মালয়েশিয়ার জাতীয় নির্বাচন বনাম আমাদের দেশ
লিখেছেন লিখেছেন অকপটশুভ্র ০৪ মে, ২০১৩, ০৮:৫৮:৩১ রাত
কাল ভোর না হতেই শুরু হবে মালয়েশিয়ার জাতীয় নির্বাচন। ইউনি থেকে বের হলেই দেখি সারি সারি দলীয় পতাকা। কোন দেয়ালে পোষ্টার নেই, চিকা-মারা নেই, রাস্তাঘাটে ফুটপাতে বিভিন্ন দলের নির্বাচনী লিফলেট পড়ে নেই। মোটকথা আমাদের দেশে নির্বাচন মানেই যেমন পোষ্টারে পোষ্টারে ছেয়ে যাওয়া পুরো দেশের চেহারা বিচ্ছিরি রকমের নোংরা হয়ে যায় তেমনটা এখানে একেবারেই নেই। দলীয় পতাকা, ব্যনার ও প্রতীকের বাহার আছে রাস্তার দু ধারে এবং ডিভাইডারের উপরে। কিন্তু কোনটাই প্রয়োজনের অতিরিক্ত নয়। এতে খারাপ না লেগে বরং বেশ সুন্দরই লাগছে। বেশ কালারফুল মনে হচ্ছে। এদেশের গত নির্বাচনের সময় হঠাৎ কি কাজে ইউনি থেকে বের হলাম, দেখি সারি সারি দলীয় পতাকায় ছেয়ে আছে রাস্তা-ঘাট, একই রকম অবস্থা। বুঝলাম নির্বাচন হতে যাচ্ছে। ওমা! দুদিন পরে বের হয়ে দেখি একটা পতাকা-ব্যানার কিচ্ছু নেই!! একেবারে সাফ, আমার কাছে মনে হল ঘূর্ণিঝড় এসে সব নিয়ে গেছে। কিন্তু আসলে নির্বাচন শেষ হওয়ার সাথে সাথেই প্রত্যেকটা নির্বাচনী প্রচারণা উপকরণ সরিয়ে ফেলা হয়েছে, এক মুহূর্তও দেরি করা হয়নি। এবারও একই কাজ হবে নিশ্চিত। এদের সচেতনতা দেখে অবাক হই। আর আকাশ কুসুম কল্পনা করি "আমাদের দেশটাও একদিন এমন হবে"
এদিক সেদিক টোকাটুকি মেরে এবারের নির্বাচন সম্পর্কে যা জানতে পারলাম তা হল, সরকারি-জোট বেশ বেকায়দায় আছে। বিরোধিজোট যেটি আনোয়ার ইব্রাহীমের পিকেআর, এখানকার ইসলামিক দল "পাস" ও চাইনিজদের রাজনৈতিক একটি দলের সমন্বয়ে গঠিত। বুঝা গেলো অনেকেই ভাবছেন সম্ভবত বিরোধিজোট জিতে যাবে। কিন্তু আমার সেটা মনে হয় না, চুয়ান্ন বছর ধরে ক্ষমতায় থাকা দল এত সহজে হারে না। তবে তারা অনেক কম মার্জিন নিয়ে জিতবে বলেই আমার ধারণা।
যাইহোক, নির্বাচনে কারচুপির ভয় অনেকেই করছেন, ভাবা হয় সাবা-সারওয়াক অঞ্চলে এই কারচুপিটা হওয়ার সম্ভাবনা বেশী। রাজনৈতিক নোংরামিও এখানে কম না, তা না হলে একজন ডেপুটি প্রাইম মিনিস্টারের বিরুদ্ধে কি কেউ "সডোমি" কেসের মতো নোংরা কেস দিতে পারে? কিন্তু সেই নোংরামিরও একটা সীমা আছে এখানে, আদালত দিয়ে এর একটা সুরাহা ঠিকই হয়ে যায় এখানে। আর আমাদের আদালত তো সরকারের পাগলামির গোলামিতেই যুগের পর যুগ পার করে দিচ্ছে। একবার মাহাথীরের আত্মজীবনীর একটা কপি হাতের কাছে পেয়ে তৎক্ষণাৎ গোটা দশেক পৃষ্ঠা পড়ে ফেলেছিলাম। বইটির প্রথম দিকেই এদেশের রাজনৈতিক নোংরামির কিছু দৃশ্য ফুটে উঠেছে। তবুও আর যাই হোক সে নোংরামির বলি জনগণ নয় এইটাই বা কম কিসে! দুর্নীতিও এখানে কম না, চল্লিশ মিলিয়ন রিঙ্গিতের একটি জেট ইঞ্জিন সেনা বাহীনির মিউজিয়াম থেকে সকলের দৃষ্টি এড়িয়ে ব্রাজিলে বিক্রি হয়েছিলো বেশ ক বছর আগে। তখন ক্লাসে টিচাররা প্রায়শই একথা বলতেন। কিন্তু তাতে কি! যে পরিমাণ সরকারি সুযোগ সুবিধা এরা পেয়ে থাকে, তার তিনভাগের একভাগ পেলেও বাংলাদেশকে এদেশের ছেলে পেলেরা স্বর্গ বানিয়ে ফেলতো এতদিনে। কিন্তু আমাদের তো পোড়া কপাল। রাজনৈতিক বিভাজনের ধাক্কাই যে দেশ সামলাতে পারে না সেই দেশে আবার শুরু হয়েছে চেতনার বিভাজন। কোথায় যাবেন! কতদূর যেতে হবে আমাদের কে জানে!! সব গজব কেন আমাদের কপালেই এসে পড়ে বুঝি না!!!!
কে জিতবে নির্বাচনে? এরাই বা কি ভাবছে? এগুলো জানার জন্য চোখ কান সর্বদাই খোলা রেখেছি, চান্স পেলেই টোকা মেরে দেখেছি কতটুকু বাজে। এরা বেশি বাজে না, তবে যতটুকু বেজেছে তাতেই থ হয়ে বসে আছি। এক লোক বলল "কি দরকার পরিবর্তনের!! আমরা কি খারাপ আছি নাকি!!!" জানি ওরা বেশ অনিয়ম করছে, কিন্তু দেশতো ঠিকই আগাচ্ছে! অনেকেই অবশ্য ইসলামি দলের সাথে হওয়া জোট ও আনোয়ার ইব্রাহীমের সমন্বয়ে গঠিত জোটের ক্ষমতায় আসার ব্যপারে বেশ আশাবাদী। জোটে ইসলামি দলের অবস্থান থাকায় ইসলাম পন্থিরাও বেশ স্বপ্নভরা চোখ নিয়ে ঘোরাফেরা করছে। কিন্তু অনেকেই আবার আসল সমীকরণটা ভালোই বিশ্লেষণ করছেন। তারা বলছেন বিরোধিজোট ক্ষমতায় এলে বরং সমস্যাটা আরও বাড়বে। ইসলামি দল ও আনোয়ারের দলের দেশ চালাবার অভিজ্ঞতা একেবারেই নেই। এদিকে অর্থনৈতিক ও অবকাঠামোগত দিক দিয়ে চাইনিজরা এদেশের সুপার পাওয়ার। বিরোধিজোট ক্ষমতায় এলে বরং এরাই ডোমিনেট করবে। তখন দেশ একচ্ছত্র ভাবে চাইনিজদের করায়ত্তে চলে যাওয়ার সম্ভাবনা প্রকট। তখনই দেখা যাবে অরাজকতা শুরু হবে। এই বিশ্লেষণটা কিন্তু একেবারে ফেলে দেয়ার মতো নয়। চলতে ফিরতে চাইনিজ ও মালয়দের রেষারেষি বেশ টের পাই। মাল্টিরেসিয়াল সোসাইটিতে দেশ চালানো একটা বড় ধরনের চ্যালেঞ্জ তার উপর ধর্মীয় ভিন্নতাও একটা ফ্যাক্টর। যায়গা মতো খুঁটি না থাকলে ক্ষমতায় গিয়ে হিতে বিপরীত হওয়ার সম্ভাবনাই বেশি। আমাদের দেশে নতুন সরকার হলে সরকারি আমলাদের ওএসডি করার হিড়িক কিন্তু এমনিতে এমনিতে হয় না। যায়গা মতো খুঁটি পোক্ত করতেই এটা করা হয়। এই দিক দিয়ে বিরোধীদল বেশ পিছিয়ে, কারণ এখন যারা আছে তাদের শেকড় কিন্তু চুয়ান্ন বছর ধরে প্রসারিত হয়ে এসেছে।
যাইহোক, এগুলো সব তাদের নিজেদের ব্যপার। কিন্তু চিন্তা করে দেখেন কি সৌভাগ্যবান এরা, এরা নির্দ্বিধায় বলতে পারে "কি দরকার পরিবর্তনের!"। চুয়ান্ন বছর ক্ষমতায় থাকা একটা দলের বিরুদ্ধে তো অভিযোগ কম জমা হওয়ার কথা না। কিন্তু তার পরেও ওরা বলতে পারে "ভালোইতো আছি"। আমরা জনগণ তো আর কিছুই চাই না, শুধু এতটুকু বলার অবকাশ চাই "কি দরকার পরিবর্তনের! ভালোইতো আছি" এমন কেউ কি আছেন আমাদের দেশে যাদের ছায়ার থেকে আমরা নির্দ্বিধায় একথা বলতে পারবো? নাহ! আবারো আকাশ কুসুম চিন্তায় মাথাটা জ্যাম হয়ে আসছে, তাই আজ এখানেই থামতে হচ্ছে।
বিষয়: বিবিধ
২৫৪৩ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন