মূল্যবোধ ও একটি ডিম পরোটা
লিখেছেন লিখেছেন নজরুল ইসলাম টিপু ২১ সেপ্টেম্বর, ২০১৫, ০৭:১৯:৪৫ সন্ধ্যা
ভাই একটা ডিম পরোটা দেন।
দোকানদার: ডিম পরোটা ন---য়,
আগন্তুক বুঝলেন নয় নম্বর সিরিয়ালের খদ্দের তিনি। আট জন যাওয়া অবধি অপেক্ষা করতে হবে।
দোকানের বাহিরে খোলা আকাশের নীচে গ্যাসের চুলায় পরোটা বানানো চলছে, আর গরম পরোটা দেদার বিক্রি হচ্ছে। পরোটার কারিকরের যথেষ্ট ব্যস্ততা, দম ফেলানোর সময় নাই। ঠিক এমনি সময়েই হ্যঁ, হ্যঁ, হ্যঁ, হ্যাঁ------চ্ছো। ম্যারাথন সাইজের বিশাল আকারের একটি হ্যাঁচ্ছো কারিকর শূন্যের মধ্যে ছেড়ে দিলেন! হ্যঁচ্ছো তো আর বলে-কয়ে ঘোষণা দিয়ে আসেনা! বড় জোর প্রস্তুতির জন্য ৫ সেকেন্ড সময় পাওয়া যায়।
ফলে যা হবার তাই হল, কারিকরের বিশাল হ্যাঁচ্ছোর নাকের পানির অনেকটাই, বিরাটকায় পরোটা ভাজার কড়াইয়ের গরম তেলে আছড়ে পড়ল। মুহূর্তে পরোটা ভাজার কড়াইয়ে শন, শন করে আওয়াজ উঠল! দু-একটি ‘কফ কণা’ তখনও ছাঁটা পিয়াজের টুকরার মতো তেলের উপর বিক্ষিপ্ত ভাবে শিন শিন করে ভাজতে রইল! ওদিকে খোলা স্থানে ময়দার কাই, এদিকে ধনে পাতা, পিঁয়াজ, মরিচ, ডালডা। কারিকরের হ্যাঁচ্ছো স্প্রের বরকত, প্রায় সব আইটেম গুলোকেই ধন্য করেছে!
আগন্তুক প্রতিবাদ করল! কি করলেন আপনি? পুরো হ্যঁচ্ছোটা পরোটার মাল-সামানের উপর ছেড়ে দিলেন?
কারিকর সাথে সাথেই আগন্তুকের কথার প্রতিবাদ করল! বলল: “বে-আকলের মত কথা বলবেন না! পরোটার ‘তাবা’ যেভাবে গরম হয়েছে, হ্যাঁচ্ছোর পানি গরম তাবায় থাকে কিভাবে!? আপনার চোখ কানা নাকি, দেখছেন না সব কিছুই বাতাসে মিশে গেছে”!
আপনি জলদি এখান থেকে কেটে পড়েন। আপনার মত ‘মিস্টার’ কাস্টমারের কাছে পরোটা বিক্রি করব না। বহু কাস্টমার আছে, আপনার কাছে পরোটা বিক্রি না করলে আমাকে ভিক্ষা করে খাইতে হবেনা। যান, যান এখুনি যান নইলে গরম তাবার তেল আপনার মুখে মাইরা দিমু!
ইতিমধ্যে লাইনে থাকা এক কাস্টমারের পরোটা তৈরি হয়ে গেল। তিনি তৎক্ষণাৎ ঘোষণা দিলেন, অর্ডার করা পরোটা নিবেন না। এতক্ষণ দোকানদার ঘটনা পর্যবেক্ষণ করছিলেন, কাস্টমার পরোটা নিবে না শুনে, এবার দোকানদার ক্ষেপে গেলেন! তেড়ে গেলেন সেই প্রতিবাদী আগন্তুকের দিকে! তিনি বললেন আপনি আমার ব্যবসার ক্ষতি করছেন। আপনার কথার প্রমাণ কই? কোথায় থুথু, কফ ইত্যাদি? ‘আপনি এখান থেকে এখুনি যান নইলে গরম তেল মাইরা, চেহারা হেমা মালিনীর মত কইরা দিমু’। ইতিমধ্যে পরোটার আরও নতুন কাস্টমারের ভিড় বাড়তে থাকে, আরো অর্ডার দিতে থাকে, তারা জানেনা ইতিপূর্বে কি হয়েছিল। অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদী মানুষের অভাবে, অগত্যা সেই একজন প্রতিবাদী আগন্তুক কে, অপমানিত হয়ে, স্থান ত্যাগ করতে হল। যাবার সময় তিনি দোকানদারের হাঁক-ডাক শুনতে পেলেন: ডিম পরোটা তের-----র।
হয়ত চলবে.............
বিষয়: বিবিধ
১৮৩১ বার পঠিত, ৫৪ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
চলতে থাকুক, অন্তত কিছু মানুষ হলেও সতর্ক হবে।
অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদী মানুষের অভাবে, অগত্যা সেই একজন প্রতিবাদী আগন্তুক কে, অপমানিত হয়ে, স্থান ত্যাগ করতে হল।
ঐ আগুন্তুকের অবস্থা আর সমাজে ট্রু মুসলমানের অবস্থার মধ্যে কোন পার্থক্য নেই।
আসলে এটাই বাস্তবতা.....! গ্রামগঞ্জের দোকান গুলোতে আপনার বিবরণের চেয়ে কঠিন কিছু হয়!! কিন্তু আমাদের এসব দেখার সময় কই?? মুখে স্বাদ পেলেই খাই আর খাই....।
বিনোদন পেলাম। ধন্যবাদ।
কিছু মানুষ চোখে না দেখা পর্যন্ত অনেক কিছুই বিশ্বাস করেনা এটা তাদের জন্য হয়ত সমস্যা নয় কিন্তু ব্যাপারটা আসলের বিশ্রী। অনেক ধন্যবাদ।
আমার এক আত্মীয়ের কাছে এরকম কথা শুনেছিলাম। উনি গিয়েছিলেন সিঙ্গারা খাইতে। কিন্তু যিনি ভাজছেন তার সম্ভবত সর্দি লেগেছিল। তিনি একে এক দুই নাকে আঙ্গুল দিয়ে ফটাৎ ফটাৎ করে মেরে দিলেন! দুই এক ফোটা ছিটকে গিয়ে পড়ল কড়াইয়ে! পড়েই ছি--ছি---ছি--- শব্দ করে উঠল। উনি না খেয়েই চলে এলেন। এর বহুদিন তিনি সিঙ্গারা খান নাই শুনেছি।
আসসালামুআলাইকুম।
এমনিতেও বাইরের খোলা বাজারের খাবারের খাওয়া হয় না আর উপরে যা পড়লাম রুচি একেবেরে উঠে গেছে!
অদেখা খাবার হোটেল/ চাইনিজ গুলোর ভিতরের কি অবস্থা কে জানে?
শুকরিয়া আপনাকে ঘটনাটি শেয়ার করার জন্য!
কিছুই করার থাকেনা, সবসময় এই ভেজাল খাইতে খাইতে আমাদের পেটের যে অবসথা হয়েছে, তাতে মাঝে মধ্যে যদি পেটে কোন ভাল খাবার পডে, তাহলে মনে হয় পেট নিজেই কনফিউচড হয়ে যাবে !!
ধন্যবাদ আপনাকে।
মন্তব্য করতে লগইন করুন