অমাবস্যার গভীর রাতে শ্মশানে গমন: চরম বিপদের মুখোমুখি! এক পিকুলিয়ার মানুষ, পর্ব-১৪ (রোমাঞ্চকর কাহিনী)
লিখেছেন লিখেছেন নজরুল ইসলাম টিপু ০১ মে, ২০১৪, ১২:৩৩:৪৩ দুপুর
বাড়ীতে গিয়ে প্রস্তুতি শুরু হল। প্রথমে বইয়ের নিয়মগুলো ভাল করে দেখে নিলাম। কয়েকবার পড়লাম, পড়াতে কোন কিছু ভুল বুঝেছি কিনা ভাল করে নিরিখ করলাম। চিন্তা করতে থাকলাম কিভাবে নিশ্ছিদ্র সফল অভিযান পরিচালনা করতে পারি। বুঝতেই পারলাম পুরো অভিযানে কোন যন্ত্রপাতির দরকার নাই, বেশী দরকার সাহস ও দৃঢ়তা। এসব অভিযানের কথা কাউকে বলা যাবেনা, কারো পরামর্শ নেওয়া তো দূরে থাক, কাউকে অনুমান আন্দাজও করতে দেওয়া যাবেনা। তাই কারও নিকট থেকে অভিজ্ঞতা বিনিময় করা যাবে এমনও নয়।
বইয়ে বর্ণিত কয়েকটি শর্ত আমার পক্ষে মানাটা কঠিন বলে প্রতীয়মান হল। তারমধ্যে প্রথমটি হল একেবারে বিনা কাপড়ে শ্মশানে যাওয়াটা! ব্যাপারটি অন্ধকারে ঘটলেও মানতে কষ্ট হচ্ছিল! তাছাড়া শ্মশানে পৌছার আগেই যদি অন্ধকারে কোন মানুষ, পথিমধ্যে বিনা কাপড়ে আমাকে পেয়ে বসে! তাহলে উল্টো আমাকেই ভুত মনে করে মারা শুরু করে কিনা? কিছু মানুষ হালদা নদীতে রাত্রিবেলায় মাছ ধরে, তাদের হাতে দা, ভোজালি থাকে আতঙ্কিত হয়ে তারাও আক্রমণ করে বসতে পারে। তাছাড়া যদি ভুতের হাতে মারাই যাই, তাহলে মানুষ এই মৃত্যুর কারণ বের করতে পারবে না। উল্টো তারা নতুন নতুন কাহিনী বানাবে এবং আসল ঘটনা তলিয়ে যাবে। তাই সিদ্ধান্ত পালটালাম কাপড় নিয়েই হালদা নদী সাঁতরে পাড়ি দিব, অতঃপর পাতলা হাফ পেন্ট পরেই শ্মশানে যাব!
আরেকটি বিষয় ভাবলাম, একদম খালি হাতে, নিশুতি রাতের গভীর অন্ধকারে শ্মশানের মত ভয়ানক জায়গায় একাকী যাওয়াটা বুদ্ধিমানের কাজ হবে বলে মনে হলনা! ভূতের কাছে অস্ত্রের কোন গুরুত্ব নাই, ভুত অস্ত্রকে ভয় পায়না কিন্তু সাপ, শৃগাল, খেঁকশিয়ালের দল যদি সামনে দাঁড়িয়ে যায়, তখন কি হবে? তাদের আক্রমণে খালি হাতে মরতে হবে! এসব ভেবে চিন্তা করলাম অন্তত একটি ছুরি সাথে রাখা উচিত। এই ক্ষেত্রেও সিদ্ধান্ত পালটালাম ছুরি ছাড়া যাওয়াটা বোকামি হবে।
আরো একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় ছিল, ভাগ্যক্রমে সময়টা ছিল বসন্তের শেষ দিকে, উষ্ণ বাতাসের আনাগোনা ছিল, দুদিন আগে পাহাড়ে বৃষ্টি হয়েছে, তাই নদীতে পানি বেড়েছে। হালদা নদীতে পানি বাড়লে প্রবল গতি সম্পন্ন ঢেউ আছড়ে পড়ে দু’কুল চেপে। সাঁতরে সোজা ওপাড়ে যাওয়া যায়না, পানির গতির উপর নির্ভর করে কখনও তিনশত মিটার কখনও পাঁচশত মিটার বা আধা মাইল পর্যন্ত পিছনে চলে যেতে হয়। তাই চিন্তা করলাম গভীর রাত্রে নদীর কোন দিয়ে সাঁতার দিয়ে কোনদিকে উঠবো জায়গাটা ঠিক করার জন্য বিকাল বেলাতেই একটি জরিপ কাজ চালানো উচিত।
হালদা নদীর একপাশে স্থানীয় বাজার অন্যপাশে বিরাট এলাকাজুড়ে শ্মশান। শ্মশানের নিকটে কোন বাড়ী ঘর নাই, নদীর পাড় বেয়ে শ্মশানে যেতে হলে একদিকে পুটকি বন, অন্যদিকে বাঁশ বনের ভিতর দিয়ে চলতে হবে। আমার পছন্দ বাঁশ বনের রাস্তা। তবে পুরো শ্মশানটি পুটকি বন দিয়ে আচ্ছাদিত। বিরাট পুটকি বনের ভিতরে চিতার অবস্থান ঠিক কোথায় সেটা যদি আগে থেকেই জানা না থাকে তাহলে, ভুতের সাথে লড়াই করতে করতেই রাত কেটে সকাল হয়ে যাবে, চিতার সন্ধান পাব না। তাই সিদ্ধান্ত নিলাম সন্ধ্যের আগে, যে করেই হোক শ্মশান খোলায় আজকের জ্বলন্ত চিতার অবস্থান ঠিক কোন পয়েন্টে তাও জরিপ করতে হবে।
বিকালবেলার জনশূন্য শ্মশান খোলায় চিতার অবস্থান নির্ণয় করতে দেরী হলনা। দূর থেকে মাটির কলসি নজরে আসল। চিতায় তখনও আগুন জ্বলছিল এবং কটু গন্ধে পুরো এলাকাটি বিদঘুটে হয়ে আছে। চিতায় মানুষ আসার কারণে জায়গাটি এক প্রকার সমতল হয়ে আছে। তাই আসতে সুবিধা হবে, তবে যত্রতত্র ভাঙ্গা ও ফাটা বাঁশের বিভিন্ন অংশ বিশেষ নিয়ে সতর্ক না হলে, শরীর কেটে যাবে, বিপদ অবধারিত! আশেপাশের কেউ আমার উপস্থিতি দেখেছে বলে মনে হলনা, তবে দূরের বাড়ি গুলো থেকে কোন মহিলা হয়ত আমায় দেখে থাকবে।
হালদা নদীর পরিবেশ জরিপ করতে গিয়ে থমকে দাঁড়ালাম। স্রোতের অনুমান যা করেছিলাম, বাস্তবে তার চেয়ে অনেক বেশীই পেলাম! এর চেয়েও বেশী প্রবল স্রোতে হালদায় আমার সাঁতার কাটার অভিজ্ঞতা আছে, তাই বলে অন্ধকার রাতে এভাবে ঝুঁকি নেওয়াটা ঠিক হবে বলে মনে হলনা। আপাতত এটাই বিরাট সমস্যা হয়ে দেখা দিল।
সন্ধ্যার আগেই সিদ্ধান্ত পাকা করলাম, গভীর রাত্রে হালদায় সাঁতার দেওয়া যাবেনা। হালদার ওপাড়ে আমার মেজো খালাম্মার বাড়ী। খালাম্মার বাড়ী থেকে বাঁশ বাগানের ভিতর দিয়ে শ্মশানের দূরত্ব বড় জোড় মাইলের কম হবে। আমি আর খালাত ভাই আবদুল্লাহ একই দিনে জন্মেছিলাম, তবে সে বয়সে চার ঘণ্টার বড়। আমার সাথে তার বেজায় বন্ধুত্ব, তার সাথেই হালদার প্রবল স্রোতে সাঁতরাবার হাতে খড়ি হয়েছিল। খালাম্মাদের ওখানে বেড়াতে গেলে তিনি এমনিতেই অনেক খুশী হয়, চিন্তা করলাম এই সুযোগ টাই কাজে লাগাই! ভাগ্য ভাল সেদিন বাবা বাড়ীতে ছিলেন না, মা থেকে অনুমতি নিয়ে; সন্ধ্যার পর পরই, একটি চাকু সম্বল করে, শ্মশানে অভিযান চালাবার নিয়ত নিয়ে খালাম্মার বাড়ীতে মেহমান হয়ে উঠলাম!
খালাম্মাদের বাড়ীতে আজকের দিনটা অন্যদিন গুলোর মত নয়, খালাত ভাই তা আঁচ করতে পেরেছিল। আমার পরিকল্পনা ছিল তাকে নিয়ে রাত্রে অনবরত গল্প করব। মাঝ রাতের কাছাকাছি সময় শুইতে গেলে সে তাড়াতাড়ি ঘুমে ঢলে পড়বে, আমিও সুযোগ নিতে পারব। অন্যদিকে আমাকে মানসিক চাপে পেয়ে বসেছিল। কাজটা ঠিক মত করতে পারব তো? কিছু বিষয়ে হুবহু মানতে পারছিনা বলে একটু খটকা রয়ে গেল। শুয়ে পড়লে যদি ঘুম চলে আসে, সেই সম্ভাবনা দূর করতে, মাথার নিচে রেখে ঘুমানোর জন্য আবদুল্লাহর জ্যামিতি বাক্সটা সাথে রেখেছি। ছুরিটা আগেই কায়দা করে লুকিয়েছি যাতে যাবার সময় নিঃশব্দে বের করতে পারি। কোথায় গিয়ে পোশাক বদলানো হবে সে স্থানও আগে নির্বাচন করে এসেছি। সকল প্রস্তুতির মাঝে কোন ফাঁক আছে কিনা ভাল করে দেখে নিলাম, সন্দেহ মুক্ত হলাম অভিযান টা সুফল হতে পারে। রাত্রের ঠিক এমনি সময়ে খালাম্মার বাড়ীতে বাদশার মা এসে হাজির! আজ রাত্রে তিনি এখানে রাজযাপন করবেন বলে খালাম্মাকে জানিয়েছেন। এই সংবাদে আমিতো বটেই, খালাত ভাইয়ের মেজাজ টাও খারাপ হয়ে গেল!
বাদশার মা! বিধবা নারী। এক চোখে কম দেখেন অপর চোখ বেশী দেখেন বলে বদনাম আছে। বাদশা নামে একটি ছেলে ছিল, বেশী দিন বাঁচে নি। দীর্ঘ ৬০ বছর ধরে স্বামীর ভিটায় একাকী বাস করছেন। খালাম্মাদের বাড়ীতে যাবার পথেই তার ঘর, শ্মশানে যেতে হলে তার ঘরের সামনে দিয়ে যেতে হবে। আমি বেড়াতে আসার সময় সম্ভবত তিনি আমাকে দেখেছেন। তখন তো মোবাইলের যুগ ছিলনা, প্রেম হত চিঠির মাধ্যমে, প্রেমের পরিণতি হত বিয়ের মাধ্যমে। বাদশার মা যুবক যুবতীদের প্রেমের চিঠি চালাচালি করতেন। বিয়ে বাড়ীতে কিংবা অনুষ্ঠানে কোন ছেলে মেয়ে ফিসফাস করছে কিনা! কেউ কারো দৃষ্টি আকর্ষণের চেষ্টা করছে কিনা, এসব তিনি লুকিয়ে দেখতেন আর তাদের মাঝে যোগাযোগ ঘটিয়ে দিতেন। আবার নিজের মত করে ঘটনা বানিয়ে কারো সর্বনাশ করাতেও ওস্তাদ ছিল! তার কাছে বিরাট এলাকার সকল খবর জমা থাকত। ওসব খবর প্রচার করত, তাই অনেকেই তাকে ‘বিবিসি’ বলে কটাক্ষ করত! কেউ তার সাথে ঝগড়া করতে চাইত না। ডাক্তার ডাকা, বাজার এনে দেওয়া সহ নানাবিধ কাজে অনেকের উপকারেও আসত। এই গ্রামে সেই গ্রামে গিয়ে কথা চালাচালি করত। তার মাধ্যমে গোপন কথা শুনার জন্য, কিছু মানুষ তাকে পছন্দ করত। সে যাই হোক আজকে তিনি খালাকে বুঝিয়ে তাদের ঘরে রাতযাপনে বন্দোবস্ত করেছেন! খালাত ভাইয়ের সন্দেহ, সে স্কুলের মাঠে এক ছাত্রীর সাথে কথা বলার সময় এই মহিলা দেখেছিল। খালাত ভাইয়ের ধারনা, রাত্রে কথাচ্ছলে সে মেয়ের ব্যাপারে কিছু কথা উঠলে তিনি তা শুনতে পারবে! আমি পড়েছি মুসিবতে, এই মহিলা আমার কছে কয়েকবার তাবিজ চেয়ে ব্যর্থ হয়েছিল। এই মহিলা বিপদজ্জনক বলে আমার মা আমাকে আগেই সতর্ক করেছিল। এই মহিলা যে কোন সময় অঘটন ঘটাতে পারে বলে আমি সতর্ক থাকতাম।
মাথার নিচে জ্যামিতি বাক্স দিয়ে শুয়েছি, রাতকে লম্বা করার জন্য বিভিন্ন ধরনের হাস্য রসাত্মক কথা বলে যাচ্ছি। বাদশার মা গির গির করতে রইল, আমাদের কথার জ্বালায় তার ঘুম আসছে না! খালাত ভাই বার বার বলতে রইল, ভাল করে ঘুমাতে হলে আপনার বাড়িতে চলে যান। এখানে কেন ঘুমাতে এসেছেন? তাও আমরা যে কক্ষে শুয়েছি তার পাশে শুতেই আপনি পছন্দ করেছেন! খালাত ভাই ফিসফিস করে বলল, আমাদের হাসি তামাসার গল্পে তার বিরক্ত লাগছে। এখন যদি কারো প্রেমের কথা শুরু করি তিনি ঠিকই কান খুলে শুনবেন এবং রাত্রিটা তার আরামেই যাবে! বাদশার মায়ের উপস্থিতিতে এই প্রথম এক বিদঘুটে রাত যাপন করছি খালাদের বাসায়!
জ্যামিতি বাক্সের কারণে তন্দ্রা বারবার বিঘ্নিত হচ্ছিল ফলে বুদ্ধিটি ভাল কাজ দিল। তখনও কারো কাছে ঘড়ি ছিলনা, ধারনার উপর সিদ্ধান্ত নিলাম, রাত দ্বিপ্রহর পার হবেই। শ্মশানে যাবার কাজটি রাত দ্বিপ্রহরের পরেই হতে হবে। আস্তে করে উঠে বসলাম, ছুরিটি খোজ করে নিলাম। আগের পরিকল্পনা মত নিঃশব্দে দরজা খোলে বাহির হলাম। ভয়ানক ঘুটঘুটে অন্ধকার, একটু থামলাম, চারিদিকে তাকালাম। বাল্য বন্ধু রুহুল আমিন একদা উপদেশ দিয়েছিল, 'কোন বাড়িতে প্রেম করতে গেলে, সেই বাড়ীর কুকুরকে হাতে রাখিস, নতুবা সাড়ে সর্বনাশ হবে। তার সে উপদেশ কাজে আসল, এই বাড়ীর কুকুরটিও হাজির, কোন চিল্লাচিল্লি না করে, আমার মতি গতি বুঝার চেষ্টা করছে। অল্পক্ষণ পরেই আকাশের তারার আলোয় পথঘাট চিনতে পারছি বলে মনে হল। দ্রুত শ্মশানের উদ্দেশ্যে রওয়ানা হলাম।
এ ধরনের অন্ধকারে অতীতে কতবার চলেছি তার কোন ইয়ত্তা নাই! তবে আজ কেন জানি ঝিমঝিম লাগছে, মনে হচ্ছিল ভুত বুঝি আজ আমার বিছানা থেকেই অনুসরণ করছে। মনকে তো আগেই শক্ত করেছিলাম ভুত সামনে পিছনে ডানে বাঁয়ে যে কোন দিক থেকেই যে কোন কৌশলে আমাকে ধোঁকা দিতে চাইবে। ঠিক তখনি শুনলাম অনেকটা পিছনে অপরিচিত গলায় কেউ আমাকে নাম ধরে যেন ডাকছে! পুরো শরীরে শিহরণ তৈরি হল, খানিকটা থামলাম। বইয়ে তো বলাই ছিল, ভুত এমনটি করবেই, শ্মশানে পৌঁছতে এখনও অনেক পথ বাকী তাই তাড়াতাড়ি হাঁটতে লাগলাম।
অমাবস্যার অন্ধকার হলেও, তারার আলোতেও পথ দেখতে পাচ্ছি। হঠাৎ পাশের ঝোপ থেকে ভয় লাগানো আওয়াজ তৈরি করে কিছু একটা চলে গেল! আমার সামনেই কয়েকটি বাতি জ্বল জ্বল করতে রইল। চিন্তা করলাম কি হতে পারে, দৌড়ে সামনে যাবার মত করে ধমক দিলাম। চারিদিকে পালাল, একটি পিছনের দিকে ছুটল বুঝলাম হয়ত বাঘডাশা হতে পারে! ঠিক তখনও পিছন থেকে অপরিচিত গলায় আমাকে থামতে বলা হল! না এসব বাগডাসা হতে পারেনা, মানুষের মত গলা সৃষ্টিতে বাগডাসার কোন ক্ষমতা নাই। যাক, সামনেই চলতে হবে, পিছনে যাবার আর কোন রাস্তা নাই। উপদেশ দেওয়া ছিল, প্রয়োজনে আস্তে চলে সকাল করে ফেল তারপরও পিছনে যাওয়া যাবেনা।
চলার গতি আরো বাড়ালাম, সামনে বাঁশ বনের ভিতর দিয়ে সরু লম্বা পথ পাড়ি দিতে হবে। এখানে থমকে দাঁড়ালাম, আগে চিন্তাটা মাথায় আসেনি। বাঁশ বাগানের কিছু যায়গায় বাঁশের ছিপা নেমে মাথা পরিমাণ উঁচু ফাঁকা আছে। ভাবলাম ভুত যদি উপর থেকে চুল কান ধরে বসে! সামনে তো যেতে হবে, এই চিন্তায় ছুরিটি ভাল ভাবে ধরলাম। পুরো শরীরের অস্তিত্ব নিয়ে ভাবলাম। মুহূর্তের সিদ্ধান্তে যেন ছুরিকে সেদিকে ঘুরিয়ে নিতে পারি। একটু চিন্তা করলাম পিছনে ডাক দেওয়া কেউ আছে কিনা, কিংবা আশে পাশে কারো অস্তিত্ব থাকতে পারে কিনা। আপাতত সন্দেহ মুক্ত হয়ে, সর্বোচ্চ সতর্কতার সহিত বাঁশ বনের ফাঁক দিয়ে চলার গতি বাড়িয়ে দিলাম! সাহসে কাজ দিল, বাঁশ বাগান সহজে পেরিয়েছি। এবার পুটকি বনের শুরু, আধা মাইলের কম দূরত্বে শ্মশান। বুকে সাহস ফিরিয়ে আনতে দোয়া পড়তে রইলাম, আবারো কেউ যেন পিছন থেকে ডাক দিল, তবে এবার আওয়াজটা আগের চেয়েও কাছে। বুঝলাম শ্মশানের যত কাছাকাছি হচ্ছি বিপদের ঘনঘটাও সন্নিকটে হচ্ছে।
পায়ের নিচে ছুরি চেপে রেখে ঝটপট কাপড় খুলে নিলাম। ছুরিটি হারাতে চাইনা, ভূত অন্ধকারের সুযোগ নিয়ে যদি ছুরিটি এক হাত দূরেও কোথায় লুকায়। তাহলে এই অন্ধকারে সেটি উদ্ধার করা সম্ভব হবেনা, উল্টো ছুরিটাই আমার মরণের কারণ হতে পারে। শরীরে এখন ফুটবল খেলার হাফ পেন্ট ছাড়া কোন পোশাক নাই। চিন্তা করলাম প্রকৃত অভিযান এখান থেকেই শুরু হবে। বুকে সাহস জুগিয়ে সামনে পা বাড়ালাম। অদূরে নেড়ি কুকুরের ডাক ও দূরে কোথাও শৃগালের ডাক ছাড়া বড় কোন শব্দ কানে এলো না। পুটকি বনের আশ পাশ থেকে ছোট খাট শব্দ পাচ্ছিলাম। নিজের মনকে নিজে উত্তর দিচ্ছিলাম এসব সোনা ব্যাঙ, বেজি কিংবা খেঁকশিয়ালের পালানোর শব্দ। এই জায়গাটিতে এক ধরনের ছোট শিয়াল মাটিতে গর্ত করে লুকিয়ে থাকে, রাত্রে চুরি করতে বের হয়। স্থানীয় ভাষায় এদেরকে ‘গোর খোদক’ বলা হয়। এসব শিয়াল গোর বা কবর খুঁড়ে মানুষের লাশ চুরি করে খায়। এরা অত ভীতিকর নয়, সাহস নিয়ে তাদের দিকে দৌড় দিলে ভয়ে পালায়।
সামনে আগাতে থাকলাম, অনেক আগেই শ্মশানে ঢুকে পড়েছি, ঐ তো ঐখানেই সেই উত্তপ্ত চিতা! কোনদিকে না তাকিয়ে একটু থেমে, মনের ধারনা দিয়ে চারিদিকের অবস্থা অনুধাবন করতে চেষ্টা করলাম। এখন প্রতিটি পদক্ষেপ খুব ধীর-স্থির ও ঠাণ্ডা মাথায় নিতে হবে, নতুবা অজানা বিপদে আটকে যাব। সামনে পা বাড়িয়েছি মাত্র, ঠিক সেই মুহূর্তে আমার মাথার উপরে সামনের দিকে, রাত্রের নিস্তব্ধতাকে খান খান করে দিল এক ভীতিকর শব্দ। কিছু একটা আমার পাশের ঝোপে ধুপ করে ফেলে সাঁ করে উড়ে চলে গেল! বস্তুটি পড়েই ধুপ ধাপ করতে থাকল, ভুতের অপেক্ষায় ছিলাম বটে তবে এই ধরনের পরিস্থিতির জন্য মোটেও প্রস্তুত ছিলাম না। তাই হঠাৎ ভয়ে আমার মুখ থেকে উফ করে শব্দ বের হয়ে গেল! ধুপ ধাপ করা জায়গাটির প্রতি তীক্ষ্ণ নজর রেখে, কাঠের মত ঠাঁই দাড়িয়ে রইলাম। খুব কষ্টে আতঙ্কিত চিৎকার বন্ধ রাখলাম! কেননা ভুত যদি বুঝতে পারে আমি নির্ঘাত ভয় পেয়েছি, তাহলে সে ভয়ের সুযোগ শতভাগ কাজে লাগাবে। নিজের অজান্তে বুকে থুথু মেরে পরবর্তী অজানা কঠিন পরীক্ষার মুখোমুখি হবার জন্য অপেক্ষায় থাকলাম।
আগের পর্ব: অদৃশ্য করণ টুপির সন্ধানে : ভয়ঙ্কর সিদ্ধান্ত গ্রহণ! পড়তে এই লিঙ্কে ক্লিক করুন।
প্রথম পর্ব: এক পিকুলিয়ার মানুষ! (রোমাঞ্চকার কাহিনী- ভূমিকা পর্ব)
বিষয়: বিবিধ
২৩৭১ বার পঠিত, ৪৯ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
আপনি আল্লাহর প্রিয় বান্দা , আমার জন্য হাছদিলে দোআর দরকাস্ত রইলো। আাল্লাহ আপনার কলমের শক্তি বাড়িয়ে দিন । জাযাকাল্লাহ খায়ের ।
আমার জন্য আন্তরিক দোয়া করেছেন, আপনাকে অনেক ধন্যবাদ। আল্লাহ আপনাকেও রহম করুন, সর্বাঙ্গিন কল্যাণ দান করুন। আমিন।
প্রেরনার বাতিঘর হবার মত যোগ্যতা আল্লাহ আমাকে দিয়েছেন কিনা জানিনা। আমি আমার প্রথম পর্বেই বলেছি, এই বিষয়টা নিয়ে লিখব কিনা দীর্ঘ বছর ভেবেছি অতঃপর লিখার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম। আপনি আমার অনেক প্রবন্ধ পড়েছেন, নিশ্চয়ই সেগুলো এটার মত নয়। এখন দেখছি বর্তমানে যে বিষয় নিয়ে লিখছি সেটা পড়ার মত অনেক আগ্রহী পাঠক আছে।
ইনশায়াল্লাহ লিখতে থাকব, আমার জন্য দোয়া করবেন। আপনাকে অনেক ধন্যবাদ, সকল পাঠকদের মোবারক বাদ।
যাক তারপরও অনেক ধন্যবাদ।
প্রতিক্ষার অনুভূতিরা শুধুই আক্রমন করছে মাথাকে কুড়ে কুড়ে খাচ্ছে।
অপেক্ষায় রইলাম ভুত এবার আপনাকে কি করে?(!)
কুকুরের সাথে বন্ধুত্ব করার ভালোদিকটা আজকে বুঝলাম।
মহোদয় দয়া করে এ রাত্রটি তাড়াতাড়ি পার করেন।
যদি এ রাত্র পাড় করার আগে মরে যাই তবে একটি অতৃপ্তি থাকবে।
অভিজ্ঞতা সম্পন্ন লিখাটির জন্য অন্নেক শুকরিয়া।
তারপর?
ও হ্যাঁ টিপু ভাই, আমি হাবিবুল্লাহ। নাম পরিবর্তন করেছি। এ নিয়ে একটা পোষ্ট দেব কিনা ভাবছি।
আপনার গল্পের বাকি অংশের অপেক্ষায় রইলাম।
টিপু ভাইর লেখাতো তার মতই হবে।
ধন্যবাদ।
নেক্সট পর্ব কবে? তাড়াতাড়ি দিন.....
মন্তব্য করতে লগইন করুন