মানব সভ্যতা রক্ষায় মোরগের ভূমিকা - রম্য রচনা
লিখেছেন লিখেছেন নজরুল ইসলাম টিপু ১৪ জানুয়ারি, ২০১৩, ০৭:১৬:০৫ সন্ধ্যা
মুরগী গৃহস্থের পচা, বাসী, উচ্ছিষ্ট খাদ্য কণা খেয়ে গৃহস্থকে মিতব্যয়ী রাখে। এছাড়াও বাড়ির আশে পাশের ঝোপ জঙ্গলের পোকা মাকড় খেয়ে গৃহস্থের বাড়তি উপদ্রব কমায়। গৃহস্থের বাড়ীর চারপাশের হালকা পচা মাটি খাদ্য তালাশ কালে নখ দিয়ে উল্টিয়ে, তাকে শুকিয়ে ঝরঝরে করে ও মাটির উর্বরতা বৃদ্ধি করে। গৃহস্থের ফেলে দেবার মত উচ্ছিষ্ট খানা দিয়েই মুরগী তার বংশ বৃদ্ধি অব্যাহত রাখে, ডিমের উৎপাদন দেয়। সর্বোপরি গৃহস্থের প্রদেয় খাদ্যের সাথে নিজেই সে পরিমাণ খাদ্য জোগাড় করে খায়, যার পুরো সুফল গৃহস্থের ঘরে যায়। মুরগী নোংরা থেকে খাদ্য খেলেও পরিষ্কার যায়গায় পায়খানা করা তার বদ স্বভাবের একটি। বংশকে স্বাবলম্বী করতে মা মুরগী ২ মাস পরেই বাচ্চাদের পিটিয়ে-ঠুকরিয়ে আলাদা থাকতে বাধ্য করেন। বেয়াদবি ও বিরক্তির জন্য মাথার ঝুঁটিতে, বে-আকলির জন্য লেজের মাথায় ঠোকর মেরে শাসন করে। মা মুরগী নিজে না খেয়েই বাচ্চাদের উদর পূর্তি করায়, গরম রাখে, নিরাপত্তা দেয়। খাদ্য খেতে কিংবা খাদ্য জোগাড় করতে বুদ্ধি শেখায়। মা মুরগী নিজের বাচ্চাদের মাঝে লড়াই বাধিয়ে যুদ্ধে পারদর্শী করায়, সর্বক্ষণ যুদ্ধে লিপ্ত থাকলে, বে আকলীর কারণে লেজের ঢিবিতে ঠোকর মেরে নিবৃত করে। মুরগীর ডিম্বকোষে ডিম আসলে মনের আনন্দে, কঁঅ... রবে আওয়াজ করে, ঝুটি রঙ্গিন হয়, চোখ হয় লাল। ডিম পারার অব্যাহতি পরেই খুবই চিল্লাচিল্লি শুরু করে, এটা সবার পেরেশানির কারণ হয়। মুরগীর চিল্লানির আওয়াজ শুনে মোরগ পুলকিত হয় ও এক প্রকার উত্তর দেয়, ফলে মুরগীর চিল্লানো বন্ধ হয়। মুরগী চায় তার ডিম পারার খবর মোরগ জানুক।
মোরগের খাসিয়ত একটু ভিন্ন প্রকৃতির। প্রতিটি নতুন আগন্তুক মোরগকে বাড়ীর পুরানো মোরগদের সাথে লড়াই করে ঠিক করতে হয়, এ বাড়ীর সকল মোরগের জায়গায় তার স্থান কোন পর্যায়ে থাকবে। সে খাদ্যের প্রতি খুবই উদাসীন, বাহিরে দেখতে রাজকীয় আকৃতির মনে হলেও ভিতরে কিন্তু একেবারেই ফাঁকা। মোরগ অসম্ভব কামুক প্রকৃতির, তাই ঘর থেকে বের হয়ে প্রথমেই সে চিত্ত বিনোদনের কাজটি সেরে নেয়। তারপর পুরো শরীর নাড়া দিয়ে ধুলো, বালি, ক্লান্তি, ক্লেশ সব ঝেড়ে নেবে; অসহায় প্রতিদ্বন্দ্বী কাউকে দেখলে তাড়া দেবে, অতঃপর ‘কূক কুড়ূক কুক’ বলে ডাক দিবে; তারপর খানায় মনোনিবেশ করবে। ততক্ষণে গৃহস্থের থালায় খানা শেষ! বাহিরে ছিটকে পড়া খাদ্য কণা দু একটি খেয়ে উপোষ থাকবে, আবারো বাহাদুরী দেখিয়ে কূক্ কুড়ুক কূক্ বলে হাঁক ছাড়বে। দৈবাৎ কোন একটি খাদ্য কণা সে যদি পেয়ে যায়, সেটা নিয়ে সে কট্ কট্ আওয়াজ করে, নিঃসঙ্গ মুরগীকে প্রলুব্ধ করে, কে খেতে আগ্রহী তা বুঝতে চায়। যে মুরগী খেতে আগ্রহী তাকে প্রাপ্ত খাদ্যকণা উপহার দেয়, মোরগের যদি সে মুরগীকে পছন্দ হয় তাহলে তাকেও ভালবাসবে বলে নিশ্চিত করে। ভালবাসার নিদর্শন স্বরূপ মোরগের একটি পাখা পায়ের সাথে লাগিয়ে, মাটি বরাবর বিছিয়ে মুরগীর চারিদিকে অর্ধ চন্দ্রের মত বৃত্ত বানায়। মানে তুমি আমার দখলে, তোমার উপর কেউ নজর দিলে কপালে খারাবী আছে। প্রতি আধা ঘণ্টা, এক ঘণ্টা পর পর তার কাম ভাব জেগে উঠে, চিত্ত ঠাণ্ডা না হওয়া অবধি তার পেরেশান যায়না। মোরগের এই খোলামেলা কামুক প্রবৃত্তির কারণে তাকে বেতমিজ পাখি হিসেবেও প্রথম কাতারের প্রাণী হিসেবে বিবেচিত। তার যদি এই খোলা মেলা বেতমিজি অভ্যাস না থাকত, তাহলে মানবজাতিকে গোশত ডিমের অভাবে দুনিয়ায় হাহাকার করতে হত।
মুরগী যদি প্রচুর পরিমাণ ডিম ও গোশত না দিত তাহলে দুনিয়ার বেকারিগুলো অচল হয়ে পড়ত। ডিমের অভাবে বিস্কুট, কেক, রুটি, পাউরুটি, বন, মিষ্টি সহ হাজার হাজার প্রকারের খাদ্য সামগ্রী তৈরি হতনা। দীর্ঘমেয়াদী, সহজে বহনযোগ্য, সুস্বাদু আমিষ হিসেবে মুরগীর ডিম যদি না থাকত, তাহলে মানবজাতি বড় কেকায়দায় থাকত। মুরগীর গোশত যদি না থাকত, কেন্টাকী, বার্গার, ম্যাকডোনাল্ডর্স সহ হাজারো কোম্পানির জন্ম হতনা। ফাস্ট ফুড বলতে কোন কথা ডিকশনারিতে থাকত না। স্যান্ডউইচ, হট ডগ, বিভিন্ন নাগেটস সহ মুরগীর মাংস নির্ভর আরো হাজারো খাদ্য সামগ্রীর কোম্পানির সৃষ্টি হত না। গরীব-মিসকিন মেহনতি মানুষের গরু-ছাগলের মাংস খাওয়া খুবই দুষ্কর ও দুঃসাধ্য। তারা এই মুরগীর মাংস দিয়ে নিজেদের মাংসের চাহিদা নিজেদের ক্ষমতানুযায়ী পূরণ করে থাকে। মানবজাতির আমিষের চাহিদা মেটাতে পুরো ধনী-গরিব সবাইকে, ঠেস দিয়ে ধরে রেখেছে মোরগ। সৃষ্টির এই নিপুণ কারুকাজ আল্লাহ একমাত্র মানুষের জন্য সৃষ্টি করেছেন। তিনি বলেছেন ‘কৌতুক কিংবা তামাচ্ছলে তিনি কিছুই সৃষ্টি করেন নাই। আর সকল সৃষ্টিই একমাত্র মানুষের কল্যানার্থেই বানিয়েছেন’। তারা ইচ্ছায় হোক আর অনিচ্ছায় হোক নিজের অজান্তে মানব সম্প্রদায়ের জন্য কল্যাণ করে যাচ্ছে। মুরগীর গোশত দিয়ে মৃত মানুষের জেয়াফত দেয়া হয়, কখনও মুরগীর জেয়াফতের কথা শুনিনি। তাই আসুন আমরা আল্লাহর প্রতি কৃতজ্ঞ হই, তার দেওয়া নেয়ামত ভোগ করে শোকরিয়া জ্ঞাপন করি। মোরগ সহ সকল সৃষ্টির প্রতি দয়ালু ও স্নেহবান হই, তাদের কে হেফাজত করি উত্তমভাবে। আল্লাহ মোরগ জাতিকে সৃষ্টি না করলে মানুষ অভাবগ্রস্ত হত, “আর মোরগ যদি অসম্ভব কামুকই না হত, তাহলে দৈনিক কোটি কোটি মোরগের চাহিদাও পূরণ হতনা”।
বিষয়: বিবিধ
২৫৪২ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন