মারফতি লাইনের ফকির বাবা ও আমার উপর বদ দোয়া
লিখেছেন লিখেছেন নজরুল ইসলাম টিপু ২৯ জুলাই, ২০১৫, ০২:৫৪:২৪ দুপুর
ফকির মজনু শাহের নাম নিশ্চয়ই শুনেছেন। তিনি ব্রিটিশ ইষ্ট ইন্ডিয়া কোম্পানীর সাক্ষাৎ যম ছিলেন। বিরাট ফকির বাহিনী সৃষ্টি করে তিনি বিশাল অঞ্চল থেকে ব্রিটিশদের খেদিয়ে দিয়েছিলেন। তাঁর বাহিনীর মানুষের পরনে থাকত ক্ষুদ্র পোশাক, হাতে লাটি, বল্লম সহ যার কাছে যা থাকত তাই হত অস্ত্র। দীর্ঘ ৪০ বছরের বেশী সময় ধরে ফকির মজুন শাহ ব্রিটিশ মহারাণির ঘুম হারামের কারণ হয়েছিল। ইতিহাসে এটাকে ফকির বিদ্রোহ বলে। সে কারণে বাংলাদেশে ফকির শব্দটি গৌরবের সাক্ষ্য বহন করত। এই গৌরবের কারণে, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালেয় মেধাবী ছাত্র আলমগীর, ‘ফকির আলমগীর’ হয়ে যায়।
কলেজ জীবনে যাদের বাড়ীতে লজিং থাকতাম, তিনি ছিলেন চট্টগ্রামের ভাষায় সুন্নি আকিদার মানুষ। সুনিয়তের প্রশ্ন আসলে একেবারেই কঠোর ও কড়া স্বভাবের। সে জন্য কিছু কিছু সুন্নিকে চট্টগ্রামের স্থানীয় ভাষায় ‘কড়া সুন্নি’ হিসেবে অভিহিত করে। আমার লজিং হোল্ডার ছিলেন কড়া সুন্নিদের পৃষ্ঠপোষক। তাছাড়া আমি নিজেও কড়া সুন্নি পরিবারে বড় হয়েছি, আমাদেরও পীর ছিল, মাজারে ওরশ করতাম, আমার বাবা বিভিন্ন মাজার কমিটির সভাপতি ও সেক্রেটারী হিসেবে দায়িত্ব পালন করতেন। আমার লজিং হোল্ডার খবর নিয়ে আগেই নিশ্চিত হয়েছিলেন যে, আমিও সুন্নি আকিদার মানুষ।
লজিং বাড়ী মাইজ ভাণ্ডারের কাছেই। ফলে মাইজ ভাণ্ডার থেকে গেরুয়া বর্ণের কাপড় পরিহিত বিভিন্ন ব্যক্তি (তাঁদের ভাষায় ওলী অথবা ফকির) তার বাড়িতে ঢুঁ মারত। সাধারণের ধারনা এসব সংসার বিরাগী ফকিরেরা মানুষের মনের কথা জানেন। এদের সেবা যত্ম আদর আপ্যায়ন করলে আল্লাহকে পাওয়া যাবে। আমার কক্ষটা আবার লজিং হোল্ডারের মেহমান খানা হিসেবে ব্যবহৃত হত।
যাক লজিং বাড়িতে ওসব উদ্ভট ফকিরদের আনাগোনা কখনও আমার জন্য চরম বিরক্তির কারণ হত। আমার চেহারায় জোড় করে হাস্য বদন ফুটিয়ে রাখলেও, ভিতরে ভিতরে তেতে থাকতাম। বিরক্তকর এসব উদ্ভট ফকিরকে সর্বদা মেহমান দারী করত, ক্লাস টুতে পড়ুয়া আমার ছোট্ট ছাত্রীটি। সেও এসব ফকির বারবার অসময় আগমণে শিশুসুলভ খেলার সুযোগ পেতনা। কোথাও বান্ধবীদের সাথে খেলা শুরু করল, অমনি বাড়ীতে ফকিরের আগমন!
আমি তার ছোট্ট মনের এই সমস্যার কথা বুঝতাম, সেও বুঝত ফকিরদের অসময়ে আগমনে আমিও অসন্তুষ্ট। তবে ফকিরনও বিলক্ষণ বুঝতেন যে, আমি অসন্তুষ্ট হলে তাদেরও খাওয়া দাওয়া বন্ধ হবে। কেননা ঘরের চাবি আমার হাতে। আমি কৌশলে ঘরে তালা লাগিয়ে মসজিদে কিংবা গোসল করতে চলে গেলে, তাদের বাড়ীর বাহিরে দাড়িয়ে থাকতে হবে। এতে তাদের সম্মানের ক্ষতি হবে। সে জন্য তারা আমাকে হাতে রাখতে ইচ্ছার বিরুদ্ধে হলেও যথা সম্ভব ইজ্জত করত।
একদা প্রত্যূষে হঠাৎ এক ফকির আগমন ঘটে! ছাত্র-ছাত্রীরা সবাই অংক কষায় মগ্ন, আমিও কেমেষ্ট্রির একটি পড়া আত্বস্থ করায় ব্যস্ত ঠিক এমনি সময় ফকির-ওলীর আগমনে সবকিছুর ছন্দ পতন হল। ফকিরের হঠাৎ আগমন দেখে বিরক্ত হয়ে আমি ঘুমের ভান করে বিছানায শুয়ে পড়লাম!
ফকির আসলেন, আমার শিয়রে দাঁড়ালেন, কি জানি দোয়া করলেন। অতঃপর ছাত্র-ছাত্রীদের উদ্দেশ্য করে বললেন, স্যারের কি অসুখ? তিনি কি গত রাত্রে ঘুমানোর পর এখনও উঠেনি? তিনি কি প্রতি সকালে এভাবেই ঘুমিয়ে থাকেন?
ক্লাস টু’তে পড়ুয়া ক্ষুদে ছাত্রীটি একটু মুখ পোড়া। সে ফকির বাবাকে উল্টো প্রশ্ন করল, আপনি তো মানুষের মনের কথা জানেন, গোপন খবর জানেন। আমাদের স্যার কি অসুস্থ নাকি ঘুমিয়ে সেটা জানতে পারেন না? তিনি তো আপনার সামনেই আছে। আপনিই বলুন তার কি অবস্থা?
ছোট্ট বাচ্চাটির এমন গ্রহণযোগ্য প্রশ্নে আমি অভিভূত হয়ে যাই। মূলত প্রশ্নটি নিরেট সত্য শতভাগ যুতসই।
ছোট বাচ্চার এমন ধারালো প্রশ্নে হতভম্ব সব জান্তা ফকির বাবা কথা না বাড়ীয়ে হড় হড় করে ঘর থেকে বের হয়ে গেলেন এবং আমার লজিং হোল্ডারকে এই বলে আপত্তি জানালেন যে, আপনার গৃহ শিক্ষক আপনার সন্তানদের বেতমিজ বানিয়ে ছেড়েছে। পীর সাহেব কেবলার বদদোয়ার গজব আসার আগেই তাকে বিদায় করা জরুরী.....
বিষয়: বিবিধ
২০৪৩ বার পঠিত, ৩৩ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
আসসালামু আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহ
সাবলিল ভাষা ও চমৎকার বর্ণনা। ফকিরের কলিজায় আঘাত দিলেন মনে হচ্ছে।
তারপর কি হল? অপেক্ষায় রইলাম।
যখন কোন মানুষ তার আশে পাশের লোকদের দ্বারা অতিমাত্রায় তোষামোদের শিকার হয় তখন সে ধরাকে সরা জ্ঞান করে ফেলে ।
এককথায় দাররররুন প্রশ্ন করেছে
প্রকৃত ইসলাম আজ হারিয়ে যাচ্ছে।
ধন্যবাদ।
"পীর সাহেব কেবলা" - এ কথাটার অর্থ কি?
ধন্যবাদ..
তারা নিজেদের কে যেভাবে আহলে সুন্নাত ওয়াল জামায়াত দাবী করে, প্রকৃত ইমানদার সেভাবে মুসলিম দাবী করে কিনা সন্দেহ। অনেক ধন্যবাদ।
মন্তব্য করতে লগইন করুন