বাংলাদেশের নতুন ভারত সমীকরণ

লিখেছেন লিখেছেন অকপটশুভ্র ২০ মে, ২০১৪, ১১:১০:২৪ রাত

সম্ভবত বাংলাদেশের উপর ভারতের আধিপত্য ও নিয়ন্ত্রণকে আমাদেরকে এক সময় মেনেই নিতে হবে। এমনিতেই স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশ এখন স্রেফ গানের কথা, কবিতার কথা, রাজনৈতিক নেতার বক্তৃতার কথা এবং ঘুম পাড়ানিয়া মাসীর গান। এটি একটি শিরোনাম মাত্র। যার আদলে নতজানু বিদেশ নীতি ও ভারতের আজ্ঞাবহ হয়ে ক্ষমতার স্থায়িত্ব মজবুত করাটাই হচ্ছে শুধু। বাংলাদেশ তার ঝাঁপি খুলে দিয়ে বসে আছে ভারতের কাছে আর ভারত তার সবগুলো দরজার কপাট বন্ধ রেখে বন্ধুত্বের বাহানা করে যাচ্ছে। আমাদের উপর বিশ্ব-মোড়লের খবরদারি, বৈদেশিক ঋণের দাসখত এবং আমাদের আদর্শিক দীনতা, আত্মপরিচয়-হীনতা এদেশের সার্বভৌমত্বের সার্থকতাকে শুধু ক্ষুণ্ণই করেনি অর্থহীনও করেছে। তার উপর পার্শ্ববর্তী দেশের একচ্ছত্র আধিপত্য ও আমাদের সাংস্কৃতিক দেউলিয়াপনা বাংলাদেশের সার্বভৌমত্বকে শুধু প্রশ্নবিদ্ধ নয় অলীক করে ফেলেছে। আভ্যন্তরীণ ভাবেও আমরা আমাদের সার্বভৌমত্বকে সব রকম ভাবে প্রশ্নবিদ্ধ করে ফেলেছি। দেশের একটা গোষ্ঠী চাইলেই এ দেশের সংবিধান পরিবর্তন করে ফেলছে অন্যদিকে সংবিধান অপরিবর্তিত রেখেই যতটুকু ন্যায় বিচার করা সম্ভব তার তিল পরিমাণও হচ্ছে না। তাহলে একটি স্বাধীন সার্বভৌম দেশের সংবিধানের সার্থকতাটা কোথায়?

ভারতে হয়ে যাওয়া সাম্প্রতিক লোকসভার নির্বাচনের মধ্যদিয়ে আমার রাজনৈতিক বিশ্লেষক মন অনেক নির্মম কিছু বিষয়ের আভাষ পেয়েছে। নির্বাচনের আগ থেকেই বিরোধীদলের নির্বাচনের ফলাফলের জন্য ঠায় অপেক্ষা করা এবং চূড়ান্ত ফলাফল ঘোষণার পর পরই বিরোধীদলীয় নেতা দুদুর পক্ষ থেকে সরকার পতনের জন্য ২৪ ঘণ্টা সময় বেঁধে দেয়া থেকে অনেক কিছুই পরিষ্কার হয়ে যায়। এদিকে জামায়াতের পক্ষ থেকে নরেন্দ্র মোদিকে অভিনন্দন জানানোর মধ্যেও রয়েছে প্রচ্ছন্ন ইঙ্গিত। জামায়াতের এই বিষয়টি নিয়ে অধিকাংশ মানুষই এতদিন ফালতু বিতর্ক করেছেন। অবশ্য ইসলাম পন্থীদের মধ্যে যারা রাজনৈতিক চিন্তা করেন এসব বিষয়ে তাদের বিশ্লেষণ গুলো আদতে কোনও বিশ্লেষণই হয় না বরং পরচর্চা হয় মাত্র। কোয়ালিটির ঘাটতিটা ঢাকতে গিয়ে তাদেরকে সব সময়েই এরূপ মূল্যহীন কাঁদা ছোড়াছুড়িতে লিপ্ত হতে দেখা যায়। এটার অবসান শিগগিরই হবে বলে মনে করি না।

খুব বেশি বিস্তারিত আলোচনায় যাবো না। কারণ ভারতের বিজেপি ও কংগ্রেস এর সাথে বাংলাদেশের বিএনপি ও আওয়ামীলীগের সহজ সমীকরণ আমরা সবাই জানি। আওয়ামীলীগ ও কংগ্রেসের মধ্যকার ঐতিহাসিক সম্পর্ক সবাই জানেন। এদিকে কদিন আগেও বিএনপির ভারত বিরোধী অবস্থান নিয়ে পত্র-পত্রিকায় কথা হত। খালেদা জিয়ার ভারত সফর এবং ভারত প্রেসিডেন্টের বাংলাদেশ সফরে পরস্পরের সাক্ষাৎ না দেয়া নিয়েও সবার জানা আছে বেশ। এর কিছুদিন পরেই ভারত বিরোধী খালেদার ভারতের সাথে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্কে প্রতি জোর দেয়াটা অনেক গুরুত্ব বহন করে। এখন তো শোনা যাচ্ছে তারেক রহমানের সাথে মোদীর সম্পর্ক এক যুগেরও বেশি সময় ধরে। এদিকে জামায়াতের ভারত বিরোধী অবস্থান যে বিএনপির চেয়েও কট্টর ছিল তা বলাই বাহুল্য। সাইদী সাহেব থেকে শুরু করে জামায়াতের অনেক নেতাই প্রকাশ্যে ভারত বিরোধী চরম মনোভাব প্রকাশ করতেন প্রায়শই। সেই জামায়াতের পক্ষ থেকে নরেন্দ্রমোদিকে আগ বাড়িয়ে অভিনন্দন জানানোতে অবশ্যই গুরুত্বপূর্ণ বার্তা রয়েছে।

আমি মনে করি বাংলাদেশের রাজনৈতিক ভাগ্য নির্ধারণে ভারত নতুন মাত্রায় হাজির হয়েছে। আর এই সুযোগটি নিঃসন্দেহে আওয়ামীলীগই ভারতকে করে দিয়েছে। ক্ষমতায় আসীন হওয়া এবং তাকে স্থায়িত্ব দেয়ার জন্য আওয়ামীলীগ এই সুযোগ টুকু ভারতকে দিয়েছে। এই সুযোগে ভারত সুঁই হয়ে ঢুকেছে এবং নিঃসন্দেহে প্রকাণ্ড আকার নিয়ে বের হবে। তাছাড়া ভারত থেকে আওয়ামীলীগ যেই সাপোর্ট পেয়েছে তার মূল্যায়ন বিএনপি-জামায়াত সঠিক ভাবে করতে পেরেছে বলেই তাদের মধ্যে এই পরিবর্তনটি এসেছে। সারা বিশ্বকে এক পাশে রেখে শুধু ভারতের সাহায্য নিয়ে আওয়ামী-বাম শক্তি বাংলাদেশের মাটিতে যে পরিমাণ মানবাধিকার লঙ্ঘন, লুটপাট ও অগণতান্ত্রিক ভাবে ক্ষমতায় টিকে গিয়েছে সেটাকে নিয়ে বিএনপি-জামায়াত কে অবশ্যই বিবেচনা করতে হয়েছে। সেকারণেই ভারত প্রশ্নে আজকের এই পট পরিবর্তন।

জামায়াত-বিএনপি উভয়েরই কথা-বার্তা এবং বিবৃতিতে ভারতের সাথে সমতার ভিত্তিতে বন্ধুত্বের সম্পর্কের প্রতি জোর দেয়া হয়েছে। আদতে যে এটা কিছুতেই সম্ভব না তা কে না জানে! আমি মনে করি বিএনপি-জামায়াতও ব্যাপারটা জানে। তবে গুরুত্বপূর্ণ যে ব্যাপারটা অদূর ভবিষ্যতে ঘটতে যাচ্ছে সেটা হল খুবই করুণ। বিএনপি-জামায়াতের ভারত বিরোধী অবস্থানের কারণে একসময় ভারতকে বাংলাদেশের রক্ত চুষতে ডাবল কোয়েন্সিডেন্টের জন্য অপেক্ষা করতে হতো। সেটা হল, একই সময়ে বাংলাদেশে আওয়ামীলীগ ক্ষমতায় আসা এবং ভারতে কংগ্রেসের ক্ষমতায় আসা।কিন্তু এখন আর ভারতকে সে জন্যে অপেক্ষা করতে হবে না। ভারতে এক দল অন্তত পর পর দুই টার্ম (দশ বছর) ক্ষমতায় থাকে আর বাংলাদেশে একেক টার্মে একেক সরকার (পাঁচ বছর) ক্ষমতায় থাকে। সুতরাং ভারতের ক্ষমতায় যারাই থাকুক না কেন তারা তাদের বাংলাদেশি মিত্রদেরকে বাংলাদেশের ক্ষমতায় আসীন হিসেবে পাবেই (হয়তো প্রথম পাঁচ বছরে নয়তো শেষ পাঁচ বছরে)। ধরুন বিজেপি এখন ক্ষমতায় কিন্তু তার মিত্র বিএনপি এখন ক্ষমতায় নেই। কিন্তু নেক্সট নির্বাচনে বিএনপি ক্ষমতায় চলে এলে বিজেপি তাদের মিত্রদেরকে অন্তত চার/পাঁচ বছরের জন্য ক্ষমতায় পাবে। তখন বিজেপি বাংলাদেশকে নিশ্চিন্তে চুষে খেতে পারবে। এভাবে বাংলাদেশে এখন যেই দলই ক্ষমতায় থাকুক ভারতের ক্ষমতাসীন দল তাদের বাংলাদেশি মিত্রদেরকে কোনোনা কোন ভাবে ক্ষমতায় পাবেই। সুতরাং বিজেপি ও কংগ্রেস উভয়ের জন্যই বাংলাদেশ কে ছিঁড়ে খাওয়ার জন্য স্ব স্ব মিত্র যোগাড় হয়ে গেল।

ভারত বিরোধী অবস্থানে পরিবর্তন আসায় বাংলাদেশের নেগোসিয়েশন পাওয়ারটাও হ্রাস পাবে। বাংলাদেশের রাজনীতিতে ভারতের নিয়ন্ত্রণ আরও বৃদ্ধি পাবে। ভারতের বিরুদ্ধে বাংলাদেশের পক্ষে দাঁড়ানোর জন্য আর কোনও রাজনৈতিক শক্তি থাকবে না। এ কারণে বাংলাদেশের উপর ভারতের আধিপত্য ও নিয়ন্ত্রণকে আমাদেরকে এক সময় মেনেই নিতে হবে।

বিষয়: বিবিধ

১২৭৩ বার পঠিত, ২ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

223997
২১ মে ২০১৪ রাত ১২:৫৯
সুশীল লিখেছেন : ধন্যবাদ ভালো লাগলো । দেখা যাক কি হয়
224083
২১ মে ২০১৪ সকাল ১০:৪৭
রিদওয়ান কবির সবুজ লিখেছেন : মোদিকে বাংলাদেশকে তার সেকেন্ড হোম বলার মাধ্যমে বাংলাদেশ সম্পর্কে তার সিদ্ধান্ত নেয়ার ক্ষমতা আছে এই স্বিকৃতি দেয়া হয়েছে।

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File