ঐতিহাসিক ৩০ শে এপ্রিল, যেদিন আমরা গরীব হলাম, যেদিন থেকে লড়তে শিখলাম!
লিখেছেন লিখেছেন নজরুল ইসলাম টিপু ৩০ এপ্রিল, ২০১৬, ১০:৪৪:৫৫ রাত
২৯ শে এপ্রিল ১৯৯১, রাত ১১ টা। প্রবল বাতাস বেড়েই চলছে। বিদ্যুৎ তারের সংঘর্ষে বিকট ধ্বনির মাঝে শহরের এক একটি এলাকা থেকে আলো নিভে অন্ধকারে তলিয়ে যাচ্ছে! ইতিমধ্যেই বেশ কয়েয় টি ট্রান্সফরমার ফেটে যাবার শব্দ শুনেছি। জানালার কিয়দংশ খুলে বাহিরে তাকিয়ে আছি, এখান থেকে শহরের বহু দূর পর্যন্ত পর্যন্ত দেখা যায়। এ শহরের সর্ববৃহৎ কবর স্থানের কোল ঘেঁষেই আমার বাসস্থান। স্বজনদের তাড়াহুড়োর মাঝে একটি লাশ দাফনের চেষ্টা চলছে। প্রতিদিন-প্রতিরাত চব্বিশ ঘণ্টায় এভাবে বহু লাশের দাফন হবার দৃশ্য দেখতে অভ্যস্ত হয়ে গেছি। বাতাসের গতি এতই বেশী যে, কবরের কিনারে দাড়িয়ে থাকা কষ্টকর হল ফলে লাশ দাফন সম্ভব হল না! ততক্ষণে নিরাপত্তার আশায় রাস্তার পাশে ঠুনকো আস্তানায় আশ্রয় নেওয়া মানুষ গুলো, নিরাপত্তা পাবার লক্ষ্যে কবরস্থানের দিতে ধেয়ে আসতে দেখলাম। তাদের কাউকে পুরানো কবরের গর্তে আশ্রয় নিতেও দেখলাম! পুলিশের তাড়া খেয়ে কদাচিৎ ছিঁচকে চোরদের এভাবে লুকাতে দেখেছি! তবে আজ পরিবেশ ভিন্ন! ওদিকে লাশ দাফন বন্ধ রেখে মৃতের স্বজনদের কবরের গর্তে লাশের পাশেই উপুড় হয়ে লুকাতে দেখলাম! এটি এক বিরল দৃশ্য! আপন জনের লাশের পাশে লুকিয়ে নিজেরা লাশ না হবার কসরত! ১০ নম্বর মহা বিপদ সঙ্কেতের মধ্যে এই ধরনের পরিস্থিতি মোটেই সু-লক্ষণ বলে মনে হল না। বিশাল কবরস্থান খোলা হবার সুবাদে, বাতাসের গতি আমার জানালার বিপরীত দিকে থাকায়, জানালার ফাঁক দিয়ে শহরের একটি বিরাট অংশ দেখার সুযোগ থাকল।
আজ পূর্ণিমার রাত। আকাশ আগুন রঙা। তপ্ত বাতাস। বহু দূর অবধি সবই পরিষ্কার দেখা যাচ্ছিল। আকাশে বহুবিধ জিনিষ উড়ছে আর মহা সড়কে আছড়ে পড়ছে। প্রকৃতি যেন ক্ষোভে ফেটে পড়ছে। বটতলী রেল ওয়ে ষ্টেশনের ঠিক সামনের মসজিদের উপরের তলায় অতিরিক্ত অংশে বানানো একটি হোস্টেলে আমাদের অবস্থান। বাতাসের গতির বর্ণনা, কল্পনা শক্তি দিয়ে পরিমাপ করা কঠিন। মসজিদের উপরে বানানো ভবনটি যখন নড়াচড়া শুরু করল মনে হচ্ছিল ভূ-কম্পন শুরু হয়েছে! যে কোন মুহূর্তে পুরো ভবনটি ভেঙ্গে পড়তে পারে। জানালার ফাঁক দিয়ে অন্যের পরিণতি দেখতে গিয়ে নিজেরাই করুন পরিণতির শিকার হচ্ছি কিনা সেটা চিন্তা করে, হোস্টেলের সবাই প্রাণ বাঁচাতে মসজিদের নিচের তলায় নেমে এলাম।
মসজিদের দরজার গ্রিল ধরে বাদুরের মত করে কিছু মানুষ লটকে আছে এবং সাহায্যের আশায় চিল্লাচ্ছে। বিক্ষিপ্ত উড়ন্ত জিনিষ তাদের শরীরে আঘাত করে চলছে। এসব মানুষ মসজিদে ঢুকে যাতে প্রাণ বাঁচাতে পারে, সে লক্ষ্যে গ্রিল খুলে দিতে দৌঁড়ালাম। গ্রিল খুলতে চেষ্টা করলাম। পারলাম না! কয়েক জন মিলে গ্রিল খুলতে গিয়ে, হেঁচকা টান মারলাম! বাদুরের মত লটকানো মানুষদের মরণ চিৎকার শুনতে পেলাম। দেখলাম গ্রিল খুলতে গেলেও মানুষ মারা পাড়বে।
বাতাসের প্রচণ্ড গতির কারণে মানুষের শরীর গ্রিলের ফাঁক দিয়ে ঢুকে পড়েছে। অবস্থা দেখে মনে হল, বাতাস রাগ করেই এসব মানুষকে গ্রিলের ফাঁক দিয়ে ঢুকিয়ে, চিবিয়ে মারতে চায়। বাতাসের বিপরীতে তাদেরকে ধাক্কা দিয়ে গ্রিল থেকে বের করারও উপায় ছিলনা! আবার গ্রিল ভেদ করে ভিতরে আনারও জো ছিল না। গ্রিল মেলতে গেলে ফাঁক ছোট হবে এতে তাদের শরীরে আরো চাপ পড়বে, মাংস থেঁতলে যাবার ভয় ছিল। মসজিদের ভিতরে দাঁড়িয়ে, অসহায়ত্বকে বুকে ধারণ করে এভাবে প্রকৃতির তাণ্ডব দেখা ছাড়া আর কোন উপায় ছিলনা।
চট্টগ্রামের বুকে গৌরবের সহিত দাড়িয়ে থাকা, বহু দূর থেকে নজরে আসা, বিশাল টেলি যোগাযোগ টাওয়ার মুহূর্তে ধ্বসে পড়ে! সারা দুনিয়া থেকে বিচ্ছিন্ন হবার মধ্য দিয়ে শুরু হয় ইতিহাসের ভয়ঙ্করতম এই ঘূর্ণিবায়ু। কর্ণফুলী নদীতে অবস্থান করা প্রায় সকল নৌযান চিরতরে ধ্বংস হয়ে যায়। নদীতে অপেক্ষমাণ 'বাজরা' প্রবল বাতাসের দোলায়, নোঙ্গর ছিঁড়ে প্রচণ্ড গতি-প্রাপ্ত হয়ে, মাত্র কিছুদিন আগে উদ্বোধন করা 'কর্ণফুলী সেতুর' মাঝ বরাবর আছড়ে পড়ে। চট্টগ্রামের দক্ষিণাঞ্চলের মানুষদের বহুদিনের লালিত স্বপ্নে গড়া এই সেতুটি ক্ষণিকের মাঝেই ভেঙ্গে কর্ণফুলী নদীতে আছড়ে পড়ে। পুরো সেতু দুভাগে বিভক্ত হয়ে যায়। এর ফলে পরবর্তীতে বহুদিন কর্ণফুলী নদীতে নৌযান চালানো ব্যাহত হয়। বাংলাদেশ নৌ-বাহিনী, বিমান বাহিনীর বহু সামরিক যান ভয়ানক ক্ষতির সম্মুখীন হয়।
টাইগার পাসের দৃষ্টিনন্দন বিশালকায় শিশুগাছ গুলো কাণ্ড শূন্য হয়ে পড়ে! শহরের চারিপাশে মাথা উঁচু করে দাঁড়ানো সমুদয় গাছগুলো চিরতরে হারিয়ে যায়। শহরের যত্রতত্র আবর্জনা, বিক্ষিপ্ত মালামালের কারণে চারিদিকে লণ্ডভণ্ড পরিবেশ সৃষ্টি হয়। কমবেশি সকল ভবন ক্ষতিগ্রস্ত হয় এবং পুরো শহরকে বিদ্যুৎ, পানি ও যোগাযোগ শূন্য এক ভুতুড়ে নগরীতে পরিণত করে। পুরো দুনিয়ার সাথে টেলিযোগাযোগ ঠিক করতে বহু দিন লেগে যায় ফলে সঠিক খবর ও ক্ষয়ক্ষতির সঠিক সংখ্যা নিরূপণ করা আজো সম্ভব হয়নি।
শহরের বাহিরের জনপদের অবস্থা আরো করুন ছিল। উচ্চবিত্ত, মধ্যবিত্ত, নিম্নবিত্ত সবাই ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছে। ফসলী ক্ষেত-খামার, ফলের গাছ, জমি, বাড়ী, রাস্তা-ঘাট সবই ধ্বংস হয়েছে। বেশীর ভাগ গাছ কাণ্ড বিহীন দাড়িয়ে! যেগুলো লড়াই করে কিছুটা দাঁড়িয়েছিল, কয়েকদিন পড়ে সেগুলোর চেহারা দেখে মনে হয়েছে এই অঞ্চলের উপর দিয়ে দাবানল বয়ে গেছে কেননা ততদিনে আর কোন গাছের গায়ে পাতা ছিলনা! ফলে পরবর্তী কয়েক বছর এ অঞ্চলে খাদ্য ও শস্য সংকট লেগেই ছিল।
২৯শে এপ্রিল ১৯৯১ সালের এই ভয়াবহ ঘূর্ণিঝড়ে লক্ষ লক্ষ মানুষ মরেছে, মরেছে অগণিত প্রাণী। গরু-ছাগল-হাঁস-মুরগী আর মানুষের লাশে একাকার। পরবর্তীতে বহুদিন পর্যন্ত এই অঞ্চলে পাখির দেখা মিলেনি। স্বাধীনতার পরে স্মরণাতীত কালের মাঝে বাংলাদেশে এটিই ছিল ভয়াবহ দুর্বিপাকের অন্যতম। সারা দুনিয়ায় এ খবর ছড়িয়ে পড়ে এবং দেশ-বিদেশ থেকে সাহায্য আসতে শুরু করে। লক্ষণীয় ছিল, বাংলাদেশের প্রতিটি বিশ্ববিদ্যালয় এবং নামকরা সকল কলেজের ছাত্রদের সাহায্য সামগ্রী নিয়ে অবিরত চট্টগ্রামে আসতে দেখেছি। আমার অবস্থান রেলওয়ে স্টেশনের মুখে হবার কারণে দিন-রাত ট্রেন ভরে এসব সাহায্য কর্মীদের চট্টগ্রামে ভিড় করতে দেখেছি। মানুষের সে ধরনের অনুভূতি বর্তমানে খুব কমই দেখা যায়। বিপদে যাদের হাত পাতার অভ্যাস আছে এমন দুর্যোগে তারা আগে সহযোগিতা পায়। সামান্য সম্মানী মানুষদেরও হাতা পাতার অভ্যাস না থাকার কারণে তারা এই পর্যায়েও হতভাগ্য হিসেবেই বঞ্চিত থাকে।
ও হ্যাঁ! আমার সচ্ছল, সমৃদ্ধ পিতাও এই দুর্যোগে পড়েছিলেন। বিরাটকায় বিবিধ ফলের বাগান, রাবার প্লান্টেশন, খামার বাড়ী, বসত বাড়ী সহ প্রায় সকল কিছুই হারিয়ে যায়। গতকাল এখানে শত শত ফল বৃক্ষের গাছ ছিল, এটা বুঝার কোন লক্ষণ অবশিষ্ট ছিলনা। ভাগ্যক্রমে উপরে ছন যুক্ত মাটির একটি ঘর অক্ষত ছিল! এটিই ছিল অনেকের মাথা গোঁজার একমাত্র স্থান। গ্রামের খুবই অবস্থা সম্পন্ন ব্যক্তিটির কয়েক টন ওজনের বিরাট টিনের ছাউনি, তুলার মত তুলে নিয়ে বহু দূরে নিক্ষিপ্ত হয়।
১৯৯১ সালের ৩০ এপ্রিল সকাল থেকে চিরতরে নিঃস্ব হয়ে যান আমার বাবা! আর আমরা সে দিন থেকে গবীর মানুষের কাতারে স্থান করে নিই। জীবনে বিরাট ছন্দ পতন ঘটে। বাবার মুখে হাসি ফুটাতে মনে হাতির মত শক্তি অর্জন, আর প্রতিকূলতাকে জয় করতে মোষের মত লড়তে শিখেছিলাম। সেই বিপদ আমাদের ধৈর্যশীল ও অধ্যবসায়ী হিসেবে গড়ে তুলে। এত কিছুর পরেও আল্লাহর করুণা প্রাপ্তি থেকে বঞ্চিত হইনি, তিনি কৃতজ্ঞ মানুষকে খুবই ভালবাসেন।
আজ বাবা নেই কিন্তু এপ্রিল প্রতি বছর আসে। আজ সেই ঐতিহাসিক ৩০ শে এপ্রিল। এদিনে সেই ভাগ্য হারানো মর্ম বেদনার কথা বারে বারে মনে পড়ে। স্মৃতির পাতায় ভেসে উঠে সে সব অবস্থা সম্পন্ন সম্মানিত মানুষের মুখচ্ছবি, যারা লজ্জায় সাহায্য চাইতে পারত না, হাত পাততে জানত না। আর অসহায় নেত্রে আসমানের দিকে তাকিয়ে গায়েবী সাহায্যের আশায় প্রত্যাশার প্রহর গুনত! মনে পড়ে তখনকার দিনে দেখা পত্র-পত্রিকার পরতে পরতে হাজারো মানুষের কান্নার ছবি ও বিরান জনপদের সুমসাম নীরব দৃশ্য। দেখতে পাই গাছের ডালে আটকে পড়ে বেঁচে যাওয়া সেই শিশুর করুন চোখ! সে শিশু কান্না করে হাজারো লাশের মাঝে আপন জনদের সন্ধান করে ফিরছে কিন্তু সে জানেনা তার জনপদের একজন মানুষও জীবিত নেই.....
বিষয়: বিবিধ
৫০৫৬ বার পঠিত, ৫২ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
সন্মানিত মডারেটরবৃন্দকে আন্তরিক অভিনন্দন এই অসাধারণ লিখাটি ষ্টিকি করার জন্য।
লেখকের জন্য রইলো বিশেষ ষ্টিকি অভিনন্দন।
আমি তখন ৭ বছর বয়সের, একটু একটু বুঝতে শিখেছি, আমাদের এলাকার (ফেনীর গ্রামাঞ্চল) বেশিরভাগ বাঁশ ঝাড় মাটি সহ উপড়ে পড়ে ছিল।
বড় বড় তুলাগাছ বিশাল মাটির টিলা যেন পায়ের নখে নিয়ে শুয়ে আছে।
আমার নানাদের নতুন বাড়ীর টিনের ঘরের চাল গুলো অনেক দুরে দূরে গাছের উপরে পাওয়া গেছে। সারা রাত তারা ভিজে থরথর করছিল। পর দিন আমরা খানা নিয়ে দেখতে গিয়েছিলাম।
সবচেয়ে আশ্চর্যের বিষয় হলো বিল্ডিংয়ের চাদ শীতল পাটির মত গোল করে ফেলা, আমাদের পাশের গ্রামেই। এখনো ঐ ঘরটি ঠিক সেভাবেই আছে, তখন দূর দূরান্ত থেকে হাজারো লোকের ভিড় লেগেই থাকতো। কিভাবে পুরো বিল্ডিংয়ের চাদ পাটির মত ভাজ হয়ে গেছে।
সে আরো অনেক লেখা যাবে। ধন্যবাদ।
অনেক ধন্যবাদ
এই ঘূর্ণিঝড় নিয়ে ভাবীর ও একটা লিখা পড়েছিলাম ,সে লিখাটা আরো বেশী হৃদয়স্পর্শী ছিল ।
ধন্যবাদ ভাইয়া ।
- আর ওনার ঘটনাটা খুবই মর্মস্পর্শী ছিল, পরবর্তীতে আমি সে এলাকায় ছিলাম যার কারণে ভুক্তভোগী বুহ মানুষের সাথে এই ভয়ঙ্কর ঘটনার কথা বলার ও শোনার সুযোগ হয়েছিল। তবে এসব বলে যাবার মত কোন মানুষ জীবিতই থাকেনি। যে জীবিত সে লিখতে জানেনা। অনেক ধন্যবাদ, ভাল থাকুন।
- রিদওয়ান কবির সবুজ তখন সম্ভবত পঞ্চম অথবা ষষ্ঠ শ্রেণীর ছাত্র হবে, হয়ত অনেক কথা স্মরণে নাই, নতুবা তার নিকট থেকে বহু তথ্য ভিত্তিক কথা আসতে পারত। আবারো ধন্যবাদ।
এই কথাগুলো অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ। এখানে আগুনের একটি সূক্ষ্ম উপস্থিতির ইঙ্গিত আছে যেটা আমি আরো কয়েক জনের লেখাতে পেয়েছি। এটা নিয়ে গবেষণা করা দরকার মনে করি। কিন্তু কে করবে?
শতাব্দীর সেরা এমন একটি আলোচিত ঘটনা যার সাথে কমপক্ষে পাঁচ লক্ষ পরিবারের সম্পর্ক। যে ট্রাজেডিতে প্রতি মিনিটে গড়ে ৬০০ জন লোক মারা গিয়েছিল। প্রতি মিনিটে গড়ে ৬০০০ গবাদিপশু মারা গিয়েছিল। এভাবে রাত ১১টা থেক ভোর ৪টা পর্যন্ত ৩০০ মিনিট বা ৫ ঘন্টা পর্যন্ত চলছিল নিহতের প্রতিযোগিতা। অবাক হবার বিষয় হচ্ছে এই ঘটনার উপর লেখা একক কোন বই নেই বাজারে।
আমি যখন এ সংক্রান্ত বই " ভয়াল ২৯ এপ্রিল ১৯৯১" প্রকাশ করার জন্য হাত দিয়েছি তখন এ সংক্রান্ত আরো অনেক তথ্য জানতে পেরেছি।
এখনও আমি মনে করি বইটির জন্য আরো তথ্য সহযোগিতা দরকার হবে। ব্লগারদেরও সহযোগিতা চাই। বইটি আগামি মাস নাগাদ মোড়ক উন্মোচন করার আশা করছি যদি আল্লাহ তৌফিক দেন।
২৯ শে এপ্রিল বর্ষাকাল ছিলনা, পুরো দিন আকাশে হালকা মেঘ ছিল এবং মেঘের ঘনত্বও তেমন ছিলনা। অন্য নিম্নচাপের সময় বৃষ্টি থাকলেও এই নিম্নচাপের পুরোদিন কোথাও বৃষ্টি হয়নি তবে বৃষ্টির মত পরিবেশ ছিল। এমনকি সন্ধ্যায় যখন সামান্য হারে বাতাস বইতে শুরু করে, তখনও বৃষ্টি ছিলনা। সন্ধ্যার এই বাতাসের তোড়ে সমুদয় ধুলো-বালি-কণা আকাশে-বাতাসে মিশে যায়। প্রায় দু'ঘণ্টা চলে এই ধারাবাহিকতা। আগে থেকেই এই ধূলি বালি উড়ার কারণে বহু মানুষ আগে ভাগে নিজেদের আশ্রয়ে চলে যায়। শহরে এমনটিই দেখেছি, পরিবেশ ভেদে গ্রামীণ জনপদে ভিন্ন ধরনের তথ্যও থাকতে পারে।
রাত্রে যখন বাতাসের গতি ভয়াবহ আকার ধারণ করে, তখন আকাশের বিক্ষিপ্ত মেঘরাশি ছিন্ন ভিন্ন হয়ে যায়। তখন আকাশে মেঘ দাঁড়াতে পারেনি কিন্তু ধূলি কণায় আকাশ একাকার হয়ে পড়েছিল। ফলে পূর্ণিমার চাঁদের নিক্ষিপ্ত আলো উড়ন্ত ক্ষুদ্র বালির মাঝে আলোর প্রতিফলন ঘটায়। কোটি কোটি ধূলিকণা একে অপরের উপর প্রতিফলিত হবার কারণেই আগুন রঙা আলোর পরিবেশ সৃষ্টি হয়। নগরে দেখা, এটি ছিল এমন এক ধরনের ঘূর্ণিঝড় যাতে বৃষ্টির উপস্থিতি একেবারে নেই বললেই চলে। পুরো বর্ণনা বাতাসের বিরুদ্ধে হলেও, মানুষ মরেছে জলোচ্ছ্বাসে! প্রচণ্ড বাতাস বিশাল আকৃতির ঢেউ বয়ে এনে উপকুলে ঢেলে দিয়েছে। মানুষ বাতাসের কারণে পালাতে পারেনি, ঢেউয়ের কারণে বাঁচতে পারেনি।
প্রচণ্ড গতিতে কোন বস্তু একে অপরের সাথে ঘর্ষণ লাগলে সেখানে তাপের সৃষ্টি হয়। এটাই বিজ্ঞানের সূত্র। বাতাসে ঘূর্ণায়মান প্রচুর ধূলি-কলা একে অপরের সাথে ব্যাপক ঘর্ষণের কারণেই তাপের সৃষ্টি হয়েছে। ঘূর্ণিঝড়ের শুরুতে আগে থেকেই যদি বৃষ্টি হত তাহলে আগুন বর্ণ আর উত্তাপ কোনটাই সৃষ্টি হতনা।
আশা করি আমার ব্যাখ্যা গ্রহণীয় হবে। কেননা সে দিনের শুরু থেকে শেষ অবধি আমি প্রতিটি ঘটনা প্রবাহ নিজ চক্ষে প্রত্যক্ষ করেছি। তাপ ও আলোর ব্যাখ্যা পরবর্তীতে লেখাপড়ার মাধ্যমে উদ্ধার করেছি। কেননা মরুভূমির জীবনে হালকা সাইমুম তথা মরুঝড়ের ক্ষেত্রেএ এরকম ঘটতে দেখেছি। মরুতে বাতাসে হালকা বালি রাশি থাকলে, সে ধরনের আলোর উপস্থিতি দেখা যায় এবং তাপমাত্রা ভিন্ন ধরণের উষ্ণতা ছড়ায়। যা ২৯ শে এপ্রিলে হতে দেখেছি।
এ নিয়ে এবার ২৯ এপ্রিল আমার দুটি লেখা পত্রিকায় এসেছেঃ
১)Click this link
২) Click this link
চমৎকার এই পোষ্টটির জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ।
আল্লাহ বলেন বান্দা যে শাস্তি ভোগ করে তা তার নিজেদের কামাই৷ জানিনা কোন পাপের শাস্তি এ সব।
টেকনাফে আমার আব্বার দোকান ছিলো কাপড়ের......! সেই ৯১ দোকান শেষ!!
পঁচিশ বছর পরেও অসংখ্য মানুষ আজো সোজা হয়ে দাঁড়াতে পারেনি!
সন্মানিত মডারেটরবৃন্দকে আন্তরিক অভিনন্দন এই অসাধারণ লিখাটি ষ্টিকি করার জন্য।
মন্তব্য করতে লগইন করুন