আন্ধার রাইত্তে বাত্তি মারে কোন হালায়!

লিখেছেন লিখেছেন অকপটশুভ্র ১১ মে, ২০১৪, ০৭:২৩:৫১ সন্ধ্যা

ব্যাপারটা হল এইরকম যে সাংবাদিকরা পড়াইলেন আমরা পড়লাম আর একশনে গেলাম। সাংবাদিকরা আমাদের পড়াইলেন যে চেতনা এক মহামূল্য জিনিস। এর জন্য কয়েকটা ফাঁসি প্রচুর দরকার তাই চলো যুদ্ধাপরাধী যুদ্ধাপরাধী খেলি। আমরাও পড়লাম, একটা রাক্ষুসে দাঁত কেলানো ছবি সেই সাথে কালো হরফের কিছু লেখা। কতটুকু সত্য, কতটুকু মিথ্যা কিংবা কতটুকু টুইষ্টেড তা আমরা কোনোদিন ভেবেও দেখি নাই। বিনা বাক্য ব্যয়ে বিশ্বাস করেছি। কিন্তু ফাঁসি হলো না, আবার সক্রিয় হলেন সাংবাদিকরা। ব্লগারদের সামনে ঠেলে দিয়ে বলেন শাহবাগে যাও, জাতিকে বুঝিয়ে সুঝিয়ে নিয়ে আসার দায়িত্ব আমাদের। শাহবাগে আসলো কিছু লোক, সেইটাকে মহা জনসমুদ্র বলে পত্রিকায় ছেপে দিল সাংবাদিকরা। জনতা বিশ্বাস করলো। লোক আসলো, ফাঁসিও হল। কিন্তু যখন রায় কেন্দ্র করে টপাটপ লাশ পড়তে লাগলো তখন আর আমাদের ভালো লাগে না। আমরা বোকার মতো বলতে লাগলাম "এই কি আমরা চেয়েছিলাম!"।

গুম শুরু হল, যাকে তাকে ধরে নিয়ে ঘুষ খেয়ে ছেড়ে দেয়া শুরু হল। পয়েন্ট ব্ল্যাংক শুট করে করে তরুণ-যুবক ছাত্রদেরকে পঙ্গু করা শুরু হল। ক্রস ফায়ারে দিয়ে রাজনৈতিক হত্যাকাণ্ড শুরু হলো। কিন্তু সাংবাদিকরা এইগুলো নিয়ে আমাদের কিছুই পড়াইলেন না, আমরাও পড়লাম না একশনেও গেলাম না। সাংবাদিকরা জানেন কোনটা পড়ায়ে জনগণকে মাতাল বানিয়ে রাখতে হয়। চেতনা, দেশ, মুক্তিযুদ্ধ, বিশাল মানব পতাকা, লাখো কণ্ঠে জাতিয় সঙ্গীত ব্লা ব্লা ব্লা। কিন্তু এই যে গুম, খুন, পয়েন্ট ব্ল্যাংক শুট এবং গ্রেফতার বাণিজ্য এগুলো যখন চলছে তখন সাংবাদিকরা আমাদের পড়ালেন "শত শত গাছ কেটে ফেলার মানবিক সবক"। এই শত শত গাছ হত্যার চরম করুন খবর আরেক গাছের মৃত্যুর দামে তৈরি চেয়ার টেবিলে বসে নিউজ পেপারে পড়ে আমাদের বুকটা হাহাকার করে উঠলো। আমরা বললাম কতো নিষ্ঠুর এরা! অথচ শত শত জানাজা নামাজ হয়ে গেলো, শত শত মা জানেন না কেন তার ছেলেটাকে মরতেই হবে। কেন তার তাগড়া যুবক ছেলেটা বছর ধরে বাড়ি ফিরতে পারে না। কেন তার ছেলেকে নিখোঁজ বলা হচ্ছে, কেন সে ফেরে না। এগুলো নিয়ে আমাদেরকে সাংবাদিকরা কিছুই পড়ালেন না। আমরাও একশনে গেলাম না।

এর পরে হঠাৎ খবর এলো নারায়ণগঞ্জ থেকে। সেখানে সমগোত্রীয় গুম হল এবং গুম হওয়া মানুষ খুন হয়ে শীতলক্ষ্যায় ভেসে উঠলো। এইবার সাংবাদিকরা আমাদের মানবিকতা পড়াইতে লাগলেন, এখন নাকি মায়ের বুক খালি হয়, স্ত্রীর আহাজারির শব্দ এখন শোনা যায় আগের গুলা শোনা যায় নাই! গুম একটা ভয়ংকর জিনিস, আগেরগুলা লাভলী ছিল! আমরা পড়লাম। একশনে গেলাম, সরকার নড়ে চড়ে বসলো! ঘটনা যাই হোক, সব কিছু এক নুর হোসেনের কাঁধে দিয়ে সাবাড়। চলেন একখানা গানা হয়ে যাক!

আন্ধার রাইত্তে বাত্তি মারে কোন হালায়! কোন হালায়!!

নুরালম! নুরালম!! নুরালম চোরায়!!!

কদিন আগে সাংবাদিকরা আমাদেরকে পড়াইলেন ডাক্তাররা ডাকাত। এদের অবহেলার কারণে রোগী মরে একাকার! মসজিদের ইমামরা জানাজা পড়াইতে পড়াইতে ক্লান্ত! কারণ! ডাক্তার গন সাংবাদিকদের অপ-সাংবাদিকতায় বিরক্ত হয়ে কিছু উত্তম মাধ্যম দিয়ে ভুল করে ফেলেছেন। এদেশের সাংবাদিকরা যে খোদার আসনে আসীন তা ডাক্তাররা বুঝে উঠতে পারেন নাই। সাংবাদিকদের হাত হতে হঠাৎ ডাক্তার বিরোধী অসংখ্য মানবিক গল্প রচিত হতে লাগলো। আমরা বিশ্বাস করতে শুরু করলাম। আমরা ক্ষেপে গেলাম এর পর ডাক্তারদেরকে গন ধোলাই দেয়ার কাজ শুরু হয়ে গেলো। অথচ আমরা একটা ছোট প্রশ্ন মাথায় আনতে ভুলে গেলাম যে ঠিক কতো টাকা উৎকোচের বিনিময়ে ডাক্তারদের এই "অমানবিক" কর্মকাণ্ডের কথা সাংবাদিকরা এতদিন বলেন নাই। বাঙ্গালী জাতি হিসেবে এখনও স্ট্যান্ডার্ড পর্যায়ে যাইতে পারে নাই তার প্রমাণ এ দেশের উচ্চশিক্ষিত ও এরিষ্টোকেটেড চিকিৎসক শ্রেণীর দিকে তাকালে সহজেই অনুমেয়। লিফট নিয়ে তাদের কাছ থেকে আমরা যে আচরণ দেখেছি। নিজেদের কে স্যার বলে ডাকার যে দাবি আমরা তাদের কাছ থেকে শুনেছি সব মিলে এটাই প্রমাণ হয় যে এদেশের শিক্ষিত ডাক্তারগুলা মুখস্থ বিদ্যায় পারদর্শী হলেও বেসিক সিভিক কার্টেসি এরা জানে না। আর যে জাতি মানসিক ও জ্ঞানের দিক থেকে যতটা উন্নত সে এসব ব্যাপারে ততটাই পরিপক্বতার পরিচয় দিবে। কিন্তু ডাক্তাররা সেটা দিতে পারেন নাই। আমাদের সাংবাদিক মহোদয় দের উচিৎ ছিল রাজনৈতিক ও আদর্শিক হিংসার রোগ-বাহক না হয়ে এইসব জিনিসের সবক দেয়া। এইটা ডাক্তারদের কাজ না, এগুলা এই সাংবাদিকদের কাজ কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য আমাদের দেশের সাংবাদিকরা এদেশের সবচেয়ে দুর্নীতিগ্রস্থদের সেরা। এরাই সবচেয়ে ভয়ংকর মিথ্যাবাদী। এরা যেভাবে সত্য লুকায় এবং তথ্য কে বিকৃত করে সেটা বিশ্বের ইতিহাসের খুবই বিরল। এবং এর ফলাফল খুবই স্পষ্ট। আওয়ামীলীগ মরলে আমার গায়ে লাগে না আর জামায়াত মরলে আপনাদের গায়ে লাগবে না। সুতরাং রক্তপাতই হল মিথ্যাবাদী সাংবাদিকদের অভিশপ্ত কর্মকাণ্ডের ফলাফল।

বিষয়: বিবিধ

১৪৬৩ বার পঠিত, ৮ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

220344
১১ মে ২০১৪ সন্ধ্যা ০৭:৪৪
লিখেছেন : খুবই চমৎকার লেখা। চালিয়ে যান।
১১ মে ২০১৪ সন্ধ্যা ০৭:৪৮
167993
অকপটশুভ্র লিখেছেন : Good Luck Happy
220351
১১ মে ২০১৪ রাত ০৮:২৩
আল্লাহর সন্তুষ্টি লিখেছেন :
ভাই আপনি এত মজা করে লেখেন কেমনে ??

আল্লাহ্‌ আপনাকে সত্য তুলে ধরার তৌফিক দান করুক ....
আমিন,

আমাকেও দান করুক , আমিন ,
১১ মে ২০১৪ রাত ০৯:০১
168019
অকপটশুভ্র লিখেছেন : আপনার মন্তব্যে বিনীত হলাম। যাযাকাল্লাহ। Happy
220374
১১ মে ২০১৪ রাত ০৯:৪৯
চোথাবাজ লিখেছেন : ভালো লাগল। দারুন্স। অনেক দিন পর যে ভায়া? ভাবী ভালো?
Yawn Yawn
১১ মে ২০১৪ রাত ১০:১৮
168025
অকপটশুভ্র লিখেছেন : হ্যাঁ অনেক দিন পরেই বটে! ভাবির খবর জানিনা ভায়া! আল্লাহ জানেন তিনি কেমন আছেন Happy
220386
১১ মে ২০১৪ রাত ১০:৪১
জাফরানি লিখেছেন : MashaAllah! Great! jazakallah...!
255907
১৯ আগস্ট ২০১৪ দুপুর ০৩:২৫
মামুন লিখেছেন : চমৎকার লেখাটির জন্য আপনাকে অনেক ধন্যবাদ। হলুদ সাংবাদিকতা পরিহার করা হোক।

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File