কমলা কম্বল জড়ানো ঘরকুনে বিপ্লবীদের সাম্প্রতিক নাক-কুচকানি প্রসঙ্গে
লিখেছেন লিখেছেন অকপটশুভ্র ১২ মার্চ, ২০১৩, ০৯:৩২:৩৪ রাত
তথাকথিত ইসলামিক লোকজন যখন জ্ঞান পাপী হয় তখন উম্মাহর কপালে শুধু দুর্গতি কেন সামুদ জাতির উপর দেয়া গজব নাজিল হলেও মনে হয় কম হয়ে যায় (আল্লাহ মাফ করুক)। কি পরিমাণ জ্ঞান পাপী হলে মানুষ অনলাইনে একটা পিটিশন খোলা নিয়ে সেটাকে পুঁজি করে রঙ চং দিয়ে তিলকে তাল করে ফেলতে পারে। এই মুহূর্তে যখন ঐক্যের প্রয়োজন তখন কি করে এরা ছোট-খাট বিষয় নিয়ে মানুষের মাঝে কনফিউশন তৈরি করে বিভাজনের ফারাকটাকে আরও পোক্ত করে। এদের এই চেহারা দেখে আজ সত্যিই মনে হচ্ছে জেনে হোক না জেনে হোক এরা হয়তো ইয়াহুদীবাদীদেরই এজেন্ডা বাস্তবায়ন করছে। আল্লাহু আ'লাম। আল্লাহ আমার এই আশংকা ভুল প্রমাণ করুক আমীন।
হোয়াইট হাউজের ওয়েবসাইটে যে কেউ পিটিশন খুলতে পারে, এইটাকে যারা "আমেরিকার পাছায় তেল মারা" ও "ওবামার শরণাপন্ন হওয়া" বলে অপপ্রচার চালাচ্ছে, ঠাট্টা বিদ্রূপ করছে "আমেরিকার তাঁবেদারি" বলে বেড়াচ্ছে তাদের জন্য বড় দুঃখ হয়। এইটা নাকি সালফে সালেহীনদের অনুসারীদের চরিত্র! একটা পিটিশনে এক লাখ সাইন পড়লে কি ওবামা বলবে যে জামায়াত আমার জিগরি দোস্ত? অথবা সে কি জামায়াতের মুখপাত্র হয়ে কথা বলবে? নাকি আমেরিকান সৈন্য পাঠিয়ে নিজামী সাঈদীকে উদ্ধার করে নিয়ে যাবে? আপনি কোন একজনকে "তেল মারা", তার "তাঁবেদারি করা" বা তার "শরণাপন্ন হওয়া" অথবা "জীবন ভিক্ষা চাওয়া" বলতে কি বুঝেন? Do you know what these words are actually implied for? প্রথমালোই কি শুধু হলুদ? আপনারা কম হলুদ হতে পারলেন কই? কাউকে তেল মারা, শরণাপন্ন হওয়া, তাঁবেদারি করা আর তারও অবস্থান জানাতে ব্যবস্থা নেয়ার মধ্যে পার্থক্যটা চরম ভাবে ডেভিয়েটেড, বায়াসড ও হীনমন্যতা সম্পন্ন লোক ছাড়া আর কারও চোখ এড়ানোর কথা নয়। শুধু তাই নয়, একটা পিটিশনে সাইন কালেক্ট করে বিবৃতি আদায় করে নেয়া আর সাহায্য চাওয়া এক কথা নয়। জলজ্যান্ত একটা অবিচার হয়ে যাচ্ছে, এবং ওরা চুপ করে থাকলো আর মিথ্যা ও অবিচারটা প্রতিষ্ঠিত হয়ে গেল, তাদেরকে কিছুই বলতে হল না। এর মানে কি সত্যের বিপক্ষে মিথ্যাকে প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে এটা কুফফারের বিজয় নয়? যখন সত্য ও মিথ্যা সরাসরি মুখোমুখি সংঘর্ষে আবদ্ধ তখন বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ সোর্স অফ পাওয়ার যারা কিনা তাদের ফেইস ভ্যালু দিয়ে মানুষকে ডেভিয়েট করে তাদের ক্লিয়ার একটা বিবৃতি আদায় করে নেয়াটা বিরাট বড় ধরনের গুরুত্ব বহন করে। আন্তর্জাতিক পরিমন্ডলে এইটার গুরুত্ব যারা বুঝেন তাদের পক্ষে বসে থাকা সম্ভব নয়। হোয়াইট হাউস ১০০০০০ পিটিশন পেলে যে ইনজাষ্টিসের বিপক্ষেই কথা বলবে সেটা তো নিশ্চিত না। বরং তাদের ভিউ জানাটাই বর্তমান ও ভবিষ্যতে উভয় সময়ের জন্যই গুরুত্বপূর্ণ। তাছাড়া সরকারের উপর চাপ সৃষ্টির ক্ষেত্রে এটা আরও গুরুত্বপূর্ণ হয়ে পড়েছে তখন যখন আমাদেরই ইসলামিভাবাপন্ন ভাইরা মুখে কুলুপ এঁটে সস্তা অজুহাত দেখিয়ে ঘরে বসে আছেন, পাশাপাশি গোটা মিডিয়া সম্পূর্ণ বিপরীত খবর প্রচার করে সত্যের বিপরীতে মিথ্যাটাকেই প্রতিষ্ঠিত করছে। সো যাদের চিন্তা শক্তি আছে, তাদের এটা বুঝা উচিত যে একটি পিটিশন মানে এই না যে ওবামার পা চেপে ধরা। এ গুলো যে কত নিচু মানসিকতার পরিচয় বহন করে তা বলার অপেক্ষা রাখে না।
বহুদিন থেকেই এদের অতিসরলীকরন প্রবণ লেখা গুলো পড়ে আসছি কিন্তু আমি এদের কথার উত্তর সাধারণত আমি দেই না । কারণ এরা এবং এদের ঘরানায় যারা অতি সরলীকরণ করে ফিতনার সৃষ্টি করেন তারা জামায়াত নেতাদেরকে "জামায়াত নেতা" হিসেবেই দেখেন। মুসলমান হিসেবে দেখেন না। তাই তারা মনে করেন না যে জামায়াত নেতাদের মুক্তির জন্য আন্দোলন করা ইসলামের আওতায় পড়ে। তাঁদের বুকে এমনিতেই সাহস নেই, তাই সরাসরি বলতে পারেন না যে জামায়াত এবং ইসলাম দুই মেরুর জিনিস। তারা বলেন "জামায়াত ও ইসলাম এক নয়" । জামায়াতের নেতারা জেলে থাকলে তাদের মুক্তির জন্য নিশ্চই উনাদের খালুরা এসে আন্দোলন করবেন না, জামায়াতের লোকদেরকেই এই আন্দোলন করতে হবে। বাংলাদেশে ইসলাম প্রচার ও প্রসারে জামায়াত নেতাদের যে অবদান সে অবদানই আমাদেরকে তাদের মুক্তি আন্দোলনের জন্য অনুপ্রেরণা দেয়। তারা জামায়াত নেতাদের অবদানকে সম্মান করেন না বিধায় উনারা একথা বলতে পারেন যে "আমরা নিজেদের নেতাদেরকে বাঁচানোর জন্য আন্দোলন করছি" যাইহোক একথা ছাগলেও বুঝে যে নেতার জন্য শিষ্যরাই আন্দোলন করবে। উনারা না বুঝলে সেটা উনাদের সৃষ্টি জগতের ভিন্ন ধারার মাখলুকাতের ভিন্ন স্বভাবের ব্যপার সেপার। তারা বললেন আল্লাহ ও রাসুলের চাইতে আমাদের কাছে নেতাদের জীবন বড়। ঘুরিয়ে ফিরিয়ে মোটামুটি সব খেলাফতি ও তথাকথিত সালাফী ভাই প্রায় একই কথা বলছেন। ইনফ্যাক্ট উনারা প্রায় সবাই অন্যদেরকে বিচার করার ক্ষেত্রে এইভাবে চরম নিম্নমানের চিন্তা ভাবনা পোষণ করে থাকেন। একজন ডাইরেক্ট বললেন "kafir mushrik der kase netar jibon vikkhar jonno 1,00000 vote prarthona" এই অতিসরলীকরন মূলত এদের মজ্জাগত ধুরন্ধতা, কপটতা ও হীনমন্যতা। এমনকি জিম তানভীর ছেলেটার চিন্তাভাবনাও এই একই মানের। মুসলমান হিসেবে যদি এক ভাই অপর ভাইয়ের উপর তিল পরিমাণ বিশ্বাসও থাকে, তাহলে কেউ এভাবে একটা বিষয়কে অতিসরলীকরন করতে পারে না। হোয়াইট হাউজের পিটিশন এবং তার সিগনিফিকেন্স জানার পরেও এসকল মন্তব্য যারা করেন তাদের ব্যপারে আর কিছুই বলার থাকে না।
আজকে প্রতিটি মিছিলে, প্রটেষ্টে জামায়াত নেতাদের মুক্তির পাশাপাশি আমরা ব্লাসফেমীর বিরুদ্ধে সোচ্চার রয়েছি কিন্তু উনারা পারপাসলি মানুষকে বিভ্রান্ত করার জন্য ফিতনা ছড়াবার জন্য সুকৌশলে এই ব্যপারগুলো এড়িয়ে যাচ্ছেন। বলছেন যে জামায়াত-শিবির নাকি শুধুই তাদের নেতাদের জীবন বাঁচাতে আন্দোলন করছে। এদের জিবনের উদ্দেশ্য একটাই, সেটা হল নিজেরা ছাড়া অন্যসবাইকে কুফরির দালাল বলে প্রমাণ করা। কিন্তু যেহেতু ন্যচারালি সকল মুসলিম একটি তরিকার আন্ডারে জড় হবে না বিভিন্ন তরিকার নেতাদের সদিচ্ছা ছাড়া সেহেতু নিজেদেরকে দুধে ধোয়া তুলসী পাতা সাজাতে গিয়ে মুলত উম্মাহর মাঝে বিভেদের বেড়াজালকে এরাই আরও ঘন করছেন। এই ভাবেই এরা কুফফারদেরকে পরোক্ষ ভাবে খুব কাছে থেকে সাহায্য করে যাচ্ছেন। আজকে যারা রাসুল (স) ও আল্লাহ নামের অবমাননার বিরুদ্ধে সোচ্চার হয়েছে তাদের অধিকাংশই নেটের ধারে কাছে থাকে না। যারাও আছে তারাও নাস্তিকদের চিনতো না। এরা জানতোও না যে ধর্মকারি নামে একটা ব্লগ আছে, যৌবনযাত্রা নামে ব্লগ আছে। কিন্তু হঠাৎ করে কারা তাদেরকে চলমান ব্লাসফেমীর ব্যপারে স্ক্রিনশট ও বিস্তারিত পরিচয় সহ আদ্যোপান্ত অবহিত করেছে? কারা দ্বীনের এই আন্দোলনকে জোরদার করার জন্য তাদেরকে মাঠে নামতে সহযোগিতা করেছে? কম্বলের তলা থেকে বেরিয়ে খোলা আকাশের নীচে এসে চিন্তা করুন। দেখবেন কমলা রঙের পোষ্টার, প্রোফাইলে কালেমার পতাকা আর মুখে খিলাফতের বাকবাকুমের বাইরে একটা বাস্তবিক জগত আছে। সেখানে সবকিছু এমনি এমনি হয় না। ঐ যে হিকমতি বলে জামায়াত কে কটাক্ষ করেন, সেই হিকমতের জোরেই আজকের আন্দোলন এই পর্যায়ে এসেছে। আপনারা শুধু হিকমতি বলে জামায়াতকেই কটাক্ষ করছেন না বরং কুরআনের একটি গুরুত্বপূর্ণ টার্মকে বিকৃত করছেন।
আমার কথা হল অন্য জায়গায়, আপনারা বেঁচে থাকতে আমাকে কেন ওবামার কাছে যেতে হচ্ছে? আপনাদের শরীরে রক্ত থাকতে কেন নাস্তিকরা ইসলাম ও রাসুলকে কটাক্ষ করেও পার পেয়ে যাচ্ছে? এতগুলো প্রাণ ঝরে যাওয়ার পরেও, মসজিদে তালা লাগার পরেও, কোরআনে আগুন লাগার পরেও, আপনাদেরকেই যারা নিষিদ্ধ করেছে তাদের বিরুদ্ধে কেন আপনারা লড়তে না এসে ঘরের কোনায় বসে বসে বিভ্রান্তি ছড়াচ্ছেন? লজ্জা করে না? যখন মানুষকে ইসলাম আর জিহাদ শেখাতে লম্বা লম্বা নোট লিখেন তখন নিজেদের সংকীর্ণতার কথা মনে থাকে না? ফেসবুক ব্যবহার করে কার পাছায় তেল দিচ্ছেন, কার পকেটের প্রফিট ভারি করছেন?
আমি বলবো আপনাদের কারণেই আসিফ মহিউদ্দিনের নাস্তিক হওয়া সার্থক হয়েছে, থাবা বাবার নাস্তিকত্ব সার্থক হয়েছে, রাগিব হাসানের সকল লবিং সার্থক হয়েছে। ওরা এমন কিছু জ্ঞান পাপীকে বিপক্ষ হিসেবে পেয়েছে যারা শুধু "গণতন্ত্রের" দোহাই দিয়ে নাস্তিক মুরতাদদের আল্লাহর জমিনে দাবড়ে বাড়ানোকে মেনে নিবে। আমাদের কোন অজুহাত নেই, কোন অজুহাত নেই। আমরা ঐসব জ্ঞান পাপী কমলা কম্বল-তলার বাসিন্দা নই, হয় আমরা বেঁচে থাকবো নয় নাস্তিকরা বেঁচে থাকবে। তবু লড়াই থামবে না। পিটিশন আরও খোলা হবে, ফতোয়াবাজির মাধ্যমে ফিতনা ছড়ানো জ্ঞান পাপীদের মতো নিষ্প্রভ রক্তমাংস হীন পরগাছা হয়ে থাকবো না। ইনশাল্লাহ।
বিষয়: বিবিধ
২৪৪১ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন