মিশরঃ একটি প্রায় আদ্যোপান্ত ঘটনা প্রবাহ
লিখেছেন লিখেছেন অকপটশুভ্র ০৬ জুলাই, ২০১৩, ১২:৩৩:৩৮ রাত
নাসের সিটিতে মুরসির সমর্থকদের সমাবেশ
আসুন মিশর পরিস্থিতি নিয়ে সে দেশের সেনাবাহিনীর ৪৮ ঘণ্টার আল্টিমেটাম পরবর্তী সময় থেকে এখন পর্যন্ত একটা রিভিউ হয়ে যাক। প্রেসিডেন্ট মুরসি সেনাবাহিনীর আল্টিমেটাম প্রত্যাখ্যান করে ছয় মাসের মধ্যে নতুন সরকার গঠনের প্রস্তাব দেয়ার পরও সেনাবাহিনী মিলিটারি ইন্টারভেনশনের জন্য এগিয়ে আসে। এর পর ইজিপশিয়ান প্রেসিডেন্ট মুরসির পররাষ্ট্র ও আন্তর্জাতিক অধিদপ্তর থেকে একটি তাৎক্ষনিক ঐতিহাসিক স্টেটমেন্ট দেয়া হয়। যেখানে প্রথমেই সকল আগাম ঝুঁকির কথা অবগত থেকে এইভাবে শুরু করা হয় As I write these lines I am fully aware that these may be the last lines I get to post on this page. অর্থাৎ আমি যখন এই কথাগুলো লিখছি তখন আমি সম্পূর্ণ অবগত যে সম্ভবত এই কথাগুলোই হতে যাচ্ছে আমার পোষ্ট করা শেষ কথা। উক্ত নোটে মিলিটারি ইন্টারভেনশন কে সম্পূর্ণ সেনা অভ্যুত্থান হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়। যেখানে ২৫শে জানুয়ারি ২০১১ এর বিপ্লবের উদ্দেশ্য ও পটভূমির সংক্ষিপ্ত ব্যাখ্যা দিয়ে বলা হয় এখনকার দিনে কোন সেনা অভ্যুত্থানই সাধারণ জনতার বড় ধরণের রক্তপাত ছাড়া সম্ভব নয়। সেখানে দাবি করা হয় যে মিশরের মিডিয়া এবং কিছু আন্তর্জাতিক মিডিয়া পরিকল্পিতভাবে প্রচার প্রোপাগান্ডা চালিয়ে ২০১১ পরবর্তী সকল তাণ্ডবের জন্যে ইখওয়ানকেই দায়ী করে চলেছে। এর পর সেখানে মিডিয়াতে কোনদিনও প্রচার পায়নি মুরসির এমন কিছু পদক্ষেপকে একে একে বর্ণনা করা হয়। যেমন
১। জানুয়ারি থেকেই মুরসি জাতিয় সংলাপের আহবান করছিলেন, যা বার বার বিরোধীরা প্রত্যাখ্যান করে বিপরীতে তারা সেনাবাহিনীকে সরকারকে উচ্ছেদ করার জন্য বার বার উসকানি দিতে থাকে
২। এমনকি তিনি কেবিনেটে সম্পুর্ণ পরিবর্তন আনার একটি প্রস্তাবকেও বাস্তবায়নের জন্য আলাপ আলোচনা করছিলেন
৩। পাবলিক প্রসিকিউটর পরিবর্তন করা ও সংবিধানে সংশোধনী আনার ব্যাপারেও চিন্তা করা হচ্ছিলো
শেষমেশ যখন মুরসি সরাসরি ছয় মাসের মধ্যে নতুন সরকার গঠনের প্রস্তাব দিলেন তখন গণতন্ত্রে বিশ্বাসী কেউ সেনা অভ্যুত্থানের কথা চিন্তাও করতে পারে না। কিন্তু আসল ব্যাপার হচ্ছে স্বার্থপরদের স্বার্থ রক্ষার্থে একটি সেনা অভ্যুত্থান অতীব জরুরী হয়ে পড়েছিলো বলেই মুরসির পক্ষ থেকে এত বড় ধরণের কোঅর্ডিনেশন বা সহযোগিতা পেয়েও কেউ আলোচনা বা নেগসিয়েশনের টেবিলে বসে নি।
হলুদ সাংবাদিকতার ছোবলে বাংলাদেশ আজ যেমন ধ্বংসের দ্বার প্রান্তে তেমনি মিশরও কোন অংশে কম নয়। উপরের পোষ্টে মিডিয়ার অপপ্রচারের যে দাবি তোলা হয়েছে তার ভুরি ভুরি বাস্তব প্রমাণ রয়েছে হাতের নাগালেই। কায়রো ইউনিভার্সিটিতে ২১ জন কে হত্যার দায় মুরসির সমর্থকদের উপরে চাপিয়ে দিয়ে বিভিন্ন মিডিয়াতে প্রচার করা হলেও পরে দেখা যায় ব্যপারটা পুরাই উলটো। এখানে একটি ব্রাদারহুড বিরোধী সাইটে সে খবরের সত্য তথ্যটি জানতে পারবেন আর এখানে সে হত্যাকাণ্ডের ভিডিও চিত্রটি পাবেন এদিকে বিবিসি ও সি এন এন তাদের খবর পরিবেশনের সময় চরম ধূর্ততার আশ্রয় নিয়েছিলো। তারা আহত মুরসি সমর্থকের ছবির নিচে ক্যাপশনে “আহত মুরসির সমর্থক” না লিখে জেনারেল ক্যাপশন দেয়। এবং মুরসি বিরোধীদের সমাবেশে শান্তিপূর্ণ অবস্থানের ছবি প্রচার করলেও মুরসির সমর্থকদের ছবি প্রচারের বেছে বেছে সময় লাঠিসোটা হাতে ছবিগুলো প্রচার করে।
এদিকে মুসলিম ব্রাদারহুডের পক্ষ থেকে জানানো হয় যে সেনা অভ্যুত্থান ঠেকাতে তারা প্রয়োজনে ট্যাংকের সামনে দাঁড়িয়ে যাবে। নীচের ছবিতে ব্রাদারহুডের কর্মিদেরকে ট্যাংক দখলরত অবস্থায় দেখা যাচ্ছে।
এদিকে মুসলিম ব্রাদারহুডের মুফতি আব্দেল রাহমান আল বারর বলেন প্রেসিডেন্ট মুরসির বৈধতাকে সম্মানের সাথে রক্ষা করতে হবে। তিনি বলেন “বিজয় অর্জন ছাড়া আমরা ঘরে ফিরে যাবো না। অন্যথা তাদেরকে আমাদের লাশ কবরে পৌঁছে দিতে হবে” তিনি বলেন “মুবারকের লুটেরা বাহিনীর জন্য এদেশে কোন স্থান নেই”
সেনা অভ্যুত্থানের পর শুরু হয় গন মাধ্যমের টুটি চেপে ধরার কাজ। সেনাবাহিনী Egypt25 television টিভি চ্যানেলটি বন্ধ কয়রে দেয়। শুধু তাই নয় বেশ কয়েকটি ইসলামি টিভি চ্যানেলও (Al-Nas and Al-Hafez) বন্ধ কয়রে দেয়া হয়।
একজন তাঁর ফেসবুকে লিখেছেন “মুরসির বিরুদ্ধে বড় অভিযোগ (যা এ আর্টিকেল পড়ার আগে আমিও কিছুটা বিশ্বাস করেছিলাম ) তিনি বিরোধী দলের সাথে মিলে মিশে কাজ করেন নি। এটা কত বড় মিথ্যাচার তা এই আর্টিকেল না পড়লে বুঝা মুশকিল। তিনি বামপন্থি প্রেসিডেন্ট প্রার্থী সামদান সাবীহকে ভাইস প্রেসিডেন্ট হওয়ার পর্যন্ত অফার দিয়েছিলেন। মন্ত্রীসভায় ইখওয়ানপন্থি ছিল মাত্র ৩০% বাকিরা রাম-বাম-সেনা পন্থি। আসলে এসব কোন কথা না, ইখওয়ান ক্ষমতায় আসার ফলে সারা দুনিয়ায় ইসলামপন্থী কর্মীদের মাঝে যে আশার সৃষ্টি হয়েছিল সেটা দমন করাই মূলত এই ক্যু। অনুরোধ করি ইসলামপন্থী ভাই ও বোনদের শয়তান মিডিয়ার কথায় বিভ্রান্ত না হয়ে একটি পরীক্ষিত ইসলামি দলের নেতৃত্বের প্রতি আস্থা রাখা”
মুরসির বিরোধী সেকুলার ফান্ডামেন্টালিষ্ট ও বামপন্থিরা সেনাবাহিনীর ক্ষমতা গ্রহণের বিষয়কে সেনা অভ্যুত্থান বা মিলিটারি ইন্টারভেনশন বলতে রাজি নন। তবে গার্ডিয়ান তাদেরকে সতর্ক করে বলে দিয়েছে যে Those who believe that the military's main objective is to preserve the new freedoms will soon be disappointed. From Chile in 1973 to Pakistan in 1999 (and several times before that), long is the history of military takeovers that were welcomed in their first hours and days but regretted in the years of despair that followed. For Egypt to follow in that tradition is a disaster. এদিকে তুর্কিরাও এই মিলিটারি ক্যু কে প্রত্যাখ্যান করে বলেছে শুধুমাত্র নির্বাচনের মাধ্যমেই প্রেসিডেন্ট কে তার দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি দেয়া যাবে।
যদিও বলা হয় মুরসি ক্ষমতায় গিয়ে কিছুই করতে পারেন নি কিন্তু ইজিপশিয়ান ইন্ডিপেন্ডেন্টের খবর বলছে যে মিশরের বিনিয়োগের অবস্থান ইতিবাচক ইঙ্গিত বহন করছে।
মোটকথা মিশরের পরিস্থিতি কিছুতেই এমন রক্তক্ষয়ী পরিস্থিতির জন্য উপযুক্ত ছিল না। এখন সে দেশের রাস্তায় রাস্তায় প্রকাশ্যে মানুষ খুন চলছে। একথা সত্য যে যত দিন গড়াবে ততই এই রক্তক্ষরণ আরও মারাত্মক আকার ধারণ করবে । ইতিমধ্যেই ইসলাম পন্থিরা শুক্রবারে মিলিটারি ক্যুর বিরুদ্ধে তাদের কর্মসূচী ঘোষণা করেছে।
নাসের সিটিতে আন্দোলন কারিদের দাবী “এটা এখন আর মুরসি সমর্থকদের মিছিলের মধ্যে সীমাবদ্ধ নেই, এটা এখন সেনা অভ্যুত্থান ঠেকানো এবং মিশরের একমাত্র গণতান্ত্রিক ভাবে নির্বাচিত সরকারকে ফিরিয়ে আনার সংগ্রামে পরিণত হয়েছে।
আজকে বিবিসি রিপোর্ট করেছে যে Morsi marchers die as army fires (BBC) এবং মিশরিয় প্রধান পত্রিকা আলাহরাম লিখেছে AFP reports that the pro-Morsi protesters were carrying weapons. Reuters has also quoted a figure of three dead, according to "security sources." খবরের এই পরস্পর বিরোধিতাই প্রমাণ করে যে একটি নির্দিষ্ট গোষ্ঠি তাদের স্বার্থ উদ্ধারের জন্য সত্যকে গোপন করছে।
এমনকি ব্রাদারহুডের প্রধান নেতা মুহাম্মাদ বাদির ব্যাপারেও সে দেশের পত্রিকা গুলো মিথ্যা খবর প্রকাশ করে অসন্তোষ ছড়াতে চেষ্টা করছে। গত তিন দিন ধরে তারা দাবী করছে যে মুহাম্মাদ বাদি গ্রেফতার হয়েছেন অথচ বিভিন্ন সাংবাদিক তাদের ব্যক্তিগত টুইটে নিশ্চিত করেছেন যে মুহাম্মদ বাদি রাবা স্কয়ারে
উপস্থিত জনতার মাঝে উপস্থিত হতে যাচ্ছেন। ঠিক এই মুহূর্তে (কম বেশি রাত একটা, মালয়েশিয়ান টাইম) তিনি অলরেডি সেখানে বক্তব্য দিতে শুরু করেছেন।
মুহাম্মাদ বাদি
মুরসি অবস্থানরত কার্যালয়ের সামনে নিরাপত্তা বাহিনীর সরাসরি গুলিতে শাহাদত বরন করেন এক মুজাহিদ।
মিশরের পরিস্থিতি নিয়ে একটি ছোট বিশ্লেষন পড়ুন এখানে
মুরসি সমর্থনে রাজপথে কোটি মানুষ বিক্ষোভ করায় গত ১ দিন আগে নিয়োগ দেয়া মুরসি কর্তৃক অপসারিত প্রধান বিচারপতি আব্দুল মাজিদ মাহমুদ তার দায়িত্ব পালনে অপারগতা প্রকাশ করছেন।
মানছুরা জেলায় অলিতে গলিতে বিক্ষোভ
মিসরজুড়ে মুরসির কোটি সমর্থকের দৃশ্য
যেখানে মুরসি আছে সেখানে যাচ্ছে সমর্থক দল
রাবায়া স্কয়ারে এক মায়ের নিরব কান্না
মুরসির ভক্তদের একাংশ
নাসের সিটিতে মুরসির সমর্থকদের সমাবেশ
দুর্বার বিক্ষোভের তোপের মুখে সেনাপ্রধানের কার্যালয় নিরাপত্তা জোরাদার করতে কাটা তাদের বেরা দিচ্ছে। যেকোনো সময় হামলার আশঙ্কা
প্রেসিডেন্ট মুরসিকে যেখানে আটকে রাখা হয়েছে সেখানটায় ঘিরে রেখেছে তার সমর্থকরা
একজন মুরসি সমর্থক কে শহিদ করে ফেলা হয়েছে
দেমানহুড় জেলায় শহীদ হলেন বেলাল
দেমানহুড়ে সঙ্গর্ষে শীর্ষ সন্ত্রাসী নিহত
মুরসির অবস্থানরত কার্যালয়ের সামনে মাগরীবের নামাজ আদায় করছে লক্ষ মানুষ
বিষয়: বিবিধ
১৫৬৫৫৬৩৭ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন