বেয়াড়া ছাত্রের শিক্ষার ভার – ঢেঁড়স চৌধুরী জিন্দাবাদ (পিকুলিয়ার মানুষ)
লিখেছেন লিখেছেন নজরুল ইসলাম টিপু ০৭ অক্টোবর, ২০১৫, ০৫:১৩:০১ বিকাল
ইয়াকুব চৌধুরীর ঘর কোথায়, তা জিজ্ঞাসা করার জন্য কোন মানুষ-জন পাচ্ছিলাম না। এমন সময় শিশু-কিশোরদের একটি মিছিল আসতে দেখলাম। জনা বিশেষ শিশু হাতে লাটি নিয়ে, লাটির মাথায় কি যেন একটা বেঁধে মিছিল করছে।
ঢেঁড়স চৌধুরী কি, জিন্দাবাদ।
ঢেঁড়স তুমি এগিয়ে চল, আমরা আছি তোমার সাথে।
ঢেঁড়স ঢেঁড়স ঢেঁড়স চাই, ঢেঁড়স ছাড়া উপায় নাই।
এক দঙ্গল শিশু-কিশোর লাটির মাথায় ঢেঁড়স বেঁধে, ঢেঁড়সের মিছিল করছে, ব্যাপার খানা না বুঝেও একপ্রকার হাসি আসল। এমন সময় লাটি হাতে কোত্থেকে এক ব্যক্তির হঠাৎ অভ্যুদয় হল! তার সাথে আমার চোখাচোখি হতেই বুঝলাম প্রচণ্ড রাগ তাঁর চেহারা থেকে ঝরে পড়ছে। তিনি হঠাৎ করেই শিশুদের মিছিলে পুলিশী স্টাইলে পিছন দিক থেকেই ঝাঁপিয়ে পড়লেন! মুহূর্তেই শিশুরা দিক-বিদিক জ্ঞান শূন্য হয়ে কোথায় যেন হারিয়ে গেল!
ততক্ষণে মর্ম বুঝলাম ঢেঁড়সের সাথে এই ব্যক্তির কোন যোগসূত্র আছে এবং তিনিই বা কেন লুকিয়ে এসেছিলেন! তার চেয়েও বেশী বুঝলাম, ধুরন্ধর শিশুগুলো আগে থেকেই জানত, মিছিলে যে কোন দিক থেকে হামলা আসতে পারে, তাই তারা এসব সতর্কতা নিয়েই মিছিল করছিল আর যখনই মিছিলে হামলা হল, মুহূর্তে সকলেই পগার পাড়!
জীবনে বেশ কয়েকটি টিউশনি করেছি, পরিস্থিতির জঞ্জালে পড়ে লজিংও করতে হয়েছে। তন্মধ্যে তিন জন ছাত্রের কথা আজো মনে পড়ে। একজন ছিল চরম বেয়াড়া, আরেকজন ছিল বলী, দশ জনও তাকে পরাস্ত করতে পারত না! তৃতীয় জন ছিল মেধাবী ও শান্ত। ভিন্ন স্বভাব ও পরিবেশের এই ছাত্রদের সাথে আমার সুন্দর মধুর অনেক স্মৃতি জড়িয়ে আছে, যেগুলো খুবই চিত্তাকর্ষক। জীবনের প্রথম লজিং বাড়ীর উদ্দেশ্যে রিক্সা থেকে নেমেই বাচ্ছাদের ঢেঁড়স মিছিল পণ্ড হতে দেখলাম!
তখনও কোন মানুষের দেখা নাই। মনে পড়ল আজকে বাজারের দিন, তাই শক্ত-সামর্থ্য সকল মানুষ বাজারেই। যার কারণেই মানুষের দেখা মিলছে না, যাক ততক্ষণে শিশুদের মিছিল ভঙ্গ করে সেই তিনি এদিকেই আসছেন, আর নিজে নিজে বক বক করে কি যেন বলছেন। চোখে চোখে হওয়াতে তাকে বললাম, চাচা ইয়াকুব চৌধুরীদের বাড়ীটা কোন দিকে?
-চোখে মুখে রাগের ভাব নিয়ে বললেন, আমাকে চাচার মত লাগে?
-আমি দুঃখিত, ভুল হয়েছে, আপনি তো আমার বড় ভাইয়ের মত। তা চৌধুরী সাহেবের বাড়ীটা কোন দিকে?
-কি মনে করে, গলা একটু নরম করে বললেন, ‘দেখেন এখানে আমরাই প্রকৃত চৌধুরী। ইয়াকুব মিয়া কোন চৌধুরীই নয়, ভবিষ্যতে আমার সামনে আর কোনদিন ইয়াকুব মিয়াকে চৌধুরী হিসেবে বলবেন না! সে হল ব্যবসায়ী এবং মাস্তান। তার গোষ্ঠীর সবাই মাস্তান! তা ইয়াকুব সদরের (সওদাগর) সাথে আপনার কি কাজ?
-আমি তাঁর ছেলেকে পড়াব।
-বা,বা, বাহ্। আপনিই সেই বজ্জাতের মাষ্টার হয়ে এসেছেন! তার বাপে বলেছিল ছেলেকে মানুষ বানাইতে ভাল মাষ্টার আসিতেছে। তাহলে আপনিই সেই ভাল মাষ্টার, আপনাকে দেখে আমার নয়ন জুড়াইয়া গেল। আমি গত তিন বছরে যারে ঠিক করতে পারি নাই; আপনি তারে মানুষ বানাইবেন!
আল্লাহ মালুম সেই ছাত্র উল্টো আপনাকেই জানোয়ার বানাইয়া ছাড়ে কিনা! তাই চিন্তা করিতেছি!
তিনই বলতে রইলেন,
‘শুনেন নতুন মাষ্টার সাব, কিছুক্ষণ আগে তো আপনি এই খানে দাঁড়াইয়া ছেলেদের মিছিল দেখিয়া দাঁত কেলাইয়া হাসিতেছিলেন। খবরদার এই গ্রামে থাকিতে হইলে, আর কোনদিন এই কাম করবেন না। সেই মিছিলের যে নেতা ছিল, তার নাম ইমরান, আপনি সেই বজ্জাতের স্যার! আমি যদি বজ্জাতেরে সুযোগ মত পাইয়া যাই, তাহলে আপনার আর কষ্টকরে মাস্টারি করা লাগবে না! শাসন কারে কয়, মাষ্টার-ছাত্র সবাইরে দেখাইয়া দিমু’।
আমি তাজ্জব হইয়া তন্দ্রা মুগ্ধের মত শুনিতেছিলাম,তার কথায় তন্দ্রা ভঙ্গ হল,
-শুনেন, সামনে গিয়া রাস্তার বাম পাশে, যে সুন্দর ডেইরী ঘর (বাহিরের ঘর) আছে সেটাই ইয়াকুব আলীর ঘর। ঘৃণায় আমি তাদের বাড়িতে যাইনা, আপনি নিজেই যান। আপনার সাথে আমার বহু কথা বার্তা বাকি আছে, পরে আবার দেখা করবেন।
ভাবতে রইলাম, জীবনের প্রথম মাস্টারি, কোন ধরনের ঝামেলায় পড়তে যাচ্ছি বুঝলাম না। ফ্রি’তে খানা খেতে এসে যদি, নিজের চোখই কানা হয়ে যায়, তাহলে পুরাই লোকসান। আমাদের বাড়ীতেও লজিং মাষ্টার আছে, আমরা সম্মান করি, মর্যাদা দেই কিন্তু যার বাড়ীতে লজিং যাব, তাদের বাড়ীতে যাবার আগেই এত বিপত্তি! বাকি দিন কেমন কাটে সেই চিন্তা মাথায় নিয়ে ইয়াকুব চৌধুরীর বাড়ীর দিকে রওয়ানা হলাম।
ইয়াকুব মিয়া চৌধুরীর বাড়ীর সামনে দাড়াতেই দেখি, তিনি হন্তদন্ত হয়ে বাজার থেকে চলে এসেছেন। বাজারে গিয়েই শুনেছেন যে, আমি তাদের বাড়ীর পথে, তাই তিনি জলদি চলে আসলেন। মূলত তারা তিন দিন আগেই আমার আসার কথা ছিল। লজিংএ যাওয়া ঠিক হবে কিনা দুদোল্যমানতার কারণে দিন গুলো পিছিয়ে গিয়েছিল। সিনিয়র ভাইয়েরা সাহস ও সম্ভাবনার লোভ লাগানোতে অগত্যা এসেই গেছি।
ইয়াকুব মিয়া চৌধুরী খুবই বদান্যতার সহিত আমাকে গ্রহণ করলেন। তিনি বললেন, আমি নিজেও লজিংএ থেকে লেখাপড়া করেছি। একজন লজিং মাষ্টারের কি প্রয়োজন, কি চাহিদা, সেটা আমি নিজেই বুঝি। সুতরাং আমার কাছে আপনার কিছু প্রয়োজন হবার আগেই আমি জেনে যাব। তারপরও কিছুর সমস্যা হলে, আমাকে জানাবেন। আমি নিজে বিদেশ ছিলাম, টাকার পিছনে সময় দিয়েছি, ছেলেরা বরবাদ হয়ে যাচ্ছিল। তাই বিদেশ থেকে চলে এসেছি। আমার ছেলেটি উচ্ছল, চঞ্চল সেটা অনেকে পছন্দ করেনা। বিশেষ করে ঢেঁড়স চৌধুরী! (ততক্ষণে সম্ভাব্য ছাত্র-ছাত্রীরা এসে পড়েছে) আমি আপনার কাছে বেত, রসি, কলম, বই ও টুপি রেখে গেলাম। এগুলোর ব্যবহার দিয়ে তাদের মানুষ করবেন। ছেলে-মেয়েদের রেখে গেলাম। ওদের শরীরে শুধু হাড় গুলো থাকলেই আমার জন্য যথেষ্ট।
চৌধুরী বের হয়ে গেলেন, আবার ফিরে এলেন! ও হ্যাঁ, আমি আপনার পরিবারের বিস্তারিত খবর নিয়েছি। আপনার বাবা দরবার শরীফের ভক্ত, জিয়াউল হক মাইজ ভাণ্ডারী ও আপ নার বাবা একই ক্লাসে পড়েছেন, এমনকি ভাণ্ডারীর শ্বশুড় বাড়ীও আপনাদের বাড়ীর পাশে। আপনাদের আকিদা ও আমাদের আকিদা একই হওয়াতে, আমি খুশী হয়েছি। সে জন্য আপনাকে আনার জন্য লেগে ছিলাম। আমি কিন্তু মওদূদী বাদ, শিবির, ওহাবীদের একদম পছন্দ করিনা। আপনি খেয়াল রাখবেন যাতে করে ওহাবী, শিবিরের কোন ছেলে ফেলে যাতে এই এলাকায় মাষ্টার হয়ে না আসে। তারা বড় ফেতনাবাজ, খবর পাইলেই আমাকে জানাবেন, বাকি দায়িত্ব আমার।
অদ্ভুত মানুষ, বিদঘুটে পরিবেশ, বিচিত্র জঞ্জাল যেন মাথার উপর আকাশ ভেঙ্গে পড়ল! চিন্তা করলাম এত তাড়াতাড়ি হতাশ হওয়া যাবেনা। ভাবলাম দেখা যাক কি করা যায়, হয়ত এর একটা বিহিত করতেই পারব।
ছৈয়দ আলী চৌধুরী যৌবন কালে কোন বন্ধুর বিয়ে খেতে গিয়ে, রাত্রে পয় নিঃসরণের দরকার হয়ে পড়ে। হঠাৎ পায়খানার সন্ধান না পেয়ে, পাশের ঢেঁড়স খেতে বসে কাজটা সেরে ফেলেছিলেন। এটা তারই বন্ধুরা দেখে ফেলে। তার পরদিন থেকে তাঁর সেই দুঃখ-লজ্জার কথা মনে করিয়ে উত্ত্যক্ত করতে বন্ধুরা ‘ঢেঁড়স’ বলে উচ্চারণ করতেন। এতেই তিনি ক্ষেপে যেতেন। এলাকার কেউ ভুলেও প্রয়োজনে ঢেঁড়সের নাম নিতে পারতেন না। একদা তার স্ত্রী বাজার থেকে ‘ঢেঁড়স’ আনতে বলায় বহু বড় লঙ্কা কাণ্ড ঘটে যায়, ঘটনাটি প্রায় বিবাহ বিচ্ছেদের দিকে গড়িয়ে যায়। যাক, এলাকায় ঢেঁড়সের প্রকৃত নাম ‘ভেণ্ডি’। সম্পদশালী ছৈয়দ আলী চৌধুরী মানুষটিও একটু ত্যাড়া ধরনের, যার পিছনে লেগে বসে, তার আর নিস্তার নাই। তার অন্যান্য ভাইদেরও এই ধরনের বিদঘুটে উপাধি আছে। আজকে আমি ঢেঁড়সের মাঝেই সীমাবদ্ধ থাকব। অনর্থক ঝগড়া এড়াতে এলাকার কেউ প্রয়োজনেও ঢেঁড়সের নাম নিতে পারে না। এতদসত্বেও এলাকার শিশুগুলো ছিল অধিকমাত্রায় ফাজিল। তারা ছৈয়দ আলী চৌধুরীকে দেখা মাত্রই ঢেঁড়স বলে দৌড় লাগাতেন। আর ঢেঁড়স চৌধুরী সেই ছেলের পিছনে লেগেই থাকতেন যতক্ষণ না তার পিতা-মাতা চৌধুরীকে খুশী করার মত শাসন করতে না পারে। ছেলেরা এভাবে শাসন আর মার খেতে খেতে তারাও একপ্রকার ‘তেঁদড়’ এর মত হয়ে পড়েছিল, তারাও ঢেঁড়স চৌধুরীর এই কাজের প্রতিশোধ নিতে ছেলেমি কৌশলে শত্রুতা হাসিল করত। এগুলো ছিল অভিনব ও অদ্ভুত।
ছেলেদের এই দলের নেতা হল আমার হবু ছাত্র এমরান! ঢেঁড়স চৌধুরী এমরানের বিরুদ্ধে তার পিতার কাছে বিচার নিয়ে গেলে, নিয়ে সোজা বলে দেন, জগত বাসি আপনাকে ঢেঁড়স চৌধুরী হিসেবেই চিনে, আমার ছেলে বললে যত দোষ, চেয়ারম্যান সাহেব বললে তো কিছুই করেন না। সবাইকে ঢেঁড়স ঢেঁড়স বলতে দেন। আপনি না খেপলেই তো ছেলেরা বলা ছেড়ে দিবে। আপনার যা দশা তাতে রবীন্দ্রনাথ আর নজরুল যদি ঢেঁড়স নিয়ে কবিতা লিখে আপনি তাদেরকেও জগত ছাড়া করবেন! এসব কি পেয়েছেন? বুড়ো বয়সে ফাজলামি ছাড়েন।
এই ধরনের কথা শুনে ঢেঁড়স চৌধুরী চলে আসার মত ব্যক্তি নয়। সকাল থেকে সন্ধ্যা অবধি ওদের বাড়ীর সামনে দাড়িয়ে তিনি প্রতিবাদ করতে থাকবেন, মহিলাদের উদ্দেশ্যে বলবেন, সন্তান দিয়ে যাতে এসব জুলুম না করে। তার পরদিন সকালে যথারীতি হাজির হয়ে, গতকালে ঝগড়া যেখানে শেষ করেছিলেন সেখান থেকে পুনরায় শুরু করবেন। ‘যেমন বুনো ওল, তেমন বাধা তেঁতুল’ কেউ কাউকে ছাড় দেয়না। সে জন্য আমার লজিং হোল্ডার ও ছাত্র ঢেঁড়স চৌধুরীর আজন্ম শত্রু আর তাদের বাড়ীতে যোগ দিয়ে প্রথম দিনেই চক্ষু শুলে পরিণত হলাম।
দুদিনের মধ্য খবর পেলাম ঢেঁড়স চৌধুরীর এক বোনকে আমার নানার বাড়ীতে বিয়ে দিয়েছেন, আমি তাঁকে নানী বলে ডাকি সে সূত্রে ঢেঁড়স চৌধুরী আমার নানা হন। তাঁকে বুঝিয়ে বললাম, আপনি আমার সম্পর্কে নানা হন, তাই আমার ছাত্রের বেয়াদবি আমি বরদাশত করব না। সে আর আপনার বিরুদ্ধে লেগে থাকবে না, তাকে আমি দমন করব, শাসন করব এবং আপনাকে খুশী করব। আমার ঘোষণায় তিনি খুবই খুশী হলেন। আমিও চিন্তামুক্ত হলাম। ছাত্রকে বুঝালাম, এসব করেনা, ভাল মানুষ এগুলো করেনা। ছাত্র বলল আগে করত, তার পিতার গরু মারা শাসনে সে আর ওগুলো করেনা, তবে অন্য কেউ করলে ঢেঁড়স চৌধুরী সেটা আমার নামে চালিয়ে দেন এবং আমার বাবার মাধ্যমে আমাকে মার খাওয়ায়। আমি ওসব দেখবে বলে তাকে নিশ্চিত করলাম এবং কাল থেকে যাতে আর নতুন কিছু না হয়, সে জন্য সে ওয়াদা করে।
কুয়াশা ভিজা সেই ভোরে, ফজরের নামাজ পড়তে মসজিদে যাবার প্রাক্ষালে আবছা অন্ধকারে দেখতে পেলাম, কেউ একজন নিজের লুঙ্গি দিয়ে দেওয়ালের কিছু একটা পরিষ্কার করছে। কৌতূহলী হয়ে প্রশ্ন করলাম আপনি কে? কি করছেন?
ক্ষুব্ধ কণ্ঠে বললেন, দেখছেন না কি করছি! দেওয়াল থেকে লিখা মুছতেছি, এখন লিখাটা পড়ে যান সকালে দেখা হবে। আজ বড় বিচার হবে। অনেক চেষ্টা করেও আবছা অন্ধকারে সেই লেখাটা আমি পড়তে পারিনি, তবে কৌতূহল চলে যায়নি। মসজিদ থেকে নামাজ পড়ে আসার সময় দেখতে পাই, দেওয়ালের লিখা মুছে ফেলা হলেও কিছুটা অস্পষ্টতা রয়ে গেছে।
চুলার পোড়া কাঠের কয়লা দিয়ে দেওয়ালে বড় বড় অক্ষরে লিখা ছিল,
‘ঢেঁড়স তুমি এগিয়ে চল, আমরা আছি তোমার সাথে’
‘ঢেঁড়স ঢেঁড়স ঢেঁড়স চাই, ঢেঁড়স ছাড়া উপায় নাই’।
আমি শতভাগ নিশ্চিত এবং বিশ্বাস যে, আমার ছাত্র এগুলোতে নাই।
মসজিদের পুকুরে গোসল করতে গিয়ে শুনি, মসজিদের গণ শৌচাগারের ভিতরে কেউ একজন উত্তেজিত হয়ে চিল্লাচ্ছেন। তিনি কাউকে গালাগালি করছেন ভিতর থেকে লাথি মেরে শৌচাগারের দরজা ভেঙ্গে ফেলার জোগাড় করছেন। একজন চিন্তা করলেন শৌচাগারের দরজা বন্ধ হয়ে কেউ আটকে পড়েছেন। তিনি গায়ে পড়ে উপকার করতে গেলেন। তিনি কাছে গিয়ে দেখে যা বুঝলেন, ব্যক্তিটি পয়ঃকাম সাড়ার জন্য কাপড় খুলে বসেছিলেন এমনি সময় দেখতে পেলেন, টয়লেটের দেওয়ালে কয়লা দিয়ে কেউ লিখে গেছে ‘ঢেঁড়স তুমি এগিয়ে…………’। অমনি ঢেঁড়স চৌধুরীর মেজাজ গেল চড়ে! তিনি সেই অবস্থাই লুঙ্গির বর্ধিত অংশ দিয়ে তা মুছতে লেগে গেলেন এবং গালাগালির চূড়ান্তে পৌঁছলেন। ভদ্রলোক দূর থেকে আমাকে ইঙ্গিত দিয়ে বুঝালেন, আমি যাতে পুকুর ঘাট থেকে তাড়াতাড়ি চলে যাই। কেননা এই দোষ যথারীতি আমার ছাত্রের কাঁধে পড়বে এবং সেই অবস্থায় আমাকে সামনে পেলে দু-কথা শুনিয়ে দেবে। আমিও সম্ভাব্য ইজ্জত হারানোর ভয়ে কেটে পড়লাম।
চলবে............আগামী সংখ্যায় সমাপ্য
বিষয়: বিবিধ
২৩০১ বার পঠিত, ২৬ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
আমার শৈশবে দেখা এমন দু'জনের কথা মনে পড়ে গেল!!
এটা একধরণের মানসিক রোগ মনে হয়!
কারণ তাঁরা নিজেরাও জানেন যে, প্রতিক্রিয়া না দেখালে কয়েকদিনেই সব হারিয়ে যাবে, কিন্তু সেটা পারেননা!!
তবে এমন নাম আমরা সাধারনত দিতাম স্কুল কলেজের শিক্ষককে। একটু আগে এটা পোষ্ট দিয়েছি। সেই ছেলেটার নানা চট্টগ্রাম কলেজ এর শিক্ষক ছিলেন। আমার এক বন্ধুকে খবরটা দিতে গিয়ে সে কিছুতেই তাকে চিনছিল না। শেষে আমি যখন বললাম কেমেষ্ট্রির গোপাল ভাঁড় সাথে সাথে চিনে ফেলল!!!
আমি শিল্প নগরীর লোক৷ আমার গ্রামের পাশেই ভৈরব নদ, তারই অপর পারে এবং পাড়েই জুট মিল গুলো৷একটি খেয়া নৌকায় প্রায় একশো লোক গাদা গাদী করে শিফটিং টাইমে পার হয়৷স্কুলের পথে সেই নৌকায় আমিও গেছি৷ সেই ভিড়ের মাঝে কোন একজন বয়স্ক লোককে চাচা ডাকলে তিনি তেলে বেগুনে জ্বলে উঠতেন আর সমানে গালি দিতেন৷ ভিড়ে সনাক্ত করা যেতনা যে ক বলেছে৷ গালি থামলে আবার কেউ বলল৷আবারও চাচার গলা চড়ে উঠল৷৫/১০ মিনিটের যাত্রায় এঅবস্থা চলতেই থাকত৷ আমার পাড়াতেও এমন দু জনকে দেখেছি৷ আল্লাহর দুনিয়ায় কত রঙ্গেরইনা মানুষ আছে৷ ধন্যবাদ৷
ভালো লাগলো। ধন্যবাদ এরকম পিক্যুলিয়ার বিষয় নিয়ে লেখার জন্য।
তবে আমাদের সমাজে এই যে কাউকে দুরব্ল পয়েন্ট দিয়ে ক্ষ্যাপানোর যে রসিকতা তা আসলেই ভালো নয়।
আশকরি পরের পর্বে বিস্তারিত জানতে পারবো!শুকরিয়া!
আপনার লেখাটি পড়লাম এবং একটি মানুষ এর কথা ভাবলাম!!! আমাদের বাড়ির কিছু দূরে ফরেস্ট অফিস, ফরেস্ট অফিসটির সাথেই একটি খাল, (নদী) গরমের সময়ে দুপুরে খাবার খাওয়ার পর খালে দল বেঁধে গোসল করতে যেতাম..... খালে গোসল করতে যাবার কারন আসলে ২টি একটি হলো খালে অনেক সময় ধরে গোসল করলেও মা বা বাবা এসে বাকা দিয়ে নিয়ে যাবার সম্ভাবনা নেই,
দ্বিতীয়টি একজন মানুষ...!! মানুষটির চুল দাড়ি পেকে সাদা হয়ে গেছে তারপরও সে চাকরি করে ফরেস্ট অফিসে অফিস বয় হিসাবে। ওনার কাজ হল ফরেস্ট অফিসারদের বাজার বহন করা....।
ওনি একবার সরকারি বাগানে যায় ফরেস্ট অফিসারদের সাথে ঐ সময় ছিলো কাঠাল পাকার সময়, বাগানের গভীরে গিয়ে দেখে একটি কাঠাল গাছ কাঠাল গাছে কয়েকটি পাকা কাঠাল ফরেস্ট অফিসার সহ গাছ থেকে কাঠাল নামিয়ে খায় সবাই...।
কাঠালের খোয়া গুলো এত মোটা ছিলো যে ৪/৫টার বেশি খাওয়া সম্ভব ছিলোনা একজনের পক্ষে। খাওয়া শেষে সবাই যখন যারযার কর্মে ব্যস্ত তখন ঐ মানুষটি কাঠালের বিচি গুলো নিচ্ছিল।
বাগানের কাজ শেষে সবাই চলে এলো। ঐ মানুষটি যথারীতি বাজারে এসে চায়ের দোকানে বসে চা পান করে আর কাঠালের গল্পটি বলে....।
বলার সময় বলে কাঠালের কোয়া কোতাই কাতাই পাচ্চোয়া খাইয়ী....।
সেই থে তার নাম হয়ে যাই কোতাই কাতাই পাচ্চোয়া.....। আজকের মন্তব্য আর লম্বা করতে চাইনা এই ঘটানা নিয়ে আমি একটি লেখা লিখবো। ইনশাআল্লাহ।
ধন্যবাদ আপনাকে স্মৃতিময় লেখাটির জন্য।
ব্যস্ততার কারণে দেরী হয়ে গেল। আপনার পোষ্ট পড়ে অনেক হাসলাম। ঠিকই বলেছেন সব এলাকাতেই এমন দু'একজন মানুষ পাওয়া যায়। আমাদের এলাকায় ছিল "নরম" মিয়া। হাল চাষে জমিন নরম হয়। বৃষ্টিতে রাস্তা নরম হয়। চা'এর কাপে বিস্কুট নরম হয়। অর্থাৎ নরম শব্দটি যে কেউ উচ্চারণ করলেই গালি শুরু।
চমৎকার পেকুলিয়ার ঘটনা। ধন্যবাদ
মন্তব্য করতে লগইন করুন