মৃত্যুকে আর ভয় করি না (!!)
লিখেছেন লিখেছেন শফিক সোহাগ ০৬ জুলাই, ২০১৪, ০৬:০০:২৭ সন্ধ্যা
ছোটবেলা মানে যখন কোন রকম বুঝার বয়স ছিল তখন দেখতাম কোন মৃত্যুর সংবাদ আসলে কিংবা কোন মৃত্যুর মাকিং শোনলে আশপাশের সব মানুষগুলো চুপ হয়ে যেতন। এই চুপ হয়ে যাওয়ার মাঝে অজানা ভয় কাজ করতো। সবাই ইন্নালিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন পড়তেন। আল্লাহ উনাকে বেহেশত নসীব কর, মাগফিরাত দান কর এসব দোয়াও করতেন। আর মৃত ব্যক্তি পরিচিত হলে জানাযার নামাজ, পরিবার ইত্যাদির খোজ-খবর নিতেন।
আরেকটুক বড় হলাম তখন দেখলাম, কোন মৃত্যুর সংবাদ আসলে আশপাশের মানুষগুলো আর আগের মত চুপ হয় না। পরিচিত হলে ইন্নালিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন পড়তেন আর একটু খোঁজ-খবর নিয়ে দায়িত্ব শেষ।
আরেকটুক বড় হওয়ার পর দেখলাম, কোন মৃত্যুর সংবাদ আসলে দোয়া-দূরুদ, খোঁজ খবর নেয়ার আগে একটি প্রশ্ন কিভাবে মারা গেছেন? এর অন্যতম একটি কারণ হল- আমার যাকে স্বাভাবিক মৃত্যু বলি সেটা কমে আসে আর অস্বাভাবিক মৃত্যু বেড়ে যায়।
আরো কিছু দিন পর দেখলাম, কোন মৃত্যুর সংবাদ আসলে মানুষ প্রশ্ন করে কয়জন মারা গেছে? মৃত্যু বিষয়টা মানুষের কাছে সহজ হতে শুরু করল। মানুষ আর মৃত্যু খবর শুনে চুপ হয়ে যায় না বরং উল্টো শুনতে আগ্রহী কতজন?
আর এখন দেখতে পাচ্ছি, কোন মৃত্যুর সংবাদ আসলে মানুষ প্রশ্ন করে লাশ কি পাওয়া গেছে? মানুষের মৃত্যু বিষয়টা হতে হতে এমন পর্যায়ে গেছে যে লাশ পাওয়াও না যেতে পারে এধরণের ধারণা আমদের কাছে থাকে।
এভাবেই আমাদের সাহসের বিবর্তন হতে থাকে আর আমরা হতে শুরু করি অসীম সাহসী। যে আমি একজন মানুষের স্বাভাবিক মৃত্যুতে ভয়ে নিবর হয়ে যেতাম সেই আমি এখন প্রতিদিন কত মৃত্যুর কথা শুনি কিন্তু আমার মনে একবার ভয় আসে না। একবারও নিজের এইরকম পরিণতির কথা চিন্তা করি না। সত্যিই কি আমি অনেক সাহসী হয়ে গেলাম নাকি অন্য কোন কারণে ভয়টা চলে গেছে।
আসলে আমাদের সাহসের বিবর্তন ঘটেনি ঘটেছে আমাদের সমাজ ব্যবস্থার পরিবর্তন। আগেরকার সমাজে অস্বাভাবিক মৃত্যু খুবই কম হত আর একন অহরহ অস্বাভাবিক মৃত্যু ঘটছে যার কারণের অস্বাভাবিক মৃত্যু দেখতে দেখতে মৃত্যুর ভয়টা চলে যাচ্ছে। সমাজ ব্যবস্থা এমন দাঁড়িয়েছে যে, তুচ্ছ ঘটনা কেন্দ্র করে সংগঠিত হচ্ছে খুন-গুম। পিত পুত্রকে পুত্র পিতা হত্যা করেছে সামান্য বিষয় নিয়ে। এক বন্ধু আরেক বন্ধুকে খুন-গুন করছে খুব সহজভাবে। আত্মহত্যা বেড়ে গেছে অস্বাভাবিক হারে। রাজনৈতিক হত্যাকান্ডের কথা তো আর বলে শেষ করা যাবে না। এই সমাজ ব্যবস্থার কারণে আমরা আর মৃত্যুকে ভয় করি না।
আমাকে মরতে হবে এই অনুভূতিটুকু আমাদের ভিতরে খুব কম কাজ করে। আমরা আমাদের গড় আয়ুকাল অনুযায়ী ধরে নেই আমরা ষাট বছর বাঁচবো কেউবা মনে করি সত্তর বছর। খুবই কম সংখ্যক মনে করি আমাদের “এক সেকেন্ডের” ভরসা নেই। এক সেকেন্ডেরও বাঁচার নিশ্চয়তা নেই এই ধারনা আমাদের থাকলে মরতে হবে এই অনুভূতিটুকু কাজ করতো আর আমরা মৃত্যুকেও ভয় করতাম।
আর সবচেয়ে বড় কথা হল- মৃত্যুর পরবর্তী জীবন নিয়ে আমরা একটুকুও চিন্তা করি না। মাঝে মাঝে কোথাও ওয়াজ শুনে অথবা ইন্টারনেট বা বইয়ে মৃত্যুর পরবর্তী জীবন নিয়ে পড়লে বা শুনলে মৃত্যুর পরবর্তী জীবনের স্মরণ হলেও তা ক্ষানিক সময়ের জন্য। মৃত্যুর পরবর্তী জীবনের চিন্তাটা যদি থাকতো তাহলে মৃত্যুর ভয়টাও থাকতো। আর সবার মৃত্যু ভয় থাকলে পাপচার কমে আসতো এবং সমাজটা হতো অন্য রকম সুন্দর।
বিষয়: বিবিধ
১৩৬২ বার পঠিত, ৬ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
Now a days we do not react hearing the news of death. May Allah soften our hearts.
Thanks for sharing.
ধন্যবাদ আপনাকেও।
ধন্যবাদ আপনাকে।
ভাল লিখেছেন। ধন্যবাদ আপনাকে
মন্তব্য করতে লগইন করুন