অলৌকিক: আল্লাহ যখন সাথে থাকে
লিখেছেন লিখেছেন নজরুল ইসলাম টিপু ২৫ ফেব্রুয়ারি, ২০১৩, ০১:০৭:৪৫ দুপুর
ছবিটির দিকে লক্ষ্য করুন, ভাল করে তাকিয়ে দেখুন এবং মনটাকে সেদিকে নিবিষ্ট করুন অতঃপর আমার সাথে থাকুন। তিন নম্বর বৃত্তে একটি গাড়ি দাড়িয়ে আছে। সেটি মারাত্মক দুর্ঘটনা কবলিত হয়েছিল। গাড়িটি ঘণ্টায় ৭৫ মাইল গতিতে ১ নম্বর চিহ্নিত রাস্তা ধরে তিন নম্বরের দিকে আসছিল। ড্রাইভার হঠাৎ নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ১ নম্বর চিহ্নিত রেলিংয়ে প্রচণ্ড গতিতে আছড়ে পড়ে। মুহূর্তে গাড়িটি রেলিংয়ের উপরে উঠে যায় এবং ২ নম্বর চিহ্নিত রেলিং ধরে ঘষা খেতে খেতে সম্পূর্ণ উল্টে গিয়ে একেবারে বিপরীত দিকে ৩ নম্বর চিহ্নিত স্থানে আছড়ে পড়ে। অনুসন্ধানে জানা যায়, গাড়িটি ভয়ানক গতি সম্পন্ন হয়ে দুইভাবে পলট খায়। প্রথমত আড়াআড়ি, দ্বিতীয়ত উলম্বভাবে!
গাড়িটি চালাচ্ছিল ২২ বছর বয়সী একজন চালক এবং তার সাথে ছিল ১৮ বছর বয়সী যাত্রী। দুর্ঘটনার পরে যখন তাদের আহত দেহ উদ্ধারে গাড়ীর নিকট যাওয়া হয়। দেখা যায় তারা দু’জন তখনও জীবিত এবং শরীরে মারাত্মক কোন যখন হয়নি! সামান্য চোট লেগেছে মাত্র! তারা ধাতস্থ হতে চেষ্টা করল এবং নিজেদের বিশ্বাস করতে পারছিলনা, এই মারাত্মক দুর্ঘটনা থেকে তারা আসলেই কি বেঁচে গেছে? কিভাবে বেঁচে গেল? এটা কি করে সম্ভব! অধিকন্তু তারা ভাবতে রইল এটা কি স্বপ্ন ছিল, নাকি বাস্তব!
এখন আপনি নিজেকে নিয়ে কিছুক্ষণের জন্য ভাবুন। ভাবতে থাকুন আপনি নিজেই সেই গাড়িটি চালাচ্ছেন অথবা নিজেকে কল্পনা করুন সে গাড়ির যাত্রী হিসেবে। এবার চিন্তা করুন ঠিক সেই মুহূর্তে উপরে বর্ণিত কায়দায় আপনার গাড়ীটি দুর্ঘটনায় পতিত হল! প্রকৃত দুর্ঘটনাটি তড়িৎ গতিতে ঘটে গেলেও; আপনার বেলায় ভাবতে থাকুন, তা খুব আস্তে আস্তে ঘটতে যাচ্ছে। তখন সেই সংক্ষিপ্ত, কঠিন বিপদের মুহূর্তে আপনি কি চিন্তা করবেন??!!
নিশ্চয়ই কারো সাহায্য চাইবেন!?.......... কিংবা
আচানক একটি গায়েবী সাহায্য আশা করবেন!?.......... কিংবা
জীবনের ফেলে আশা দিনগুলো নিয়ে ভাববেন!?.......... কিংবা
অতীতে ভুল করা কয়েকটি ঘটনাকে মনে করবেন!?.......... কিংবা
অতীতে কষ্ট দেওয়া কোন বন্ধুর মুখ স্মরণ করবেন!?.......... কিংবা
স্ত্রী আপনার অপেক্ষায় দরজায় দাড়িয়ে থাকার কথা ভাববেন!?.......... কিংবা
বাবা মায়ের কথা পড়ে পড়বে, যেন তারা আপনার বিপদের খবরটি পায়!?.......... কিংবা
আপনার অবুঝ শিশুদের অসহায় মুখগুলো ভেসে আসবে, যারা একটু পরেই এতিম হয়ে পড়বে এবং সারা জীবন অন্যের দয়ার ভিখারি হয়ে যাবে! উপরের এসব ছাড়াও আরো অনেক কিছুই মনে আসতে পারে, আবার সময়ের অভাবে কোনটিই মনে না আসতে পারে। তবুও চিন্তার জন্য যদি একটি মুহূর্ত পেয়ে যান, তাহলে ঘটনাটি কেমন হবে?
তখন, অবশ্যই একজনের সাহায্য প্রত্যাশা করবেন! কেননা আপনি তখন শতভাগ নিশ্চিত হয়ে যাবেন যে, এই দুর্ঘটনায় তিনি ব্যতীত আর কেউ রক্ষা করতে পারবে না, পারে না। ফলে সঙ্গত কারণেই শেষ মুহূর্তে তাঁর সাহায্য প্রত্যাশা করবেন। ঠিক এভাবেই প্রত্যেক ব্যক্তি তার দীর্ঘ জীবনের প্রান্ত লগনে, শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগের ঠিক আগের মুহূর্তেও তাঁর কথা’ই স্মরণ করে। তাঁর দয়ার প্রাপ্তির আশা করে। দুই একটি উদাহরণ ব্যতিক্রম হলেও, দুনিয়ার অধিকাংশ মানুষ, মৃত্যুকালের এই অনুভূতির কথা জীবিত মানুষকে বলে যেতে পারেনা। তবে শতভাগ নিশ্চিত করে বলা যায়, ক্রান্তি কালের কঠিন বিপদের সময় শুধুমাত্র যাঁর সাহায্যের জন্য মানুষ লালায়িত হয় তাঁর নাম...............
আল্লাহ
আল্লাহ...................আল্লাহ..................আল্লাহ
তিনি আল্লাহ...........
মহান আল্লাহ.........
তিনি নিজেই নিজের নাম আল্লাহ হিসেবে পরিচয় দিয়েছেন। যিনি আদি থেকে অনন্ত পর্যন্ত সদা বিরাজমান! না তিনি নিদ্রা যান! এমন কি তন্দ্রাও তাঁকে স্পর্শ করতে পারেনা! পৃথিবীর অতি ক্ষুদ্র থেকে প্রকাণ্ড, অযুত বিলিয়ন প্রাণীর প্রতি মুহূর্তের খবর রাখা ও প্রতিটি জীবের সকল প্রকার অভাব মোচনে তিনি ক্ষণকালের জন্যও ক্লান্ত হয়ে পড়েন না। তিনি মহা বিশ্বের সর্বশ্রেষ্ঠ অধিপতি ও সকল ক্ষমতার একক প্রতিভূ ‘আল্লাহ’। (ছোবহানাল্লাহিল আজিম ওয়া বিহামদীহি)
তিনি বলেছেন, ‘আমাকে স্মরণ রাখ, আমিও তোমাদের স্মরণ রাখব’।
তিনি আরো বলেছেন, ‘আমার স্মরণ সবচেয়ে শ্রেষ্ঠতম অবলম্বন’।
তিনি আরো বলেছেন, ‘আমাকে অভিভাবক মেনে নাও, আমার কাছে সাহায্য চাও এবং আমার কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন কর’।
তিনি আরো বলেছেন, ‘কৃতজ্ঞ বান্দাদের তিনি খুবই পছন্দ করেন, তাদের সকল অভাব পূরণ করেন এবং তাদের সকল অভিযোগ তিনি শুনে থাকেন’।
তিনি আরো বলেছেন, ‘সৃষ্টির মাঝে মানুষই বড়ই অকৃতজ্ঞ, নির্বোধ ও অজ্ঞ’।এই কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করার জন্য দরকার আল্লাহ প্রদত্ত প্রয়োজনীয় মৌলিক জ্ঞান, ধৈর্য, নির্লোভ আকাঙ্ক্ষা, প্রজ্ঞা, দূরদর্শিতা এবং সকল অবস্থায় আল্লাহর উপর নির্ভর করার মত মানসিক হিম্মত।
তৃতীয় দৃশ্যপট:
এই দুইজন ব্যক্তির পরবর্তী ঘটনাগুলো থেকে আমরা শিখে নিতে পারি। মহান আল্লাহ কিভাবে তাদের বাঁচিয়ে দিয়েছিলেন। তাঁরা বাকী জীবনের প্রতিটি মুহূর্ত আল্লাহকে মনে রাখতে বাধ্য হবে! প্রতিটি মুহূর্তে তাঁর দয়ার কথা মনে রাখবে, তাঁর করুণার কথা মনে রাখবে কেননা তারা নূতন করে পুরাণ জীবন ফিরে পেয়েছিলেন।
তারা শোকরিয়া জানাতে আল্লাহর কাছে হাত তুলেছিল! শোকরিয়া শেষে তাদের দৃষ্টি যখন মাটির দিকে নিবদ্ধ হয়, তখন অনাগত প্রচণ্ড ভয়-আতঙ্কে তাদের চোখ দুটো কোটর থেকে বেড় হবার উপক্রম হচ্ছিল! আল্লাহর অনুপম দয়া, তাঁর আসমানি সাহায্য পেয়ে যাত্রী-দ্বয় কিভাবে বেঁচেছিল সেই চিন্তা করতে গিয়ে মাথার মগজ গুলিয়ে ফেলেছিল! মুহূর্তেই যাত্রীরা আল্লাহর প্রতি কৃতজ্ঞতা জানানোর ভাষা হারিয়ে, বেহুশ হয়ে পড়ে............।
যাক, কিছুক্ষণের জন্য তাদের অনুভূতির কথা বাদ রাখুন। আপনি একজন যাত্রী কিংবা চালক হিসেবে দুর্ঘটনায় বেঁচে যাবার পর যদি গাড়িটির অবস্থান নিচের চিত্রের মত ভয়ানক আতঙ্ক জনক অবস্থায় দেখতে পান; তখন আপানর অনুভূতি কেমন হবে? হৃদয়ের সকল অনুভূতি দিয়ে উপলব্ধি করুন....... ঠিক তখনই আল্লাহর পরিচয় পেয়ে যাবেন।
ছবিটি দেখার জন্য একটু নিচে নামুন................
.
আরো নিচে............
.
আরো নিচে............
.
নামতে থাকুন............
.
নামতে থাকুন............
.
আরো নিচে............
.
আরেক’টু পরেই............
.
আসুন............
.
আসতে থাকুন............
.
আসতে থাকুন............
.
নামতে থাকুন............
.
আসতে থাকুন............
.
হ্যাঁ এসেই পড়েছেন............
.
নিচেই দেখতে পাবেন............
.
হ্যাঁ এটিই সেই দৃশ্য
গাড়িটি যদি অলৌকিক পন্থায় যথাযথ ভাবে উল্টে না আসতো, তাহলে সেটার অবস্থান হত হাজার হাজার ফুট নিচের এই দুর্গম গিরির গভীর খাতে। যে খানে আছড়ে পড়লে গাড়ি আর মানুষের মৃতদেহ একাকার হয়ে যেত। হয়ত বা মানুষের দেহগুলোকে গাড়ির সাথেই কবর দেওয়া লাগত....। এই ধরনের বিপদে কি ঘটেছে মানুষ সেটা বেমালুম ভুলে যায়! কি ঘটতে পারত সেটা নিয়ে আতঙ্কিত হয়, ঠিক দুই যাত্রীর মত! তবে মানুষ মৃত্যুর পরে সম্ভাব্য পরিণতির কথাও ভুলে থাকতে চায়, কেননা সেটা সে দেখেনি কিংবা উপলব্ধি করেনি।
তাই সর্বক্ষণ মহান আল্লাহর সান্নিধ্যে থাকুন, তাঁকে ভালবাসুন, তাঁর অভিভাবকত্ব গ্রহণ করুন। সর্বদা সর্বত্র তাঁকে ভয় ও লজ্জা করুন। সকল বৈধ আবদার-দাবী তাঁর কাছেই পেশ করুন, তাঁর নিরাপত্তায় আস্থাশীল থাকুন এবং দৃঢ় বিশ্বাস রাখুন এই মহাবিশ্বে তাঁর মত ক্ষমতাধর কেউ নেই।
তিনি চিরঞ্জীব, শাশ্বত, অবিনশ্বর, এক ও একক। তাঁর মত কেউ নাই, তিনিও কারো মত নন। আসমান জমিন এবং তদুভয়ের মধ্যস্থিত যা কিছু আছে, সবই তাঁর। তারা ইচ্ছায় হোক আর অনিচ্ছায় হোক তাঁর মহিমা, গরিমা ও শ্রেষ্ঠত্ব বর্ণনা করতে বাধ্য। আসুন আমরাও স্ব-ইচ্ছায় তাঁর মহিমা বর্ণনা করি, পবিত্রতার সাক্ষী দেই এবং অনুগত ও কৃতজ্ঞ গোলাম হই। আমীন।
বিষয়: বিবিধ
১৭৬৬ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন