শহীদ বুদ্ধিজীবী ও কিছু নতুন প্রশ্ন!
লিখেছেন লিখেছেন নজরুল ইসলাম টিপু ১৪ ডিসেম্বর, ২০১৪, ১২:২৬:১৫ দুপুর
বাংলাদেশ স্বাধীন হয়েছে আজ ৪৪ বছর হতে চলল। বাংলাদেশ নামক দেশটির বয়স যত বাড়ছে তার সাথে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে নানা মুনির নানা কথার। নতুন ইংরেজি বছরের শুরুতে এবং শেষে পত্রিকায়-টিভিতে পাকিস্তানীদের বিরুদ্ধে এককালীন সমালোচনা ও নিন্দা মূলক কথা শুনতাম। আবার পাকিস্তানীদের চেয়েও বাংলাদেশী রাজাকার আলবদরদের কাহিনীর মাধ্যমে গালাগালি শুনতাম সারা বছর। কাউকে রাজাকার-আলবদর বলার জন্য সরকার ঘোষিত কোন তালিকার দরকার পড়েনা, কাউকে অপছন্দ হয়েছে তো এই বিশেষণ জুড়ে দিলেই হল।
যার কারণে বিগত ৪০ বছর ধরে রাজাকার আলবদরদের তালিকা লম্বা থেকে লম্বাই হয়েছে। দেখা গেছে রাজাকারদের মাঝে যারা ইসলামী ভাবাপন্ন, কিংবা রাজনীতিতে সক্রিয় তারা এই আক্রমণের প্রথম শিকারে পরিণত হয়েছে। যারা ইসলামী ভাবাপন্ন হিসেবে জাতির কাছে পরিচিত নয় তারা রাজাকার হলেও যথেষ্ট রেয়াত পেয়েছে।
- রাজাকার-আলবদর বলে বদনাম থাকা সত্ত্বেও কেউ বাংলাদেশের দেশের রাষ্ট্রপতি হয়েছেন! যাকে মহামান্য রাষ্ট্রপতি বলে জাতি সম্ভাষণ করেছেন।
- পবিত্র সংসদে দাঁড়িয়ে মাননীয় স্পীকার বলে কথিত রাজাকার দের কাছে দাবী পেশ করা হয়েছে।
- কথিত রাজাকারদের মধ্য থেকে আওয়ামীলীগ, বিএনপি, জাতীয় পার্টির কত জন মন্ত্রী হয়েছে তা উল্লেখ করার দরকার পড়েনা। তাদের কেউ কেউ মারা গেলেও অনেকে এখনও জীবিত এবং সম্মানিত মানুষ হিসেবে বেঁচে আছেন। অনেকে দেশের কল্যাণে ভূমিকা রেখে চলছেন।
- বর্তমানে দেশে রাজাকার আলবদর বলতে ইসলামী চিন্তাধারার রাজনীতিতে আসক্ত বিশেষ করে জামায়াতে ইসলামীর সকল নেতাদের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য হয়ে গিয়েছে।
বঙ্গবীর কাদের সিদ্দীকি তাঁর লিখনিতে বলেছেন:
স্বাধীনতা যুদ্ধকালীন যারা যুদ্ধ করেনি! দেশ থেকে যাদের পালানোর দরকার হয়নি! পালিয়ে থাকার মত পরিস্থিতি তাদের উপর আপতিত হয়নি! উপরন্তু তদানীন্তন পাকিস্তানী হানাদার বাহীনির অধীনে থেকে চাকুরী করেছেন! রেশন তুলেছেন, ভাতা গ্রহণ করেছেন! এমনকি দেশ স্বাধীন হবার পরেও তারা বহাল তবিয়তে সেই চাকুরী নিয়মিত করেছেন তাদেরকে কি বলা হবে? স্বাধীনতা যুদ্ধের সামান্যতম ধকল যারা সহ্য করেন নি। নিজের চাকুরী খোয়ানোর ভয়ে কোন মুক্তিযোদ্ধাকে ন্যূনতম সহযোগিতা করেননি। এই সমস্ত বহুমুখী সুবিধাভোগীদের অপরাধ রাজাকার, আলবদরের চেয়ে কোন অংশে কম? তাদের অপরাধের কোন খতিয়ান কেউ নির্ণয় করেনি অধিকন্তু স্বাধীন দেশে নূতন সরকার গঠিত হবার পর এরাই দেশের বড় বড় পদগুলো দখল করে নেয়!
কাদের সিদ্দীকির ভাষায়:
এসব বর্ণচোরা সম্পর্কে জাতি কোনদিন গবেষণা করেনি। যারা পাকিস্তান আমলে ডেকচির দুধ খেয়েছে, মুক্তিযুদ্ধ কালে দুধের সর খেয়েছে, বাংলাদেশ আমলে ডেকচির তলানিটুকু চেটে পুটে খেয়ে নিয়েছে। এটা কি অপরাধ ছিলনা?
এক ধরনের অপরাধের কারণেই তো হামিদ কারজাইয়ের অনুসারীরা আফগানে আক্রান্ত হয়েছেন! নুরী আল মালিকির অনুসারীরা ইরাকে সমস্যায় পড়েছে!
শুধু আমাদের দেশের সেই ব্যক্তিরাই কখনও এই সমস্যার মুখোমুখি কখনও হয়নি, ভবিষ্যতেও হবার কোন সম্ভাবনা নাই।
১৯৭১ সালের ১৪ই ডিসেম্বর নিহত শহীদ বুদ্ধিজীবীদের ঘটনার দিকে ইঙ্গিত দিয়ে তিনি লিখেছেন,
[ন]“যুদ্ধে যারা পাকিস্তানের অন্নে লালিত-পালিত হয়েছে, ১৪ ডিসেম্বর মরে গেলে তাদের আমরা শহীদি দরজা দিয়েছি। যদি কোনোক্রমে তারা আর দু’দিন বাঁচত তাহলে তাদেরকে দালাল বলতাম! এখানে মৃত্যু কত মহান! পাকিস্তানি প্রশাসন যারা চালিয়েছে সেই ওসি, ডিসি, সেক্রেটারি—সবাইকে স্ব-পদে বহাল রেখেছে। যারা বরং মুক্তিযুদ্ধে অংশ নিয়েছিল স্বাধীনতার পর তারা অনেকে লাঞ্ছিত হয়েছে”[/b]। সূত্র আমার দেশ, ২৫/১০/১১।
বঙ্গবীর কাদের সিদ্দীকি কি বলেছেন সেটা আমার লিখার বিবেচ্য নয়। তিনি নিজে সরাসরি যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছেন এবং দেশে তাঁর একটা গ্রহণীয় ভিত্তি আছে বলে এই ভয়ঙ্কর মন্তব্য করতে পেরেছেন। কোন হুজুর মার্কা দাঁড়ি-টুপি পরিধান কারী কেউ যদি উপরের সেই কথা বলত, এতদিনে তার ৫০ দিনের রিমান্ড অতিবাহিত হয়ে যেত।
সময় যখন আসে, ইতিহাস তখন নিজেই কথা বলা শুরু করে, নিজের পরিচয় নিজেই উৎঘাটন করে। ফলে ভবিষ্যতে আমরা আরো জটিল ও কঠিন কথা শুনতে পাব বলে অবস্থা দৃষ্টিতে মনে হচ্ছে। অন্তত কাদের সিদ্দীকির এই কথার কোন প্রতিবাদ হয়নি কেউ চ্যালেঞ্জ করেনি, তবে কথাটি ভবিষ্যতের জন্য একটি সূত্র হয়ে থেকে যাবে, সেটি হল ‘১৪ ডিসেম্বর মরে গেলে তাদের আমরা শহীদি দরজা দিয়েছি। যদি কোনোক্রমে তারা আর দু’দিন বাঁচত তাহলে তাদের দালাল বলতাম’।
বাংলাদেশের মানুষের ব্যক্তি চরিত্র বিশ্লষনে আমরা বহু অদ্ভুত আচরণ দেখতে পাই!
আমরা দেখেছি, আমাদের সেরা কবি মরহুম শামসুর রহমান কে। তিনি ১৯৭১ সালের স্বাধীনতা যুদ্ধকালীন পুরো সময়টি তদানীন্তন পাকিস্তানের জাতীয় পত্রিকা ‘দৈনিক পাকিস্তান পত্রিকার সম্পাদনা করেছেন। একটি মুহূর্তের জন্যও তিনি মুক্তিযুদ্ধে অংশ গ্রহণ করে চাকুরী হারানোর ঝুঁকি নিতে চান নি। এমনকি তার সেই প্রতিষ্ঠিত প্রত্রিকার একটি ক্ষুদ্র কলামেও মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে কলম ধরেন নি!
জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি মরহুম ড. আফতাব আহমেদ তার সম্পর্কে লিখেছেন,
কবিকে পরিপূর্ণ নিরাপত্তা সহকারে ভারতে নিয়ে যেতে, যুদ্ধকালে ব্যক্তিগত ভাবে তিনি কবির বাসায় রাতের আঁধারে হাজির হয়েছিলেন। মুক্তিযোদ্ধাদের দারুণভাবে উৎসাহিত করতে তার মত একজন মহান কবির বড়ই দরকার ছিল। আফতাব আহমদের শত অনুরোধ কবি উপেক্ষা করেন। পাকিস্তান পত্রিকার চাকুরীকে নিরাপদ বলে বাছাই করেছিলেন! বর্তমানে তাঁরা দুজন কেউ জীবিত নেই, তবে উপরোক্ত কথাটি ড. আফতাব প্রকাশ করেছিলেন, কবির খ্যাতি যখন মধ্য গগনে জ্বলজ্বল করছিল। কবি প্রতিবাদ কিংবা অস্বীকার কোনটাই করেনি। ১৯৭১ সালের নভেম্বর ও ডিসেম্বর মাসের বেতন খাওয়া কবিকে যুদ্ধ পরবর্তী জীবনে মুক্তিযুদ্ধের বিরাট ধারক বাহক হিসেবে আমরা পেয়েছিলাম!
আরেক জন্য ব্যক্তির কথা উল্লেখ না করলেই নয় তিনি হলেন, জাতীয় অধ্যাপক জনাব কবির চৌধুরী। তিনি কবি শামসুর রহমান কর্তৃক সম্পাদিত দৈনিক পাকিস্তান পত্রিকায় পাকিস্তানের সংহতি রক্ষায় ১৭ মে, ১৯৭১ বিবৃতি দিয়ে বলেছিলেন, ‘মুক্তিযোদ্ধারা ভারতের দালাল'।
তিনি মুক্তিযুদ্ধের পুরো সময়টাতেই বাংলা একাডেমীর মহাপরিচালকের দায়িত্ব পালন করেছেন। আরো উল্লেখ্য কবির চৌধুরীর পুরো পরিবার মুক্তিযুদ্ধের বিপক্ষে ছিল। তাঁর বড় ভাই কাইয়্যুম চৌধুরী পাকিস্তান সেনাবাহিনীর কর্নেল ছিলেন। তিনি মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে ভূমিকা তো রাখেননি এরশাদের মত নীরবও থাকেন নি বরং সরাসরি মুক্তিযুদ্ধের বিপক্ষে অবস্থান নিয়েছিলেন। ফলে তিনি আজীবন পাকিস্তানেই থেকে গেছেন, স্বাধীন বাংলাদেশে কোনদিন আসেন নি।
কবির চৌধুরীর অপর ভাই মুনির চৌধুরী, যিনি ১৪ই ডিসেম্বরে নিহত সম্মানীত শহীদ বুদ্ধিজীবীদের অন্যতম! তাঁর সম্পর্কে মন্তব্য জনাব কাদের সিদ্দীকির ভাষায় দেখুন, "পাকিস্তানের পক্ষে ১৯৭১ সালে ঢাকার ৩১ জন বুদ্ধিজীবী বিবৃতি দিয়েছিল। তাতে একনম্বরে স্বাক্ষর করেছিলেন, 'মুনির চৌধুরী'। মুনির চৌধুরী পুরো যুদ্ধের সময় একদিনের জন্যও নিজের কর্মস্থলে যাওয়া বন্ধ করেনি। এমনকি নভেম্বর মাসের বেতনও তিনি তুলছিলেন"। সূত্র: আমার দেশ, ০৪/১০/১১।
মুনির চৌধুরী বেঁচে থাকলে আমরা হয়ত তাঁর গর্বিত ছাত্র হতে পেরে অহংকার করতাম, পরিতাপের বিষয় আমরা তাঁকে হারিয়েছি! ভুল এবং শুদ্ধের মাঝেই মানুষের পরিচিতি, পরবর্তীদের জন্য সেখানে থাকে শিক্ষা। কথা হচ্ছিল জাতীয় অধ্যাপক জনাব কবির চৌধুরীকে নিয়ে। তিনি মুক্তিযুদ্ধের সরাসরি বিরোধিতা করেও মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষের শক্তি দাবীদার আওয়ামী সরকার কর্তৃক জাতীয় অধ্যাপক হিসেবে নির্বাচিত হয়েছেন! এখন তিনি সরকারের উচ্চতম চিন্তাশীল বুদ্ধিজীবী, শিক্ষা উপদেষ্টা এবং সেই তিনিই আবার ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির উপদেষ্টা!
উপরের বিভিন্ন পরিস্থিতি পর্যালোচনা করে দেখলে বুঝা যায় যে, মুক্তিযুদ্ধের সময়ে কার কি ভূমিকা ছিল সেটা কোন ব্যাপার নয়। মূলত কে কত বেশী ইসলাম কিংবা ইসলামী মূল্যবোধ থেকে দূরে সে তত বেশীই সমাদৃত হয়েছে। আর যে ব্যক্তি প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধা হবার পরও ইসলামী সংস্কৃতিকে নিজের জীবনে ধারন-পোষণ কিংবা ইসলামে রাজনীতি আছে বলে স্বীকার করে, সে অনুযায়ী কাজ করতে চায়, সেই রাজাকার, আল বদর হয়ে যায়। একদা রাজাকার আলবদর সমালোচনার বিষয় বস্তু হলেও বর্তমানে তা ভারত ও আওয়ামী বিরোধীদের একটি প্লামফর্মের নাম হয়ে গিয়েছে। ভবিষ্যতে রাজাকার আলবদরের সাথে স্বাধীনতা যুদ্ধের সম্পর্ক খোঁজ করার চেয়ে, আওয়ামীলীগ কেন ক্ষেপে আছে সেটা নিয়েই বিচার বিশ্লষন করবে।
বিষয়: বিবিধ
২৭১২ বার পঠিত, ১০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
A PHP Error was encountered
Severity: Notice
Message: Undefined offset: 10348
Filename: views/blogdetailpage.php
Line Number: 917
"> মুক্তিযুদ্ধের কন্যা লিখেছেন : শান্তি নারায়ণ ঘোষ এর মুখে মুক্তিযুদ্ধকালীন কবির চৌধুরীর অনেক অপকর্মের বিবরণ শুনেছিলাম। তার বিশ্ববিদ্যালয়ের বাসভবনে নিয়মিত পাকিস্তানী মিলিটারির মিটিং হত।গুরুতর অভিযোগ বটেই!
তো গোআজম, নিজামী, মুজাহিদ, কামরুজ্জামান, কাদের মোল্লা..... তথা জামাতের কোন অপকর্মের কথা শুনেন্নি??
A PHP Error was encountered
Severity: Notice
Message: Undefined offset: 10348
Filename: views/blogdetailpage.php
Line Number: 764
তো ভাইজান- ১৯৭১ এ গোলাম আজম, নিজামী, মুজাহিদ, কামরুজ্জামান, কাদের মোল্লা..... তথা জামাত নেতারা কে কোথায় কখন কি করেছে বলেছে........, তা নিয়ে একটু বলেন্না, প্লিজজজজজজজজ।
ব্যাপারগুলো বিচারের পর্যায়ে আছে তাই সেই বিষয়গুলো লিখতে গেলে আবার আদালাত অবমাননা হয়ে যেতে পারে। কেননা এই অবমাননায় আপনার জন্য ফুল বর্ষনের সুযোগ থাকলেও আমার জন্য হুল বর্ষনের সম্ভাবনা আছে। নতুবা লিখতে বাধা ছিলনা সব তো প্রস্তুত ছিল।
‘স্বাধীনতা তুমি কাকের বাসায়
কোকিলের ডিম পাড়া,
স্বাধীনতা তুমি....’
বিষয়টা হচ্ছে যে, "... ইসলামী মূল্যবোধ থেকে দূরে সে তত বেশীই সমাদৃত হয়েছে।" এ বিষয়গুলো অনেকবারই চর্চা হয়েছে, অনেকেই জানে, অনেকবার লেখা হয়েছে, তারপরও তারা অন্ধ থাকতে চায়। উপরে এরকম একজনের কমেন্টে তথ্য প্রমাণ সহ লেখাটি হওয়া সত্বেও অন্ধ সাজার চেষ্টা।
মন্তব্য করতে লগইন করুন