যুদ্ধংদেহী অধিকার আন্দোলন সুস্থ সমাজের অন্তরায়

লিখেছেন লিখেছেন অকপটশুভ্র ১২ অক্টোবর, ২০১৩, ১০:৩৪:৩০ সকাল



অধিকারের জঞ্জাল থেকে আমরা মুক্ত হবো কবে? নারী অধিকার, ব্যক্তি অধিকার, শিশু অধিকার, বৃদ্ধ অধিকার, মুক্তবুদ্ধি চর্চার অধিকার... এভাবে অগণিত অধিকারের দাবীর জঞ্জালে আমাদের অগ্রগতির চাকা স্থবির হয়ে গেছে। কেউ যদি একটু চিন্তা করেন তাহলে বুঝতে পারবেন যে বিভিন্ন অধিকারের নামে ব্যক্তি থেকে শুরু করে সমাজের বিভিন্ন শ্রেণি পেশা ও শাখা-উপশাখার জনমানুষকে যুদ্ধংদেহী অবস্থায় দাঁড় করিয়ে দেয়া হয়েছে তাঁদেরই স্ব স্ব সমাজের বিরুদ্ধে। অধিকারের কথা যখন বলা হয় তখন একটি দুটি নয় বরং একাধিক ব্যাপারে অধিকার চাওয়া হয়, ব্যাপারটা কিন্তু এখানেই শেষ হয় না। এই অধিকারের যুদ্ধে সমাজের আর দশটা শাখা-প্রশাখাকে মুখোমুখি দাঁড় করিয়ে দেয়া হয়। ধরুন নারী অধিকারের কথাই যদি বলি, নারী অধিকারের দাবিদার উচ্চ কণ্ঠের মাঝে সমাজ বিরুদ্ধ খেদের পাশাপাশি পুরুষের প্রতি যে খেদ থাকে তা যদি আপনার দৃষ্টি গোচর না হয়ে থাকে তাহলে আপনার প্রতি আমার সৎপরামর্শ থাকবে মনের চোখ খুলে আরেকটু সচেতন হয়ে পর্যবেক্ষণ করতে শিখুন। এভাবে অধিকার আদায়ে সমাজ বিরুদ্ধ এবং সংশ্লিষ্ট সামাজিক শ্রেণি বিরুদ্ধ যুদ্ধমনোভাবাপন্ন অবস্থান আমাদের উন্নয়ন ও অগ্রগতিকে সুদূর পরাহত করছে দিন দিন।

প্রায় প্রতিটি অধিকার আন্দোলনের অবস্থান হয় সমাজের বিপরীত, নয় ধর্মের বিপরীত অথবা সমাজেরই কোন এক শ্রেণির বিপরীত, এ অবস্থান শুধু যে বিপরীত তা ই নয় বরং অধিকাংশ ক্ষেত্রে এ অবস্থান শত্রুভাবাপন্ন অবস্থানে চলে যায় এবং পারস্পরিক ঘৃণা ছড়ানোর কাজেই ব্যবহৃত হয়। সুতরাং অধিকার আদায়ের যে প্রচলিত আন্দোলন জারি আছে তা সমাজ বনাম মানুষ এবং সমাজের মধ্যেই একটি নির্দিষ্ট শ্রেণি বনাম অন্য একটি শ্রেণির মধ্যে দ্বন্দ্বের সৃষ্টি করে। সব মিলে এভাবে একটি সমাজে সুস্থ-স্বাভাবিক জীবনধারার যে ব্যত্যয় ঘটে তার প্রভাব ও ক্ষতির পরিমাণ অত্যন্ত বিশাল। একটি সমাজে আভ্যন্তরীণ ভাবে শত্রুভাবাপন্ন মানসিকতার অনুপ্রবেশ নিশ্চয় কোনও ভালো ফল বয়ে আনে না।

সমাজ কোনও ব্যক্তি নয় যে তাঁকে আপনি ক্ষতিগ্রস্ত করলে তা ঐ ব্যক্তি বা তার সাথে সংশ্লিষ্ট বলয়ের ক্ষতির ক্ষতি দিয়েই শেষ হয়ে যাবে। সমাজ হল সবার সম্মিলনে গড়ে ওঠা একটি ব্যবস্থা। এখানে সমাজের কোনও ক্ষতি হলে তার প্রভাব থেকে কোনও অধিকারবাদি ই রেহাই পাবেন না, পাচ্ছেনও না। সেজন্য সমাজকে সুস্থ করা, সমাজের সংস্কৃতিকে পরিশুদ্ধ করা এবং সামাজিক রীতি-নীতির পরিশুদ্ধতা ও তার সুষ্ঠু প্রয়োগ করার প্রচেষ্টা বাদ দিয়ে শত শত ভাগে বিভক্ত হয়ে অধিকারটুকু আদায় করে নিয়ে কেটে পড়ার মানসিকতা কিছুতেই শান্তির সুবাতাস বয়ে আনতে পারে না। পিতার মৃত্যুর পরে যে পরিবারের সন্তানরা নিজের ভাগটুকু ষোলকলা আদায় করে নেয়ার মানসিকতা নিয়ে ভাগ বাটোয়ারায় বসেন, যাদের মধ্যে বদান্যতা ও ছাড় দেয়ার কোনও মানসিকতা থাকে না তাদের জন্য সেই ভাগ বাটোয়ারার সমাবেশটাই শেষ সমাবেশ। সম্প্রীতি পূর্ণ কোনও সম্মিলন সে পরিবারে আর হওয়ার সুযোগ থাকে না। কিন্তু পিতৃ বিয়োগের পরে যে সন্তানরা উদার মানসিকতা নিয়ে ভাগ বাটোয়ারায় বসেন তাদের ভালোবাসার বন্ধন মৃত্যুর কাছেও হার মেনে যায়। একই ভাবে আমরা যদি আমাদের সমাজের কথা চিন্তা করি তাহলে আমাদের জন্য করণীয় কাজ নিয়ে বেশি কিছু সবক দেয়ার থাকে না।

সেজন্য সর্বোপরি যা বলার তা হল, অধিকারের শ্লোগান বন্ধকরা চলবে না তবে সেই শ্লোগানের ধারায় আনতে হবে পরিবর্তন। অধিকার ষোলকলা আদায়ের স্বার্থপর তাড়না নিয়ে সমাজের বিপরীতে দাঁড়িয়ে থাকার চাইতে সমাজের সংস্কৃতি ও রীতি-নীতির পরিশুদ্ধির দিকে ইতিবাচক মানসিকতা নিয়ে কাজ করার বিকল্প নেই। আর এটা ততক্ষণ পর্যন্ত সম্ভব নয় যতক্ষণ না আমাদের মধ্যে পাড়া-প্রতিবেশী, আত্মীয় স্বজন, ও সমাজের প্রতি দায়বদ্ধতার অনুভূতিকে জাগ্রত করা যাবে। ইদানীং যেভাবে ব্যক্তিগত অধিকারকে ব্যক্তিগত ব্যাপারের সাথে গুলিয়ে ফেলা হচ্ছে এবং এইভাবে ব্যক্তির একান্ত নিজস্ব কিন্তু সমাজের জন্য প্রভাব বিস্তার করে এমন কাজকেও ব্যক্তিগত অধিকারের অজুহাত দিয়ে ছাড় দেয়ার প্রচেষ্টা চলছে সেটা ব্যক্তির বদান্যতা, দায়বদ্ধতা ও আনুগত্যকে ধ্বংস করে স্বেচ্ছাচারিতার প্রতিষ্ঠা করছে। যার কারণে বহুমুখী সামাজিক দ্বন্দ্বের ঘেরাটোপে পরে আমাদের সমাজ ব্যবস্থা ভেঙ্গে চুরমার হয়ে যাচ্ছে। অথচ আমরা নিজেরাই জানিনা পশ্চিমাদের শিখিয়ে দেয়া অধিকার আন্দোলনের তোড়ে ভেস্তে যাচ্ছে আমাদের সৌহার্দপূর্ণ সমাজ ব্যবস্থা। আমাদের মনোজগতের পশ্চিমাদের প্রতি দাসত্ব পূর্ণ প্রবণতা থেকে বেরিয়ে আসতে হবে।

বিষয়: বিবিধ

১৮০২ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File