উত্তম চরিত্র, মৌলিক চরিত্র ও নৈতিক চরিত্র কি! কোন গরজে মানুষকে চরিত্রবান হতে হয়।

লিখেছেন লিখেছেন নজরুল ইসলাম টিপু ০৬ অক্টোবর, ২০১৫, ০৫:১২:৩৮ বিকাল



পরীক্ষায় রচনা লিখতে গিয়ে আমরা লিখি, ‘চরিত্র মানুষের অমূল্য সম্পদ’। মার্কিন প্রেসিডেন্ট আব্রাহাম লিঙ্কন বলেছেন, চরিত্র হচ্ছে গাছের মত যার পরিচিত হল ছায়ার মত! গ্রীক দার্শনিক হেরাক্লিটাস বলেছেন, মানুষের ভাগ্যই মানুষের চরিত্র। বেশীর ভাগ দার্শনিক একমত যে, মানুষের কাজই হল তার প্রকৃত চরিত্র। যে যাই বলেন না কেন পৃথিবীর প্রায় এই কথায় একমত যে, ‘যার চরিত্র শেষ, তার সবটাই শেষ’। আর ইসলামী পরিভাষায় চরিত্রকেই গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে সবচেয়ে বেশী। সকল ইসলামী স্কলারগন একমত যে, যতই যোগ্যতা, বিচক্ষণতা, প্রজ্ঞা, থাকুক না কেন চরিত্র না থাকলে সবই অর্থহীন। ইসলামী পরিভাষায় চরিত্রকে ‘আমাল’ হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে।

এক কথায় চরিত্র হল মানুষের কাজ। আমরা যেভাবে ছোট একটি ছিদ্র দিয়ে সূর্যের মত বিশাল নক্ষত্রকে দেখতে পাই, সেভাবে মানুষের ছোট ছোট খাসিয়ত, অভ্যাস, আচরণ, শিষ্টাচার দেখে বুঝতে পারি মানুষটি কেমন! মানুষকে বুঝার জন্য, তাকে চেনার জন্য দীর্ঘদিন সমীক্ষা চালানোর দরকার পড়েনা। ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র অভ্যাস গুলোই সে মানুষটির ভেতর কেমন তা সহজে বলে দেবে। জীবনের ছোট-বড় এই সব আচরণ, শিক্ষা, রুচি, অভ্যাসই মানুষের প্রকৃত চরিত্র।

পরীক্ষা পাশের জন্য রচনা বহুবার চরিত্র রচনা লিখা হয়েছে। তবে আজকের চরিত্র রচনাটি পরীক্ষা পাশের জন্য নয় বরং নিজের জীবনকে মিলিয়ে দেখার জন্য যে, মানুষ হিসেবে আমি বা আমরা কোন পর্যায়ে আছি, সেটা নির্ণয় করা। চরিত্রের মাঝে এমন কিছু মৌলিক উপাদান আছে, যে গুলো একটু ইচ্ছা শক্তির দ্বারা নিয়ন্ত্রণ করলে মানুষ ফেরেশতার কাছাকাছি চলে যেতে পারে, আবার নিয়ন্ত্রণ হীন হলে, মানুষ জানোয়ারে পরিণত হতে পারে।

এই চরিত্রকে তিন ভাবে চিহ্নিত করা হয়। যথাক্রমে,

১. উত্তম চরিত্র ২. মৌলিক চরিত্র ৩. নৈতিক চরিত্র

দৃশ্যত উপরোক্ত কথাগুলো একই মনে হতে পারে কিন্তু এগুলোর কোনটাই একই নয় বরং এগুলোতে আছে বিস্তর ব্যবধান। মহামানব থেকে শুরু করে অমানুষ পর্যন্ত, সবাইকে জন্মের শুরুতে এই চরিত্র গুলো দিয়েই সৃষ্টি করা হয়। মানুষকে শুধু পরীক্ষা দিতে হয়, প্রাপ্ত গুনগুলোর কোনটাকে কোন পর্যায়ে, কতটুকু মাত্রায় ব্যবহার করবে কিংবা কোনটা ব্যবহারই করবেন না। পাঠক কে অনুরোধ করব অন্তত পাঁচটি মিনিট গভীর মনোযোগ সহকারে পড়ার প্রতি মনকে নিবদ্ধ রাখতে।

১. উত্তম চরিত্রের ধরণ:

মানুষকে শ্রদ্ধা করা, জন সেবা করা, মাদকাসক্ত না হওয়া, চুরি না করা, মিথ্যা না বলা, পরোপকারী হওয়া, যোগ্যতানুসারে সম্মান করা, সৃষ্টির প্রতি সদয় হওয়া, মানবতা বোধে দৃশ্যত ভাল কাজ করা। এই গুণাবলী গুলোকে উত্তম চরিত্র বলে।

সকল ধর্ম, বর্ণ, গোত্র, জাতি নির্বিশেষে জন্ম পরবর্তী সকল মানুষের কাছে এসব গুণাবলী প্রকাশ পেতে থাকে। হতে পারে কারো কাছে উপরের সব গুণাবলীই তার চরিত্রে থাকে পারে। হয়ত মাত্র একটি গুণাবলী থাকতে পারে, নয়ত একটিও না থাকতে পারে।

তবে আল্লাহ বলেছেন, ‘আমি কোন বান্দাকে জান্নাতে যাবার পথকে কমিয়ে আনতে চেয়েছি তো, তাকে কোমল হৃদয়ের অধিকারী করেছি’! আল্লাহ প্রদত্ত স্পেশাল চরিত্রের একটি অংশ হল কোমল মনের অধিকারী হওয়া। মাতা-পিতার দোয়ায় এই গুন অর্জিত হতে পারে। কেননা বৈশিষ্ট্যগত ভাবে সকল মানুষ কোমল হৃদয়ের অধিকারী হয় না। কোমল হৃদয়ের অধিকারী মানুষেরা ইচ্ছায় হোক আর অনিচ্ছায় হোক সর্বদা জনকল্যাণ মূলক কাজে নিজেকে জড়িয়ে রাখে। আল্লাহর স্পেশাল পুরষ্কার তথা কোমলতা, মুসলিম-অমুসলিম সবাই অধিকারী হতে পারে। তবে,

‘সে ব্যক্তি যদি আল্লাহ তে বিশ্বাসী হয়, তাহলে পরকালে তার জান্নাতে যাওয়া সহজ হবে, অধিকন্তু দুনিয়ার মর্যাদা তো রয়েছেই’। আর যদি তিনি আল্লাহতে বিশ্বাসী না হন, তাহলে এই কাজের ফলে দুনিয়াতে সে প্রভূত সম্মান ও মর্যাদার অধিকারী হবে কিন্তু সে জান্নাত থেকে বঞ্চিত হবে! কেননা সে আল্লাহতে বিশ্বাসী ছিল না, তাই জান্নাতের সুযোগ থাকবে না।

২. মৌলিক চরিত্রের ধরণ:

লোভ, রাগ, ক্ষোভ, হিংসা, ক্রোধ, গোঁয়ার্তুমি, গর্ব, অহংকার, প্রবৃত্তি; মেজাজ, সাহস, রূঢ়তা, দৃঢ়তা, বীরত্ব, নেতৃত্ব, মহাত্ম; প্রজ্ঞা, দূরদর্শিতা, শঠতা, চালাকি, বুদ্ধিমত্তা, বিচক্ষণতা; দয়া, মায়া, প্রবৃত্তি, প্রেম, প্রীতি, লজ্জা, আদর, সোহাগ, ক্ষুধা, কামনা, বাসনা, উত্তেজনা, ইতরামি সবই মৌলিক চরিত্রের অংশ বিশেষ। সকল মানুষের কাছেই এই গুনগুলি বিদ্যমান। এগুলো ব্যবহার ও প্রয়োগের মাধ্যমেই মানুষের পরিচয় ফুটে আসবে।

মৌলিক চরিত্রের দুটো দিক, ইতিবাচক দিক ও নেতিবাচক দিক। মানুষ-জ্বীন সহ দুনিয়ার সকল পশু-পাখি, কীট-পতঙ্গ জন্মের শুরুতেই এই উপাদান গুলো দিয়েই সৃষ্টি হয়েছে। তাই সৃষ্টির প্রতিটি প্রাণীর চরিত্রেই কম-বেশী এই উপাদান বিদ্যমান। উপরোক্ত উপকরণ গুলোর যথাযথ ব্যবহারের উপর নির্ভর করে মানুষ কখনও ফেরেশতার কাছাকাছি পৌঁছে আবার কখনও জানোয়ারে পরিণত হয়!

লোভ, রাগ, ক্ষোভ, হিংসা, ক্রোধ, গোঁয়ার্তুমি, গর্ব, অহংকার এগুলো নেতিবাচক চরিত্রের দিক। মানুষকে উসকানো, উত্তেজিত করা, ক্ষেপীয়ে তোলার কাজে শয়তান মানব চরিত্রের এই উপকরণ গুলোকেই পূঁজি করে। ক্ষুধা, কাম, বাসনা, ইতরামি এগুলো মানুষের প্রবৃত্তির খোরাক। মানুষের দেহ একটু সুস্থ ও শান্তি পাওয়া মাত্রই উপরের কাজ গুলো করার প্রতি আগ্রহী হয়।

বুদ্ধিমত্তা, বিচক্ষণতা; দয়া, মায়া, প্রবৃত্তি, প্রেম, প্রীতি, আদর, সোহাগ এগুলো ইতিবাচক চরিত্রের দিক। মানুষের আত্মা তথা প্রাণ এই উপকরণ গুলোকেই পূঁজি করে চলতে চায়। এই উপকরণ সমৃদ্ধ দেহে আত্মা শান্তি পায়। যার কাছে এই গুন গুলো বিদ্যমান থাকে সে ব্যক্তিই শান্তিতে থাকে।

ফলে ইতিবাচক ও নেতিবাচক দুটো চরিত্র মানুষের জন্য তো বটেই, অন্য সকল সৃষ্টির জন্য দরকার পড়ে।

কেননা, লোভ না থাকলে মানুষের আগ্রহ থাকবে না, হিংসা না থাকলে প্রতিযোগিতার মনোভাব সৃষ্টি হবে না, রাগ না থাকলে অলস হয়ে জীবন শেষ করবে, কাম না থাকলে সৃষ্ট জীব বাড়বে না, প্রেম না থাকলে আনন্দ থাকবেনা। আবার বেশী লোভে নিজের ধ্বংস ডেকে আনবে, বেশী হিংসায় জাতির সর্বনাশ হবে, বেশী রাগে ভাঙ্গন বেশী হবে, বেশী কামে অনাচার হবে এবং অতি প্রেমে সভ্যতা বিনষ্ট হবে।

২. নৈতিক চরিত্রের ধরন:

এককথায় নৈতিক চরিত্র হল মানুষের সেই গুণাবলী, যার দ্বারা মানুষের জীবনে থাকা মৌলিক গুণাবলী গুলোর নেতিবাচক ও ইতিবাচক দিকগুলো বাছাই করে ভাল গুন গুলোকে নিজের জীবনে ধারণ, ও জনকল্যাণ মূলক কাজে প্রতিষ্ঠা করা। আর খারাপ গুন গুলোকে নিয়ন্ত্রণ করার শক্তি অর্জন করা।

নৈতিক চরিত্রকে আরো পরিষ্কার করে ব্যাখার জন্য তিনটি সৃষ্টির সৃষ্টিকে সামনে আনতে হয়। ১. ফেরেশতা ২. জানোয়ার ৩. মানুষ।

ফেরেশতা কারা:

ফেরেশতাদেরকে আনুগত্য ও কৃতজ্ঞতার গুন দিয়ে সৃষ্টি করা হয়েছে। তাদের পক্ষ থেকে তিল পরিমাণ অন্যায় ও অন্যায্য কাজ হয়না কিংবা তারা করতে পারেনা। মানুষের মত হাজারো গুনগত চরিত্র দিয়ে তাদের সৃষ্টি করা হয়নি বলে তারা এসব গুনের মর্ম বুঝেনা। তারা বুঝেনা লোভের জন্য কেন অন্যকে খুন করা হয়, কাম উত্তেজনায় কেন আল্লাহর আদেশ অমান্য করে ধর্ষণ করা হয়! ফেরেশতারা জীবন চালায় নিজের বিবেক দিয়ে, তাই তারা ভুল করেনা, অকৃতজ্ঞ হয়না, ফলে তাদের জন্য হিসাবের ব্যবস্থা আল্লাহ রাখেনি।

জানোয়ার কারা:

জানোয়ার হল তারা যারা জীবন চালায় প্রবৃত্তি দিয়ে। তার কামভাব উঠলে কে তার মা, কে কন্যা এসব ভাবা-ভাবির আশে পাশেও যায়না! এমনকি সে তার সন্তানের সামনেও ইতরামি করতে লজ্জা করেনা! লোভ, কামনা, বাসনা, হিংসা, উগ্রতা প্রবৃত্তি দিয়ে পরিচালিত হয় বলেই তাদেরকে জানোয়ার বলা হয়। লজ্জায় কাজ কি, উদারতার ফল কি, ধৈর্যের উপকার কি, এসবের গুরুত্ব জানোয়ার অনুধাবন করেনা। যেহেতু এসব গুন তাদের দেওয়া হয়নি, সেহেতু তারা পরীক্ষা দেবারও সুযোগ পায়নি। তাই আল্লাহ তাদের জন্যও জবাবদিহীতার ব্যবস্থা করেনি।

মানুষ কারা:

মৌলিক চরিত্রের সকল গুণাবলী যে সৃষ্টি ধারণ করতে পারে তার নাম মানুষ। আরবি ভাষায় মানুষ শব্দের অর্থ ‘ভুলে যাওয়া’। অর্থাৎ মানুষ তারাই যারা শুধু ভুলে যায় এবং বারংবার তাদের মনে করিয়ে দিতে হয়। মানুষের সামনে দুটো রাস্তা খোলা আছে একটি হল প্রবৃত্তির রাস্তা, আরেকটি রাস্তা হল বিবেক ও নৈতিকতার রাস্তা। মানুষ যখন প্রবৃত্তির রাস্তায় চলে যায়, তখন সে জানোয়ারের কাছাকাছি মানের হয়ে যায়। আর নৈতিকতার রাস্তায় চলা শুরু করলে মানুষ পঙ্কিলতা মুক্ত জীবন নিয়ে ফেরেশতাদের সাদৃশ্য হয়ে যায় এবং আস্তে ধীরে সে মহামানবে পরিণত হয়।

মানুষকে মহামানবে পরিণত হবার জন্য দরকার মাত্র একটি জিনিষ! সে জিনিষটার নাম হল তার ‘ইচ্ছাশক্তি’। ইচ্ছা অন্তরের গভীরে লুকিয়ে থাকে বলে তাকে বাহিরের কোন শক্তি খবরদারী করতে পারে না। তাই ইচ্ছা থাকে স্বাধীন ও মুক্ত। মানুষকে শুধু সিদ্ধান্ত নিতে হয়, সে কি প্রবৃত্তি তথা জানোয়ারের পথ অনুসরণ করবে নাকি নৈতিকতা তথা মহামানবের পথে চলবে।

নৈতিক চরিত্র হল, মানুষের সেই বিশাল ইচ্ছা শক্তি, যার দ্বারা সে তার রাগ, লোভ, ক্ষোভ, মোহ, প্রবৃত্তিকে ইচ্ছেমত নিয়ন্ত্রণ করতে পারে। হিংসুকের জিঘাংসা প্রতিহতে ক্ষমা, উদারতা, মহানুভবতা, বদান্যতার অস্ত্র ব্যবহার করতে পারে। নিন্দুকের নিন্দার বিরুদ্ধে ত্যাগ ও দানশীলতাকে প্রাধান্য দিতে পারে। উত্তেজনায়, রাগ ও ক্ষোভের সময় ধৈর্যের সাহায্যে প্রজ্ঞা, বিচক্ষণতা ও দূরদর্শিতার পরিচয় দিতে পারে। চালাকির মাধ্যমে অর্জন করার চেয়ে বুদ্ধিমত্তার মাধ্যমে অর্জন করাকে নিজের লক্ষ্য বানাবে। তাহলেই সেই ব্যক্তিকে নৈতিক চরিত্রবান ব্যক্তি বলা হবে।

নৈতিকতার মানদণ্ডে পৃথিবীর সকল যুগে, সকল স্থানে আগত নবীরাই তদানীন্তন কালের সেরা নৈতিক চরিত্রের অধিকারী ছিলেন। মুহাম্মদ (সাঃ) কে স্বয়ং আল্লাহ স্বীকৃতি দিয়ে বলেছেন, ‘হে রাসুল! আমি আপনাকে নৈতিকতার সর্বোচ্চ মানেই পেয়েছি’। একজন সেরা মানুষ হিসেবে কাউকে স্বীকৃতি দেবার বেলায় আল্লাহ নৈতিক চরিত্রের গুণাবলীকে মানুষ মাপার মানদণ্ড করেছে! সুতরাং কাউকে নৈতিক চরিত্রবান হতে হলে, নিজের ইচ্ছা শক্তিকে নিয়ন্ত্রণ করতে হলে রাসুল (সাঃ) দেখানো পথ ছাড়া গত্যন্তর নাই।

শয়তান সারা মানব জাতীর শত্রু। তার কাছে মুসলিম, হিন্দু, বৌদ্ধ, খৃষ্টান, ইহুদী, আস্তিক, নাস্তিক একই সমান। কেননা সে মানুষের দুষমন। শয়তান তার চিন্তার প্রতিফলন ঘটাতে শারীরিক শক্তি দিয়ে মানুষের উপর জোড় খাটাতে পারেনা। তবে সে মানুষের ইচ্ছা শক্তিকে দখল করে, মানুষকে প্রবৃত্তির গোলামে পরিণত করতে পারে, সেখানেই তার সফলতা। মানুষের উপরে শয়তানের শক্তি কার্যকর করার প্রধান হাতিয়ার হল, রাগ, ক্ষোভ, লোভ, হিংসা, কাম, গর্ব, অহংকারের মত মৌলিক দোষনীয় গুণাবলী গুলোকে দখলে নেওয়ার মাধ্যমে। শয়তান মানুষের এইসব চরিত্রকে পূঁজি করে এবং উস্কে দিয়ে অন্য মানুষের উপর আগ্রাসী করে তুলে। এতে সে মানুষটির কাজ শয়তানের চেয়েও ভয়াবহ হয়ে দাঁড়ায়। মানুষের কাছে লুকিয়ে থাকা এই সুপ্ত গুণাবলীকে নিয়ন্ত্রণ করে শয়তান যেহেতু সকল মানুষকে আগ্রাসী বানিয়ে ফেলতে পারে সেজন্য শয়তানই হল মানুষের প্রকৃত দুষমন।

আর যারা ইচ্ছা শক্তিকে নিয়ন্ত্রণ করার সিদ্ধান্ত নেয়নি, সে ক্ষতিগ্রস্ত হবেই। তকদীরের ভাষা এটাই যে, সে ইচ্ছা করলেই সঠিক পথ ধরতে পারত কিন্তু ধরেনি! আবার তার প্রবৃত্তি তাকে জানোয়ার সুলভ চরিত্রের প্রতি আকৃষ্ট হতে উৎসাহ জুগিয়েছে। মানুষ হিসেবে তার মন-প্রাণ তাকে বাধা দিয়েছে, এটা বুঝেও সে ফিরে আসেনি। এই বোধোদয়ের অভাবে তার জীবন, তাদের চরিত্র, তাদের শেষ পরিণতি জানেয়ারের মতই হবে। মানুষকে সকল গুণাবলী দিয়ে সৃষ্টি করা হয়েছে বলে, মানুষের বিচার হবে। বিচারের দিন এই কথা বলার সুযোগ থাকবে না যে, ‘আল্লাহ আমি সঠিক পথ পাইনি কিংবা আমাকে শুধুমাত্র জাহান্নামে যাবার মতই চরিত্র দিয়ে দুনিয়াতে পাঠানো হয়েছে’।

সেদিন আল্লাহ বলবেন, ‘দুনিয়াতে চলার জন্য, আমি তোমাকে যথাযথ চরিত্র ও সিদ্ধান্ত নেবার উপকরণ দিয়েছিলাম; তোমাকে সঠিক পথের কথাও শুনিয়েছিলাম কিন্তু তুমি ইচ্ছে করেই সঠিক পথে আস নাই কিংবা পথের সন্ধানও করনি। তুমি তোমার ইচ্ছা শক্তি দিয়েই জাহান্নামের রাস্তাকে বাছাই করে নিয়েছ। আজ তোমার দুনিয়ার কৃত চরিত্রই বলে দিবে তোমার অবস্থান কোথায় হবে। আজ আমি বিচারক, তোমার কৃত চরিত্রানুযায়ী তোমার জন্য সঠিক প্রাপ্য বুঝিয়ে দেবার দিন এবং আমি জুলুম কারী নই’।

বিষয়: বিবিধ

৬৮৫৫ বার পঠিত, ২৯ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

344652
০৬ অক্টোবর ২০১৫ বিকাল ০৫:৪১
রক্তলাল লিখেছেন : সইত্য।
০৬ অক্টোবর ২০১৫ বিকাল ০৫:৪৭
285952
নজরুল ইসলাম টিপু লিখেছেন : ধন্যবাদ।
344655
০৬ অক্টোবর ২০১৫ সন্ধ্যা ০৬:২২
নাবিক লিখেছেন : ভালো লাগলো...
০৬ অক্টোবর ২০১৫ সন্ধ্যা ০৬:৪৬
285954
নজরুল ইসলাম টিপু লিখেছেন : অনেক ধন্যবাদ।
344656
০৬ অক্টোবর ২০১৫ সন্ধ্যা ০৬:২৪
আহমদ মুসা লিখেছেন : হাইওয়ান এবং মানুষের মধ্যে পার্থক্য সৃষ্টির প্রধান মানদন্ডই হলো চরিত্র বা ক্যারেক্টের। আল্লাহ তায়ালা ভাল মন্দ সব ধরনের চরিত্রের সমাহার করে দিয়েছেন মানুষের মধ্যে। কিন্তু হাইওয়ানে নাতেক বা মানুষ ছাড়া অন্য প্রাণীর মধ্যে সব ধরনের চরিত্রের সমাহার করে দেননি। মানুষকে পরকালে জবাবদিহিতার আওতায় আনার কারণও হচ্ছে নিজের মনুষ্যত্বকে বিসর্জন দিয়ে, নিজের বহুমাত্রিক চরিত্রকে ধারণ না করে অন্য প্রাণীর জন্য নির্ধারিত চরিত্রের খন্ডাংশকে নিজের জীবনে প্রাধান্য দেয়ার অপরাধে। মানুষের মধ্যে সব ধরনের চরিত্রের সমাবেশ ঘটিয়ে আবার সেখানে চরিত্রের চিত্রায়ণের বা প্রেক্টিস করার এবং চরিত্র বেচে নেয়ার স্বাধীনতাও দিয়েছেন। কিন্তু মানুষ ছাড়া অন্য প্রাণীর মধ্যে সেই স্বাধীনতা দেননি।
০৬ অক্টোবর ২০১৫ সন্ধ্যা ০৬:৪৭
285955
নজরুল ইসলাম টিপু লিখেছেন : আপনার মন্তব্য আমার পোষ্টটিকে আরো ধনী করল। আপনার সুন্দর মন্তব্যের জন্য আপনাকে অনেক ধন্যবাদ। ভাল থাকুন।
344667
০৬ অক্টোবর ২০১৫ সন্ধ্যা ০৭:১০
শেখের পোলা লিখেছেন : সফল আলোচনা৷শেখার অনেক উপাদান সমৃদ্ধ সন্দেহ নেই৷ এক জায়গায় একটু হোঁচট খেলাম সময় সুযোগ হলে একটু পরিষ্কার করবেন প্লিজ;-" ফেরেশতারা জীবন চালায় নিজের বিবেক দিয়ে, তাই তারা ভুল করেনা, অকৃতজ্ঞ হয়না, ফলে তাদের জন্য হিসাবের ব্যবস্থা আল্লাহ রাখেনি।"আমি মনে করি ফেরেশ্তারা আল্লাহর ইচ্ছার বাইরে যেতে পারেনা৷ধন্যবাদ৷
০৬ অক্টোবর ২০১৫ সন্ধ্যা ০৭:৪০
285964
নজরুল ইসলাম টিপু লিখেছেন : ফেরেশতারা প্রকৃত রোবটের মত, নিয়ম ও আদেশের বাইরে তারা কিছু করেনা। তবে তাদের মাঝেও বিভিন্ন ব্যাপার নিয়ে আলোচনা হয়, তাদের মাঝেও অনুভুতি আছে, ভয় আছে, আল্লাহর কল্যান প্রাপ্তির লোভ আছে। কল্যান-অকল্যান সম্পর্কে অনেক বেশী ধারনা আছে।

আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা^) ফেরেশতারা বিবেক দ্বারা পরিচালিত বলে বণর্না করেছেন। আপনাকে অনেক ধন্যবাদ।
০৬ অক্টোবর ২০১৫ রাত ১০:০১
285983
আবু সাইফ লিখেছেন : আসসালামু আলাইকুম ওয়া রহমাতুল্লাহ

ফেরেস্তারা মুমিনদের জন্য দোয়া করে,
আল্লাহর আযাব থেকে মুক্তির প্রার্থনা করে,
বিভিন্ন বিষয়ে আবেগ অনুভূতি প্রকাশ করে,
নিজেদের মাঝে আলোচনা করে...

এসব থেকে আমার ধারণা-
ফেরেস্তাদের বিবেকবোধ কার্যকর,
কিন্তু অবাধ্যতার ক্ষমতা নেই!!

আল্লাহতায়ালাই ভালো জানেন!!
344669
০৬ অক্টোবর ২০১৫ সন্ধ্যা ০৭:১৫
রিদওয়ান কবির সবুজ লিখেছেন : বসনিয়ার সাবেক রাস্ট্রপতি আলিয়া ইজেত বিগোভিচ এর "ইসলাম বিটুইন ইস্ট এন্ড ওয়েষ্ট" এর একটি লাইন হলো " ইসলাম উচ্ছৃঙ্খল পশুকে ফেরেশতা বানাতে চায় না,মানুষ বানাতে চায়"।
মানুষের মেীলিক চরিত্র শয়তান এর হাতে পরেই বিকৃত হয়। আর কেউ কেউ মানুষকে ফেরেশতা বানাতে চায়।
০৬ অক্টোবর ২০১৫ সন্ধ্যা ০৭:৪১
285965
নজরুল ইসলাম টিপু লিখেছেন : সুন্দর উদ্ধৃতির জন্য অনেক অনেক ধন্যবাদ। আপনি ভাল থাকুন।
344674
০৬ অক্টোবর ২০১৫ সন্ধ্যা ০৭:২৭
০৬ অক্টোবর ২০১৫ সন্ধ্যা ০৭:৪১
285966
নজরুল ইসলাম টিপু লিখেছেন : আপনাকে অনেক ধন্যবাদ।
344701
০৬ অক্টোবর ২০১৫ রাত ১১:১১
আবু জান্নাত লিখেছেন : শিক্ষনীয় অনেক কিছু পেলাম। জাযাকাল্লাহ খাইর
০৭ অক্টোবর ২০১৫ সকাল ১০:৩১
286055
নজরুল ইসলাম টিপু লিখেছেন : আপনাকে অনেক অনেক ধন্যবাদ।
344705
০৬ অক্টোবর ২০১৫ রাত ১১:৪৩
আফরা লিখেছেন : ভাইয়া আপনাকে যে কি বলে ধন্যবাদ দিব তা ভাষায় প্রকাশ করতে পারছি । আগামী মাসে আমাদের একটা সেমিনার আছে সেখানে আমাকে আলোচনা করতে হবে চরিত্র নিয়ে এত সুন্দর একটা নোট পেলাম আমাকে কোন কষ্টই করতে হবে না । অসংখ্য ধন্যবাদ ভাইয়া ।
০৭ অক্টোবর ২০১৫ সকাল ১০:৩৬
286056
নজরুল ইসলাম টিপু লিখেছেন : বিনা পুঁজিতে সফলতা পেলেন বলে মনে হয়! যাক কাজে আসবে শুনে ভাল লাগল। সত্যি কথা বলতে কি, একটি সেমিনারে এই রচনাটি আমার মূল বক্তব্য ছিল। সামান্য কাট-সাট করে ব্লগে পোষ্ট আকারে হাজির করেছি। শ্রোতাদের দৃষ্টি ধরে রাখতে পারলে এই রচনাটি বিরাট কাজ দেবে। আল্লাহ আপনাকে কামিয়াবী করুন। আমীন। অনেক ধন্যবাদ।
০৭ অক্টোবর ২০১৫ দুপুর ১২:১০
286079
আবু তাহের মিয়াজী লিখেছেন : তাহলে ভাইয়ার জন্য গিফট পাঠিয়ে দিন।Good Luck
344710
০৭ অক্টোবর ২০১৫ রাত ১২:২৬
কথার_খই লিখেছেন : আপনার লেখাটি পড়ে ভাল লেগেছে ।
০৭ অক্টোবর ২০১৫ সকাল ১০:৩৬
286057
নজরুল ইসলাম টিপু লিখেছেন : আল্লাহ আপনাকে রহম করুন।
১০
344721
০৭ অক্টোবর ২০১৫ রাত ০২:০৮
সাদিয়া মুকিম লিখেছেন : আসসালামু আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহ ।

বার বার পড়ার মতোন এবং অনুধাবন করার মতোন একটি লিখা!

বিশ্লেষনটি খুব ভালো লাগলো! নৈতিক ভিত্তি নামের বইয়ের কথা মনে পড়ছে!

শুকরিয়া!
০৭ অক্টোবর ২০১৫ সকাল ১০:৩৬
286058
নজরুল ইসলাম টিপু লিখেছেন : আল্লাহ আপনাকে রহম করুন, ভাল থাকুন, সুস্থ থাকুন। আমীন।
১১
344731
০৭ অক্টোবর ২০১৫ সকাল ০৫:০৫
প্যারিস থেকে আমি লিখেছেন : প্রিয়তে রেখে দিলাম।
০৭ অক্টোবর ২০১৫ সকাল ১০:৩৬
286059
নজরুল ইসলাম টিপু লিখেছেন : অনেক ধন্যবাদ।
১২
344740
০৭ অক্টোবর ২০১৫ সকাল ০৮:২০
অপি বাইদান লিখেছেন : চরিত্র বিষয়ক আপনার বিশ্লেষন অধিকাংশই চমৎকার। তবে বার বার অযাচিত ভাবে ইসলাম, ইসলামের আল্লা এবং মোহাম্মদকে টেনে এনে লেখার সৌন্দর্য বিনষ্ট করেছেন।

উত্তম চরিত্রের অন্যতম নেয়ামক শক্তি হছ্ছে- ভালবাসা, মানুষের প্রতি ভালবাসা। অথচ কোরাণের আল্লা সমগ্র কোরাণ খন্ডের কোথায়ও একটি বারের জন্যও বল্লেন্নি তিনি মানুষকে ভালবাসেন। তিনি শুধু মুসলমানদের ভালবাসেন। এমন একরোখা মারমুখি উদ্ধত চরিত্রের আল্লার ইসলাম উত্তম চরিত্র গঠনে সহায়ক হয় কি করে?

আপনি নিজে অতি চমৎকার ভাষায় বলেছেন- "নৈতিক চরিত্র হল, মানুষের সেই বিশাল ইচ্ছা শক্তি, যার দ্বারা সে তার রাগ, লোভ, ক্ষোভ, মোহ, প্রবৃত্তিকে ইচ্ছেমত নিয়ন্ত্রণ করতে পারে। হিংসুকের জিঘাংসা প্রতিহতে ক্ষমা, উদারতা, মহানুভবতা, বদান্যতার অস্ত্র ব্যবহার করতে পারে। নিন্দুকের নিন্দার বিরুদ্ধে ত্যাগ ও দানশীলতাকে প্রাধান্য দিতে পারে। উত্তেজনায়, রাগ ও ক্ষোভের সময় ধৈর্যের সাহায্যে প্রজ্ঞা, বিচক্ষণতা ও দূরদর্শিতার পরিচয় দিতে পারে।" ধন্যবাদ, আপনার সাথে আমি শতভাগ সহমত। সবার চরিত্র এমনটি হলে কতইনা ভাল হোত। অথচ কোরাণের আল্লার চরিত্র ভয়ংকর। তিনি উদ্ধত, হিংস্রো, অহংকারী, সংকৃণমনা, প্রতিহিংশাপরায়ন, তোষামদপ্রিয়, বল্গাহীন, প্রচন্ড বেয়াদব।

দেখুন তো আপানার দেয়া কোটেশনের সাথে আল্লার ভাষা মিলে কিনা?? দেখুন, সূরা ৯৮:৬- আহলে-কিতাব ও মুশরেকদের মধ্যে যারা কাফের, তারা জাহান্নামের আগুনে স্থায়ীভাবে থাকবে। তারাই সৃষ্টির অধম।
০৭ অক্টোবর ২০১৫ সকাল ১০:৪৭
286063
নজরুল ইসলাম টিপু লিখেছেন : আমি এই উপকরণ গুলো আল্লাহর দেওয়া বিধান থেকেই নিয়েছি। বিদ্যা অর্জনটাও নিজের ইচ্ছাশক্তির উপর নির্ভরশীল। যদি ভুল ধরার উদ্দেশ্যে কোন কিছু পড়ি তখন সেখানে আদ্যোপান্ত ভুল বলেই মনে হবে, আর নিজের চিন্তাকে চরম সত্য বলে ভ্রম হবে।

আমি মুসলিম, আল্লাহ এবং কোরআনে দৃঢ় বিশ্বাস করি। এই বিশ্বাসকে পূঁজি করেও আমি টেষ্টামেন্ট গুলো পড়েছি, টেষ্টামেন্ট গুলো এমন ভাবে অধ্যয়ন করেছি ফলে বাইবেল সোসাইটি আমাকে সাটিফিকেট দিয়ে স্বীকৃতি দিয়েছে। তাছাড়া যত সম্ভব অন্যান্য ধর্মগ্রন্থ গুলো পড়তে চেষ্টা করেছি।

এই প্রচেষ্টা আমার বিফলে যায়নি, অামি অনেক দৃষ্টান্ত মূলক শিক্ষা গ্রহন করতে পেরেছি। আমি আরো দৃঢ় ভাবে বুঝতে শিখেছি যে, কোরআন হল পৃথিবীর সবচেয়ে শ্রেষ্টতম গ্রন্থ এবং পড়ার মত মনে রাখার মত উপরোন্তু অনুসরণ করার মত গ্রন্থ।

এই অনুসরণে হয়ত আমি আপনার কাছে ইতর শ্রেনীর মধ্যে পড়ে যাব। সেটা হতে পারে, কেননা আপনি কোরআনের খন্ডিতাংশ এই লক্ষ্য নিয়ে পড়েন যে, কাকে-কিভাবে হেয় করা যায়। তবে কোন একদিন আপনার সাথে দেখা হয়ে যেতে পারে, সেদিন কাছে দাড়িয়ে দেখতে পারব, কে সঠিক আর কে বেঠিক। অনেক ধন্যবাদ।
১৩
344770
০৭ অক্টোবর ২০১৫ দুপুর ১২:১২
আবু তাহের মিয়াজী লিখেছেন : অনেক সুন্দর আলোচনা, প্রিয়তে রাখলাম
০৭ অক্টোবর ২০১৫ দুপুর ১২:১৫
286080
নজরুল ইসলাম টিপু লিখেছেন : আপনাকেও অনেক ধন্যবাদ, ভাল থাকুন, সুস্থ থাকুন।
১৪
352649
০৪ ডিসেম্বর ২০১৫ দুপুর ০১:৪৪
জেদ্দাবাসী লিখেছেন : অনেক জানলাম। আপনি আমাদের জন্য এই জামানার গাজ্জালী। আল্লাহ আপনাকে রহমত করুন।

ধন্যবাদ

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File