একবিংশ শতাব্দীতে ইসলামী আন্দোলনের কাজের ধরনঃ প্রেক্ষিত আজকের বাংলাদেশ
লিখেছেন লিখেছেন মোহাম্মদ মোজাম্মেল হক ২৪ মে, ২০১৩, ১২:২১:৫৩ দুপুর
ভূমিকাঃ
ইসলামী আন্দোলনের নতুন ধারার কাজের ধরন কেমন হবে, অর্থাৎ প্রচলিত বৃহত্তর আন্দোলন জামায়াতে ইসলামী’র সাথে এর সম্পর্ক কেমন হবে, সোজা কথায়, এটি কি জামায়াতের মধ্যকার একটি সংস্কারবাদী আন্দোলন হবে নাকি স্বতন্ত্র একটা নতুন ধারা হবে – তা নিয়ে ব্লগ ও ফেসবুক নির্ভর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে গত বছর তিনেক হতে যে ব্যাপক মত-বিরুদ্ধ-মত গড়ে উঠেছে, তারই প্রেক্ষিতে এই লেখা। এটি ইতিবাচক ধাঁচে ও প্রস্তাবণার আকারে উপস্থাপিত
সোশ্যাল মিডিয়ার বিস্ফোরণঃ
সাম্প্রতিক বছরসমূহে বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম নির্ভর হয়ে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী ও ইসলামী ছাত্রশিবিরের মতো মোস্ট রেজিমেন্টেড সংগঠনের সাংগঠনিক অচলায়তনের ভেতর থেকে ব্যক্তি উদ্যোগে নানা ধরনের পর্যালোচনামূলক বক্তব্য, সমালোচনা ও প্রস্তাবণা উঠে এসেছে। এই মত-প্রতিমত-বিরুদ্ধমতে’র ধারায় রয়েছে বৃহত্তর ইসলামী আন্দোলনের অন্যতম শীর্ষ নেতা মুহাম্মদ কামারুজ্জামান কর্তৃক ঢাকা সেন্ট্রাল জেলের বকুল সেল হতে পাঠানো জামায়াতের বাহিরে একটা স্বতন্ত্র মডারেট ধারা প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ নেয়ার প্রস্তাবণাভিত্তিক আলোচনা-সমালোচনা হতে শুরু করে তরুণ গবেষক এম. এন. হাসানের সাড়া জাগানো জামায়াত অধ্যয়ন সিরিজ। বাস্তবতা হলো বাংলাদেশে সাম্প্রতিক কালে বিকশিত বিকল্প গণমাধ্যমের উন্মুক্ত প্লাটফরমে ব্যাপকভিত্তিক একটা প্রো-ইসলামিক ফোর্স গড়ে উঠেছে। হেফাজতে ইসলামী এই ধারায় সাম্প্রতিকতম সংযোজন।
আত্মপর্যালোচনায় ইসলামী দলগুলোর ব্যর্থতাঃ
দেখা যাচ্ছে, বাংলাদেশে যারা ইসলামের জন্য কাজ করছে তাঁরা পরষ্পরের বিরোধিতাই শুধু করছে, এমন নয়। সোশ্যাল মিডিয়ার বিশাল ও নিরাপদ প্লাটফর্মকে পেয়ে দলীয় শীর্ষ নেতৃবৃন্দ হতে শুরু করে সাধারণ কর্মী-সমর্থকরা পর্যন্ত স্বীয় দলের নীতি আদর্শ ও কার্যক্রম নিয়ে খোলামেলা কথা বলছে। এর কিছু অংশ নিতান্তই ব্যক্তি আক্রমণ ও ঘৃণা-বিদ্বেষমূলক হলেও ওভারঅল এসব লেখালেখি ইসলামপন্থীদের মানসে এক নতুন দিগন্তের উন্মেষ ঘটিয়েছে। ইসলামের মতো একটা গতিশীল আদর্শের পতাকাবাহী হিসাবে বিভিন্ন রাজনৈতিক ও অরাজনৈতিক দলসমূহ আত্মপর্যালোচনার অতিপ্রয়োজনীয় এলিমেন্ট ও রিকোয়ারম্যান্টকে এর ন্যূনতম মানেও গ্রহন বা প্র্যাকটিস করতে ব্যর্থ হয়েছে। লক্ষ্যণীয় যে, সোশ্যাল মিডিয়াতে ইসলামপন্থীদের তরফে উঠে আসা নানামুখী কথা-বার্তার উল্লেখযোগ্য অংশই গঠনমূলক, সংশোধনমূলক ও প্রস্তাবণামূলক।
বর্তমান নাজুক সময়ে এসব কথা-বার্তা কি সংগঠনকে দূর্বল করবে না? এসব ‘সমালোচনা’ কি আত্মঘাতী নয়?
বাংলাদেশে আজ ইসলাম আক্রান্ত। হেফাজতে ইসলামীর কানেকশানে তাবলীগের মতো বেখবর গোষ্ঠীও পরোক্ষভাবে আক্রান্ত। ‘দাওয়াতী কাজে’ সদাতুষ্ট নিরীহ তাবলীগপন্থীরাও অপারেশন শাপলাচত্বরের পরে ভীষণ অফেন্ডেড ফি-ল করছেন, ব্যক্তিগতভাবে জেনেছি। জামায়াত-শিবিরের উপর ভয়াবহতম রাষ্ট্রীয় নিপীড়ন তো আছেই। এমতাবস্থায় ইসলামী সংগঠনসমূহের পর্যালোচনামূলক বক্তব্যকে যারা আত্মঘাতী মনে করছেন তাঁদের নির্দোষ সারল্যকে সম্মান করেই বলছি –
বিপদের সময়ে ধৈর্য্যধারন করা, ক্ষমাপ্রার্থনা করা ও মোকাবিলা করা - এই তিনটি কাজের দ্বিতীয় ও তৃতীয়টির জন্য পরিস্থিতি পর্যালোচনা ও আত্মসমালোচনা অত্যাবশকীয় শর্ত নয় কি? তদুপরি, বাংলাদেশে বিশেষ করে রাষ্ট্রীয়ভাবে ইসলাম আক্রান্ত ও অসহায় হলেও সামাজিকভাবে এখনো ইসলামী শক্তিগুলো অনৈসলামিক শক্তিকে মোকাবিলা করে যাচ্ছে। তাছাড়া ইসলামপন্থীদের একটা বিরাট অংশ মোকাবিলার ময়দানে সক্রিয় নাই। নানাবিধ কারনে তাঁদের অনেকেরই ময়দানে অনুপস্থিত থাকার গ্রহনযোগ্য কারন আছে বৈকি। ময়দানে অনুপস্থিতদের জন্য আত্মগঠনের চলমান কর্মসূচীর পাশাপাশি ‘দলগঠনে’র মতো কাজেও ইতিবাচকভাবে সক্রিয় থাকা জরুরী নয় কি?
ইসলাম = জামায়াতে ইসলামী?
জামায়াতে ইসলামী ও এর বিভিন্ন অফশুটগুলো হলো ইসলামী আন্দোলন বা ইক্বামতে দ্বীনের (একমাত্র) ধারা। আর বাদবাকী সব খেদমতে দ্বীন বা সাধারন দ্বীনি কাজ। এমনটি যারা মনে করেন তাঁদের কাছে ইসলাম = জামায়াতে ইসলাম বা জামায়াতে ইসলাম = ইসলাম।
রাষ্ট্রীয়ভাবে ইসলাম কায়েমের এজেন্ডা বা দাবী থাকলেই, যে কোন ধরনের আরবিট্রেরি ও ইনকন্সিসটেন্ট কার্যক্রম ও সাংগঠনিক অবস্থান সত্বেও তা সবই ইক্বামতে দ্বীনের অন্তর্ভূক্ত আর সেটির সাথে একাত্ম হয়ে কাজ না করলে যে কেউ ইনফেরিয়র বা সাব-স্ট্যান্ডার্ড ‘খেদমতে দ্বীন’ হয়ে যাবে – এমনটি ধারনা করা একধরনের প্রান্তিকতার সমস্যা আমি যাকে সচারাচর জামায়াতের লোকদের ‘সাংগঠনিকতাবাদ’ হিসাবে বলে থাকি।
‘সাংগঠনিকতাবাদ’ কি?
সাংগঠনিকতাবাদীরা তাত্ত্বিকভাবে আদর্শকে এক নম্বরের দাবী হিসাবে গ্রহন করলেও উক্ত ঘোষিত আদর্শকে বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে স্বীয় সংগঠনের পদক্ষেপ বিশেষকে শিরোধার্য্য মনে করার কারনে বাস্তবে তাঁদের কাছে সংগঠনই এক নম্বরের বিষয় হয়ে দাঁড়ায়। আদর্শের জন্য সংগঠন বলা হলেও প্র্যাকিটিক্যলি তাতে দেখা হয়, সংশ্লিষ্ট দলীয় বিষয়াদির সমর্থন উক্ত তাত্ত্বিক আদর্শের মধ্যে আছে কিনা, তাই শুধু দেখা বা দাবী করা হয়। কোন দলবিশেষের অনুসারীরা যা যা বলে থাকেন, উক্ত আদর্শ-কাঠামোতে এর বাহিরের যে সব বিষয় আছে সেসবকে আরোপিত ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণের মাধ্যমে বাস্তবে অকেজো করে রাখা হয়। কোন তথ্য-সূত্রের (নস্) পূর্বাপর সম্পর্ককে বিবেচনায় না নিয়ে শুধুমাত্র এর প্রামাণ্যতাকেই এর প্রয়োগযোগ্যতার ভিত্তি হিসাবে দাবী করা হয়। ইসলাম ও ইসলামী আন্দোলন নিয়ে এমন হ-য-ব-র-ল পদ্ধতি সব ইসলামী দল ও প্রতিষ্ঠানই কম-বেশী করে থাকে।
মডারেট ধারা কায়েম করা কিম্বা মডারেট হওয়ার চেষ্টা করা –
জামায়াতে ইসলামীর একটা বিকল্প (মডারেট) ধারা করতে হবে কিম্বা সব ইসলামী দলসমূহকে এক প্লাটফরমে আনতে হবে – এসব চিন্তাধারা বাস্তবসম্মত নয়। আমার মতে, যার যার অবস্থান হতে ইসলামের জন্য প্লাটফরম গড়ে তুলতে হবে। এতে মাদ্রাসা শিক্ষিতদের সংগঠনকে আরো ‘নন-মডারেট’ হিসাবে গড়ে তুলতে হবে। ইসলামী ছাত্রশিবিরের কার্যক্রমকে আরও গণমুখী করে সম্প্রসারিত করা উচিত। ইসলামী ছাত্রীসংস্থার কার্যক্রমকে সম্পূর্ণভাবে রিঅর্গানাইজ করতে হবে। সহজ বাংলায় ঢেলে সাজানো বলতে যা বুঝানো হয়। অর্থাৎ ক্ষেত্র বিশেষে তা আরও অনেক বেশী মডারেট হবে। যদিও ক্ষেত্রবিশেষে মডারেট হতে বা মডারেট করতে চাওয়াটা মোটেও বাঞ্ছনীয় নয়।
দ্বৈত শিক্ষাব্যবস্থা ও ইসলামপন্থীদের সম্পর্কে জনমানসঃ
বাংলাদেশে স্কুল-কলেজ ও মাদ্রাসা পদ্ধতির যে দ্বৈততা তা আমরা চাইলেই ভাঙতে বা একীভূত করে ফেলতে পারবো না। কয়েক শত বছরে যা তৈরী হয়েছে তা একটা সামাজিক সামাজিক কাঠামো হিসাবে স্থায়ী রূপ লাভ করেছে। মাদ্রাসা শিক্ষিতদের জন্য আলাদা সংগঠন না করায় মাদ্রাসা শিক্ষিতদের দ্বীনি চরিত্রের ব্যাপক অবনতি ঘটেছে। ‘ইংরেজী শিক্ষিত’ মাদ্রাসা ব্যাকগ্রাউন্ডের লোকজনেরা নিজেদের আলেম পরিচয় প্রায়শঃই গোপন করতে চান। প্রফেসর হয়ে যাওয়ার পরে উনারা নিজেদের মাওলানা উপাধি আর ব্যবহার করেন না। অথবা চান যে, প্রফেসর ও ড. উপাধিকে আগে যেন লেখা হয়। অন্যকোন উপাধি না থাকলেই কেবল তাঁরা মুহাদ্দিস, মুফাস্সির কিম্বা ফকীহ সম্বোধনকে ব্যবহার করেন। নিজেদের বিভাগের নাম দেন, ‘কোরআনিক সায়েন্সেস’ যা তাঁদের কাছে (হয়তোবা) যথেষ্ট শ্রুতিমধুর! আমার মতো অনেকের কাছে তা ‘ফিলোসফিক্যাল সায়েন্সেস’ এর মতো ‘....’ও বটে।
মাদ্রাসা শিক্ষিতদের নানাবিধ হীনমন্যতাবোধকে ইতিবাচকভাবে কাটানোর চেষ্টা না করে জামায়াত-শিবির সাংগঠনিকভাবে দুই ধরনের ভিন্নধারাকে একীভূত করে প্রাকারান্তরে দেশে ভাল মানের আলেম তৈরীর পথকেই রুদ্ধ করে দিয়েছে। আলেমদেরকে ভাল আলেম হিসাবে গড়ে উঠতে হবে। সেটি প্রচলিত অর্থে মডারেট হতে চাওয়ার বিপরীত - এ কথাটাই বুঝাতে চেয়েছি।
প্লুরালিস্টিক ইসলামিজমঃ
প্রতিটা দল ও ব্যক্তি এক ধাঁচে গড়ে না উঠে যার যার মতো করে গড়ে উঠবে যাতে একটা বিস্তীর্ণ বাগানের মতো সুস্থ ও ভারসাম্যপূর্ণ নন-আর্টিফিশিয়্যাল সমাজ ও রাষ্ট্র গড়ে উঠে। এককেন্দ্রিক ইসলাম-ভাবনা হতে মুক্ত হয়ে প্লুরালিস্টিক ইসলামিজমকে এডপ্ট করতে হবে। সাংগঠনিক ঐক্য হবে গৌণ, আদর্শিক মতৈক্যই হবে ব্যক্তি ও দলসমূহের আন্তঃসম্পর্কের ভিত্তি।
নতুন ধারায় ইসলামী আন্দোলনের টার্গেট গ্রুপ কারা?
সমালোচনার বৈধতাঃ
যারা জামায়াতে ইসলামীর কাজের সাথে জড়িত তাঁরা নতুন ধারায় ইসলামী আন্দোলনের কাজে কাদেরকে টার্গেট গ্রুপ হিসাবে বিবেচনা করবে? এই প্রশ্নের সাথে তাঁরা দলীয় নীতি আদর্শ ও ব্যক্তির কতটা প্রকাশ্য সমালোচনা করবে – এই বিষয়টি ঘনিষ্টভাবে সম্পর্কিত।
সংস্কারের প্রাইম টার্গেট গ্রুপঃ
যদি জামায়াতকে এবং জামায়াতের সাথে থাকা লোকদেরকে টার্গেট গ্রুপ হিসাবে বিবেচনা করা হয় তাহলে প্রকাশ্যে জামায়াতের সমালোচনা করাটা অর্থহীন, স্ববিরোধী ও ক্ষতিকর। যদি জামায়াতের বাহিরের ইসলামপন্থীদেরকে টার্গেট গ্রুপ হিসাবে বিবেচনা করা হয় তাহলে প্রয়োজনে জামায়াতকে ‘ডিফেইমড’ করে হলেও ইসলামকে ডিফেন্ড করতে হবে। আর সাধারণ মুসলিম জনসাধারণকে টার্গেট গ্রুপ হিসাবে বিবেচনা করলে জামায়াত ও অপরাপর ইসলামী দল ও প্রতিষ্ঠানসমূহের অকাট্য ভুলগুলোকে অকপটে স্বীকার করে, সেগুলোর নিন্দা করে, ইসলামিস্টদের সীমাবদ্ধতাগুলোকে শাক দিয়ে মাছ ঢাকার মতো করে অস্বীকার করার ব্যর্থ চেষ্টা না করে, ইসলামকে আদর্শ হিসাবে আলাদাভাবে দেখাতে হবে, তুলে ধরতে হবে। ইসলামকে একটা অনন্য ব্র্যান্ড হিসাবে প্রতিষ্ঠা করতে হলে ইসলাম –এর আগে পরের সব পরিচয়মূলক সংযোজনকে নিছক স্থানীয় ও গৌণ হিসাবে বুঝতে হবে, বলতে হবে।
জামায়াতে ইসলামী কর্তৃক স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে সংস্কার ও সংশোধনকে গ্রহন করাঃ
জামায়াত যদি আভ্যন্তরীণভাবে সংশোধন ও সংস্কারকে গ্রহন করে নেয় তাহলে সবচেয়ে ভাল। যে কেউ আশা করতে পারে যে, আগামীতে অনুকূল পরিস্থিতিতে জামায়াত তা করবে। বর্তমানে আক্রান্ত অপরাপর ইসলামী শক্তিও সম্ভাব্য অনুকূল কোন আগামীতে নিজেদেরকে বাস্তবতার আলোকে সংশোধন করে নিবে – এমন আশাবাদও আমরা পোষণ করতে পারি। আমার ধারনা এর বিপরীত। আমার ধারনা ভুল প্রমাণিত হলে আমি সবচেয়ে বেশী খুশী হবো। তবে, অভিজ্ঞতাপ্রসূত হিসাব আমাকে যা বলে তা হলো জামায়াত বা অন্য কোন ইসলামী দল বা প্রতিষ্ঠান একান্ত আরোপিত ও বাধ্যগত পরিস্থিতি ছাড়া আদর্শ ও বাস্তবতা বিবেচনায় কখনো নিজেদের মধ্যে কোন সিগনিফিকেন্ট ও সাসটেইন্যাবল পরিবর্তন বা সংস্কারকে গ্রহন অতীতেও করে নাই ভবিষ্যতেও করবে না।
সংস্কারের এই প্যারাডক্স বা ধাঁধাঁ’র ব্যাখ্যাঃ
ধরে নেই, জামায়াতের মতো উচ্চশিক্ষিত স্মার্ট ইসলামিস্টরা ‘ক’ গ্রুপ। অপরাপর ইসলামিস্টরা ‘খ’ গ্রুপ। বাদবাকী মুসলমানরা ‘গ’ গ্রুপ। ‘ক’ গ্রুপ অলরেডি ৭০% ইসলামিক। ‘খ’ গ্রুপ ৫০% ইসলামিক। ‘গ’ গ্রুপ ৩০% ইসলামিক। বলা বাহুল্য, ইসলামিক হওয়ার এই শতকরা কাল্পনিক হিসাব বাস্তব কর্মধারা নির্ভর। তাত্ত্বিকভাবে মুসলমান ব্যক্তি ও দল মাত্রই সর্বদাই ১০০% ইসলামিক।
সাধারণভাবে মনে হবে, ‘ক’ গ্রুপ সংস্কার-পরিকল্পনা গ্রহন করার দিক থেকে সবচেয়ে বেশী সম্ভাবণাময়। ‘খ’ গ্রুপ –এর পটেনশিয়ালিটি মাঝামাঝি। আর ‘গ’ গ্রুপের এগিয়ে যাওয়ার সম্ভবণা সবচেয়ে কম। এই আপাতঃ সঠিক সুন্দর হিসাবটি নিতান্তই অবাস্তব ও ভুল। যারা আদৌ ইসলামিস্ট নয় এমন বৃহত্তর সংখ্যাগরিষ্ঠ মুসলমানই আগামী দিনের ইসলামের জন্য সবচেয়ে বেশী সম্ভাবণাময়।
ইডিওলজিক্যাল ফ্লুইডিটিঃ
যারা কোন আদর্শকে বৃহদাংশে গ্রহন করেছে তাঁরা নিজেদের ‘গৃহীত আদর্শবাদ’কেই সম্পূর্ণ ও সর্বাঙ্গীন মনে করে, এবং করছে। তাঁদের একমাত্র সমস্যা বা এজেন্ডা হলো সমাজ ও রাষ্ট্রে সেটি প্রতিষ্ঠা করা। নিজেদের আদর্শের ছাঁচে প্রতিনিয়ত যাচাই ও পূণঃগঠন করার বিষয়টা, তাঁরা মনে করে, তাঁদের সংশ্লিষ্ট দলীয় প্রতিষ্ঠাতা ইতোমধ্যে সেরে ফেলেছেন। অর্থাৎ দ্য অর্গানাইজেশান ইজ অলরেডি সাফিশিয়্যান্টলি ইসলামিক। ম্যটার ইজ টু স্টাবলিশ দ্যা অর্গানাইজেশান স্টেক-হোল্ডারস লিডারশীপ অন দ্যা সোসাইটী এন্ড দ্যা স্টেট। সংস্কারকে গ্রহন করার জন্য যে ইডিওলজিক্যাল ফ্লুইডিটি ও ফ্লেক্সিবিলিটির দরকার তা এই ‘ক’ ও ‘খ’ গ্রুপের মধ্যে বহু বছর আগেই রিজিড বা সলিড হয়ে গেছে।
গণ সম্পৃক্ততার মতো একটা বৈপ্লবিক পরিস্থিতিঃ
তাই, আমার ধারনায়, আগামী দিনের প্লুরালিস্টিক ইসলামিক মুভমেন্ট এর কাজে যারা নেতৃত্ব দিবেন তাঁদের ১নং টার্গেট গ্রুপ হওয়া উচিত সমাজের সাধারণ মানুষ তথা ‘গ’ গ্রুপ। সোশ্যাল মিডিয়ার পাশাপাশি সেমিনার ইত্যাদির মাধ্যমে কনসেপ্ট গ্রুপ হিসাবে অর্গানাইজ হয়ে মেইনস্ট্রীম হতে যদি ৫% লোককে নিয়ে আসা যায় তাহলে ‘খ’ ও ‘ক’ গ্রুপ হতে আরও ৫% লোক অনেকটা বিনা চেষ্টাতেই এই নতুন ধারায় চলে আসবে। ৭২ বছর কাজ করেও যদি ‘ক’ গ্রুপ এখনো গড়পরতা ১০% হিসাবে থাকে সেক্ষেত্রে এই নতুন ধারা আগামী ১০ বছরের মধ্যে যদি দেশের জনগণের অন্ততঃ ১৫% শক্তি হতে পারে, আশা করা যায় যে, পরবর্তী ৫ বছরের মধ্যে গণ সম্পৃক্ততার মতো একটা বৈপ্লবিক পরিস্থিতি সৃষ্টি হতে পারে।
বিশেষ ধরনে ‘সংগঠন’ কায়েমঃ
নতুন ধারায় ইসলামপন্থী কার্যক্রমের যারা নেতৃত্ব দিবেন তাঁদেরকে নমনীয় ও বিকেন্দ্রেীকৃত কাঠামোতে যৌথ ও আদর্শিক নেতৃত্বের এক বিশেষ ধরনে ‘সংগঠন’ কায়েম করতে হবে। মানুষ পরিচয় পেতে ও দিতে ভালবাসে। মানুষ একবার যে নাম ও পতাকাকে ভালবাসে, নিজের মায়ের মতো সেটিকেই তাঁরকাছে সবসময়ে সবচেয়ে বেশী বা অন্ধভাবে ভাল লাগে। তাই, ইসলামিস্ট হিসাবে যারা এখনো বিশেষ কোন পতাকা ও শ্লোগানধারী নয়, তেমন লোকজনেরা নতুন কাঠামোতে অধিকতর স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করবে।
সর্বদাই পূর্ণমাত্রায় সক্রিয় থাকাঃ
এমতাবস্থায়, বিগত ক’বছরে সামাজিক গণযোগাযোগ মাধ্যম নির্ভর হয়ে ভেসে উঠা কনসেপ্ট গ্রুপ একটা কার্যকর সংগঠনে রূপলাভ করার আগ পর্যন্ত পূর্বতন সংগঠনে যে যেখানে আছেন তিনি সেখানেই থাকুন। সকল ভাল কাজে পূর্ণ অংশগ্রহন করুন, নেতৃত্ব দিন। মনে রাখতে হবে, আমরা কেবল তাত্ত্বিক নই, সমভাবে কর্মীও বটে। যদি আপনি গণ্তব্যকেই প্রাধান্য দেন তাহলে আপনার বর্তমান ভেহিক্যালটি ঠিকমত চলছে না বলে আপনি রাস্তার পাশে বসে থাকতে পারেন না। তাই না?
বিষয়: বিবিধ
২৩৯৯ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন