এক চাপ কাঃ আমার চা খোর হয়ে ওঠা
লিখেছেন লিখেছেন অকপটশুভ্র ২২ মে, ২০১৩, ১১:২২:৩৩ রাত
চা পান করার খুব জম্পেশ কোন অভ্যাস আমার কখনই ছিল না। আমরা এখন যেখানে আছি, সেখানে প্রায় উনিশ বছর ধরে আমাদের বসবাস। বাড়িওয়ালার যে ছেলেটি এখন ইন্টার পরীক্ষা দিচ্ছে তাঁকে কোলে করে কত যে ঘুরেছি তার ইয়ত্তা নেই। সেই ছোটবেলা থেকেই বাড়িওয়ালার ছেলে-মেয়েদের সাথে আমাদের খেলাধুলা, এখন সম্পর্কটা পুরোদস্তুর আত্মীয় টাইপের হয়ে গেছে। এলাকায় অবশ্য এমন কয়েকটা ফ্যামিলি আছে যাদের সাথে সম্পর্কটা অনেক ক্ষেত্রে আত্মীয়তার চেয়েও বেশি। তো বাড়িওয়ালাদের ফ্যামিলিটাও এমনি এক ফ্যামিলি, ওনাদের বাসার সবাই আবার চায়ের পোকা। তাই বাড়িওয়ালার বাসায় গেলে চা টা ছিল অবধারিত আপ্যায়ন। বেশ ভালোই লাগতো, কিন্তু অভ্যাস গড়ে উঠেনি কখনও।
আমাদের বাসায় চায়ের চলটা এখনও নেই, আব্বু কোনদিন চা-বিস্কুট খান না, আম্মুও না। আমরা চা-খোর হয়ে ওঠার আগেই উনাদের ডায়াবেটিকের সাথে সখ্যতা বেশ চরমে পৌঁছে যায়। তাই চায়ের চ্যাপ্টার বাদই থেকে গেলো আমাদের বাসায়। অবশ্য এলাকার টং দোকানগুলো থেকে বন্ধুদের সাথে আড্ডার ছলে চায়ের ব্যপারটা চলে আসতো নিয়মিতই। তাছাড়া দুধের সর পড়া চা খেতে মাঝে মাঝেই ইচ্ছা জাগতো, চলে যেতাম নির্দিষ্ট হোটেল বা টং দোকানে। এক্ষেত্রে জিঞ্জিরা হোটেল আর গোড়ান বাজারের ওখানে এক টং দোকান ছিল তালিকার শীর্ষে। মাঝে মাঝে মুডের উপর নির্ভর করতো চা পান করবো কি করবো না। তো এই কালেভদ্রে চা পিয়ে চা-খোর হওয়ার কোন চান্স আদতেই নেই।
গতবার দেশে গিয়ে টের পেলাম বিদঘুটে এক মাথাব্যথার নিয়মিত খপ্পরের চক্করে আমি পড়ে গেছি। অনেক ডাক্তার-ফাক্তার দেখিয়ে বুঝা গেলো এইটা নিয়ম করেই এখন থেকে হানা দিবে। কি আর করা মেনেই নিলাম। কি করলে মাথাব্যথাটা দ্রুত চলে যায় তা টেস্ট করতে বিভিন্ন পদক্ষেপ নিয়ে বুঝতে পারলাম কড়া করে এক কাপ কফি খেলে মাথা ব্যথাটা আর খুব একটা জ্বালায় না। সেই থেকে নিয়মিত কফি খেতে শুরু করলাম। মাঝে মাঝেই কফি বানাতে গিয়ে একটা বাংলা প্রবাদ মনে পড়ে যেতো। "ভাত পায় না চা খায় হোন্ডা লইয়া হাগবার যায়" মুচকি হাসতাম খালি। আমাদের দেশের সংস্কৃতিতে চা জিনিসটা আপামর জনতার সাথে যায় কিন্তু কফি জিনিসটায় কেমন যেন একটা এলিট এলিট ভাব আছে। আমি যেহেতু এলিট না সেহেতু এই প্রবাদটা প্রায়শই মনে পড়ে যেতো।
যাইহোক, একদিন দরজা খুলতেই পাশের রুমের চেচেন ফ্রেন্ডটার সাথে দেখা। ওয়াটার হিটারটা হাতে ধরে বাইরে যাচ্ছে। আমাকে দেখেই বলল,
দেখো গরম পানি করেছি কিন্তু ভুলেই গেছি যে আমার টি-ব্যাগ শেষ হয়ে গেছে।এদিকে মাঝে মাঝে কফি ভালো না লাগলে চা খাবো বলে আমি আবার একটা লিপটন মিনি প্যাক কিনে রেখেছিলাম। ওটাতে পঁচিশটা টি-ব্যাগ থাকে। কিন্তু ওই কিনে রাখা পর্যন্তই। ধরেও দেখা হয় নি। তাই চিন্তা করলাম ওকে পুরো প্যাকেটটাই দিয়ে দেই। আমি বললাম
আমি তো চা খাই না, তবে কফি খাই, অবশ্য আমার কাছে চায়ের একটা মিনি প্যাক আছে। আমার চা খাওয়া হয় না তুমি বরং ওটা নিয়ে যাও।এই বলে রুম থেকে চায়ের প্যাকেটটা এনে দিলাম। ও বলল
চা খাওনা কেন?আমি বললাম
গরম করো, চিনি দাও, আবার উচ্ছিষ্টটা পরিষ্কার করো এতো ঝামেলা করার ইচ্ছে হয় না, কফিটা বানানো সহজ। কুলার থেকে গরম পানি নিয়ে নেসক্যাফের একটা প্যাকেট ছিঁড়ে গুলিয়ে খেয়ে ফেললেই হল। ঝামেলা কম।ছেলেটি বলল
দাড়াও আমি আরেকটু চেক করে আসি আসলেই কি সবটাই শেষ করে ফেলেছি কিনা।একটু পরে ও এসে জানালো একটা টি ব্যাগ এখনও বাকী আছে ওর। তাই ওকে আর আমার টি-প্যাকটা দেয়া হল না। সে বলল
কফি তো খুব কড়া জিনিস, আমি তাই চা ই প্রেফার করি। যারা কফি খায় তাদের অনেককেই দেখেছি মাঝে মাঝে রাতে ঘুমোতে পারে না, সপ্তাহে একবার তো এমন হয়ই। আমার মনে হয় এইটা কফির ইফেক্ট তাই আমি কফি খুব একটা খাই না।
মাঝে মাঝে রাতে ঘুম না আসার সমস্যাটা আমারও আছে, তবে সেটা কফি ধরার আগে থকেই। তার পরেও কফি ইফেক্টের ব্যপারটা মাথায় ভালো ভাবেই জেঁকে বসলো। এর আগে বহুবার নিয়মিত চা খাওয়ার এন্তেজাম হয়েছিলো। কিন্তু গরম করা, চিনি দেওয়া, আবার উচ্ছিষ্টটা পরিষ্কার করা ইত্যাদি ঝামেলার কারণে মনে হচ্ছিলো খাজনার চেয়ে বাজনাই বেশি হয়ে যাচ্ছে। এক কাপ চা খাওয়ার জন্য এত কষ্ট করার কোন মানেই হয় না। সবচেয়ে ঝামেলার ব্যপার হল চা খাওয়ার পরে আবার কাপটা ধোয়া। একটা জিনিসের হ্যাপি এন্ডিং না হইলে কেমনে হয়, কষ্ট করে চা বানিয়ে সুখের কাজ হল চা-টা খাওয়া। কিন্তু পরে আবার চায়ের কাপটা ধুইতে হলে তো আর হ্যাপি এন্ডিং হইলো না! প্রায় দুই বছর আগে একবার চা খাবো বলে চায়ের প্যাকেট কিনেছিলাম, বয়ম ভরে চিনি রেখেছিলাম। চায়ের প্যাকেটটা ফেলে দিতে হয়েছিলো দেড় বছর পরে, একবারও চা বানিয়ে খাওয়া হয়নি। আর চিনি ফেলিনি, কি করেছি পরে বলছি।
যাইহোক, কফি ইফেক্টের ব্যপারটা মাথা থেকে আর যাচ্ছেই না। এদিকে কফির প্রতি একটা খুত খুত ভাব দিন দিন বাড়তেই লাগলো। শরীরে আড়ষ্ঠ ভাব আসলেও কফিকে দোষ দিতে ইচ্ছে করে, ঘুম না এলে তো বটেই, এদিকে আমার চিরাচরিত অলসতার জন্যেও কফির দিকে ক্ষণে ক্ষণে চোখ রাঙানই দেয়া বেড়ে গেলো। শেষ পর্যন্ত সিদ্ধান্ত নিয়েই নিলাম। কফি ছাড়ছি, চা ধরছি। একটা ওয়াটার হিটার কিনতে হবে, চা কিনতে হবে বলে ইউনি থেকে বের হলাম। শেষ পর্যন্ত ন্যাচারাল চা খাওয়ার পাগলামি চেপে বসায় ওয়াটার হিটার না কিনে একটা চায়ের কেটলি ও একটা পোর্টেবল গ্যাসের চুলা কিনে নিলাম। এখন চায়ের প্যাকেট ফুরিয়ে যাচ্ছে, চিনির পটও খালি হচ্ছে। একদম কড়া লিকারের লাল চা খাচ্ছি। এক সময় চা ঠাণ্ডা করে খেতাম, এখন গরম গরম চা খেতে পারছি। সেই দু বছর ধরে পড়ে থাকা চিনির কৌটা কয়েকদিনেই শেষ হয়ে গেলো। আমি এখন পুরোদস্তুর চা-খোর!
বিঃদ্রঃ আশাকরি অধিকাংশ পাঠকই "এক চাপ কা" লিখার মর্মার্থ বুঝেছেন। যারা বুঝেন নি তাদের বলছি, "এক কাপ চা" কে অনেক বন্ধু মহলেই উলটো করে "এক চাপ কা" বলা হয়। এদিকে নেসক্যাফের পাঁচটা থ্রী ইন ওয়ান কফির প্যাকেট পড়ে আছে টেবিলে। খাওয়া হচ্ছে না। কারও লাগলে বইলেন দিয়া দিমু।
বিষয়: বিবিধ
২৩১৪ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন