মদীনা সনদ আপাতঃদৃষ্টিতে ‘ধর্মনিরপেক্ষ’ মনে হলেও একে ইসলামী রাষ্ট্রের সংবিধান হিসাবে দাবী করা হয় কেন?

লিখেছেন লিখেছেন মোহাম্মদ মোজাম্মেল হক ১৪ এপ্রিল, ২০১৩, ০৯:৫৩:৪৮ সকাল

”প্রত্যেকের গোত্রীয় ও ধর্মীয় স্বাধীনতাকে স্বীকৃতি দেয়া সত্বেও মদীনা সনদকে ইসলামী রাষ্ট্রের সাংবিধানিক মডেল হিসাবে বিবেচনা করা হয় কেন?” বছর দু’তিন আগে প্রফেসর আবদুন নুর স্যার আরও অনেকের সামনে আমাকে এই প্রশ্ন করলেন। ”এটি ভীষণ স্কলারলি একটা কোয়েশ্চেন, স্যার”; আমি বললাম।

নূর স্যারের মতো একজন পন্ডিত ইসলামিস্ট ধর্মনিরপেক্ষতাবাদীদের এই প্রশ্ন আমাকে করার উদ্দেশ্য ছিল, আমি আসলে মদীনা সনদের তাৎপর্য বুঝেছি কি না তা যাচাই করা। তখন আমি এক নবীণ সহকর্মীর নানাবিধ ‘উস্কানীমূলক’ প্রশ্নের মীমাংসা করতে গিয়ে মদীনা সনদ নিয়ে নতুন করে অধ্যয়ন ও বিশেষজ্ঞদের সাথে মত বিনিময় করছিলাম।

এটি সত্যি যে, মদীনা সনদের কোথাও ইসলামী রাষ্ট্র ঘোষণার মতো কোন ব্যাপার নাই। বরং প্রত্যেককে স্বীয় গোত্রীয় ও ধর্মীয় বিধি-বিধান অনুসারে ফয়সালা করার এখতিয়ার দেয়া আছে। আপাতঃদৃষ্টিতে তাই এটিকে ধর্মনিরপেক্ষ মনে হওয়া স্বাভাবিক হলেও বস্তুতঃ এটি ছিল একটি ইসলামী রাষ্ট্র ব্যবস্থার ভিত্তি স্বরূপ। কেননা, আন্তঃগোত্রীয় ও আন্তঃধর্মীয় বিরোধের ক্ষেত্রে মুহাম্মদ (সঃ)কে বিরোধ নিষ্পত্তিকারী বা আরবিটট্রেটর হিসাবে মেনে নেয়ার মাধ্যমে ইসলামী শরীয়াহকে ‘ল অব দ্যা ল্যান্ড’ হিসাবে স্বীকৃতি দেয়া হয়েছে। তৎকালীন ইয়াছরিব নামক জনপদে জাতি-রাষ্ট্র ঘোষণার সনদ তথা মদীনা সনদ স্বাক্ষরকালীন সময়ে রাসূল (সঃ) ছিলেন সেখান অধিবাসীদের এক-দশমাংশের মতো মুসলিম ধর্মাবলম্বীর নেতা যারা আবার প্রতিদ্বন্দ্বী বিভিন্ন গোত্রের অন্তর্ভূক্ত ছিল। গোত্রীয় কাঠামোর বাহিরে গিয়ে মুহাম্মদ (সঃ) কে যোগ্যতার কারনে জনপদের অবিসংবাদিত নেতা হিসাবে সবাই মেনে নেন। এই অর্থে তিনি ছিলেন সেখানকার জন্য ‘লেভিয়াথান’ বা রাষ্ট্র নায়ক।

আভ্যন্তরীন বিষয়াদি ছাড়াও যুদ্ধ ঘোষণা ও পরিচালনা, সন্ধি স্থাপন কিম্বা বাতিলের কর্তৃত্বও অর্পিত ছিল রাসূল মুহাম্মদ (সঃ) এর উপর। সংখ্যাগরিষ্ঠ অমুসলিমরা মুহাম্মদ (সঃ) কে রাসূল হিসাবে মেনে নিলে তাঁরা তো মুসলমান হিসাবেই গণ্য হতেন। মুহাম্মদ (সঃ) যখন কোন সিদ্ধান্ত দিবেন তখন তিনি ইসলামী শরীয়াহ’র ভিত্তিতেই তা করবেন - এটি জানা সত্বেও তাঁরা ’ব্যক্তি মুহাম্মদ’ (সঃ) কে নিজেদের নেতা হিসাবে মেনে নেয়। এই প্রক্রিয়ায় উক্ত জনপদে ইসলামী আইন-বিধান তথা শরীয়াহ প্রাতিষ্ঠানিক প্রাধান্য লাভ করে। এটিই হলো ইসলামী রাষ্ট্র-কাঠামোর মডেল। কোরআন শরীফে ‘লি ইউজহিরাহু আলাদ্দীনি কুল্লিহি’ [... যাতে অপরাপর দ্বীনসমূহের উপর এটি (ইসলামী শরীয়াহ) প্রাধাণ্য লাভ করে] বলতে এই ব্যবস্থাকেই মিন্ করা হয়েছে।

বাংলা একাডেমীর প্রাক্তন পরিচালক প্রফেসর সৈয়দ আনোয়ার হোসেন স্যারের প্রমোট করা ’মদীনা সনদ ধর্মনিরপেক্ষ’ টাইপের অর্ধ-সত্য গোঁজামিল থিসিস এখন প্রধানমন্ত্রীও প্রপাগেট করে বেড়াচ্ছেন!!! সবচেয়ে মজার ব্যাপার হলো ব্যরিস্টার তানীয়া আমীর মহোদয়া এক ডিগ্রী বাড়িয়ে এমন কথাও বলছেন যে, জামায়াতে ইসলামীর গঠনতন্ত্রের সাথে মদীনা সনদের মিল নাই!!!??? মদীনা সনদ এখন টক অব দ্যা বাংলাদেশ পলিটিক্স। এ কথা সত্যি যে, ইসলামিস্ট ও সেক্যুলারিস্ট উভয় শিবিরে মদীনা সনদ নিয়ে কম-বেশী ভুল ধারনা রয়েছে। এই সংক্ষিপ্ত বয়ানে মোটা দাগের ভুল বুঝাবুঝিগুলোর নিরসন হবে। আশা করি।

বিষয়: বিবিধ

২২০৪ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File