সাউন্ড গ্রেনেডের একটি ব্যবচ্ছেদ! কদাচিত কবজি উড়ে যেতেই পারে!
লিখেছেন লিখেছেন নজরুল ইসলাম টিপু ০১ এপ্রিল, ২০১৩, ০১:১৫:৪৫ দুপুর
সাউন্ড গ্রেনেড এমন একটি গ্রেনেড যার ভিতরে ধাতব কোন টুকরা থাকেনা, তাই সেটা নিকটবর্তী স্থানে বিস্ফোরিত হলে নিহত হবার কোন কারণ ঘটেনা।
সাউন্ড গ্রেনেড যদি শরীরের উপরে পরে কোনভাবে ড্রেসের ভিতরে ঢুকে পড়ে এবং শরীরের সাথে লাগোয়া হয়ে বিস্ফোরিত হয়, তাহলে সেটি শরীরে মারাত্মক জখম তৈরি করবে। শরীরের সংবেদশীল স্থান অনুসারে এর আঘাতে মানুষ মারাও যেতে পারে।
নামে সাউন্ড গ্রেনেড হলেও, এটি বেলুনের মত নরম নয়। তার ভিতরে একটি আসল গ্রেনেডের সকল উপকরণ থাকে। কোম্পানি ভেদে পিন খোলার জায়গায় কিছুটা ধাতব বস্তু থাকে অথবা দৃঢ় প্লাস্টিকের মজবুত পাত থাকে। এটি কাউকে আহত করার জন্য নয় বরং ব্যবহার কারীর অধিক নিরাপত্তার জন্য ব্যবহৃত হয়। বিস্ফোরণ কালে এই শক্ত পাতটি যদি কোন পলায়ন পর ব্যক্তির চোখে, কানে, মাথায়, অণ্ডকোষে ও হৃৎপিণ্ডের উপরে আঘাত করে সে মারা যাবে।
ভয় দেখানোর উদ্দেশ্যে সাউন্ড গ্রেনেড বানানো হলেও এটি কিন্তু ময়দার খামির মত নরম তুলতুলে করে বানানো হয়না! তার বাহিরের আবরণ শক্ত খোলস ও মজবুত মোটা প্লাস্টিক চামড়া দিয়ে কঠিন ভাবে আবদ্ধ থাকে। সে আবরণ একটি ফুলানো ফুটবলের চেয়ে অনেক বেশী কঠিন।
তাই সেটি বিস্ফোরিত হলে তার চামড়াগুলো কয়েকশত মাইল গতিতে সন্নিকটস্থ প্রতিবন্ধকতায় আঘাত হানবে। এমতাবস্থায় গ্রেনেডটি দুই হাতের তালুতে চাপা থাকলে, বাতাস ও বস্তুর প্রচণ্ড গতির কারণে কব্জি উড়ে যাবে।
গ্রেনেডটি যদি টেবিলের ড্রয়ারের ভিতরেও থাকত, তাহলে ড্রয়ার বিস্ফোরিত হত। এধরনের একটি সাউন্ড গ্রেনেড যদি গোলাবারুদের গুদামে কিংবা অনেক সাউন্ড গ্রেনেডের বস্তায় বিস্ফোরিত হয়, সেখানেও ভয়াবহ বিপদ হতে পারে। তাই এটাকে শক্ত খোলস দিয়ে বানাতে হয়।
এটি বুঝার জন্য একটি পাতলা বেলুন ভাল করে ফুলিয়ে দাঁত দিয়ে ফুটো করে দেখা যায়। এধরনের সবচেয়ে নরম তুলতুলে জিনিষটিও যখন বিস্ফোরিত হবে, তখন চোখের অথবা মুখের কোন অংশ ক্ষত করবেই। সুতরাং শক্ত আবরণের সাউন্ড গ্রেনেডের কাজ আরো বেশী শক্তিশালী হবে।
সাউন্ড গ্রেনেডের বিস্ফোরণের ধরন, ফটকা কিংবা ককটেল প্রকৃতির নয় যে ছুড়ে দিলেই সেটি বিস্ফোরিত হবে। সাউন্ড গ্রেনেড এভাবে বিস্ফোরিত হয়না। এই গ্রেনেডে একটি পিন থাকে, পিনটি দাঁত দিয়ে অথবা হাতের হ্যাঁচকা টানে খুলতে হয়, তারপর নিদিষ্ট সময়ের মধ্যে (মনে করুন বিশ সেকেন্ড) মধ্যেই সেটাকে নিক্ষেপ করতে হয়। বিশ সেকেন্ড পার হওয়া মাত্রই সেটি ব্লাষ্ট হবে। পিন খুলে নিক্ষেপ করতে সময় দেরী হলে হাতেই সেটি বিস্ফোরিত হবে।
এই গ্রেনেড সংগ্রহে সরকারের একটি লক্ষ্য থাকে। যেমন কিছু গ্রেনেডের চামড়া মসৃণ ফলে আহত হবার সম্ভাবনা কম থাকে। কিছু গ্রেনেড একটি দুর্বল স্থানে প্লাস্টিকের বোতলের মত ফুটো হয়। ফলে প্রচণ্ড আওয়াজ হবে এবং সেটি রাস্তায় পড়ে থাকবে। এসব গ্রেনেড মূলত ভয় দেখানোর জন্য ব্যবহৃত হয়। কিছু গ্রেনেডের চামড়া প্রকৃত গ্রেনেডের মত বিস্ফোরিত হলে বহু টুকরায় ছিটিয়ে পড়ে। এই গ্রেনেডে ভয়ের সাথে সাথে আহত করারও মতলব থাকে।
রাজশাহীর পুলিশের ক্ষেত্রে সম্ভবত এটাই হয়েছিল যে, সে পিনটি জোড় করে খুলতে চেষ্টা করেছিল কিন্তু পরিপূর্ণ ভাবে সেটি খুলতে ব্যর্থ হয়। কিংবা পিন খোলার জন্য যে হুক থাকে, সেটি ছিঁড়ে গিয়েছিল কিংবা পিনটি শক্ত হয়ে ভিতরে আটকে ছিল। ফলে দুই হাতে জোড় করে পিন বের করার চেষ্টা করেছিল। জোরে নাড়ানোর কারণে কিংবা পিনটি আধা খোলে যাবার কারণে গ্রেনেডের ভিতরের উপাদান গুলো রাসায়নিক বিক্রিয়ায় অংশ গ্রহণ করে এবং বিস্ফোরিত হয়। দুই হাতের চাপের নিকটবর্তী প্রতিবন্ধকতায় গ্রেনেডটি বিস্ফোরিত হয়েছে বলেই তার দুই হাতের কব্জি উড়ে যায়।
পুলিশটি খুবই উত্তেজিত ছিল বিধায় নিরাপত্তার সময়ক্ষেপণ শর্তগুলো ভুলে যায়। ফলে হাতের মধ্যেই সময় শেষ হয়ে যায়। অথবা পুলিশ খু্বই অতি উৎসাহী ছিল বিধায় পিনের আধা খোলা কিংবা না খোলা নিয়ে নিয়ে চিন্তা করেনি। তাই হাতের মধ্যেই ফেটেছে। হাতে ফাটলে কব্জি সমেত উড়ে যাবে তা আগেই বলা হয়েছে।
অন্যের নিক্ষেপ করা বোমা পুলিশ তো দূরের কথা কোন বেকুব ব্যক্তিও হাতে তুলে নেয় না। রাস্তায় ফেলে রাখা টিফিন ক্যারিয়ার কে বোমা মনে করে গত সপ্তাহে ঢাকায় যানজট তৈরি হয়েছিল। সুতরাং মিছিলকারীদের কোন নিক্ষিপ্ত বোমায় কারো শরীর আহত হতে পারে, দুই কব্জি উড়ে যেতে পারেনা।
সরকার নিন্দা পাবার যোগ্য, যথাযত প্রশিক্ষণ না দিয়ে প্রমোশনের লোভ লাগিয়ে অন্যের সন্তানদের হাতে এভাবে বোমা তুলে দেওয়া মোটেও উচিত হয়নি। গ্রেনেড মেরে মানুষ তাড়ানোর এই উপনিবেশীক কু-বুদ্ধি সরকার কার মগজ থেকে ধার করে আনল, তা জাতিকে জবাবদিহী করা উচিত।
পুলিশের উচিত নয়, সরকারের রাজনৈতিক এজেন্ডা বাস্তবায়ন করতে গিয়ে, নিজেদের নাম অত্যাচারী আর জালিমের খাতায় নাম উঠুক। অন্যের সন্তানকে আটক করে টাকা আদায় করে নিজের সন্তানকে কোনদিন মানুষ করা যায়না। একজন মানুষ হিসেবে এটা তাদেরও মনে রাখা উচিত।
বিষয়: বিবিধ
৬৮৮৫ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন