
জ্বি, ঠিক বলেছেন। আমার কেন জানি মনে হচ্ছে, মোজাম্মেল ভাই এখানে যা দিয়েছেন, তা তাঁর নিজস্ব বোধ, বিশ্বাস এবং দীর্ঘদিনের সযত্নে লালিত চিন্তাধারা থেকে সরে এসে কিছু গোঁজামিল জাতীয় কথা দিয়ে রচনা করেছেন। তাই, কষ্ট হচ্ছে। প্রকারান্তে তিনি সাজেশানটা দিলেন যে, জামায়াত (উনি কিন্তু লিখেছেন ওদের কায়দায় জামাত)যেন তার নীতি ও আদর্শকে জলাঞ্জলি দিয়ে সুবিধাবাদী রাজনীতির অনূসরণ করে, তাহলে নাকি দেশে শান্তি আসবে।
ইসলাম এবং Pluralism এর পারস্পরিক সম্পর্ক ও Pluralismকে ইসলামী সমাজ/রাষ্ট্রের আত্তীকরণের সক্ষমতার বিষয়টি উপেক্ষিত হয়েছে মনে হয়!
আপনি বলেছেন-
জামাত(জামায়াত?) তথা ইসলামী শক্তির যুক্তিবাদ বিরোধিতা ও সাংস্কৃতিক দীনতাই চরম-বামদের তাত্ত্বিক পুঁজি।
"সাংস্কৃতিক দীনতা" বুঝলাম, কিন্তু
"যুক্তিবাদ বিরোধিতা" বুঝলাম না
কিছু শক্তি বিরোধিতা করার ব্যাপারে যতটা পারঙ্গম গড়ে তোলার ব্যাপারে ততটাই দূর্বল। কম্যুনিষ্ট অথবা ইসলামিস্ট উভয় প্রান্তিক শক্তি এই দিক থেকে দৃশ্যত: একই মনে হয়।
স হ ম ত
**এটা আপনার দৃষ্টি এড়িয়ে যাবার কথা নয় যে, বাংলাদেশের মিডিয়াজগতে "জামাত" এবং "জামায়াত" - এ বানান-পার্থক্য গভীর তাতপর্য ও সাংস্কৃতিক পরিচিতি বহন করে
তাছাড়া ইসলামী শব্দ হওয়ার কারণে বিশুদ্ধতার দাবী তো আছেই!
আপনি বলেছেন,".....এ কথা নিঃসন্দেহে বলা যায় যে, বাল ও বিএনপির মধ্যে রাষ্ট্রক্ষমতা অদল-বদল হয়ে থাকাটাই দেশের জন্য ভালো। চরম বাম বা চরম ডানদেরকে সারভাইব করতে দিতে হবে।" অন্যত্র বলেছেন, "প্রান্তিক আদর্শবাদীরা স্বতঃপ্রণোদিত হয়েই মডারেট ভূমিকা নিলে তা (সবার জন্য) ভালো।"
আমার প্রথম কথা হলো, জামায়াতকে চরম বামদের সাথে একই সূরে চরম ডানপন্থী চিহ্নিত করা আপনার বড় মাপের ভূল হয়েছে। চরম বামরা 'নির্মূল কমিটি' গঠন করে আর দেয়ালে দেয়ালে 'একটা দুইটা শিবির ধর, সকাল বিকার নাস্তা কর'টাইপ শ্লোগান লিখে তাদের চরমপন্থার পরিচয় দিতে পারে, কিন্তু জামায়াত-শিবির সেটা তো আগেও কখনো করেনি, এবং বামদের এহেন চরম বিকৃত মানসিকতার বহিঃপ্রকাশের পরেও কি কখনো এমন ধরনের পাল্টা শ্লোগান কোথাও লিখেছে বলে বা ঐ ধরণের চরম ফ্যাসিস্ট একটি সাব-দল গঠন করেছে বলে কি দেখাতে পারবেন? আর আপনার প্রথম কোটকৃত উক্তি তো স্পষ্টভাবেই ইঙ্গিত দিচ্ছে যে আপনি আর ইসলামী বিপ্লবে কিংবা ইসলামী রাষ্ট্রব্যবস্থায় আস্থা রাখেন না। সে বাক্যটিতে'নিঃসন্দেহ' বিশেষণটা ব্যবহার করাটাই তার প্রকৃষ্ট উদাহরণ।
একস্থানে লিখেছেন 'নাস্তিক (?) বামদেরকে উৎখাত করার ফলশ্রুতি হবে মডারেট বাম যেমন বাল-কে চরম বামপন্থীদের ইনফিল্ট্রিশনের শিকারে পরিণত করা। এখানেও দু'টি ভূল কথা আপনি বলেছেন। নাস্তিক শব্দের পরে প্রশ্নবোধক চিহ্নটি দিয়ে কি আপনি বোঝাতে চেয়েছেন যে তাদের নাস্তিক হবার ব্যাপারটি মিমাংসিত নয়? তাহলে কম্যুনিস্ট এর কি কোন নূতন সংঘা আপনার অভিধানে রয়েছে? আর বামদেরকে উৎখাত কারা করতে চেয়েছিল যার ফলে তারা আওয়ামীতে ঢুকতে বাধ্য হয়েছে? বিএনপি-র আমলে কি তা হয়েছিল?একটি ঘটনা এখনো স্পষ্ট মনে আছে, শাহরিয়ার কবিরের মতো দেশদ্রোহী ব্যক্তিকে পর্যন্ত দেশদ্রোহিতার অভিযোগে গ্রেফতারের পরেও তাকে ঐ সরকার বেশীদিন জেলে রাখতে পারেনি। তাহলে আপনার যুক্তি এখানে ধোপে টেকেনা। চরম বামদের আওয়ামীরা কেন তাদের সরকারের স্বাদ দিতেছে তার কারণ অন্যত্র নিহিত।
আরো একটি ভিত্তিহীন কথা বলেছেন -"চরম ডানেরা বামদেরকে 'নাস্তিক' হিসাবে চিহ্নিত করে সামাজিকভাবে কোনঠাসা অবস্থায় রেখেছে। এখন আওয়ামী লীগ যদি জামাতকে 'নির্মূল' করতে চায় তাহলে তার পরিণতি হলো মডারেট বিএনপি-র অবধারিত রেডিকালাইজেশন। আপনার এসব কথা নিশ্চিতভাবেই উল্টাপাল্টা কথা এবং কখনোই তা দুয়ে দুয়ে চার এরম মতো সত্য নয়। নাস্তিকরা তো তাদের প্রচারপত্র, নাটক-সাহিত্য এবং সভা সমিতিতে ঘোষনা দিয়েই তাদের নাস্তিক হবার প্রবল প্রচারণা চালায়। এখানে ডানদের তাদের নাস্তিক চিহ্নিত করার কথা বলা আবোল তাবোল নয়তো কি? আর ৯০ ভাগ মুসলিমের দেশে যদি কেউ বলে বেড়ায় আমি নাস্তিক, আমি আল্লাহ খোদা মানিনা, যা করি নিজের শক্তিতে করি, সেখানে তাদেরকে সামাজিকভাবে বয়কটা করতে কি কোন দলের আহবানের প্রয়োজন হয়? আর জামাত নির্মূল করতে যেয়ে বিএনপি কবে রেডিক্যালাইজ হলো? এমন চরম অসত্য কথাটি কিভাবে উচ্চারণ করতে পারলেন? বিএনপি কে তো এখন আন্দোলনে, রাস্তায় খুঁজে পাওয়াই দায়। এমন চরম বাস্তব অবস্থার বিপরীত এমন একটা কথা বললেন, বলতে বাধ্য হচ্ছি, কথাটা 'আওয়ামী মিথ্যার' মতোই শোনালো।
এ মূহুর্তে এ পর্যন্তই। আপনার লিখার আরো কিছু পয়েন্ট নিয়ে পরবর্তীতে আলোচনার ইচ্ছে রইল। ধন্যবাদ
একস্থানে বলেছেন, ".....ক্ষমতার রাজনীতি করা কাছাকাছি বড় দলের পক্ষপুটে আশ্রয় নেয়ার কারণে বামধারাগুলো কিংবা জামাত এককভাবে ক্ষমতায় আসতে অতীতেও পারে নাই, ভবিষ্যতেও পারবেনা.......এটি নিশ্চিত করে বলা যায়।" বড় ভাই, আপনি মনে হয় ভূলেই গেছেন যে জামায়াতে ইসলামী ক্ষমতার রাজনীতি করেনা কখনোই। তার নিজস্ব রাজনৈতিক পলিসি রয়েছে, যেটা হলো, "আল্লাহর জমিনে আল্লাহর আইন প্রতিষ্ঠার সংগ্রাম করে যাওয়া।" এটা করতে গিয়ে সে শেষ হয়ে যাবে, নিশ্চিহ্ন হয়ে যাবে, তবু তার এই আদর্শ থেকে সরে আসবেনা। অনেক নবী রাসূল ও পারেন নি তাদের আদর্শকে নিজ ক্ষেত্রে সম্পূর্ণ প্রতিষ্ঠা করে যেতে। কিন্তু তারপরেও আল্লাহর দৃষ্টিতে তাঁরা কেউই অসফল নন। তো, যেখানে জামায়াত ক্ষমতার রাজনীতি করেনা, সেখানে বাম ঘরানার রাজনীতির সাথে জামায়াতকে জড়িয়ে আপনার সেই উক্তিটা কতটুকু হাস্যকর তা একটু ঠান্ডা মাথায় চিন্তা করে দেখার অনুরোধ করছি।
অন্যখানে জামায়তকে 'যুক্তিবাদ বিরোধিতা'র ট্যাগ লাগিয়ে আপনি কি বোঝাতে চেয়েছেন তার মাথামুন্ডু কিছুই বুঝতে পারলামনা।
লিখেছেন, "কিছু শক্তি বিরোধিতা করার ব্যাপারে যতটা পারঙ্গম গড়ে তোলার ব্যাপারে ততটাই দূর্বল। কম্যুনিস্ট বা ইসলামিস্ট উভয় প্রান্তিক শক্তি একই দিক থেকে দৃশ্যতঃ একই মনে হয়।" আপনার নিকট তা মনে হতে পারে, কারণ দৃশ্যতঃ আপনি এখন জামায়াতের আদর্শের রাজনীতির বদলে ক্ষমতার রাজনীতির প্রতিই বেশী ডেডিকেটেড বা অাস্থাশীল হতে চান। কিন্তু আমার নিকট তা মনে হয় না। বামরা ভাঙতেই পারে গড়তে পারেনা। তবে ডানরা গড়তে না পারলেও কখনোই ভাঙ্গার রাজনীতি করেনা। একস্থানে লিখেছেন, 'পুঁচকে জামাত নেতারাই ফাইট দিচ্ছে।' আপনার ইতোপূর্বেকার বক্তব্যের অন্তর্নিহিত তাৎপর্য্য কিন্তু এই পুচকে নেতাদের ফাইট দেয়ার মাঝেই নিহিত। কারো পিঠ যখন দেয়ালে ঠেকে যায়, তখন তাকে অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখার জন্য সর্বশক্তি নিয়োগ করতে হয়। নিকট অতীতের হরতালে রাস্তাঘাটে কিছু কিছু দোকানপাট ভাংচুরে জামায়াত শিবিরেরও হাত আছে, তাই এটা অস্বীকার করছিনা। কিন্তু এটাকে কিছুতেই স্বাভাবিক অবস্থার সাথে গুলিয়ে ফেলা যাবেনা। এখানেও দুটো জিনিষ আপনাকে স্পষ্ট করে বুঝে নিতে হবে, যদি চান যে আপনার ইসলামিক আইডেন্টিটিতে কোন দাগ না লাগে। প্রথমতঃ বামরা বা আওয়ামীরা যেসব ভাঙচুর করে তা তারা তাদের নেতাদের আদেশ কিংবা আশীর্বাদ নিয়েই করে, কিন্তু জামায়াতের মধ্যে এই ফ্যাসিজম আগেও ছিল না এখনো নেই। দ্বিতিয়তঃ শিবেরের মধ্যে এগুলো যারা করে, তারা নিতান্তই নূতন রিক্রুট করা সমর্থক বা কর্মী, যারা তখনো ইসলামী আদর্শটাকে পুরাপুরি ধারণ করে উঠতে পারেনি। পারাটা অতো তাড়াতাড়ি স্বাভাবিকও নয়। কিন্তু তারপরেও এহতেসাবে তাদের প্রতি এ ধরনের ধ্বংসাত্মক কাজ থেকে বিরত থাকেতে নেতারা উপদেশ দেন, যা বামদের মাঝে নেই।
আশা করি আপনার পরবর্তী প্রতিক্রিয়া এ পাতায় দেখতে পাবো। সালামান্তে,আপনারই..
মন্তব্য করতে লগইন করুন