মৌমাছির মন্দির দখলের অবসান! এক পিকুলিয়ার মানুষ, পর্ব-৩০ (রোমাঞ্চকর কাহিনী)
লিখেছেন লিখেছেন নজরুল ইসলাম টিপু ১৪ অক্টোবর, ২০১৪, ০৪:২৯:০০ বিকাল
মন্দিরের দরজা খোলা মাত্র শত শত পতঙ্গ একযোগে পুরোহিত কে আক্রমণ করে বসে! পুরোহিত বুঝে উঠার আগেই তাদের মুর্হুমুহু আক্রমণে তিনি মাটিতে ধরাশায়ী হয়ে যান। পূর্ব প্রস্তুতি না থাকাতে পুরোহিতের এই যাচ্ছেতাই দশা হল! তাছাড়া পুরোহিত পূর্ব প্রস্তুতি কিভাবেই নিবেন। তিনি তো জানতেন না যে, ছয় মাসের বেশী বন্ধ মন্দির ইতিমধ্যে লক্ষ লক্ষ মৌমাছি দ্বারা দখল হয়ে গেছে!
মাটির দেওয়ালে টিনে আচ্ছাদিত ছোট্ট মন্দির! মন্দিরের ভিতরে কোন স্থায়ী মূর্তি থাকেনা। দুর্গা, সরস্বতী, লক্ষ্মী দেবী সহ অন্যান্য পূজার সময় মূর্তি বানিয়ে পূজা সেরে নেওয়া হয়। আবার সেই মূর্তি বিসর্জনের মাধ্যমে মন্দির খালি করা হয়। ফলে বিশেষ উপলক্ষেই এই মন্দিরের দরজা খোলা হয়। প্রতিদিন কাউকে ভিতরে প্রবেশের দরকার পড়েনা, কাউকে পূজা করতে হলে মন্দির প্রাঙ্গণে ব্যবস্থা আছে, সেখানেই ভোগ দিয়ে পূজার কাজ সাড়া হয়।
‘হালদা ভ্যালী’ চা বাগানের হিন্দু কর্মকর্তা, শ্রমিক ও তাদের পরিবারের জন্য বানানো এই মন্দিরে, কোন এক ফাঁকে, বন্ধ মন্দিরের অন্ধকার ঘর খানা মৌমাছিদের পছন্দ হয়ে যায়। তারা তলে তলে সেখানে এক বিশাল বাসা বানিয়ে বসে। মন্দিরের ভিতরে উত্তর ও পূর্ব দিকের পুরো দুটি দেওয়াল জুড়ে মৌমাছি বাসা বানিয়ে ফেলেছিল। লম্বায় অন্যূন আট থেকে দশ হাত হবেই! মৌমাছি বাসা সম্প্রসারণ করতে গিয়ে পুরো জানালা দখল তো করেছেই একটি বিরাট টুকরা দরজার উপরে লটকেছিল। পুরোহিত দরজা খোলে টান মারতেই দরজার উপরে টাঙ্গানো বাসার অংশ বিশেষ মুহূর্তে ভেঙ্গে পড়ে এবং ক্ষিপ্ত মৌমাছির দল পুরোহিতের উপর হামলে পড়ে।
মাঝারী আকৃতির এসব মৌমাছির চরিত্র বুঝা মুস্কিল! ব্যাংক কর্মকর্তা মমিন সাহেব ঈদের ছুটিতে বাড়িতে এসে, চামড়ার ব্যাগটি বেড়ার ঘরের ঠুনির সাথে টাঙ্গিয়ে রেখেছিলেন। ঈদের লম্বা ছুটি শেষে অফিস খোলার দিন হন্তদন্ত হয়ে ব্যাগটি কাঁধে তুলে নিয়ে হন হন করে ঘর থেকে বের হয়ে পড়েন। বাড়ির বাহিরে পুকুর পাড়ে পৌঁছেই, ওরে বাবারে বলে চিৎকার করে সোজা পানিতে ধপাস করে ঝাঁপিয়ে পড়েন! সবাই দৌড়ে গিয়ে দেখতে পেলেন, মমিন সাহেব পুকুর পাড়ে ব্যাগ ফেলে, পুকুরের পানিতে হাবুডুবু করছেন! ব্যাগের চেইনখানা সামান্য খোলা! সেই খোলা স্থান দিয়ে ফুড়ুৎ করে এক একটি মৌমাছি বের হচ্ছে আর স্থানটিকে ঘিরে ধরেছে। আগেকার দিনে শিক্ষিত বরকে হবু শ্বশুর একটি চামড়ার ব্যাগও উপহার দিতেন। এটাও মমিন সাহেবের শ্বশুরের দেওয়া সেই ব্যাগ। তিনি ভাবতেও পারেন নি যে, বন্ধের এই কয়দিনে মৌমাছি তার ব্যাগে ঢুকে বাসা বানিয়ে ফেলবে! যথারীতি আমাকে ডাকা হল এবং হাস্য-পদ ঘটনার আশু সমাধান হল! কপাল খারাপ মমিন সাহেবের! কেননা, লম্বা ছুটির পরে অফিস খোলার দিনেই অনুপস্থিত থাকায় পুরো ছুটিটাই অনুপস্থিত হিসবে গণ্য হয়ে গেল!
মন্দিরের ভিতরের বাসার মত এত বড় মৌমাছির চাক উপস্থিত শত শত মানুষের মধ্যে অতীতে কেউ দেখেনি! আমিও ব্যক্তিগত ভাবে এত বড় মৌচাকের কথা আজও কোন বইয়ে পড়িনি! মন্দিরের উপর আস্থাশীল মানুষেরা বলাবলি করতে লাগল এটা কোন দৈব দুর্বিপাকের লক্ষণ! এই মৌচাক ভাঙ্গতে যে হাত লাগাবে নির্ঘাত তার অকল্যাণ হবে। তাছাড়া লক্ষ লক্ষ মৌমাছি ক্ষিপ্ত হয়ে যদি চারিদিকের লোকালয় আক্রমণ করে বসে তাহলে তো ভয়াবহ দুর্যোগের মত অবস্থা হবে! তাই দৈব দুর্বিপাকের এই চরম ঝুঁকি নিতে কেউ রাজি হলনা।
মৌমাছি বশীকরণ ব্যক্তি হিসেবে ততদিনে এলাকায় আমার খ্যাতি চরমে। আগেই বলেছি হাটে-বাজারে গেলে আমাকে কত ধরনের প্রশ্নের মোকাবেলা করতে হত। তাদের মধ্যে কেউ একজন কু-পরামর্শ দিল যে, আমার উপরে মৌমাছির দল ও বাসাটির দায়িত্ব হস্তান্তর করা হউক। দুর্বিপাকের গজব আর মৌমাছির মানুষ কামড়ানোর দায়িত্ব দুটোই আমার ঘাড়ে পড়বে। এতে করে আমি যে মৌমাছি নিয়ে খুবই বেড়ে গেছি, সেটার একটি উচিৎ শিক্ষার সুযোগ ঘটবে।
প্রস্তাব পাবার সাথে সাথে আমি তা লুফে নিলাম! শর্ত দিলাম মৌমাছি, মধু, মোম সহ যাবতীয় সবই আমার। কেননা আমি তাদের বিপদ মুক্ত করছি এবং কাউকে আক্রান্ত না হবার নিশ্চয়তা দিয়েছি।
সকাল বেলায় মন্দির প্রাঙ্গণে পৌছার অনেক আগেই কৌতূহলী মানুষ চারিদিকে ভিড় করে থাকল। বাগানের বহু কৌতূহলী মহিলাও কাণ্ড দেখার জন্য ইতিমধ্যে হাজির! সবাইকে নিরাপদ দূরত্বে দাঁড় করিয়ে, আমি একটি ছুরি ও বালতি হাতে আস্তে করে মন্দিরে ঢুকে পড়লাম। বাহিরে মহিলারা ভয়ে লুলু ধ্বনি দেওয়া শুরু করল! নিজের নিরাপত্তায় আমি যাতে সচেষ্ট থাকি, সে ব্যাপারে আমাকে তাগাদা দিচ্ছিল! কিছুক্ষণের মধ্যেই তারা দেখতে পেল আমি মন্দিরে ঢুকেছি কিন্তু আমার কোন ভয়ার্ত চিৎকার বা হাঁকডাক শোনা যাচ্ছেনা!
মৌচাকটি কাটতে যত কষ্ট হবে ভেবেছিলাম, ততটুকু হয় কষ্ট হয় নাই! এক পর্যায়ে সকল মৌমাছি ঝাঁক বেঁধে মন্দির থেকে পালিয়ে গেল। বাহিরে একটি নিচু গাছের ডালে বিরাট জটলা বানিয়ে লটকে থাকল। মৌমাছির এই আচরণটির জন্যই আমি অপেক্ষা করছিলাম! ফলে খুবই সহসা মধু যুক্ত মৌচাক ভেঙ্গে সাথে নেওয়া বড় বালতিতে সবই ভরে ফেললাম। পোকা ও ডিম যুক্ত কিছু খালি চাক আমার পরবর্তী কাজের জন্য সাথে রেখে দিলাম।
বালতি গুলো সাথে আসা ব্যক্তিদের কে ধরিয়ে দিলাম। তারা মুহূর্ত দেরি না করে বাড়ির উদ্দেশ্যে রওয়ানা হল।
এতবড় মৌচাক ভেঙ্গে আমি যখন অক্ষত শরীর নিয়ে মন্দির থেকে বের হলাম। তখন সবার চোখ কপালে উঠল। খালি হাত ও বিনা পোশাকে আমি কিভাবে অক্ষত থাকলাম, সবার এটাই প্রশ্ন! আর মৌমাছিই বা কেন দল বল নিয়ে ঘর থেকে বের হয়ে গেল! এ সবের কোন উত্তর তারা মিলাতে পারছিল না। অনেকেই বলাবলি করতে থাকল এটা নিশ্চিত ঠাকুরের আশীর্বাদ ছাড়া সম্ভব নয়। একজন সাধারণ মানুষের পক্ষে এতবড় কঠিন কাজ করা প্রায় অসম্ভব।
মন্দিরের পুরোহিত কে বললাম, আমি এখন বাড়িতে যাচ্ছি বিকাল বেলায় এসে মৌমাছি ধরে নিয়ে যাব। উপস্থিত সবাই একবাক্যে আমার এ কথায় আপত্তি জানাল। হয় আমাকে এসব মৌমাছিকে নিরাপদে তাড়াতে হবে, নয় সব মৌমাছি ধরে নিয়ে যেতে হবে। এটার কোন একটা না করে আমি মন্দির প্রাঙ্গণ ত্যাগ করতে পারব না। কেননা দুই দিন পরেই তাদের পূজা, আগামী কাল প্রতিমা আসবে। আজ রাত্রে যদি সকল মৌমাছি পুনরায় মন্দির দখল করে বসে তাহলে তাদের বিপদের অন্ত থাকবে না। সুতরাং একটা বিহিত না হওয়া পর্যন্ত আমাকে মন্দির প্রাঙ্গণ ত্যাগ করতে দিবে না।
কিছু মানুষ আমার যোগ্যতার উপর অবিশ্বাস করছিল, তাই শেষ না হওয়া অবধি তারা আমাকে ছাড়তে চাইছে না। আর কিছু মানুষ ইতিমধ্যে আমার অলৌকিক দক্ষতা দেখে আশ্চর্য হয়েছে এবং এতগুলো বিক্ষিপ্ত ও উত্তেজিত মৌমাছিকে কিভাবে বন্ধী করব! সেটা দেখতে অধির আগ্রহের জন্যই, আমাকে যেতে বাধা দিচ্ছে।
যে সব মৌমাছি আগেই মধুর সংগ্রহে বাহিরে বেরিয়েছিল, তারা আসতে থাকল এবং বাসা হারিয়ে গাছের ডালে লটকে থাকা সেই চাকে যোগ হতে থাকল! সন্ধ্যা হবার আগেই বিশেষ কায়দায় অধিকাংশ মৌমাছিকে জব্দ করতে সক্ষম হলাম। উপস্থিত সবাইকে আস্বস্থ করলাম বাকী মৌমাছি আর আগামী কাল এই জায়গায় আসবে না। সকাল বেলায় সকল মৌমাছি এই স্থান ত্যাগ করবেই। দুই একটি যদিও থাকে তারা মানুষের কোন ক্ষতি করবে না। তারপরও যদি দলবদ্ধভাবে মৌমাছির দল কোথাও বসে, যেন আমাকে খবর দেওয়া হয়, তাহলে সেগুলোকেও আমি বন্ধী করে নিয়ে যাব।
অবশেষে সন্ধ্যার আগেই আমি যখন সকল মৌমাছি সহ আমার রাস্তা ধরলাম, তখন সবাই ফ্যাল ফ্যাল করে তাকিয়ে রইল। তারা ভাবতে রইল, চোখের সামনে এটা কি দেখলাম! সকল মৌমাছিকে আমি কিভাবে যাদু করে বাক্স বন্ধী করলাম! তাদের চেহারা দেখে নির্ঘাত বুঝতে পারলাম, তারা এখনও ভাবছে, আসলেই আমার সাথে এক শক্তিশালী জ্বিন আছে নতুবা কোন ঐশ্বরিক শক্তি কাজ করছে।
বর্তমানে মৌমাছির উপর অনেক বই বাজারে আছে, মানুষ নেট থেকে অনেক তথ্য নিতে পারে। আমার সময় এসবের বালাই ছিলনা। নিজের আগ্রহ, অর্জিত বিদ্যা ও চেতনা দিয়ে এসব করেছিলাম। তাই মৌমাছিকে কাবু করা কিংবা আয়ত্তে আনার জন্য আমার দীর্ঘ দিনের প্রচেষ্টার ফসল ছিল মন্দিরের ঘটনাটি।
প্রথম বার আমি যখন পাহাড়ে মৌচাক ভাঙ্গতে যাই, তখন আমার সারা শরীর আবৃত ছিল বিশেষ কায়দার পোষাকে। কেউ দেখলে মনে করবে একজন নভোচারী মাটিতে হাঁটছে। ডান হাত চুলকাতে গিয়ে কিভাবে যেন হাতের বোতাম খুলে যায়, সেই ফাঁকে একদল মৌমাছি আমাকে আক্রমণ করে বসে। পঞ্চাশটির বেশী মৌমাছি সেদিন আমার এক হাতেই দংশন করেছিল। খুবই কঠিন অবস্থা ছিল সে দিনটি। একজনকে কচি কাঁঠাল পাতায় মধু দিয়েছিলাম, সে মধু লেহন করতে গিয়ে খেয়াল করেনি যে, কাঁঠাল পাতার ঠিক অপর পিঠে একটি ক্ষিপ্ত মৌমাছি সুযোগের অপেক্ষায় ছিল। একেবারে জিহ্বার উপরে হুল ফুটিয়ে দিয়েছিল। সে ব্যক্তির জিহ্বাটি ফুলে বৃহদাকার শসার মত হয়েছিল! সেদিন আমাকে এত মৌমাছি হুল ফুটানোর পরও আমি মরি নি। তবে বিকাল বেলায় প্রচণ্ড জ্বর হয়েছিল, প্যারাসিটামল প্রয়োগে তিন ঘণ্টায় জ্বর সেরে উঠেছিল। আমার এই ঘটনায় অন্তত একটি সত্য প্রমাণিত হয়েছে যে, অনেক মৌমাছি এক সাথে মানব শরীরে অনেক হুল ফুটালে ও মানুষের মৃত্যুর কারণ ঘটেনা!
মৌমাছি একটু লোভী প্রকৃতির পতঙ্গ! হাতে চিনির শরবত মেখে কিংবা মধুর প্রলেপ লাগিয়ে, আলতো ভাবে বন্য মৌমাছির বাসায় যদি হাত ঢুকানো হয়, তাহলে হুল খাবার সম্ভাবনা থাকেই না! তারা চিনি কিংবা মধুর গন্ধে বিভোর হয়ে সেই হাতকে কাষ্ঠ খণ্ডের কোন টুকরায় পতিত মধু মনে করে, আপন মনে চুষতে ব্যস্ত হয়ে পড়ে। তাদেরকে এই কাজে ব্যস্ত রেখে অন্য হাতে আলতো করে কাজ সাড়িয়ে ফেলা যায়। তবে এ জন্য চাই দক্ষতা ও মৌমাছির গতিবিধি বুঝার অভিজ্ঞতা।
বর্ষা কালে ফুলের স্বল্পতার কারণে, মধুর অভাব দেখা দেয়। ফলে তারা খাদ্যাভাবে পড়ে যায়। এসময় তাদের বাসার সামনে চিনি মিশ্রিত পানি দিলে, তারা খুবই খুশী হয় এবং নিমিষে সে পানি চুষে নেয়। আমার বাড়ীতে রক্ষিত একটি মৌমাছির বাসায়, এভাবে খাদ্য দিতে থাকলে, তারা অবশেষে আলসে প্রকৃতির হয়ে যায়! ফলে সর্বদা চিনির শরবতের জন্য আমার পিছু পিছু উড়তে থাকে। এমনকি চিনির পানির লোভে শিশু ভাতিজার জন্য তৈরি করা ফিডারও তারা চুরি করে চোষে নিত! চুলা থেকে গরম ফিডার তৈরি করে, ঠাণ্ডা করার জন্য টেবিলের উপর রাখলে দশ মিনিট পরে দেখা গেল সবই মৌমাছির পেটে চলে গিয়েছে! শিশু ভাতিজা হা করে ঘুমিয়ে পড়লে, মৌমাছি তার গালের ভিতরে ঢুকে, জিহ্বায় লেগে থাকা চিনির পরশ চুষে আনত! এসব মৌমাছির গায়ে হাত দিলেও তারা হুল ফুটাত না। কেননা তারা পুরো পরিবারের সকল সদস্যদের চিনে নিয়েছিল। এর দ্বারা বুঝতে পারলাম, হাতের কাছে তৈয়ার করা সম্পদ পেলে, অনেক দক্ষ ও করিৎকর্মা সৃষ্টিও একদিন অলস হয়ে পড়ে! অভাব ও প্রয়োজন সৃষ্টিকে সামনের দিকে তাড়িয়ে নিতে সাহায্য করে, অনুপ্রেরণা যোগায়।
পাকা কাঁঠালের চামড়া, তরমুজের উচ্ছিষ্ট সহ সকল মিষ্টি ফলের রসের প্রতিও মৌমাছির আসক্তি প্রচুর। তাদের ঘ্রাণ শক্তি প্রবল তাই বহু দূরে বাহিরে ফেলে দেওয়া ফলের টুকরার খবর তারা সহজে পেয়ে যায়। মৌমাছি শুধুমাত্র মধুই সংগ্রহ করেনা। মধুকে দীর্ঘস্থায়ী করতে, লবণ সহ নানাবিধ রাসায়নিক উপাদানও প্রকৃতি থেকে সংগ্রহ করে। বাহির থেকে বাড়ীতে আসলে সবার শরীর ঘামে। আমি ঘর্মাক্ত শরীর নিয়ে মৌচাকের পাশে বসা মাত্রই, মৌমাছি আমার গায়ের উপর ঝাঁপিয়ে পড়ত এবং চিকন জিহ্বা দিয়ে শরীর থেকে লবণ চেটে নিত। গরু সহ ছোট লোমযুক্ত প্রাণীর শরীর থেকে, মৌমাছিকে লবণ চুষে নিতে আমি বহুবার নিচ চক্ষে দেখেছি।
মৌমাছি সহ সকল পতঙ্গ কোন অবস্থাতেই ধুঁয়া সহ্য করতে পারেনা। ধুয়ার তারা দিক হারা হয়ে যায়, ভয়ে আতঙ্কে ছুটে পালায়। মৌমাছি সু-সংঘটিত থাকে ও দায়িত্বের প্রতি সচেতন বলে, যে কোন প্রতিকুল পরিবেশে শেষ পর্যন্ত টিকে থাকতে চেষ্টা করে কিন্তু একপর্যায়ে ধুয়ার কাছে তাকে পরাস্ত হতেই হয়।
গোল মরিচ পোড়ার ধুঁয়া নাকে ঢুকিয়ে, যেভাবে জ্বিন তাড়াতে দেখেছি। সেই পদ্ধতি একদা মৌমাছির উপর চালাতে গিয়ে দেখি, বাপরে বাপ বলে বাসা-বাড়ী সবই ফেলে মুহূর্তেই মৌমাছি এলাকা ছাড়া হয়। ভুলেও আর কখনও সেখানে পুরানা বাসার সন্ধানে ফিরে আসেনা! এটা কোন বৈজ্ঞানিকের থিউরি নয়, আমার নিজের মত করে আবিষ্কার করা পদ্ধতি। মন্দিরে এই থেরাপিই চালিয়েছিলাম! মন্দিরের ভিতরে বসে আমি কি করেছি, বাহিরের কেউ তা দেখে নাই। কেননা এই কাজে সরঞ্জাম হিসেবে লাগে এক টুকরা পুরানা কাপড়, কয়েকটি গোলমরিচ ও একটি দেশলাই! ব্যস, যুদ্ধ এক ধাক্কাতেই খতম। তবে এই পদ্ধতি খামার চাষিরা ব্যবহার করলে হিতে বিপরীত হবে, কেননা কোন এক অজানা রাসায়নিক বিক্রিয়ার ভীতির কারণে মৌমাছি ভুলেও আর সেখানে আসবে না। ফলে চাষি ক্ষতিগ্রস্ত হবে। উল্লেখ্য এই পদ্ধতি আমি গর্তে অবস্থান কারী মাঝারী আকৃতির মৌমাছির বেলায় প্রয়োগ করেছি। বাহিরে ঝুলে থাকা, বৃহৎ আকৃতির মৌমাছির ক্ষেত্রে প্রয়োগ করার সুযোগ ঘটে নাই।
(মৌমাছির জীবন, তাকে আবদ্ধ করা ও পোষ মানানোর চাঞ্চল্যকর তথ্য আগামী পর্বে থাকবে।)
বিষয়: বিবিধ
১৯২৭ বার পঠিত, ২২ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
হাতের কাছে তৈয়ার করা সম্পদ পেলে, অনেক দক্ষ ও করিতকর্মা সৃষ্টিও একদিন অলস হয়ে পড়ে! ((যেমন মুসলিম উম্মাহ)) অভাব ও প্রয়োজন সৃষ্টিকে সামনের দিকে তাড়িয়ে নিতে সাহায্য করে, অনুপ্রেরণা যোগায়।
গোল মরিচ পোড়ার ধুঁয়া নাকে ঢুকিয়ে, যেভাবে জ্বিন তাড়াতে দেখেছি। সেই পদ্ধতি একদা মৌমাছির উপর চালাতে গিয়ে দেখি, বাপরে বাপ বলে বাসা-বাড়ী সবই ফেলে মুহূর্তেই মৌমাছি এলাকা ছাড়া হয়। ভুলেও আর কখনও সেখানে পুরানা বাসার সন্ধানে ফিরে আসেনা!
গোলমরিচের ব্যবহার জানতাম না, তবে শুকনো মরিচের বিচির ব্যবহার জানা ছিল!
আপনাকে অনেক ধন্যবাদ, জাযাকাল্লাহ
[আজকের পোস্টে বেশ কিছু বানানে সমস্যা রয়ে গেছে, একটু চোখ বুলিয়ে নিলে ভালো হয়!]
ভালো লাগল এই পর্বটিও।
আমার এরকম মৌচাক নিয়ে সমস্যায় পড়লে আপনাকে ডাকব কিন্তু, তখন আসতেই হবে।
মৌমাছি তাড়াবার আপনার নিজের পদ্ধতিটি ভালো লাগল। একবার ব্যবহার করে দেখব। সুন্দরবনে মৌয়ালদের সাথে গিয়ে এই পদ্ধতিটির কার্যকারিতা প্রমাণ করব ইনশা আল্লাহ। তাতে করে ওদেরও লাভ হবে।
বরাবরের মত সাবলীল ভাষায় আমাকে মুগ্ধ করলেন!
জাজাকাল্লাহু খাইর।
আমাদের বাসার বাইরে একটা নির্দিষ্ট এ্যাংগেলে সবসময় মৌমাছি বাসা বানাতো! আর আম্মাজান দ্যা গ্রেট উইমেন ঐ মৌমাছি ধোঁয়া পদ্ধিতে তাড়িয়ে মধু সংগ্রহ করতেন!
আমি একবার কামড় খেয়ে জাপানিজ হয়ে ছিলাম সপ্তাহখানেক
প্রানবন্ত লিখাটির জন্য আবারো শুকরিয়া
অনেক অনেক মোবারকবাদ।
মৌমাছি নিয়ে নতুন কিছু তথ্য পেলাম আপনার লেখায়। ভালো লাগলো।
মন্তব্য করতে লগইন করুন