সেই যুদ্ধাপরাধীর বিচার হচ্ছে আজ!
লিখেছেন লিখেছেন নজরুল ইসলাম টিপু ২৮ ফেব্রুয়ারি, ২০১৩, ১১:৩৬:৫৩ সকাল
আমরা নিজেরা কমিউনিস্ট ধ্যান ধারনায় বেড়ে উঠেছিলাম। ইসলাম বলতে মনে করতাম পীর সাহেবকে ধরে তার কথামত দুটি কথা শুনে মেনে চললেই ইসলাম ধর্ম পালন হয়ে যাবে। সুযোগ মত সময়ে পীর-আউলিয়ার মাজারে গিয়ে সিন্নি, তবারক, ছাগল-গরু জবাইয়ের ব্যবস্থা করলে পুল সিরাত পার হবার মত জটিল কাজটি সমাধা হয়ে যাবে। পীর সাহেবের যোগ্যতা দক্ষতার প্রতি কোন অবস্থাতেই সন্দেহ করা যাবেনা। ভাবনায় মনে হয় কোন কোন পীর এমন, তাঁরা পুল সিরাতের ওপারে বসে থাকবেন আর এপার থেকে বরশীর সুতায় বেঁধে মাছ ধরার মত করে এক একজন মুরিদকে ছোঁ মেরে ওপারে পার করিয়ে দিবে!
ছোটকালে আমরা যার কাছে কোরআন পড়তে শিখেছি তাঁদের নিকট থেকে বুঝেছি, আমরা হলাম প্রকৃত সুন্নি এবং ওহাবী হল যত নষ্টের মূল, শয়তানের হাতিয়ার, ইসলামের দুষমন। একজন ওহাবীকে হেনস্থা করতে পারলে ৭০ দিনের গুনাহ মাফ হয়ে যাবে। সে কারণে ওহাবীরা সমীহ করে আমাদের এলাকা পাড়ি দিত। যাদেরকে ওহাবী বলে জানতাম তাদেরকে দেখতাম চাল চলনে অন্য ধরণের। লম্বা কোর্তা, গোল টুপি, মিসওয়াক ব্যবহারকারী, পান পছন্দ কারী ব্যক্তি হিসেবে। সবাই বলতেন মূলত তারাই ইসলামের সঠিক অনুসরণকারী।
আরো দেখতাম ওহাবীদের (আমাদের এলাকায় সুন্নিদের ভাষায়) চিন্তাধারার সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ কাউকে কড়ায় গণ্ডায় না পেলে ওহাবীরা কর্কশ ভাষায় উত্তর দিত। তাদের মসজিদে হাফ সার্ট পড়ুয়া এক যুবককে মসজিদের সামনের কাতার থেকে বিশ্রী আচরণে মাধ্যমে পিছনের কাতারে দাঁড়ানো বাচ্চাদের সাথে দাঁড়াতে বাধ্য করা হয়। এটা দেখে আমার ছোট মনে বুঝেছিলাম আসলে আমাদের সুন্নি হুজুরেরা বলে ওহাবীরা খারাপ আসলে কথাটি ঠিক! (তখনও ভাল খারাপ তফাৎ করার বয়স হয়নি)
তখন আমি হাই স্কুলের ছাত্র। ১৯৭৮ সালে আল্লামা সাঈদী সাহেবের ক্যাসেটের মাধ্যমে প্রথমে তাঁর ওয়াজ শুনার সুযোগ হয়। আমার মনে হল ইসলাম সম্পর্কিত একটা নতুন ধরনের কিছু শুনলাম। পুরো কথাগুলো আমার হৃদয়ে রেখাপাত তৈরি করে। সে বছরের আরো কয়েকটি ক্যাসেট শুনেছি যার দ্বিতীয়টি প্রথমটির চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ছিল। কারো প্ররোচনা, প্রলোভন ছাড়া নিজ উদ্যোগে ক্যাসেট গুলো শুনেছি। অতঃপর আমার বাবা-মাকে (যাঁরা পরিপূর্ণ কবর পূজারীতে নিমগ্ন ছিলেন এবং পীরের বড় খাদেম ছিলেন, বাবা মাজারের মতোয়াল্লী ছিলেন) শুনলাম। তাঁরা প্রথম দিন শুনেই আল্লামা সাঈদী সাহেবের কথায় প্রভাবিত হলেন। অতঃপর ধীরে ধীরে মুশরেকী জীবন পরিপূর্ণ পরিত্যাগ করলেন। আমার সকল বন্ধু-বান্ধবকে তাঁর ওয়াজ শুনিয়ে প্রভাবিত করলাম। এর পর প্রতি বছর ক্যাসেটের মাধ্যমে তাঁর বক্তব্য শুনেছি তবে সরাসরি তাঁর ওয়াজ শুনেছি আরো ছয় বছর পরে।
সাঈদী সাহেবকে না দেখেও আমার এলাকাতে তাঁর যথেষ্ট শত্রু বেড়ে গিয়েছিল। আমার পিতাকে দিয়ে শুরু হওয়া মাজার ব্যবসার ধস চরম আকার ধারণ করল। কেউ কেউ বুদ্ধি করে হারানো ব্যবস্থা পুনরুদ্ধার করতে, পাকিস্তান থেকে আগত আল্লামা তৈয়ব সাহেবকে এলাকায় আনলেন, আগের মত আর জমল না। আমাদের এলাকা কমিউনিজমের দুর্গ বলে খ্যাত ছিল। সাঈদী সাহেবের বক্তব্যে তাদের দুর্গ পরিপূর্ণ ভেঙ্গে চুরমার হয়ে গেল, কোন অবস্থাতেই তারা আর নুতন সদস্য বাড়াতে পারলনা, এমনকি একতা পত্রিকা পর্যন্ত বন্ধ হয়ে গেল। প্রথম আলো সম্পাদক মতিউর রহমান তখন কমিউনিষ্ট পত্রিকা একতার সম্পাদক ছিলেন। চাকুরী হারিয়ে অনেকদিন বেকার ছিলেন, পরে কমিউনিজমের কোট ফেলে দিয়ে প্রথম আলোর দিশা পান। অবস্থা দৃষ্টিতে তিনি এখন কমিউনিষ্টদের কেউ নন। তবে সুযোগ আসলে আওয়ামীলীগ, বিএনপি, ইসলামী দলগুলোকে এক হাত দেখাতে কসুর করেন না। উল্লেখ্য সাঈদী সাহেবের প্রথম দিককার ওয়াজে কবর পূজা ও কমিউনিস্টদের শঠতা, বক্রতা, ধূর্ততার দিক গুলো বেশী বেশী করে তুলে ধরতেন। রাতারাতি আমাদের এলাকার ক্ষেত মজুর সমিতির কর্মীরা চাষি কল্যাণ সমিতির সদস্য হয়ে গেল। বলতে গেলে পুরো বাংলাদেশে ইসলাম ভাবাপন্ন ব্যক্তিদের কাছে কমিউনিস্টদের অপছন্দনীয় করে তোলার জন্য সাঈদী সাহেব ৫০% দায়ী। কমিউনিস্ট ধ্যান ধারনার সকল দলগুলো কিছু মিছিল ও দেয়ালিকা ব্যতীত সাঈদী সাহেবের কথার বিরোধিতায় উল্লেখযোগ্য কিছুই করতে পারেনি!
আল্লামা সাঈদী সাহেবের হাতে শত শত মানুষ প্রকাশ্যে ইসলাম গ্রহণ করেছেন, যাদের বেশীর ভাগ জনগোষ্ঠী হিন্দু ধর্ম থেকে আগত। ধর্মান্তরিত করার জন্য তিনি কোন প্রতিষ্ঠান খোলেননি, তারা স্ব-ইচ্ছায় কোরআনের ওয়াজ শুনে ইসলাম গ্রহণ করে। সে ধরনের একজন নওমুসলিম মহিলা কে ঢাকার ইসলাম প্রচার সমিতি থেকে আমার পিতা-মাতা তার প্রবাসী বড় ছেলের জন্য ঘরের বড় বউ করে এনেছেন। তিনি এখনও ঘরের বড় বউ এবং পুরো গ্রামে ইজ্জতের সাথে বসবাস করছেন। সাঈদী সাহেবের এসব কার্যকলাপ আমাদের পার্শ্ববর্তী দেশের সহ্য নয়। তারা এটাকে পেটে লাথির সমতুল্য মনে করেন। আল্লামা সাঈদী ভারতের খুবই বিশ্বস্ত বন্ধু সুধাংশু শেখর হালদারকে বারবার পরাজিত করে সংসদে এসে উচ্চ গলায় কথা বলেছেন। এটাও তাদের কাছে বরদাশত করার মত নয়। সুতরাং আল্লামা সাঈদীর শত্রুর অভাব নাই। উপরের দিকগুলো বিবেচনায় নিলে আল্লামা সাঈদী গোলাম আজম, মতিউর রহমান নিজামী ও আলী আহসান মুহাম্মদ মুজাহিদের চেয়েও ধ্বংসাত্মক ও বিনাশী!
আল্লামা সাঈদী সাহেবের প্রাঞ্জল বাংলা ভাষায়, যুক্তিপূর্ণ উপস্থাপনায়, কোরআনের আয়াতের সুনির্দিষ্ট উদ্ধৃতি, বাক শক্তি পূর্ণ কথার যাদুতে আমাদের বিরাট এলাকা প্রভাবিত হয়েছিল। সর্বোপরি আমি ব্যক্তিগত ভাবে, এমনকি আমার পরিবার, সকল আত্মীয় স্বজনকে, পুরো গ্রামবাসীকে মুশরেকী জীবন থেকে উদ্ধার করতে পেরেছিলাম। আজ সাঈদী সাহেবের বিচার করছে যে মন্ত্রনালয়, সেই মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী, আদালতের বিচারক, কৌশলী, সাক্ষী, প্রসিকিউটর থেকে শুরু করে ঝাড়ুদার পর্যন্ত সবাই কমিউনিস্ট। কমিউনিস্ট তথা বাম দল গুলো পঙ্গুত্ব বরণ করার জন্য অনেকাংশে সাঈদী সাহেবের ওয়াজ গুলো দায়ী। তই তাদের গায়ে আছে বিগত ৩০ বছরের জ্বালা, দগদগে ক্ষতের পঁচন ব্যথা। ফলে কমিউনিস্টেরা তাঁকে যুদ্ধাপরাধী আদালতের প্রতিটি কল-কব্জা ব্যবহার করে হেনস্থা করার নূন্যতম কোন সুযোগ হাতছাড়া করবেনা। তবে আসল সত্য হল আল্লাহর কোরআন প্রচার করতে গিয়ে তিনি হেনস্থা হচ্ছেন। তিনিও মিথ্যা আরোপকারীদের উপর লানতের পরিণতি দেখার ঘোষণা দিয়েছেন। ওদিকে আল্লাহ ওয়াদা করেছেন যারা আমার কোরআন প্রতিষ্ঠায় অগ্রগামী বান্দাদের হেনস্থা করে আমিও তাদের পিছনে লেগে যাব, শুধু তাদের একটু অবকাশ দিয়ে থাকি। যাতে তারা সীমা অতিক্রম করে গজবের উপযোগী আরো কিছু কাজ করে ফেলে। তখনই তাদের পাকড়াও করা হয়
বিষয়: বিবিধ
২৮৪৪ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন