মৃত্যুর দুয়ারে দাঁড়িয়ে! এক পিকুলিয়ার মানুষ, পর্ব-২৭ (রোমাঞ্চকর কাহিনী)

লিখেছেন লিখেছেন নজরুল ইসলাম টিপু ২২ সেপ্টেম্বর, ২০১৪, ০২:১৪:৫১ দুপুর



সুন্দর শাহের দরগাহে, ওরসের বিরানী ও হালদা নদীর পানি খেয়ে, রাতেই প্রচণ্ড জ্বরের মুখোমুখি হলাম! ভয়ানক জ্বর কোনমতেই ছাড়ার লক্ষণ দেয়া যাচ্ছিল না। জ্বর আমাকে অনবরত কাহিল করতে গিয়ে কখনও নিজেই হয়রান হয়ে পড়ছিল। সবাই ভাবে এই বুঝি জ্বর পড়ল! কোথায় জ্বর পড়বে! পর মুহূর্তে জ্বর কঠিন মূর্তি নিয়ে হামলে পড়ে শরীরের উপর।

১৯৮০ সাল, তখনও মফস্বলে এম, বি, এস ডাক্তার পাওয়া যেত না। রাস্তা-ঘাট তখনও পাকা হয়নি। ঘরে ঘরে বিদ্যুৎ তো দূরের কথা, সবেমাত্র বাজারে তার টানা হয়েছে! মন্ত্রী, এম,পি’দের বাড়ীতে কিংবা তাদের শ্বশুর বাড়ীতে বিদ্যুতের দেখা মিলত। দেশের সেরা সেরা ছাত্র তখনও গ্রাম থেকে তৈরি হত। যাক, এলাকার সমুদয় সেরা ডাক্তারদের বাড়ীতে আনা হল। এসব ডাক্তার আগে জ্বর দমানোর প্রতি মনযোগী হলেন। জ্বরের যত প্রকার ঔষধ আছে সবই বাড়ীতে আনা হল! আমার ঘরটি রীতিমত একটি ডিসপেনসারি হয়ে গেল! তবুও জ্বরকে বাগে আনা গেলনা! অনবরত কয়েকদিন জ্বর না পরার কারণে, মুখের রুচি সম্পূর্ণরূপে উধাও হয়ে গেল। যা খাওয়া হয় সাথে সাথেই বমি হয়ে যায়। শরীর অসম্ভব দুর্বল হয়ে গেল, বিছানা থেকে উঠে দাঁড়ানো দূরের কথা, বালিশ থেকে ৩ মন ওজনের মাথাটি তুলতেই কষ্টকর হয়ে উঠল! দিন দিন শরীরের মারাত্মক অধঃপতন দেখা দিল। ওদিকে সকল ডাক্তার জোট করে ভোট দিল, তাদের ঔষধে শেষ দিকে ছেলে সেরে উঠবে! একজন ডাক্তারও সাহস করে বলছেন না যে, এ রোগটি আমাদের জন্য নতুন যা আমরা ধরতে পারিছ না; দয়া করে আপনারা আপনাদের মতো করে দেখুন! কয়েকজন ডাক্তার সাহস করে বাবাকে জানালেন, ‘ক্ষিপ্ত জ্বিন-পরীর গোস্বার কারণে, ছেলের কালান্তর রোগ হয়েছে, আমরা বিদায় নিলাম’। যুক্তি বটে! আমার উপর জ্বিনের গোস্বা হবার একশত একটি কারণ আছেই। ওঝা-বৈদ্যের মাধ্যমে কালান্তর রোগ তাড়াতে বাবার প্রাণান্তকর প্রচেষ্টাও অবশেষে ব্যর্থ হল!

কয়েক দিনের মধ্যেই দেহের ভয়ঙ্কর দশা হলো! শরীরের অবস্থা এতটুকুই সঙ্গিন হলো, গাড়ীতে করে আর কোনভাবেই শহরের হাসপাতালে নেওয়া সম্ভব হবেনা! কেননা শহরে যাবার অর্ধেক রাস্তা তখনও কাঁচা। গাড়ীর ঝাঁকুনিতে বিপদের সম্ভাবনা প্রবল। অগত্যা শহরে গিয়ে যেভাবেই হোক একজন এম, বি, এস ডাক্তার আনার ব্যবস্থা করা হলো। কোন অভিজ্ঞ ডাক্তারই মফস্বলে আসতে চাইলেন না। বহু টাকার প্রলোভনে একজন ডাক্তার মটর সাইকেলে চড়ে আসলেন; সাথে আনলেন ইন্টার্নীতে পড়ুয়া এক তরুণ ডাক্তারকে। আজকের দিনে সামান্য রোগের কারণে ডাক্তারের কাছে গেলে যেভাবে ল্যাবরেটরির পরীক্ষা ধরিয়ে দেয়। তখনও দেশে সে সংস্কৃতি চালু হয়নি! প্রথমে রোগী দেখে, লক্ষণ বুঝে রোগ নির্ণয় করা হত, তারপর ল্যাবরেটরির সাহায্য। উভয় ডাক্তার আমার অবস্থা দেখে আঁতকে উঠলেন! শরীরের যে অবস্থা বাঁচার কথা নয়! দু’চোখের কুঠুরিতে দুটি আস্ত ডিম অনায়াসে ঢুকিয়ে রাখা যাবে, এমনই হয়েছে চোখের দশা!

ডাক্তারেরা রোগী দেখলেন, পায়খানা দেখলেন। তবে দুজনের মধ্যে রোগ নিয়ে বিতর্ক লেগে গেল। বড় ডাক্তার বলল এটা ম্যালেরিয়া, ইন্টার্নী ডাক্তার বললেন, এটা নতুন ধরনের টাইফয়েড! ইন্টার্নী ডাক্তার তাঁর সিদ্ধান্তে অনড়! সে আমার পায়খানা গুলো বারবার পর্যবেক্ষণ করল, এমনকি রং ও গন্ধ দেখল! সে বলল, ‘একটি প্রতিবেদনে আমি এ ধরনের একটি রোগের কথা পড়েছি, স্যারের ক্লাসে শুনেছি। ক্লাসের আলোচনায় এসেছিল, এই লক্ষণগুলো নতুন ধরনের টাইফয়েড জীবাণুর মাধ্যমে হয়’। স্বাস্থ্যবান রোগী সর্বোচ্চ দুই সপ্তাহ পর্যন্ত বাঁচতে পারে; তখন আমার ১০ম দিন শেষের পথে। বড় ডাক্তার মহোদয়, ইন্টার্নী ডাক্তারের অতিমাত্রার আত্মবিশ্বাসী আচরণে মনক্ষুন্ন হলেন। তারপরও ইন্টার্নী ডাক্তারের অতি আত্মবিশ্বাস, চাপ ও যুক্তি পরামর্শের কারণে বড় ডাক্তার ম্যালেরিয়া চিকিৎসা করা থেকে বিরত থাকতে মনস্থ করলেন।

যারা ইতিমধ্যে আমার চিকিৎসা করেছিলেন, সহসা সে সকল ডাক্তারদের জলদী বাড়ীতে হাজির করা হল। শহরের ডাক্তারেরা তাদের কাছে জানতে চাইল, ইতিমধ্যে আমাকে কি কি ঔষধ খাওয়ানো হয়েছে। এই প্রশ্নে ডাক্তারেরা জানতে পারল যে, ইতিমধ্যে আমাকে ম্যালেরিয়ার ডোজ প্রয়োগ করা হয়েছে, তবে সে চেষ্টা বিফলে গেছে! ফলে নতুন ডাক্তারদের সিদ্ধান্ত নিতে বিলম্ব হলনা যে, রোগটি নতুন ধরনের ‘টাইফয়েড’। এলাকার ডাক্তারদের কে এম, বি, এস ডাক্তারবৃন্দ পরামর্শ দিলেন যে, এটা এক প্রকার টাইফয়েড, যার ঔষধ শহর থেকে আনতে হবে। সঠিক রোগ নির্ণয় ও ঠিকমত ঔষধ খাওয়াতে যথেষ্ট দেরী হয়ে গিয়েছে। রোগীর বাঁচার সম্ভাবনা মাত্র ১০ শতাংশ। সূক্ষ্ম তদারকি ও যথেষ্ট পরিচর্যার মাধ্যমে সে বেঁচে যেতেও পারে। আর বেঁচে গেলেও শরীরের কোন একটা অঙ্গ চিরতরে বিকল হয়ে যাবে। যথা সম্ভব দৃষ্টিশক্তি হারাতে পারে নয়ত স্মৃতি শক্তি বিকল কিংবা মানসিক প্রতিবন্ধী হয় যাবে। আশা করি আপনারা যেহেতু তার চিকিৎসায় প্রথম থেকেই ছিলেন, শেষ পর্যন্ত লেগে থাকবেন এবং আরো দায়িত্ববোধের পরিচয় দিবেন। কেননা এলাকায় এই রোগ যেহেতু একবার দেখা দিয়েছে, আরো অনেকে আক্রান্ত হতে পারে। ডাক্তারেরা তাদের সম্মানী নিয়ে চলে গেলেন, তবে ইন্টার্নী ডাক্তার মাহমুদ যাবার সময় আমাদের ঠিকানাটা লিখে নিলেন এবং তার গ্রামের বাড়ীর ঠিকানাটা দিয়ে গেলেন; যাতে করে পত্র মারফত আমার পরিবর্তিত অসুস্থতার খবর তাঁকে জানানো যায়।

পরদিন সকালে স্থানীয় স্কুল বন্ধ ঘোষণা হল, সকল ছাত্র-ছাত্রী ও শিক্ষকেরা আমাকে দেখতে বাড়ীতে আসলেন। এত ছাত্র-শিক্ষক আমাকে দেখতে আসবে ভাবিনি; মনটা প্রফুল্ল হয়ে উঠল। আমি তাদেরকে দেখতে মাথা ঘুরানোর চেষ্টা করলাম। ভয়ঙ্কর ভাবে মাথা চক্কর দিয়ে উঠল এবং আমি কাউকে চিনলাম না! অনেক জনকে আবছা আবছা দেখলাম, কারো অবস্থানকে দু’জায়গায় দেখলাম! আমি সে স্কুলের ছাত্র, একদা আমার বড় ভাই যে স্কুলের ইংরেজির শিক্ষক ছিলেন এবং তিনি সেই স্কুলের তিনজন অন্যতম প্রতিষ্ঠাতার একজন ছিলেন। আমার বাবাও অন্য আরেকটি স্কুলের প্রতিষ্ঠাতা সদস্য ছিলেন এবং মেঝ ভাই একটি মাদ্রাসার সুপারিনটেন্টডেন্ট। জানিনা তাদের প্রভাবে, নাকি আমার পরিবারের প্রতি আন্তরিকতার নিদর্শন হিসেবে, প্রতিটি স্কুল থেকেই দলে দলে ছাত্র-ছাত্রী ও শিক্ষকেরা আমাকে দেখতে আসছেন! স্যারেরা দৃঢ়তার সাথে বলতেন আমি অচিরেই ভাল হয়ে উঠবো এবং আবারো স্কুল জীবন শুরু করতে পারব। শতবর্ষী হিন্দু সাধু শ্রদ্ধেয় কমলানন্দ ব্রহ্মচারী, যিনি আমার দাদারও সিনিয়র ছিলেন! তিনি প্রতিটি সকালে খবর নিতে আসতেন এবং নিজ উদ্যোগে মন্ত্র পাঠ করে ঝেড়ে দিতেন! এসবে আমার মনে প্রচুর প্রেরণা চলে আসত, মনে হত কিছুক্ষণ পরেই আমি গা ঝেড়ে দিয়ে উঠে দাঁড়াতে পারব। কিন্তু কিভাবে! আজ নতুন করে দেখলাম আমার হাঁটু দুটোকে সামান্য উপরে তুলতেও পারছিনা! আমার বিশ্বাস করতে কষ্ট হচ্ছিল এগুলো আমারই শরীরের অঙ্গ! একাকী মনে করতে লাগলাম অতীত দিনের ফেলে আসা দিন গুলো নিয়ে। কৌতূহলে জ্বিনের পিছনে ছুটতে গিয়ে, কত গুরুত্বপূর্ণ সময় বরবাদ করেছি। ভাল ছাত্র হবার পরেও স্কুলের ক্লাস থেকে দূরে ছিটকে পড়লাম! বাবা-মায়ের হাজারো চিন্তাকে অবহেলা করে গহীন রাত-বীরাতে একাকী সময় কাটিয়েছি। শরীরের যত্ন, ঘুম, বিশ্রাম কোনটাই যথাযথ নেওয়া হয়নি। যখন সিদ্ধান্ত নিয়েছি, এসব ছেড়ে সঠিক জীবনে ফিরে আসব, তখনই চরম শারীরিক বিপদে পড়লাম। আর বিপদটাই এমন, আজ এগারতম দিনেও সেরে উঠার কোন সম্ভাবনা নাই!

আমার প্রিয় বাল্যবন্ধু ‘হুদা’কে দূরে দূরে ঘুরতে দেখি। মনে হল, কোন একটা সুবিধার সন্ধানে সে ব্যস্ত কিন্তু সে আমার কাছে আসেনা! পরে জানতে পারলাম তাকে আমার কাছে আসতে নিষেধ করা হয়েছে! পরদিন দুপুরে আমাকে একাকী পেয়ে দৌড়ে আসে। কান্না করে বলল, তার কিছু ভাল লাগেনা। আমার কাছে আসতে তাকে কড়া ভাবে নিষেধ করা হয়েছে। কেননা সবাই জেনে গেছে যে, আমি আর মাত্র হাতে গোনা কয়েকদিন পৃথিবীতে বেঁচে থাকব। সবার ধারনা এই কথাটি হুদা আমাকে বলে দিতে পারে! আমি দু’এক দিন বেশী বাঁচতে পারলেও, সেই সংবাদ শুনলে তাড়াতাড়ি মারা পরব। তাই সে জানতে এসেছে শেষবারের মত আমি তার কাছে কিছু প্রত্যাশা করি কিনা? কিছু খেতে চাই কিনা? তাছাড়া প্রতিদিন সকাল, দুপুর, সন্ধ্যায়, আমার ডান পাশের জানালা দিয়ে বাইরে তাকালে তাকে গাছের ফাঁকে দেখতে পাব। একথা শুনে আমার হৃদয়ে হু হু করে কান্নার ঝড় শুরু হল, কলিজা ফেটে যাবার দশা হল কিন্তু এত কান্নাতেও চোখ থেকে এক ফোটা পানি বের হলনা, কেননা চোখ দুটো ইতিমধ্যে শুকাতে শুরু করেছিল।

অনেক কিছুর উত্তর আমি পরিষ্কার বুঝতে পাচ্ছিলাম। কেন এতগুলো ছাত্র-শিক্ষক আমাকে দেখতে এসেছিল। কেন আমাদের বাড়ীতে দিন দিন আত্মীয়-স্বজন আসার সংখ্যা বেড়ে যাচ্ছিল। কেন ডাক্তারেরা আগের মত আসা বন্ধ করে দিয়েছে। কেন আমার মা-বাবা, ভাইয়েরা রাত্রে না ঘুমিয়ে পুরো রাত আল্লাহর কাছে, ছোট ভাইয়ের প্রাণ ভিক্ষায় কান্না করছে। মাকে ডেকে বললাম, মা আমি শুনেছি আমার হায়াত বেশী দিন নাই। আপনারা আমাকে বাঁচিয়ে রাখতে সর্বোচ্চ চেষ্টা করে চলছেন, আমি তা দেখেছি, সকল কল্যাণ আল্লাহর হাতে। আমি ধৈর্য ধারণ করব, সম্ভবত আর বেশী দিন আপনাদের বিরক্ত করবোনা। তবে এ মুহূর্তে আমার একজন বন্ধু দরকার; তাই ছোটকালের খেলার বন্ধু হুদাকে যেন, সর্বদা-সারাক্ষণ সাথে-পাশে পাই, এ ব্যবস্থাটুকু অন্তত করবেন। মা অঝোরে কান্না শুরু করে দিলেন, তাঁর চোখের পানিতে আমার শুষ্ক বুক ভিজে একাকার হচ্ছিল। মা বলল, বাবারে আমার বিশ্বাস তুমি আবারো জেগে উঠবে, কেননা তুমি থাকবেনা এমন লক্ষণ আমি এখনও দেখতে পাচ্ছিনা। তাছাড়া তুমি যদি নাই বা থাক, তাহলে তোমার কবরের মাটি শুষ্ক হবার আগে আমিও তোমার সাথী হব; দুঃচিন্তা করো না।

আমি অসম্ভব মা পাগল ছিলাম, চিন্তা, চেতনায়, শয়নে, জাগরণের বেশীর ভাগ অংশ থাকত মাকে নিয়ে। এসব খাসিয়ত দেখে মাঝে মাঝে মা বিরক্ত ও বিব্রত হতেন; ঘর কুনো হয়ে যাই কিনা! আমাকে নিয়ে মায়ের ধারনা ঠিক নয় প্রমাণ করতেই, বহির্মুখী হয়েছিলাম আর দিক হারিয়ে জ্বিনের পিছনে ঘুরতে শুরু করি! তবে আজকে মায়ের অতি আত্মবিশ্বাসী কথায়, মনে আবারো চাঙ্গা বোধ করলাম।

বাবাকে বললাম; আমাকে খাটিয়ার শুইয়ে বাড়ির চারিপাশে, পুকুর পাড়ে ছোটবেলায় যেখানে খেলতাম সে স্থানগুলো যেন একটু দেখানোর ব্যবস্থা করে। ফুটবল খেলার সাথী এবং আমার ক্লাসের সকল বন্ধুদের যেন একসাথে দেখার সুযোগ করে দেন। তাদের কথাই বেশী মনে পড়ছিল, অনেক অনুশোচনার আমাকে তাড়িত করছিল। আমার আবদার শুনে, বাবা ভিতরে ভিতরে বোবা কান্না করে দৃঢ় প্রত্যয়ে বললেন; তোমার এই আশাটি যথাসম্ভব পূরণ করা হবে। তাছাড়া ইনশায়াল্লাহ তুমি নিজের পায়ে হেঁটে হেঁটেই সে সমস্ত জায়গা দেখতে পাবে। আশা করি তুমি আগের দিনগুলো ফিরে পাবে। আল্লাহ আমাদের নিরাশ করবেন না। বাবা ছিলেন আমার সবচেয়ে বড় বন্ধু। হেন কথা আমার বাকি থাকত না, যা বাবার সাথে শেয়ার করতাম না। প্রতিটি স্বপ্ন-আকাঙ্ক্ষা, বলার ও জানার তিনিই ছিলেন আমার খুবই বিশ্বস্ত বন্ধু ও নির্ভরযোগ্য মাধ্যম।

কিছুই খাওয়া যায়না, মুহূর্তেই বমি শুরু। মনে হয় মাথাটিতে পৃথিবীর সকল ওজনে ভরা। ফলে ডানে বামে ঘুরাও ছিল অনেক কঠিন। শোয়া অবস্থায় পায়ের আঙ্গুল গুলো দেখলে মনে হয় ওগুলো যেন অনেক দূরে। খিদের অনুভূতি নাই, ভয়ানক মাথা ব্যথা থাকে, এক পর্যায়ে শুধু ঝিম ঝিম করে, যেন দুনিয়াটা অবিরত ঘুরছে। নারিকেল পাতার দোল খাওয়া, মোরগের ডাক, ডাহুকের চিৎকার, সারসের আতঙ্কিত স্বর। সবই যেন কত সুন্দর কত মধুর লাগে; যেদিকে তাকাই সবই যেন নতুন করে সুন্দর লাগে, মায়া লাগে। বাড়ীর প্রতিটি মানুষকে আরো পরিচিত লাগে। কেননা এসব দেখার সুযোগ আমার জন্য দিন দিন ক্ষীণ হয়ে আসছে। শরীরের যে অবস্থা দেখছি, যে কোন মুহূর্তে বাড়ীতে কান্নার রোল পড়তে পারে। একা একা ভাবছি মৃত্যুর পরবর্তী জীবনটা কেমন হবে, মসজিদের হুজুর সর্বদা মৃত্যুর বয়ান রাখত, মন দিয়ে খেয়াল করতাম না, কেননা আমার বিশ্বাস ছিল আরো বহু বছর বাঁচব। মনে আনতে চাইতাম, হুজুর কি কি কথা বলতেন। আবার ভাবছি, দুনিয়ার জীবটা শেষ হবে কিভাবে? আমাকে ছাড়া আমার বাবা-মায়ের আচরণ কেমন হবে? আমার অনুপস্থিতি তারা কেমন ভাবে উপলব্ধি করবে! কেননা আমার দুটি ভাই-বোন অতীতে শিশু অবস্থায় মারা গিয়েছিল, তাদের নিয়ে আব্বা-আম্মাকে তেমন একটা আফসোস করতে দেখতাম না। সেভাবে তারা আমাকেও ভুলে যায় কিনা। তার চেয়েও আরো বেশী আতঙ্কিত হতাম এই ভেবে যে, আমি মারা গিয়েছি মনে করে যদি ওরা কবর দিয়ে ফেলে, অথচ আমি মরি নাই। বাবা-মাকে কাছে পেলে খুশীতে ভুলে যেতাম কোন কথাটি যেন প্রশ্ন করার ছিল?

সেদিনই হঠাৎ করে প্রথম বারের মত ১ ঘণ্টার জন্য জ্বর ছেড়েছে! ঘামে পুরো শরীর ভিজে গেল; ডাক্তার ও মা-বাবার মনে ক্ষীণ আশার আলো সঞ্চার হল। আবার জ্বর উঠল, পাঁচ ঘণ্টা পর আবার ছাড়ল। এই প্রথম জ্বরের উঠা নামা খেলা শুরু হল! এন্টিবায়োটিকের ভয়ঙ্কর চোবলে অসাড় দেহ নিথর হবার যোগাড় হল। আল্লাহর দয়ায় ১৫ তম দিনে আর জ্বর উঠল না! শরীরটা যেন একটি কঙ্কালের সমষ্টি, শুধু হাঁড়ের উপর চামড়া লেপ্টে আছে, দেহাভ্যন্তরে ধুক ধুক করে প্রাণ খানা নিজের অস্তিত্বের সাক্ষ্য দিচ্ছে।

কোন ভাল কাজ করার সুযোগ দিতে হয়ত, আল্লাহ সে যাত্রায় আমাকে বাঁচিয়ে দিলেন; এখন হিসেবের পালা। মাথার সমুদয় চুল পড়ে গেল। কয়েকদিন পর চোখের ভ্রু থেকে শুরু করে সব লোম ঝড়ে গেল! শরীরের সমুদয় চামড়া পুড়ে গেল, পুরো শরীর ঠিক কিসমিসের মত হয়ে গেল! চামড়ায় ঘষা মারলে উপরের চামড়াটি আলাদা হয়ে আসে; ভিতরের অংশটুকু সাদা আকারের দেখা যায়! তিন চামচ ভাত হজম করা দুঃসাধ্য হয়ে উঠে। দূরের জিনিষ কম দেখতে পেলাম, ভাল করে দেখতে গেলে মাথা ঘুরানো শুরু হত। স্মৃতি শক্তিতে সমস্যা দেখা দিল।

দীর্ঘমেয়াদী সেবা-যত্নের পর, ভাত হজম করতে পারলাম ও নিজে নিজে বসতে পারলাম। অনেকদিন পর কিছু ধরে ধরে হাটতে পারলাম, ঠিক ১ বছর বয়সের শিশুরা যেভাবে হাঁটতে শিখে। দেড় বছর পর পরিপূর্ণ সুস্থ হলাম বটে ডাক্তার পরামর্শ দিল কিছু দিনের জন্য পরিবেশ বদলিয়ে দিতে, তারপর আগের মত স্বাভাবিক জীবনে ফিরে যেতে। নিয়মিত শাক-সবজি, ফল-মূল খাওয়ার পরে বিস্তারিত পরীক্ষায় ডাক্তার ঘোষণা করল, আল্লাহ আমার সমুদয় অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ আগের মত অক্ষত ও সচল রেখেছেন।

দেড় সপ্তাহের রোগ, দেড় বছরের ভোগে শেষ হল! নষ্ট হল দু’বছরের বেশী সময়। আমার বন্ধুরা সবাই কলেজে চলে গেল, কেউ আর এলাকায় নেই, আমি দু’বছরের ‘স্টাডি ব্রেক’ এর ঝামেলায় পড়ে অনিয়মিত হলাম। শরীর মন আরো চাঙ্গা করতে, বাবা আমার পরিবেশ বদলানোকে গুরুত্ব দিলেন। আমার বাবা চা বাগানের ম্যানেজারের কাজ ছেড়ে দিয়ে, প্রায় ২০ একর জায়গার উপর নিজেই একখানা বৃহদাকার ফল ও সবজি বাগান গড়ে তুলছিলেন। ফলে থানা ও জেলা পর্যায়ের সকল কৃষি ও পশুপালন কর্মকর্তাদের সাথে তিনি ভাল পরিচিত ছিলেন। সে হিসেবে জেলা পশুপালন কর্মকর্তার সহযোগিতায়, সরকারী খরচে হাতে কলমে ডেইরী ও পোল্ট্রি ফার্মের উপর বাস্তবভিত্তিক প্রশিক্ষণ নিতে বাবা আমাকে কিছু দিনের জন্য সিলেটে পাঠিয়ে দিলেন। এতে করে আমার পরিবেশ বদলানোর সুযোগটা হবে, সময়টা শিক্ষা ও প্রশিক্ষণের কাজে ব্যয় হবে এবং ভারী একাডেমিক পড়াশোনার জন্য আবারো প্রস্তুত হতে পারব।

আল্লাহ আমাকে দয়া করে নতুন জীবন দিয়েছেন, সুস্থ রেখেছেন। স্কুলের শিক্ষক, সহপাঠী, বন্ধু, আত্মীয় স্বজনের প্রেরণায় মৃত্যুর দুয়ার থেকে বেঁচে উঠার স্বপ্ন দেখেছি। সকলের প্রেরণা, জীবনী শক্তির মত কাজ করেছে। সকলের আন্তরিকতা দেখে মনে বাঁচার আশা তৈরি হয়েছে। ফলে শরীর আমার সাথে সহযোগিতা না করলেও মন আমাকে দাঁড়িয়ে থাকতে সাহস যুগিয়েছে! মনের এই সাহস পেয়েছি সমাজের প্রতিটি মানুষের আন্তরিকতা, দোয়া ও প্রেরণা থেকে। যা আজকের সমাজে অনুপস্থিত, ঘরে ঘরে শত্রুতা, অবিশ্বাস জন্ম হচ্ছে। মানুষের প্রতি মানুষের আন্তরিকতা নাই বরং কেড়ে নেবার প্রবণতা বেশী দেখা যাচ্ছে। আজ আমরা চিকিৎসার জন্য ডাক্তারের জ্ঞানের উপর নির্ভর করতে পারছিনা, ডাক্তার নিজেই ভরসা হারিয়ে ল্যাবরেটরি নির্ভর হয়ে উঠেছে। টোটকা-ফাটকা চিকিৎসায় অসহায় মানুষ, ল্যাবরেটরির পিছনে বহু টাকা খেসারত দিচ্ছে। বড় বড় ডাক্তারের পিছনে ছুটছি, তীর্থের কাকের মত প্রতীক্ষায় থাকি, কখন সেরা ডাক্তারের সিরিয়াল পাব! যত বড় ডাক্তার ল্যাবরেটরির তত লম্বা ফর্দ ধরিয়ে দেয়ার নামই হচ্ছে ডাক্তারি। পুরানা ডাক্তারেরা সেই আদিকালে যা পড়েছেন, সেটা দিয়েই কাজ চলতে থাকে; তারা অনেকেই অধ্যয়ন করেন না। নতুন ডাক্তার যারা সদ্য পাশ করে বের হয়েছে তাদের কোন গুরুত্ব দেওয়া হয়না! অথচ তাদের তথ্যগুলো নতুন, মুখস্থ বিদ্যার জ্ঞান তাজা, তারা সম-সাময়িক বিষয়ের উপর লেখাপড়া করেই পাশ করেছেন। যার শতভাগ সুফল আমার জীবনে পেয়েছি। যাক, পরিপূর্ণ সুস্থ হয়ে আমাকে যে ইন্টার্নী ডাক্তার দেখেছিলেন, সেই ডা. মাহমুদের কাছে তিনটি পত্র লিখেছিলাম। অবশেষে শেষ পত্রের উত্তর পেলাম এভাবে।

টিপু, “তোমার তিনটি পত্রই পেয়েছিলাম, উত্তর দেবার ভাষা আমার নাই। একজন স্কুল শিক্ষক হয়েও কাগজে এখন আর কলমের আঁচড় উঠে না। কালি ভরা কলমের সকল ভাষাই স্তব্ধ। মফস্বলে তার চাকুরী ছিল, গত মার্চে আমার কলিজার টুকরা মাহমুদ টাইফয়েডে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছে, জীবন সায়াহ্নে আমি রিক্ত হয়েছি আর সিক্ত হয়েছি বুক ভরা অশ্রুতে”। ইতি, মাহমুদের বাবা মাষ্টার আলতাফ।

বিষয়: বিবিধ

১৭৭৬ বার পঠিত, ২৬ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

267514
২২ সেপ্টেম্বর ২০১৪ দুপুর ০২:৩৫
আফরা লিখেছেন : আলহামদুল্লিলাহ ! আল্লাহ আপনাকে এখনো বাঁচিয়ে রেখেছেন ।আল্লাহ আপনার নেক হায়াত আরো বৃদ্ধি করে দিন ।আমীন ।

সবই আল্লাহর ইচ্ছা ।

ডা.মাহমুদের কথা শুনে কষ্ট লাগল ।আল্লাহ উনাকে জান্নাত নসীব করুন ।আমীন ।
২২ সেপ্টেম্বর ২০১৪ দুপুর ০৩:০৫
211289
নজরুল ইসলাম টিপু লিখেছেন : সে সময় টাইফয়েড মারাত্মক রোগের নাম ছিল অবশ্য টাইফয়েড এখনও ভয়ঙ্কর রোগের নাম। ঔষধ, চিকিৎসা ও রোগ বুঝতে পারার মত ব্যবস্থা থাকাতে মৃত্যুর হার কমেছে। আপনাকে অনেক ধন্যবাদ।
267515
২২ সেপ্টেম্বর ২০১৪ দুপুর ০২:৩৫
আবু সাইফ লিখেছেন : শেষ লাইনে এসে কেঁদে ফেললাম!

আমারও টাইফয়েডে ভোগার অভিজ্ঞতা আপনার মতই প্রায়- ১৯৬৪-৬৫তে, চারমাস বিছানায়, আর দু'মাস উঠানে-বারান্দায়.. আটমাস পরে আবার স্কুলে..

নিয়ে গেছে আমার একটা কাণের ৭০% এবং স্মরণশক্তির অনেকখানি- কোনকিছুই হুবহু মনে রাখতে পারিনা, শুধু সারাংশটুকু থাকে!

আলহামদুলিল্লাহ, এতে খুব সুবিধা আমার, যতই হৈ-চৈ হোক, আমার পড়াশোনায়/কাজে ব্যাঘাত হয়না!
২২ সেপ্টেম্বর ২০১৪ দুপুর ০৩:০৭
211290
নজরুল ইসলাম টিপু লিখেছেন : টাইফয়েডর কারণে আমার স্মরণ শক্তিতে ব্যাঘাত ঘটে, তবে পরবর্তীতে আল্লাহ আমাকে ফিরিয়ে দেন। আপনার জন্যও দুঃখ লাগল। এই রোগ কত মারাত্মক তা ভোক্তভোগী ছাড়া কেউ জানেনা। আর আমার রোগিটির জন্য আমিই দায়ী ছিলাম। আপনাকে অনেক ধন্যবাদ।
267522
২২ সেপ্টেম্বর ২০১৪ দুপুর ০২:৫৫
রিদওয়ান কবির সবুজ লিখেছেন : অসম্ভব হৃদয় ছোঁয়া লিখাটি।
বিশেষ করে ডাঃ মাহমুদ এর অংশ।
২২ সেপ্টেম্বর ২০১৪ দুপুর ০৩:০৯
211292
নজরুল ইসলাম টিপু লিখেছেন : ডা। মাহমুদের জন্যই আমাকে এই ঘটনাইটির পটভুমি লিখতে উৎসাহিত করে। তাঁর জন্যই আমি প্রতিটি কথা ও ঘটনাকে মুখস্থ রেখেছি এবং অনেক জনকে উদাহরণ দিয়েছি। আল্লাহ তাঁকে জান্নাত নসীব করুন। আমীন। আপনাকে অনেক ধন্যবাদ।
267545
২২ সেপ্টেম্বর ২০১৪ বিকাল ০৪:০১
গ্যাঞ্জাম খানের খোলা চিঠি লিখেছেন : আপনার এ পর্বটি নজরে পড়ার সাথে সাথে পড়া শুরু করেছি। শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত মনোযোগ দিয়ে পড়েছি। টান টান উত্তেজনা অবশেষে পরিপূর্ণ সুস্থ্য হয়ে উঠলেন। খুবই ভাল লাগছিল। কিন্তু গ্যাঞ্জামটা লেগে গেল একদম শেষে ডাক্তার মাহমুদের ঘটনা শুনে। খুবই আফসোসের কথা!! সেদিন কোথায় যেন পড়েছিলাম আফ্রিকার কোন এক দেশে নতুনভাবে চিহ্নিত কোন এক অজানা ভাইরাসে আক্রান্ত গরীব অসহায় রুগীর সিকিৎসায় নিয়োজিত ওমর নামের একজন ডাক্তারের সংশ্লিষ্ট ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে মারা যাওয়ার কাহিনী। খুবই আফসোস লাগছে।
২২ সেপ্টেম্বর ২০১৪ বিকাল ০৪:৩০
211316
নজরুল ইসলাম টিপু লিখেছেন : যদি কল্যানের নিয়তে এই কাজ করে, তাহলে এর প্রতিদান অনেক বেশী। ডা। ওমরের জন্য আফসোস লাগছে। আমিও ডা। মাহমুদের বিস্তারিত কোন খবর পাই নাই। তা ছাড়া তার বাবাও আমার সম্পর্কে জানেন না তিনি শুধু আমার পত্রের উত্তর দিয়েছেন মাত্র।

আজকের যুগে ভৌগলিক যে ড্রয়িং গুলো করা হয়, সেটা মুলত একজন ডাক্তারই সৃষ্টি করেছিলেন। লণ্ডনে একবার কলেরা রোগ দেখা দিলে, এক ডাক্তার মানুষদের বুঝানোর জন্য পুরো শহরের রেখাচিত্র এঁকে কলেরা প্রবণ এলাকাগুলো অঙ্কন করেছিলেন। সেই থেকে ড্রয়িং বিদ্যার বুৎপত্তি লাভ করে এবং ভবনের কাজেও ব্যবহার হতে শুরু করে। অনেক ধন্যবাদ।
267555
২২ সেপ্টেম্বর ২০১৪ বিকাল ০৪:২৬
নেহায়েৎ লিখেছেন : একটু ব্যস্ত আছি। সময় করে পরে পরব। এসব লেখা সময় নিয়ে না পড়লে মজা পাওয়া যায় না।
২২ সেপ্টেম্বর ২০১৪ বিকাল ০৪:৩৩
211319
নজরুল ইসলাম টিপু লিখেছেন : এইবারের লেখায় মজা পাবেন তেমন নিশ্চয়তা দিতে পারিছনা, তবে আল্লাহর কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করার অনেক তথ্য হয়ত পেতে পারেন। অনেক ধন্যবাদ।
267563
২২ সেপ্টেম্বর ২০১৪ বিকাল ০৪:৪৯
মামুন লিখেছেন : আলহামদুলিল্লাহ!
আল্লাহপাকের ইচ্ছা আমাদের জ্ঞানের বাহিরে।
তবে কষ্ট পেলাম ঐ বয়সে আপনি কি কষ্টটাই না পেয়েছিলেন।
তবে এরি ভিতরে আপনার তখনকার মানসিক যাতনা এবং অনুভূতিও উঠে এসেছে আপনার ধারাহাবিক লেখাটির এই পর্বে।
অনেক ভালো লাগল।
জাজাকাল্লাহু খাইর। Rose Good Luck
২২ সেপ্টেম্বর ২০১৪ বিকাল ০৪:৫৩
211326
নজরুল ইসলাম টিপু লিখেছেন : ডাক্তারেরা বলেছেন, কম বয়সে ঘটেছে বলে, অনেক কিছু পরিপূর্ন হওয়া সম্ভব হয়েছে। বেশী বয়সে হলে ঝুঁকি থাকত। সর্বোপরি কথা হল আল্লাহ আমাকে ভালবেসেছেন, তিনি আমাকে বাঁচিয়ে রাখবেন বলে সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন।

মানসিক যাতনটা একজন রোগীর, এই ধরনের একজন মুমুর্ষ রোগী কি ধরনের ভাবনায় ব্যস্ত হয়, সেটাই অঙ্কন করতে চেষ্টা করেছি মাত্র।

আপনাকে অনেক ধন্যবাদ।
267567
২২ সেপ্টেম্বর ২০১৪ বিকাল ০৪:৫২
জেদ্দাবাসী লিখেছেন : সোবহানল্লাহ! আপনার মা ছিলেন গভির অন্তর চোখের অধিকারি তাইতো তিনি বলেছেন "তুমি থাকবেনা এমন লক্ষণ আমি এখনও দেখতে পাচ্ছিনা।" বাস্তব অভিজ্ঞতা থেকে বলা যায়, সুখ-দুঃখের বড় কোন গঠনা গঠার আগে আল্লাহ তার ইংগিত সপ্ন বা বাস্তবে জানিয়ে দেন । আর সেটা পাঠ করার মত একটা অন্তর লাগে। যেটা আপনার আল্লাহভিরু আম্মাজানের ছিল।
আপনার লেখা পোস্টগুলি পাঠ করে আমরা অনেক বিষয় নতুন ভাবে অনুভব করতে শিখেছি। লেখার মাধ্যমে সমস্ত ইসলামী শক্তিকে ঐক্যবদ্ধ করার জন্য আল্লাহ আপনাকে আমাদের মাঝে ফিরিয়ে দিয়েছেন।
দোয়াকরি আল্লাহ আপনার কলমের জোর বাড়িয়ে দিন।



২২ সেপ্টেম্বর ২০১৪ বিকাল ০৪:৫৮
211327
নজরুল ইসলাম টিপু লিখেছেন : আপনার দোয়াটি আমার জন্য পাথেয়। জীবনের প্রতিটি পরতে ভাবতে থাকি আল্লাহ যদি আমাকে তাঁর একজন নগন্য গোলাম হিসেবে কবুল করেন সেটাই হবে আমার বেঁচে থাকার সার্থকতা। নতুবা আমার জীবন একটি তুচ্ছ প্রানীর জীবনের চেয়েও নিকৃষ্ট হবে, সেদিন পথভ্রষ্ট প্রতিটি আত্মা বলতে থাকবে,

হায়! আজকে আমি যদি মাটি হয়ে যেতে পারতাম!!!!
267643
২২ সেপ্টেম্বর ২০১৪ রাত ০৯:৪৯
শেখের পোলা লিখেছেন : একেই বোধহয় বলে 'যমে মানুষে লড়াই'৷ অনেক দায়ীত্ব বাকী ছিল, আছে তাই যমকে হারতে হয়েছে৷ অন্য ভাবে বলি- 'রাখে আল্লাহ মারে কে?'
২৩ সেপ্টেম্বর ২০১৪ সকাল ১০:৪৭
211553
নজরুল ইসলাম টিপু লিখেছেন : আপনার সুন্দর মন্তব্যের জন্য অনেক ধন্যবাদ। ভাল থাকুন।
267679
২২ সেপ্টেম্বর ২০১৪ রাত ১১:২৩
বৃত্তের বাইরে লিখেছেন : আল্লাহ্‌ তায়ালার অশেষ রহমত মৃত্যুর দুয়ার থেকে ফিরে এসেছেন। আল্লাহ্‌ আপনার নেক হায়াত আরও বৃদ্ধি করে দিন। আমীন।
২৩ সেপ্টেম্বর ২০১৪ সকাল ১০:৪৯
211554
নজরুল ইসলাম টিপু লিখেছেন : দোয়া করি আল্লাহ যাতে আপনার দোয়া কবুল করেন, আর আমিও দোয়া করি আল্লাহ যাতে সকল অবস্থায় আপনাকে রহম দ্বার ধন্য করেন। আমীন।
১০
267859
২৩ সেপ্টেম্বর ২০১৪ দুপুর ০৩:১৯
প্রেসিডেন্ট লিখেছেন : অনেক হৃদয়ছোঁয়া গল্প। আপনি আমাদের মাঝে আছেন এটি অনেক বড় প্রাপ্তি।

শেষ প্যারায় এসে কিছুক্ষণের জন্য একেবারে স্তব্ধ হয়ে গেলাম।
২৩ সেপ্টেম্বর ২০১৪ বিকাল ০৪:৪৭
211668
নজরুল ইসলাম টিপু লিখেছেন : এটি গল্প নয়, পুরোপুরি শতভাগ সত্যি, আপনার বেদনাহত মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ।
১১
267895
২৩ সেপ্টেম্বর ২০১৪ সন্ধ্যা ০৬:১১
সাদিয়া মুকিম লিখেছেন : আপনার বন্ধু হুদা'র কথাটি পড়ে সত্যি চোখে পানি আটকে রাখতে পারিনি! শৈশবের বন্ধুত্ব আসলেই নিখাদ ভালোবাসাতে পরিপূর্ন থাকে! আপনার এবং আপনার পরিবারের সবার উপর সীমাহীন কষ্টের সময় অতিবাহিত হয়েছে, আল্লাহ আপনাদের সবরুন জামিল দান করুন!ডাক্তার সাহেবের জন্য দোআ রইলো আল্লাহ উনার গুনাহ খাতা মাফ করে উনাকে জান্নাতবাসী করে নিন! আমীন!

আল্লাহ আপনার জ্ঞান ও যোগ্যতা আরো বৃদ্ধি করুন! Good Luck
২৩ সেপ্টেম্বর ২০১৪ সন্ধ্যা ০৬:৩৯
211689
নজরুল ইসলাম টিপু লিখেছেন : আপনার আন্তরিক দোয়া ও সুন্দর মন্তব্যের জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ। আল্লাহকে আপনাকে অফুরন্ত রহম দানে বাধিত করুন। আমিন।
১২
268180
২৪ সেপ্টেম্বর ২০১৪ দুপুর ০১:৩৩
মোস্তাফিজুর রহমান লিখেছেন : আমি ৯ম শ্রেণীতে থাকাবস্থায় আমার অবস্থা্ও অনেকটা এরকম ছিল। তখন আমি বুঝতে পারিনি যে, আমার কি অবস্থা হয়েছিল। আম্মা পরবর্তীতে বলেছিল যে, উনারা আমার বেঁচে উঠার আশাটা্ও ছেড়ে দিয়েছিলেন। ঘটনাটা আপনার কাছাকাছি। সামান্য জ্বর আর কাশি ছিল, গ্রাম্য ডাক্তারের সরানপন্ন হলাম। ওষুধি দিল, খেলাম অবস্থা খারাপ হচ্ছে, কিন্তু ডাক্তারের কথা কয়েকদিনের মধ্যে ঠিক হয়ে যাবে। আর্থিক সমস্যা এবং স্থানীয় ডাক্তারের আশার কারণে শহরের ডাক্তার দেখানো হচ্ছিলনা। পরবর্তীতে ফেনী শহরের ডা: ইকবাল (জানিনা এখনো বেচে আছেন কিনা; কারণ খুবই বয়স্ক ছিল ১৯৯৮সালের কথা)। উনি ২/৩টা টেস্ট দিলেন আর সামান্য ওষুধ, আলহামদুলিল্লাহ দিনে দিনে শরীরের অবস্থার পরিবর্তন হল। ১সপ্তাহের মধ্যে পুরোপুরি সুস্থ হয়ে গেলাম। ডাক্তারের সাথে দেখা করার খুব ইচ্ছে ছিল কিন্তু সময়ের কারণে করা হয়ে উঠেনি।
আল্লাহর দরবারে শুকরিয়া আমাদেরকে রোগ থেকে মুক্ত হওয়ার সুযোগ দিয়েছেন। সাথে সাথে দোয়া করি যাতে কাল আখিরাতেও জাহান্নাম থেকে মুক্তি দান করেন, আমিন।
২৪ সেপ্টেম্বর ২০১৪ দুপুর ০৩:১০
211966
নজরুল ইসলাম টিপু লিখেছেন : আমার জন্য আপনার দোয়া পাথেয়, আল্লাহ কবুল করুন। আল্লাহ আপনাকে সর্বত্র অগনিত কল্যান দানে বাধিত করুন। ১৯৯৬ সালে আমার এক বন্ধুর বউয়ের টাইফয়েড হযেছিল, শুরুতে্ই ধরা পড়েছিল, দুই সপ্তাহে ভাল হতে দেখেছি। আমাদের সময় টাইফয়েড হলে বেশীর ভাগ মানুষ মারা যেত। শুধুমাত্র লক্ষণ দেখে রোগ নির্ণয় করতে হত। আমারটাও নতুন ধরনের মারাত্মক টাইফয়েড ছিল। আল্লাহ আমাদের রহম করেছেন। অনেক ধন্যবাদ।
১৩
269097
২৭ সেপ্টেম্বর ২০১৪ সকাল ১১:৫০
নেহায়েৎ লিখেছেন : আপনার লেখাগুলো পড়ে মজা পাই রোমাঞ্চকর অনুভূতি হয়। কিন্তু এই লেখাটা সম্পুর্ণ ব্যতিক্রম। কিছু কিছু বিখ্যাত ব্যাক্তির আত্মজীবনী পড়েছি কিছু কিছু জায়গায় মনে হয়েছে বানোয়াট। কিন্তু মানুষের জীবন এমন উপন্যসের মতো হতে পারে, সত্যিই আশ্চর্য। আল্লাহ তা'আলা আপনার হায়াত দীর্ঘায়িত করুন। কোথা থেকে ফিরে এসে আল্লাহর রহমতে এখনও সম্পুর্ণ সুস্থভাবে বেঁচে আছেন। আপনার আত্মজীবনী কখনও লিখলে, যদি না জানতে পারি আ্পনি স্মরণ করে আমাকে একটা হাদিয়া (গিফট) দিয়েন। আল্লাহ ভাল জানেন মনে হচ্ছে পড়ার মতো একটা বই হবে। আমার জন্য দু'আ করবেন।
২৭ সেপ্টেম্বর ২০১৪ দুপুর ১২:১২
212864
নজরুল ইসলাম টিপু লিখেছেন : আল্লাহ আপনাকে রহম করবেন। আসলে আমি খুবই ক্ষুদ্র একজন মানুষ, আত্মজীবনি লিখলে মানুষকে বিনামূল্যে বই বিতরন করে পড়ার জন্য পিছনে লেগে থাকতে হবে। তাই সে ধরনের কোন দুঃসাহসের পরিকল্পনা নেই।

তারপরও লিখাগুলো এ কারণেই লিখছি যে, আমাদের সমাজে জ্বিন, ভুত, তাবিজ, কবজ নিয় প্রচুর মানুষ ঠকে, কেউ ভাগ্য বদলাতে এসবের শরণাপন্ন হয়। অথচ তারা ভিতরের কিছু জানেনা। আমি একজন চাক্ষুস ব্যক্তি হিসেবে এসব লিখলে অনেকে সচেতন হবার সুযোগ পাবে।

তবে লিখাটি যখন শেষ হবে, তখন আপনার নিকট একটি পি, ডি, এফ ভার্ষন পাঠাতে পারব। ধন্যবাদ।

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File