বেহায়াপনার উত্তাল সমুদ্রে কালের নকীব কই!
লিখেছেন লিখেছেন অকপটশুভ্র ২৬ জুন, ২০১৩, ১২:৩৩:৩৫ দুপুর
আর্লি ম্যারিজ ক্যাম্পেইন গ্রুপে এক ভাই উস্তাদ ইয়াসির ফাজাগার একটি খুতবা শেয়ার করেছিলেন। জুমার নামাজের খুতবা, লিংকটি পেয়েই লেকচারটা শোনা শুরু করলাম। খুবই প্রাসঙ্গিক একটি প্রসঙ্গ নিয়ে আলোচনা শুরু হল। ঠিক আট মিনিটের মাথায় তিনি কিছু নাম্বার বলতে লাগলেন, নাম্বার গুলো সবগুলোই ভয়ংকর সব পরিসংখ্যানে ভরপুর। তিনি বলছিলেন, ইন্টারনেটে ৪২০ মিলিয়নেরও বেশি পেইজ রয়েছে যেগুলোর মধ্যে শুধুই পর্ণগ্রাফিতে পরিপূর্ণ। শুধু ৪ দশমিক ২ মিলিয়ন ওয়েবসাইটই আছে পর্নগ্রাফির জন্য,ইন্টারনেটে পর্ন দেখার জন্য প্রতি সেকেন্ডে ২৯ হাজার হিট হয়, দিনে যা ৬৮ মিলিয়ন হিটে দাঁড়ায়,সবচেয়ে দুঃখজনক ব্যপার হল এদের মধ্যে ১৬০ হাজার শুধু চাইল্ড পর্ন দেখার জন্য সাইট গুলোতে ভিজিট করে। শুধু তাই নয় প্রতি ৯ মিনিটে একটি করে নতুন পর্ন সাইট খোলা হয়। শুধু আমেরিকাতেই প্রতি মাসে ১ বিলিয়নেরও বেশী ডলার খরচ করা হয় পর্ন এর পেছনে, সারা বিশ্বে প্রতিদিন গড়ে ১০০ মিলিয়ন ডলার খরচ করা হয় পর্ন এর পেছনে। সান গেব্রিয়াল ভেলি বছরে ১৩ হাজার পর্ন মুভি প্রস্তুত করে বাজারে ছাড়ে। গড়ে ৮ বছর বয়সের মধ্যেই এখনকার প্রজন্ম পর্ন এর সাথে পরিচিত হয়। লেকচারটির ঠিক এগারো মিনিটের মাথায় আমাকে থামতে হল, সাধারণত লেকচার শোনার মাঝে আমি বিরতি নেই না। কিন্তু পরিসংখ্যান গুলো এতটাই অবিশ্বাস্য যে আমাকে ইন্টারনেটে সার্চ দিয়ে দেখতে হল।
ইন্টারনেটে সার্চ দিয়ে বিভিন্ন সাইট ঘুরে অবশেষে বিখ্যাত ম্যাগাজিন দি উইক এর একটি প্রতিবেদন পেলাম। প্রতিবেদনটি ২০১০ এর জুন মাসে প্রকাশিত হয়েছিলো। প্রতিবেদনটি পড়ে দেখলাম ইয়াসির ফাজাগা মিথ্যে বলেন নি। বরং কিছু কিছু ক্ষেত্রে কমই বলে ফেলেছেন। দি উইক এর ঐ প্রতিবেদনে আরেকটি বিখ্যাত ম্যাগাজিন “গুড ম্যাগাজিনের” রেফারেন্স দিয়ে বলা হয়েছে, যে সমুদয় ইন্টারনেট সাইটের মধ্যে ১২% সাইটে পর্নগ্রাফি রয়েছে। প্রতিদিন বিশ্বের সকল প্রান্ত হতে ইন্টারনেট ইউজাররা যত সার্চ দেয় তার ২৫% পর্নগ্রাফি রিলেটেড, ২০১০ এর হিসেব অনুযায়ী সেকেন্ডে ২৮ হাজার হিট পড়ে পর্নগ্রাফির সাইট গুলোতে, ২০০৫ ও ২০০৮ এর মধ্যে ৭৫মিলিয়ন নতুন ভিজিটর পর্নগ্রাফির সাইট গুলোতে ভিজিট করেছে, ইন্টারনেট ব্যবহারকারীদের মধ্যে ৪৩% পর্নগ্রাফিতে ভিজিট করে, আর ৭৫% অনিচ্ছা স্বত্বেও পর্নগ্রাফির সাইট গুলোতে ঢুকে পড়ে, প্রতিদিন ২৬৬ টি ব্রান্ড নিউ পর্নগ্রাফির সাইট তৈরি হচ্ছে, গড়ে ১১ বছর বয়সের মধ্যেই শিশুরা পর্নগ্রাফির মুখোমুখি হয়, প্রতি দশ জন শিশুর মধ্যে ৭ জনই পর্নগ্রাফি কোন না কোন ভাবে দেখেছে, ২০০৮ সালের সমীক্ষাতেই দেখা গেছে ১৫৩৬ টি ওয়েবসাইট চাইল্ড পর্নগ্রাফি ছড়াতে বিশেষ ভাবে তৈরি হয়েছে। সন্দেহ নেই ব্যবসায়িক জগতে পর্ন ইন্ডাস্ট্রি এখন সব চেয়ে বেশী মুনাফা প্রদানকারী একটি ইন্ডাস্ট্রি। শুধুমাত্র আমেরিকাতেই এই ইন্ডাস্ট্রি থেকে মুনাফা হয়েছে ১৩ বিলিয়ন ডলার, আর বিশ্বব্যাপী এ মুনাফার হার ৯৭ বিলিয়ন ডলার।
চিন্তা করুন, হিউজ নাম্বার, হিউজ ইনভেস্টমেন্ট এবং যথারীতি এগুলোর প্রসার কোথাও হয়নি এমন স্থান খুঁজে পাওয়া ভার। হাজার হাজার মুসলমানের ঘরে কুরআন খুঁজে পাবেন না, হাদিস খুঁজে পাবেন না, ইসলামি সাহিত্য সেতো অনেক দুরের ব্যপার। অল্প যে সংখ্যক মানুষের মধ্যে ইসলামি চেতনা অল্পবিস্তর হলেও ক্রিয়া করে তাদের বিরাট একটি অংশের মধ্যে মাজার পূজা, বিদআত, তথাকথিত তরিকত ও পীর ভিত্তিক শিরক, রাজনৈতিক অন্ধত্ব ইত্যাদি বহুবিধ সমস্যা জর্জরিত অবস্থা। অন্যদিকে এমন একটা ঘর খুঁজে পাবেন না যেখানে যৌন উত্তেজনা দায়ক বস্তু-বিশেষের উপস্থিতি আপনি খুঁজে পাবেন না। নষ্ট আদর্শের দেবতাদের প্রবেশ হয়নি এমন ঘর খুঁজে পাবেন না একটাও, কিন্তু আপনাকে আমি কোটি কোটি ঘরের তালিকা করে দিতে পারবো যে ঘর গুলোর দরজা কুরান হাতে মসজিদের ইমামদের জন্য খোলা হয় না কিছুতেই। সুতরাং প্রশ্ন হচ্ছে কোথায় আছি আমরা?
আমার প্রতিটি লেখাতেই আমি কিছু ভিন্ন আঙ্গিক তুলে ধরার চেষ্টা করি, আজও সে চেষ্টা অব্যাহত রাখবো। বেশ ক’বছর আগে একজন সিনিয়র রুমমেটের কাজিন মালয়েশিয়াতে এসেছিলেন, তিনি একটি স্বনাম ধন্য কার কোম্পানিতে ভালো মানের জব করেন। ঐ সিনিয়র রুমমেট আমাদের অনেক সিনিয়র হলেও বন্ধুর মতো সম্পর্ক রেখে আমাদের সাথে চলতেন। সাধারণত যারা প্রেষ্টিজিয়াস কোম্পানিতে ভালো মানের চাকরী করেন তারা সবার কাছেই অনুকরণীয় হয়ে থাকেন। সুতরাং আমার রুমমেটের কাছে তার ওই কাজিনও বেশ অনুকরণীয় ছিলেন। তিনি আমার সাথে আলাপ কালে বলছিলেন যে উনার কাজিন খুব স্মার্ট এবং আপডেটেড, মালয়েশিয়াতে এসেই প্লেবয় ম্যাগাজিন খুঁজে বের করে কিনে নিয়েছেন। আমি বরাবরই আনস্মার্ট একজন মানুষ হওয়ায় যুব সমাজের মধ্যে নীল ছবির প্রচলনের ব্যাপারটা জানা থাকলেও তখন পর্যন্ত প্লেবয় ম্যাগাজিন সম্পর্কে আমার কোন ধারনাই ছিল না। প্লেবয় শব্দটির অর্থও আমার জানা ছিল না। তবে নামটি শুনে মনে হয়েছিলো যে এটি খেলোয়াড়দের নিয়ে একটা জনপ্রিয় ম্যাগাজিন হবে হয়তো। কিন্তু খেলোয়াড়দের নিয়ে ম্যাগাজিন কেনার সাথে স্মার্ট এবং আপডেটেড থাকার সম্পর্ক টা না বুঝতে পেরে আমি জিজ্ঞেস করেই বসলাম, যে “প্লেবয় ম্যাগাজিন” উহা কি জিনিস। তার পর প্লেবয় ম্যাগাজিন সম্পর্কে যা জানলাম তা ব্যাখ্যা করার রুচি নেই আমার। তবে যেটুকু শুনে অবাক হলাম সেটুকু হল উনার কাজিনের প্লেবয় ম্যাগাজিন কেনার সাথে আপডেটেড থাকা আর স্মার্ট থাকার আসল রহস্য হল তিনি ঐ পত্রিকা কিনে মডার্ন যুগের কামসূত্রের নয়া নয়া মুভ সম্পর্কে আপডেটেড হন এবং সেটা এপ্লাইও করেন।
ইয়াসির ফাজাগা যখন বার বার বলছিলেন পর্নএডিকশন সংসার ভাঙ্গার পেছনে তথা ডিভোর্সের জন্য দায়ী তখন আমার উপরের ঘটনাটি মনে পড়লো। বিয়ে নিয়ে আমার অন্য একটি লেখাতে এক সংশয়বাদী দাবী করেছিলেন যে যারা নিষিদ্ধ পল্লীতে যায় তাদের অধিকাংশই বিবাহিত। সুতরাং বিয়ে কোন সমাধান নয় বরং জৈবিক চাহিদা মানুষের একটি প্রাকৃতিক চাহিদা, বিয়ে করে হোক বা না করেই হোক এটা চরিতার্থ করাটা দোষের কিছু নয়। হয়ত এটা সত্যি যে যারা নিষিদ্ধ পল্লীতে যায় তাদের অধিকাংশই বিবাহিত, আর এটা যদি সত্যি হয় তাহলে এর পেছনে পর্নগ্রাফি একটি বড় কারণ, সেই সাথে গান, নাটক, সিনেমা ও বিজ্ঞাপনে যৌনতার ছড়াছড়িও প্রধানতম একেকটি কারণ।
দেখুন “সেক্স স্লেভ”/“যৌন কর্মী” আর “স্ত্রীর”/“স্বামীর মধ্যে বিস্তর পার্থক্য আছে। সেক্স স্লেভ বা যৌন কর্মীকে কর্তা যেভাবে ইচ্ছা সেভাবে ভোগ করতে পারে, সেখানে সম্মান ও ভালোবাসাটা কিছুতেই মুখ্য নয় বরং যৌন চাহিদাকে চরিতার্থ করাটাই মুখ্য। সে ক্ষেত্রে কেউ পর্ন বা প্লেবয় টাইপের ম্যাগাজিনে যৌনকর্মীদের দেখে দেখে শেখা তথাকথিত নয়া নয়া মুভ সম্পর্কে আপডেটেড হয়ে একজন মানুষ সেগুলো কোথায় এপ্লাই করবে? প্রথমত সে এগুলো শিখেছে সানি লিওনের মতো সেক্স স্লেভদের কাছ থেকে, দ্বিতীয়ত স্ত্রী বা স্বামী কেউই সেক্স স্লেভ বা যৌনকর্মী নয়। তৃতীয়ত পর্ন গুলো থেকে শেখা পাশবিক ও অরুচিকর বন্য স্টাইল গুলো যে ব্যাক্তি বার বার দেখবে তার মধ্যে সেগুলো অনুকরণ করার একটা প্রবল আকাঙ্ক্ষা কাজ করবে। সে ক্ষেত্রে তাকে হয়তো নিজের স্বামী বা স্ত্রীর সাথেই এরকম অরুচিকর বন্য আচরণ করতে হবে, নতুবা অন্য কোন স্থানে যেতে হবে, অন্য কোন স্থান নিশ্চই নিষিদ্ধ পল্লী-টাইপের স্থানই হবে। যে পথেই সে আগাক না কেন, তাঁর সংসারের জন্য একটা হুমকি বয়ে আনবেই। নিষিদ্ধ পল্লীতে যাওয়ার খবর তাঁর স্বামী/স্ত্রীর গোচরে আসলে যে সংসারে কলহ বাড়বে তাতে সন্দেহ নেই। এদিকে নিজের বউ বা স্বামীকে যৌনকর্মীর মতো পেতে চাইলেও সাংসারিক কলহ অবধারিত। কারণ স্বামীকে বা স্ত্রীকে যাকে সে একেবারে যৌন কর্মীকে ভোগ করার মতো পেতে চাইছে তাঁকে মূলত স্ত্রী না স্বামীর সম্মান টা দেয়া হচ্ছে না, বরং সেক্স স্লেভের পর্যায়ে নামিয়ে আনা হচ্ছে। তাঁর আত্মসম্মানবোধে আঘাত করা হচ্ছে, আলটিমেটলি যৌন চাহিদাটাই এখানে মুখ্য হয়ে আসছে কিন্তু স্বামী ও স্ত্রীর সম্মান জনক সম্পর্কটার এখানে প্রাধান্য থাকছে না। সংসার এখানে উপলক্ষ নয়, সন্তান নেয়াও এখানে উপলক্ষ নয়, এখানে উপলক্ষ হয়ে দাঁড়াচ্ছে একমাত্র ম্যাক্সিমাইজেশন অফ সেক্সুয়াল ইউটিলিটি। সুতরাং একটা পর্যায়ে গিয়ে সাংসারিক সম্পর্ক নষ্ট হতে বাধ্য।
মানুষের সেক্সুয়াল বিহেভিয়ার যদি আমরা পর্যবেক্ষণ করি তাহলে আমরা যা দেখি তা হল, আমাদের যৌন ক্ষুধাটা সব সময় ইন-একটিভ থাকে, যখনি আমরা কোন যৌনতা পূর্ণ চিন্তায় আচ্ছন্ন হই কিংবা আমাদের সামনে কোন যৌন উত্তেজক বস্তু দৃষ্টিগোচর হয় তখন আমাদের ইন-একটিভ যৌন ক্ষুধাটা জাগ্রত হয় বা একটিভ হয়। আর এই যৌনাকাঙ্ক্ষা একবার জাগ্রত হলে তা দমানো খুবই কঠিন ব্যাপার। তার মানে হল পর্ন এলিমেন্ট আমাদের ছেলে-মেয়েরা যত বেশি দেখবে তাদের যৌন ক্ষুধার তাড়না ততো বেশী জাগ্রত হবে। এবং তাদের মধ্যে একটি বিরাট অংশ এই তাড়নাকে দমাতে ব্যর্থ হয়ে কেউ ব্যভিচার করবে, ইভ টিজিং করবে, প্রেম লীলায় মেতে উঠবে। এদিকে যারা বিবাহিত আছেন তাদের মধ্যে যারা পর্ন দেখেন তাদের জন্য সংকটটা আরও বেশী হয়ে দাঁড়ায়। বিবাহিত হওয়ার কারণে এমনিতেই তারা একটা সেক্সুয়াল রিলেশন মেন্টেইন করেন। অর্থাৎ তাদের সেক্সুয়াল ক্ষুধাটা সচরাচরই জাগে এবং সেটা বৈধ ভাবে নিবৃতও হয়। কিন্তু যখন তারা পর্ন দেখেন এবং সেখানে মানুষের স্বাভাবিক যৌনাচরণের বাইরেও আরও অনেক পাশবিক ও অরুচিকর উপায় ও পদ্ধতিগুলো বার বার দেখেন তখন তার মাঝে সে গুলো এক্সপেরিমেন্ট করার আকাঙ্ক্ষা বহুগুণে বেড়ে যায়। তাঁর পক্ষে সেটা দমানো কিছুতেই সহজ হয় না, কারণ তাঁর সেক্সুয়াল একটিভিটি নিয়মিতই চলতে থাকে, সে এগুলো ভুলে থাকতে পারে না। সেক্ষেত্রে হয়তো তাকে নিজের স্ত্রী/স্বামীকে বেছে নিতে হয় নতুবা অন্য কোন উপায় খুঁজে নিতে হয়। যেভাবেই হোক না কেন শেষ অবধি সাংসারিক কলহই অমোঘ নিয়তি হয়ে উঠে তাদের জন্য।
এবার উপরের পরিসংখ্যান গুলোর কথা কল্পনা করুন, ইন্টারনেটে ৪২০ মিলিয়নেরও বেশি পেইজ রয়েছে যেগুলোর মধ্যে শুধুই পর্ণগ্রাফিতে পরিপূর্ণ। শুধু ৪ দশমিক ২ মিলিয়ন ওয়েবসাইটই আছে পর্নগ্রাফির জন্য,ইন্টারনেটে পর্ন দেখার জন্য প্রতি সেকেন্ডে ২৯ হাজার হিট হয় । তার মানে হল পর্ন এখন মানুষের হাতের নাগালেই। জাস্ট একটা মাত্র ক্লিকই যথেষ্ট। একান্ত ব্যক্তিগত মোবাইল স্ক্রিনে, ল্যাপটপে, কম্পিউটারে যেগুলোতে প্রাইভেসি কনসার্নের কারণে আপনি সুযোগ পেলেও অন্যের গুলোতে ঢুকবেন না। অর্থাৎ যতো খারাপ জিনিসই সেগুলোতে থাকুক, কেউ তা জানতে পারছে না। সেখানে এগুলো দেখে দেখে নিজেদের পাশবিকতাটাকে দিন দিন কতটা বন্য ও হিংস্রতার পর্যায়ে নিয়ে যাওয়ার সুযোগ রয়েছে আমাদের কোমল মতি ছেলে-মেয়েদের কাছে তা কি কল্পনা করতে পারেন! এরা আগুন ও পানির পার্থক্য বোঝে না। কি করে তারা নিজেদের ঠেকিয়ে রাখবে! শুধু তাই নয়, পর্নগ্রাফির ওয়েবসাইটে দিনে ৬৮ মিলিয়ন হিটের মধ্যে ১৬০ হাজার শুধু চাইল্ড পর্ন দেখার জন্য সাইট গুলোতে ভিজিট করে, চিন্তা করুন কতটা কুরুচিপূর্ণ হলে মানুষ এতটা নীচে নামতে পারে!! এরকম মানুষদের কাছে তার নিজের বাচ্চা শিশুগুলো কি আদৌও নিরাপদ থাকতে পারে? এখানেই শেষ নয়, প্রতি ১০ জন শিশুর মধ্যে ৭ জনই যদি পর্ন দেখে থাকে তাহলে এই সাত জনের মধ্যে অন্তত পাঁচ জন সেক্স এডিক্ট হয়ে উঠবেনা এ নিশ্চয়তা কে দিতে পারবে? চিন্তা করে দেখেছেন কি যারা আট থেকে এগারো বছর বয়সেই পর্নের মাধ্যমে চূড়ান্ত সেক্সুয়াল কার্যক্রম দেখে থাকে তাদেরকে আমাদের সমাজ বিয়ে করতে অনুমতি দিচ্ছে ত্রিশের কোঠায় গিয়ে। এই যখন অবস্থা তখন কি করে অভিভাবকরা বিশ বছর ধরে নাকে তেল দিয়ে ঘুমান, আর আশা করেন তার সাধের সন্তানটি বখে যাবে না, কি করে তারা ভাবেন যে তাদের আদরের সন্তানটি একদিন রেপিষ্ট হবে না, চরিত্রহীন হয়ে যাবে না? বলতে পারেন এসব পর্ন এলিমেন্ট বন্ধ করে দিতে, কিন্তু বাস্তবতা হচ্ছে যে ব্যবসার মুনাফার হার ৯৭ বিলিয়ন ডলার সে ব্যবসা দুই তিন যুগে থামিয়ে দেয়া যাবে না। কিন্তু সামাজিক ভাবে সকল অভিভাবকরা যদি সিদ্ধান্ত নিতে প্রস্তুত হন তাহলে বিভিন্ন ভাবে এসকল ভয়ংকর বিষয় থেকে আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে রক্ষা করা সম্ভব।
সবচেয়ে দুঃখের বিষয় হচ্ছে আমাদের সমাজের আলিমদের ঈমানগত দীনতা। তাঁরা তাফসীরে, ওয়াজে আর সাংগঠনিক বাক-বক্তৃতায় যতই ইসলাম ইসলাম বলে মুখে ফেনা তুলেন না কেন সামাজিক পরিমণ্ডলে ইসলামের প্রায়োগিক ক্ষেত্রে নিজেদের মধ্য থেকে কোন উদাহরণ স্থাপন করতে পারেন নি। টাকা কালেকশনে তারা আল্লাহর দেয়া রিজিকের উপর আস্থা রাখতে গলাবাজি করেন কিন্তু যুব সমাজের চরিত্র রক্ষার্থে তাদেরকে সঠিক সময়ে বিয়ে দেয়ার কথা উঠলে আয়-রোজগার, সেভিংস, সংসারের খরচ-পাতি, ইত্যাদি অজুহাতের অভাব থাকেনা তাঁদের। অসামর্থবান যুবকদের বিয়ের ব্যাপারে উৎসাহিত করে তাদের রিজিকের দায় ভার আল্লাহ নিজের হাতে তুলে নেয়ার ঘোষণা দেয়ার পরেও তাঁদের আল্লাহর দেয়া রিজিকের উপর আস্থা রাখার কথা কৌশলে এড়িয়ে যেতে হয়।
”তোমাদের মধ্যে যারা বিবাহহীন, তাদের বিবাহ সম্পাদন করে দাও এবং তোমাদের দাস ও দাসীদের মধ্যে যারা সত্কর্মপরায়ন, তাদেরও। তারা যদি নিঃস্ব হয়, তবে আল্লাহ নিজ অনুগ্রহে তাদেরকে সচ্ছল করে দেবেন। আল্লাহ প্রাচুর্যময়, সর্বজ্ঞ।” [২৪:৩২] ।
সেজন্য ঈমানের গল্প বলার আগে, রিজিকের ওয়াজ করার আগে গোটা আলিম সমাজের লজ্জা হওয়া উচিৎ, তাঁদের দশবার ভাবা উচিৎ। কারণ চরম অধঃপতনের মুখে তারা এই ভঙ্গুর সমাজের হাল ধরতে ব্যর্থ হয়েছেন, দ্বীন প্রতিষ্ঠার পথে মৌলিক চ্যালেঞ্জ গুলো তারা সনাক্ত করতে ব্যর্থ হয়েছেন। অথচ তাদের মুখ থেকেই হুংকার দিয়ে আওয়াজ ওঠার কথা ছিলো যিনা কে নিশ্চিহ্ন করার আর বিয়ে কে সহজ করার জন্যে। সকল প্রকার বেহায়াপনার বিপক্ষে তাদেরই উচিত ছিল তুমুল আন্দোলন গড়ে তোলার। সরকার পতনের আন্দোলনের চাইতে এ আন্দোলন অনেক অনেক বেশি জরুরী ছিল। কিন্তু তারা সেটা এখনও বুঝতে রাজি নন।
ওয়ার্ড প্রেসে আমার ব্লগ, আপনাকে স্বাগতম
বিষয়: বিবিধ
২৫৩০ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন