সোনার হাড়ির সন্ধান লাভ! এক পিকুলিয়ার মানুষ, পর্ব-২২ (রোমাঞ্চকর কাহিনী)

লিখেছেন লিখেছেন নজরুল ইসলাম টিপু ২৪ জুন, ২০১৪, ০৬:৩১:৩১ সন্ধ্যা



অলি মিয়া মুন্সী! অগাধ ধন-সম্পদের মালিক! তামার বড় হাঁড়িতে সোনা-রূপা ঢুকিয়ে গুপ্ত সম্পদ হিসেবে মাটিতে লুকিয়ে রাখত! আগেকার দিনে ব্যাংক-বীমা ছিল না। তখন কারো নগদ অর্থের দরকার হলে, সোনা-রূপা বন্ধক রেখে নগদ টাকা কর্জ করা যেত। অনেকে মূল্যবান জমিও বন্ধক রাখত। জমি বন্ধক নেবার সময় এভাবে একটি দলীল করা হত, যদি টাকা পরিশোধ করতে না পারে, তাহলে বন্ধক গ্রহীতা জমির মালিক হয়ে যাবে! এক্ষেত্রে বন্ধক গ্রহীতা যদি মুন্সী মার্কা মানুষ হয়! তাহলে বুঝাই যায়, যিনি জমি বন্ধক রাখেন তার জমি ফিরে পাবার সম্ভাবনা কতটুকু থাকে? যাক, দুই পক্ষের সম্মতিতে বন্ধকী সম্পদের একটা সুদের হার ধরা হত। বন্ধকী সম্পদের দাম যেভাবে কম ধরা হত, তেমনি উল্টো সুদের হারের পরিমাণ বেশী ধরা হত! ফলে দুই বছরের মধ্যে সুদ সহ আসল পরিশোধ করতে না পারলে, বন্ধকি সম্পদ হাতছাড়া হয়ে যেত। পরিশেষে যিনি বন্ধক রাখতেন এসব সম্পদ তার হয়ে যেত! মূলত এই ব্যবসাটা ব্রিটিশ আমলে আফগানের কাবুলি ওয়ালারা করত। পরে দেশীয় কিছু মানুষ সহসা ধনী হবার জন্য নিজেরাও এই ব্যবসায়ে জড়িয়ে পড়ে! বর্তমানে আমাদের দেশে এই ব্যবসাকে সুদী ব্যবসা বলে। নিন্দুকেরা বলে অলি মিয়া মুন্সীও সোনা-রূপা, জমি বন্ধক রাখতেন, কদাচিৎ কায়দা মত সুদী ব্যবসাও করতেন! তিনি জমির কাগজ পত্র লিখতেন, নামকরা তান্ত্রিক হিসেবেও প্রসিদ্ধ ছিলেন। অনেক গুলো চাষের গরু ছিল, সারি বদ্ধ ধানের গোলা ছিল। এভাবে একদিন অলি মিয়া মুন্সী এ অঞ্চলের বৃহত্তম ধনী লোক বনে যান!

তখন কার দিনে, বর্তমান সময়ের মত ব্যাংকের ভল্টে সোনা-রূপা সহ নানাবিধ সম্পদ রাখার সুবিধা না থাকার কারণে, অতি চালাক মানুষেরা এসব সোনা-রূপা, তামার মজবুত হাড়ির ভিতরে রেখে তা মাটির নিচে লুকিয়ে রাখত। মাটির নীচে লুকানো এসব সম্পদের কথা তিনি ব্যতীত কেউ জানতেন না। হঠাৎ করে কখনও যদি এ ব্যক্তিটি মারা যেত, তাহলে তার সন্তানেরা এ সব সম্পদের কথা জানতে পারত না। বছরের পর বছর ধরে সে সব সম্পদ মাটির নীচে থেকে যেত। লুকিয়ে রাখা সম্পদের জায়গা অন্য কারো কাছে বিক্রি হবার পর, তিনি যদি বাড়ি বানাতে কিংবা পুকুর খনন করতে যেত, তখন এসব লুকানো সম্পদ বের হয়ে আসত! মূলত এ ধরনের সম্পদ কোনদিন চাষাবাদের জমিতে লুকানো হত না। এসব সম্পদ পরিত্যক্ত বাড়ি-ঘর, ভিটের জায়গা, বাড়ীর পাশের বাগান, উঁচু স্থান কিংবা বৃষ্টির পানি থামে না এমন জায়গায় লুকিয়ে রাখা হত। ফলে দেখা যায়, গুপ্ত ধন সর্বদা পুরানো বাড়ীর আশে পাশের পতিত জমি থেকেই বের হয়ে আসে।

অলি মিয়া মুন্সীর চার স্ত্রীর ঘরে চার ছেলে। সকল স্ত্রী পুত্রদের বাড়ীও আলাদা। এক বউয়ের সাথে অন্য বউদের দেখা সাক্ষাতের সুযোগ ছিল না। তাই ঝগড়া ঝাটিও হতনা আবার এক জনের মনের খবর অন্য জনের জানার ও সুযোগ ছিলনা। মুন্সীর এক পুত্র অতি চালাক, একজন শিক্ষিত, একজন কৃপণ, আরেক জন বুদ্ধিমান! কারো যোগ্যতার সাথে কারো মিল নাই, থাকার কথাও নয়। মুন্সী তার সমুদয় সম্পদ মাটির নিচে লুকিয়েছেন। এটা তিনি স্বীকার করতেন এবং স্ত্রীদের বলতেন। কোন বাড়ীর কোন ভিটায় এ সম্পদ লুকায়িত তা মুন্সী কাউকে বলেন নাই। তবে মুন্সী একটি কাজ করেছেন! তিনি কাগজে অঙ্কন করে কিছুটা দূরহ ভাষায়, সম্পদের গোপন স্থান কোথায় তার একটা অস্পষ্ট ব্যাখা রেখে গেছেন! মুন্সীর ইচ্ছা সব ছেলে যেহেতু সমান যোগ্যতার নয়, তাই কাগজের এই কথা উদ্ধার করতে, বাকী ছেলেরা বুদ্ধিমান সন্তানটির শরণাপন্ন হবে। এতে সবাই সম্পদের হিস্যা পাবে। বৃদ্ধের মৃত্যুর পরে, ছেলেদের মাঝে অদ্ভুত সন্দেহ সৃষ্টি হল! এক ছেলে সন্দেহ করত, সম্ভবত পিতা অন্য সৎ মায়ের ভিটায় সম্পদ গোপন করেছেন। সেই মায়ের ছেলে আরেক সৎ মায়ের ভিটের প্রতি সন্দেহ করত! এতে করে সম্পদের আশায়, রাতের আধারে চুরি করে একজনের ভিটা অন্যজন খনন করত! কদাচিৎ ভয়ানক মারামারি লেগে যেত। মারামারি করার জন্য তারা শক্তিশালী মানুষ পুষতেন। নজির আহমেদ ওরপে নজু শাহ ছিল তাদেরই একজনের ঘরের পোষ্য চাকর! নূর জাহান নামের সেই মহিলা ছিল, অন্য ভাইয়ের ঘরের চাকরানী। এই ধরনের পরিবেশে কারো সাথে কোনদিন প্রেম হবার নয়! তাদের বাড়ীতে চাকর-চাকরানী যাই হোক, মারামারি করার দক্ষতাকে এই বাড়ীতে মূল্যায়ন করা হত।

মুন্সীর চালাক ছেলেটি, আমার সাথে গোপনে যোগাযোগ করে একটি লোভনীয় ও আকর্ষণীয় প্রলোভন দেয়! তিনি বলেন, তাদের বাবার রেখে যাওয়া গুরুত্ব পূর্ণ দলীলের কিছু তার কাছে রয়েছে। সম্ভবত সেখানে সোনার হাড়ির তথ্য দেওয়া থাকতে পারে। তিনি বহু বছর এসব পড়ে দেখেছেন, তবে মাথা মুণ্ডু কিছুই উদ্ধার করতে পারে নাই। আমি যদি দেখতে আগ্রহী হই, তথ্য গোপন রাখার শর্তে, তিনি তার কিছু অংশ আমাকে দেখাবেন। আমার দৈব জ্ঞান কিংবা জ্বিনের জ্ঞান কিংবা তন্ত্রের জ্ঞান ব্যবহার করে আমার সমুদয় প্রজ্ঞার সাহায্যে যদি এসব সম্পদ উদ্ধার করে দিতে পারি তাহলে উদ্ধার কৃত সম্পদের এক পঞ্চমাংশ তিনি আমাকে দিবেন! এসব কাগজ দেখার জন্য, কাউকে কিছু না জানিয়ে, আমাকে কষ্ট করে তাদের বাড়ীতে যেতে হবে! দারুন যুক্তি বটে! এ বয়সে এই ধরনরে একটি প্রলোভন পেয়ে দিশাহারা হয়ে গেলাম। চিন্তায় কেমন জানি এডভেঞ্চার ভাব আসতে লাগল! ভাবলাম, দূর ছাই, জ্বিনের সাহায্যের কি দরকার! আমার যা বুদ্ধিমত্তা! সেই কাগজ দেখলেই তো বের করে ফেলতে করতে পারব। শুধু দেখার বাকী মাত্র। কারো সাথে পরামর্শ করা যায়, ব্যাপার খানা এমন নয়। তাই বলে দিলাম আগে কাগজ গুলো দেখান তারপর দেখা যাক কি করতে পারি।

এই বাড়ীতে কাগজ দেখতে গিয়েই তো নজির আহমদকে ঝাড়ু পিটার দৃশ্যে পেয়েছিলাম, যা আগের পর্বে উল্লেখ করেছি! চিন্তা করলাম আগে মুন্সী বাড়ীর, চালাক ছেলের বাড়ী ঘরের অবস্থা পর্যবেক্ষণ করলে হয়ত কাগজের কথা বুঝতে অনেক সহজ হতে পারে। পরিশেষে আমাকে দুটি কাগজ দেখানো হল, যা দেখে আমিও কিছু বুঝি নি! বাকি কাগজ কই প্রশ্ন করাতে তিনি বললেন, বাকি গুলো আস্তে আস্তে দেখাবেন। হতাশ হলাম, যে বড় আশা নিয়ে এসেছিলাম, হয়ত সেই সোনা-রূপা উদ্ধার সম্ভব হবেনা! ভদ্রলোক আমাকে সকল কাগজ না দেখিয়ে, মাত্র দুটি কাগজ দেখিয়ে হয়ত আমার মতলব আন্দাজ করতে চাচ্ছিলেন! তার কৌশল ছিল, জ্বিনদের মাধ্যমে খবর পাবার জন্য এই দুটি কাগজই যথেষ্ট ছিল। যেহেতু আমি কোন মন্তব্য করতে পারলাম না, তাছাড়া আমার দ্বারা জ্বিনদের সহযোগিতা নেবার কোন লক্ষণও তিনি দেখছেন না। তাই বাকী কাগজ দেখানোর জন্য তিনি সময় নিবেন বলে চিন্তা করলেন!

আমি এই বাড়ীতে এসেছি এবং বাড়ীটি চারিদিকে ঘুরে দেখেছি, খবরটি মুহূর্তেই সারা গ্রামে ছড়িয়ে পড়ল। অনেক মানুষ আসল, কেউ একে অপরকে প্রশ্ন করে জানতে চাইল আমাকে কি জন্য আনা হয়েছে! আমাকে নিয়ে মানুষের এত কৌতূহল, ইতিপূর্বে কখনও লক্ষ্য করিনি।

কিছুদিন পরে আমার এক বাল্য বন্ধুর সাথে দেখা। একদা প্রাইমারী স্কুলে পড়েছি, এক সাথে ফুটবল খেলতাম, হালদা নদীতে সাতার কাটতাম। এক সময় তার পিতা পুরো পরিবার সহ এই এলাকায় চলে আসে। ফলে বহু দিন তার সাথে দেখা হয় নি। তার সাথে হঠাৎ সাক্ষাতে বুঝলাম আন্তরিকতার ঘাটতি হয়নি। সে আমাকে একটি অতি আশ্চর্য জনক জায়গা দেখানোর আহবান জানাল। আমি সে জায়গা দেখতে রাজি হলাম! তার পরদিন বিকেল বেলায় সে জায়গা দেখতে বের হলাম। সারি সারি গর্জন গাছের বাগানের ফাঁক দিয়ে সে আমাকে নিয়ে চলল! এ ধরনের সুন্দর বাগান আমি ইতিপূর্বে দেখিনি। স্বভাবগত ভাবে আমি বাগান পছন্দ করি, গহিন বনে ঘুরতে ভালবাসি, বনের সৌন্দর্য আমার কাছে অপূর্ব লাগে। আগেই বলেছি, একটি মামুলী গাছও আমার কৌতূহলী নজর দারী থেকে এড়িয়ে যায় না। এক পর্যায়ে আমরা দুজন, একটি গোলাকার গর্তের নিকট এসে দাঁড়ালাম! বুঝা যাচ্ছে, কয়েকদিন আগেই এটি খোঁড়া হয়েছে! অন্যূন তিন মিটার গভীর ও দেড় মিটার গোলাকার হবে। পাহাড়ের এই জায়গায়, জনবসতি বিহীন স্থানে, এত মসৃণ ও সুন্দর করে গর্ত করার কারণ কি? তাছাড়া এই গর্তের খনন করা মাটি কাছাকাছিও দেখা যাচ্ছে না!

বন্ধুকে প্রশ্ন করলাম, এই গর্তটি এত নিখুঁত করে বানানোর কারণ কি? তাছাড়া এই গর্তই বা কে করেছে? কেন করেছে? বন্ধুর চেহারায় অজানা এক দুষ্টামির হাঁসি! সন্দেহ আসাতে তাকে বললাম, অপেক্ষা না করে, চল তোমার সেই আশ্চর্য জনক জায়গাটা আগে ঘুরে আসি! সে বলল, আসলে আমার কাছে কোন আশ্চর্য জনক জায়গা নাই! এই স্থানে তোমাকে নিয়ে আসাই আমার লক্ষ্য ছিল! শুনে বুক কেঁপে উঠল, ভাবলাম কোন অজানা ফাঁদে পা দিলাম কিনা? আমার ভাবনার মাঝেই বন্ধুটি প্রশ্ন করল, ‘বল এই গর্তটিতে তুমি কি কি পেয়েছ’? যেন, আকাশ থেকে পড়লাম! সে বলল তুমি কেন নাটক করছ? আমি তোমার কোন ক্ষতি করব না তবে আমার একটি উপকার তোমাকে করতেই হবে।

আমার মাথায় কাজ করছিল না, কিছুই বুঝতে ছিনা কি করব। এই স্থানে আমার অবস্থান, আরো কিছু মানুষ বুঝে ফেলেছিল, এখনও ছোট নদীর ওপাড়ে, তারাও দল পাকিয়ে এদিকে আসছে, পৌছতে সময় লাগবে। আমি ভাবছি কোন এক অজানা চক্রান্তে আমি আটকে গেছি, এই জায়গায় দাঁড়িয়ে কলিজা ফাটিয়ে চিৎকার দিলেও কেউ কোনদিন শুনবে না, মরে গেলেও কেউ জানবে না। মুহূর্তে ভাবলাম হয়ত সবাই মিলে আমাকে এই গর্তে জীবিত কবর দিবে। তাই তাকে বললাম, আমার পক্ষে সম্ভব হলে তোমার উপকার করব, আমাকে ব্যাপারটি খুলে বল।

সে বলল, এই যে গর্ত থেকে তোমার নেতৃত্বে গত মঙ্গলবার রাত্রে একটি বিরাট আকৃতির স্বর্ণের হাড়ি উদ্ধার হয়েছে! সবাই ধারনা করছে এটা অলি মিয়া মুন্সীর সম্পদই হবে। তুমি কয়েকদিন আগেই মুন্সী বাড়ীতে গিয়েছ এবং সোনা কোথায় সে খবর জেনে এসেছ। এখন তাদের ছেলেদের না জানিয়ে নিজেই পুরো ‘ডেগ’ তথা এক হাড়ি স্বর্ণ মেরে দিয়েছ! পুরো এলাকার মানুষ এটা নিয়ে কথা বলছে! মানুষ আরো বলাবলি করছে তুমি এত গুলো স্বর্ণ সম্ভাব্য কোথায় লুকিয়ে রাখতে পার? মুন্সির ছেলেরা তোমার পিছনে মানুষ লাগিয়ে রেখেছে। তারা তোমার উপর ক্ষিপ্ত। এসব স্বর্ণের হদিসের জন্য অনেক সাধারণ মানুষ তোমাকে অনুসরণ করছে। তুমি এত গুলো সোনা-রূপা তোলে আনার পরও আমার কাছে না জানার ভান করছ! যেন তুমি এসবের কিছুই জান না। আমিতো তোর ছোট কালের বন্ধু, আমাদের পারিবারিক অবস্থাও ভাল নয়। তুই যে পরিমাণ স্বর্ণ পেয়েছিস, সেখান থেকে একটি ছোট টুকরা দিলেই আমাদের কাজ সেরে যাবে। তোর তো এত স্বর্ণের দরকার নাই! আমার দাদী সব খবর নিয়েই, তোর কাছে আমাকে পাঠিয়েছে। একথা বলেই, সে আমার হাত ধরে ফেলল। তুই আমাদের জন্য একটু দয়া কর!

মাথায় যেন আসমান ভেঙ্গে পড়ল! মুহূর্তেই ব্যাপারটি আঁচ করলাম। তাকে বললাম, এসব কথা এখানে দাড়িয়ে না বলে, চল বাড়ির দিকে যাই। তোকে বিস্তারিত জানাব। আমি চাচ্ছিলাম কৌতূহলী মানুষের দলটি এখানে পৌছার আগেই যাতে আমি সড়ে যেতে পারি। নিরাপদ এলাকাতে এসে তাকে জানালাম, এসব গর্তের কোন খবর আমার কাছে নাই, এমন কি অলি মিয়া মুন্সীর ছেলেদের কোন সোনা-দানা আমার কাছে নাই। আমি ওসবের কিছু জানিনা। সুতরাং তোমাকে সোনা দেওয়া আমার পক্ষে সম্ভব ও না। আল্লাহর কাছে কৃতজ্ঞতা জানালাম, বন্ধুটি আমার দ্বারা হয়ত উপকৃত হতে চেয়েছিল, ক্ষতি করার চিন্তা ছিল বলে মনে হল না। তবে এলাকার মানুষ যে, অতি লোভে পড়ে আমার পিছু নিয়েছে, এই খবরটা না জানলে আমার জন্য চরম খারাপ পরিণতি ঢেকে আনতে পারত। এমন কি সোনা-দানার লোভে আমাকে মেরেও ফেলতে পারত। তাই অধিকতর সতর্ক হলাম এবং বুঝলাম এই এলাকাটা আমার জন্য দিন দিন অ-নিরাপদ হয়ে উঠবে।

মুন্সীর চালাক ছেলে তো জানত আমাকে কি কাগজ দেখিয়েছে! সেই কাগজ দিয়ে যে তার পিতার সম্পদ উদ্ধার সম্ভব নয় সেটা সে নিশ্চিত জানে। তবে জ্বিনের মাধ্যমে যদি কিছু একটা করে ফেলি সেটা অন্য কথা। সে চালাক হলেও চিত্র দেখে সম্পদ উদ্ধার করবে এমন বুদ্ধিমান ছিলনা। আবার যে বুদ্ধিমান ছিল, সে এসব কাগজ চোখেও দেখেনি যে, তা নিয়ে পরীক্ষা নিরীক্ষা চালাবে। বিপুল সম্পদের মালিক হয়েও, চালাক ছেলেটি অবশেষে পিতার গুপ্ত সম্পদ উদ্ধারের আশায়, তান্ত্রিক বিদ্যায় মনোনিবেশ করল! আমার নিকট থেকে এ বিষয়ের উপর কিছু নোট আগেই জোগাড় করেছিল। জ্বিন হাজির করার বিদ্যার প্রতি আসক্ত হল। তাবিজ লিখা, যাদু মন্ত্র করার প্রতি নিজের সময়কে ব্যয় করল। বৃদ্ধ বয়সে সাদা দাড়ি মোচে একাকার সেই ধনী ব্যক্তি এখন এ অঞ্চলের একজন সেরা তান্ত্রিক হিসেবে প্রসিদ্ধি লাভ করল। অবশেষে তিনি সেটাকে পেশা হিসেবেও বাছাই করল এবং এখনও তিনি সেই পেশাতেই কর্মরত আছে!

আগের পর্ব: টিপু শাহের মুরিদ দরবেশ ‘নজু’ শাহের আবির্ভাব! এক পিকুলিয়ার মানুষ, পর্ব-২১ পড়তে চাইলে এই লিঙ্কে ক্লিক করুন।

বিষয়: বিবিধ

৩৯১৪ বার পঠিত, ২৯ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

238423
২৪ জুন ২০১৪ সন্ধ্যা ০৬:৪৯
মোস্তাফিজুর রহমান লিখেছেন : অবশেষে তিনি সেটাকে পেশা হিসেবেও বাছাই করল এবং এখনও তিনি সেই পেশাতেই কর্মরত আছে! খেলার ছলে বা মঝা করেই অনেকেই নতুন গন্তব্যে পৌছে যায় যেখান থেকে ফিরে আসা সম্ভব হয়না,এরই কারণে জান্নাতের পথ খেকে যেমন জাহান্নামের দিকে ধাবিত হয় একইভাবে বিপরীত্ও ঘটে।
২৪ জুন ২০১৪ সন্ধ্যা ০৬:৫৩
184839
নজরুল ইসলাম টিপু লিখেছেন : সুন্দর ও বস্তুনিষ্ট মন্তব্যের জন্য আপনাকে অনেক ধন্যবাদ। মূলত আপনার কথার প্রতিধ্বনী হয়েছে, সেই ব্যক্তির জীবনে।
238440
২৪ জুন ২০১৪ রাত ০৮:০৮
আওণ রাহ'বার লিখেছেন : সত্যিই আপনার বন্ধুটির ক্ষতি করার ইচ্ছা থাকলে আপনার হয়তো বড় কিছু হয়ে যেতো।
আল্লাহ আপনাকে সুস্থতা দান করুন অনেকদিন যাতে আপনার দ্বারা আল্লাহ দ্বিনের অনেক খেদমত নিয়ে নেন ।
আমিন।
ভাইয়া মিনিমাম ২০০ পর্ব চাই।
২৫ জুন ২০১৪ সকাল ১১:০১
185112
নজরুল ইসলাম টিপু লিখেছেন : কত পর্ব লিখতে পারব বুঝতে পারছিনা। আমি ধারাবাহিক পর্ব হাতে নিয়ে হাঁফিয়ে উঠেছি! এরজন্য অন্য লিখা গুলো লিখতে পারছিনা। আবার মাঝ পথে এটা বন্ধও করতে পারছিনা, আপাতত ভাবছি কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা যোগ করে, সহসাই শেষ করে আনব বিষয়টি।

কারো পক্ষে এই ধরনের বিষয় জানার কথা নয়, ভাগ্যের ফেরে পরে আমি এর মুখোমুখি হয়েছিলাম, তাই হয়ত লিখতে পারছি। পরবর্তী জীবনে ভুলগুলো অনুধাবন করার সুযোগ পেয়েছিলাম, সেজন্য আজকে লিখতে পারছি। অনেক ধন্যবাদ।
238447
২৪ জুন ২০১৪ রাত ০৮:২১
রিদওয়ান কবির সবুজ লিখেছেন : ভয়ংকর অভিজ্ঞতা!!
কিন্ত আলি মিয়া মুন্সির এত সম্পদ তাহলে কোন কাজেই আসলনা!
লোভে পড়েই মানুষ এই ধরনের অপকর্মে লিপ্ত হয়। আর নিজের এবং সেই সঙ্গে সন্তানদের আখিরাত নষ্ট করে। মুন্সির সন্তান রা কি সত্যিই এই গুপ্তধন পেয়েছিল?
২৫ জুন ২০১৪ সকাল ১১:০৬
185114
নজরুল ইসলাম টিপু লিখেছেন : বস্তুত অলী মিয়া মুন্সীর ছেলেরা স্থাবর অস্থাবর সম্পত্তি পেয়েই অনেক ধনাঢ্য হয়েছিল! তবে গুপ্ত ধন সন্ধানে তারা একে অপরের চির শত্রুতে পরিণত হয়েছিল। তাদের মধ্যে সন্দেহ অবিশ্বাস কাজ করত। যখন সেখানে আমার পদার্পন হয়, তখন মূলত সবাই আমাকে নতুন উৎপাত মনে করতে থাকে! তারা তো সবাই এমনিতেই বিশ্বাস করত, আমার নিকট এমন কিছু গুন বা বৈশিষ্ট্য রয়েছে, যেগুলো ব্যবহার করে এই কাজটি হয়ত আমি করেই ফেলতে পারি! যদিও এটার কোন ভিত্তি ছিলনা! অনেক ধন্যবাদ।
238505
২৪ জুন ২০১৪ রাত ১০:৫০
গ্যাঞ্জাম খানের খোলা চিঠি লিখেছেন : খুবই দারুণ বণর্না। সোনার ডেক তথা গুপ্ত ধন সম্পর্কে অামার একটি মজাদার কাহানী জানা অাছিল। এ মুহুর্তে মোবাইলে ব্লগ ওপেন করেছি তাই টাইপ করতে পারছি না বিস্তারিত। অাপনার রোমাঞ্চকর বণর্না পড়ে খুবই ভাল লাগছে।
২৫ জুন ২০১৪ সকাল ১১:১৭
185117
নজরুল ইসলাম টিপু লিখেছেন : সোনার ডেকের ঘটনাটি অবশ্যই উল্লেখ করবেন, যাতে করে পাঠকদের উপকার হতে পারে। এমন সময় আসবে এসব বাস্তব ঘটনা তখন মানুষ হাস্যকর কাহিনী মনে করবে। অনেক ধন্যবাদ।
238542
২৫ জুন ২০১৪ রাত ১২:০৩
দ্য স্লেভ লিখেছেন : দারুন রোমাঞ্চকর। আপনার জ্ঞান বুদ্ধি অনেক ভাল ছিল। সে সময়ে আমার জ্ঞান বুদ্ধি তেমন ছিলনা। Happy লোভী মানুষের চিত্রও দেখলাম
২৫ জুন ২০১৪ সকাল ১১:১৮
185118
নজরুল ইসলাম টিপু লিখেছেন : আসলে এসব ছিল মহান আল্লাহর দয়া ও রহমত। তিনিই যদি আমাকে বাঁচাতেন তাহলে সেখান থেকে ফিরে আধুনিক জমানার বিষয় নিয়ে হাত চালাবার সুযোগ হত না। অনেক ধন্যবাদ।
238675
২৫ জুন ২০১৪ সকাল ১১:৫৮
আহমদ মুসা লিখেছেন : আমাদের গ্রামের অন্তর্ভুক্ত একটি অনেক পুরাতন দীঘি আছে। দীঘিটা কোন শতাব্দীতে খনন করা হয়েছিল তার সঠিক ইতিহাস জানা নেই কারো। জরিপের রেকর্ড অনুযায়ী যদিও আমাদের গ্রামের অন্তর্ভুক্ত তথাপি এ বিশাল দীঘি তিনটি গ্রামের বর্ডারের সাথে লাগোয়া। প্রায় বার দ্রোণের বেশী পরিমান জমির আয়তন হবে দীঘিটা। আমাদের গ্রামের দক্ষিণে এবং চট্টগ্রামের বিশিষ্ট শিল্পোক্তা কেডিএস গ্রুপের মালিক জনাব খলিলুর রহমান সাহেবের গ্রামের বাড়ীর উত্তর-পূর্ব কোণে দীঘিটার অবস্থান। কথিত আছে রাজা রাজবল্লবের আমলে খনন করা হয়েছিল এটি। তার নামানুসারে রাজবল্লবের দীঘি সংক্ষেপে "রাজ্জলার দীঘি" নামেই পরিচিত। এ দীঘির পাড়গুলো এতো উচা ছিল যে নিকটতম দূর থেকে দেখলে মনে হতো মাঝারী গোছের পাহাড়। এখন অবশ্য এ সুন্দর পাহাড়সম পাড় সাদৃশ্য দীঘির আগের মত সৌন্দর্য নেই। পাড়ের মাটি কেটে উচা নিচু যেমন হয়ে গেছে তেমনি দীঘির ভেতরেও মাটি ভরাট করে অনেকেই নাল জমিতে পরিনত করেছে। শৈশবে সেই আশির দশকের শুরুতে দেখেছি এ দীঘিতে কয়েকটি নৌকা ছিল। এ নৌকাতে করে লোকজন মাছ ধরতো দীঘি থেকে। জনশ্রুতি রয়েছে এ দীঘিকে ঘিরে অনেক গল্প গুজবের। আদি যুগে এ দীঘিতে জ্বীন-পরীদের বসবাস ছিল। মানুষের প্রয়োজনে সামাজিক আচার অনুষ্ঠান আঞ্জাম দেয়ার জন্য প্রয়োজন ফুরানোর পর আবার সেই জিনিসগুলো যথা নিয়মে ফেরত দেয়ার শর্তে এ দীঘির তলদেশ থেকে অলৌকিকভাবে বিশেষ কায়দায় অনেক কিছুই ভেসে উঠতো। কথিত আছে কোন একবার ভেসে উঠা জিনিস ব্যবহার শেষে ফেরত না দেয়ার কারণে স্থায়ীভাবে বন্ধ হয়ে যায় আজব রেওয়াজটি! এমনি ধরনের আরো অনেক গুজব প্রচলিত আছে উক্ত দীঘি নিয়ে। এ দীঘির দক্ষিণ পূর্ব কোণের সাথে লাগোয়া করতালা নামক গ্রামটি হচ্ছে বৌদ্ধধর্মের অনুসারী সবাই। বুড্ডিষ্টরাও অনেক আজগুবি কাহিনী বলে থাকেন এ দীঘি নিয়ে। শৈশবে এ দীঘির পাড়ে গুপ্তধন তথা সোনার ডেক পাওয়ার অনেক কাহিনী শুনতাম। আশির দশকের শুরুর দিকের ঘটনা। হঠাৎ কোন এক রাত্রে উক্ত দীঘির পাড়ে একটি নির্দিষ্ট স্থানে বিশাল একটি গর্ত খুড়েছিল কে বা কারা। গর্তের সাইজ এবং অবস্থান দেখে সবাই বলাবলি করতে লাগলো ওখানে সোনার ডেক পাওয়া গেছে। উক্ত দীঘির পাড়ে পূর্বেও আরো বেশ কয়েকটি সোনার ডেক পাওয়ার রেকর্ড ও চিহ্ন এখানো আছে।
২৫ জুন ২০১৪ দুপুর ১২:০৪
185134
নজরুল ইসলাম টিপু লিখেছেন : সোনার ডেক পাবার কাহিনী বাংলাদেশের একটি সর্বত্র প্রচলিত একটি সত্য ঘটনা। আমি নিজেও তার একটি বাস্তব সাক্ষ্যি। সামনের পর্বে ঘটনাটি আসবে।

তবে, অনেক মানুষ একটি সত্য ঘটনার চাদরে হাজারো মিথ্যা কাহিনী জুড়ে দেয়। ফলে সত্য ঘটনার মুল কারণ টি চাপা পড়ে যায়, মানুষ তথ্য জানা থেকে বঞ্চিত হয়। মুল্যবান মন্তব্যের জন্য অনেক ধন্যবাদ।
238693
২৫ জুন ২০১৪ দুপুর ১২:২৬
আহমদ মুসা লিখেছেন : এতো সুন্দর এবং ভাল লেখার কেন পাঠক কম হচ্ছে বুঝতে পারছি না। এ ব্যাপারে কর্তৃপক্ষের উদ্যেগ নেয়া উচিত। না হয় সস্তা ক্যাঁচাল আর খাজুরী পোস্টের গুরুত্ব বেশী পেলে হয়তো কোন এক সময় ব্লগটাই হারিয়ে যায় কিনা আমার আশংকা হয়।
২৫ জুন ২০১৪ দুপুর ০১:২৪
185151
নজরুল ইসলাম টিপু লিখেছেন : অনেক ধন্যবাদ, ভাল থাকুন।
238792
২৫ জুন ২০১৪ বিকাল ০৫:৩৩
ভিশু লিখেছেন : Rose Rose Rose
২৫ জুন ২০১৪ সন্ধ্যা ০৬:১৫
185255
নজরুল ইসলাম টিপু লিখেছেন : অনেক ধন্যবাদ, ভাল থাকুন।
238861
২৫ জুন ২০১৪ সন্ধ্যা ০৭:৫৮
শেখের পোলা লিখেছেন : খুব বাঁচা বেঁচে গেছেন৷ ভাগ্যিস গর্তে ফেলে দেয়নি৷
২৬ জুন ২০১৪ সকাল ১১:৫৪
185518
নজরুল ইসলাম টিপু লিখেছেন : তখনকার দিনে বর্তমান সময়ের মত খুন খারাবি হত না। একটা খুন হলে বিরাট অঞ্চল কাঁপিয়ে উঠত। হায়াত এবং মৃত্যু সব তো আল্লাহর হাতে, জায়গা টা থেকে বেঁচে আসা অবশ্যই কষ্টকর ছিল কিন্তু আল্লাহর ইচ্ছা ছিল তিনি আমাকে বাঁচিয়ে রাখবেন। অনেক ধন্যবাদ।
১০
239377
২৭ জুন ২০১৪ বিকাল ০৪:০৪
মাটিরলাঠি লিখেছেন : আল্লাহ আপনাকে হেদায়াত দিয়েছেন এবং জটিল এক পরিবেশ থেকে উদ্ধার করেছেন।
২৭ জুন ২০১৪ সন্ধ্যা ০৬:৪৮
185807
নজরুল ইসলাম টিপু লিখেছেন : অনেক ধন্যবাদ, ভাল থাকুন।
১১
239937
২৯ জুন ২০১৪ দুপুর ১২:৪২
সত্য নির্বাক কেন লিখেছেন : চমৎকার
২৯ জুন ২০১৪ দুপুর ০৩:৩৫
186226
নজরুল ইসলাম টিপু লিখেছেন : অনেক ধন্যবাদ, মনে হয় অনেক দিন পরে দেখা হল।
১২
245168
১৬ জুলাই ২০১৪ দুপুর ০২:১৬
মোহাম্মদ লোকমান লিখেছেন : বেশ ভালো লাগলো।
১৬ জুলাই ২০১৪ দুপুর ০৩:১৪
190441
নজরুল ইসলাম টিপু লিখেছেন : অনেক ধন্যবাদ, ভাল থাকুন।
১৩
264997
১৪ সেপ্টেম্বর ২০১৪ দুপুর ০২:৪১
নেহায়েৎ লিখেছেন : একবারে রূপকথার মতোই! গুপ্তধন!!!
১৪ সেপ্টেম্বর ২০১৪ দুপুর ০৩:১৫
208640
নজরুল ইসলাম টিপু লিখেছেন : ধন্যবাদ!
১৪ সেপ্টেম্বর ২০১৪ দুপুর ০৩:১৫
208641
নজরুল ইসলাম টিপু লিখেছেন : ধন্যবাদ!
১৪
266845
২০ সেপ্টেম্বর ২০১৪ বিকাল ০৪:০৮
আফরা লিখেছেন : ভাইয়া আপনার লেখাগুলো যত পড়ছি পড়ার আগ্রহ ততই বাড়ছে ।
২১ সেপ্টেম্বর ২০১৪ বিকাল ০৫:২২
210928
নজরুল ইসলাম টিপু লিখেছেন : হয়ত আন্তরিকতার কারণে, কেননা আমি কোন পেশাদারী লেখক নই। ধন্যবাদ।

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File