তথ্য-উপাত্তের আলোতে, জ্বিনের প্রকৃত পরিচয়! এক পিকুলিয়ার মানুষ, পর্ব-২৬ (রোমাঞ্চকর কাহিনী)

লিখেছেন লিখেছেন নজরুল ইসলাম টিপু ১৬ সেপ্টেম্বর, ২০১৪, ০৩:৫৯:৫১ দুপুর



সকল মুসলমান জ্বিনে বিশ্বাসী। কোরআনের সকল কথাকে বিশ্বাস করতে হয় বলে, জ্বিন নামের একটি সৃষ্ট সম্প্রদায় আছে বলে বিশ্বাস করতে হয়। কেননা জ্বিন থাকার কথা কোরআনে বলা হয়েছে। এমনকি মোহাম্মাদ (সাঃ) সহ দুনিয়ার সকল নবীদের সাথে জ্বিনদের সাক্ষাত হয়েছে। পবিত্র কোরআনে একটি পরিচ্ছেদ আছে, যার নাম জ্বিন।

মুসলমানেরা জ্বিনে বিশ্বাস করলেও কিছু অন্য ধর্ম বিশ্বাসীরা চোখের সামনে ঘটা অতি প্রাকৃতিক ব্যাপারটি কে ভূতের কারসাজি বলে চালিয়ে দেয়! তারা ভূতকে বিশ্বাস করে, স্বপক্ষে যুক্তি হাজিরের চেষ্টা করে কিংবা অভিজ্ঞতার আলোকে বর্ণনা দেয়। আরেক দল ভুতকে বিশ্বাস করেনা বরং নিজের চোখে না দেখা পর্যন্ত কোন অস্তিত্বকে তারা স্বীকারই করতে চায়না! তারা সবকিছু বৈজ্ঞানিক যুক্তি দিয়ে বুঝতে চায়! ভূতের ঘটনাকে ব্যাখা দিতে বৈজ্ঞানিক যুক্তি হাতড়াতে থাকে। ইসলামের দৃষ্টিভঙ্গিতে এই দুই দলই বিভ্রান্ত। ইসলামের ব্যাখায় যারা ভুত নামক যে কিছু একটা দেখেছে সেটাই হল জ্বিন। আল্লাহর সকল সৃষ্টি ও উপাত্তকে মানুষ দেখতে পায়না, দেখা সম্ভবও নয় কিন্তু বিশ্বাস করতে হয়। যেমন, চুম্বকের ক্ষমতা, কম্পনের শক্তি, বায়ুর প্রচণ্ড গতি এসব চর্ম চোখে দেখা না গেলেও, আধুনিক বিজ্ঞান জন্মাবার বহু আগে থেকেই মানুষ তা বিশ্বাস করে এসেছে। পরবর্তীতে এসবের বস্তু-নির্ভর ব্যাখা পাওয়া গিয়েছে। তবে, কোরআনের ভাষায়, তা চোখে দেখা যাক কিংবা দেখা না যাক, সেটার বর্তমান কোন বৈজ্ঞানিক ভিত্তি থাক বা না থাক; কোন প্রকার সন্দেহ, সংশয় ব্যতিরেকে তা বিশ্বাস করতে হবে। কেননা আল্লাহর পাঠানো কিতাব কোরআনে তা দাবী করা হয়েছে। কোরআন দাবী করে যে, তার কাছে যত তথ্য ও কথা আছে তা নিঃসন্দেহে শতভাগ সত্য ও নিরেট। ইতি-পূর্বেকার দুইটি অধ্যায়ে আমি বিস্তারিত লিখেছি যে, স্বচক্ষে জ্বিন-ভুত দেখার জন্য আমি কত প্রচেষ্টাই করেছি! প্রকৃত সত্য কথা হল, আমি আমার নিজের চর্ম চোখে কোনদিন জ্বিন-ভুত দেখিনি! উপরের এগুলো সহ, আরো বহু প্রচেষ্টা বার বার ব্যর্থ হয়েছে, যার সব কাহিনীগুলো এই প্রবন্ধে তুলে আনা হয়নি।

অভিজ্ঞতার আলোকে আমি বারবার এসব দেখতে ব্যর্থ হয়েছি এবং দেখার মত স্থান ও পরিবেশে বারবার হানা দিয়েছি! বিজ্ঞানের ছাত্র হিসেবে জ্বিন নিয়ে বিজ্ঞান মনষ্ক প্রকৃত কোন ব্যাখা আমার কাছে নাই। তারপরও আমি দৃঢ় ভাবে এই ঘোষণা দিতে পারছিনা যে, ‘জ্বিন বলতে কিছু নাই’। সর্বোপরি এক কথায় বলতে গেলে, আমাকে বলতে হয়। ‘জ্বিন বলে যে একটা জাতি আছে, সেটা সত্যিই আমি বিশ্বাস করি’! কেননা আমি মুসলমান আর এটা কোরআনে দাবী করা হয়েছে। হয়ত জ্বিনকে দেখতে পারার মত জৈবিক শক্তি মানুষের নাই, যেভাবে মানুষের সামনে দিয়ে চলে যাওয়া রঞ্জন রশ্মি, মানুষ দেখতে পারেনা কিন্তু তার ভয়াবহতা মানুষ উপলব্ধি করে! ইসলামী ইতিহাসে জ্বিন নিয়ে অনেক কাহিনী আছে, বহু বই লিখিত হয়েছে। তার প্রায় সকল গুরুত্বপূর্ণ বইগুলো আমি অধ্যয়ন করেছি। এরই আলোকে আমি একটি সারসংক্ষেপ ও দাঁড় করিয়েছি। যা নিচে উপস্থাপিত হল, এই প্রতিবেদন টি যেহেতু অধ্যয়ন করে লিখা, সেহেতু অনেকের মনে লুকায়িত প্রশ্নের জওয়াব দিতে পারবনা। তবে যারা না দেখে জ্বিন ও ফেরেশতাকে বিশ্বাস করে, তাদের জন্য এই পোষ্টটি বড় উপকারী হতে পারে।

আবদুল্লাহ ইবনে ওমর (রাঃ) বলেন, জ্বিন জাতিকে সৃষ্টি করা হয়েছে, মানবজাতির আদি পিতা ‘আদম’ (আঃ) এর সৃষ্টির দুই হাজার বছর আগে। তখন পৃথিবীর অধিবাসী জ্বিন এবং আসমানের অধিবাসী ছিল ফেরেশতারা। ‘জ্বিনকে সৃষ্টি করা হয়েছ আগুনের ‘লু’ অংশ হতে’ (অত্যন্ত সূক্ষ্ম অত্যুষ্ণ বায়ু) আল-হিজর-২৭। আবার অন্যত্র বলা হয়েছে ‘জ্বিনকে সৃষ্টি করা হয়েছে বিশুদ্ধ (ধোঁয়াহীন) আগুনের শিখা থেকে’, আর রাহমান-১৫। জ্বিনকে পুরো আগুন থেকে নয় বরং তার অংশবিশেষ থেকেই সৃষ্ট! তাই যে আগুন দিয়ে দুনিয়ার জিনিষপত্র জ্বালানো হয়, জ্বিনের আগুন দিয়ে সে কাজ করা যায় না। ইবনে আব্বাস (রা) বলেন, জ্বিন জাতির আদি পিতা ‘সামূম’ কে সৃষ্টি করে, আল্লাহ তার আখাঙ্ক্ষার কথা জানতে চান। তখনে সে দোয়া করেছিল যে, ‘দুনিয়ায় সবাইকে জ্বিনেরা দেখবে কিন্তু তারা সবার দৃষ্টিতে অদৃশ্য থাকবে এবং তার বংশধর বয়সে বৃদ্ধ হলেও যেন যুবক থাকে’। যার কারণে জ্বিনেরা মারা গেলেও মানুষের কাছে অদৃশ্যই থেকে যায়।

জ্বিনেরাও মানুষের মত সমাজ সংসার করে। তারাও আহার করে নিদ্রা যায়। তাদের মাঝেও বিভিন্ন সামাজিক অনুষ্ঠান আছে। তাদের মাঝে মারামারি, হানাহানি, সংঘাত, সংঘর্ষ হয়। পৃথিবীর প্রতিনিধিত্ব থেকে জ্বিন জাতিকে বিদায় করে মানব জাতীকে স্থলাভিষিক্ত করা হয়েছিল, জ্বিনদের এই কাজের কারণে। যে সব জ্বিন বেঁচে আছে তাদের অধিকাংশের মাঝে এখনও সেই হানাহানি বিদ্যমান। পৃথিবীতে মানবজাতিকে শান্তিতে বসবাস করতে দিতে জ্বিনেরা মাটির গর্ত, পাহাড়, জঙ্গল, নদী, সমুদ্র, অব্যবহৃত জলাশয় সহ মানুষ কর্তৃক অনাবাদী সকল স্থানেই বসবাস করে। তবে স্থান নির্বাচনের ক্ষেত্রে মানুষের অধিকার আগে থাকে। তাই মানবজাতি কোন একটি স্থানে বসতি গড়ে তুললে জ্বিনদের কে সে স্থান ত্যাগ করতে হয়। জ্বিনেরা সে স্থান ছেড়ে দিতে বাধ্য। কোন স্থানে বহুকাল ধরে জ্বিনেরা বসতি করে আসছিল এমন পতিত ভূমি কদাচিৎ মানুষ দখল করে নেয়। এতে মানুষ কর্তৃক অদৃশ্য জ্বিনেরা ক্ষতিগ্রস্ত হয়। ফলে ক্ষতিগ্রস্ত জ্বিন ক্ষিপ্ত হয়ে মানুষের উপর আক্রমণ করে বসে। মানুষের উপর এই আক্রমণের প্রকাশ ঘটে মানব সন্তানের উদ্ভট ও উদ্ভূত আচরণের মাধ্যমে। তখনই মানুষ আর জ্বিনদের মাঝে শলা পরামর্শ করে একটি সিদ্ধান্তে আসার প্রয়োজন হয়।

এ ধরনের সংঘাত নিরসনের উপায় হল, মানুষ যখন কোন পতিত ভূমিকে কাজে লাগাতে চায়, সে যেন তিন বার গিয়ে সেখানে ঘোষণা দিয়ে আসে যে, এই সম্পত্তির এটাকে আবাদ করতে চায়। কোন জ্বিন যদি সেখানে থাকে তাহলে যেন জায়গা ছেড়ে দেয় নতুবা কারো ক্ষতি হলে জায়গার মালিক দায়বদ্ধ নয়। রাসুল (সাঃ) ঘোষণা দিয়েছিলেন যে, মদিনার আশে পাশে সকল জ্বিন মুসলমান হয়েছে। সুতরাং তারা যদি তোমাদের প্রতিবন্ধক হয়, তাহলে নিবৃত হতে তিন বার সময় দেবে অতঃপর হত্যা করতে পার। আল্লামা জালালুদ্দীন সুয়তী (রাঃ) তাঁর বইতে এ জাতীয় বহু ঘটনার দৃষ্টান্ত টেনেছেন যে, মানুষ নিজেদের অজান্তে জ্বিন হত্যা করার কারণে তারা ক্ষিপ্ত হয়ে মানুষের ক্ষতি করছে। রাসুলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন, অনেক সাপও জ্বিন অর্থাৎ জ্বিনদের মাঝে অনেকে সাপের আকৃতিতে থাকে। সে কারণে কারো ঘরে সাপ ঢুকলে তাদেরকে আগে বের হয়ে যাবার জন্য হুকুম দিতে হবে, সুযোগ দিতে হবে। তারপরও যদি সে অবস্থান করে তাহলেই হত্যা করার সিদ্ধান্ত নিতে হবে।

কোন মানুষের উপর যখন জ্বিন ভর করে, তখন তার আচরণ বদলে যায়। পুরোপুরি পাগল নয়, তবে হালকা পাগলামির সাথে ক্ষিপ্ত আচরণ করে। মূলত এটা জ্বিনদেরই খাসিয়ত, যা মানব সন্তানের দ্বারা প্রকাশ পায়। জ্বিন মানুষের মন দখল করে নেয়। ফলে মানুষের মুখ দিয়ে জ্বিন কথা বলে, মানুষের চোখ দিয়ে জ্বিন দেখতে থাকে। জ্বিনে আক্রান্ত রোগীকে পেটালে মানব সন্তান কষ্ট পায় বটে সাথে সাথে তার উপর ভর করা জ্বিনও সেই বেত্রাঘাতের ব্যথা অনুভব করে। সে মুহূর্তে যদি মানব সন্তান মারা যায়, তাহলে জ্বিনও মারা যাবে। সে কারণে জ্বিন মানুষটাকে বাঁচাতে চেষ্টা করে। জ্বিন চলে গেলে মানুষটি মনে করতে পারেনা যে, কিছুক্ষণ আগে সে কত ধরনের হাস্যকর ও লজ্জাজনক কাজ করেছিল। কদাচিৎ হঠকারী জ্বিন কোন মানুষের উপর ভর করে একটি বিপদজনক স্থানে নিয়ে যায়। সেখানে তাকে পৌছিয়ে জ্বিন পালিয়ে যায়। ফলে হুশ আসার পর মানব সন্তান নিজেই বুঝতে পারেনা, যে একটি সোজা গাছ বেয়ে উঠতে পারেনা আর সে কিনা আজ ইলেকট্রিকের তেলতেলে পিলার বেয়ে উপরে বসে আছে!

জ্বিনেরা মানুষের মত ভারী কাজ করতে পারে। সোলায়মান (আঃ) তাদের দিয়ে ভারী কাজ করিয়েছেন। জ্বিন কখনও মানব সন্তানকে অপহরণ করেও নিয়ে যায়। জ্বিনের এত ক্ষমতা থাকলেও, জ্ঞান ও প্রজ্ঞায় তারা মানুষের গণ্ডির কাছাকাছিও নয়। সোলায়মান (আঃ) ইয়েমেন থেকে রানী বিলকিসের সিংহাসন আনতে মনস্থ করেছিলেন। তিনি এক জ্বিনকে প্রশ্ন করলে পর জ্বিন যে সময় কামনা করে, তাতে করে সিংহাসন আসার আগেই রানী বায়তুল মাকদাসে চলে আসবেন। প্রত্যহ সোলায়মান (আঃ) এর কথা শুনতে আসা এক ব্যক্তি প্রশ্ন করলেন: সিংহাসন কখন আনতে হবে এবং কোথায় রাখতে হবে, বলেই তিনি মুহূর্তে তা নিয়ে আসেন! জ্বিনের চেয়েও মানুষ যে, বেশী ক্ষমতার অধিকারী এটার দ্বারা সে কথাই প্রমাণিত হয়। আর আল্লাহ বুঝিয়ে দিয়েছেন যে, প্রতিটি মানুষকে অপূর্ব ক্ষমতার অধিকারী করে দুনিয়ায় পাঠানো হয়েছে কিন্তু মানুষ সে ব্যাপারে গাফেল। না সে নিজেকে চিনতে পেরেছে না সে তার স্রষ্টা প্রভুকে বুঝতে পেরেছে।

জাবির ইবনে আবদুল্লাহ (রা) বলেছেন, একদা আমি রাসুল (সাঃ) সাথে ছিলাম। এমন সময় একটি সাপ রাসুল (সাঃ) এর পাশে এসে থামল। আমি সাপটিকে রাসুল (সাঃ) এর আরো কাছাকাছি আসতে সাহায্য করলাম। রাসুল (সাঃ) তাকে ঠিক আছে, ঠিক আছে, কথা গুলো বলার পর সাপটি সে স্থান ত্যাগ করল। পরবর্তীতে আমি রাসুল (সাঃ) প্রশ্ন করলাম, আপনার এই কথার হেতু কি? রাসুল (সাঃ) জানালেন এই সাপটি একটি জ্বিন! সে একটি দাবী নিয়ে এসেছিল যে, আমি যাতে উম্মতদের বলে দেই। তারা যাতে গোবর ও হাড় সমূহকে এস্তেঞ্জা তথা পায়খানা-প্রস্রাব সংঘটিত কাজ থেকে দূরে রাখে, কেননা এটা তাদের খাদ্য।

এভাবে বিভিন্ন অভিযোগ, সমস্যার সমাধান জানতে জ্বিনেরা রাসুল (সাঃ) এর কাছে আসত। জ্বিনদের মধ্য সংঘটিত বহু কালের পুরানা দাঙ্গা রাসুল (সাঃ) বন্ধ করেছিলেন। জ্বিনেরা মানুষের চেয়ে বেশী বাঁচে এবং বহু বছর হায়াত পাবার প্রমাণ পাওয়া যায়। তায়েফ থেকে মক্কায় আসার পথে, একটি এলাকার পাশ দিয়ে উড়ন্ত জ্বিনের একটি দল চলে যাবার সময় নামাজে তেলাওয়াত রত কোরআনের আয়াত শুনতে পায়। তারা তাদের বসতিতে গিয়ে খবর জানায়, আমরা আজকে এমন এক আজিব কিতাবের কথা শুনলাম যা আমরা মুসা (আঃ) এর কিতাবে শুনতে পেয়েছিলাম। মক্কার সন্নিকটে সে জায়গায় এখন একটি মসজিদ প্রতিষ্ঠিত হয়েছে, যার নাম মসজিদে জ্বিন।

ইসলাম পরবর্তী যুগেও জ্বিনেরা ইসলামের ইমাম, মুহাদ্দিস, আলেম, শায়খ থেকে শরীয়তের বিভিন্ন নিয়ম কানুন জানতে সরাসরি যোগাযোগ করত। ফলে জ্বিনদের মাঝেও শিয়া, সুন্নি, মোতাজেলা মতবাদের বিস্তার দেখা যায়। জ্বিনদের মাঝে রাসুলুল্লাহ (সাঃ) এর সাহাবী যেমন রয়েছে, তেমনি আলেম রয়েছে, শহীদ আছে, কোরআনের হাফেজ আছে, হাদিসের শিক্ষক আছে। আবার মানুষের মত চোর আছে, যাদুকর আছে, মিথ্যুক আছে, খুনি আছে। জ্বিনদের সংখ্যা মানুষের চেয়ে নয়গুণ বেশী, তবে সত্য ধর্ম পালনকারী জ্বিনের সংখ্যা অনেক কম। পথভ্রষ্ট জ্বিনের সংখ্যাই সবচেয়ে বেশী।

আল্লামা জালালুদ্দীন সুয়তি (রহঃ) তাঁর গ্রন্থে এ সবের বহু প্রামাণ্য উদাহরণ টেনেছেন। বুদ্ধিমত্তায় জ্বিনেরা মানুষের চেয়ে অগ্রগামী নয়। মানুষের ইচ্ছা আখাঙ্ক্ষা, অভিলাষ, প্রয়োজন, মেজাজ, চাহিদা, লোভ, খাদ্য গ্রহণের প্রকৃতির সাথে জ্বিন জাতীর কোন মিল নেই। মানুষ মুহূর্তে পুরো পৃথিবী উড়তে চায়, চোখের পলকে দিগন্তে চলে যেতে চায়, পাতাল ফুঁড়ে রত্ম আনতে চায়, মেঘের উপরে ভেসে দুনিয়ার সৌন্দর্য উপভোগ করতে চায়। আবার সিসিটিভি হয়ে পিছনে লেগে থাকতে চায়, অদৃশ্য থেকে শত্রুর গালে চপেটাঘাত করতে চায়। এ সবই মানুষের জন্য কল্পনা কিন্তু জ্বিনের জন্য মুহূর্তের সিদ্ধান্ত মাত্র। অপ্রাপ্তিতে মানুষ যেমন দুনিয়ার জীবনে হতাশ, অসম্ভব ধরনের শক্তি প্রাপ্তিতেও জ্বিনেরা হতাশ। কেননা দুই সৃষ্টির প্রয়োজনীয়তা ও চাহিদা ভিন্ন বলে মানুষের কাছে যেটা মূল্যবান জ্বিনের জন্য সেটা তুচ্ছ আর জ্বিনের জন্য যেটা মূল্যবান মানুষের জন্য সেটা তুচ্ছ। যেমন গোবর, হাঁড় ইত্যাদি।

বস্তুগত সৃষ্টির মাঝে কোন জিনিষটি মানুষের জন্য কল্যাণকর, কোনটি মানুষের জন্য অকল্যাণকর জ্বিনেরা সেটা মানুষের চেয়ে বেশী বুঝে। আর বেশী বুঝে বলেই, মানুষকে অকল্যাণে নিমজ্জিত রাখতে সে সদা ব্যস্ত থাকে। জ্বিনেরা যেমন বাতাসে ঘূর্ণায়মান ভাইরাসের জীবাণুগুলো দেখতে পায়, সেভাবে মাটিতে চেপে থাকা লুকানো জিনিষ গুলো সে দেখতে পায়। এগুলো মানুষের কাজে আসে বলে তাদের আগ্রহ থাকেনা। যেমন স্বর্ণ মানুষের কাছে খুবই দামী কিন্তু বাতাসের মত সৃষ্ট জ্বিনের কাছে এই স্বর্ণ কোন কাজে আসে না। এখানে তথ্যটা গুরুত্বপূর্ণ নয়, প্রয়োজন বুঝাটাই মূল্যবান। যেমন, কেঁচোর জন্য নূতন মাটি উপাদেয়। এই তথ্যে মানুষের কি আগ্রহ থাকতে পারে? সোলায়মান (আঃ) বায়তুল মোকাদ্দাসের বড় পাথর কাটা, উত্তোলন করা সহ নানাবিধ জটিল কাজের সমাধানের জন্য, জ্বিনদের প্রশ্ন করলে, তারা জানায় সমুদ্রে অবস্থান কারী এক জ্বিন সর্দার এই কাজে পারদর্শী। সেই জ্বিনকে সংবাদ দেওয়ার পরও যখন সে আসে নাই, তখন তাকে গ্রেফতার করে আনা হচ্ছিল। এক বাজারের উপর দিয়ে তাকে যখন নিয়ে যাওয়া হচ্ছিল তখন সে দেখল, এক ব্যক্তি রসুন বিক্রি করে পিয়াজ কিনছে! এটা দেখে সে হাসল। বাজারের শেষ দিকে এক গণক মানুষের ভাগ্য গণনা করছে, সেটা দেখেও হাসল। সোলায়মান (আঃ) দরবারে তার হাঁসার কারণ জানতে চাইলে জ্বিন সর্দার বলল, ব্যবসায়ী টির বোকামী দেখে হাসছিলাম, কেননা সে ঔষধ বিক্রি করে রোগ কিনে নিচ্ছিল অর্থাৎ রসুন বিক্রি করে পিয়াজ কিনছিল! আর সে গণক, যে স্থানে বসে মানুষের ভাগ্য গণনা করছিল, সে জানেনা যে তার বসে থাকা জায়গার নীচেই গুপ্তধন লুকিয়ে আছে! সে তার আপন ভাগ্য গণনা করে, ভাগ্যবান হতে পারছে না!

জ্বিনেরা মানুষকে সেভাবে ভয় পায়, যেভাবে মানুষ জ্বিনকে ভয় পায়। মানুষ যে কাজ বুদ্ধিমত্তা দিয়ে করতে চায়, জ্বিনেরা সে কাজ চালাকি দিয়ে করতে চায়। পৃথিবীর জীবনে জ্বিনেরা কোনদিনই মানুষকে ভাল চোখে দেখে না। কেননা এই মানব জাতির কারণেই তাদেরকে যাযাবরের মত বাস করতে হয়। তার উপর অধিকারের ক্ষেত্রে সর্বদা মানব জাতি প্রাধান্য পায়। সে জন্য প্রায় বেশীর ভাগ জ্বিন মানুষের কল্যাণ কামী হয়না। আল্লার পথে চলা মানুষকে জ্বিন কাবু করতে পারেনা। বিশ্বাস ও আমলের কারণে মুমিন দেরকে জ্বিন কোন অবস্থায় কাবু করতে পারেনা। সেখানে মুত্তাকী, মুহসীন বান্দা হলে তো কথাই নেই। সে জন্য মুত্তাকি-মুহসীন বান্দারা এমনিতেই ধমক দিলে রোগী থেকে জ্বিন পালিয়ে যায়। সকল প্রকার সৎকর্ম শীল নারীই জ্বিনের চোখের শত্রু। এক সৎকর্ম শীল নারীর কারণে কোন জ্বিন কারো বাড়িতে সুযোগ করতে পারেনা। ওমর (রাঃ) যে পথ দিয়ে চলতেন, সে পথে শয়তান চলত না। তিনি কদাচিৎ জ্বিনে আক্রান্ত রোগীর পাশ দিয়ে হেঁটে গেলে, জ্বিন এমনিতেই ভয়ে রোগী ছেড়ে পালিয়ে যেত।

মানুষের অব্যবহৃত ও পরিত্যক্ত ঘরে জ্বিন আশ্রয় নেয়। যে বাড়ীতে অনেকগুলো কক্ষ আছে কিন্তু সেগুলো তেমন ব্যবহার হয়না সেখানে দুষ্ট ও কুমতলবি জ্বিন অবস্থান করে। সেজন্য রাসুল (সাঃ) মানুষের বাড়ীতে বানানো অতিরিক্ত অব্যবহৃত কক্ষগুলোকে জ্বিনের থাকার ঘর বলেছেন। ভুক্তভোগী অনেকে বলে থাকেন, রাত-বিরাতে অবহৃত কক্ষে গেলে মানুষের শরীর চম চম করে। মানুষের নিজস্ব পায়খানা ঘরটি হল জ্বিন আশ্রয়ের উত্তম স্থান! পায়খানায় গেলে রাজ্যের ভিন্ন চিন্তা মাথায় আসে, মেজাজি মানুষের কণ্ঠেও সূর আসে। মানুষের মনে খারাপ চিন্তা সৃষ্টি করে দেবার প্রধান কার্যালয় হল নিজের হাতে বানানো টয়লেট খানা। সে জন্য ইসলাম বাড়ী থেকে বের হাবার সময় যেমন দোয়া পড়তে বলেছে বাড়ীতে ঢোকার জন্যও দোয়া পড়া অবশ্য কর্তব্য করেছে। সেভাবে টয়লেটে আসা-যাওয়ার জন্যও দোয়া পড়াকে অপরিহার্য করেছে। এসব দোয়ার কল্যাণে সেখানে কিছু ফেরেশতা নিরাপত্তায় নিয়োজিত হয়ে পড়ে ফলে জ্বিন-শয়তান সেখানে থাকার সুযোগ নিতে পারেনা কিংবা টয়লেটে বসে কু-মতলব আসার সুযোগ থাকবেনা।

অবৈধ সম্পর্ক তো বাদ এমনকি স্বামী-স্ত্রী বৈধ মিলনের সময়ও জ্বিন একই কাজে অংশ গ্রহণ করে বসে! সেখানেও দোয়া পড়াকে বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। দোয়া না পড়লে সেখানে জ্বিন সুযোগ নেয় এবং স্বামীর সাথে সে একই স্থানে একই কর্মে জড়িয়ে পড়ে। এই কর্মের মাধ্যমে পয়দা হওয়া সন্তান গুলোকে ইসলামী পরিভাষায় ‘খান্নাস’ বলে। যাদের ইঙ্গিত সূরা নাসে বলা হয়েছে। মানুষের বংশধর এ সমস্ত খান্নাস ও ব্যক্তি জীবনে শয়তানের পদাঙ্ক অনুসরণে অগ্রগামী হয়! রাসুল (সাঃ) কঠোর ভাবে নিষেধ করেছেন যে, তোমরা মহিলাদের ঋতুর সময় কাছে কাছেও যাবেনা। ঋতু কালে মহিলাদের সাথে সহবাস করলে জ্বিন-শয়তান পুরো মাত্রায় অংশ গ্রহণ করে। নারী যেহেতু অপবিত্র থাকে সে অবস্থায় দোয়া করা কাম্য নয়। ফলে তার কাছে যে সন্তান আসবে সে, ‘হিজরা’ হয়ে দুনিয়াতে ভূমিষ্ঠ হয়!

কিছু মানুষ ভেবে থাকে যে, জ্বিনের মানুষের চেয়েও প্রজ্ঞাবান। তাই জ্বিনের কাছে ভবিষ্যৎ কিংবা অতীত নিয়ে জানতে চায়। কোন জ্বিনের বয়স যদি বেশী হয়, তাকে অতীতের কোন কথা জিজ্ঞাসা করলে হয়ত সদুত্তর দিতে পারবে। কিন্তু জ্বিনেরা ভবিষ্যৎ সম্পর্কে কোন জ্ঞান রাখে না। এমনকি তথ্য তালাশ না করলে উপস্থিত জিনিষ সম্পর্কে সম্যক ধারনা দিতে পারেনা। এই ব্যাপারে মানুষ আর জ্বিনের মাঝে কোন পার্থক্য নাই। তবে জ্বিন সুনির্দিষ্ট তথ্য তালাশ করলে উপস্থিত কিছু বলতে পারে এমনকি উপস্থিত একজন মানুষের মনে এই মুহূর্তে কি ঘুরপাক খাচ্ছে তা সে বলতে পারে। তাই বলে সেই মানুষটি আগামী কাল কি মনে করে থাকতে পারে সেটা সে বুঝতে পারেনা। তাকে আগে পরিকল্পনা করতে হয় যে, ঐ ব্যক্তি সম্পর্কে তার কি জানা উচিত! একদা হাজ্জাজ বিন ইউসুফের সামনে জ্বিনে আছর গ্রস্থ এক ব্যক্তিকে যাদুকর বলে গ্রেফতার করে আনা হয়। হাজ্জাজ প্রশ্ন করল তুমি কি যাদুকর! সে অস্বীকার করল। অতঃপর হাজ্জাজ লুকিয়ে গুনতি করে কয়েকটি পাথরের টুকরা হাতে নিয়ে প্রশ্ন করল: এখানে কতগুলো টুকরা। যে যথাযথ বলে দিল! হাজ্জাজ এবার না গুনেই কিছু পাথর হাতে নিয়ে বলল এবার বল এখানে কতগুলো পাথর? ব্যক্তিটি কোন উত্তর দিতে পারল না। হাজ্জাজ নিজেই প্রশ্ন করল কেন বলতে পারলে না? তখন লোকটি বলল এর আগে যখন গুনতি করছিলেন তখন সঠিক সংখ্যা ও তথ্য আপনার অন্তরে ছিল, আমি সেখান থেকে পড়তে পেরেছি, এখন গুনেন নাই তাই আমিও সঠিক তথ্য পাই নাই, ফলে উত্তর দিতে পারি নাই। আবার সোলায়মান (আঃ) মারা যাবার পরে দীর্ঘদিন মৃত লাশটি হাতের ছড়ির উপর নির্ভর করে দাঁড়িয়েছিল। এতে করে জ্বিনেরা তার দাঁড়ানো প্রতিকৃত কে জীবন্ত ভেবে অনর্গল কাজ করে গেছে। জ্বিনেরা যেহেতু তাঁর শরীর পর্যবেক্ষণ করতে যায়নি তাই তারা বুঝতে পারেনি যে তিনি মৃত। আবার তাঁর দাঁড়ানো শরীর দেখে তারা বুঝতেই পারেনি যে, তিনি আর দেহ কাঠামোর মাঝে জীবিত নাই বরং বহুদিন আগেই মারা গিয়েছেন! তাছাড়া মুত্তাকী-মুহসিন দের মনের খবর নেওয়া জ্বীনদের পক্ষে সম্ভব হয়না, তাই মুহসিন নবী সোলায়মান (আঃ) মনের খবরও নিতে পারেনি।

রাসুল (সাঃ) কুকুর, সাপ ও উট কে জ্বিন সম্প্রদায়ের অন্তর্ভুক্ত বলে ঘোষণা করেছেন। আমরা জানি জ্বিন তো আগুন থেকে সৃষ্ট আর উপরোক্ত প্রাণী মাটি থেকে সৃষ্ট। ইসলামী ইতিহাসের বেশীরভাগ চিন্তাবিদ এই কথায় একমত যে, রাসুল (সাঃ) এগুলো উপমা হিসেবে ব্যবহার করেছেন। যেমন, কুকুরের কিছু বদ স্বভাব রয়েছে, যথা- গোত্রে গোত্রে হানাহানি, হিংসা, বিদ্বেষ, দখলদারিত্ব, লোভ ইত্যাদি। জ্বিনেরা এই স্বভাবের কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। সাপের রয়েছে বিষাক্ত হিংস্রতা, আক্রান্ত হলে নিজেও আক্রমণ করে, নতুবা নিজের গায়ে পড়ে আক্রমণ করেনা। এই প্রবণতা জ্বিনদের মাঝেও বিদ্যমান। উট বৈরী পরিবেশে বেড়ে উঠে, প্রতিকুল পরিবেশে বেঁচে থাকে, প্রচণ্ড শারীরিক পরিশ্রমেও কাবু হয়না, আকলের দিক থেকেও বুদ্ধিহীন। উটের সকল অভ্যাস ও খাসিয়ত গুলো জ্বিনের মাঝে বিদ্যমান। সোলায়মান (আঃ) জ্বিনদের দিয়ে অসম্ভব কাজকে সম্ভব করে বায়তুল মোকাদ্দাস মসজিদ তৈরি করেছিলেন, যেটা মানুষ দিয়ে করানো অধিকতর কষ্টকর ছিল।

রাসুল (সাঃ) বলেছেন, তোমরা বাড়ীতে সাদা মোরগ পালন করবে। জ্বিনেরা সাধারণত সাদা মোরগকে ভয় পায়। সাদা মোরগ জ্বিনের অনিষ্ঠটা থেকে গৃহকর্তাকে রক্ষা করে। যখন কল্যাণের ফেরেশতা অভাবী, দুঃখী, বঞ্চিতদের অভাব মোচনের লক্ষ্যে, তাদের সন্ধানে বের হয়; তখন সেসব ফেরেশতাদের দেখা মাত্রই মোরগেরা চিল্লাতে থাকে! যাতে করে তাদের মুনিব এই সংবাদ বুঝতে পারে এবং তখনই যেন আল্লাহর কাছে সাহায্য চায়। কেননা সাহায্য নিয়ে ফেরেশতারা অভাবী মানুষ তালাশ করে ফিরছে। রাসুল (সাঃ) অন্যত্র বলেছেন, যখন গাধাকে ডাকতে দেখবে, বুঝবে সে শয়তান দেখেছে কিংবা শয়তান সেই জনপদে ঘুরঘুর করছে। রাসুল (সাঃ) বাড়ীতে কালো কুকুর পালন করতে নিষেধ করেছেন! কালো কুকুরের উপর খারাপ জ্বিন ভর করে জনপদে দাবড়ে বেড়ায়।

সুপ্রিয় পাঠক! আমি জ্বিন দেখার জন্য সম্ভাব্য কোন প্রচেষ্টা বাকি রাখিনি, তারপরও জ্বিন দেখতে পাইনি! পরবর্তীতে জ্বিন সম্পর্কিত যত গ্রন্থ পেয়েছি সব অধ্যয়ন করেছি। অবশেষে বুঝতে পারলাম এভাবে জ্বিন দেখা যায় না কিংবা জ্বিনের অস্তিত্ব প্রমাণ করাও কঠিন। উপরের বইগুলো অধ্যয়ন করার পরে আরো জানতে পারলাম, জ্বিন যে সব জিনিষকে ভয় পায়, ঘটনাচক্রে সেসব জিনিষ আমার কাছে সর্বদা থাকত। আমি দোয়া পড়তাম, মনে সাহস রাখতাম, অন্তরে কোন ভিন্ন মতলব থাকন না ইত্যাদি। কোন মানুষের কাছে এসব উপাদান আছে জানলে, জ্বিন এমনিতেই তাদের কাছে ঘেঁষতে চায় না। তাছাড়া জ্বিন তো আমার কাছে অগ্রিম কোন ওয়াদাও করে নাই যে, সে আমাকে দেখা দিবে। আমি নিজেই ধারনা করে তাদের পিছনে ঘুরেছিলাম। তবে আমি যে, জ্বিনের একটি সাক্ষাৎ নিয়েছিলাম যা এই সাহিত্যের প্রথম দিকে উল্লেখ করেছি, সেটি প্রকৃতই জ্বিনের সাক্ষাতকার ছিল। এখানে জ্বিন সম্পর্কিত যে সব কাহিনী গুলো বলা হয়েছে, সেগুলো আমার কোন মন্তব্য বা বক্তব্য নয়। অনেক গুলো গ্রন্থ পড়ে পাঠকদের জন্য একটি বিষয়কে বুঝার জন্য সারাংশ তৈরি করেছি মাত্র! যাতে করে পুরো ব্যাপারটিকে একটি প্যাকেট বন্ধী করা যায়।

কোন পাঠক যদি জ্বিন বলতে কিছু নাই, সব ভুয়া এসব লিখে মন্তব্য করেন। তাহলে তাঁর কোন উত্তর আমি দেব না। কেননা পরীক্ষাগারে আমি জ্বিনের অস্তিত্ব প্রমাণ করতে পারব না। বরং সে সব প্রশ্নের উত্তর না দিয়ে, আমি আরেকটি বিষয় নিয়ে অধ্যয়ন করার প্রতি মনোযোগী হওয়াটাকে সেরা কাজ মনে করব। উপরে জ্বিন সম্পর্কে আমি যা লিখেছি, তার সকল গ্রন্থ সূত্র আমার কাছে আছে। সর্বোপরি আমি জ্বিন বিশ্বাস করি, কেননা কোরআনে বলা হয়েছে যে, তা বিশ্বাস করতে।

তারপরও জ্বিনে অবিশ্বাসী পাঠকদের হতাশ করব না, তাদের জন্য একটি সত্য ঘটনার কথা উল্লেখ করব, যা বাংলাদেশের প্রায় সকল দৈনিকে প্রকাশিত হয়েছে। সেখান থেকে যদি আপনাদের কোন উত্তর এসে যায় ভাল, না হলে আমি আপনাদের সাথে তর্কযুদ্ধে জড়াতে ইচ্ছুক নই।

সেই ঘটনাটি নিন্মরূপ:



চতুর্দশ শতাব্দীতে রাজা মুকুট রায়ের রাজধানী ছিল ব্রাহ্মণ নগর। যশোর থেকে বেনাপোলের পথে ১১ কিলোমিটারে সেই ঐতিহাসিক জনপদের বর্তমান নাম ‘লাউজানি’। ব্রাহ্মণ নগরের যে স্থানে রাজপ্রাসাদ ছিল, তার বর্তমান নাম গাজীর দরগাহ। ২০০৭ সালে এখানের একটি জমিতে কুয়েত জয়েন্ট রিলিফ কমিটির অর্থানুকূল্যে আমাল কুয়েত বালিকা মাদ্রাসা ও এতিমখানা স্থাপন করা হয়। ২০ কক্ষবিশিষ্ট দোতলা এই মাদ্রাসা ও এতিমখানার প্রথম তলায় ক্লাসরুম এবং দ্বিতীয় তলা আবাসিক হিসেবে ব্যবহৃত হয়। এই মাদ্রাসাটি চালুর পর পরই একদল জিন দাবি করে, যে জমির ওপর এতিমখানা স্থাপন করা হয়েছে পুরুষানুক্রমে সেই জমির মালিক তারা। তাই এতিমখানাকে এখান থেকে সরিয়ে নিতে হবে। নতুবা তারা ক্ষতি করবে। এতিমখানা কর্তৃপক্ষ প্রথম দিকে জিনদের কথায় গুরুত্ব না দিলে আলামত হিসেবে একদিন এতিমখানা চত্বরে নতুন জাতের চার-পাঁচ শ’ সাপ জড়ো হয়, যা ইতঃপূর্বে কেউ কোনো দিন দেখেনি। পরে জিন পর্যায়ক্রমে ভর করে এতিমখানার বাসিন্দা ১৪ জন বালিকার ওপর। তারা হলো- মোবাশ্বেরা, লাবনী, শম্পা, মমতাজ, রহিমা, লাকি, আনোয়ারা, মিনা, যুঁথি, সাথী, রাবেয়া, পিংকি, তানজিরা ও খাদিজা। পেটব্যথা, মাথাধরা ইত্যাদি ধরনের বিভিন্ন উপসর্গ দেখা দিতে থাকে তাদের। এক পর্যায়ে তারা খুব অসুস্থ হয়ে পড়ে এবং অস্বাভাবিক আচরণ শুরু করে। তারা প্রায়ই খাওয়ার পর সংজ্ঞা হারিয়ে ফেলত......... অনেক লম্বা কাহিনী।



এটি জিনের কারণেই হচ্ছে বলে এলাকায় গুজব ছড়িয়ে পড়ে। বিষয়টি নিশ্চিত হতে গত ১০ অক্টোবর ২০০৯ যশোরের ডিসি একজন ডাক্তার, জেলা প্রশাসনের চারজন পদস্থ কর্মকর্তাকে নিয়ে তদন্ত করেন। ওই দিনও বালিকাদের আচরণে কর্মকর্তারা হতচকিয়ে যান। এরপর এতিমখানাটি সাময়িকভাবে বন্ধ করে দেয়া হয়। বিষয়টি উচ্চতর পরীক্ষা-নিরীক্ষা ও তদন্তের জন্য গতকাল মঙ্গলবার চারজন খ্যাতনামা ডাক্তার আসেন। তারা হলেন- স্কয়ার হাসপাতালের পরিচালক প্রফেসর ডা. মানোয়ার হোসেন, জাতীয় মানসিক ইন্সটিটিউটের পরিচালক প্রফেসর ডা. এম রব্বানী এবং স্কয়ার হাসপাতালের দু’জন কনসালটেন্ট ডা. সরোয়ার আলম ও ডা. তৌহিদুজ্জামান। তাদের সাথে ছিলেন ধানমন্ডি পাকোয়া মসজিদের পেশ ইমাম মাওলানা মোঃ জুলফিকার। জেলা প্রশাসনের পক্ষে ছিলেন ডেপুটি কমিশনার মোঃ মহিবুল হক, এডিসি (শিক্ষা) সেফিনা বেগম, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার জাকির হোসেন খান প্রমুখ।

উপস্থিতিদের মধ্যে একজন মনোবিজ্ঞানী এটাকে মাস হিষ্টিরিয়া বলে মন্তব্য করেছেন। এসব কন্যারা নিজের বাড়ীতে সুস্থ থাকে এতিম খানায় অদ্ভুত আচরণ করে, তাহলে মাস-হিষ্টিরিয়া প্রকোপ শুধু এতিম খানায় আসলেই হবে। তাছাড়া এসব বালিকাদের আচরণ মাস হিষ্টিরিয়া রোগীর মত নয়। রীতিমত পুরুষের মত গালাগালি, খিস্তি খেউর, বিভিন্ন জিনিষ ছুড়ে মারা ইত্যাদি আচরণ করে। এর প্রশ্নের কোন উত্তর দিতে পারেনি। পরবর্তীতে কর্তৃপক্ষ এতিম খানাটি বন্ধ করে দিতে বাধ্য হয়, বালিকারা তাদের পিতামাতার কাছে সুস্থ জীবন কাটাচ্ছে।

এই ঘটনাটি তখনকার সময়ে প্রায় অনেক পত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছিল। আমি নিজেই অনেক সরকারী কর্মকর্তার পদবি সহ নাম উল্লেখ করেছি। আরো সুবিধার্থে তখন কার দৈনিক নয়া দিগন্ত পত্রিকার তারিখ সহ কিছু শিরোনাম নিচে উল্লেখ করলাম।

'যশোরে জমি নিয়ে মানুষ-জিন বিবাদ: এতিমখানা বন্ধ'

শাহাদত হোসেন কাবিল, যশোর অফিস

দৈনিক নয়া দিগন্ত : অক্টোবর ১৩, ২০০৯

'জিনের আছর পড়া ছাত্রীরা বাড়িতে ভালো আছে: যশোর অফিস'

দৈনিক নয়া দিগন্ত : অক্টোবর ১৭, ২০০৯

‘জিনে পাওয়া’ বালিকারা ডাক্তারদের বলল, তোরা কি করতে এসেছিস? যশোর অফিস'

যশোরে জিনের আছরকৃত বালিকারা একপর্যায়ে দুর্বল হয়ে মেঝেতে শুয়ে পড়ে।

নয়া দিগন্ত: ২৮ শে অক্টোবর ২০০৯

বিষয়: বিবিধ

৪৫৩৬ বার পঠিত, ৩৬ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

265843
১৬ সেপ্টেম্বর ২০১৪ বিকাল ০৪:৩০
সুশীল লিখেছেন : ভালো লাগলো। জটিলস লিখেন ভাই আপনি
১৬ সেপ্টেম্বর ২০১৪ বিকাল ০৫:০১
209650
নজরুল ইসলাম টিপু লিখেছেন : বর্তমানে দেশে তো সুশীলেরাই সকল জটিলস এ পারদর্শী! আপনি কেমন সুশীল হলেন তো বুঝলাম না। আপনাদের জন্য জটিল হলে দেশের কি হবে? ধন্যবাদ।
265845
১৬ সেপ্টেম্বর ২০১৪ বিকাল ০৪:৩৮
জুমানা লিখেছেন : অনেক তথ্য জানলাম,আপনপকে অনেক ধন্যবাদ
১৬ সেপ্টেম্বর ২০১৪ বিকাল ০৫:০১
209651
নজরুল ইসলাম টিপু লিখেছেন : আপনাকেও অনেক ধন্যবাদ।
265857
১৬ সেপ্টেম্বর ২০১৪ বিকাল ০৫:১৯
আফরা লিখেছেন : আমি আজকে এটা পড়ব না আগের গুলো শেষ করে নেই তারপর ।তানা হলে মজা পাব না ।
১৬ সেপ্টেম্বর ২০১৪ বিকাল ০৫:২৪
209654
নজরুল ইসলাম টিপু লিখেছেন : ধারাবাহিকতা রক্ষা করে পড়ুন, তাহলে সিদ্ধান্ত পৌছা সম্ভব হবে। অনেক ধন্যবাদ
265859
১৬ সেপ্টেম্বর ২০১৪ বিকাল ০৫:২৮
সালমা লিখেছেন : অনেক ধন্যবাদ
১৬ সেপ্টেম্বর ২০১৪ বিকাল ০৫:৩০
209656
নজরুল ইসলাম টিপু লিখেছেন : আপনাকে অনেক ধন্যবাদ, ভাল থাকুন সুস্থ হয়ে উঠুন।
১৭ সেপ্টেম্বর ২০১৪ সকাল ১১:২৪
209800
গ্যাঞ্জাম খানের খোলা চিঠি লিখেছেন : হেতিনির আবার কি অসুখ অইলো? আপনের তো এই লেহাডা পড়ার দরকার আছিল না। বেডরুমে শুয়ে কানে কানে জ্বিনের কাহিনী হুনার সৌভাগ্য তো একমাত্র আপনারই আছে মেডাম!
১৭ সেপ্টেম্বর ২০১৪ দুপুর ০১:২৬
209822
নজরুল ইসলাম টিপু লিখেছেন : সুস্থ থাকুন বলতে গিয়ে সুস্থ হয়ে উঠুন লিখা হয়েছে, ছোট-খাট সব বিষয়ের দিকে কি নজর দেওয়া ঠিক!!??
265860
১৬ সেপ্টেম্বর ২০১৪ বিকাল ০৫:৩১
মামুন লিখেছেন : অনেক সুন্দর বর্ণনা, এক নিঃশ্বাসে পড়লাম। জিন জাতী অবশ্যই রয়েছে। এটা আমিও বিশ্বাস করি।
আর আমার নিজের দেখা একটি বাস্তব উদাহরণ দেইঃ গ্রাম থেকে একটি ছেলেকে আমার শ্বশুরের বাসায় কাজের জন্য আনা হল। বয়স আট থেকে নয় হবে। এর উপর জিন ভর করল। আমরা বাসার তিনজন পুর্ণবয়ষ্ক যুবক এবং আরো দুজন মহিলা মিলে তাঁকে চেপে ধরে রাখতে পারি নাই। সে সবাইকে ঝটকা মেরে উঠে দাঁড়াত।
আপনি হাটহাজারি মাদ্রাসা মসজিদে অবশ্যই নামাজ পড়েছেন (যেহেতু আপনার বাড়ী এর কাছাকাছি)। সেখানে আমি কপালে যেমন নামজীদের দাগ হয়ে যায়, মসজিদের মেঝেতে ছিজদার স্থানগুলোতে একই যায়গায় কালো দাগ দেখতে পেয়েছি। পুরো মসজিদের সামনের কাতারগুলোতে এরকম দাগ ছিল (১৯৯৮ ইং সালের কথা)। সেখানে অনেক জিন মাদ্রাসায় মানুষের রূপ নিয়ে লেখাপড়া করে। ওদের নামাজের ছেজদার জন্যই এই দাগের সৃষ্টি হয়েছে হয়তো। কারণ মানুষের ছেজদার জন্য মেঝেতে কখনো দাগ হয় না।

অনেক ধন্যবাদ এমন একটি সুন্দর লেখা উপহার দেবার জন্য।
জাজাকাল্লাহু খাইর। Rose Rose Rose Good Luck
১৬ সেপ্টেম্বর ২০১৪ বিকাল ০৫:৪২
209658
নজরুল ইসলাম টিপু লিখেছেন : এটি জ্বিনের কাজ নয়, সরাসরি মানুষের কাজ! তবে ঘটনাটি শুনলে আপনি সহ সবাই হাঁসবেন। আমি বহুবার আপনাদের হাঁসিয়েছি, তাই অন্তত এই বিষয় নিয়ে আপনাদের হাঁসাতে চাইনা। কেননা নিন্দুকেরা সুযোগের অপেক্ষায় বসে আছে!!!!!
১৬ সেপ্টেম্বর ২০১৪ বিকাল ০৫:৫৭
209662
নজরুল ইসলাম টিপু লিখেছেন : আপনাকে হতাশ করবনা, আপনার ধারণা সৃষ্টির জন্য আপনাকে এই ভদ্রলোকের মন্তব্য দেখতে বলব। কোন প্রশ্ন নয়, আকলদারের জন্য ইশারা যথেষ্ট!!
https://www.facebook.com/marefoterbani/posts/499457733419799
265874
১৬ সেপ্টেম্বর ২০১৪ সন্ধ্যা ০৬:২৩
মামুন লিখেছেন : পড়লাম। ধন্যবাদ। Rose Good Luck
১৬ সেপ্টেম্বর ২০১৪ সন্ধ্যা ০৬:৩৮
209670
নজরুল ইসলাম টিপু লিখেছেন : সেটাই মূল কাহিনী! এখান থেকে পন্ডিত বের হয় আর পন্ডিতদের চিন্তার গতি কেমন, তাও অনুধাবন করুন। তাহলে দেশটা চালাবে কারা! ধন্যবাদ।
265880
১৬ সেপ্টেম্বর ২০১৪ সন্ধ্যা ০৬:৪৬
মামুন লিখেছেন : আপনাকেও অনেক ধন্যবাদ।
অনুধাবন করেছি।
জাজাকাল্লাহু খাইর। Rose Good Luck Good Luck
১৭ সেপ্টেম্বর ২০১৪ দুপুর ০১:২৭
209823
নজরুল ইসলাম টিপু লিখেছেন : অনেক ধন্যবাদ।
265900
১৬ সেপ্টেম্বর ২০১৪ সন্ধ্যা ০৭:৪৩
মোস্তাফিজুর রহমান লিখেছেন : মুসলমান হিসেবে জ্বীনকে বিশ্বাস করি। জ্বীন/ভূত দেখার জন্য মাঝ রাতে হিন্দুদের শ্বশানের পাশে হেটেছি, গভীর জংগলের দিকে অন্ধকার রাতে চেয়ে থেকেছি কিন্তু দেখতে পাইনি।
তবে ভাইয়া রানী বিলকিসের হিংহাসন হযরত সুলাইমান আ: এর কাছে বাতাস নাকি মানুষ এনেছিল?? আমার জানামতে বাতাস নিয়ে এসেছিল। সূত্রটা জানালে উপকৃত হতাম।
ধন্যবাদ সুন্দর লিখার জন্য।
১৭ সেপ্টেম্বর ২০১৪ দুপুর ০১:০৫
209812
নজরুল ইসলাম টিপু লিখেছেন : কোরআনে কথাটি এভাবে বলা হয়েছে, 'কিতাবের জ্ঞান সম্পন্ন অপর ব্যক্তি বললো “আমি আপনার চোখের পলক ফেলার আগেই আপনাকে তা এনে দিচ্ছি'। যখনই সুলাইমান সেই সিংহাসন নিজের কাছে রক্ষিত দেখতে পেলো অমনি সে চিৎকার করে উঠলো, এ আমার রবের অনুগ্রহ, আমি শোকরগুযারী করি না নাশোকরী করি তা তিনি পরীক্ষা করতে চান। আর যে ব্যক্তি শোকরগুযারী করে তার শোকর তার নিজের জন্যই উপকারী। অন্যথায় কেউ অকৃতজ্ঞ হলে, আমার রব করো ধার ধারে না এবং আপন সত্তায় আপনি মহীয়ান। সুরা নমল-৪০

আগের আয়াতে বুঝা গিয়েছিল তিনি জ্বিন ছিলেন না, পরের আয়াতে বুঝা গেল তিনি কিতাবের জ্ঞান সম্পন্ন ব্যক্তি ছিলেন! যিনি চোখের পলক কাজটি সমাধান করেছেন। অর্থাৎ তিনি মানুষই ছিলেন। সোলায়মান (আঃ) যে সব স্থানে বসে মানুষদেরকে আল্লাহর দাওয়াত দিতেন, এই ব্যক্তিও সেখানে বসে সর্বদা নবীর কথা শুনতেন! এটা দ্বারা আল্লাহ এই কথা বুঝিয়েছেন, দেখতে সাধারন, অসহায়, কৃষক মার্কা চেহারা দেখলেও, এ ধরনের বহু ব্যক্তিই তাঁর কত নিটতস্থ ও কাছের! সাধারন মানুষ এমনকি কখনও নবী পর্যন্ত তাদেরকে সাধারণ মানুষ মনে করে। এই ধরনের ঘটনা আমরা মুসা (আঃ) ব্যাপারে দেখেছি।

আপনি যদি ইবনে বতুতার ভ্রমণ কাহিনী পড়েন, তাহলে দেখতে পাবেন, তিনি দুনিয়া ভ্রমনের পদে পদে, এই ধরনের বহু মানুষের সাক্ষাৎ পেয়েছেন। চীনে অবস্থান কারী আল্লাহর বান্দা, ভারতের রাজস্থানে বিপদগ্রস্থ ইবনে বতুতাকে সহসা উদ্ধার করে আবার চলে গিয়েছেন।

অনেক দিনের লড়াই চলা অমিমাংসীত এক যুদ্ধে কিভাবে জেতা যায়, এই ধরনের একটি কথার উত্তর দিয়েছিলেন, ভারতের শাসনকর্তা ফিরোজ শাহ তুঘলুগকে। তিনি ছিলেন সুলতান নাসীরুদ্দীন নামের একজন সাধারণ বেতনধারী সিপাহী।

যাঁকে যুদ্ধের পরে আর পাওয়া যায়নি! পরবর্তীতে তিনি শাহজালাল (রঃ) সাথে সিলেটে গৌরগোবিন্দের বিরুদ্ধে যুদ্ধে যোগ দেন। গৌরগোবিন্দের কয়েক মন ওজনের ধনুকে তিনিই তীর মেরেছিলেন।

পৃথিবীর কিছু নিয়ম কানুন এমন আছে, যেটা আল্লাহ তাঁর কোন স্পেশাল বান্দাদের দিয়ে করিয়ে থাকেন। এই স্পেশাল বান্দাদের কাহিনী দিয়ে পীর পূজারী, কবর পূজারীরা সুযোগ নেয়।

আসল ঘটনা হল এসব স্পেশাল ব্যক্তিদের সাধারণ মানুষ চিনার কথা নয় এমনকি নবীরাও চিনেনা! যেমনভাবে সোলায়মান (আঃ) চিনেনি তেমনভাবে মুসা (আঃ) চিনেনি। সুতরাং স্পেশাল পীর ধরে মুসিবতে পড়ার চেয়ে না চেনাই উত্তম। সে ধরনের স্পেশাল বান্দাদের চিনা আমাদের কাজও নয়। অনেক ধন্যবাদ।
১৭ সেপ্টেম্বর ২০১৪ দুপুর ০২:০৬
209829
মোস্তাফিজুর রহমান লিখেছেন : আপনাকে অনেক ধন্যবাদ সুন্দর জবাব দেয়ার জন্য; আমার জানাটা আরেকটু পূর্ণ করার জন্য আবারো ধন্যবাদ।
265901
১৬ সেপ্টেম্বর ২০১৪ সন্ধ্যা ০৭:৪৬
রিদওয়ান কবির সবুজ লিখেছেন : অত্যন্ত শিক্ষনিয় এই পোষ্টটির জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ।
জ্বিন জাতি নিয়ে অনেক ভুল ধারনা মানুষের মধ্যে প্রচলিত আর তার সুযোগ নিয়ে ব্যাবসা করেন অনেকেই। মাওলানা মওদুদি সাহেবের একটি উক্তি পড়েছিলাম। এক ব্যাক্তি জ্বিন দের দ্বারা সরকার পরিবর্তন সম্ভব কিনা জিজ্ঞেস করলে তিনি হেসে জবাব দেন মানুষ জ্বিনদের ক্ষমতা অসিম মনে করে কিন্তু তাদের ক্ষমতা সিমাবদ্ধ। জ্বিনরা তাদের উপরই বেশি ভর করতে বা সমর্থ হয় যারা তাদেরকে বেশি ভয় করে। সুলায়মান (আঃ) এবং রানি বিলকিস এর সিংহাসন সংক্রান্ত ঘটনার ব্যাখ্যায় এটা স্পষ্ট। যেখানে কিতাবের জ্ঞান এর অধিকারি কে জ্বিন এর থেকে শক্তিমান দেখান হয়েছে।
জ্বিন জাতির অস্তিত্ব সম্পর্কে একজন মুসলিমের প্রশ্ন তুলা বোকামি। তথাপি এই নিয়ে পাশ্চাত্যেও প্যারালাল ইউনিভার্স বা মেমব্রেন থিওরি রয়েছে। ডিসকভারি চ্যানেল এর একটি অনুষ্ঠানে দেখেছি যে রেডিয়েশন ডিক্টেটর নিয়ে একটি হন্টেড হাউস এ বিশেষজ্ঞরা গেলে সেখানে অস্বাভাবিক রেডিয়েশন ধরা পরে কিন্তু যার কোন স্থায়ি উৎস পাওয়া যায়নি! আগুন এর অংশ থেকে তৈরি জ্বিন জাতির মধ্যে অত্যধিক বিকিরন প্রবনতা থাকতে পারে।
১৭ সেপ্টেম্বর ২০১৪ দুপুর ০১:০৬
209813
নজরুল ইসলাম টিপু লিখেছেন : আপনার সংযুক্তি আমার লিখাটিকে আরো বস্তুনিষ্ট ও সহজসাধ্য করেছে। আপনাকে অনেক ধন্যবাদ।
১০
265917
১৬ সেপ্টেম্বর ২০১৪ রাত ০৮:২২
আহ জীবন লিখেছেন : অনেক ভালো লাগলো। অনেক কিছু জানলাম। আপনাকে অনেক ধন্যবাদ। আমি অন্ধ বিশ্বাস করি জীন আছে। আচ্ছা পরী কি জীনদের স্ত্রী প্রজাতি? জীন দের অনিষ্ট থেকে রক্ষা পাবার জন্য কোন দোয়া আমল করা যায়? জানা থাকলে কষ্ট করে উচ্চারন সহ জানালে কৃতজ্ঞ থাকবো।
১৭ সেপ্টেম্বর ২০১৪ দুপুর ০১:০৮
209814
নজরুল ইসলাম টিপু লিখেছেন : জ্বিন আছে প্রমান তো করলাম। পরী বলে কিছু আছে কিনা জানিনা। এক সুন্দরী নারীর পিটে পাখা লাগিয়ে পরী বানানো হয়। আসলে এসব ধারনা প্রসুত। তবে ভারতে, ডাকিনী, যোগিনী, মগীনি, দানব, পরী, দেও, দৈত্য বলতে যা বুঝায় তা সবই জ্বিনের প্রতিশব্দ।
১১
265934
১৬ সেপ্টেম্বর ২০১৪ রাত ১০:২২
আবু ফারিহা লিখেছেন : অাপনার সবগুলো পর্ব চোখে পড়লেও ব্যস্ততার কারণে পড়া হয়নি। তবে অাজকের পর্বটা পড়ার সিদ্বান্ত নিয়েছি অফিসের কাজ কম থাকায়। অনেক কিছু জানলাম। জ্বিনদের কাহিনী লেখার পিছনে প্রচুর সময় ও বই পত্র পড়েছেন লেখায়ই তা ফুটে উঠেছে। ধন্যবাদ অাপনাকে।
১৭ সেপ্টেম্বর ২০১৪ দুপুর ০১:১২
209815
নজরুল ইসলাম টিপু লিখেছেন : আমার সবগুলো লিখাই বিরল প্রকৃতির তথ্য ভিত্তিক। যা একজন পাঠক সাধারণ ভাবে পড়ে জানতে পারেনা। আমি পড়েছি এবং এসবের তথ্য ও তত্ত্ব তালাশ করেছি এবং সিদ্ধান্তমুলক ভাবে লিখা প্রকাশ করি। এই পর্বটি লিখার সময় প্রচুর অধ্যয়ন করেছি, সামান্য ভূল করলেই বিপদ অবধারিত। সাধারণ মানুষের আক্রমণ তো সহ্য হতে পারে যদি আক্রমনে কোন ইসলামী চিন্তাবিধ হয়, তাহলে তো রক্ষে নেই। সে জন্য লিখার পরে নোট ও প্রমান উল্লেখ করেছি। ধন্যবাদ।
১২
265948
১৬ সেপ্টেম্বর ২০১৪ রাত ১১:৩৯
মনসুর আহামেদ লিখেছেন : চমৎকার লেখা।
আমিও আপনার আগের সিরিজ পড়ি নাই।
আজই পড়লাম। পশ্চিমা মিডিয়াতে এর একটা ঘটনা দেখিয়ে ছিল। এক ভদ্র লোক বাড়ীতে একা থাকত। প্রতি রাতে অন্যান্য রুমে দরজা খোলার হেভি সাউন্ড পেত। যেয়ে দেখলো কোন লোক নেই। তারপর তার চোখের সামনে দরজা খুলছে এবং বন্ধ হচ্ছে। সে কিছুটা ভয় পেয়ে লোকাল টিভি অফিসে জানায়। ওরা হিডেন ক্যামেরা ফিট করে গেল। সেই সাথে একজন ক্রু ম্যান রাতে থেকে যায়। গভীর রাতে একই অবস্হা ঘটলো। দরজা খুলছে এবং ব্ন্ধ হচ্ছে। অন্য
রুমে ঢুকতে হেবি বাতাসের ফলে ওরা ফ্লোরে পড়ে গেল। পর দিন রেকর্ডকৃত অংশ টিভিতে দেখালো। এতে কোন আকার বা আকৃতি ছিল না। ওদের ধারনা এটা গোষ্ট হবে। আমিও
দরজা খোলা এবং ব্ন্ধ হওয়ার অংশটুকু টিভির মাধ্যমে দেখলাম।
১৭ সেপ্টেম্বর ২০১৪ দুপুর ০১:১৫
209817
নজরুল ইসলাম টিপু লিখেছেন : জ্বিন নিয়ে বহু ঘটনা আছে, যেহেতু জ্বিন সত্য সেহেতু কেয়ামত পর্যন্ত এটার ধারাবাহিকতা চলতে থাকবে। গ্রীসের এক ক্যাথলিক পাদ্রিকে জ্বিন তাড়াতে দেখেছি। অনেক ধন্যবাদ।
১৩
265984
১৭ সেপ্টেম্বর ২০১৪ রাত ০২:৫৬
সাদিয়া মুকিম লিখেছেন : ভয়ে আমি শিউরে উঠছি বারবার! আমার জীবনেও সাহস হয়নি জিনদের সম্পরকে কোন বই পড়ার! Sad
১৭ সেপ্টেম্বর ২০১৪ দুপুর ০১:২৪
209821
নজরুল ইসলাম টিপু লিখেছেন : জ্বিনকে ভয় পাবার কিছু নাই, জ্বিন মানুষকে তার চেয়ে বেশী ভয় পায়। দ্বীনদার মহিলাকে আজরাইলের চেয়েও বেশী ভয় পায়। সে জন্য ঘরের পরিবেশকে ইসলামী সংস্কৃতির অনুসরনে রাখুন। যেদিকে হাটবেন তার তিন মাইল দূরে থাকবে জ্বিন বাবা। অনেধ ধন্যবাদ।
১৪
267303
২২ সেপ্টেম্বর ২০১৪ রাত ১২:২৩
আফরা লিখেছেন : ভাইয়া আমি আজকে এটা পড়ে শেষ করেছি ।জ্বীন সম্পর্কে অনেক কিছু জেনেছি ।এটা কি শেষ ? শেষ না হলে আগামী পর্ব তাড়া তাড়ি দিবেন আশা করি ।ধন্যবাদ ভাইয়া ।
২২ সেপ্টেম্বর ২০১৪ সকাল ১১:৩৪
211190
নজরুল ইসলাম টিপু লিখেছেন : না ভাইয়া শেষ হয়নি, চলতে থাকবে, তবে জ্বিন তাবিজ সম্পর্কিত কোন কথা থাকবেনা। আশা করি সে সব গুলো ভাল লাগবে। অনেক ধন্যবাদ।
১৫
267585
২২ সেপ্টেম্বর ২০১৪ বিকাল ০৫:৪০
নেহায়েৎ লিখেছেন : অনেক কিছু জানলাম জ্বিনদের সম্পর্কে। ভাইয়া আমি জ্বিন জাতির ইতিহাস সম্পর্কে একটা বই পড়েছিলাম উজ্জল প্রকাশনীর। এদের সম্পর্কে আরো্ বই সংগ্রহ করার ইচ্ছা আছে।
২২ সেপ্টেম্বর ২০১৪ বিকাল ০৫:৪৩
211351
নজরুল ইসলাম টিপু লিখেছেন : অবশ্যই সবাইকে জানা উচিত, তার আগে দরকার সময় বের করা ও আগ্রহকে শানিত করা। আরো পড়ুন এবং বিষয়টিকে আরো অর্থবহ করুন। মানুষের মনের চাহিদা মিটবে উত্তর পাবে। অনেক ধন্যবাদ।
১৬
267864
২৩ সেপ্টেম্বর ২০১৪ দুপুর ০৩:৩৬
প্রেসিডেন্ট লিখেছেন : অনেক গবেষণাসমৃদ্ধ পোস্ট। নিরপেক্ষ দৃষ্টিতে পড়লে অনেক জানার বিষয় আছে। জীন নিয়ে আপনার বিশ্লেষণের সাথে আমি একমত।
মানুষ আল্লাহর সৃষ্টির সেরা এবং জ্ঞানে বুদ্ধিতে শ্রেষ্ঠ হলেও তার জ্ঞান ও জানার পরিধি বিশ্বজগতের অপার রহস্যের তুলনায় অত্যন্ত সীমিত। মানুষের চর্মচক্ষুর বাইরে অনেক অজানা বিষয় রয়েছে। পবিত্র কুরআনে উল্লেখিত সব বিষয় বিনা প্রশ্নে না মানলে কেউ প্রকৃত মুসলমান হতে পারে না।
২৩ সেপ্টেম্বর ২০১৪ বিকাল ০৫:১১
211669
নজরুল ইসলাম টিপু লিখেছেন : সুন্দর ও সত্য কথা বলেছেন, আপনাকে আল্লাহ রহম করুন। আমিন।

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File