জামায়াতের হোয়াইট হাউজ পিটিশন নিয়ে যত কথা

লিখেছেন লিখেছেন অকপটশুভ্র ১১ মার্চ, ২০১৩, ০৬:৫৯:৩৫ সন্ধ্যা

জামায়াত কেন হোয়াইট হাউজের পিটিশনে সাইন করবার জন্য উঠে পড়ে লেগেছে সেটা নিয়ে বেশ ফতোয়া জারি হচ্ছে। ফতোয়া তারাই জারি করছেন যারা এখনও লেপের তলা হতে ফেসবুক চালানো ছেড়ে উত্তপ্ত ময়দানে নামার পর্যাপ্ত সাহস সঞ্চয় করতে পারেন নাই। আপাত দৃষ্টিতে জামায়াত কেন সাদাচামড়ার আইনজীবী নিয়োগে উৎসাহী হইলো তারাতো কাফির! কেন আন্তর্জাতিক লবিতে ছুটোছুটি করছে তারাতো কুফরি শক্তি! হিউম্যান রাইটসের বিবৃতি পেতে কেন এতো কান্নাকাটি করছে তারাতো লেফটিষ্ট, এবং হোয়াইট হাউজের পিটিশনে কেন সাইন করতে উঠে পড়ে লেগেছে তারাতো ফেরাউনের চেয়েও অধম! এইরকম একেকটা প্রশ্ন আসছে, এবং এইগুলো কেন করা উচিৎ নয় সেই ব্যাক্ষ্যাও দেয়া হচ্ছে। সবই করা হচ্ছে নিরাপদ দূরত্বে বসে, লেপের তলায় কিংবা আরাম কেদারায় উম লাগিয়ে যুত করে বসে কীবোর্ড চেপে আয়েশের সাথে। নাহ! এ বড়ই গর্হিত কাজ হইতেছে, জামায়াতের উচিৎ হইলো রাস্তা-ঘাটে পুলিশের গুলি খেয়ে লাশ হয়ে ঘরে ফেরা, জেলে পড়ে পঁচে মরা, ফাঁশির দড়িতে নেতাদের ঝুলে যাওয়ার ব্যবস্থা করে ভবিষ্যতে “আমাদিগেরও সাইয়্যেদ কুতুব রহিয়াছে” বলার মতো ভবিষ্যৎ তৈরি করা। আর ফেসবুক উলামায়ে কিরাম, সেমিনারাতুল মুসলিমিন ও কমলা পোষ্টারায়ে সাইয়্যেদিন নিরাপদ দুরুত্বে বসে বসে জামায়াত বধের এই মহৎসবকে ব্যবচ্ছেদ করিয়া করিয়া যুক্তি দিয়া বলিবেন “তাহারা কুফরি গণতন্ত্রী ছিল, সেই গণতন্ত্রই তাহাদের গিলিয়াছে, উচিৎ শিক্ষা হইয়াছে”। কেউ যদি জিজ্ঞেস করে যে এইভাবে মুসলমানদের অকাতরে হত্যার পরেও আপনারা লেপের তলা কেন ছাড়িলেন না? তখন তারা অবলীলায় বলবে, উহারা তো ইসলামের অন্তর্ভুক্ত নয়, তাহারা গণতন্ত্রী, নারী নেতৃত্ব গ্রহণকারী, আল্লাহই তাহাদেরকে গজব দিয়াছেন।

ত্যাগ তিতিক্ষা এড়াইতে অজুহাত খুঁজলে পাওয়া যায় নাই এমন দিন ইতিহাসে পাওয়া যায় না। এমনকি ইতিহাসের শ্রেষ্ঠ গাদ্দারদেরও গাদ্দারির পেছনে যথেষ্ট যৌক্তিক অজুহাত ছিলো। যারা যারা এইসব অজুহাত তুলে ইসলাম ও মুসলিম জাতির এই ক্রান্তি-লগ্নেও আরাম কেদারায় বসে থেকে ব্যারামাক্রান্ত হয়েও নিজেদেরকে সালফে সালেহীনদের অনুসারী (?) ঠাওরাইতেছেন তাদের সাথে তর্কে লিপ্ত না হওয়ার জন্য সকল ত্যাগী ভাইদের প্রতি অনুরোধ রইলো। ইনারা ইনাদের বাইনারি চিন্তা-ভাবনা থেকে বের হয়ে কখনও চিন্তা করতে পারবেন বলে আমার মনে হয় না। উনাদের নিয়া বিশেষ চিন্তিত হওয়ার কিছু নেই।

উনাদের হাত কখনই আমাদের দিকে প্রসারিত হবে না, বরং এই দুর্দিনে আমাদের দিকে উনাদের হাত প্রসারিত না করার পক্ষে অযুত নিযুত কার্যকারণ তারা ইতোমধ্যেই বের করে রেখেছেন। এইভাবেই তাদের ব্রেইন গুলো ফরমেট করে দেয়া হয়েছে। আমরা শুধু এতটুকু শুকরিয়া আদায় করতে পারি যে “আর যাই হোক তারাও খোলাফায়ে রাশেদার সোনালী দিনকে ফিরিয়ে আনার স্বপ্ন দেখেন” অতটুকুই বা কম কিসের?

যেভাবেই হোক, সরকারের উপর চাপ সৃষ্টি করতে যতগুলো সম্ভাব্য পথ খোলা আছে তার সবগুলো দিয়েই আমাদের চেষ্টা করতে হবে। সেজন্য এদের সাথে তর্ক করে ফালতু সময় নষ্ট না করে বরং দেশের হলুদ মিডিয়া কিভাবে তথ্য লুকাচ্ছে, কিভাবে অনাচার, অনিয়ম, অবিচার ও জোচ্চুরি হচ্ছে তা ইন্টারন্যাশনাল পরিমণ্ডলে তুলে ধরুন। এদের সাথে দশ মিনিট তর্ক করার চাইতে আপনি দশটা টুইট করুন কাজে দিবে। মনে রাখবেন, হোয়াইট হাউজের পিটিশন মানে এই নয় যে আমরা আমেরিকার পায়ে মাথা ঠুকছি, আমরা বরং চলমান অবিচারের বিরুদ্ধে তাদেরকে মুখ খুলতে বাধ্য করতে যথা সাধ্য চেষ্টা করছি। আজীবন আমাদের পারস্পরিক এহেন অন্ধ বিরোধিতাকে পুঁজি করে নিজেদেরকে বিবাদে লিপ্ত রেখে যদি কুফফাররা আমাদের কে অবদমিত করে রাখতে পারে তাহলে আমরা কেন তাদেরকেই ব্যবহার করে তাদেরকে দিয়েই কিছু কাজ করিয়ে নিব না? আমরাতো কূটকৌশল করছি না, বরং তাদেরই প্রসেসে যে জিনিসটা বৈধ সেইটাই তাদেরকে করাতে চেষ্টা করছি। বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংগঠন বিশ্বাসে ইসলাম বিরোধী হয়েও চলমান অবিচারের বিরুদ্ধে যে ভূমিকা রেখেছে সেখান থেকে বাইনারি কমলা বাহিনীর জন্য অনেক লজ্জাজনক শিক্ষা আছে। আল্লাহ তাদেরকে বুঝার তৌফীক দান করুন।

মনে রাখবেন, কাজ যারা করে ভুল তাদেরই হয়, যারা বেশী কাজ করে তাদের বেশী ভুল হবে এটাই স্বাভাবিক। যারা কাজ করে না তাদের ভুল হবে কিভাবে? সেজন্য আল্লাহর কাছে এস্তেগফার করুন বেশী বেশী করে। অকর্মন্যের সমালোচনা সবীনয়ে পরিত্যায্য হোক। আমরা করতে গিয়ে ভুল করবো, সেজন্য মহান আল্লাহর কাছে ক্ষমা চাইবো এবং ভুল করতে করতেই শিখবো ইনশাল্লাহ। আল্লাহু মুস্তাআন।

বিষয়: বিবিধ

১৮৯০ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File