জ্বিন তাড়ানোর কৌশল দেখা! এক পিকুলিয়ার মানুষ, পর্ব-৫ (রোমাঞ্চকর কাহিনী)

লিখেছেন লিখেছেন নজরুল ইসলাম টিপু ০১ এপ্রিল, ২০১৪, ০১:৫৬:৩৮ দুপুর



চেয়ারম্যানের বাড়ির পাশ দিয়ে যাচ্ছিলাম। এমন সময় বাড়ির ভিতর থেকে এক মহিলা আমার নাম ধরে ডাকছেন! বাড়ির চারিদিক দিয়ে বেড়ায় ঘেরা। চিন্তা করলাম ভুল শুনেছি কিনা? কান পেতে ভাল করে শুনলাম। ঠিকই তো! আমাকে কেউ ডাকছে। কি আশ্চর্য!

যেখানে দাড়িয়ে আছি সেখান থেকে বাড়ির কেউ আমাকে দেখার কথা নয়! এটা আমার আত্মীয়ের বাড়ী, তবে কোনদিন তাদের ওখানে যাওয়া হয়নি। তাছাড়া এই রাস্তা ধরে খালার বাড়ীতে যাবার কালে কদাচিৎ আসা যাওয়া হয়। এই গ্রামে আমার আম্মার এক চাচাত বোনের শ্বশুর বাড়ী আছে বটে, তবে তাঁর গলার স্বর আমার মুখস্থ, তাঁকেও খালাম্মা বলে ডাকতাম। সন্দেহের ঘোর না কাটতেই, সেই মহিলা কণ্ঠ আমার পিতার নাম ধরে আমাকে ভাগিনা বলে পুনঃ ডাকতে থাকলেন। অনিচ্ছা স্বত্বেও বাড়ীটির দিকে পা বাড়ালাম।

বাড়ীতে ঢুকার মুহূর্তেই আমার সেই খালাম্মার সাথে দেখা! তিনিও সেই মহিলার ডাক শুনে কৌতূহলে বাড়ীর বাহিরে এসেছেন। তাঁকে জিজ্ঞাসা করলাম কেউ যেন আমার পিতার নাম ধরে আমাকে ডেকেছেন! তিনি হেসে বললেন, হ্যাঁ তোমাকে এমন একজন ডেকেছেন যার সাথে তোমার পরিচয় নাই! তিনি আমার ‘জ্যা’! বড় ভাসুর, চেয়ারম্যানের স্ত্রী! তাঁর মুখে তোমার ও তোমার পিতার নাম শুনেই আমি বাড়ির বাহিরে এসেছি। তিনি ঘরের ভিতর থেকেই তোমার নাম ধরে ডাকছেন। বাড়ীর বাহিরে কে হেটে যায় তা, বাড়ির আঙ্গিনা থেকে দেখার কথা নয়। আর তিনি ঘর থেকেই তোমাকে ডাকছেন শুনে ধারনা করালাম হয়ত তোমাকে পেয়ে যাই কিনা! বাকিটা তো তুমিই দেখলে!

খালাম্মা আমাকে তাঁদের বাড়ীতে নিয়ে গেলেন। বাড়ীতে ঢুকা মাত্র দেখতে পেলাম এক মহিলা ঘরের ভিতরে খোলা জানালার রড ধরে দাঁড়িয়ে। ঘরটি বাহির থেকে বন্ধ, তিনি আমাকে যেন বহুকাল ধরে চিনেন এমন বাক্য ব্যবহার করে আমার নাম ধরে বললেন, ‘তুমি আমাকে এই বাড়ি থেকে বের করে নাও। দরজাটি খুলে দাও, তারা অনর্থক আমাকে বাড়িতে বন্ধী করে রেখেছে’। কিংকর্তব্য বিমূঢ় হয়ে দাঁড়িয়ে রইলাম!

সম্বিৎ ফেরে পেলাম, আগেই জানা ছিল জ্বিনের ভর করা মানুষদের কে কিছু তথ্য এভাবে জ্বিনেরাই দিয়ে যায়। একটু পরেই দেখলাম তিনি নিজে নিজে বকাবকি করছেন। আমাকে হুমকি দিয়ে বললেন, যদি দরজা না খুল তাহলে আমার চরম ক্ষতি হবে। পর মুহূর্তে আবার নিজে নিজেই হাঁসতে রইলেন। খালাম্মার সাথে কথা বলতে জানতে পারলাম, তাঁকে জ্বিনে ধরেছে, কোন মতেই জ্বিন মুক্ত করা যাচ্ছেনা। চেয়ারম্যানের বাচ্চারা এখনও ছোট, অনেক টাকা কড়ি খরচ করেছেন, কোন কুল কিনারা হয়নি। জ্বিন তাড়াতে আজ বিকেলে তাদের বাড়িতে একজন বৈদ্য আসবেন। এই খবর ওনাকে কেউ না বললেও, হয়ত জ্বিনের মাধ্যমে খবরটা তিনি জেনেছেন, ফলে আজ তিনি পাগলামির পরিমাণ বাড়িয়ে দিয়েছেন!

মৌলভী বাচা মিয়া, জ্বিন ভুত তাড়ানোতে সিদ্ধ হস্ত। নিজের সন্তানাদি জন্মের পর বাঁচেনা বিধায় তিনি এই পেশা ছেড়ে দিয়েছেন। অগত্যা চেয়ারম্যানের অনুরোধ, কান্নাকাটি ও পীড়াপীড়ির জন্য তাঁকে শেষবারের মত অগত্যা আবারো বৈদ্যের বোঁচকা হাতে নিতে হচ্ছে! এই খবরে আমি যেন হাতে আসমান পেলাম!

আমার নিজেরও বদনাম আছে জ্বিনে আক্রান্ত ব্যক্তি হিসেবে! জ্বিন তাড়ানোর বৈদ্য, জ্বিন আক্রান্ত রোগী এবং জ্বিন তাড়ানোর পদ্ধতি সবটাই এক সাথে দেখতে পাব এই আশায় খালাম্মাকে ধরলাম, যাতে করে তিনি আমাকে এসব দেখতে সুযোগ করে দেন। আমার চিকিৎসা দেখায় চেয়ারম্যানের আপত্তি ছিলনা, তিনি আমার বড় ভাইয়ের বন্ধু, সহপাঠি এবং কয়েক দিকের প্যাঁচানো আত্মীয়। বৈদ্য বিকালেই আসবেন, সে হিসেবে আমিও যথারিতী হাজির। জ্বিন তাড়াতে দীর্ঘক্ষন ধরে বৈদ্যের বিভিন্ন ধরনের প্রচেষ্টা দেখলাম। নিজের চোখের সামনেই দেখলাম একজন অসুস্থ মানুষকে কিভাবে ঘটনাস্থলেই সুস্থ করতে তুলল বোচা বৈদ্য। বোচা বৈদ্যের কাজের প্রক্রিয়া শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত আদ্যোপান্ত আমার মগজে গেঁথে রাখলাম! আমি চিন্তা করতে থাকলাম এটা কি দেখলাম। তাছাড়া এটা কোন নাটক নয়, সরাসরি চেয়ারম্যান সাহেবের বউ। সে সময়ে চেয়্যারম্যানদের যথেষ্ট ইজ্জত সম্মান ছিল। এখানে নাটক, যোগ সাজস করার কিছুই ছিলনা। তাছাড়া একটি ঘটনার শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত আমিতো উপস্থিত ছিলাম!

আগের পর্ব: জ্বিন ধরতে হাঁটের আয়োজন! এক পিকুলিয়ার মানুষ, পর্ব-৪ (রোমাঞ্চকর কাহিনী)

প্রথম পর্ব: এক পিকুলিয়ার মানুষ! (রোমাঞ্চকার কাহিনী- ভূমিকা পর্ব)

বিষয়: বিবিধ

১৬৭০ বার পঠিত, ১৯ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

201304
০১ এপ্রিল ২০১৪ দুপুর ০২:৩২
রিদওয়ান কবির সবুজ লিখেছেন : পুরাটা শেষ হওয়ার পর মন্তব্য।
০১ এপ্রিল ২০১৪ দুপুর ০৩:২০
151009
নজরুল ইসলাম টিপু লিখেছেন : অনেক পাঠক আছে তারা আগে দেখে লেখার সাইজ কত, কিছু পাঠক লেখার আকার আকৃতির দিকে তাকায় না। মূল ব্যাপার জানতে চাই, নিশ্চয়ই আপনারা তাদের অন্তভূক্ত, অনেক ধন্যবাদ।
201305
০১ এপ্রিল ২০১৪ দুপুর ০২:৩৫
মোস্তাফিজুর রহমান লিখেছেন : ভুমিকা লিখে তো বসিয়ে রাখলেন বাকিটা কবে দিবেন???
আপনার রসালো লেখাগুলো ভাল লাগে। বাস্তবতাকে রস মেখে উপস্থাপন। পরবর্তী পর্বের জন্য অপেক্ষায় থাকলাম। ধন্যবাদ
০১ এপ্রিল ২০১৪ দুপুর ০৩:২০
151010
নজরুল ইসলাম টিপু লিখেছেন : অতি সহসা আসিতেছে ধর্য্য ধরুন, পান্ডুলিপিতে হাত চলছে। অনেক ধন্যবাদ।
201317
০১ এপ্রিল ২০১৪ দুপুর ০৩:০৭
egypt12 লিখেছেন : পুরো পরেই কথা হবে
০১ এপ্রিল ২০১৪ দুপুর ০৩:২০
151011
নজরুল ইসলাম টিপু লিখেছেন : ধন্যবাদ।
201339
০১ এপ্রিল ২০১৪ বিকাল ০৫:১২
ফেরারী মন লিখেছেন : এসব জ্বিন ফকিরে বিশ্বাস নেই আমার
০১ এপ্রিল ২০১৪ বিকাল ০৫:৫৪
151058
নজরুল ইসলাম টিপু লিখেছেন : এটা আমার পেশা নয়, নেশাও নয়। আমি বিজ্ঞানের ছাত্র তবে সৃষ্টিকর্তায় অবিশ্বাসীও নই। যা দেখেছি তাই লিখতে বসেছি।

প্রবাদ আছে, বিপদে পড়লে নাকি গাধাকেও বাপ ডাকে। আমেরিকা থেকে এসেও তাবিজের হুজুরের পিছনে ঘুরতে দেখেছি অনেক মানুষকে! তাবিজ কবজে আমারও বিশ্বাস নাই, তারপরও মানুষ বিশ্বাস করে। সেটার অনুসন্ধানেই এই রচনাটি।

আপনি হয়ত এখনও সে ধরনের বিপদে পড়েন নি কিংবা বন-জঙ্গলের গভীর নিশুতি রাতের গাঢ় অন্ধকারে সাথে পরিচিত হয়ে উঠেন নি, তাই বিশ্বাসে একটু ঘাটতি আছে। আমার এক নাস্তিক বন্ধু আমাদের খামার বাড়িতে রাত্রি যাপন কালে, হুতুম পেঁচার কর্কশ কণ্ঠে প্রচণ্ড ভয় পেয়ে চিৎকার করে বলে উঠেছিল ভুত ভুত। অথচ সে ভুতকেও অবজ্ঞা করত। অনেক ধন্যবাদ।
201360
০১ এপ্রিল ২০১৪ বিকাল ০৫:২৭
নীল জোছনা লিখেছেন : তথ্যপ্রযুক্তির যুগে এসব কবিরাজী চিকিৎসা আর দেখি না।
০১ এপ্রিল ২০১৪ সন্ধ্যা ০৬:০২
151061
নজরুল ইসলাম টিপু লিখেছেন : এই চিকিৎসাকে কবিরাজি বলেনা, এটার চিকিৎসকের নাম 'বৈদ্য'। তান্ত্রিক ব্যক্তিরা এই কাজ করে থাকে। চীনের পরিব্রাজক 'হিউ য়েং সাং' এর ভারত ভ্রমণের কাহিনীতে এ ধরনের বহু ঘটনার উল্লেখ আছে।
205799
১০ এপ্রিল ২০১৪ সন্ধ্যা ০৭:৫৬
সিকদারর লিখেছেন : আস্-সালামু-আলাইকুম ওয়া রহমতুল্লাহ। সামনের পর্বের দিকে দৌড় লাগাইলাম।
১১ এপ্রিল ২০১৪ রাত ১২:৪০
154747
নজরুল ইসলাম টিপু লিখেছেন : অনেক ধন্যবাদ, আগাইতে থাকুন, আমি সাথে আছি।
208049
১৫ এপ্রিল ২০১৪ সকাল ১০:২৭
নেহায়েৎ লিখেছেন : ঘটনার শুরু মনে হচ্ছ!!!
১৫ এপ্রিল ২০১৪ সকাল ১১:১৯
156719
নজরুল ইসলাম টিপু লিখেছেন : জ্বি আরেকটু আগে থেকেই শুরু। ধন্যবাদ সাথে থাকুন।
218164
০৬ মে ২০১৪ বিকাল ০৪:৫৯
সত্য নির্বাক কেন লিখেছেন : পর্ব ছোট হয়ে গেল না
০৬ মে ২০১৪ বিকাল ০৫:৩৯
166235
নজরুল ইসলাম টিপু লিখেছেন : যেখানে যে ধরনের ঘটনা সেখানে সে ধরনের আকৃতি।
264711
১৩ সেপ্টেম্বর ২০১৪ রাত ১১:১৯
আফরা লিখেছেন : আমি ও শুধু মামনির মুখে শুনেছি জ্বীন ভুত তাড়ানোর কথা আমার অনেক দেখার ইচ্ছা ছিল কিন্তু কখনো দেখিনি ।
১৪ সেপ্টেম্বর ২০১৪ সকাল ১১:২০
208479
নজরুল ইসলাম টিপু লিখেছেন : এটা দেখা অনেকের জন্য সুপ্রসন্ন হয়না। কেননা এই ঘটনা গুলো কয়েক হাজারে এক জনের কাছে ঘটে থাকে। অনেক ধন্যবাদ।
১০
305908
২৪ ফেব্রুয়ারি ২০১৫ দুপুর ০২:৩২
দিল মোহাম্মদ মামুন লিখেছেন : আপনার রসালো লেখাগুলো ভাল লাগে। তাই সব সময় পডার চেসটা করি। অনেক ধন্যবাদ আপনাকে

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File